• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

০৯ অক্টোবর ২০১২

ধর্ম বিশ্বাস,না বিজ্ঞান?


শ্রীল এ,সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের সঙ্গে মাইক রবিনসনের কথোপকথন ১৯৭৬,আগষ্ট,লন্ডন
মাইক রবিনসনঃ- হ্যাঁ, ঠিক আছে, কিন্তু আমরা যদি মনে করি যে মানুষের আত্মা নেই.....
শ্রীল প্রভুপাদঃ তা হলে আপনাকে বিশ্লেষণ করতে হবে জীবন্ত দেহ এবং মৃতদেহের মধ্যে কি পার্থক্যতা আমি প্রথমেই বিশ্লেষণ করেছিজীবনীশক্তি আত্মা যখনই দেহ থেকে চলে যায়, তখন সব চাইতে সুন্দর শরীরেরও কোন মূল্য থাকে নাযখন আর কেউ সেটি চায় না, তখন তা ফেলে দেওয়া হয়কিন্তু এখন আমি যদি আপনার চুল স্পর্শ করি , তা হলে আপনি রেগে যাবেনসেটিই হচ্ছে জীবন্ত শরীরে আত্মা রয়েছে,মৃত শরীরে আত্মা নেইযে মুহুুর্তে আত্মা দেহটি ছেড়ে চলে যায়, তখন আর দেহটির কোন গুরুত্ব থাকে না তখন তা অর্থহীন হয়ে যায়সেটি বোঝা খুবই সহজকিন্তু তথাকথিত সমস্ত বড় বড় বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিকদের সেটি বোঝার মতো বুদ্ধি নেইআধুনিক সমাজ অত্যন্ত জঘন্য অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, এখন এমন একটা মানুষ নেই যার প্রকৃত মস্তিস্ক রয়েছে
মাইক রবিনসনঃ- আপনি কি সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের কথা বলছেন, যারা জীবনের পারমার্থিক দিকটা বুঝতে পারে না?
শ্রীল প্রভুপাদঃ- হ্যাঁ, প্রকৃত বিজ্ঞান মানে জড় এবং চেতন, সব কিছু সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান
মাইক রবিনসনঃ- কিন্তু আপনি পূর্বে তো একজন রসায়নবি ছিলেন, তাই নয় কি?
শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ , প্রথম জীবনে আমি একজন রসায়নবি ছিলামতবে একজন রসায়নবি হতে খুব একটা বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় নাসাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কোন মানুষ তা হতে পারে
মাইক রবিনসনঃ- তা হলে বলতে হয় আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা স্থুল বুদ্ধিসম্পন্ন হলেও বিজ্ঞানের গুরুত্ব রয়েছে
শ্রীল প্রভুপাদঃ- জড় বিজ্ঞানের গুরুত্ব ততটুকুই-তার পূর্ণ গুরুত্ব নেই
মাইক রবিনসনঃ- ও আচ্ছাকয়েক মিনিট আগে যখন আমাদের মধ্যে মতভেদ হচ্ছিল তখন আপনি বলেছিলেন,“ শাস্ত্রের উদ্ধৃতি

দেওয়ার প্রয়োজন নেই; এটি সাধারণ জ্ঞানের বিষয়তা হলে আপনাদের এই ধর্মে শাস্ত্রের কি উপযোগিতা? তা কতটা গুরুপূর্ণ?
শ্রীল প্রভুপাদঃ- আমাদের ধর্ম একটি বিজ্ঞানআমি যখন বলি যে , একটি শিশু বালকে পরিণত হয়, সেটি বিজ্ঞান, তা ধর্ম নয়প্রতিটি শিশুই বালকে পরিণত হয়এখানে ধর্মের কি কথা? আর একটি মানুষ যখন মারা যায় তখন তার দেহটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায়এখানে ধর্মের কি প্রশ্ন উঠতে পারে? এটি বিজ্ঞানআপনি খ্রীস্টান, হিন্দু অথবা মুসলমান যাই হোন, আপনার  আত্মীয়ের যখন মৃত্যু হয়, তখন আপনি বলতে পারেন না, “আমরা খ্রীস্টান-আমি বিশ্বাস করি,তার মৃত্যু হয়নি”-সেটি হয় না আপনি হিন্দু,মুসলমান, খ্রীস্টান যাই হোন ,তার মৃত্যু হয়েছেদেহটির গুরুত্ব ততক্ষণ যতক্ষণ তাতে আত্মা আছেআত্মা যখন তাতে থাকে না, তখন সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে যায়এই বিজ্ঞান সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্যতার ভিত্তিতেই আমরা মানুষকে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করছি
মাইক রবিনসনঃ- আমি যদি আপনার বক্তব্য ঠিক মতো বুঝে থাকি, তা হলে আমার মনে হয় আপনি শুদ্ধ বিজ্ঞানের ভিত্তিতে মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেনসেখানে ধর্মের অবকাশ কোথায়?
শ্রীল প্রভুপাদঃ-ধর্মও হল বিজ্ঞান, মানুষ ভ্রান্তিবশত ধর্মকে একটি বিশ্বাস বলে মনে করছে-“আমি বিশ্বাস করি এটি আমার ধর্ম”(জনৈক ভক্তকে) অভিধানে ধর্ম কথাটা খুজে বের কর
শিষ্যঃ- ধর্মের সংজ্ঞা দিয়ে অভিধানে বলা হয়েছে,“অলৌকিক শক্তি অথবা পরিচালককে স্বীকার করা , বিশেষ করে এক সবিশেষ ভগবানের বশ্যতা স্বীকার করা এবং উপযুক্ত মনোভাবের দ্বারা সেই স্বীকৃতিকে কার্যকর  করা
শ্রীল প্রভুপাদঃ- হ্যাঁ, ধর্ম মানে হচ্ছে পরম নিয়ন্তার নির্দেশ পালন করাতা হলে আপনি খ্রিস্টান হতে পারেন বা আমি হিন্দু হতে পারি, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে নাআমাদের দুজনকেই স্বীকার করতে হবে যে, একজন পরম নিয়ন্তা রয়েছেন-সেটিই হচ্ছে ধর্মএমন নয় যে,“আমি বিশ্বাস করি পশুর আত্মা নেইসেটি ধর্ম নয়সেটি সব চাইতে অবিজ্ঞানসম্মত উক্তিধর্ম মানে পরম নিয়ন্তা সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান,-পরমেশ্বরকে জানা এবং তাঁর নির্দেশ পালন করাসেটিই হচ্ছে ধর্মরাষ্ট্রে স নাগরিক হচ্ছেন তিনি, যিনি সরকারকে জানেন এবং সরকারের আইন মেনে চলেন; আর অস নাগরিক হচ্ছেন তিনি যিনি সরকারকে মানেন নাএইভাবে সরকারকে অস্বীকার করলে আপনি অস নাগরিক হয়ে যান,তখন আপনি অর্ধামিক; আর আপনি যদি স নাগরিক হন, তা হলে আপনি ধার্মিক
মাইক রবিনসনঃ- জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আপনার কি বিশ্বাস? আমরা কেন বেঁচে আছি?
শ্রীল প্রভুপাদঃ- জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আনন্দ উপভোগ করাকিন্তু এখন সকলে জীবনের এক অবাস্তব স্তরে রয়েছে এবং তাই আনন্দ উপভোগের পরিবর্তে তারা দুঃখ-ভোগ করছে- সর্বত্র আমরা দেখতে পাই জীবন সংগ্রাম।  সকলেই সংগ্রামে রতকিন্তু পরিণামে কি তারা আনন্দ উপভোগ করে? তারা শুধু দুঃখভোগ করতে করতেই মারা যায়তাই জীবনের উদ্দেশ্য যদিও আনন্দ উপভোগ করা, কিন্তু বর্তমানে তাদের জীবন আনন্দময় নয়কিন্তু আপনি যদি জীবনে চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত হন, তা হলে আপনি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন
মাইক রবিণসনঃ- আপনি কি দয়া করে আমাকে বলবেন পারমার্থিক জীবনের স্তরগুলি কি কি? একজন নতুন ভক্তকে কিভাবে পারমার্থিক জীবনে অগ্রসর হতে হয়?
শ্রীল প্রভুপাদঃ- প্রথম স্তর হচ্ছে জিজ্ঞাসু স্তরসেই স্তরে মানুষ প্রশ্ন করে,“কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন কি? সেই সম্বন্ধে আমি একটু পড়াশুনা করে দেখি!এই স্তরকে বলা হয় শ্রদ্ধাসেটি হচ্ছে শুরুতারপর সে যদি ঐকান্তিক হয়, তা হলে  যাঁরা এই জ্ঞানের অনুশীলন করেন, তাঁদের সঙ্গ করেতারপর সে নিজেই মনে করেআমিও ওদের মতো একজন হই না কেন?” তারপর সে যখন তাঁদের মতো হয়,তখন তার সমস্ত অনর্থ দূর  হয়ে যায়তখন বিশ্বাস সুদৃঢ় হয় এবং কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়এই সমস্ত ভক্তরা সিনেমা দেখতে যায় না কেন? এরা মাছ- মাংস খায় না কেন? কারণ তাদের রুচির পরিবর্তন হয়েছেএখন এই সমস্ত জিনিস তারা ঘৃণা করেএই ভাবে ধীরে ধীরে প্রগতি হয়প্রথমে শ্রদ্ধা, তার পর সাধুসঙ্গ তারপর অনর্থ-নিবৃত্তি, তারপর নিষ্ঠা,তারপর রুচি,তারপর ভগব-উপলব্ধি এবং অবশেষে ভগব -প্রেমসেটিই যোগের পূর্ণতাসেটিই সর্বোত্তম ধর্মএটি আমার বিশ্বাস বা আপনার বিশ্বাস জাতীয় কতগুলি অন্ধসংস্কার নয়সেগুলি ধর্ম নয়, সেগুলি প্রতারণাপ্রকৃত ধর্ম হচ্ছে সেই ধর্ম যা ভগবানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তোলেসেটিই ধর্মের পূর্ণতা
মাইক রবিনসনঃ- আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদআপনার সঙ্গে কথা বলে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি
শ্রীল প্রভুপাদঃ- হরে কৃষ্ণ!
 http://www.iskconbd.org/
Share:

আত্মতত্ত্ব জ্ঞান (৩য় পর্ব) :



পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছে ভগবান, যার থেকে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে । যিনি সমস্ত বিশ্ববহ্মান্ডের পালন করেন এবং সংহারের কাড়ন হন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান। যাহার মধ্যে সমগ্র ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী,
জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে, তাকে ভগবান বলা হয়। ভগবান সাকার; তার রূপ রয়েছে, তবে তা জড় নয়, অপ্রাকৃত। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ, তিনি নিত্য, জ্ঞান ও আনন্দময় মূর্তিবিশিষ্ট ।
যোগী চার প্রকার – কর্মযোগী, জ্ঞানযোগী, ধ্যানযোগী ও ভক্তিযোগী। জ্ঞানযোগী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন । অষ্টাঙ্গ যোগী বা ধ্যানযোগী ধ্যানের মাধ্যমে পরমাত্মার উপাসনা করে থাকেন। ভক্তিযোগ অবলম্বনকারী ভগবানের ভক্তরাই ভগবানের উপাসনা করে।
ভগবানের অস্তিত্বের প্রমাণ লাভ করবার জন্য আমাদের শাস্ত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে । শাস্ত্র থেকে আমরা বুঝতে পারব যে ভগবান আছেন । ভগবান হচ্ছেন তিনি যিনি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের কারন । সৃষ্টির পেছনে কারও না কারও হাত আছেন । যিনি বুদ্ধি প্রদান করেছেন, এই সমস্ত উপাদান প্রদান করেছেন এবং যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান। ভগবানের সাথে জীবের সম্পর্ক হচ্ছে নিত্যপ্রভু ও নিত্যদাস । জড়জগৎ ভগবানের অনুৎকৃষ্টা বহিরঙ্গা শক্তি থেকে উৎপন্ন ।
amit sarkar shuvo
Share:

আত্মতত্ত্ব জ্ঞান :২য় পর্ব



আত্মা শরীরের হৃদ্দেশে অবস্থান করে । দেহে আত্মার অবস্থানের লক্ষন হচ্ছে দেহে পরিব্যাপ্ত চেতনা। আত্মা দেহ হতে নিষ্ণ্ক্রান্ত হলে দেহ একটি অচেতন , পচনশীল, জড়পীণ্ডে পরিনত হয়।
এই জড় জগৎ এ ৮৪ লক্ষ প্রকারের জীব যোনি রয়েছে। এদের মধ্যে কীটপতঙ্গ ১১ লক্ষ, জলচর ৯ লক্ষ, উদ্ভিদ ২০ লক্ষ, পশু ৩০ লক্ষ, পাখি ১০ লক্ষ এবং মানুষের মধ্যে রয়েছে ৪ লক্ষ প্রজাতি ।
জীবাত্মা যে শরীরের মধ্যে অবস্হান করে সেই শরীর কৌমার থেকে যৌবন, যৌবন হতে বার্ধক্য অবস্হায় ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থকে। কিন্তু দেহস্ত আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না । ঠিক যেমন পুরানো কাপড় পরিত্যাগকরে নতূন কাপড় পরিধান করা হয়,ঠিক তেমনি জীবাত্মা অব্যবহারযোগ্য জরাজীর্ণ শরীর ত্যাগ করে তার কর্ম এবং বাসনা অনুযায়ী নতুন শরীর গ্রহন করে। আত্মার এই নতুন শরীর ধারনকে বলা হয় পূনজম্ম ।
জীবের চরম লক্ষ্য হচ্ছে – পরমেশ্বর ভগবানের সংগে তার হারানো সম্পকর্কে পুনঃস্থাপন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া, কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা । সর্ব আনন্দের উৎস হচ্ছেন স
চ্চিদানন্দময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । জীব যে নিত্য আনন্দ লাভের আশা করছে, তার জন্য তাকে পরম পুরুষ ভগবানর সাথে তার নিত্য, অবিচ্ছেদ্য, প্রেমময় সম্পর্কের পুনঃস্থাপন করতে হবে।
যা অল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া যায় কিন্তু ক্ষনস্থায়ী কিন্তু অন্তিমে দুঃখজনক তাকে প্রেয় বলে। আর যা লাভ করা পরিশ্রম সাপেক্ষ, কিন্তু চিরস্থায়ী ও সুখজনক তাকে শ্রেয় বলে। জীবনের প্রকৃত শ্রেয় হচ্ছে নিজের সরূপ প্রাপ্ত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দে অহৈতুকী ভক্তিভাবে তার সেবায় নিযুক্ত হওয়া ।
জীবের দুঃখের মূল কারন কৃষ্ণবিস্মৃতি। জীব যখন কৃষ্ণের সংগে তার নিত্য সম্পর্কের কথা ভূলে যায়, তখন তার নিত্য সরূপ চিন্ময় আত্মা, এ বিষয়ে বিস্মৃতির ফলে এবং এই দেহকে আত্মবুদ্ধি করার ফলে এ জগতে জীব প্রতিনিয়ত দুঃখে জর্জরিত হয় ।

সংগ্রহ : জাগ্রত চেতনা ( ইসকন )

Share:

শ্রীমতী রাধারাণীর জন্মলীলারহস্য



লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিমান পুরুষ। যেহেতু কৃষ্ণ শক্তিমান পুরুষ , তাই তাঁর থেকে অনন্ত শক্তি প্রকাশিত হয়েছে, যেমন - সৃষ্টিশক্তি, লীলাশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, জীবশক্তি, মায়াশক্তি, বৈকুণ্ঠে ভূ, শ্রী যোগমায়া আদি ষোড়শ শক্তি, তা ছাড়া অন্তরঙ্গা শক্তি ইত্যাদি। চিন্ময় জগত গোলোকের সমস্ত কার্যকলাপ শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা সম্পন্ন হয়।

এই অন্তরঙ্গা শক্তি তিন ভাগে বিভক্ত --সন্ধিনী, সম্বিৎ ও হ্লাদিনী।

সন্ধিনী শক্তির সাহায্যে সমস্ত চিৎ-জগৎ প্রকাশিত হয়েছে সম্বিৎ শক্তি বা জ্ঞান শক্তির দ্বারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে জানতে পারেন কৃষ্ণভক্তেরা এই শক্তির সাহায্যে শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারেন। আর হ্লাদিনী শক্তির দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ দিব্য আনন্দ আস্বাদন করেন এবং ভক্তরা এই হ্লাদিনী শক্তির কৃপায় কৃষ্ণপ্রেমের সমুদ্রে অবগাহন করেন। এই হ্লাদিনী শক্তির প্রতিমূর্তি হচ্ছেন শ্রীমতি রাধা ঠাকুরানী।


                             ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শ্রীমতি রাধারাণীর জন্মলীলা সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে--অপ্রাকৃত বৃন্দাবন-ধামে মাধ্বীতলায় আসীন রত্ন-সিংহাসনে কৃষ্ণচন্দ্র একা বসে আছেন। তখন তিনি লীলাবিলাস করতে ইচ্ছা করায়, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বাম অঙ্গ থেকে হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারানী প্রকটিত হন। শ্রীমতি রাধিকাই হচ্ছে আদি শক্তি। তাঁর গাত্রবর্ণ তপ্তসোনার মহো এবং সমগ্র অঙ্গসৌষ্ঠব নানা রকম রত্ন অলংকারে বি

ভুষিতা। তিনি নানা লীলা বিলাসের দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের সন্তোষ বিধান করেছিলেন। আরও অধিকভাবে শ্রীকৃষ্ণের আনন্দ বিধানের জন্য তিনি নিজের অঙ্গ থেকে অসংখ্য গোপিকাদের প্রকাশ করেন। এই সমস্ত ব্রজাঙ্গনারা রূপে-গুণে সর্বোত্তমা ছিলেন। সুতরাং শ্রীমতি রাধারাণী ও তাঁর কায়ব্যুহ গোপিকাদের মায়াবদ্ধ জীবদের মতো জন্মগ্রহণ করতে হয়নি। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ। তাঁরা গোলোকে শাশ্বতকাল ধরে অবস্থান করছেন এবং শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে লীলা বিলাস করে কৃষ্ণপ্রেম আস্বাধন করছেন। ব্রহ্মার দিবসের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন ভৌম বৃন্দাবনে বা এই জড় জগতের মধ্যে প্রকাশিত বৃন্দাবনে অবতরণ করেন, তখন তাঁর লীলায় অংশ গ্রহণ করবার জন্য তাঁর হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারানী ও তাঁর কায়ব্যুহ সখীরা যদিও তাঁদের শাশ্বত চিন্ময় রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন, তবুও আমাদের দৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাই যে, তাঁরা যেন জন্মলীলা প্রকট করেছেন।
যেহেতু আমরা মায়াবদ্ধ জীব, তাই আমাদের কৃপা করবার জন্য তাঁরা আমাদের মতো জন্মলীলা পরিগ্রহ করেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের জন্ম ও কর্ম সবই দিব্য বা অপ্রাকৃত।
পদ্ম পুরাণের উত্তর খণ্ডে শিব-পার্বতী সংবাদে ভৌম বৃন্দাবনে শ্রীমতী রাধারাণীর জন্ম সম্বন্ধে আমরা জানতে পাই যে-

বৃন্দাবনে বৃষভানু রাজা নামে এক পরম ভক্ত বাস করতেন। তাঁর কীর্তিদা সুন্দরী নামে এক পতিপ্রাণা স্ত্রী ছিল। তাঁরই গর্ভে ভাদ্রমাসে শুক্লাষ্টমী তিথিতে মধ্যাহ্নে শুভক্ষণে শ্রীমতী রাধারাণী জন্মগ্রহণ করেন। কন্যারত্ন দর্শনে সমগ্র বৃন্দাবন দিব্যানন্দে মগ্ন হলেন। কন্যার রূপে সকলে মুগ্ধ হলেও তাঁর চোখ নিমীলিত ছিল বলে সকলেই মনে করল কন্যাটি অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। রাধারাণীর চোখ মুদ্রিত হয়ে থাকার কারণ হচ্ছে- একদিন গোলোকে কৃষ্ণ রাধারাণীকে জ্ঞাপন করলেন যে, তিনি অতি শীঘ্রই পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সুতরাং রাধারাণী যেন সেখানে অবতরণ করেন, কেননা সেখানে উভয়ের মাধ্যে বিচিত্র মাধুর্য লীলা বিলাস হবে।কৃষ্ণের কথা শুনে রাধারানী বললেন যে, যদি তাঁকে পৃথিবীতে অবতরণ করতে হয়, তা হলে পর পুরুষের মুখ দর্শন করতে হবে। কিন্তু রাধারানী শ্রীকৃষ্ণের রূপমাধুরী ছাড়া অন্য কিছুই দর্শন করেন না। তাই তাঁর পক্ষে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করা কি করে সম্ভব ? রাধারাণীর যুক্তিসংগত কথা শুনে কৃষ্ণ বললেন যে, সেই জন্য তাঁর চিন্তার কোন ও কারন নেই। রাধারানী সব সময় কৃষ্ণকেই দেখতে পাবেন। এভাবেই আশ্বস্ত হয়ে , তবেই হরিপ্রিয়া রাধারানী মর্ত্যলোকে অবতীর্ণ হতে রাজি হয়েছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে ভৌম জগতের বৃন্দাবন-ধাম আর চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চলোক গোলোক বৃন্দাবনের মধ্যে কোন ও পার্থক্য নেই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছাতেই চিন্ময় গোলোক বৃন্দাবন এই জড় জগতে প্রকাশিত হয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন এই জড় জগতে অবতরণ করতে চান, তখন তিনি তাঁর নিত্য পার্ষদবৃন্দ ও চিন্ময় ধামসহ অবতরণ করেন।

মায়াবদ্ধ জীবেরা এই জড় জগতের অন্তর্গত বৃন্দাবন, নবদ্বীপ আদি ধামগুলি যে চিন্ময় তা উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের কাছে এই চিন্ময় ধামগুলি জড় রাজ্যেরই অন্তর্গত এক-একটি অঞ্চল বলে মনে হয়। ধাম যেহেতু ভগবানের চিন্ময় রাজ্য,তাই বদ্ধ জীব ধামকে কলুষিত করতে পারে না। যারা ধামে এসে পাপকর্ম চরিতার্থ করে, প্রকৃতপক্ষে তাদের কার্যকলাপ ধামের উপরে মায়া রচিত আবরণের জালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সদ্গুরুর কৃপায় মায়ার আবরণ উন্মোচন হলে, তবেই ধামের চিন্ময় স্বরূপের দর্শন ও উপলব্ধি সম্ভব হয়।

এদিকে রাধিকার শুভ জন্ম-মহোৎসব উপলক্ষ্যে আমন্ত্রিত হয়ে স্ত্রী ও পুত্রসহ নন্দ মহারাজ বৃষভানু রাজার রাজপুরীতে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা পরস্পরে আনন্দে কোলাকুলি করছিলেন,তখন এক ফাঁকে কৃষ্ণ অন্তঃপুরে রাধার পালঙ্কের কাছে এসে তাঁর চোখ খুলে কৃষ্ণের দিকে তাকালেন। এভাবেই উভয়ে উভয়কে দর্শন করে দিব্য আনন্দে নিমগ্ন হন।

ইত্যবসরে বৃষভানু রাজা অন্তঃপুরে প্রবেশ করে দেখলেন, রাধিকা চোখ উন্মীলিত করে কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন তিনি আনন্দের আতিশয্যে উভয়কে কোলে তুলে নিলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, কৃষ্ণই রাধাকে চক্ষুদান করেছেন। রাধার চক্ষু উন্মীলনের খবর পাওয়া মাত্রই সমগ্র ব্রজবাসীরা আনন্দে উৎফুল্ল হয়েছিলেন।


তথ্যসূত্র http://www.iskconbd.org/bn/
Share:

মহাজন উপদেশ : শ্রীব্রহ্মা

গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভীপদ্ম থেকে ব্রহ্মার জম্ম । শ্বেত-বরাহ করে ইনি জম্মগ্রহন করেন । ব্রহ্মাই সৃষ্টির আদি জীব । পদ্ম-উপরি উপবিষ্ট ব্রহ্মার চারটি মস্তক । অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে। প্রতি ব্রহ্মাণ্ডেই ব্রহ্মা রয়েছ
েন। শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, বিশমাথা, পঞ্চাশ মাথা, শত মাথা, সহস্র মাথা ও লক্ষ মাথা রয়েছে । ব্রহ্মাণ্ড সমূহও ছোট বড় আকৃতির। আমাদের ব্রহ্মাণ্ডটি সবচেয়ে ছোট । আমাদের ব্রহ্মার চরটি মস্তক ।
সৃষ্টির সমস্ত জীব হতে ব্রহ্মা বয়োবৃদ্ধ ও জ্ঞানবৃদ্ধ । প্রথমে চিন্তা করলেন, “আমি কোথা হতে এলাম । কেউ তো কোথাও নেই, কেবল আমি একা ।” ভাবলেন এই পদ্মের নাল বেয়ে নিচে নামবেন কিনা। শেষ পর্যন্ত তিনি ধ্যানস্থ হয়ে তার সৃষ্টির উৎস সম্বন্ধে সন্ধিৎসু হলেন ।
বহু বর্ষ পরে ভগবান শ্রীহরি দর্শন দান করলেন । ভগবান বললেন, হে ব্রহ্মা এই দেখো চৌদ্দ ভুবন । সমস্ত ভুবন জীবে পরিপূর্ণ কর । ভগবান শ্রীব্রহ্মার মধ্যে সৃষ্টিশক্তি সঞ্চার করলেন । ব্রহ্মা ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার । সৃষ্টিকার্যে তিনি নিয়োজিত । ব্রহ্মা নিজ অঙ্গ হতে মুনি ঋষি এবং মরীচি প্রমুখ প্রজাপতির সৃষ্টি করলেন । তিনি কাউকে তপস্যা আচরণের নির্দেশ দিলেন, কাউকে বা সাংসারিক কার্যে নিয়োজিত করলেন ।
তারপর ব্রহ্মা চিন্তা করলেন আর নিজের থেকে এভাবে সৃষ্টি না করে, নারী-পুরুষের মাধ্যমে সংসার সৃষ্টি হোক । তার সংকল্প অনুসারে মানস পুত্ররূপে মনু ও মনুর অর্ধাঙ্গিনী-রূপে শতরূপাকে সৃষ্টি করলেন । তা৺রা মিলিত হয়ে প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামে দুই পুত্র এবং আকুতি, প্রসুতি ও দেবহুতি নামে তিন কন্যার জম্ম দেন । তা৺দেরকে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর হাতে সমর্পণ করা হয় । ক্রমে ক্রমে ব্রহ্মার দ্বারাই সৃষ্টিকার্য ব্যাপকভাবে পরিচালিত হতে লাগল।
সৃষ্টি করবার জন্য ভগবান ব্রহ্মাকে রজোগুণ দিয়েছিলেন । রজোগুণের মধ্যে রয়েছে সংকল্প, আগ্রহ ও প্রচেষ্টা । চতুর্মুখ ব্রহ্মা রজোগুণের প্রভাবে স্থাবর, জঙ্গম, খেচর, ভূচর, জলচর, উভয়চর প্রাণী প্রজাতির সৃষ্টি করলেন । নয় লক্ষ রকমের জলজ প্রাণী, কুড়ি লক্ষ রকমের গাছপালা, এগার লক্ষ রকমের কীটপতঙ্গ, দশ লক্ষ রকমের পাখী, ত্রিশ লক্ষ রকমের গাছপালা পশু এবং চার লক্ষ রকমের মানুষ প্রজাতি সৃষ্টি করলেন ।
একদিন ব্রহ্মা অহংকার বশতঃ মনে করলেন, ‘ আমিই সবকিছু করেছি । আমিই সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা । আমিই ব্রহ্মাণ্ডের মালিক ।’
শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত আছে দ্বারকাতে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীব্রহ্মাকে আহ্বান করলেন । ব্রহ্মা এসে পৌঁছালে কৃষ্ণের দ্বারপালগণ জিজ্ঞাসে করেন, ‘আপনি কোন ব্রহ্মা ।’ ব্রহ্মা তখন বিস্মিত হয়ে বললেন, চতুর্মুখ ব্রহ্মা । তারপর সভাকক্ষে প্রবেশ করে দেখলেন বহু বহু ব্রহ্মাণ্ড থেকে আগত অসংখ্য ব্রহ্মা সেখানে উপস্থিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণকে প্রণতি নিবেদন করেছেন । আমাদের চতুর্মুখ ব্রহ্মা নিজেকে সবচেয়ে ছোট বলে অনুভব করলেন । শ্রীকৃষ্ণ প্রত্যেক ব্রহ্মার সঙ্গে কুশল-বার্তা জিজ্ঞাসা করে একে একে তাদের বিদায় দিলেন । তখন চর্তুমখ ব্রহ্মার বিষণ্ণ মুখ দর্শন করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে ব্রহ্মা, বলুন আপনার কি অভিপ্রায় ?
ব্রহ্মা বললেন, আমি বড় অভিমানী, আমি মনে করেছি আমি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি । কিন্তু সেই মোহ আমার দুর হয়েছে, আমার চেয়েও অসংখ্য কোটি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি রয়েছেন, তা আমি এখন বুঝতে পারলাম । আমার এই চৌদ্দ-ভুবন বিশিষ্ট ব্রহ্মাণ্ড ছাড়াও আরও অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে- এবার আমার সেই বুদ্ধি জম্মেছে । হে ভগবান, এখন আমি বুঝেছি যে, আমিই সবার চেয়ে ক্ষুদ্র, আমার চিন্তাধারা অতি তুচ্ছ । আপনি দয়া করে আমার সমস্ত অভিমান ও অহংকার দুর করুন এবং আমাকে আপনার চরণে শুদ্ধ-ভক্তি প্রদান করুন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে ব্রহ্মা, অভিমান অহংকার যাতে না হয় সেজন্য এখানে আহ্বান করেছি, এখন আপনার মঙ্গল হোক । তারপর ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণকে প্রণতি নিবেদন করে আপন স্থান সত্যলোকে গমন করলেন ।
একসময় নারদমুনি মন্দাকিনীর তটে তপস্যা করছিলেন । কিন্তু তিনি দৈববাণী শুনতে পেলেন- ‘শ্রীহরি যদি আরাধিত না হন, তবে তপস্যার কি দরকার ? শ্রী হরি যদি আরাদিত হন তবে তপস্যারই কি দরকার ? ’ দৈববাণী শুনে নারদ শ্রীহরি স্মরণ করছিলেন, তখন পিতৃদেব ব্রহ্মাকে দেখতে পেলেন । ব্রহ্মাকে প্রণতি নিবেদন করে জলপূর্ণ নয়নে নারদ বললেন, এই দৈববাণীর অর্থ কি ?
ব্রহ্মা বললেন হে বৎস ! যদি ব্যক্তি ভক্তি সহকারে শ্রীহরির আরাধনা করেন, তবে সেই ব্যক্তির তীর্থভ্রমণ, তপস্যার প্রয়োজন নেই । ভারতবর্ষে কৃষ্ণ-মন্ত্র-উপাসক জীবন্মুক্ত ব্যক্তির তপস্যার প্রয়োজন হয় না । হে নারদ, শ্রীকৃষ্ণ নাম-মন্ত্র গ্রহণ মাত্রেই তার বংশের শত পুরুষ ও বন্ধুবান্ধবরা ও অনায়াসে পবিত্র হয় । শ্রীকৃষ্ণ সেবা থেকে অন্য কোন ধর্ম বড় নয়, অন্যকোন তপস্যা শ্রেয় নয় । কৃষ্ণ-সেবা পরায়ণ ব্যক্তিদের তপস্যার পরিশ্রম অনাবশ্যক । হে পুত্র, কৃষ্ণ-মন্ত্রে ব্রতী ব্যক্তিই মহা পবিত্র । তার তীর্থস্থান, তার অনশন, তার বেদ অধ্যয়ন বিড়ম্বনা মাত্র । হে বৎস, আগুন পবিত্র, নির্মল জল পবিত্র, ভারতবর্ষ পবিত্র এবং তীর্থস্বরূপ তুলসী-পত্র পরম পবিত্র । কিন্তু কৃষ্ণনাম পরায়ণ, কৃষ্ণ-সেবা পরায়ণ ব্যক্তি অবলীলা ক্রমে পবিত্র করেন, আর এরাও সাদরে কৃষ্ণভক্ত ব্যক্তির স্পর্শ বাঞ্ছা করেন । বসুন্ধরা হরিভক্তের পদধূলি দ্বারা তৎক্ষণাৎ পবিত্র হন । হে নারদ, জানবে যে, ব্রহ্মাণ্ডে শ্রীকৃষ্ণ-সেবক অপেক্ষা কোন বস্তু বা কোনও ব্যক্তি অধিক পবিত্র নয় ।
যে ব্যক্তি প্রতিদিন শ্রীকৃষ্ণ পূজা করে এবং শ্রীকৃষ্ণ-চরণামৃত ও মহা-প্রসাদ গ্রহণ করে, সেই মহা পবিত্র । হে নারদ, কৃষ্ণ ভক্ত যে বংশে জম্মগ্রহন করে সেই বংশ পবিত্র হয় । জগতে যে ব্যক্তি কৃষ্ণ-ভজনা করে না, তার তপস্যা, তার কর্মপ্রচেষ্টা তার পরিশ্রম বৃথা । গঙ্গা জল যেমন মদের ভাণ্ডকে পবিত্র করতে পারে না, সেরকম বৈদিক কর্মকাণ্ডীয় যজ্ঞ, উপবাস, তপস্যা, ব্রত, দান, শুভকর্ম- এসবই অভক্ত ব্যক্তিকে পবিত্র করতে পারে না । শ্রীকৃষ্ণে যে ভক্তিপরায়ন নয়, সেই ব্যক্তি যদি তীর্থে স্নান করতে যান তবে তীর্থ বিচলিত হন । বসুন্ধরা অভক্তের ভারে দুঃখে কম্পিত হয়ে থাকেন ।
হে বৎস, শ্রীকৃষ্ণের কথাই বেদ-শাস্ত্রের সারবস্তু । যে মহাত্মা স্বপ্নে ও জাগরণে শ্রীকৃষ্ণের চিন্তা করেন , তিনি নিষ্পাপ হয়ে জগৎকে পবিত্র করেন , ভগবানের সুদর্শন চক্র সেই আত্মাকে সুরক্ষিত করেন । শ্রীকৃষ্ণের নিরন্তর স্মরণকারী ভক্ত অপেক্ষা আত্মা, প্রাণ, দেহ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, আমি, শিব তার কাছে কিছুই পবিত্র নয় । পরম-প্রভু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ভক্ত-গত প্রাণ এবং ভক্ত-গন হচ্ছেন কৃষ্ণ-গত প্রাণ । ভক্ত শ্রীকৃষ্ণকে ধ্যান করেন, শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের ধ্যান করেন ।
হে নারদ, যারা ব্রাহ্মণ অথচ কৃষ্ণ ভক্ত নয়, তারা ধর্মভ্রষ্ট পতিত জীব । কৃষ্ণভক্ত-হীন ব্রাহ্মণ অপেক্ষা স্বধর্মাচারশীল চণ্ডাল, স্লেচ্ছ এমনকি কুকুর-শুকুরেরাও ভালো । হে নারদ, ধর্মহীন ব্রাহ্মণেরা যা আহার্যরূপে গ্রহণ করা উচিত নয়, সেইগুলিও তারা ভক্ষণ করে । প্রতিদিন বিপরীত ধর্মাচার দ্বারা পতিত হয়ে চণ্ডাল অপেক্ষাও অধম হয় ।
নারদমুনি প্রশ্ন করলেন, হে পিতা, ব্রাহ্মণদের স্বধর্ম কি ? তাদের ভক্ষ্য বস্তু কি ?
ব্রহ্মা বললেন, হে পুত্র, ব্রাহ্মণদের নিরন্তর কৃষ্ণ-সেবন করাই স্বধর্ম । এই জন অন্যান্য লোকেরা ব্রাহ্মণকে সশ্রদ্ধ সম্মান জ্ঞাপন করে থাকে, ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট ও পদ-ধৌত জল পান করে থাকে । ব্রাহ্মণরা প্রতিদিন শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ নিবেদন করেন এবং শ্রীকৃষ্ণ-প্রসাদই তাদের আহার্য বস্তু ।
নারদমুনি প্রশ্ন করলেন, হে পিতা, ব্রাহ্মণেরা যদি প্রত্যহ কৃষ্ণ-প্রসাদ না গ্রহণ করে অন্য কোন খাদ্য গ্রহণ করে তবে দোষ কি ?
ব্রহ্মা বললেন, পণ্ডিতেরা সেই খাদ্য কে অখাদ্য বলে বর্ণনা করেছেন । সেই অন্ন বিষ্টা সম, সেই পানীয় মূত্র-সম হয় । কোল ভিন্ন স্লেচ্ছ চণ্ডালেরা ভগবানকে অনিবেদিত অন্ন, রক্তমাংস জাতীয় অমেধ্য বস্তু ভক্ষণ করে থাকে, কিন্তু ব্রাহ্মণ যদি সেই বস্তু ভক্ষণ করে তবে চণ্ডাল-ধম বলে গণ্য হয় ।





হে নারদ, এখন আমি তোমাকে যে নির্দেশ দিতে ইচ্ছা করছি, তা হল এই যে, কৃষ্ণভক্ত শিবকে গুরু-রূপে গ্রহণ করে অচিরেই কৃষ্ণদাস্য ভক্তি লাভ কর । তোমার এরকম নির্জনে বসে তপস্যা করার দরকার নেই । শ্রীকৃষ্ণ-ভক্তিই দুঃখময় সংসার-সমুদ্র উত্তীর্ণ হবার নৌকা স্বরূপ । গুরুদেব সেখানে কর্ণধার স্বরূপ । হে নারদ, তুমি যে দৈব বাণী শুনেছিলে, দেবী সরস্বতীই তোমার উদ্দেশ্যে এই কথা বলে প্রস্থান করেছেন ।
শ্রীব্রহ্মা যখন নারদকে এই সমস্ত কথা বলছিলেন, তখন ব্রহ্মার পুত্র সনৎকুমার বললেন, হে পিতা , আমি কোন কথা বুঝতে পারিনি, দয়া করে আমাকে পুনরায় বলুন । শ্রীকৃষ্ণকে যে আরাধনা করেছে তার আর তপস্যা করা অনর্থক এবং যে শ্রীকৃষ্ণকে আরাধনা করেনি তারও তপস্যা ব্যর্থ হয়, যদি এই দুইজনই তপস্যা-রহিত হয়, তবে তপস্যার স্থান কি ধরনের লোকের প্রতি নির্দিষ্ট থাকল ?
ব্রহ্মা বললেন, হে বুদ্ধিমান, তোমাকে পুত্ররূপে পেয়ে আমার জীবন ধন্য । ‘আরাধিত’ কথাটিতে আ অর্থ বিশেষরূপে ‘রাধিত’ শব্দটি প্রাপ্তবাচক হয় । অতএব যিনি শ্রীহরিকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তপস্যার প্রয়োজন নেই । কোনও মুঢ় ব্যক্তি, যখন শ্রীকৃষ্ণ বিমুখ, তার তীর্থ, দান, তপস্যা, পুণ্য, ব্রত তাকে পবিত্র করতে পারে না ।
সনৎকুমার জানতে চাইলেন, হে পিতা, কোন ধরনের ব্যক্তি তপস্যা করবে ?
ব্রহ্মা বললেন, যে ব্যক্তি মূঢ়তম কিংবা যে ব্যক্তি সর্বোৎকৃষ্ট ভক্তিলাভ করেছে, এই উভয় ব্যক্তিই সুখী । তাদের তপস্যা করার দরকার নেই । কিন্তু মধ্যম লোকেরাই তপস্যা করার অধিকারী হয়ে থাকে । মধ্যম ব্যক্তিরা যারা গৃহস্থ সাধক, সংসারে ব্যাপৃত থেকে পূর্ব কর্মের ফলভোগী হয়ে অভীস্পিত শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম পাওয়ার বাসনায় তারা তপস্যা করে ।
সনৎকুমার প্রশ্ন করলেন, হে পিতা, কি রকম তপস্যা করবে ?
ব্রহ্মা বললেন, শ্রীকৃষ্ণের সেবা, ধ্যান, নাম জপ-কীর্তন, চরণামৃত ও মহা-প্রসাদ সেবন করাই সকলের বাঞ্ছিত শ্রেষ্ঠ ধর্ম ।
-হে পিতা, অধিকাংশ লোকেরই তা হলে শ্রীকৃষ্ণ-ভক্তিমূলক তপস্যার প্রয়োজন আছে । তবুও আমার জানতে ইচ্ছে করে যে, সংসারে সব লোক কৃষ্ণ-ভজন করে না কেন ?
-হে বৎস যার বুদ্ধি পূর্বজম্মকৃত কর্মদোষে মন্দ হয়েছে এবং অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে গুরু-রূপে গ্রহণ করেছে, তারা তমোগুণের অধীন হয়ে থাকে । তার ফলে তারা ত্রিগুণের অতীত ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারে না, এমনকি জানতে আগ্রহ ও থাকে না । সংসারে সেই সব লোক তাই কৃষ্ণ-ভজন করবে না ।
-হে পিতা তাহলে সংসারের সেই সব কৃষ্ণ-বিমুখদের কিভাবে সদ্গতি হবে ?
- হে পুত্র, অজ্ঞানে বা সজ্ঞানে, সাধুসঙ্গ-ক্রমে কিংবা সৌভাগ্যক্রমে কেউ যদি অপ্রসাদভোজী না হয়ে কৃষ্ণপ্রসাদভোজী হয়, তা হলে, তার হৃদয়ে সমস্ত পাপ ক্ষয় হবে, সে দেহত্যাগের পর দিব্যরথে করে গোলোক কিংবা উৎকৃষ্ট কোনও গ্রহলোকে স্বেচ্ছামতো গমন করতে সমর্থ হবে ।
সংগ্রহ : মহাজন উপদেশ ( ইসকন্ ) 
by অমিত সরকার শুভ
Share:

মহাজন উপদেশ : শ্রীশিব

একসময়, স্বর্গের মন্দাকিনীর তীরে শ্রীনারদমুনি মহাদেবের কাছে শ্রীকৃষ্ণমন্ত্র লাভ করলেন । তারপর নারদ ও মহাদেব শিব একস্থানে এসে পৌছলেন যেখানে পার্বতীদেবী, কার্ত্তিক ও গনেশ বসেছিলেন । সেখানে মহাকাল, নন্দী, বীরভদ্র,
সিদ্ধ মহর্ষিগণ ও সনকাদি মুনিগণ এসে বসলেন ।বাক্যালাপে প্রসঙ্গ ক্রমে নারদমুনি মহাদেবকে বললেন, হে ভগবান, যে জ্ঞান কর্মফলচক্রে আবদ্ধ করায় না, যে জ্ঞান সর্ববেদের সার, সেই বিষয়ে আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে বলুন ।
মহাদেব বললেন, হে নারদ, পঞ্চরাত্র নামে এক অনুপম জ্ঞান পূর্বে গোলকে বিরজার তটে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রদান করেছিলেন , তারপর নিরাময় ব্রহ্মালোকে ব্রহ্মা আমাকে সে জ্ঞান প্রদান করেন , সেই সর্ব-অভিষ্ট সর্বজ্ঞানপ্রদ প্রবিত্র জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি, পরে তুমি ব্যাসদেবকে প্রদান করবে । আর সেই ব্যাসদেব পরে তার পু্ত্র শুকদেবকে দান করবে ।
হে নারদ, এই জ্ঞান সবার আদি, সর্ববেদের সার, অতি মনোহর । জগৎ সংসারে যত মত আছে, যত কর্ম আছে, যত মন্ত্র আছে, যত কর্মচক্র আছে – সেই সমস্ত কিছুর সারাৎসার, সর্বকর্মচক্রের মুক্তির পন্থা হচ্ছে একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মসেবা । নিখিল মহাবিশ্বে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই বিদ্যমান । আর অন্য সমস্ত কিছুই তার প্রয়োজন সিদ্ধির জন্যই উৎপন্ন হয়েছে । বিশ্বের সবাই তার মায়ায় মোহিত । এক কৃষ্ণ তার অনন্ত রূপ, তার অনন্ত গুন, তার অনন্ত কীর্তি এবং তার অনন্ত জ্ঞান ।
হে নারদ, তার সৃষ্ট জড় বিচিত্র বিশ্বও অনন্ত । এই বিশ্বের সব জায়গা ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মধ্যম নানা জাতীয় জীবে পরিপূর্ণ । সেই জীবগুলো কর্মশীল । কর্মের ফলস্বরূপ তারা সুখ দুঃখ ভোগ করছে ।
সর্বান্তরাত্মা ভগবান প্রত্যেক জীবের সাক্ষীরূপে বিদ্যমান । জীবের বুদ্ধি আছে । সেই বুদ্ধিশক্তি নিদ্রা, তন্দ্রা, দয়া, শ্রদ্ধা, তুষ্টি, পুষ্টি, হ্মমা, হ্মুধা, লজ্জা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, শান্তি, চিনতা, জরা, জড়া প্রভৃতি নাম ধারন করে । অনুচরেরা যেমন রাজার অনুগামী হয়, সেই রকম এই সব শক্তি জীবের অনুগামী হয়ে থাকে । চিন্তা ও জরা সর্বদা জীবের শোভা ও পুষ্টির ব্যাঘাত করে । ব্রহ্মাণ্ডমধ্যে জীব যে স্থুল দেহ ধারন করে কর্ম করছে সেই দেহটি পাঞ্চভৌতিক অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বাতাস ও আকাশ দিয়ে তৈরি । এই দেহ ধ্বংস হলে দেহটি পঞ্চভূতের মধ্যে মিশে যায় । প্রায় জীবই এই জগৎ সংসারে ভ্রান্তিবশে মায়ামোহিত হয়ে রোদন করতে থাকে । কিন্তু যারা সাধু ব্যক্তি, তারা নিত্য সত্য অভয়প্রদ এবং জম্মমৃত্যুজরা-অপহারী শ্রীকৃষ্ণের চরণকমল সেবা করেন ।
হে নারদ, এই বিশ্ব স্বপ্নের মতো অনিত্য । অতএব এতে বিমোহিত না হয়ে আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ভজনা করো । এই হচ্ছে প্রথম জ্ঞান ।
এবার দ্বিতীয় জ্ঞানের কথা শ্রবণ করো । জ্ঞানী ব্যক্তিরা মুক্তির বাসনা করেন । সাধু পণ্ডিত ব্যক্তিদের পরমামুক্তি সততই বাঞ্ছিত । কিন্তু সমস্ত মুক্তি শ্রীকৃষ্ণভক্তির কাছে অত্যন্ত তু্চ্ছ বিষয় । মুক্তি কৃষ্ণভক্তির ষোলভাগের একভাগও আকর্ষনীয় নয় । কৃষ্ণভক্ত-সংসর্গের ফলে কারও হৃদয়ে ঐকান্তিক কৃষ্ণভক্তি জাগ্রত হয় ।
মাঠের মাঝে বৃক্ষের বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয় জল পেলে, তেমনই হৃদয় মধ্যে ভক্তিবৃক্ষের অঙ্কুর প্রকাশিত হয় ভক্তসঙ্গ পেলে । ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণকথা আলাপে ভক্তি জাগ্রত হয় । আবার রৌদ্র মধ্যে অঙ্কুর যেমন শুকিয়ে যায়, তেমনি অভক্তজনের সঙ্গে সর্বদা সংলাপে ভক্তি শুষ্কতা প্রাপ্ত হয় । এই জন্যে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সর্বদা ভক্তজনের সাথে আলাপ করেন ।
হে নারদ, সোনা যেমন নিকৃষ্ট ধাতুর সংযোগে মলিনতা প্রাপ্ত হয়, তেমনি সৎ ব্যক্তিও সংসারের দুর্বুদ্ধি লোকের সংস্পর্শে মন্দ হয়ে যায় ।এজন্য সর্বদা নিরন্তর ভক্তিপূর্বক শ্রীকৃষ্ণভজনে যুক্ত থাকাই কর্তব্য । ভক্তিপূর্বক কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবের কাছ থেকে তার কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহন করা উচিত । কখনও অভক্ত অবৈষ্ণবের কাছ থেকে নয় । সংসারে যারা কৃষ্ণনিন্দুক, কৃষ্ণবিমুখ, কৃষ্ণভক্ত নিন্দুক, তারা অশুচি ও পাপিষ্ঠ । কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তি শত পুরুষ সহ নিজেকে উদ্ধার করে ।
by অমিত সরকার শুভ
Share:

শ্রীভগবানকে নারদের অভিশাপ


লীলাময় ভাগবান শ্রীহরি একাধিকবার অভিশাপের শিকার হন। এক কল্পে জলন্ধর দৈত্যের উপদ্রবে দেবতারা নাজেহাল। তখন শিব গেলেন যুদ্ধ করতে। তিনিও জলন্ধরকে পরাজিত করতে পারেননি। কারণ জলন্ধরের স্ত্রী
ছিল সতী সাধ্বী নারী। তখন শ্রীহরি ছল করে জলন্ধরের স্ত্রীর সতীধর্ম নষ্ট করেন। সেই নারী যখন ভগবানের ছলনা বুঝতে পারলেন, তিনি তখন ভগবানকে অভিশাপ দেন।
আরেকবার শঙ্খচূড় নামক অসুরও তাঁর স্ত্রী তুলসীর জন্য অবধ্য ছিলেন। দেবলোকের মঙ্গলের জন্য তিনি তুলসীর সতীত্ব হরণ করেন। তুলসী ছিলেন ভগবদ্ভক্ত। কিন্তু ভগবানের ছলনা বুঝতে পেরে তিনিও শ্রী হরিকে পাষাণ রূপ প্রাপ্তের জন্য অভিশপ্ত করেন। ভগবান তা-ই শিরোধার্য করে নারায়ণ শিলাতে পরিণত হলেন। উপরন্তু, তুলসীর ভগবদ্ভক্তির মাহাত্ম্যের জন্য তিনি জন্মে জন্মে শ্রীভগবানের শ্রীচরণ কমলে স্থান পান।
কিন্তু যদি শোনা যায় যে, দেবর্ষি নারদ ভগবানকে অভিশাপ দিয়েছেন! তাহলে চমকে উঠতে হয়। কিন্তু ঘটনা তাই। নারদ দক্ষ কর্তৃক ‘যাযাবর’ বৃত্তির অভিশাপ পেয়েছিলেন। হিমালয়ের গঙ্গার তীরে এক মনোরম আশ্রম দেখে নারদের ভালো লাগল। তিনি পর্বত-নদী-কান্তারের অনবদ্য দৃশ্য অবলোকন করে রমাকান্ত ভগবানের শ্রীচরণে অনুরাগ জন্মাল। শ্রীচরণ স্মরণ হওয়াতেই তিনি শাপমুক্ত হলেন। তারপর সেই মনোমুগ্ধকর আশ্রমে তিনি সমাধিস্থ হলেন।
নারদের এই সমাধি দেখে ইন্দ্রের ভয় হল। তিনি ভাবলেন, নারদ হয়তো তপোবলে তাঁর ইন্দ্রত্ব (স্বর্গের রাজপদ) কেঁড়ে নেবেন। ইন্দ্র কামদেবকে আদেশ করলেন, “যাও! তোমার সঙ্গী-সাথী নিয়ে দেবর্ষি নারদের সমাধি ভঙ্গ করো।” মীন কেতু কামদেব “যথা আজ্ঞা” বলে তাঁর আদেশ পালনের জন্য তৎপর হলেন।
মদন সেই আশ্রমে বসন্ত সৃষ্টি করলেন। নানা রঙের ফুল ফুটল । কোকিল গান গাইল । ভ্রমর গুঞ্জন করল। শীতল মৃদু -মন্দ সুগন্ধি বাতাস বইল । উর্বশী, রম্ভা প্রমূখ অপ্সরাগণ নানা ভঙ্গিতে শরীর আন্দোলিত করে নৃত্য পরিবেশন করল। চির যুবতী দেব ললনাদের লাস্যময়ী দেহ - বল্লরী আন্দোলিত হল। কামকলায় নিপুণ অপ্সরাদের ছলা-কলায় নারদের সমাধি ভঙ্গ হল না। তখন তারা অভিশাপের ভয় পেল। সকলে দেবর্ষি নারদের চরণে ক্ষমা প্রার্থনা করল। নারদ সকলকে ক্ষমা করে দিলেন।
দেবর্ষি নারদের এই ঘটনায় খুব অহঙ্কার হল। তিনি কৈলাসে গিয়ে শিবকে বেশ গর্বের সঙ্গে এই ঘটনা বর্ণনা করলেন। শিব বললেন, আপনি এটা যেভাবে আমাকে বর্ণনা করলেন, তা কখনও ভগবান শ্রীহরিকে বলবেন না। কিন্তু নারদের শিবের উপদেশ ভালো লাগল না। তিনি বীণায় হরি গুণগান করতে করতে ক্ষীরসমুদ্রে গেলেন, যেখানে শ্রীহরি নারায়ণ রূপে বাস করেন।
নারায়ণ দেবর্ষি নারদকে আপ্যায়ন করে বসিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। দেবর্ষি নারদ হল শ্রী ভগবানের পরম ভক্ত। কিন্তু ভগবান তো অন্তর্যামী। তবুও গর্বের সঙ্গে নারদ কামদেবের পরাজয়ের ঘটনা নারায়ণকে বললেন। নারায়ণ বললেন, “তোমাকে স্মরণ করলেই অন্যের কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ দূরীভূত হয়ে যায়। তো কামদেব পরাজিত হয়েছেÑ এটা আর এমন কি কথা? একথা শুনে নারদের আরও অহঙ্কার বৃদ্ধি পেল। তারপর নারদ বিদায় নিলেন। তখন শ্রীনারায়ণ অপূর্ব এক লীলা করলেন। তিনি ভক্ত নারদের মঙ্গলের জন্য তাঁর মায়াশক্তিকে নির্দেশ দিলেন নারদকে মোহিত করতে।
নারদ দেখলেন এক অপূর্ব নগর, যেখানে সুন্দর সব নর-নারী বাস করছে। সবাই যে মদন আর রতি। সেই নগরের রাজা শিলানিধি। বিশাল তাঁর সামরিক সজ্জা। প্রচুর ভোগৈশ্বর্যে পরিপূর্ণ সেই নগর। নারদ পুরবাসীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে, রাজকন্যা বিশ্বমোহিনীর স্বয়ম্বরা হবে। সেই উপলক্ষে বহু রাজা রাজবাড়িতে সমাগত। নারদও তামাসা দেখতে গেলেন। রাজা শিলানিধি নারদকে পাদ্যার্ঘ্য দিয়ে পূজা করলেন। তারপর রাজকন্যাকে দেখিয়ে এর দোষ-গুণ বিচার করতে বললেন। নারদ বিশ্ববিমোহিনীর অপরূপ সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে গেলেন। রাজাকে শুধু বললেন, এই কন্যা সুলক্ষণা। আর মনে মনে নারদ চিন্তা করলেন, এই কন্যার পাণি গ্রহণ যে করবে সে ত্রিলোকে পূজিত হবে। তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। অতএব, এই কন্যাকে পাওয়ার জন্য নারদ চিন্তা করতে করতে বাইরে এলেন। নারদ এতটাই মোহগ্রস্ত হলেন যে, তিনি স্বয়ং শ্রীহরিকে স্মরণ করলেন। ভগবানকে স্মরণ মাত্রই তিনি উপস্থিত হলেন। নারদ বললেন, “ভগবান, এই কন্যাকে আমার চাই-ই চাই। আর সেজন্য তোমার রূপ আমাকে দাও।” ভগবান বললেন, “তথাস্তু”।
যথাসময়ে স্বয়ম্বর সভা শুরু হল। শিব তাঁর দুইজন অনুচরকে নারদের কাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে ব্রাহ্মণের বেশে পাঠিয়েছিলেন। ভগবান স্বয়ং-ও রাজবেশ ধারণ করে উপস্থিত। বিশ্ববিমোহিনী নারদের দিকে দৃষ্টিপাতই করলেন না। স্বয়ং ভগবানকে বরমাল্যে বরণ করলেন। এই দৃশ্য দেখে নারদ ক্রোধে থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। এদিকে রাজবেশধারী ভগবান বিশ্ববিমোহিনীকে নিয়ে চলে গেলেন। নারদের অস্থির মতি লক্ষ্য করে শিবের অনুচর বলল, “ঠাকুর, দর্পণে একবার নিজের মুখটা দেখ।” নারদ তখন স্থির জলে নিজ প্রতিবিম্ব দেখে আঁতকে উঠলেন। আরে! এ-তো বাদরের মুখ। নারদ ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। নারদ অহর্নিশি যাঁর নাম গুণগান করে, সেই পরমেশ্বর কিনা নারদকে ছলনা করলেন! তিনি তক্ষুণি বৈকুণ্ঠের দিকে ছুটলেন। পথেই শ্রী ভগবানের দর্শন পেলেন। সঙ্গে ল²ী এবং বিশ্ববিমোহিনী। নারদ ক্রোধে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “তুমি পরের ভালো দেখতে পার না। তুমি হিংসুক! কপট! সমুদ্র মন্থনে উৎপন্ন বিষ তুমি সরলমতি শিবকে পান করিয়েছিলে। আর কৌস্তভমণি ও ল²ীকে নিয়ে তুমি বৈকুণ্ঠে চলে গেলে। তোমার মতো কুটিল স্বভাব ও স্বার্থপর আর দ্বিতীয় কেউ নেই। তোমাকে শাসন করার কেউ নেই। তাই যা ইচ্ছা তা-ই কর। আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি, যে বিরহে আমি জ্বলছি, সেই বিরহে তুমিও কাতর হবে। আর যে মর্কট মুখ আমাকে দিয়ে ছলনা করেছ, সেই বাঁদরই তোমার সহায়তাকারী বন্ধু হবে। শ্রীভগবান ভক্তের অভিশাপ মাথা পেতে নিলেন। আর তখনই নারদের উপর আরোপিত মায়াজাল অপসারিত করলেন। নারদ সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখলেন, ল²ী বা বিশ্ববিমোহিনী কেউ কোথাও নেই। নারদ অপরাধ বুঝতে পেয়ে শ্রীভগবানের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। ভগবান বললেন, “তুমি শ্রীশঙ্করের শরণ নাও, তাহলে শান্তি পাবে। যাও, আমি রাম অবতারে পৃথিবীতে লীলা করবো। সীতা বিরহে কাতর হব এবং বানর সেনার সাহায্যে সীতা উদ্ধার করব। তুমি আমার পরম ভক্ত, তোমার অভিশাপের মর্যাদা আমি রাখব। তোমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তোমার অহঙ্কার চুর্ণ করার জন্যই আমি মায়ার দ্বারা তোমাকে মোহাচ্ছন্ন করেছিলাম।”
(উৎস: রামচরিত মানস)
 লিখেছেন -শ্রী গৌরকিশোর দাস ব্রহ্মচারী
সংগ্রহে - অমিত সরকার শুভ
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।