০৯ জুন ২০১৩

শঙ্খ কি এবং কেন ???



নিত্যপূজায়, পার্বণে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী বিশেষ কিছু উপাচার ব্যবহৃত হয়ে থাকে যার মধ্যে শঙ্খ অন্যতম শঙ্খ হল এক ধরণের সামুদ্রিক শামুকএর বৈজ্ঞানিক নাম “turbinella pyrum “ এটি হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি ধর্মে পূজার উপাচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে

হিন্দু ধর্মমতে শঙ্খঃ

পবিত্র সনাতন ধর্মে শঙ্খ ভগবান বিষ্ণুর প্রতীকএকে বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গী হিসেবেও পূজো করা হয়সৃষ্টির শুরুতে সমুদ্রগর্ভ হতে, পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু ও স্বর্গীয় দেবতাদের তৈরী ঘূর্ণাবর্তের মধ্য থেকে অস্ত্ররূপে শঙ্খকে হাতে ধরে আবির্ভাব হয় ভগবান বিষ্ণুরঅপরদিকে শঙ্খ ধন ও প্রতিপত্তির দেবী মা লক্ষীর আব্রুব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণমতে, শঙ্খ ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠানকারী মন্দির

২.২ পূজো-অর্চনায় শঙ্খের ব্যবহারঃ

আরতিতে দুই ধরণের শঙ্খ ব্যবহার করা হয়ে থাকেএকটি পূজোর পূর্বে শঙ্খনাদ ধ্বনি উচ্চারনে আর অন্যটি পূজোর সামগ্রী হিসেবে প্রনিত্য পূজো, য়োজন হয় কিন্তু কখনোই পূজোর আগে বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত শঙ্খ পূজোর কাজে ব্যবহার করা উচিৎ নয়

বরাহ পুরাণস্পষ্ট ভাবে বলেছে, কখনই মন্দিরের দ্বার শঙ্খ ধ্বনির উচ্চারণ ব্যতীত খোলা উচিৎ নয়বামাবর্তী শঙ্খ বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়

যেহেতু শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খ ব্যবহার নিষিদ্ধ, তাই এগুলো কালো জাদু, যাকে বলা হয় অঘোরী বিদ্যাকিম্বা অপদেবতার আরাধনায় কাজে লাগানো হয়

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবসময় মনে রাখা উচিৎঃ

ক) যে শঙ্খ ব্যবহার করা হয়, সেটা কখনোই পূজোর শঙ্খ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না
খ) শঙ্খ বাজাবার পর সেটা ধুয়ে রাখা জল কখনোই দেব-দেবীকে অঞ্জলী দেয়া চলবে না
গ) কখনোই পূজোর কাজে দুক) বাজানোর কাজে টি শঙ্খ রাখা যাবে না
ঘ) কোনোক্ষেত্রেই শিব পিন্ডিকে নিত্যপূজো চলাকালীন শঙ্খ দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না
ঙ) দেবাদিদেব মহাদেব এবং সূর্যদেবের স্নানের কাজে কখনোই শঙ্খ ব্যবহার করা যাবে না

শঙ্খের ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক উপকারিতাঃ

১) শঙ্খকে ওম ধ্বনির উৎপাদক বলা হয়

২) শঙ্খ আনে সুনাম, দীর্ঘায়ু আর যশ; দূর করে সকল পাপ, ক্লেশ, উৎপন্ন করে পবিত্র জলের প্রস্রবণ

৩) একবার শঙ্খ বাজালে যে ধ্বনি উৎপন্ন হয় তা থেকে তিন ধরণের শক্তি নির্গত হয়একটি হল চৈতন্যএই শক্তি বৃত্তাকারে শাঁখের খোলোসের মধ্যভাগ হতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েআরেকটি হল ধ্যানযা তির্যক সরলরৈখিক পথে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েআর সর্বশেষ শক্তিটি হল আনন্দযেটা ক্রমান্বয়ে শঙ্খের মধ্যভাগ হতে ধীরে ধীরে সবার অন্তরে ছড়িয়ে পড়ে

৪) প্রকৃতিতে প্রধানত তিন ধরণের শক্তি তরঙ্গ থাকেএই তরঙ্গগুলোই হল সমগ্র সৃষ্টি জগতের নির্মাণ তন্তুএদের মধ্যে একটি হল সত্যবাদ তরঙ্গআর বাকী দুটি রাজসিক (অহঙ্কার অর্থে) তরঙ্গএবং তমসিক (দুষ্প্রবৃত্তি) তরঙ্গএই প্রতিটি তরঙ্গের মধ্যে পাঁচ ধরণের মহাজাগতিক উপাদান থাকেএরা হল ভূমি”, “জল”, “আগুন”, “বায়ুএবং ইথারসত্যবাদ, রাজসিক এবং তমসিক তরঙ্গের সংখ্যা এই পাঁচটি উপাদানের ভিত্তিতে যথাক্রমে ১৫০ টি, ২০০ টি এবং ১৫০ টি (সত্যবাদ তরঙ্গের বিপরীত অনুক্রমে বণ্টিত)রাজসিক আর তামসিক তরঙ্গদ্বয় সত্যবাদ তরঙ্গকে মন্দিরের পরিবেশে প্রবেশে বাধা দেয়শঙ্খনাদ রাজসিক এবং তামসিক তরঙ্গদ্বয়কে প্রতিহত করে মন্দিরের পরিবেশ, সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মাঝে সত্যবাদ শক্তিকে প্রবেশ করায় যা মনের সব অহংবোধ, জড়তা, আঁধার কেটে সবকিছুকে পবিত্র করেআবার শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খে খাঁজগুলো অসম ভাবে বণ্টিত থাকে, যার দরুন এই শঙ্খ বাজালে সত্যবাদ তরঙ্গের ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে রাজসিক আর তমসিক তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে কম্পাঙ্ক বেড়ে যায়, অর্থাৎ তীব্রতা বাড়ে

৫) যর্যুবেদএবং আধুনিক বিজ্ঞান এর ভাষ্যমতে শঙ্খ থেকে উৎপন্ন কম্পন যে তরঙ্গের সৃষ্টি করে তা বাতাসের সাথে মিশে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে

৬) নিয়ম মাফিক শঙ্খ বাজালে, বাদকের মস্তিষ্কের গোড়ার সুষুম্না কাণ্ড সতেজ থাকে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং রাজসিক ও তমসিক তরঙ্গের অন্তর্গত তেজ ও বায়ুর উপাদানগুলো সাম্যাবস্থায় থাকে
৭) আয়ূর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থায় শঙ্খচূর্ণ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেশঙ্খ চূর্ণ ক্যালসিয়া, ম্যাগনেসিয়াম এবং লৌহ ধারণ করে যা পেটের পিড়া দূর করে পরিপাক ব্যবস্থাকে সচল রাখে

৮) শঙ্খের সাথে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সমাহারে তৈরী বড়ি শঙ্খবতীযা ডিসপেপসিয়ানামক অন্ত্রের রোগের চিকিৎসায় ফলদায়কএটি বাত, পিত্ত দমন এবং সৌন্দর্য ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

৯) কিছু কিছু শঙ্খ মুক্তা তৈরী করে
------------------------------------------------------ 

কৃতজ্ঞতাঃ জয় ঘোষ 
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।