• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩

"প্রসঙ্গঃ কুমারী পূজা" - শ্রী জয় রায়


ছোট বেলা থেকেই রামায়ন ও মহাভারতে আমরা অনেক বড় বড় যজ্ঞের কথা শুনে এসেছি। কলি যুগের সব থেকে বড় যজ্ঞ হচ্ছে দুর্গোৎসব। এই দুর্গোৎসবের একটি বড় অঙ্গ হচ্ছে কুমারী পূজা। কুমারী পূজা নিয়ে আমাদের মধ্যে যেন কৌতূহলের কমতি নেই।

ভারত ও বাংলাদেশের রামকৃষ্ণ মিশনসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে অষ্টমীর মহাতিথিতে এই কুমারী পূজা হয়ে থাকে। শাস্ত্রকাররা নারীকে সন্মান ও শ্রদ্ধা করতে এই পূজা করতে বলেছেন। আমাদের সনাতন ধর্মে নারীকে সন্মানের শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়েছে। “নিজেদের পশুত্বকে সংযত রেখে নারীকে সন্মান জানাতে হবে”- এটাই কুমারী পূজার মূল লক্ষ্য।

বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এ রামের জন্য ব্রহ্মার দুর্গাপূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় তখন শরৎকাল, দক্ষিণায়ণ দেবতাদের নিদ্রার সময়
Share:

‘সনাতনধর্মে গৌরবের চতুষ্টয়’ - শ্রী গৌরমোহন দাস


ভূমিকা :
   সনাতনধর্মে গৌরব করার মতো বহু কিছু রয়েছেঅথচ আজকাল আমরা অনেকেই আছি আমাদের সনাতনধর্মীয় সাধারণ ধারণাটুকুও রাখতে চেষ্টা করি নাঅথচ অন্যের জিনিসটি আয়ত্ব করতে বা বলতে বেশ ভালই পারি! যুবসমাজের অনেকেই তাদের মোবাইল ফোনট Receive করেন অন্য ধর্মমতের সম্বোধন দিয়েঅপরিচিত কারো সামনে গিয়েও আমাদের ধর্মমতে ঐতিহ্যগত শব্দ (নমস্কার বা আদাব) না বলে সেই সব ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়! আমরা জোড় হাত বুকে রেখে অবনত মস্তকে নমস্কারকরি নমস্কারের তাতপর্য কত চমতকার সে কথা ভাবি না! আচার্য ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী নমস্কারের সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেনতা হলো- আমার সকল হৃদয়, মন, অঙ্গাদি দিয়ে আপনার মধ্যে যে ঈশ্বর বাস করছেন, তাকে অভিবাদন জানাচ্ছি কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলেও অন্যের কথাটি ভাল বলতে দেখা যায়! কিন্তু সনাতনধর্মাবলম্বীগণকে বলতে হয়- দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু’ (তিনি দিব্যলোকে গমন করুন); ঐ কথাটি হয়তো অনেকের জানা নেইএ প্রসঙ্গে স্বামী প্রণবানন্দজীর ভায়ায় বলতে হয়- মানুষের উত্থান-পতন যে কোনো সময় হইতে পারে
Share:

ঢাকার প্রাচীন ১০ মঠ, মন্দির ও আশ্রমের আদ্যেপান্ত

সেন শাসনামলে রাজা বল্লাল সেনের হাতেই ঢাকায় প্রথম মন্দির নির্মিত হয় মন্দিরটি ঢাকেশ্বরী মন্দির নামে পরিচিতপরবর্তীকালে শঙ্করাচার্যের গিরিধারী অনুসারীরা রমনায় একটি মঠ নির্মাণ করেনপরে তা রমনা কালীমন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেঢাকার আদি বাসিন্দা বলে খ্যাত বসাকরা ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীতাঁরা মৈশুণ্ডীতে মন্দির নির্মাণ করে উপাসনা করতেন মৈশুণ্ডীতে প্রাচীন মন্দিরের স্থলে বর্তমানে নির্মিত হয়েছে ইসকন মন্দির

এভাবেই বিচ্ছিন্নভাবে মন্দির নির্মাণ চলছিলতবে সুলতানি আমলে এতে ভাটা পড়েমোগল আমলে আবার মন্দির নির্মাণ শুরু হয়তখন ক্ষুদ্র ভূস্বামীরা নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবেই বাস করতেনবিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় ষোল শতকের আশির দশকে ঢাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেনসেটি আজ সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির হিসেবে পরিচিতষোল শতকের শেষ দিকে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহ ঈশা খাঁকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বাংলায় আসেনতখন তিনি ঢাকায় একটি দিঘি খনন করেন এবং নামকরণ করেন গঙ্গাসাগরএ দিঘির পাশেই একটি কালীমন্দির নির্মাণ করেন, নাম বরদেশ্বরী কালীমন্দিরসে মন্দির আজও আছে স্বনামেঢাকার যেসব সুবাদার পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন, তাঁদের সময়ও ঢাকায় মন্দির নির্মিত হয়এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্গত শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম অন্যতম
Share:

জাতিস্মর


জাতিস্মরদের পূর্বজন্ম মনে রাখার অলৌকিক ক্ষমতা থাকে জাতিস্মরদের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া মানে পূর্বজন্ম এবং পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা অনেক বৈজ্ঞানিক বলেন যে পুনর্জন্মকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণ করা সম্ভবপৃথিবীর বহু স্থানে ছোট শিশুরা নিজেদের জাতিস্মর হিসাবে ঘোষণা করেএদের বয়স সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর হয়

অনেক সময় এরা, এদের ব্যবহারে, একরকম ভীতি প্রদর্শন করেদেখা যায় যে ওই শিশুদের পূর্বজন্ম সংক্রান্ত বক্তব্যে ভীতির কারণ পাওয়া যায় বহু ক্ষেত্রে জাতিস্মরের পূর্বজন্মের পরিবারের সঙ্গে বর্তমান জন্মের পরিবারের কোন সম্পর্ক অথবা পরিচয় থাকে নাসাধারণত সাত বছর বয়স অবধি জাতিস্মরেরা পূর্ব জীবন মনে রাখতে পারে
Share:

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩

প্রসঙ্গঃ 'গণশ্রাদ্ধ-৭১'


গত ১০ সেপ্টেম্বর এর “সমকাল” পত্রিকার উপসম্পাদকীয় তে বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা “বীরেন্দ্রনাথ অধিকারী”র একটি লেখা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লেখাটিতে তিনি আগামী মহালয়ার দিন শ্রী শ্রী রমনা কালী মন্দিরে আয়োজিত 'গণশ্রাদ্ধ-৭১' অনুষ্ঠানকে সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ ও উস্কানিমূলক আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের জন্য সব অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা লেখাটির তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই লেখাটিতে তিনি কয়েকটি শাস্ত্রীয় আপত্তি উল্লেখ করেছেন।

সাধারনত প্রয়াত ব্যক্তির সাথে রক্ত সম্পর্ক হীন কেউ শ্রাদ্ধাদি করতে পারেন না। কিন্তু ওই প্রয়াত ব্যক্তির সাথে যদি কেউ আত্মিক ঐক্য অনুভব করেন ,তাহলে তিনি তার অন্ত্যেষ্টি করতে পারেন। মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান রামচন্দ্র নিজে তা আচরন করে প্রমান দিয়ে গেছেন । সীতা হরন ঠেকাতে গিয়ে পক্ষীরাজ জটায়ু যখন রাবনের হাতে নিহত হন , তখন রাম স্বহস্তে জটায়ুর দাহ সংস্কার করেন। বাল্মিকী রামায়নের ৬৮ সর্গে রাম বলছেন, "এখন এই জটায়ুর বিনাশে আমার যে কষ্ট হচ্ছে, সীতা হরনে তেমনটি হয় নি। ইনি স্রীমান রাজা দশ রথের মত আমার মাননীয় ও পূজ্য ।... মহাবল আমি স্বয়ং তোমার দাহ কর্ম করছি। তুমি এখন-ই উৎকৃষ্ট লোকে যাও। " এরপর রাম ব্রাহ্মনেরা প্রেতের উদ্দেশে যে মন্ত্র জপ করেন , জটায়ুর জন্য সেই স্বর্গ সাধন মন্ত্র জপ করলেন। এবং শেষে পিণ্ড, তর্পণ , জপ করে , জটায়ু যে কুলের জীব অর্থাৎ পক্ষী কুল কে আমন্ত্রন করে শ্রাদ্ধে ভোজন করিয়েছিলেন।

“গণ শ্রাদ্ধ” শব্দটি হিন্দু শাস্ত্রে না থাকলেও, প্রকারন্তরে গণ শ্রাদ্ধ হিন্দু সমাজে বহুদিন ধরেই আছে। কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সেনা ও বীর জমায়েত হয়েছিল। পঞ্চ পাণ্ডব সমেত অল্প কিছু ব্যক্তি যুদ্ধ শেষে জীবিত ছিলেন। মহাভারতের স্ত্রী পর্বে দেখা যায় যে, ধৃত রাষ্ট্র , ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির সমেত জীবিত কুরু গণ এইসব প্রয়াত সেনা ও বীরগণের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন করেছিলেন। লীলা পুরুষোত্তম ভগবান কৃষ্ণ, ধর্মাত্মা বিদুর ও অখিল শাস্ত্র প্রনেতা ভগবান ব্যাসের উপস্থিতেই এই মহাভারতীয় গণ শ্রাদ্ধ ও দান ইত্যাদি অন্য ধর্মীয় আচার সম্পন্ন হয়েছিল।

রাম ও কৃষ্ণ চরিতের মত উৎকৃষ্ট প্রমান যেখানে বিদ্যমান ,সেখানে অযথা বিতর্ক বর্জনীয়।এই 'গণ শ্রাদ্ধ ৭১" বা "পিতৃ যজ্ঞ " কে যারা বিরোধিতা করছেন ,তাঁদের উদ্দেশ্য অসাধু। এ এক মঙ্গলময় অনুষ্ঠান ,যাতে বিদেহী আত্মা ও তাঁদের পরিবার এবং সেই সাথে দেশ ---সকলের মঙ্গল ঘটবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে যেহেতু ওইসব হিন্দু আত্ম বলিদান দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের ও উচিত এই গণ শ্রাদ্ধে ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির -এর মতই রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান করা। কোনও রকম প্ররোচনার ফাঁদে সরকার, রাজনৈতিক দল বা হিন্দুগন যাতে না পড়ে সেজন্য সজাগ থাকুন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত হিন্দুদের অনেকের-ই শাস্ত্রীয় রীতি মেনে দাহ ,অশৌচ, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি অন্ত্যেষ্টি করা সম্ভব হয় নি। এর ফলে ওই প্রয়াত ব্যক্তি বর্গ ,যারা প্রেত দশায় কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁদের উত্তরপুরুষ গণ-এর পরিবারের (বাংলাদেশ বা ভারত যে দেশেই থাকুন না কেন এখন ),পক্ষে পূর্বজদের এই অবস্থা হানিকর। তাই, গণশ্রাদ্ধের জন্য ‘মহালয়া’কে ধার্য করা হয়েছে। এ দিনে তো পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা অবশ্যই কল্যাণ। কুশপত্তলিকা দাহ করে শ্রাদ্ধ করা দোষণীয় নয়। উল্লেখ, সেখানে ষোড়শপিণ্ড দানের মাধ্যমে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে।


পরিশেষে যেসব হিন্দু এই গণ শ্রাদ্ধের আয়োজন করেছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই এই জন্য যে বিলম্বে হলেও বাঙালি হিন্দু জাতির পক্ষ থেকে তারা এই জরুরি , আবেগপূর্ণ এবং শাস্ত্র সম্মত সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে। এই অনুষ্ঠান টি সফল করার সময় শাস্ত্রীয় মর্যাদা যেন যথাযথ থাকে সেদিকেও তাঁদের নজর দিতে অনুরোধ করি। পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের- ও উচিত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা বা এমন উদ্যোগ কে সমর্থন করা। কারন ৭১-এর যুদ্ধে তাঁদের - ও অনেকের স্বজন নিহত হয়েছিলেন।

ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন। হরি ওঁ। জয় মা। জয় প্রভু।


বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ
১) শ্রী দেবাশিস সিনহা, কলকাতা
২) শ্রী গৌরমোহন দাশ, ঢাকা
৩) শ্রী জয় রায়, রাজশাহী

"সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি" ব্লগ ও গ্রুপ
Share:

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩

আমেরিকান মহাকাশ বিজ্ঞানী কার্ল সেগান ও সনাতন ধর্ম

আমেরিকান মহাকাশ বিজ্ঞানী কার্ল সেগান সনাতন ধর্ম
সম্পর্কে বলেনঃ "হিন্দু ধর্ম ই একমাত্র ধর্ম যেখানে,মহাবিশ্বের সৃষ্টি-
ধ্বংসের অসংখ্য চক্রের কথা স্বীকার করা হয়েছে।আর
হিন্দুদের সময়-মান ও আধুনিক সময়-মানের কাছাকাছি।পৃথিবী
র দিবা-রাত্রির চব্বিশ ঘন্টার চক্র থেকে শুরু করে ব্রহ্মার
৮.৬৪ বিলিয়ন বছর ব্যাপি দিবা-রাত্রির চক্রের ধারণা ও
এখানে রয়েছে..যা সূর্য ও চন্দ্রের আয়ুস্কালের চেয়ে বেশি,আর বিগ ব্যাঙ বা বৃহত্ বিস্ফোরণ এর সময়কালের চেয়ে দ্বিগুণ।
এমন কি আরো বড় টাইম -স্কেল এর ধারণা হিন্দু
শাস্ত্রে রয়েছে। হিন্দুরা সৃষ্টিজগত কে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর প্রাচীন
বলে জানে।আশ্চর্যের বিষয় এই যে,এসব আধুনিক
ধারণা হিন্দুরা সেই সময় টাতে করেছিল যখন
খ্রিস্টানরা পৃথিবীর ইতিহাস কে মাত্র হাজার বছরের আর
মায়ান রা পৃথিবীর ইতিহাস কে মিলিয়ন বছর
পুরনো বলে ভেবেছিল।" সত্যি ই আমাদের আছে এক সমৃদ্ধ অতীত আর এক সম্ভাবনাময়
বর্তমান।ভবিষ্যত্ কে আলোকিত করতে আমাদের অতীত ঐতিহ্য
কে পাথেয় করেই এগিয়ে যেতে হবে।
নমস্কার।।
ওঁ শান্তি।।
Courtesy by Dhipika chokroborti
Share:

বহু মত ,এক পথ


আদর্শ পরিবারে প্রতি সদস্যের মত ভিন্ন ,কিন্তু
তারা এক -ই ছাতার তলায়
সুখে দুখে একসাথে কাটায়। মতান্তর ঘটলেও বৃহৎ
আনন্দ বা বড় বিপদের দিনে সেই মতভেদ
কে দূরে সরিয়ে তারা পরস্পরের দিকে সহজগিতার
হাত বাড়িয়ে দেয়। হিন্দু জাতিও
তেমনি একটি পরিবার। এই বৃহৎ
পরিবারে স্বাভাবিক ভাবেই ভিন্ন ভিন্ন মত
থাকবে। থাকবে মতভেদ। কিন্তু সেই মতভেদ যেন
আমাদের মিলনের অন্তরায় না হয়। আজ হিন্দু
জাতি রুপ পরিবারে বড় সঙ্কট। মতান্তরের অতি গন
তান্ত্রিকতায় হিন্দু ঐক্য ধ্বংস হয়ে গেছে। সে জন্য
কেউ কেউ হয়ত বিচলিত হয়ে এক গুরু ,এক মন্ত্র
ইত্যাদি -এর কথা বলেছেন। কিন্তু এইভাবে অহিন্দু
জাতিগুলির মত এক বিশেষ মতবাদ জোর
করে গিলিয়ে এ সমস্যার চট জলদি সমাধান হবার
নয়।
মত ভেদ (অর্থাৎ গুরু ,মন্ত্র ,ইষ্ট, আচার
ইত্যাদি নির্বাচনে স্বাধীনতা ) স্বীকার
করে আমাদের উচিত পথভেদ দূর করা। যার
যেভাবে ইচ্ছা ঈশ্বরকে ডাকুক, কিন্তু সেই ডাকার
অভিমুখ যেন সনাতন হিন্দুত্তের দিকে থাকে।
তা যেন নাস্তিক, মানবতাবাদি (ওরফে হিন্দু
নিন্দুক) , সেকুলারদের কিম্বা ছদ্ম হিন্দুদের মত
অধর্মের সাথে ধর্মের কোলাকুলিতে পরিনত না হয়।
তাই একুশ শতকের হিন্দুদের একটাই পথ হোক ----সেই
পথ সনাতন হিন্দু ধর্ম কে সর্বান্তকরণে অনুসরন
করা। যত মত তত পথ নয়। বহু মত ,এক পথ ।
লিখেছেন : দেবাশিস সিংহ
Share:

শ্রীকৃষ্ণের ১৬০০০ মহীয়সী !!


যিনি রাধাকৃষ্ণ জানতে পেরেছেন চিনতে পেরেছেন এই তত্ত্ব তাঁকে কোনদিন ভাবায়নি কেন না তিনি অজ্ঞানতার গভীর অন্ধকার থেকে মুক্ত । সৌর জগতে নানা কিছু বিদ্যমান যাহা বিজ্ঞান আমাদের একটি কাল্পনিক ধারণা তৈরি করে বুঝাতে চেষ্টা করে মাত্র । এখনকার অভিজান এই সৌর জগতের বাহিরে কি আছে তাই জানার উদ্দেশ্যে, হয়ত কিছুদিন পর আরেকটি কাল্পনিক ধারণা মাত্র উপস্থাপন করবে ।
আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী আমাদের প্রবিত্র ধর্ম গ্রন্থ বেদ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। বেদ অর্থে আমরা পরিচিতি পাই "জ্ঞান" ,বেদ শব্দটি এসেছে "বিদ" থেকে যার অর্থ "জানা, পবিত্র জ্ঞান"। এই জ্ঞান আমাদের বর্ননা করে বুঝানো হয়েছে উপনিষদ ও পুরাণের মাধ্যমে । কোন কঠিন বিষয় বুঝানোর জন্য আমরা নানা উদাহরণ যোগ করি যেন যাকে বোঝানো হইতেছে সেযেন বুঝে উঠতে পারে, তাই পূরাণ এখন তাহলে প্রশ্ন আসবে এই সকল চরিত্র কি কাল্পনিক না কাল্পনিক নয়, আমাদের বোঝানের জন্য বিশ্লেষন কারীর অভাব তাই আজ আমরা নানা জনের প্রশ্নের সামনে মাথা নত করে দাঁড়াই । আমি ও একজন সেই দলের মহাত্মা স্বামীবিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, শ্রীলপ্রভুপাদ, শ্রীধর গোস্বামী সহ নানা ভাগবতের রচিত গ্রন্থ পাঠে আমি কিঞ্চিৎ জানতে পেরেছে, আমার এই সল্প জ্ঞান নিয়েই আমি এত বড় দুঃসাহস দেখাইতেছি,

শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সম্বন্ধে একমাত্র গ্রহনযোগ্য গ্রন্থ ব্যসদেব এর মহাভারত।সেই ব্যসদেব মহাভারতে তাঁর সম্বন্ধে কি লেখা আছে দেখা যাক-
"শ্রীকৃষ্ণের একমাত্র স্ত্রী ছিলেন রুক্সিনীদেবী যিনি ছিলেন পরম ধার্মিক,বিদূষী ও পতিব্রতা।সন্তান জন্মদানের পূর্বে তাঁরা উভয়েই বদরিকাশ্রমে যান ও দীর্ঘ বারবছর কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করেন।এরপর রুক্সিনীদেবী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন যার নাম রাখা হয় প্রদ্যুম্ন।"
[ব্যসকৃত মহাভারত,সৌপ্তিকাপর্ব, ২/২৯-৩০,তথ্যসূত্র- শ্রীকৃষ্ণের জীবনী নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ৩৬ বছরের সুদীর্ঘ গবেষনালব্ধ ফলাফল]

পূরাণে যে কত জন মহিয়ষিনীর নাম পাওয়া যায় তত্ত্ববিচার করিলে তাঁহারা সকলেই একজনই । মূলকথা এখনও আমরা শ্রীকৃষ্ণ কে চিনতে পারি নাই তাই আমাদের এই অজ্ঞানতা ।
বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন- ভারতবর্ষের অধিকাংশ হিন্দুর, বাঙ্গালা দেশের সকল হিন্দুর বিশ্বাস যে, শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বরের অবতার। কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ং—ইহা তাঁহাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বাঙ্গালা প্রদেশে, কৃষ্ণের উপাসনা প্রায় সর্বব্যাপক। গ্রামে গ্রামে কৃষ্ণের মন্দির, গৃহে গৃহে কৃষ্ণের পূজা, প্রায় মাসে মাসে কৃষ্ণোৎসব, উৎসবে উৎসবে কৃষ্ণযাত্রা, কণ্ঠে কণ্ঠে কৃষ্ণগীতি, সকল মুখে কৃষ্ণনাম। কাহারও গায়ে দিবার বস্ত্রে কৃষ্ণনামাবলি, কাহারও গায়ে কৃষ্ণনামের ছাপ। কেহ কৃষ্ণনাম না করিয়া কোথাও যাত্রা করেন না; কেহ কৃষ্ণনাম না লিখিয়া কোন পত্র বা কোন লেখাপড়া করেন না; ভিখারী “জয় রাধে কৃষ্ণ” না বলিয়া ভিক্ষা চায় না। কোন ঘৃণার কথা শুনিলে “রাধে কৃষ্ণ‌!” বলিয়া আমরা ঘৃণা প্রকাশ করি; বনের পাখী পুষিলে তাহাকে “রাধে কৃষ্ণ” নাম শিখাই। কৃষ্ণ এদেশে সর্বব্যাপক।
কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ং। যদি তাহাই বাঙ্গালীর বিশ্বাস, তবে সর্বসময়ে কৃষ্ণরাধনা, কৃষ্ণনাম, কৃষ্ণকথা ধর্মেরই উন্নতিসাধক। সকল সময়ে ঈশ্বরকে স্মরণ করার অপেক্ষা মনুষ্যের মঙ্গল আর কি আছে? কিন্তু ইঁহারা ভগবান্‌কে কি রকম ভাবেন? ভাবেন, ইনি বাল্যে চোর—ননী মাখন চুরি করিয়া খাইতেন; কৈশোরে পারদারিক—অসংখ্য গোপনারীকে পাতিব্রত্যধর্ম হইতে ভ্রষ্ট করিয়াছিলেন; পরিণত বয়সে বঞ্চক ও শঠ-বঞ্চনার দ্বারা দ্রোণাদির প্রাণহরণ করিয়াছিলেন। ভগবচ্চরিত্র কি এইরূপ? যিনি কেবল শুদ্ধসত্ত্ব, যাঁহা হইতে সর্বপ্রকার শুদ্ধি, যাঁহার নামে অশুদ্ধি, অপুণ্য দূর হয়, মনুষ্যদেহ ধারণ করিয়া সমস্ত পাপাচরণ কি সেই ভগবচ্চরিত্রসঙ্গত? https://www.facebook.com/gitaschool
ভগবচ্চরিত্রের এইরূপ কল্পনায় ভারতবর্ষের পাপস্রোত বৃদ্ধি পাইয়াছে, সনাতনধর্মদ্বেষিগণ বলিয়া থাকেন। এবং সে কথার প্রতিবাদ করিয়া জয়শ্রী লাভ করিতেও কখনও কাহাকে দেখি নাই। আমি নিজেও কৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবান্ বলিয়া দৃঢ় বিশ্বাস করি; পাশ্চাত্য শিক্ষার পরিণাম আমার এই হইয়াছে যে, আমার সে বিশ্বাস দৃঢ়ীভূত হইয়াছে। ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের যথার্থ কিরূপ চরিত্র পুরাণেতিহাসে বর্ণিত হইয়াছে, তাহা জানিবার জন্য, আমার যতদূর সাধ্য, আমি পুরাণ ইতিহাসের আলোচনা করিয়াছি। তাহার ফল এই পাইয়াছি যে, কৃষ্ণসম্বন্ধীয় যে সকল পাপোপাখ্যান জনসমাজে প্রচলিত আছে, তাহা সকলই অমূলক বলিয়া জানিতে পারিয়াছি, এবং উপন্যাসকারকৃত কৃষ্ণসম্বন্ধীয় উপন্যাস সকল বাদ দিলে যাহা বাকি থাকে, তাহা অতি বিশুদ্ধ, পরমপবিত্র, অতিশয় মহৎ, ইহাও জানিতে পারিয়াছি। জানিয়াছি—ঈদৃশ সর্বগুণান্বিত, সর্বপাপসংস্পর্শশূন্য, আদর্শ চরিত্র আর কোথাও নাই। কোন দেশীয় ইতিহাসেও না, কোন দেশীয় কাব্যেও না।
কি প্রকার বিচারে আমি এরূপ সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইয়াছি, তাহা বুঝান এই গ্রন্থের একটি উদ্দেশ্য। কিন্তু সে কথা ছাড়িয়া দিলেও এই গ্রন্থের বিশেষ প্রয়োজন আছে। আমার নিজের যাহা বিশ্বাস, পাঠককে তাহা গ্রহণ করিতে বলি না, এবং কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব সংস্থাপন করাও আমার উদ্দেশ্য নহে। এ গ্রন্থে আমি তাঁহার কেবল মানবচরিত্রেরই সমালোচনা করিব। তবে এখন হিন্দুধর্মের আলোচনা কিছু প্রবলতা লাভ করিয়াছে। ধর্মান্দোলনের প্রবলতার এই সময়ে কৃষ্ণচরিত্রের সবিস্তারে সমালোচনা প্রয়োজনীয়।
(চলবে) হয়ত আমার এই অনুসন্ধান সম্পুর্ন নয় তারপরেও আমার প্রত্যাশা আমাদের অজ্ঞানতা একদিন দূরীভূত হবেই হবে আর আমরা এইতত্ত্ব সেইদিন বুঝিয়া উঠিতে পারিব ।

বেদবাণীঃ ঋগবেদ এর তিনটি মন্ত্র যথাক্রমে ১.২৪.৭,৪.৩.২ ও ১০.৭১.৪ এ বলা হয়েছে "যায়েব পত্য উষতে সুভাসহ অর্থাত্‍ যেভাবে জ্ঞানীগন জ্ঞানপ্রাপ্ত হন ঠিক সেভাবে একক পতি-পত্নীযুক্ত সংসার আনন্দ ও সুখ লাভ করে।

ঋগবেদ ১০.৮৫.২৩ এ বলা হয়েছে স্বামী ও স্ত্রীর সবসময় উচিত পুনরায় বিয়ে না করার ব্যপারে সংযমী হওয়া।

অথর্ববেদ ৭.৩৮.৪ বলেছে "স্বামীর উচিত শুধু একমাত্র স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত থাকা।দ্বিতীয় কোন নারীর প্রতি অনুরাগ তো দুরে থাক,অন্যকোন নারী সম্বন্ধে তার আলোচনাও করা উচিত নয়।"
বহুবিবাহ নিষিদ্ধের এর চেয়ে স্পষ্ট নিদর্শন আর কি থাকতে পারে!

ঋগবেদ ১০.১০৫.৮ বলেছে যে একাধিক স্ত্রীর অস্তিত্ব মানেই জাগতিক সকল দুঃখের আনায়ন।

ঋগবেদ ১০.১০১.১১ বলেছে দুই স্ত্রীযুক্ত ব্যক্তিকে সেভাবেই কাঁদতে হয় ঠিক যেভাবে চলমান রথের ঘোড়া উভয় দিক থেকে চাবুক এর আঘাতে হ্রেষা রব করে!

ঋগবেদ ১০.১০১.১১ এও বলেছে যে একাধিক স্ত্রী জীবনকে লক্ষহীন করে তোলে।

অথর্ববেদ ৩.১৮.২ বলেছে একজন নারীর কখনো যেন কোন সতীন(Co-wife) না হয়।

[ঈশ্বর মঙ্গলময়, কৃষ্ণকৃপা হলে ভক্তের কোন তত্ত্বই অজ্ঞাত থাকে না ]

পিতৃদেব ডাঃ সুদেব চন্দ্র দাসের আশির্বাদে,
দাসানুদাস শ্রীমান কৃষ্ণকমল ।
মেহারকালীবাড়ি , শাহ্‌রাস্তি, চাঁদপুর, বাংলাদেশ ।
๑۩๑ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্কুল ๑۩๑
Share:

ইন্দ্রিয় সংযম



যারা বুদ্ধিমান তারা ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রিত করে জীবনযাপন করবে। আর যারা নির্বোধ তারা ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে জীবনযাপন করে। ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে জীবনযাপন করলে তার যতো কিছুই প্রাপ্তি হোক না কেন পরিণামে তার তৃপ্তি হয় না। আর অতৃপ্তি হচ্ছে দুঃখের কারণ। যদি কারও কাছে কিছু নাও থাকে কিন্তু অন্তরে তিনি যদি তৃপ্ত হন তাহলে তিনি সুখেই আছেন, আর যদি কারও কাছে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি অন্তরে অতৃপ্ত হন তাহলে তিনি দুঃখেই আছেন। তাহলে সুখ বা দুঃখের মূল কারণটি হচ্ছে তৃপ্তি এবং অতৃপ্তি, অন্তরে সন্তুষ্টি এবং অশান্তি। অন্তরে যিনি সন্তুষ্ট তার কাছে যদি কিছু নাও থাকে, তবুও তিনি সুখী। আর অন্তরে যিনি অতৃপ্ত, অন্তরে যিনি অসন্তুষ্ট, অন্তরে যিনি অশান্ত, তার কাছে সবকিছু থাকলেও তিনি অসুখী।

যারা ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করে, যারা গো-দাস তারা সর্ব অবস্থাতেই অতৃপ্ত থাকে, কেন না ইন্দ্রিয়ের অবস্থাটিই এই রকম। ইন্দ্রিয় সবসময়ই ভোগ চাইছে। সে সর্বদা বলে আমি এটা চাই, আমি ওটা চাই। কিন্তু সে যতই পায় কখনও কি সে তৃপ্ত হয়? এই সম্বন্ধে বলা হয়েছে - আগুনে যেমন ঘি ঢালার ফলে কখনও আগুন নেভানো যায় না, ঠিক তেমনি ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করার মাধ্যমেও ইন্দ্রিয়গুলিকে তৃপ্ত করা যায় না।

না জাতো কামান্ উপভোগেন সংযতে। অর্থাৎ উপভোগের দ্বারা কখনই ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করা যায় না বা তৃপ্ত করা যায় না। অগ্নিতে ঘি ঢালার ফলে সে আগুনটি কখনই নেভানো যায় না। ঘি ঢেলে কি আগুন নেভানো যায়? পক্ষান্তরে কি হয়? যত ঘি ঢালবে ততই আগুন বাড়তে থাকবে। আগুন উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে। অর্থাৎ যারা ইন্দ্রিয় উপভোগের মাধ্যমে তৃপ্তি সাধন করতে চায় তারা কখনই তৃপ্ত হতে পারে না।

তাহলে আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে চাই তবে আমাদের কি করতে হবে? ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করার পরিবর্তে ইন্দ্রিয়কে সংযত করতে হবে। আমরা যদি ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করি, অর্থাৎ ইন্দ্রিয় যা চায় তা যোগান দেওয়ার জন্য যদি তৎপর হই, তাহলে আমরা কোন দিনই সুখ ভোগ করতে পারব না। জড় জাগতিক জীবন মানে হচ্ছে ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করা। চোখ বলছে আমাকে এটা দাও, তখন সঙ্গে সঙ্গে সে সেটা পাওয়ার জন্য তৎপর হচ্ছে। তাহলে সে কার দাসত্ব করছে?

ইন্দ্রিয় বলছে আমাকে এটা দাও তখন সে সেটা পাওয়ার জন্য ছুটছে। তেমনি স্পর্শ ইন্দ্রিয় বলছে আমি এটা চাই, ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় বলছে আমি এটা চাই, জিহ্বা ইন্দ্রিয় বলছে আমি এটা চাই এবং কর্ণ ইন্দ্রিয় বলছে আমি এটা চাই। এখন সেই বেচারা এই পাঁচ ব্যক্তির দাসত্ব করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। একজনের দাসত্ব করাই কঠিন, আর পাঁচজনের দাসত্ব করা, বিশেষ করে যখন পাঁচজন একসঙ্গে দাবী করতে থাকে, তখন তার অবস্থাটা কি রকম হয়?

অতএব আমরা কি ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করব, না ইন্দ্রিয়কে সংযত করব? ইন্দ্রিয় সংযম করার উপায়টি কি?

ইন্দ্রিয় সংযমের উপায়টি হচ্ছে যেমন - আমাদের দেহটিকে যদি একটি রথের সঙ্গে তুলনা করি, ইন্দ্রিয়গুলিকে যদি পাঁচটি ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করি, পঞ্চ ইন্দ্রিয় পাঁচটি ঘোড়া, তাহলে এই রথটি কিভাবে আমাদের চালাতে হবে? ঘোড়াগুলিকে সংযত করার জন্য লাগাম দরকার। লাগামটি কি? মন। তাহলে এই মন দিয়ে ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করতে হবে। লাগাম ছাড়া কি ঘোড়াগুলি সামলানো যায়? আবার লাগামটাকে সংযত করতে হলেও একজন সুদক্ষ সারথি বা চালক প্রয়োজন। তাহলে এখানে সারথি কে? বুদ্ধি হচ্ছে সারথি, আবার বুদ্ধি নিজে নিজেও যথার্থ সারথ্য করতে পারে না। বুদ্ধি কি করে? যথার্থ সারথি কে? কৃষ্ণ। আমাদের বুদ্ধিটি যদি কৃষ্ণকে অপর্ণ করি তাহলে ইন্দ্রিয়গুলি পরিচালিত হবে মনের দ্বারা।

তাই ভগবদ্গীতার নির্দেশপি কি পাচ্ছি আমরা? মনটাকে কৃষ্ণকে অর্পণ কর - “মন্মনা ভব” - তাহলে লাগামটা কৃষ্ণের হাতে তুলে দাও। লাগামটা যদি কৃষ্ণের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাহলে ইন্দ্রিয়গুলি সংযত হবে। রথটা চলবে ঠিকমতো। দেহরূপ রথটা যদি ঠিকমতো চলে তাহলে আমাদের গন্তব্য স্থানটি কোথায়? ভগবদ্ধামে। অতএব প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ কি? লাগামটি কৃষ্ণের হাতে তুলে দেওয়া। অতএব সেই জন্যেই বলা হয়েছে মন্মনা। “মন্মনা” হতে হলে কি করতে হবে? “মদ্ভক্ত”- কৃষ্ণের ভক্ত না হলে মনটা শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মে অপর্ণ করা যাবে না। আবার যদি ভক্ত হই তাহলে কি হবে? “মদ্যাজি” - যাজনা করতে হবে। “মাম নমস্কুরু” - কৃষ্ণের চরণে প্রণতি নিবেদন করে নিজেকে সর্বোতভাবে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে অর্পণ করতে হবে।

শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ
(জুন ২০০৭, শ্রীরাধাদেশ ধাম, বেলজিয়াম)
Share:

কুপ্রথা ও কুসংস্কার

আমাদের হিন্দু/সনাতন সমাজে নানা কুপ্রথা, কুসংস্কারে জজ্জরিত হইয়া পড়িয়া ছিল, যদিও বর্তমান যুবক সমাজের কল্যানে আমাদের অনেক উন্নতি ঘটিয়াছে আরোও উন্নতির প্রয়োজন। স্বামী বিবেকানন্দ এই কুপ্রথা ও কুসংস্কার হইতে জাতি কে উদ্ধার করিবার লক্ষ্যে নানা গবেষণা করিয়াছেন, তাহা যুব সমাজকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিয়াছেন, আজ এখানে কিছু অংশ সকলের কল্যান কামনায় প্রচার করিলাম-
শঙ্করাচার্য প্রভৃতি যুগাচার্য-জাতিগঠনকারী ছিলেন। তাঁহারা যে-সব অদ্ভুত ব্যাপার করিয়াছিলেন, তাহা আমি তোমাদিগকে বলিতে পারি না, আর তোমাদের মধ্যে কেহ, আমি যাহা বলিতে যাইতেছি, তাহাতে বিরক্ত হইতে পারো।


কিন্তু আমার ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতায় আমি ইহার সন্ধান পাইয়াছি, আর আমি ঐ গবেষণায় অদ্ভুত ফল লাভ করিয়াছি। সময়ে সময়ে তাঁহারা দলকে দল বেলুচি লইয়া এক মুহূর্তে তাহাদিগকে ক্ষত্রিয় করিতে ফেলিতেন; দলকে দল জেলে লইয়া এক মুহূর্তে ব্রাহ্মণ করিয়া ফেলিতেন। তাঁহারা সকলেই
ঋষি-মুনি ছিলেন—আমাদিগকে তাঁহাদের কার্যকলাপ ভক্তিশ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখিতে হইবে।
তোমাদিগকেও ঋষি—মুনি হইতে হইবে। ইহাই কৃতকার্য হইবার গোপন রহস্য। অল্পাধিক পরিমাণে সকলকেই ঋষি হইতে হইবে। 'ঋষি' শব্দের অর্থ কি? বিশুদ্ধস্বভাব ব্যক্তি। আগে শুদ্ধচিত্ত হও—তোমাতেই শক্তি আসিবে। কেবল 'আমি ঋষি' বলিলেই চলিবে না; যখনই তুমি যথার্থ ঋষিত্ব লাভ করিবে, দেখিবে—অপরে তোমার কথা কোন না কোন ভাবে শুনিতেছে। তোমার ভিতর হইতে এক আশ্চর্য শক্তি আসিয়া অপরের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করিবে; তাহারা বাধ্য হইয়া তোমার অনুবর্তী হইবে, বাধ্য হইয়া তোমার কথা শুনিবে, এমন কি তাহাদের অজ্ঞাতসারে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তোমরা সংকল্পিত কার্যে সহায়ক হইবে। ইহাই ঋষিত্ব।
অবশ্য যাহা বলিলাম তাহাতে কার্যপ্রণালী বিশেষ কিছু বর্ণনা করা হইল না। বংশপরম্পরাক্রমে পূর্বোক্ত ভাব লইয়া কাজ করিতে করিতে বিশেষ বিশেষ কার্যপ্রণালী আবিষ্কৃত হইবে। বিবাদ-বিসংবাদের যে কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই, তাহা দেখাইবার জন্য আমি দুই-একটি কথার আভাস দিলাম মাত্র। আমার অধিকতর দুঃখের কারণ এই যে, আজকাল বিভিন্ন জাতির মধ্যে পরস্পর ঘোর বাদ—প্রতিবাদ চলিতেছে। এটি বন্ধ হওয়া চাই। কোন পক্ষেরই ইহাতে কিছু লাভ নাই। উচ্চতর বর্ণের, বিশেষতঃ ব্রাহ্মণের ইহাতে লাভ নাই;কারণ একচেটিয়া অধিকারের দিন গিয়াছে। প্রত্যেক অভিজাত জাতির কর্তব্য—নিজের সমাধি নিজে খনন করা;আর যত শীঘ্র তাহারা এ-কার্য করে, ততই তাহাদের পক্ষে মঙ্গল। যত বিলম্ব হইবে, ততই তাহারা পচিবে আর ধ্বংসও তত ভয়ানক হইবে। এই কারণে ব্রাহ্মণজাতির কর্তব্য—ভারতের অন্যান্য সকলজাতির উদ্ধারের চেষ্টা করা;ব্রাহ্মণ যদি উদ্ধারের চেষ্টা করেন এবং যতদিনই ইহা করেন, ততদিনই তিনি ব্রাহ্মণ;তিনি যদি শুধু টাকার চেষ্টায় ঘুরিয়া বেড়ান, তবে তাঁহাকে ব্রাহ্মণ বলা যায় না। আবার তোমাদেরও প্রকৃত ব্রাহ্মণকেই সাহায্য করা উচিত, তাহাতে স্বর্গলাভ হইবে। কিন্তু অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে দান করিলে স্বর্গলাভ না হইয়া বীপরিত ফল হয়—আমাদের শাস্ত্র এই কথা বলে। এই বিষয়ে তোমাদিগকে সাবধান হইতে হইবে।
চলিবে........................।।
๑۩๑ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্কুল ๑۩๑
Share:

রাধারাণীর দিব্য জন্মস্থান




পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য লীলাবিলাস স্থান শ্রীবৃন্দাবন। এ স্থানের ধূলিকণাও এত পবিত্র যে স্বয়ং শ্রীব্রহ্মাসহ সকল দেবতারা এই পবিত্র ভূমির ঘাস হয়ে জন্মাতে অভিলাষ করেন। শ্রীবৃন্দাবন ধাম সকলেরই আরাধ্য। কিন্তু কালের প্রভাবে একসময় এই ধাম অবলুপ্ত হলে কলিযুগের পাবনাবতারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই ধামের বহু স্থান উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তিনি তার প্রিয় ষড় গোস্বামীদের উক্ত ধাম পরিচর্যার দায়িত্ব অর্পন করেন। ষড় গোস্বামীগণও বৃন্দাবনের বহু লুপ্ত স্থান উদ্ধার করেন।
বৃন্দাবনের নিকটবর্তী বর্ষাণা এলাকার অন্তর্গত রাভেল নামক অতি পবিত্র স্থানে বৃন্দাবনেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী আর্বিভূত হন। শ্রীমতি রাধারাণীর আবির্ভাব সম্বন্ধে যে বর্ণনা শাস্ত্রে রয়েছে, তা হল, একদিন রাজা বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে যান। সেই সময়ে যমুনা নদী বর্ষাণার রাভেল স্থানটির পাশ দিয়ে বয়ে যেত। ঐ স্থান দিয়ে এক কালে যমুনা নদী যে বয়ে যেত তা ভূতত্ত্বগত প্রমাণ রয়েছে। সেই যাই হোক, রাজা বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন সহস্য সূর্যের আলোকের মতো জ্যোতির্ময় এক সোনার পদ্ম ঠিক যমুনা নদীর মাঝখানে ফুটে রয়েছে। আর সেই সোনার পদ্মের মধ্যে রয়েছে একটি ছোট শিশুকন্যা। প্রথমে রাজা বৃষভানু বিস্মিত হলেন। কিন্তু ব্রহ্মাজী তখন সেই স্থানে আর্বিভূত হয়ে রাজা বৃষভানুর বিস্ময়ের নিরসন করলেন। তিনি জানালেন যে রাজা বৃষভানু ও তাঁর পত্নী কীর্তিদা পূর্বজন্মে ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা সম্পাদন করেছিলেন। সেই তপশ্চর্যার ফলস্বরূপ এই জন্মে তাঁরা স্বয়ং ভগবানের শক্তি তথা পত্নীকে এইভাবে কন্যারূপে লাভ করেছেন। ব্রহ্মাজীর কথা শুনে রাজা বৃষভানু সেই শিশুকন্যা শ্রীমতি রাধারাণীকে নিজ গৃহে নিয়ে এলেন। কিন্তু দেখা গেল সেই শিশু রাধারাণী কিছুতেই চোখ খুলছেন না। তাঁর চোখ সর্বদা বন্ধ রয়েছে। তবে কি এই শিশুকন্যা অন্ধ ? সকলের এই প্রশ্ন নিরসনের উদ্দেশ্য অবশেষে নারদমুনি রাজা বৃষভানুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে শিশুর এই অন্ধত্ব অবস্থা সত্ত্বেও শিশুর জন্মকালীন সকল ধরনের শুভ উৎসবাদির আয়োজন গৃহে করতে বললেন। নারদমুনীর কথা অনুযায়ী রাজা বৃষ্ণভানু গৃহে উৎসবের আয়োজন করলেন। সেই উৎসবে নন্দ মহারাজ ও শিশু কৃষ্ণসহ সপরিবারে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে আগমন করে শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারাণীর দিকে এগিয়ে গেলেন, রাধারাণী তখন এক দিব্য সৌরভের ঘ্রাণ লাভ করলেন, আর সেই মুহুর্তে রাধারাণী চোখ খুলে প্রথমে দর্শন করলেন তার নিত্য পতি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে বর্ষাণা ক্ষেত্রের রাভেল নামক স্থানে এইসব ঘটনা ঘটেছিল।
এখন রাভেল অত্যন্ত নির্জন এক প্রান্তর। স্বল্প জনসংখ্যার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। তবে এখনও শ্রীমতি রাণারাণীর লীলাস্থলিগুলো বর্তমান। আসুন আমরা চিত্র অনুসারে সেই দিব্য তীর্থস্থান সমূহ দর্শন করি :
১. রাভেলে একটি মাত্র মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি লাইরি লাল মন্দির নামে খ্যাত।
২. খুব ছোট কিন্তু খুব সুন্দর শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ এই বিগ্রহ প্রতিষ্টা করেছিলেন। মন্দিরটি সাদামাটা ছিচছাপ ধরণের।
৩. মন্দির দর্শন ও পরিক্রমার পর আপনি মন্দিরটির প্রশস্ত ছাদে উঠে একদা যমুনা বয়ে যাওয়ার চিহৃ সুস্পষ্ট দেখতে পাবেন। হাজার বছর আগে এখানেই বয়ে যাওয়া যমুনা থেকেই কীর্তিদা ও বৃষভানু রাজা রাধারাণীকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ভক্তের দৃষ্টিতে এই নির্জন রাভেলের মন্দির প্রাঙ্গন অনবদ্য।
৪. মন্দিরের বিপরীত দিকে রয়েছে রাধারাণীর উদ্যান। এই স্থানে শ্রীমতি রাধারাণী বিভিন্ন লীলাবিলাস সম্পাদন করেন।
৫. এই উদ্যানে প্রায় অঙ্গাঙ্গিভাবে রয়েছে একটি সাদা রঙের ও একটি কালো রঙের দুটি বৃক্ষ, যা রাধাকৃষ্ণ বৃক্ষ নামে পরিচিত।
বর্ষাণায় অনেকেই গমন করেন। কিন্তু রাধারাণীর মূল এই জন্মক্ষেত্র রাভেল অনেকের কাছেই হয়তো এখনো অজানা। এখনো অতি সাধারণ গ্রামটিতে শ্রীমতি রাধারাণীর দিব্য উপস্থিতি অনুভব করা যায়। তাই আপনি যদি শ্রীমতি রাধারাণীর কৃপা লাভ করতে চান তাহলে বৃন্দাবন পরিক্রমায় এই অপ্রাকৃত ধাম রাভেল দর্শন করে আসতে পারেন।
তথ্যসূত্র- মাসিক চৈতন্য সন্দেশ
Share:

দুর্গা মায়ের পুজায় কুমারী পূজার মূলতত্ত্ব

কুমারী পুজা মহৎ উদ্দেশে হলে ও অনেকে একে ব্যঙ্গ করে। এই ব্যঙ্গ করার মূল কারন হল এরা এর মূল তত্ত্ব জানে না। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন: কুমারী পূজা করে কেন? সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণ
৫ থেকে ৭ বছরের
একটি কুমারীকে প্রতিমার
পাশে বসিয়ে দেবী প্রতিমা
এটা মাতৃভাবের প্রতিই
শ্রদ্ধা নিবেদন। চণ্ডীতে বলা হয়েছে—
যা দেবী সর্বভূতেষু
মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্য মধ্যে মায়ের রূপ
ধরে যে দেবী বিরাজিতা, তাঁকে পুনঃপুন নমস্কার করি।
কুমারী কাকে বলে?
বছর বয়স থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অজাতপুষ্পবালাকে কুমারী বলে। মাতৃভাব বিকাশের জন্য রামকৃষ্ণ মঠ বিশেষভাবে এ
পূজা করে থাকে। দুর্গাপূজার
সময় বা জগদ্ধাত্রী পূজার
সময় এ পূজা অনেক
আগে থেকেই প্রচলিত। ঠিক
ঠিকভাবে পূজা হলে মন বিশুদ্ধ হয়, ঈশ্বরের কৃপালাভ
হয়। বয়স অনুসারে কুমারীর
নানা শাস্ত্রীয় নাম
হয়ে থাকে। যেমন— কালিকা,
সুভগা, উমা, মালিনী ইত্যাদি। শান্ত, পবিত্র, সর্তশীলা এসব দৈবী সম্পদের
অধিকারিণী কুমারীই
জগজ্জননীর
প্রতিমারূপে গ্রহণে বিধান আছে। ব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন। যাঁকে ঈশ্বর, হরি, গড প্রভৃতি বলা হয়, তাঁকেই
মাতৃভাবে সাধনার সময়
বলা হয় জগজ্জননী। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানবজাতির
ক্ষেত্রে মায়ের নীরব
অবদানের ঋণ পরিশোধ
করা অসম্ভব।
নারী শক্তিরূপিণী। তাঁর
সঠিক মূল্যায়নের অভাবে আমাদের অবক্ষয়
নেমে আসে। আবার তাঁর
উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজ হয় কল্যাণমুখী।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন
— ‘মেয়েদের পূজা করেই সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে,
যে জাতে মেয়েদের
পূজা নেই, সে দেশ, সে জাত
কখনও বড় হতে পারেনি,
কস্মিন্কালেও পারবে না।
মনু বলেছেন, ‘যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তএ দেবতা:।
যত্রৈতাস্তু ন
পূজ্যতে সর্বাস্তত্রাফলা : ক্রিয়া:।’ অর্থাত্,
যেখানে নারীগণ পূজিতা হন,
সেখানে দেবতারা প্রজসন্ন।
যেখানে নারীগণ
সম্মানিতা হন না,
সেখানে সকল কাজই নিষ্ফল। (মনুসংহিতা, ৩.৫৬)
যেখানে স্ত্রীলোকের আদর
নেই, স্ত্রীলোকেরা নিরানন্দে অব করে, সে সংসারের,
সে দেশের কখনও উন্নতির আশা নেই।’ মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তব রূপ কুমারী পূজা।
কুমারীতে সমগ্র মাতৃজাতির
শ্রেষ্ঠ শক্তি—পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সকল
কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে বি
তাই কুমারী পূজা।
কুমারী প্রতীকে আমাদের
মাতৃরূপে অবস্থিত।
সর্বব্যাপী ঈশ্বরেরই মাতৃভাবে আরাধনা।
যে জাতির মধ্যে শুদ্ধা,
শিক্ষিতা, করুণাময়ী মায়ের
সংখ্যা বেশি সে মাতৃজাতির
সন্তানেরা সমাজের আদর্শ
সন্তান। নিজ নিজ শক্তির বিকাশের জন্য সমগ্র
নারী জাতির প্রতি প্রয়োজন
নিজের মায়ের শ্রদ্ধা। তাই
কুমারী পূজার
মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীব
মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। যিনি সকল প্রাণীতে মাতৃরূপে আছেন,
তাকে প্রণাম। কুমারী পূজার
প্রণামে আছে তিনি পরমভাগ্ নীম এবং ভুবনবাক কুমারীং ভজে। অর্থাত্,
কুমারী প্রতীকে জগজ্জননীর
পূজায় পরম সৌভাগ্য লাভ
হয়। এ কুমারী সমগ্র জগতের বাক্যস্বরূপা, বিদ্যাস্বরূপা। তিনি এক হাতে অভয় এবং অন্য হাতে বর প্রদান করেন। অন্য ধ্যান আছে— ভদ্রবিদ্যাপ্রকা শিনীম। তিনি সকল শুভ বিদ্যার প্রকাশিকা।
তাই মাতৃজাতির প্রতি যথার্থ
শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমরা আমাদ
সমাজ ও জীবনকে মহত্ করে তুলতে পারি।

লেখক: স্বামী অমেয়ানন্দ;
অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও
রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা
Share:

শরতকাল মানেই মায়ের অকালবোধন

 ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি রামচন্দ্র মা দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন। সৌজন্যে কৃত্তিবাস, যিনি পনেরো শতকের দিকে রামায়ণ অনুবাদ করতে গিয়ে বেশ ফলাও করেই রামচন্দ্রের দুর্গাপুজোর গল্প শুনিয়েছেন। তবে আমাদের মধ্য মূল গল্পটা সবিস্তারে খুব কম লোকই জানে।

রামচন্দ্রের দুর্গাপূজার এই ইতিহাস বাল্মীকি রামায়ণে নেই। আছে দেবীভাগবত ও কালিকাপুরাণে। যদিও কৃত্তিবাসী রামায়ণের দুর্গোৎসব বিবরণের সঙ্গে পৌরাণিক দুর্গোৎসব বর্ণনা ঠিক হুবহু মেলে না। যেসব পুরাণমতে আজ বাংলায় দুর্গাপূজা হয়, তার একটি হল কালিকাপুরাণ। কৃত্তিবাসী রামায়ণে দুর্গাপূজা করেছিলেন রাম। কিন্তু পুরাণ বলে, রামের মঙ্গলের জন্য দেবগণ করেছিলেন পূজার আয়োজন। পুরোহিত হয়েছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা। বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এ রামের জন্য ব্রহ্মার দুর্গাপূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। যদিও কৃত্তিবাসকে ধরে লোকে আজকাল মনে করে, শরৎকালের দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন রাম। কিন্তু এই সম্মান স্বয়ং ব্রহ্মারই পাওয়া উচিত। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, বাংলার লক্ষ লক্ষ দুর্গাপূজায় আজও বোধনের মন্ত্রে উচ্চারিত হয়:

ওঁ ঐং রাবণস্য বধার্থায় রামস্যানুগ্রহায় চ।

অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যস্তয়ি কৃতঃ পুরা।।

অহমপাশ্বিনে ষষ্ঠ্যাং সায়াহ্নে বোধয়মি বৈ।

(হে দেবী, রাবণবধে রামকে অনুগ্রহ করার জন্য ব্রহ্মা তোমার অকালবোধন করেছিলেন, আমিও সেইভাবে আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে সন্ধ্যায় তোমার বোধন করছি।)

[Courtesy: Joy Ray]
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।