• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৪ নভেম্বর ২০১৩

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কবে হইয়াছিল ?



প্রথমে দেশী মতেরই সমালোচনা আবশ্যক। ৪,৯৯২ বৎসর পূর্বে যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হইয়াছিল, এ কথাটা সত্য নহে, ইহা আমি দেশী গ্রন্থ অবলম্বন করিয়াই প্রমাণ করিব। রাজতরঙ্গিণীকার বলেন, কলির ৬৫৩ বৎসর গতে গোর্নদ্দ কাশ্মীরে রাজা হইয়াছিলেন। আরও বলেন, গোর্নদ্দ যুধিষ্ঠিরের সমকালবর্তী রাজা। তিনি ৩৫ বৎসর রাজত্ব করেন। অতএব প্রায় সাত শত বৎসর আরও বাদ দিতে হয়। তাহা হইলে ২৪০০ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দ পাওয়া যায়।
কিন্তু বিষ্ণুপুরাণে আছে—
সপ্তর্ষীণাঞ্চ যৌ পূর্বৌ দৃশ্যেতে উদিতৌ দিবি।
তয়োস্তু মধ্যনক্ষত্রং দৃশ্যতে যৎ সমৎ নিশি ||
তেন সপ্তর্ষয়ো যুক্তাস্তিষ্ঠন্ত্যব্দশতং নৃণাম।
তে তু পারিক্ষিত কালে মঘাস্বাসন্ দ্বিজোত্তম ||
তদা প্রবৃত্তশ্চ কলির্দ্বাদশাব্দশতাত্মকঃ।
—৪ অংশঃ, ২৪ অ, ৩৩-৩৪
অর্থ। সপ্তর্ষিমণ্ডলের মধ্যে যে দুইটি তারা আকাশে পূর্বদিকে উদিত দেখা যায়, ইঁহাদের সমসূত্রে যে মঘানক্ষত্র দেখা যায়, সেই নক্ষত্রে সপ্তর্ষি শত বৎসর অবস্থান করেন।[1] সপ্তর্ষি পরীক্ষিতের সময়ে মঘা নক্ষত্রে ছিলেন, তখন কলির দ্বাদশ শত বৎসর প্রবৃত্ত হইয়াছিল।
অতএব এই কথা মতে কলির দ্বাদশ শত বর্ষের পর পরীক্ষিতের সময়; তাহা হইলে উপরি উদ্ধৃত ৩৪ শ্লোক অনুসারে ১৯০০ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হইয়াছিল।
কিন্তু ৩৩ শ্লোকে যাহা পাওয়া যায়, তাহার সঙ্গে এ গণনা মিলে না। ঐ ৩৩ শ্লোকের তাৎপর্য অতি দুর্গম—সবিস্তারে বুঝাইতে হইল। সপ্তর্ষিমণ্ডল কতকগুলি স্থিরনক্ষত্র, উহার বিলাতী নাম Great Bear বা Ursa Major. মঘা নক্ষত্রও কতকগুলি স্থিরতারা। সকলেই জানেন, স্থিরতারার গতি নাই। তবে বিষুবের একটু সামান্য গতি আছে—ইংরেজ জ্যোতির্বিদেরা তাহাকে বলেন “Precession of the Equinoxes.” এই গতি হিন্দুমতে প্রতি বৎসর ৫৪ বিকলা। এক এক নক্ষত্রে ১৩১/৩ অংশ। এ হিসাবে কোন স্থিরতারার এক নক্ষত্র—পরিভ্রমণ করিতে সহস্র বৎসর লাগে—শত বৎসর নয়। তাহা ছাড়া, সপ্তর্ষিমণ্ডল কখনও মঘা নক্ষত্রে থাকিতে পারে না। কারণ মঘা নক্ষত্র সিংহরাশিতে। দ্বাদশ রাশি রাশিচক্রের ভিতর। সপ্তর্ষিমণ্ডল রাশিচক্রের বাহিরে। যেমন ইংলণ্ড ভারতবর্ষে কখনও থাকিতে পারে না, তেমনি সপ্তর্ষিমণ্ডল মঘা নক্ষত্রে থাকিতে পারে না।
পাঠক জিজ্ঞাসা করিতে পারেন, তবে পুরাণকার ঋষি কি গাঁজা খাইয়া এই সকল কথা লিখিয়াছিলেন? এমন কথা আমরা বলিতেছি না, আমরা কেবল ইহাই বলিতেছি যে, এই প্রাচীন উক্তির তাৎপর্য আমাদের বোধগম্য নহে। কি ভাবিয়া পুরাণকার লিখিয়াছিলেন তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। পাশ্চাত্য পণ্ডিত বেণ্ট্‌লি সাহেব তাহা এইরূপ বুঝিয়াছেনঃ—
“The notion originated in a contrivance of the astronomers to show the quantity of the precession of the equinoxes: This was by assuming an imaginary line, or great circle, passing through the poles of the ecliptic and the beginning of the fixed Magha, which circle was supposed to cut some of the stars in Great Bear.*** The seven stars in the Great Bear being called the Rishis, the circle so assumed was called the line of the Rishis; and being invariably fixed to the beginning of lunar asterism Magha, the precession would be noted by stating the degree &c. of any moveable lunar mansion cut by that fixed line or circle as an index.”
Historical View of the Hindu Astronomy, p. 65.
এইরূপ গণনা করিয়া বেণ্ট্‌লি যুধিষ্ঠিরকে ৫৭৫ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে আনিয়া ফেলিয়াছেন। অর্থাৎ তাঁহার মতে যুধিষ্ঠির শাক্যসিংহের অল্প পূর্ববর্তী। আমেরিকার পণ্ডিত Whitney সাহেব বলেন, হিন্দুদিগের জ্যোতিষিক গণনা এত অশুদ্ধ যে, তাহা হইতে কোন কালাবধারণ-চেষ্টা বৃথা। কিন্তু যে কোন প্রকারে হউক, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কালাবধারণ হইতে পারে, দেখাইতেছি।
প্রথমতঃ পুরাণকার ঋষির অভিপ্রায় অনুসারেই গণনা করা যাউক। তিনি বলেন যে, যুধিষ্ঠিরের সময়ে সপ্তর্ষি মঘায় ছিলেন, নন্দ মহাপদ্মের সময় পূর্বাষাঢ়ায়।
প্রযাস্যন্তি যদা চৈতে পূর্বাষাঢ়াং মহর্ষয়ঃ।
তদা নন্দাৎ প্রভৃত্যেষ কলির্বৃদ্ধিং গমিষ্যতি || ৪।২৪। ৩৯
তার পরে, শ্রীমদ্ভাগবতেও ঐ কথা আছে—
যদা মঘাভ্যো যাস্যন্তি পূর্বাষাঢ়াং মহর্ষয়ঃ।
তদা নন্দাৎ প্রভৃত্যেষ কলির্বৃদ্ধিং গমিষ্যতি || ১২।২। ৩২
মঘা হইতে পূর্বাষাঢ়া দশম নক্ষত্র; যথা—মঘা, পূর্বফল্গুনী, উত্তরফল্গুনী, হস্তা, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্বাষাঢ়া। অতএব যুধিষ্ঠির হইতে নন্দ ১০ x ১০০ = সহস্র বৎসর অন্তর।
এখন, আর এক প্রকার গণনা যাহা সকলেই বুঝিতে পারে, তাহা দেখা যাউক। বিষ্ণু পুরাণের যে শ্লোক উদ্ধৃত করিয়াছি, তাহার পূর্বশ্লোক এইঃ—
যাবৎ পরিক্ষিতো জন্ম যাবন্নন্দাভিষেচনম্।
এতদ্‌বর্ষসহস্রন্তু জ্ঞেয়ং পঞ্চদশোত্তরম্ || ৪।২৪। ৩২
নন্দের পুরা নাম নন্দ মহাপদ্ম। বিষ্ণুপুরাণে ঐ ৪ অংশের ২৪ অধ্যায়েই আছে—
“মহাপদ্মঃ তৎপুত্রাশ্চ একবর্ষশতমবনীপতয়ো ভবিষ্যন্তি। নবৈব তান্ নন্দান্ কোটিল্যো ব্রাহ্মণঃ সমুদ্ধরিষ্যতি। তেষামভাবে মৌর্যাশ্চ পৃথিবীং ভোক্ষ্যন্তি। কৌটিল্য এব চন্দ্রগুপ্তং রাজ্যেহভিষেক্ষ্যতি।”
ইহার অর্থ—মহাপদ্ম এবং তাঁহার পুত্রগণ একশতবর্ষ পৃথিবীপতি হইবেন। কৌটিল্য[2] নামে ব্রাহ্মণ নন্দবংশীয়গণকে উন্মূলিত করিবেন। তাঁহাদের অভাবে মৌর্যগণ পৃথিবী ভোগ করিবেন। কৌটিল্য চন্দ্রগুপ্তকে রাজ্যাভিষিক্ত করিবেন।
তবেই যুধিষ্ঠির হইতে চন্দ্রগুপ্ত ১১১৫ বৎসর। চন্দ্রগুপ্ত অতি বিখ্যাত সম্রাট্—ইনিই মাকিদনীয় যবন আলেক্‌জন্দর ও সিলিউকস্ নৈকটরের সমসাময়িক। ইনি বাহুবলে মাকিদনীয় যবনদিগকে ভারতবর্ষ হইতে দূরীকৃত করিয়াছিলেন, এবং প্রবলপ্রতাপ সিলিউকস্‌কে পরাভূত করিয়া তাঁহার কন্যা বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহার মত দোর্দণ্ডপ্রতাপ তখন কেহই পৃথিবীতে ছিলেন না। কথিত আছে তিনি অকুতোভয়ে আলেক্‌জন্দরের শিবিরমধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলেন। আলেক্‌জন্দর ৩২৫ খ্রীঃ পূর্বাব্দে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন।
চন্দ্রগুপ্ত ৩১৫ খ্রীঃ পূর্বাব্দে রাজ্যপ্রাপ্ত হয়েন। অতএব ঐ ৩‍১৫ অঙ্কের সহিত উপরিলিখিত ১১১৫ যোগ করিলেই যুধিষ্ঠিরের সময় পাওয়া যাইবে। ৩‍১৫ + ১১১৫ = ১৪৩০ খ্রীঃ পূঃ তবে মহাভারতের যুদ্ধের সময়।
অন্যান্য পুরাণেও ঐরূপ কথা আছে। তবে মৎস্য ও বায়ু পুরাণে ১১১৫ স্থানে ১১৫০ লিখিত আছে। তাহা হইলে ১৪৬৫ পাওয়া যায়।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যে ইহার বড় বেশি পূর্বে হয় নাই, বরং কিছু পরেই হইয়াছিল, তাহার এক অখণ্ডনীয় প্রমাণ পাওয়া যায়। সকল প্রমাণ খণ্ডন করা যায়—গণিত জ্যোতিষের প্রমাণ খণ্ডন করা যায় না— “চন্দার্কৌ যত্র সাক্ষিণৌ।”
সকলেই জানে যে, বৎসরের দুইটি দিনে দিবারাত্র সমান হয়। সেই দুইটি দিন একের ছয় মাস পরে আর একটি উপস্থিত হয়। উহাকে বিষুব বলে। আকাশের যে যে স্থানে ঐ দুই দিনে সূর্য থাকেন, সেইস্থান দুইটিকে ক্রান্তিপাতবিন্দু (Equinoctial point) বলে। উহার প্রত্যেকটির ঠিক ৯০ অংশ (90 degrees) পরে অয়ন পরিবর্তন হয় (Solstice) । ঐ ৯০ অংশে উপস্থিত হইলে সূর্য দক্ষিণায়ন হইতে উত্তরায়ণে বা উত্তরায়ণ হইতে দক্ষিণায়নে যান।
মহাভারতে আছে, ভীষ্মের ইচ্ছামৃত্যু। তিনি শরশয্যাশায়ী হইলে বলিয়াছিলেন যে, আমি দক্ষিণায়নে মরিব না, (তাহা হইলে সদ্গতির হানি হয়); অতএব শরশয্যায় শুইয়া উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। মাঘ মাসে উত্তরায়ণ হইলে তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন। প্রাণত্যাগের পূর্বে ভীষ্ম বলিতেছেন,—
“মাঘোহয়ং সমনুপ্রাপ্তো মাসঃ সৌম্যো যুধিষ্ঠির।”
তবে, তখন মাঘ মাসেই উত্তরায়ণ হইয়াছিল। অনেকে মনে করেন, এখনও মাঘ মাসেই উত্তরায়ণ হয়, কেন না, ১লা মাঘকে উত্তরায়ণ দিন এবং তৎপূর্বদিনকে মকর-সংক্রান্তি বলে। কিন্তু তাহা আর হয় না। যখন অশ্বিনী নক্ষত্রের প্রথম অংশে ক্রান্তিপাত হইয়াছিল, তখন অশ্বিনী প্রথম নক্ষত্র বলিয়া গণিত হইয়াছিল; তখন আশ্বিন মাসে বৎসর আরম্ভ করা হইত, এবং তখনই ১লা মাঘে উত্তরায়ণ হইত। এখনও গণনা সেইরূপ চলিয়া আসিতেছে, এখন ফসলী সন ১লা আশ্বিনে আরম্ভ হয়, কিন্তু এখন আর অশ্বিনী নক্ষত্রে ক্রান্তিপাত হয় না; এবং ১লা মাঘে পূর্বের মত উত্তরায়ণ হয় না। এখন ৭ই পৌষ বা ৮ই পৌষ (২১শে ডিসেম্বর) উত্তরায়ণ হয়। এখনও গণনা সেইরূপ চলিয়া আসিতেছে, এখন ফসলী সন ১লা মাঘে পূর্বের মত উত্তরায়ণ হয় না। এখন ৭ই পৌষ বা ৮ই পৌষ (২১শে ডিসেম্বর) উত্তরায়ণ হয়। ইহার কারণ এই যে, ক্রান্তিপাত—বিন্দুর একটা গতি আছে, ঐ গতিতে ক্রান্তিপাত, সুতরাং আয়নপরিবর্তনস্থানও, বৎসর বৎসর পিছাইয়া যায়। ইহাই পূর্বকথিত Precession of the Equinoxes—হিন্দুনাম “অয়নচলন”। কত পিছাইয়া যায়, তাহারও পরিমাণ স্থির আছে। হিন্দুরা বলেন, বৎসরে ৫৪ বিকলা, ইহাও পূর্বে কথিত হইয়াছে। কিন্তু ইহাতে সামান্য ভুল আছে। ১৭২ খ্রীঃ-পূর্বাব্দে হিপার্কস্‌নামা গ্রীক জ্যোতির্বিদ্ ক্রান্তিপাত হইতে ১৭৪ অংশে চিত্রা নক্ষত্রকে দেখিয়াছিলেন। মাক্সেলাইন্ ১৮০২ খ্রীঃ অব্দে চিত্রাকে ২০১ অংশে ৪ কলা ৪ বিকলায় দেখিয়াছিলেন। ইহা হইতে হিসাব করিয়া পাওয়া যায়, ক্রান্তিপাতের বার্ষিক গতি সাড়ে পঞ্চাশ বিকলা। বিখ্যাত ফরাশী জ্যোতির্বিদ্ Leverrier ঐ গতি অন্য কারণ হইতে ৫০.২৪ বিকলা স্থির করিয়াছেন, এবং সর্বশেষে Stockwell গণিয়া ৫০.৪৩৮ বিকলা পাইয়াছেন। এই গণনা প্রথম গণনার সঙ্গে মিলে। অতএব ইহাই গ্রহণ করা যাউক।
ভীষ্মের মৃত্যুকালেও মাঘ মাসে উত্তরায়ণ হইয়াছিল, কিন্তু সৌর মাঘের[3] কোন্ দিনে, তাহা লিখিত নাই। পৌষ মাঘে সচরাচর ২৮ কি ২৯ দিন দেখা যায়। এই দুই মাসে ৫৭ দিনের বেশী প্রায় দেখা যায় না। কিন্তু এমন হইতে পারে না যে, তখন মাঘ মাসের শেষ দিনেই উত্তরায়ণ হইয়াছিল। কেন না, তাহা হইলে “মাঘেহয়ং সমনুপ্রাপ্তঃ” কথাটি বলা হইত না। ২৮শে মাঘে উত্তরায়ণ ধরিলেও এখন হইতে ৪৮ দিন তফাৎ। ৪৮ দিনে রবির গতি মোটামুটি ৪৮ অংশ ধরা যাইতে পারে; কিন্তু ইহা ঠিক বলা যায় না, কেন না, রবির শীঘ্রগতি ও মন্দগতি আছে। ৭ই পৌষ হইতে ২৯শে মাঘ পর্যন্ত রবিস্ফুট বাঙ্গালা পঞ্জিকা ধরিয়া গণিলে ৪৪ অংশ ৪ কলা মাত্র গতি পাওয়া যায়। ঐ ৪৪ অংশ ৪ কলা হইলে খ্রীঃ পূঃ ১২৬৩ বৎসর পাওয়া যায়। ৪৮ অংশ পূরা লইলে খ্রীঃ পূঃ ১৫৩০ বৎসর পাওয়া যায়। ইহা কোন মতেই হইতে পারে না যে, ইহার পূর্বে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হইয়াছিল। বিষ্ণুপুরাণ হইতে যে খ্রীঃ পূঃ ১৪৩০ পাওয়া গিয়াছে, তাহাই ঠিক বোধ হয়। ভরসা করি, এই সকল প্রমাণের পর আর কেহই বলিবেন না যে, মহাভারতের যুদ্ধ দ্বাপরের শেষে, পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে হইয়াছিল। তাহা যদি হইত, তবে সৌর চৈত্রে উত্তরায়ণ হইত। চান্দ্র মাঘও কখনও সৌর চৈত্রে হইতে পারে না।

————————
1 নক্ষত্র এখানে অশ্বিন্যাদি।
2 বিখ্যাত চাণক্য।
3 সে কালেও সৌর মাসের নামই প্রচলিত ছিল, ইহা আমি প্রমাণ করিতে পারি। ছয় ঋতুর কথা মহাভারতেই আছে। বার মাস নহিলে ছয় ঋতু হয় না।

লিখেছেন: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণচরিত
Share:

২২ নভেম্বর ২০১৩

সনাতন সম্প্রদায় ও ধর্মের উৎকর্ষতায় গুরু ও স্বামী বিবেকানন্দের ভুমিকাঃ

যখন পুণ্যভূমি অবিভক্ত ভারতকে দখল করে শাসন করছিলো মুসলিমরা তখন ব্রিটিশরা মানে ইষ্টইন্ডিয়া কোঃ এসে ভারত দখল করলো। অনেক খারাপ কিছু ছিলো কিন্তু সনাতন ধর্মের আলাদা রাষ্ট্রীয় ভিত্তি তৈরিতে এটা বিশাল ভূমিকা রেখেছিল ইংরেজরা ভারত দখল করে। অন্তত ইস্লামিক শাশন থেকে মুক্ত হয়েছিলো ভারত ঐ সময়। বল পূর্বক, ছলে বলে কৈশলে, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ধর্মান্তরিত করেছিল নিরীহ হিন্দুদের। দেখতে দেখতেই পাকিস্থান ও বাংলাদেশ হিন্দু শুন্য হতে হতে নিঃশেষ হবার পর্যায়ে চলে এলো। সনাতনের পুণ্য ভূমী ভারতে ও এখন প্রায় ২০ কোটি মুসলিম।

দ্বাপরের শেষে এবং কলিযুগের শুরুতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণই ছিলেন মহানায়ক ও পরিপূর্ণ পথপ্রদর্শক। এর পর সনাতন সম্প্রদায় আর কোন নেতা পায়নি যার মাধ্যমে সমস্ত সনাতন সম্প্রদায়কে এক করে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। মাঝে শ্রী চৈতন্য দেব, নিমাই পন্ডিত ও স্বামী বিবেকানন্দ অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় গুরুরা ও সাধকরা যেমনঃ শ্রী রামকৃষ্ণ, বামা ঠাকুর, রামপ্রসাদ, রামকৃষ্ণ ঠাকুর, রাম ঠাকুর, লোকনাথা ব্রহ্মচারী, ত্রৈলিঙ্গ স্বামী, অনুকূল ঠাকুর সহ অনেক অনেক গুরু ও সাধক সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিকতার উৎকর্ষতায় যথেষ্ট ভুমিকা রেখেছেন। সাথে সাথে সনাতনী মনা মানুষ গুলিকে ধর্মান্তরিত হবার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এই গুরুরা।

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের কথা। বলতে গেলে সারা পৃথিবীতে সনাতন ধর্মকে ছড়িয়ে দিতে তার গুরু শ্রী রামকৃষ্ণ ঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন সেই ভূমিকার কারনেই ভারতবর্ষের বাইরের সনাতন ধর্মের প্রচার ও প্রসার অনেক অনেক শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু বিধিবাম ৪০ এর কোটা পার করতেই তিনি মৃত্যু বরণ করলেন। তিনি যদি ১০০ বছর বেঁচে থাকতে পারতেন তবে সনাতনের হারানো গৌরব ফিরে পেতে খুবে বেশি বেগ পেতে হতোনা আমাদের। তিনি চেয়েছিলেন আগে ভারতবাসি স্বনির্ভরশিল হোক তার পর স্বাধীনতা সংগ্রাম। তিনি খুব ভালো ভাবেই জান্তেন যে, স্বাধীনতা অর্জন অপেক্ষা রক্ষা ও প্রতিপালন অনেক অনেক কঠিন কাজ। তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি চেষ্টা করে গেছেন সনাতন ধর্মকে সকল ভারতবাসির মনে জাগ্রত করতে। আমাদের উচিৎ স্বামী বিবেকানন্দের কাজকে ধারাবাহিক ভাবে অগ্রসর করতে যারা যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা। শুধু নিজে জাগ্রত হলেই চলবে না অন্যকে জাগ্রত করতে ভূমিকা রাখতে হবে।

ব্যাক্তি আমি স্বামী বিবেকানন্দের একজন গুন মুগ্ধ ভক্ত। উনার বক্তৃতার উপর বই বাজারে পাবেন, সেগুলি পড়ুন জানার চেষ্টা করুন তিনি কি কি বলেছেন। সনাতন ধর্ম কে সহজ ভাবে ব্যাখ্যার পাশাপাশি তিনি শক্তিশালী সনাতনী সমাজ গঠনের জন্য যে চিন্তা করেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের আর কোন সমস্যায় থাকবেনা।

ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন
গর্বের সাথে বলুন আমরা বৈদিক, আমরা সনাতন, আমরা হিন্দু।

written by: Lincon Chakraborty
Share:

১৫ নভেম্বর ২০১৩

“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ”- শ্রী জয় রায় ( last part)

এই ধারাবাহিকের পূর্বের লেখাগুলো পড়ুনঃ
http://sonatonvabona.blogspot.com/2013/11/blog-post_14.html    
  


মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ” (পর্ব ১)
-----------------------------
কর্ণের মৃত্যুর পর যুদ্ধের ১৮তম দিনে কৌরবদের শেষ সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয় শল্য। মদ্ররাজ শল্য ছিল মাদ্রীর ভাই অর্থাৎ সম্পর্কের দিক থেকে পঞ্চ-পাণ্ডবদের মামা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে যুধিষ্ঠির কৌরবদের শেষ সেনাপতি শল্যকে বধ করে।


অন্যদিকে, সহদেবের হাতে শকুনি নিহত হয়। শকুনিই ছিল মহাভারতের প্রধান খল-নায়ক।  ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর বিয়ের পর থেকেই তিনি হস্তিনাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং প্রথম থেকেই দুর্যোধনের সব কাজে নিত্য সহচর ও সহায়ক ছিল। শকুনি ছোটবেলা থেকেই দুর্যোধন ও তাঁর ভাইদের মনে পঞ্চ-পাণ্ডবদের প্রতি বিদ্বেষের বিষবাষ্প তৈরি করে। মহাভারতের যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শকুনি, যে ছিল অত্যন্ত চতুর ও কুটিল। যুদ্ধের ১৮তম দিনে সহদেব শকুনির শিরচ্ছেদ করে তাকে বধ করে।

Share:

“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ”- শ্রী জয় রায় (Part 3)


পর্ব (১-): http://sonatonvabona.blogspot.com/2013/11/blog-post_14.html





মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ (পর্ব )
-----------------------------
রাজনীতিতে চিরকালীন বন্ধু বলেও কিছু নেই, চিরকালীন শত্রু বলেও কিছু নেই- এই কথাটি আমরা সকলেই জানিএখানে, বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দুটোই সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে। কিন্তু, মহাভারতের আত্মীয় রাজনীতির মধ্য সবকিছুই অন্যরকম। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এখানে দক্ষ রাজনীতিজ্ঞ, যাকে বিশ্লেষণ করা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

মহাভারতে বীরযোদ্ধা ও দক্ষ রাজনীতি বিশারদ হিসেবে যাদব-বংশের বেশ সুনাম ছিল। যাদবদের এই বল ও বুদ্ধির সমন্বয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গড়ে তোলেন নারায়ণী সেনা। প্রাগজ্যোতিষপুর, গান্ধার ও উত্তর ভারতের শক্তিশালি রাজ্য মগধ সহ অন্যান্য প্রদেশে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই নারায়ণী সেনা ব্যবহার করেছেন। প্রায় ১০ লক্ষ সৈন্যবিশিষ্ট এই নারায়ণী সেনার প্রধান প্রধান যোদ্ধারা হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম, সাত্যকি, চেকিতান, কৃতবর্মা, শ্রীকৃষ্ণপুত্র শাম্ব প্রমুখ। অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় যেসকল রাজা যুধিষ্ঠিরের শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার করেছে; শ্রীকৃষ্ণের নারায়ণী সেনার সাহায্য নিয়েই যুধিষ্ঠির তাদের পরাজিত করে।


Share:

১৪ নভেম্বর ২০১৩

“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ” - শ্রী জয় রায় (পর্ব ১)



(পর্ব ১)
-----------------------------
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যতিত আমাদের হিন্দুদের জীবন অন্ধকারে পরিপূর্ণ। কারণ, আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে শ্রীকৃষ্ণ চরিত্র!

মহাভারতের আদিপর্বেই বেদব্যাস শ্রীকৃষ্ণকে পরম পুরুষ ও ভগবান বলে চিহ্নিত করেছেন। আমরা অনেকেই জানি যে, সম্পর্কের দিক থেকে পঞ্চপাণ্ডবের মাতা কুন্তী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের পিসী। মহাভারতে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় বলরামের সাথে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে প্রথম দেখি। তিনি ছিলেন অর্জুনের সমবয়স্ক। শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র ও তাঁর দূরদৃষ্টিকে জানতে হলে মহাভারতে তাঁর সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে সেগুলো আমাদের সঠিক ভাবে জানতে হবে।

সেসময় বিশাল ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের রাজন্যবৃন্দ পারস্পারিক দ্বন্দ্বে মত্ত থেকে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যপ্রয়াসকে করেছিলেন সুদূরপরাহত। সার্বভম সর্বভারতীয় এক রাষ্ট্রগঠনের মনোভাব বা দূরদর্শিতা তাদের ছিল না। বলা হয়ে থাকে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভারতে একটি দৃঢ় রাষ্ট্রবাবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর কাছে যুধিষ্ঠিরই ছিলেন সেই প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের কর্ণধার হওয়ার পক্ষে সবদিক থেকে উপযুক্ত ব্যক্তি। দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক বিচক্ষনতার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন সমধিক প্রসিদ্ধ।
Share:

“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ” - শ্রী জয় রায় (part 2)


পর্ব(-৪): http://sonatonvabona.blogspot.com/2013/11/blog-post_14.html




(পর্ব )
-----------------------------------
যতক্ষণ না অধার্মিক জরাসন্ধকে শেষ করা যাচ্ছে; ততক্ষন যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের ফলপ্রাপ্তি অসম্ভব। কিন্তু, জরাসন্ধের বিশ অক্ষৌহিনী সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করা কখনোই সম্ভব ছিল না। আর সেজন্যই, যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন ব্রাহ্মণের বেশ ধারন করে জরাসন্ধের রাজধানী গিরিব্রজে যায়। সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৌশলে ভীমের সাথে জরাসন্ধ মল্লযুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়। সেই যুদ্ধে ভীম জরাসন্ধকে বধ করে। জরাসন্ধের মৃত্যুর পর ৮৬ জন বন্দী রাজাকে মুক্তি দেয়া হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এইসব রাজাদের যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে সাহায্য করতে বলেন এবং তিনি জরাসন্ধের ছেলে সহদেবকে মগধের রাজ্যে অভিষিক্ত করেন।


শ্রীকৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন সফলভাবে ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে আসার পর রাজসূয় যজ্ঞের প্রাথমিক পর্ব শুরু হয় দিগ্বিজয় দিয়ে। যুধিষ্ঠিরের চার ভাই চারদিকে দিগ্বিজয় সেরে আসে প্রায় বিনাবাঁধায়। আর এই নির্বিঘ্নতার প্রথম কারণ ছিল জরাসন্ধের মৃত্যু, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আগেই করে ফেলেছিল। জরাসন্ধের এই মৃত্যুর পর শিশুপাল ও পৌন্ড্রক-বাসুদেব পাণ্ডবদের দিগবিজয় পর্বে যুধিষ্ঠিরের সাময়িক বশ্যটা স্বীকার করে নিয়েছিলো সৌজন্য দেখিয়ে। এর মাধ্যমে যুধিষ্ঠির বুঝতে পারে যে, “তাঁর নিজের ধর্মভাবনায় অন্য সব কিছু সম্ভব হলেও একজন শক্তিশালী রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হত না; যদি না ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বুদ্ধিদাতা হিসেবে তাদের পাশে থাকতেন।”


আর তাই, ভীষ্মের উপদেশে রাজসূয় যজ্ঞে যুধিষ্ঠির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকে অর্ঘ্য প্রদান করেকারণ, ভীষ্মের নিকট শ্রীকৃষ্ণ শুধু একজন ভারতবিখ্যাত যোদ্ধারূপেই প্রতিভাত হয় নি বরং শ্রীকৃষ্ণের মধ্য মনুষ্যদেহে ঈশ্বরের আবির্ভাবকেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলো

অন্যদিকে, জরাসন্ধের সেনাপতি চেদিরাজ "শিশুপাল" এর তীব্র প্রতিবাদ করেন রাজসূয় যজ্ঞসভায় ভীষ্ম, যুধিষ্ঠির ও শ্রীকৃষ্ণকে অকথ্য ভাষায় তিরস্কার করেন শিশুপালসম্পর্কের দিক থেকে এই শিশুপাল ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিসতুতো ভাই কৃষ্ণপিতা বসুদেবের বোন শ্রতস্রবার ছেলে ছিল শিশুপালশ্রীকৃষ্ণ বেশ কিছুক্ষন নিশ্চুপ ছিলেন; কারণ নিজ পিসী অর্থাৎ   শিশুপালের জননীর  কাছে তিনি শিশুপালের একশো অপরাধ ক্ষমা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলকিন্তু, যজ্ঞ সভায় শিশুপাল সেই সীমাকে অতিক্রম করেঅবশেষে সকলের সামনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দ্বারা শিশুপালকে বধ করেন

মহাভারতে এই প্রথম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজ হাতে দুষ্কৃতির বিনাশ করলোজরাসন্ধ ও শিশুপালকে বিনাশ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শুরু করলেন ধর্মসংস্থাপনের কাজ......


(পর্ব ৬) 
------------------------------
মহাভারতের প্রধান মর্মবানী ধর্মের জয় ও অধর্মের বিনাশ। কখনো কখনো মানুষের জীবনে অভিশাপ হয় আশীর্বাদ; আশীর্বাদ আবার অভিশাপে পরিণত হয়।

দুর্যোধন ও শকুনির কপট পাশা খেলায় পরাজিত হলে পাণ্ডবদের বনবাসে যেতে হয়। বনবাসে অতিদুঃখে পাণ্ডবদের জীবন কাটলেও সর্বদা তাঁরা পেয়েছে ঋষিদের আশীর্বাদ; জীবনের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতায় তাঁরা হয়েছেন প্রাজ্ঞ, দৃঢ় ও সমৃদ্ধ।

বলা হয়ে থাকে যে, “জীবনের পূর্ণ বিকাশের জন্য তপস্যার দ্বারা দুঃখের তাপকে সহ্য করতে হয়।” তাই আমাদের হিন্দু ধর্মের আচার-আচরণে তপস্যার মূল্য অসীম। শ্রীরামকৃষ্ণ ভবিষ্যতের আচার্যপদে স্বামী বিবেকানন্দকে অধিষ্ঠিত করতে তাঁকে দুঃখের আগুনে পুড়িয়ে  বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। তেমনি, এই বনবাসের মাধ্যমেই পাণ্ডবরা লাভ করেছে আত্মবল, আত্মসংযম ও চিত্তশুদ্ধি।        

কাম্যক বনে পাণ্ডবদের দুর্দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের সাথে দেখা করতে যায়। অনেক ক্রুদ্ধ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ যেদিন বলেছিল, ভয়ঙ্কর রণভূমি দুরাত্মা দুর্যোধন, কর্ণ, শকুনি ও দুঃশাসনের রক্ত পান করবে। তাদের অনুগামীদের আমরা বধ করবো। অধর্মের অনুগামীদের বধ করাই সনাতন ধর্ম। (বনপর্ব, ১২ অধ্যায়) সভাপর্বে দ্রৌপদীকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা হলে শ্রীকৃষ্ণই সেদিন দ্রৌপদীকে রক্ষা করেছিলেন।

পাণ্ডবদের বনবাস ও অজ্ঞাতবাসের সমাপ্তির পরে বেশ চিন্তিত হয়ে পরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। বহুদিন আগে পরশুরাম বলেছিল, কুরুপাণ্ডবদের কলহকে কেন্দ্র করে কুরুক্ষেত্রে ঘটবে এক ভীষণ সংগ্রাম। তাই, এই আসন্ন দুর্দিনের প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ করে শ্রীকৃষ্ণ বেদনাহত।

কিন্তু, যে অন্যায় পাণ্ডবদের ও দ্রৌপদীর ওপর হয়েছে, তাতে যুদ্ধ নৈতিক হয়ে উঠে। পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস শেষ হবার পর বিরাটনগরে যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল, সেখানে বলরাম দুর্যোধনের পক্ষে কথা বলেন। বলরামের মতে, দুর্যোধনের কোন দোষ নেই। যুধিষ্ঠির নিজের হঠকারিতার জন্য রাজ্য হারিয়েছেন। প্রকাশ্য সভায় সকলের সামনে শ্রীকৃষ্ণের অগ্রজ বলরাম যুধিষ্ঠিরের নিন্দা করে দুর্যোধনের প্রশংসা করলে সবাই বিস্মিত হয়। কিন্তু, শ্রীকৃষ্ণ ছিল শান্ত। দুই পক্ষকেই শান্তির জন্য হস্তিনাপুরে দ্রুপদকে দূতরূপে পাঠাতে অনুরোধ করে শ্রীকৃষ্ণ...

মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন সৎ গৃহস্থ, রাজনীতিজ্ঞ, বীর যোদ্ধা ও ধর্মসংস্থাপক। বহুজনসুখায় বহুজনহিতায় কর্মে লিপ্ত, অথচ তিনি ছিলেন নির্বিকার ও আসক্তিহীন। এই ধারাবাহিকের পরবর্তী পর্বগুলোতে তুলে ধরা হবে ধর্মরাষ্ট্র গঠনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই সর্বোচ্চ লীলা ও প্রচেষ্টাকে......



(পর্ব ৭)
-----------------------------
মহাভারতে কুরুপাণ্ডবদের পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে তৎকালীন ভারতের রাজন্যবর্গ নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার খেলায় মত্ত হয়েছিলোকুরুকুলের প্রাচীন শত্রু ছিল মৎস্যদেশ (বর্তমান জয়পুরের নিকটবর্তি স্থান) মৎস্যদেশের রাজা বিরাটআবার, মৎস্যদেশের সাথে চিরশত্রুতা ছিল মদ্রদেশেরপঞ্চ-পাণ্ডবদের মামা অর্থ্যাৎ মাদ্রীর ভাই শল্য ছিল মদ্রদেশের রাজাবলা হয়ে থাকে, এই সকল কারনেই পাণ্ডবদের মামা শল্য যুদ্ধে কৌরবপক্ষে যোগ দেন


অন্যদিকে কৌরবদের আধিপত্যকে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ (দ্রৌপদীর পিতা) কোনদিন স্বীকার করেন নিযাদবগণও চিন্তিত; কারন দ্রুপদ অতীতে জরাসন্ধের সাথে যোগ দিয়ে ১৮ বার মথুরা আক্রমণ করেএই সকল রাজনৈতিক জটিলতা ছিল শ্রীকৃষ্ণের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতাই, যুদ্ধ অনিবার্য জেনেও শ্রীকৃষ্ণ চেয়েছিলেন শান্তি


শান্তি আলোচনার জন্য শ্রীকৃষ্ণ হস্তিনাপুরে দূত পাঠালেও সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অপরদিকে, সঞ্জয় (ধৃতরাষ্ট্রের সারথি) দূত হিসেবে আসে পাণ্ডবশিবিরে। শ্রীকৃষ্ণের মনোভাব অবগত হয়েই যুধিষ্ঠির সঞ্জয়কে মাত্র পাঁচটি গ্রাম দেবার জন্য আবেদন করে।


সঞ্জয়ের মাধ্যমে কৌরবরা জানতে পারে, মাত্র পাঁচটি গ্রাম দিলেই যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হবে। কিন্তু, দুর্যোধন এই প্রস্তাবকে পাণ্ডবদের ভয় ও দুর্বলতা মনে করলো। তিনি দম্ভ প্রকাশ করে বললো, বিনা যুদ্ধে তীক্ষ্ণ সূচের অগ্রভাগ দ্বারা যতটুকু ভুমি বিদ্ধ হয়, ততটুকু ভূমিও পাণ্ডবদের দেওয়া হবে না।সমগ্র শান্তি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। কিন্তু, শেষ চেষ্টা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ নিজেই এবার হস্তিনাপুরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। হস্তিনাপুরে যাবার আগে শ্রীকৃষ্ণ সন্ধির বিষয়ে মতামত চাইলে যুধিষ্ঠির-অর্জুন ও ভীম নিজেদের মধ্য রক্তক্ষয় বন্ধ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করে।



এদিকে শ্রীকৃষ্ণ সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে গেলে, দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করতে চায়। শ্রীকৃষ্ণ জানতেন দুর্যোধনের এই হীন ষড়যন্ত্রের কথা। কারন, পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে প্রতিহিংসার সুযোগ নেবার জন্য ভারতের অসংখ্য রাজা যোগ দিয়েছে কৌরব শিবিরে। ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনের এই অশুভ পরিকল্পনা অনুমোদন করেনিমহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের জীবনে দেখা যায় তাঁর বিবেক বুদ্ধি মাঝে মাঝে তাঁকে ধর্মপথে চলতে সাহায্য করেছেকিন্তু, তার সেই শুভবুদ্ধি অতি অল্পক্ষণ স্থায়ী থাকতোভীষ্ম ও বিদুরের কাছ থেকে অনেক ধর্মকথা শুনলেও, পুত্রপ্রেমে পাগল হয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সব ভুলেও গেছে


ধৃতরাষ্ট্র জানতেন শ্রীকৃষ্ণের সাথে শত্রুতা করলে তাদের সমস্ত কিছুই নষ্ট হবে; কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছিল নররুপী ভগবানতাই, দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করতে চাইলে ধৃতরাষ্ট্র বাঁধা দেয়সন্ধি প্রস্তাবে ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর ও ধৃতরাষ্ট্র সকলেই শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ মেনে নেওয়ার জন্য দুর্যোধনকে অনুরোধ করেকিন্তু দাম্ভিক দুর্যোধন যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে সকলের অনুরোধ অমান্য করেআর এভাবেই শান্তি স্থাপনে শ্রীকৃষ্ণের শেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়                         


ফিরে আসার সময় শ্রীকৃষ্ণ বিদুরকে বলেছিল, বিদুর, আমি জানি আমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তবুও একবার শেষ চেষ্টা করেছি, যদি কৌরবদের আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যায়। লোকে জানবে, আমি নিজেও বুঝবো- আমি চেষ্টার ত্রুটি করেনি (উদ্যোগপর্ব) সেদিন আসন্ন ভয়াবহ যুদ্ধের হাত থেকে ভারতবর্ষ ও কুরুকুলকে বাঁচানোর সর্বান্তকরণ চেষ্টা করেছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ......
 
(পর্ব ৮)
-----------------------------

মহাভারতে ভয়াবহ যুদ্ধের হাত থেকে ভারতবর্ষ ও কুরুকুলকে বাঁচানোর জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সর্বান্তকরণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। তিনি শান্তি চাইতে গিয়েছিলো বলেই দুর্যোধন-কর্ণরা তাকে বন্দি করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল। দুর্যোধনের এই চরম অহংকার যুদ্ধের পথটা এতটাই প্রতিষ্ঠা করে দিল যে, কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ রূপ নিল ধর্মযুদ্ধে। এই ধর্মযুদ্ধ না করাটাই এখন অন্যায় পাপ হবে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে যুদ্ধের আয়োজন করতে বলে। শান্তির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও তিনি কাপুরুষতা ও ক্লীবত্বের পক্ষপাতী ছিল না। কৌরবদের সীমাহীন লোভ ও ঈর্ষার জন্য শ্রীকৃষ্ণ মনস্থির করলেন যুদ্ধে জয়ী হয়ে পাণ্ডবদের মাধ্যমে ভারতে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ, শ্রীকৃষ্ণের যথার্থ উদ্দেশ্যই হলো-ধার্মিককে রক্ষা করে দুষ্কৃতির বিনাশ এবং অধর্ম দূর করে ধর্মের সংস্থাপন।

কুরু ও পাণ্ডবগণ যুদ্ধের জন্য অর্থ ও সৈন্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। কৌরব পক্ষে যোগ দিয়েছে শ্রীকৃষ্ণের শত্রুরা। ক্ষত্রিয়ের পক্ষে সারথির কর্ম কোনদিন গৌরবজনক নয়, অথচ শ্রীকৃষ্ণ সেই কর্মই স্বেচ্ছায় বেছে নিলো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে। নিরস্ত্র হয়ে প্রিয় সখা অর্জুনের সারথি হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিলো। এতে প্রমাণিত হয় যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্যজীবনে কোন মানুষী দুর্বলতার স্থান ছিল না।


কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যারা দুর্যোধনকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করে তাঁরা ছিল সুযোগ-সন্ধানী; যাদের মধ্য অনেকেই কুরুবংশের প্রভাবকে ভাঙতে চায়। এদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মদ্র, অবন্তী, সিন্ধুপ্রদেশ; যাদের সাথে বর্বর জাতিও ছিল। অন্যদিকে, পাঞ্চাল ও যাদববংশ সহ যারা অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখেছে তাঁরা সকলেই পাণ্ডবপক্ষে যোগ দেয়।


মহাভারতের যুদ্ধ এমন একটি সময়ে সংঘটিত হয়; যখন সমাজের ক্ষত্রিয়গণ আসুরিক ভাবাপন্ন হয়ে পড়ে। এই সমাজে দুর্যোধন ছিল স্বেচ্ছাচার, দর্প ও অহঙ্কারের প্রতীক। বলা হয়ে থাকে যে, কলিযুগের প্রভাব তখন থেকেই আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের কারনে কলি তার প্রভাব বিশেষ ভাবে বিস্তার করতে পারে নি।  

স্বয়ং ভগবান যার সাথে থাকে, তার ক্ষতি করার সাধ্য কারো নেই। মহাভারতে দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান ও সর্বসংহার কর্তা জেনেও পাণ্ডবদের প্রতি প্রবল হিংসার কারনে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিদ্রোহী হয়। আমরা মানুষ; তাই আমাদের জীবনে দুর্বলতা স্বাভাবিককিন্তু অত্যধিক দুর্বলটার ফল একসময় আমাদের ভোগ করতেই হয়। মহাভারত আমাদের সেই শিক্ষায় দেয়। গীতায় বলা আছে, কর্মের ফলদাতা ভগবান এবং এই কর্মই আমাদের সুখ-দুঃখের কারণ। তাই, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিজ নিজ কর্ম অনুসারেই পাণ্ডবদের জয় ও কৌরবদের পরাজয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আগেই লিখে রেখেছিলো...... 

(To be Continue….)    


# শ্রী জয় রায়,
সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি 

এই লেখার পরবর্তী পর্বগুলো পড়ুনঃ


 

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।