• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

০১ এপ্রিল ২০১৪

দেবীর নব দুর্গা

আদ্যাশক্তি পরমা প্রকৃতি দেবী দুর্গা তাঁর অসংখ্য সহস্রকোটি রূপ, সেই রূপের মধ্যে কিছু রূপ প্রকট ও কিছু প্রচ্ছন্ন, আমরা সবাই দেবী দশমহাবিদ্যার কথা জানি মায়ের দশটি রূপ। আজ জানব দেবীর নব দুর্গার রূপের আখ্যান , নব দুর্গা, দুর্গার নয় অংশ বা রূপ প্রতিটি রূপের একএকটি মাহাত্ম্য আছে। মা দুর্গা এই নব দুর্গা রূপ সৃষ্টি করেছিলেন সৃষ্টির রক্ষা তথা পালনের ও মঙ্গলের জন্য। শাস্ত্রে আছে মা দুর্গার এই নয় রূপের পুজা যারা ন'দিন ধরে পালন করে পূজা করেন অর্থাৎ নবদুর্গা ব্রত পালন করেন তারা সর্বদিক দিয়ে জয়ী হন সর্ব রোগ শোক বাঁধা অপসারিত হয় , এমনকি নবগ্রহের কু প্রভাব পীড়নের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। নবগ্রহকে এই দেবীরাই নিয়ন্ত্রন করেন।

শরৎকালে যেমন দুর্গা পুজার সাথে সাথে নব দুর্গার পূজার্চনা করা হয় তেমন এই বসন্তকালেও বাসন্তী পুজার সাথে নয়দিন ধরে চলে নবদুর্গার পূজা। শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত এই পূজার নিয়ম। প্রতি দিন এক এক দুর্গার পূজা। প্রথম দিন শৈল্যপুত্রি পূজা দিয়ে আরম্ভ হয় সমাপ্তি ঘটে সিদ্ধিদাত্রির পূজা দিয়ে।

প্রথমম্‌ শৈল্যপুত্রিতি দ্বিতিয়ম্‌ ব্রক্ষচারিণী তৃতীয়ম্‌ চন্দ্রঘণ্টেতি কুষ্মাণ্ডেতি চতুরথাকম্‌ পঞ্চমম্‌ স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠমাম্‌ কাত্যায়নী তথা সপ্তমম্‌ কালরাত্রিতি মহাগৌরী চিতাষ্টমাম্‌ নবমাম সিদ্ধিদ্ধাত্রিতি নবদুর্গা প্রকীর্তিতা।।

অর্থাৎ প্রথম রূপ বা অংশ হলেন শৈল্যপুত্রি দ্বিতীয় হলেন ব্রক্ষচারিনী তৃতীয় চন্দ্রঘণ্টা ও কুষ্মাণ্ডা হলেন চতুর্থ , পঞ্চম জন হলেন স্কন্দমাতা ষষ্ঠ হলেন কাত্যায়নী তথা সপ্তমজন কালরাত্রি মহাগৌরী অষ্টম ও সর্বশেষ নবম অংশ সিদ্ধিদাত্রী ।। এই ভাবে নব দুর্গার কীর্তন সম্পূর্ণ হয়।

আজ প্রথম দুর্গা শৈল্যপুত্রির কথা বলব।।

ওঁ বন্দেবঞ্চিত লাভায়্‌ চন্দ্রারধকৃতশেখরাম্‌।
বৃষরূঢ়াম শূলধরানাম্‌ শৈল্যপুত্রিম যশস্বিনীম্‌।।

যার মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভা পায় বৃষের ওপর আরোহন করে তিনি দক্ষিন হস্তে ত্রিশূল ও বাম হস্তে পদ্ম ধারন করে দেবী ভক্তদের অভয় প্রদান করছেন সমস্ত বিপদ মারন থেকে রক্ষা করেন তিনি শৈল্যপুত্রি।

দক্ষালয়ে মা সতী শিবের নিন্দা শুনে দেহ ত্যাগ করলেন, মহাদেব দেবীকে নিয়ে তাণ্ডব করতে লাগলেন সেই তাণ্ডব নিবারনের জন্য নারায়ণ সুদর্শনচক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ডিত করলেন ও মহাদেব শান্ত হয়ে গিরি শিখরে গিয়ে মহাসমাধিতে মগ্ন হলেন। এদিকে দৈত্যরাজ তারকাসুরের অত্যাচারে দেবগন অসহায় হয়ে পড়লেন ও সবাই একত্রিত হয়ে মা ভগবতীর শরণাপন্ন হলেন। মা দেবতাদের পার্থনায় তুষ্ট হলেন ও অভয় দিয়ে বলেন তিনি পুনরায় গিরিরাজ হিমালয়ের ঘরে জন্মগ্রহন করবেন ও দেবাদিদেব শঙ্করকে পতি রূপে বরন করে তাদের বিপদ হতে উদ্ধার করবেন।
পরবর্তী কালে জগতজননী মহামায়া গিরিরাজ হিমালয় এবং তাঁর স্ত্রী মেনকা দেবীর তপস্যায় সন্তুষ্টা হন ও তাদের ঘরে কন্যা রূপে অবতীর্ণা হন।। এই হিমালয় অর্থাৎ শৈল শিখরে জন্ম গ্রহন করেন বলেন তিনি শৈল্যপুত্রি নামে খ্যাত হন। অর্থাৎ মা পার্বতী নবদুর্গার প্রথম বিদ্যা শৈল্যপুত্রি রূপে প্রকাশিত হন।

শুক্লপক্ষের প্রতিপদে মায়ের পূজা হয়। বেলপত্র জবা ও বিভিন্ন উপাচারে মায়ের পূজা করতে হয় মায়ের পায়ে অর্পণ করতে হয় , মিষ্টান্ন ফল নৈবিদ্য মাকে অর্পণ করতে হয়। মা সন্তুষ্টা হলে সমস্ত বিপদ ভয় থেকে সর্বদা রক্ষা করেন।



Written by : joy ghoshal
Share:

দেবী ব্রক্ষচারিনী


দধামা করপদ্মভ্যাম্‌ অক্ষমালা কমণ্ডলু।
দেবী প্রসিদেতু ময়ী ব্রক্ষচারিন্যেনুত্তমা।।

নবরাত্রি দ্বিতীয়দিন পূজিতা হন দেবী ব্রক্ষচারিনীর, তিনি জ্ঞানদাত্রী ব্রক্ষজ্ঞানসরূপিণী, নবদুর্গার দ্বিতীয় দুর্গা রূপে প্রকাশিতা এই দেবী। ব্রক্ষার দ্বারা প্রকাশিত চার বেদ ও জ্ঞান এই জন্মাতার দ্বারাই তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন। দেবী দ্বিভুজা তাঁর দক্ষিন হস্তে অক্ষমালা অর্থাৎ রুদ্রাক্ষের মালা বাম হস্তে কমণ্ডলু ধারন করে আছেন, তিনি পদ্ম দারা সুসজ্জিতা।

দেবী ত্যাগ, বৈরাগ্য তথা জপ ও মহাসিদ্ধির প্রতীক। মায়ের কান্তি দিয়ে নির্গত হয় মহাবৈরাগ্যের তেজ... ব্রক্ষচারিণী হল দেবী পার্বতীর এক অন্যতম প্রকাশ, দেবী যখন পার্বতী রূপে অবতীর্ণা তখন মহাদেবকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য কঠিন তপ্যায় রত হন গভীর সমাধিতে মগ্ন হন এবং তাঁর এই কষ্ট দেখে তাঁর মা উঃ মা ! বলে ওঠেন তাই তাঁর আরেক নাম উমা রূপে প্রসিদ্ধা হয়। দেবীর কঠোর তপে মহাদেব ও তথা সমগ্র বিশ্ব দেবাদিগন স্তম্ভিত হয়। মায়ের তপস্যার প্রভাবে ত্রিভুবন আড়োলিত হয় তাঁর তেজ জগত ব্যাপ্ত হয়। জগন্মাতা এই রূপটি ব্রক্ষচারিণী রূপে ত্রিভুবনে খ্যাত।

জগন্মাতা আদিশক্তির এই রূপটি বৈরাগ্যরূপিণী ইনি সন্তুষ্ট হলে সমস্ত মোহ পাপ লোভ হিংসা ইত্যাদি আসুরিক প্রবৃত্তি থেকে আমাদের মুক্ত করেন মনকে বৈরাগ্য প্রদান করেন আমরা সঠিক পথে জীবনে চালিত হই। মায়ের এই রূপটি আমাদের জগতশিক্ষার জন্য পরিব্যাপ্ত তিনি স্বয়ং আদিশক্তি তিনি চাইলে কোন তপস্যা ছারাই দেবাদিদেবকে পতিরূপে বরন করতে পারতেন কিন্তু তবুও তিনি কঠোর তপের মাধ্যমেই শিবকে তুষ্ট করেছিলেন।তিনি জগত সংসার কে দেখিয়ে দিয়েছেন জীবনে কোন কিছু সহজে লভ্য হয় না তার জন্য চাই কঠিন পরিশ্রম ও লক্ষ পূরণের জন্য অসীম ধৈর্য। লক্ষ্য পূরণের জন্য চাই বাসনা ত্যাগ করে ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রম তবেই কোন ব্যক্তি তাঁর জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবেন। মায়ের এই রূপ সেই ধৈর্য ,ত্যাগ ও পরিশ্রমের প্রতীক।

ব্রক্ষচারিনীর পূজা শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে হয় , বিশুদ্ধ কাঠের আসনে মায়ের স্থাপনা করতে হয়। মাকে রক্ত জবা রক্ত চন্দন ও নানারকম গন্ধ পুস্প দিয়ে অর্চনা করে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি মাকে নৈবিদ্য রূপে নিবেদন করতে হয়...
দেবীর আশীর্বাদে সংসারে ও জীবনে শান্তি আসে। জীবনে জ্ঞান বিদ্যার প্রকাশ ঘটে উন্নতি হয়।

ওঁ সিদ্ধি বুদ্ধি প্রদে দেবী ত্যাগ বৈরাগ্য দায়িনী
ব্রক্ষচারিনী মাতা ত্বং নমাম্‌ আত্মা বিভুতয়ে...।।

Written by: Joy Ghoshal
Share:

আদ্যাশক্তির তৃতীয় রূপের প্রকাশ দেবী চন্দ্রঘণ্টা


পিণ্ডজাপ্রবরারূঢ়া চন্দ্রকৌপাস্ত্রকৈরুতাম্‌
প্রসাদাং তনুতে মহা চন্দ্রঘণ্টেতি বিস্রুতাম্‌।।

নবরাত্রির তৃতীয় দিনে পূজা হয় মা চন্দ্রঘণ্টার। আদ্যাশক্তির তৃতীয় রূপের প্রকাশ দেবী চন্দ্রঘণ্টা। মায়ের মস্তকে ঘণ্টার আকারে চন্দ্র শোভা পায় এই জন্যই ইনি চন্দ্রঘণ্টা। দেবীর গাত্রবর্ণ স্বর্ণপ্রভ উজ্জ্বল দেবী দশবাহু সমন্বিতা হয়ে দশদিক আলো করে রয়েছেন। হস্তে যথাক্রমে খড়গ, গদা, ধনুর্বাণ, শক্তি, চক্র, ত্রিশূল , কমণ্ডল ও রুদ্রাক্ষ ইত্যাদি ধারন করে আছেন। দেবী বাঘ্রের উপর আসীনা। দেবীর কণ্ঠে শ্বেত পুস্পের মালা , জগত জননী ত্রিনয়না।

পুরানে বর্ণিত আছে অসুরাধিপতি মহিষাসুরের অত্যচারে যখন ত্রিভুবন কম্পিত তখন দেবতারা ভগবতীর শরণাপন্ন হলে দেবী দশবাহু সমন্বিত হয়ে চন্দ্রঘণ্টা রূপে প্রকাশিত হন। দেবীর ঘণ্টাধ্বনিতে অত্যাচারী দানব দল ভয়ে ত্রাসে পলায়ন করে। দেবী সর্বদাই রণসাজে সুসজ্জিতা ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ইনি যুদ্ধপ্রিয়া ও শত্রুবিনাশকারিণী। মা ভগবতী যেমন একাধারে যুদ্ধপ্রিয়া তেমনি তাকে জ্ঞান প্রদায়িনীও বলা হয়, তাঁর হাতের অক্ষমালা ও কমণ্ডলু সেই জ্ঞানের প্রতীক। তিনি পরমশান্তিময়ী কল্যাণকারিণী।

দেবীর এই রূপ জগতে বার্তা বহন করে যে অকিঞ্চন দুষ্ট ব্যাক্তিদের যেমন শাস্তি প্রদান করা উচিত তেমনই নিজের জ্ঞান ও আত্মউদ্দেশ্য থেকেও বিস্মৃত হওয়া উচিত নয় সর্বদা শান্তি রক্ষা করাও প্রয়োজন। দেবীর বাহন বাঘ হল শৌর্যবীর্য ও পরাক্রমের প্রতীক। মানব জীবনে উন্নতির জন্য কারজ সিদ্ধির জন্য পরাক্রম ও শৌর্যবীর্যের প্রয়োজন। দেবীর বাহন যেমন রনক্ষেত্রে শত্রুদের উপর তার পরাক্রম দেখায় সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তেমনই আমাদের সমস্ত কাজে সমাজের প্রতিকূলতায় সমস্ত শক্তিদিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত ও অন্যায় কে প্রতিরোধ করা উচিৎ দেবীর বাহন সেই বার্তাই বহন করে।

মা চন্দ্রঘণ্টার উপাসনা করলে ভক্তগন পরমপদ প্রাপ্ত হন ইহলোক ও পরলোকে সদগতি প্রাপ্ত হন। দেবীর আশীর্বাদে ভক্তগণ দীর্ঘজীবী, আরোগ্য সুখী জীবন যাপন লাভ করে। মা ভগবতীর অভয়ে জীবনের সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণা দূর হয়ে পরমআনন্দ ও শান্তি লাভ হয়।

নবরাত্রির তৃতীয় দিন মায়ের উপাসনা হয় বিশুদ্ধ চিত্তে মাকে স্মরন করে কুলকুণ্ডলিনীর মনিপুর চক্রে মনো নিবেশ করতে হয়।দেবীকে জবার মালা অর্পণ করে রক্ত চন্দন বিল্বপত্র লাল পুস্প দিয়ে দেবীর অর্চনা করা হয়। নৈবিদ্য হিসেবে দেবীকে দুধ, মিষ্টি ও ক্ষীর অর্পণ করলে দেবী সন্তুষ্টা হন।



=joy ghoshal=
Share:

দেবী ভগবতীর পঞ্চম রূপ দেবী স্কন্দমাতা

সিংহাসনগতা নিত্যং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া
শুভাদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী।।

দেবী ভগবতীর পঞ্চম রূপ দেবী স্কন্দমাতা। নবরাত্রির পঞ্চম দিনে পুজিতা হন দেবী । স্কন্দমাতা অর্থাৎ স্কন্দের মা , স্কন্দ হলেন দেব সেনাপতি কার্ত্তিক। আর তিনি কার্ত্তিকের জননী রূপেই পূজিতা । তাই তিনি পরিচিতা স্কন্দমাতা নামে।

কার্ত্তিক জননী বেশে জগদম্বার রূপের বিশেষত্ব রয়েছে, তিনি চতুর্ভুজা উপরের দুই হস্তে ধারন করেছেন পদ্ম ফুল ...নীচের দুই হাত এক হস্তে তিনি স্কন্দকে রক্ষা করছেন অ ওপর হস্তে বরমুদ্রা। দেবী পদ্মাসনা সিংহের উপর বিরাজিতা। দেবীর কোলে যে স্কন্দ বা কার্ত্তিক বিরাজিত তিনি আমাদের বাংলায় পূজিত কার্তিকের থেকে আলাদা এইরূপটি কার্তিকের ষড়ানন মূর্তি। শিশু ষড়ানন কার্ত্তিক দেবী মায়ের কোলে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে বসে আছেন।

দেবীর কথা আমরা পাই স্কন্দ পুরাণে । দেবী সতীর দেহত্যাগের পর জকহ্ন দেবী আদিশক্তি পার্বতী রূপে পুনরায় জন্মগ্রহন করেন তখন প্রথমে শৈল্যপুত্রি রূপে প্রকাশিত হয় পরবর্তী সময়ে ব্রক্ষচারিনী রূপে প্রকাশিত হয়ে শিবকে তুষ্ট করেন ও পতিরূপে প্রাপ্ত করেন । দেবী পার্বতী ও শিবের অংশ স্কন্দ ষড়ানন কুমার কার্ত্তিক জন্মগ্রহন করেন তারকাসুরের বধের জন্য। পৌরাণিক গল্পে পাওয়া যায় কার্ত্তিকের শৈশব কালে যখন তিনি ক্রীড়া মগ্ন ছিলেন তখন অকস্মাৎ তারকাসুর তার সৈন্যদের নিয়ে কুমারকে বধের জন্য উদ্ধত হয় । ভগবতী পার্বতী কার্ত্তিকে রক্ষার্থে এই বিশাল প্রচণ্ড রূপ ধারন করেন ও সমস্ত অসুর সৈন্য বধ করেন ।দেবীর আশীর্বাদে কার্ত্তিক তারকাসুর বধ করেন।

দেবীর এই রূপ দেখলে যেমন বোঝা যায় তিনি ভীষণা অসুর বিনাশে উদ্দত ঠিক তেমনই তাঁর করুণাময়ী মমতাময়ী রূপটি প্রকাশিত হয়। তিনি জগত সংসারকে বার্তা দিচ্ছেন যেমন স্কন্দকে তিনি রক্ষা করছেন ঠিক তেমন ভাবেই সৃষ্টির প্রতিটি জীব মায়ের সন্তান তিনি তাদেরকেও সমান ভাবে রক্ষা করছেন ও অশুভ শক্তি নাশ করছেন। এই রূপটি থেকে আরও একটি কথা প্রকাশিত সন্তান যেমন সবচেয়ে বেশী নিরাপদ তাঁর মায়ের কোলে বা ক্রোড়ে মা যেমন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাদের মানুষ করেন রক্ষা করেন দেবী ভগবতী জগত জননী মাও ঠিক তেমন ভাবেই আমাদের রক্ষা করে চলেছেন ও অভয় দান করছেন। তিনি অভয় দিচ্ছেন সকল বিপদ থেকে তিনি আমাদের সর্বদা রক্ষা করবেন , তিনি যে রক্ষাকত্রি। এই রূপটি তারই প্রকাশ। তাঁর শরণাপন্ন হলেই আমরা সবথেকে বেশী নিরাপদ।

দেবী স্কন্দমাতা কুলকুণ্ডলিনীর " বিশুদ্ধ চক্রে" অবস্থান করেন ।। শুদ্ধচিত্তে তাকে স্মরন করে দেবীকে বিশুদ্ধ চক্রে আবহন করতে হয়। জবা, অপরাজিতা, বিল্বপত্রে দেবীর পূজা করে মিষ্টান্ন ও নানা রকমের ফল দেবীকে নিবেদন করতে হয় তার কলা অত্যন্ত প্রিয় দেবীর, তাই তাঁর ভোগে কলা নিবেদন অবশ্যই করতে হয়।

দেবী প্রসন্না হলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি দৈহিক আরোগ্য লাভ ও শত্রু নাশ হয়। দেবীর পূজায় হলে সাথে সাথে কার্তিকেরও পূজা হয়ে যায়। অর্থাৎ মাতা ও পুত্রের উভয়ের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন।

" যা দেবী সর্বভুতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা"
 ( joy ghoshal )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।