০৭ এপ্রিল ২০১৫

ভাগবতের আলোকে মানব শরীর সৃষ্টি (পর্ব ০২)

ব্রহ্মা সরাসরি ভগবানের নিকট থেকে দেহ লাভ করেন
সর্ববদময়েনেদমাত্মানাত্মাত্মযোনিনা ।
প্রজাঃ সৃজ যথাপূর্বং যাশ্চ ময্যনুশেরতে ।। (ভাগবত ৩/৯/৪৩)
অনুবাদ – আমার নির্দেশ অনুসরণ করিয়া, পূর্ণ বৈদিক জ্ঞানের দ্বারা এবং সর্ব কারণের পরম কারণ আমার থেকে সরাসরিভাবে তুমি যে দেহ প্রাপ্ত হইয়াছ, তাহার দ্বারা তুমি এখন পূর্বের মতো প্রজা সৃষ্টি কর ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মা সরাসরি ভগবানের শরীর থেকে তার শরীর লাভ করেছেন । এই বিষয়টি সহজেই উপলব্ধি করা যায় সেটা হল এক জনের শরীর থেকে আর একটি শরীর তৈরী করা যায়, বিজ্ঞানীরা ইদানিং ক্লোনিং নামক একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরো একটি শরীর সৃষ্টি করা যায়, সুতরাং বলা যায় ভাগবতে ব্রহ্মার সৃষ্টি বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক ।
এখন প্রশ্ন হতে পারে ভগবানের সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে ? সেই প্রশ্নের উত্তরে বেদান্ত সূত্রে বলা হয়েছে
জন্মদাস্য যতঃ
অনুবাদ – এই মহাবিশ্ব সহ যাবতীয় কিছু ভগবান থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তিনি অজাত অর্থাৎ তাঁহার কোন সৃষ্টি নাই, তিনি অনাদি অর্থাৎ সবকিছুর আদিতে তিনি ছিলেন ।
সুতরাং বলা যায় ভগবানের কোন সৃষ্টি বা ধ্বংস নাই কিন্তু সবকিছু তাঁহার নিকট থেকে সৃষ্টি হয়েছে ।
ব্রহ্মার শরীর মহত্তত্ত্ব দ্বারা সৃষ্টি
যস্যাদ্য আসীদ্‌ গূণবিগ্রহো মহান্‌ বিজ্ঞানধিষ্ণ্যো ভগবানজঃ কিল ।
যৎসম্ভবোহহং ত্রিবৃতা স্বতেজসা বৈকারিকং তামসমৈন্দ্রিয়ং সৃজে ।। (ভাগবত ৫/১৭/২২)
অনুবাদ – ভগবান থেকেই ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়, যাঁহার শরীর মহত্তত্ত্বের দ্বারা নির্মিত এবং যিনি রজোগুণ-প্রধান বুদ্ধির আশ্রয় । সেই ব্রহ্মা থেকে অহংকার তত্ত্ব আমি রুদ্র জন্ম গ্রহণ করিয়াছি । আমার শক্তির দ্বারা আমি অন্য সমস্ত দেবতাদের, পঞ্চমহাভূত এবং ইন্দিয়বর্গের সৃষ্টি করি ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মার শরীর ভগবান থেকে সৃষ্টি হয়েছে যা মহত্তত্ত্ব দ্বারা তৈরী । মহত্তত্ত্ব এমন একটি পদার্থ যার মধ্যে এই মহাবিশ্বের সকল প্রাণীর বীজ বা জেনেটিক ইনফরমেশন নিহিত আছে ।
মহত্তত্ত্বের মধ্যে ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশকারী বীজ নিহিত আছে
ততোহভবন্‌ মহত্তত্ত্বব্যক্তাৎকালচোদিতাৎ
বিজ্ঞানাত্মাত্মদেহস্থং বিশ্বং ব্যঞ্জংস্তমোনুদঃ ।। (ভাগবত ৩/৫/২৭)
অনুবাদ
তারপর কালের প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে মহত্তত্ত্ব আবির্ভূত হইয়াছিল এবং এই বিশুদ্ধ সত্ত্বস্বরূপ মহত্তত্ত্বে ভগবান তাঁহার স্বীয় শরীর থেকে ব্রহ্মাণ্ড প্রকাশকারী বীজ বপন করিয়াছিলেন ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে মহত্তত্ত্বের মধ্যে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির বীজ নিহিত আছে যা দ্বারা ব্রহ্মার শরীর তৈরী । সুতরাং বলা যায় ব্রহ্মার শরীর হতে এই মহাবিশ্বের সকল প্রাণী সৃষ্টি হতে পারে ।
মহত্তত্ত্বের বিস্তৃতি
বিশ্বমাত্মগতং ব্যঞ্জন্‌ কূটস্থো জগদষ্কুরঃ
স্বতেজসাপিবত্তীব্রমাত্মপ্রস্বাপনং তমঃ ।। (ভাগবত ৩/২৬/২০)
অনুবাদ – এইভাবে, বৈচিত্র্য প্রকাশ করিবার পর, জ্যোতির্ময় মহত্তত্ত্ব, যাহার মধ্যে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের বীজ নিহিত রহিয়াছে, যাহা সমগ্র জগতের অঙ্কুর-স্বরূপ এবং প্রলয়ের সময় যাহা বিনষ্ট হইয়া যায় না, প্রলয়ের সময় তাহার জ্যোতিকে আবৃত করে যে তম, তাহাকে পান করিয়াছিল অর্থাৎ লোপ করিয়াছিল ।
এই শ্লোকের ব্যাখ্যা পূর্বে করা হয়েছে এখানে সংক্ষেপে বলা যায় মহত্তত্ত্ব হল সমগ্র জগত প্রকাশের অঙ্কুর স্বরূপ অর্থাৎ এই মহাবিশ্বে যে ৮৪ লক্ষ রকমের প্রজাতি আছে তাদের সৃষ্টির বীজ বা জেনেটিক ইনফরমেশন এই মহত্তত্ত্বের মধ্যে আছে ।
এই সকল আলোচনা থেকে উপলব্ধি করা যায় ব্রহ্মার শরীর সরাসরি ভগবান থেকে লাভ করেছে এবং তা মহত্তত্ত্ব নামক পদার্থ দ্বারা তৈরী ।
ভগবানের নাভি পদ্ম থেকে ব্রহ্মার জন্ম
তস্য নাভেঃ সম্ভবৎ পদ্মকোষো হিরন্ময়ঃ ।
তস্মিঞ্জজ্ঞে মহারাজ স্বয়ম্ভূশ্চতুরাননঃ ।। (ভাগবত ৯/১/৯)
অনুবাদ – হে মহারাজ পরীক্ষিৎ ! সেই পরম পুরুষ ভগবানের নাভি থেকে একটি স্বর্ণময় পদ্ম উদ্ভূত হইয়াছিল, সেই পদ্মে চতুর্মুখ ব্রহ্মার জন্ম হইয়াছিল ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ভগবানের নাভি থেকে ব্রহ্মার জন্ম হয় । ব্রহ্মা সৃষ্টির পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে এই ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির নির্দেশ প্রদান করলেন । মহাবিশ্ব সৃষ্টির নির্দেশ পাওয়ার পর ব্রহ্মা কিভাবে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা যায় সেই বিষয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন তখন ভগবান ব্রহ্মার হৃদয়ে বেদের জ্ঞান প্রকাশ করলেন । সেই বৈদিক জ্ঞান দ্বারা ব্রহ্মা সৃষ্টি কার্য করতে লাগলেন ।
(চলবে......)

সংকীর্তন মাধব
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।