০২ মে ২০১৫

মঙ্গলাগিরিতে ভগবান নৃসিংহদেব

অনেকেই বলে যে, ‘পৃথিবীতে ভগবান বলতে কিছুই নেই’ । আবার অনেকে বলে, ‘ভগবানকে কেউ দেখেছে নাকি? বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে ভগবান মানে সেকেলের কাল্পনিক ধারণা মাত্র, যা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয় ।’ এই সমস্ত প্রচলিত উক্তি আমাদের সমাজে অনেকেই করে থাকে । তাদের জন্যে ‘মঙ্গলাগিরি’ এক বাস্তব প্রমাণ ।
পারমার্থিক জগতে ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে অপ্রাকৃতিক লীলা দর্শনের মাধ্যমে আমাদের ভক্তি কিংবা বিশ্বাস বৃদ্ধি পায় । ভক্তগন পারমার্থিক জ্ঞান দ্বারা এবং পূর্বতন আচার্যদের গুণাবলী কিংবা লীলা দর্শন করে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ়ভাবে স্থাপন করে । আমরা অনেকেই হয়তো সরাসরিভাবে ভগবানের লীলা উপলব্ধি করতে পারি না । কিন্তু অপ্রাকৃতিক ধাম ‘মঙ্গলাগিরি’ তে এলে যে কেউ ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে সাক্ষাৎ লীলা দর্শন করতে পারেন । এতে ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রেমভক্তি বৃদ্ধি পায় ।
অর্ধসিংহ ও অর্ধ নররূপি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার ভগবান নৃসিংহদেব, যিনি সত্যযুগে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষার জন্য পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । ভগবান নৃসিংহদেবের আবির্ভাব স্থান অহোভিলাম থেকে কিছু দূরে দক্ষিণ ভারতে মঙ্গলাগিরি ধাম অবস্থিত । এই ধামের চতুর্দিক হাতি সদৃশ । এর কারণ খুঁজে পাওয়া যায় ‘স্কন্দ পুরাণ’ হতে ।
একবার বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধক অবস্থায় জন্ম নেয় এক বালক ঋষ্যশৃঙ্গি । ঋষ্যশৃঙ্গি যখন বুঝতে সক্ষম হলেন যে তার পিতা পরিযাত্র তার প্রতিবন্ধী শরীরে জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ঠ, তখন তিনি পিতৃ আবাস ত্যাগ করলেন । তীর্থ পরিক্রমা কালে তিনি কৃষ্ণ নদীর দক্ষিন পার্শ্বে এসে পদিত আশ্রমে আশ্রয় নেন । তিনি যখন শুনলেন যে তার পিতা সেখানে আসছেন, তখন তিনি সেখানের লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহের কাছে প্রার্থনা করলেন তারা যাতে লক্ষ্মীনৃসিংহ রূপে অবতীর্ণ হয়ে পাহাড়ে নিত্য অবস্থান করেন । ঋষ্যশৃঙ্গির কঠোর তপস্যা ও কৃচ্ছসাধনে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান নৃসিংহদেব এই স্থানে আবির্ভূত হয়েছিলেন । ঋষ্যশৃঙ্গির স্তোত্র পাঠের কারণে উক্ত পাহাড়কে ‘স্তোত্রাদ্রি’ বলা হয় । স্তোত্রাদ্রি পাহাড়ের উপর ৬০০টি সিড়ি পাড় হয়ে উঠলে লক্ষ্মীনৃসিংহ মন্দির দর্শন করা যায় । ৬০০ সিড়ি বেয়ে উঠতেই প্রচন্ড ক্লান্তি আপনাকে অবসন্ন করতে পারে । তবে চিন্তা নেই, আপনার ক্লান্তি নিমিষেই চলে যাবে যখন আপনি এখানের এক বিশেষ প্রসাদ গ্রহণ করবেন । আখের রস, কর্পুর, এলাচ ও কালো মরিচের সমন্বয়ে তৈরি এক অপূর্ব শরবত বা পঙ্কম (তামিল ভাষায়) এখানে নৃসিংহদেবকে নিবেদন করা হয় । যে কারো নিবেদিত এই শরবত ভগবান গ্রহণ করে থাকেন এবং এজন্যে আপনাকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে । পাহাড়ের গুহায় অবস্থিত এই মন্দিরের বিগ্রহের নাম পঙ্কল নৃসিংহ । এই পঙ্কল নৃসিংহ হচ্ছেন স্বপ্রকাশিত বিগ্রহ যার রয়েছে বড় মুখ যা ছয়ইঞ্চি গভীর । চর্তুহস্তে এবং বিশাল মুখে তিনি সরাসরি ভোগদ্রব্য গ্রহন করে থাকেন । একটি শরবত পূর্ণ জগ নিয়ে যদি আপনি ভগবানকে নিবেদন করেন তখন পূজারী সেই শরবত ভোগ সরাসরি শঙ্গের সাহায্যে পঙ্কল নৃসিংহদেবের মুখে প্রবেশ করিয়ে দেয় । ঠিক তখন খল খল শব্দ হয় এবং ভগবান যে স্বয়ং সেই নিবেদিত জল গ্রহণ করছেন তা বোঝা যায় । কিন্তু এক সময় ঐ শব্দ আর শোনা যায় না । তখন পূজারী পঙ্কম পান করানো থেকে বিরত থাকেন । তবে এখানে আশ্চর্যের বিষয় যে, ভগবান কখনো সম্পূর্ণ পাত্রপূর্ণ শরবত গ্রহণ করেন না । তিনি ঠিক অর্ধেক গ্রহণ করেন এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় যে, প্রতিবারই যখনই ভাগবানকে ভোগ নিবেদন করা হয় তখন কেবল অর্ধেক গ্রহন করেন । পঙ্কল নৃসিংহ মূলত স্বপ্রকাশিত পাথরের বিগ্রহ, যার ডানে রয়েছে শঙ্খ এবং বামে সুদর্শন চক্রের চিহ্ন । ভক্তের প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্য এবং নিবেদিত ভোগ্য সরাসরি গ্রহণ করার জন্য খোলা মুখমণ্ডল । যদিও প্রতিদিন এখানে প্রচুর পরিমানে সুমিষ্ট পানীয় নিবেদিত হয় তবুও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এখানে কোন পিঁপড়া নেই । এছাড়া এত গ্যালন গ্যালন পানীয় যে কোথায় যায় তা এখনো পর্যন্ত কেউ উপলব্ধি করতে পারেনি । স্কন্দ পুরাণে বলা আছে প্রতিদিন রাতে দেবদেবীরা এই নৃসিংহদেব পূজা আর স্তুতি করে থাকে যা এখনো হয়ে থাকে, সন্ধ্যার পর এই মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয় আর যখন সকালে মন্দির খোলে তখন অপূর্ব মনোহর এক সুগন্ধ ভেসে আসে, তারপ সারাদিন আর ঐ সুগন্ধ থাকে না আবার রাতে দরজা বন্ধ করলে পরেরদিন সকালে সে একই সুগন্ধ ভেসে আসে । সত্যিই আশ্চর্যকর ভগবানে নৃসিংহদেবের মহিমা ।


Written by: সংকীর্তন মাধব
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।