২৪ জুন ২০১৫

বৈদিক পুরুষার্থ

প্রতিটি মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যকে বলা হয় পুরুষার্থ। প্রতিটি মানুষই জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি, সাফল্য, স্বচ্ছন্দ, যশ, খ্যাতি, অমরত্ব(কীর্তিদ্বারা) প্রভৃতি চায়। বৈদিক ঋষিরা মানবজীবনের এই সকল চাওয়া পাওয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। কাম ও আর্থ। এই দুটি শব্দ দ্বারা মানব জীবনের সমস্ত কামনাবাসনা প্রকাশ করা যায়। কাম ও আর্থ না থাকলে জীবন পরিপূর্ণ হয়না বা বলা যায় কাম ও আর্থ ছাড়া জীবনই হয়না। কিন্তু, প্রত্যেকটি কাজেরই কিছু নীতি থাকে। নীতিবর্জিত যেকোন কাজই ব্যক্তি ও সমাজের সুদূরপ্রসারী ক্ষতি করে থাকে এবং নীতিভ্রষ্ট সমাজের ধ্বংসই নিয়তি। তাই বৈদিক ঋষিদের মতে, যে নীতিদ্বারা কাম ও আর্থ পরিচালিত হবে, তা হবে ধর্ম। ধর্মই পথ দেখাবে মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির পরস্পর নির্ভরশীল সহাবস্থানের, ঠিক করে দেবে পারস্পরিক সম্পর্কের নৈতিকতা, তৈরি করবে ব্যক্তিত্ব, নির্ধারণ করবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক চরিত্র, উন্মেষ ঘটাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের এবং মানুষের সুপ্ত ঐশ্বরিক গুনসমূহের ধাপে ধাপে চর্চার মাধ্যমে তার মনুষ্যগুণের সর্বোচ্চ পরিস্ফুরন ঘটাবে। আর, এই গুণসমূহের সর্বোচ্চ পরিস্ফুটনের দ্বারা মানুষের সাথে ঈশ্বরের পার্থক্য ঘুচে যাবে, মানুষ হয়ে উঠবে সচ্চিদানন্দ, তাঁর ভেতরকার ব্রহ্ম জেগে উঠবে, আর আত্মা পরমাত্মায় লীন হয়ে যাবে। এই, অন্তিম অবস্থাকেই বৈদিক ঋষিরা কাম ও আর্থের বাইরে এক অন্তিম লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যার নাম মোক্ষ।
সুতরাং, বেদ মতে পুরুষার্থ চারটি। যথাঃ কাম, আর্থ, ধর্ম ও মোক্ষ।
ব্যাপারটা আর একটু খোলাসা করা যাক।
বেদমতে ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেননি। বরং, সকল সৃষ্টি ঈশ্বরেরই প্রকাশ। অর্থাৎ, এক ঈশ্বরই সর্বজীবে ও সর্বভূতে অধিষ্ঠিত। সৃষ্টির সাথে ঈশ্বরের গুনগত কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল প্রকাশভেদে। সৃষ্টি গুণে অপূর্ণ ও অপ্রকাশিত, কিন্তু ঈশ্বর সম্পূর্ণ ও প্রকাশিত।
ঈশ্বরকে বলা হয়, সচ্চিদানন্দ। এটি তিনটি শব্দের যুক্তাক্ষর; সত, চিত ও আনন্দ।
সত= যা সর্বদা বিরাজমান; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেয় এবং যা সময় দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। যেমনঃ সৃষ্টি, প্রকৃতি, মহাবিশ্ব ইত্যাদি।
চিত= যিনি সচেতন বা চেতনাধারী। যিনি ন্যায়, অন্যায়, ভুল শুদ্ধ বিচার করতে পারেন, এমন বিবেকবান। যেমনঃ জীবজগত (বিশেষ করে মানুষ)
আনন্দ= যিনি সর্বদা আনন্দময়; সুখ, দুঃখ, জরা, ব্যাধি, রাগ, ক্ষোভ, বিদ্বেষ, জীবন মৃত্যুর অতীত, সর্ব গুণান্বিত, সম্পূর্ণ। চিরসচেতন, সর্বত্র ও অনন্ত।
অর্থাৎ, আমরা দেখি প্রকৃতি বা সৃষ্টি হল সত, জীব হল সত ও চিত উভয়ই। আর ঈশ্বর হল সচ্চিদানন্দ। কারণ, তিনি সত ও চত এর পাশাপাশি পূর্ণ প্রকাশিত আনন্দময়। জীবের (এক্ষেত্রে মানুষের) সাথে ঈশ্বরের পার্থক্য কেবল গুণাবলীর প্রকাশে। মানুষের সুপ্ত, ঈশ্বরের সম্পূর্ণ প্রকাশিত।
মানুষের সুপ্ত চেতনা বা গুণের প্রকাশের অনুঘটক হল ধর্ম।

Courtest by: Ayan Chowdhury

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।