১৮ জুলাই ২০১৫

শ্রীজগন্নাথ পুরী (পর্ব ০২)

জগন্নাথ পুরীর আরেক নাম হল ‘শ্রীক্ষেত্র’ । শ্রী শব্দের অর্থ শ্রীদেবী বা লক্ষ্মীদেবী, যিনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর স্বরূপশক্তি । যে ভূমিখন্ড শ্রীশক্তির প্রভাবান্বিত, সেই ক্ষেত্র শ্রীক্ষেত্র নামে প্রসিদ্ধ ।
শ্রীদেবী শ্রীমতি রাধারাণীর অংশপ্রকাশ । যেসব ভক্তগণ মাধুর্যরসাশ্রিত, মাধুর্য রসে যারা ভগবানের আরাধনা করেন, তাদের মতানুসারে এ ক্ষেত্র সর্বোচ্চ স্তরে সেবাভাব প্রকটিত করেছেঃ মাধুর্য এবং ঔদার্য ।
শ্রীক্ষেত্র বা উৎকল ৪ ভাগে বিভক্ত, যা ভগবান বিষ্ণুর শ্রীহস্তধৃত ৪ টি অস্ত্রের দ্যোতক । এ ৪ ক্ষেত্র শঙ্খক্ষেত্র (পুরী শহর), পদ্মক্ষেত্র (কোণার্ক), চক্রক্ষেত্র (ভুবনেশ্বর) এবং গদাক্ষেত্র (যাজপুর) নামে খ্যাত । সমগ্র ক্ষেত্রমন্ডল দশ যোজন পরিধি বিশিষ্ট ।
ঐ দশ যোজন পরিধির মধ্যে অবস্থিত পুরী শঙ্খক্ষেত্র নামে বিদিত, কারণ পুরীর পরিধি শঙ্খের ন্যায় আকার-বিশিষ্ট । পুরীক্ষেত্র পাচ ক্রোশ পরিমাণ আয়তন বিশিষ্ট, এবং মধ্যে তিন ক্রোশ মহাসাগরের নীচে নিমজ্জিত, দুই ক্রোশ স্থলভূমি । পুরীর ভূভাগ স্বর্ণাভ বালুকারাশি দ্বারা আবৃত এবং এক নীলাভ পর্বত বা নীলাচল দ্বারা শোভিত । শ্রীক্ষেত্রের অন্তর্গত চারটি ক্ষেত্রের মধ্যে এ শঙ্খক্ষেত্র অত্যন্ত বিশিষ্ট, কেননা এখানে পরমপুরুষ ভগবান স্বয়ং মহাদধি বা মহাসাগরের তীরে নীল পর্বত, নীলাদ্রির উপরে তার অর্চা-বিগ্রহ স্বরূপে বিরাজ করছেন । ভগবান বলেছেন যে, এ স্থান অতি সংগুপ্ত, এমনকি ব্রহ্মার কাছেও ।
স্কন্দপুরানে লক্ষ্মীদেবী বলেছেন
পঞ্চক্রোশং ইদং ক্ষেত্রং সমুদ্রান্ত ব্যবস্থিতম্ ।
দ্বি ক্রোশং তীর্থ রাজস্য তটভূমৌ সুনির্মলম্ ।।
সুবর্ণবালুকাকীর্ণং নীল পর্বত শোভিতম্ ।
যোহসৌ বিশ্বেশ্বরো দেবঃ সাক্ষান্নারায়ণাত্মকম্ ।।
“এ ক্ষেত্র পঞ্চক্রোশ পরিমিত আয়তন বিশিষ্ট এবং সমুদ্রতীরে অবস্থিত । এই পঞ্চক্রোশের মধ্যে দ্বিক্রোশ পরিমিত স্থলভাগ সমুদ্রতট ভাগে অবস্থিত এবং সুনির্মল, অতি পবিত্র । এ স্থান স্বর্ণবর্ণ বালুকারাশি সমাবৃত এবং নীলপর্বত দ্বারা সুশোভিত । সাক্ষাৎ নারায়ণ এখানে বিশ্বেশ্বর রূপে বিরাজিত রয়েছেন ।”
এই শ্রী মন্দির বা জগন্নাথ মন্দির পাহারা দেওয়ার কাজ শিব ও হনুমানকে দিয়েছিল গত পোষ্টে আমরা কানপাতা হনুমানের কাহিনী বর্ণনা করেছিলাম আজকে আমরা আলোচনা করব বর্গী হনুমানের…
বর্গী হনুমান
জগন্নাথ মন্দিরের পশ্চিম দিকে লোকনাথ রোডে বর্গী হনুমান মন্দির অবস্থিত । পূর্বে বর্গীরা (মহারাষ্ট্রের এক জনজাতি) এই পথ দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যেত, এর ফলে শ্রীমন্দিরে ও পুরীর মানুষদের মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি হত । এই বর্গীরা হনুমানের ভক্ত, সেজন্য তাদের পুরী প্রবেশ বন্ধ করতে এই অঞ্চলে একটি হনুমান মূর্তি মন্দিরে স্থাপন করা হয় ।
বর্গীরা হনুমান মূর্তি অতিক্রম করে যেতে অনিচ্ছুক ছিল, সেজন্য এইভাবে মহারাষ্ট্রের দুর্ধর্ষ বর্গীদের আক্রমণ থেকে পুরী রক্ষা পেয়েছিল ।
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।