১৩ জুলাই ২০১৫

নিত্যকর্ম

কিভাবে কাটাবেন সারা দিন ?

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবার চেষ্টা করুন । হিন্দু শাস্ত্র মতে ব্রাহ্ম মুহূর্তে শয্যা ত্যাগ করা নিয়ম কিন্তু আজকের ব্যস্ততার যুগে সেটা সম্ভব নয়। তাই চেষ্টা করুন সকাল ৫-৬ টার মধ্যে শয্যা ত্যাগ করতে । ঘুম থেকে উঠে প্রথমে গুরুদেব ও ইষ্টদেবতাকে প্রনাম করুন । যাহাদের দীক্ষা হয় নি, তারা ইষ্টদবেতাকে প্রনাম করুন ।

এরপর করজোড়ে মা বসুমতীকে প্রনাম করুন । কারন বসুমতীর বুকে আমরা চরণ দিয়ে হেটেচলে বেড়াই । তিনি সর্বংসহা – সব সহ্য করেন । বসুমতীকে প্রনাম করে পুরুষেরা ডান পা আগে ফেলুন পরে বাম পা। মহিলারা বাম পা আগে ফেলুন পরে ডান পা । বিছানায় বসে বেড টি খাওয়া বর্জন করুন ।

এরপর দাঁত ব্রাশ করে আধাঘণ্টা যোগা করুন । যোগা করতে অসমর্থ হলে বাড়ীর উঠোনে, ছাদে বা নিকটে  কোনো পার্ক বা মাঠে আধঘণ্টা জোরে জোরে হাটুন । বাড়ীতে বাচ্চা থাকলে তাদেরকেউ এই অভ্যাস শেখান ।

এরপর বাড়ী ফিরে শৌচাদি ও স্নান সাড়ুন । স্নান সেড়ে পূজো করুন । দেখবেন মারোয়ারী, বিহারী, জাঠ, গুজরাটি এদের মধ্যে এই সু অভ্যাস আছে । তারা সকাল সকাল স্নান সেড়ে সকলে একসাথে ভগবানের আরতি পূজো করে । তাই আপনিও সকাল সকাল পূজোর অভ্যাস করুন । ঘরে ধুপধুনো দিন সকালে । ধূপের গন্ধে সকল অশুভ প্রভাব কেটে যায় ।

স্নান সেড়ে পূজা না করতে পারলে তুলসী, বেল, বট, অশ্বত্থ , নিম বৃক্ষে জল দিন । এই গাছগুলি পবিত্র, এতে দেবতারা থাকেন । যারা দীক্ষিত তারা এইসময় গুরুপ্রদত্ত বীজ মন্ত্র জপ করুন । অদীক্ষিত ব্যাক্তি গণ হাতে তালি দিয়ে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করুন । এরপর সূর্য দেবতাকে প্রনাম ও জল অর্পণ করুন । কেউ কেউ আছেন বাড়ীর কাজকর্ম সেড়ে দুপুরে পূজা করেন। এটাও ঠিক।

যারা অফিস যাবেন তারা অফিসে যান, যারা গৃহে থাকবেন তারা সকাল ১২ টা থেকে ২ টার মধ্যে মধ্যাহ্ন ভোজোন সমাপ্ত করুন । ভোজোন গ্রহণ করার সময় অন্নের থালাকে “জয় মাতা অন্নপূর্ণা” বলে নমস্কার করে তারপর ভোজোন করুন । কত ভিখারী অন্ন পায় না, মনে করুন আপনি যা পেয়েছেন মা অন্নপূর্ণার দয়ায় । গ্রেগ্রাসে আর আকন্ঠ খাবেন না। শাস্ত্রে মানা আছে । যতটুকু তে পেট ভরে ততটাই খাবেন । খাওয়ার কিছু ভুক্তাবিশিষ্ট কুকুর, বিড়াল, পক্ষী দিগকে দিন ।

দুপুরে কেউ গৃহে আসলে তাকে অবশ্যই ভোজোন করাবেন । দ্বিপ্রহরে হিন্দুর বাড়ী থেকে কেউ অভুক্ত ফিরে গেলে সেই গৃহে অমঙ্গল হয় ।

দিবানিদ্রা হিন্দু ধর্মে পাপ। দুপুরে না ঘুমানোর চেষ্টা করুন । তবে অল্প শয়ন চলতে পারে ।

সন্ধ্যা  হলে সূর্য ডোবার পর আহার গ্রহণ হিন্দু ধর্মে পাপ। এই সময় ভোজোন করলে সে রাক্ষস হয় । সূর্য অস্ত যাবার পর চুল আঁচড়ানো , ভোজোন, শয়ন, মলিন বস্ত্র পরিধান ইত্যাদি হিন্দু ধর্মে পাপ । সন্ধ্যার সময় মহিলারা তুলসী প্রাঙ্গনে প্রদীপ দিন, সারা বাড়ী ঠাকুরঘরে ধূপধুনো দিন । একত্র হয়ে ধার্মিক গ্রন্থ পাঠ, কীর্তন , গুরু মন্ত্র জপ করুন । বাড়ীর বাচ্চাকাচ্চাদের শেখান । গুরুবারে সন্ধ্যা কালে অবশ্যই আল্পনা দিয়ে নৈবদ্য দিয়ে মা লক্ষ্মীর পূজো করুন ।

অফিস থেকে বাড়ীতে ফিরে পুরুষেরা পরিষ্কার বস্ত্রে ( লুঙ্গি বর্জন ) গুরু প্রদত্ত মন্ত্র জপ করুন । দীক্ষা না হলে ভগবানের নাম কীর্তন বা  ধার্মিক গ্রন্থ পাঠ করুন ।  লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় হিন্দু ধর্মে ধার্মিক কাজ করা বারন ।

রাতে রুটি খাওয়া অভ্যাস করুন । হিন্দু ধর্মে দিবসে অন্ন রাতে রুটি পরোটা খাওয়ার কথা বলা হয় । স্বল্প দুধ পান করুন রাতে খাওয়ার সাথে । সপ্তাহে কম করে হলেও দুদিন শাকাহারী নিরামিষ আহার খেতে অভ্যাস করুন । শাস্ত্র নিশিদ্ধ খাবার গ্রহণ করবেন না ।

রাত ১০-১১ টার মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস করুন । ঘুমাতে যাবার আগে ঈশ্বরকে প্রনাম করুন । শয়নের আগে যে বালিশ মাথায় দেন, সেই বালিশকে প্রনাম করুন । মাথায় দেওয়া বালিশে ভগবান নারায়ন অবস্থান করেন । সেই বালিশ কদাপি কোলে বা পায়ে দেবেন না ।

একাদশী, অমাবস্যা, পূর্ণিমা , বার ব্রততে উপবাস রাখুন । একদিন না খেলে আপনি মরে যাবেন না । ঐ সব তিথিতে ভগবানের ফল প্রসাদ, দুগ্ধ গ্রহণ করুন ।

বিধবা, সধবা,৫ বছর এর উপরের সবাই একাদশী, বারব্রত করতে পারেন । কেউ কেউ বলেন সধবা দের একাদশী করা মানা। এটা ভুল। ভগবানের সেবায় সধবা- বিধবা বলে কিছু হয় না। ঈশ্বরের ইচ্ছায় মানুষের জন্ম হয় আবার ঈশ্বরের ইচ্ছায় মানুষের আয়ু পূর্ণ হয় । হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের ওপর আধারিত । যে ব্যাক্তি শাস্ত্র মানে না সে ইহলোক বা পরলোক কোথাও সুখে থাকেন না । অতএব ধর্মগ্রন্থের নির্দেশ মেনে চলুন ।

Share:

1 Comments:

amarbaxo@gmail.com বলেছেন...

নমো নারায়ণায়।
দু'একটা ব্যাপারে সহমত হচ্ছি না।
*সূর্যোদয়ের ১ঘন্টা ৩৬ মিনিট পূর্ব সময়কে 'ব্রাহ্ম মুহূর্ত' বলা হয়। তাই সকাল ৫/৬টায় ঘুম থেকে উঠলে সেটা 'ব্রাহ্ম মুহূর্ত' হবে না।

* 'দুপুর' সাধারণতঃ নিত্যনৈমিত্তিক মূল পূজার সময় নয় বোধ করি। কারণ 'স্মৃতি'তে বলা হয়েছে সূর্যোদয়ের ১ঘন্টা ৩৬ মিনিট পূর্ব থেকে (আসলে যা 'ব্রাহ্ম মুহূর্ত' বলি) দিবামানের ৬মুহূর্ত অবধি 'দেবপূজা'-র সময়।কারণ দেবপূজা আসলে পূর্বাহ্ন কৃত্য। এরপর ৬মুহূর্ত থেকে ৯মুহূর্ত অবধি আদ্য একোদ্দিষ্ট, মাসিক ও সাংবাৎসরিক শ্রাদ্ধের কাল। একান্ত অসমর্থে ৫মুহূর্তের পর ১০মুহূর্ত পর্যন্ত্য। সপিন্ডিকরণের কাল ৯ মুহূর্তের পর ১২ মুহূর্ত পর্যন্ত্য। অসমর্থ হলে দিবার্ধ থেকে ১৪ মুহূর্ত মধ্যে অবশ্য কর্তব্য। এরপর পৈত্র কার্য্যাদি করণীয় নয়। কারণ ১৪ মুহূর্তের পর 'রাক্ষসী বেলা'।

*খাওয়ার পর 'ভুক্ত অবশিষ্ট' বলতে উল্লেখ করে দেওয়ার প্রয়োজন আছে যে, এঁটো খাওয়ার কিন্তু কুকুর-বিড়ালকেও খাওয়াতে নেই। সর্বাগ্রে জানানো দরকার, খেতে বসলে খাবার এঁটো করে অবশিষ্ট ছাড়তেই নেই। সাধ্য অনুসারেই খাবার নিতে হয় পাতে, যাতে অতিরিক্ত না হয়।
* সপ্তাহে কমকরে দুদিন শাকাহার নয়, সপ্তাহের সমস্ত দিনই শাখার একান্তই দরকার।
* প্রত্যহ পিতা-মাতার পাদস্পর্শ করে প্রণাম করা দরকার। এটা নিত্যকর্মে একান্তই উল্লেখযোগ্য।
নমো নারায়ণায়।

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।