১১ অক্টোবর ২০১৫

পুরস্কার পাবার লোভে যে সকল থিম পূজার আয়োজন

দেবী দুর্গা বা দেবী চণ্ডিকা হলেন দানবনাশিণী । তিনি অসুর সংহার করেন । তাই তাঁর হস্তে ঘাতক অস্ত্র সকল শোভামান । তিনি মহিষমর্দিনী । শুধু এইটুকুই নয়। পরবর্তীতে তিনি ধুম্রলোচন, চণ্ড- মুণ্ড, রক্তবীজ, শুম্ভ নিশুম্ভ বধ করেছিলেন । এখানেই তাঁর লীলা সমাপন নয়। চণ্ড- প্রচণ্ড নামক দুই মহাসুরকে তিনি কৈলাসে বধ করেছিলেন । দুর্গম নামক অসুর বধ করেছিলেন । ভণ্ডাসুরকে বিনাশ করবার জন্য ললিতা রূপে আবির্ভূতা হয়েছিলেন , সংকট অসুরকে বধ করবার জন্য ‘শিবশক্তি’ রূপে প্রকট হয়েছিলেন । দারুক অসুরকে নাশ করবার জন্য কালী মূর্তি ধারন করেছিলেন । অরুনাসুরকে নাশ করবার জন্য ভ্রামরী রূপে প্রকট হয়েছিলেন । দেবীর মধ্যে মাতৃরূপা অভয়া মূর্তির আভাস পাওয়া যায়- আবার তাঁর মধ্যে অসুরনাশিনী উগ্রচণ্ডা রূপের আভাস পাওয়া যায়। শক্তি, বিজয়, ইন্দ্রিয় বিজয় চতুর্বিধ ফল প্রাপ্তির জন্য শক্তির আরাধনা করা হয় । তাই শক্তির হস্তে থাকে নানান ঘাতক আয়ুধ । থিমের নামে উদ্ভট মূর্তির আমদানী করলে বোধ হয় না সাধকের কোনো অভিলাস পূর্ণ হবে। কারন সেই সময় থিম মূর্তি চোখের সামনে ভাসবে । না হবে মহাশক্তির আহ্বান, না হবে পূজা ।

দেবীর সেই অসুর ধ্বংসিণী রূপটি কিরূপ ?

দেবী অসুর দলন কালে তাঁর ত্রিনয়ন থাকে অতিশয় উগ্রা ও ক্রোধে পূর্ণ, মুখে থাকে বিজয়িনীর ন্যায় অট্টহাসি । দেবীভাগবত, কালিকাপুরান, মার্কণ্ড পুরান , শিবপুরান, মহাভাগবত পুরানে দেবীর অসুর ধ্বংসের কথা আছে । রনভূমিতে দেবী চণ্ডিকার মধ্যে অভয়া মাতৃ রূপ টিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন তিনি শত্রুনিধনে লিপ্তা করালী রূপ ধারিনী , প্রচণ্ডবেগে অসুরদের বিনাশ করেন । দেবীর এই ভয়ঙ্কর রূপে প্রকম্পিত হয় গোটা ত্রিলোক । কিভাবে অসুর নিধন করেন ? পুরাণে এই সকল বিবরণ আছে । তিনি খড়গ, চক্র দ্বারা অসুরদের খন্ডিত করেন । কারো কারো দেহ আবার সমান ভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়, কারোর হস্তপদ খণ্ডিত হয়। দেবীর বাণে অসুরদের নিক্ষেপিত অস্ত্র সকল ধ্বংস হয়। সেই বাণে অসুর সেনাদের রথ, হস্তী, অশ্ব এমনকি রথী মহারথীরাও টিকতে পারেন না। কারোর দেহ আবার শত টুকরো হয় । দেবীর গদার প্রহারে অসুরেরা রক্তবমি করতে করতে মারা পড়ে। বজ্রে, কমণ্ডলু বারি সেচনে ভস্ম হয় অসুরেরা। শূলের আঘাতে ভয়ানক ভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে দানবদের ভবলীলা সাঙ্গ হয় । দেবীর বাহনও প্রতাপশালী । নখ দন্ত দিয়ে অসুরদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে মাংস চর্বি রক্ত ভক্ষণ করতে থাকেন । দেবী যখন রনভূমিতে নামেন তখন মৃতদেহের স্তূপাকৃতি পর্বত সৃষ্টি হয়। মেদিনী রক্ত মাংস চর্বিতে ঢাকা পরে রক্ত নদী প্রবাহিত হয় । উপরন্তু দেবী কাত্যায়নী যখন চামুণ্ডা বা কালী মূর্তি ধারন করেন তখন এই বিনাশ প্রলয় স্বরূপ হয় । চামুণ্ডাদেবীর যুদ্ধের কথা মার্কণ্ড পুরাণে আছে । তিনি পদদলিত করে, কাউকে জীবিত ভক্ষণ করেন, কাউকে খড়্গে বধ করেন । দেবী যুদ্ধক্ষেত্রে যে সকল স্থানে বিচরণ করেন সেখানে অসুরদের কেউ জীবিত থাকে না । বিশালাকৃতি হয়ে হস্তে অসুরসেনাদের ধরে উজ্জ্বল দন্ত দ্বারা চর্বণ করে ভক্ষণ করেন। তখন তাঁর দন্তগুলি রক্তে রাঙা হয়ে ওঠে । অসুরদলে ভীষন হাহাকার সৃষ্টি হয় । দেবীর সমগ্র দেহ রুধির ধারায় লিপ্ত হয়ে ওঠে, তাঁর হস্তের ঘাতক আয়ুধ গুলি স্বীয় রঙ হারিয়ে রক্তে রাঙা হয়ে ওঠে ।

মাতৃরূপা মহাশক্তি সৃষ্টির কল্যাণে এরূপ বিকটা রূপ পরিগ্রহ করেন । এমন অসুর দলনী মূর্তিরূপা চণ্ডি দেবীকে যদি হাস্যকর উদ্ভট মূর্তি বানিয়ে থিম পূজো করা হয় – তবে আদৌ কি সেই অসুরদলনীর পূজা সফল হয় ? দেবীর মূর্তি উদ্ভট হলে সেই মূর্তি চক্ষে ভাসলে না হবে মহাশক্তির পূজা, না পাবো ভক্তি- শক্তি- মুক্তি। না হবে অন্তরের রিপুরূপী অসুরদের দলন । নাতো কুণ্ডলিনী শক্তিরূপে মহামায়া জেগে উঠবেন । সুতরাং যারা প্রকৃত মহামায়ার উপাসক তারা থিমের উদ্ভট মূর্তি পূজা কোনোদিনই করবেন না । তারা সেই অভয়া অসুরদলনী রূপকেই পূজো করবেন ।
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।