০৮ ডিসেম্বর ২০১৫

কোন মানুষ বেদকে অস্বীকার করতে পারে কিন্তু বৈদিক কর্মের বাইরে কেউই নয়

পৃথিবীর অসংখ্য ধর্মের মধ্যে হিন্দু একটি প্রাচীনতম ধর্ম। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল আর্য ধর্ম। কারণ ইরান থেকে আগত সেমেটিক শাখার আর্য গোত্ররা এ ধর্মের বাহক ছিল।এরা আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় পাঁচ হাজার অব্দে উপমহাদেশে আগমন করে আদি অধিবাসী তথাকথিক অনার্যদেরকে বিতাড়িত করে সপ্তসিন্ধু বিধৌত পঞ্জাব ও সিন্ধু অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। এ জন্য কালক্রমে তাদেরই উচ্চারণে 'সিন্ধু' শব্দের অপভ্রংশ 'হিন্দু' জতি নামে ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে ও প্রাচীন 'আর্য ধর্ম' তখন থেকেই হিন্দু ধর্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। হিন্দু ধর্ম মূলত আর্যদের বৈদিক ধর্ম। এ ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থের নাম 'বেদ'। এই বৈদিক ধর্ম সূচনাতে একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম ছিল। তৎপরবরতী পৌরাণিক যুগে হিন্দু ধর্ম অবতারবাদের প্রবক্তা হয়ে ওঠে।
পরবর্তী কালে বেদের অনুশীলন করতে গিয়ে ঋষি ব্যাসদেবাে স্থান-কাল উপযোগী সংযোজন-সংবর্ধন করে ৪টি খণ্ডে বিভক্ত করেন।
হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে বেদের স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃত ‘বিদ’ ধাতু থেকে বেদ শব্দটি নিস্পন্ন। বিদ+ঘঙ = বেদ। বেদ অর্থ জানা (To Know)। যারা এই বেদ লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের ঋষি বলা হয়। মহাপ্রাজ্ঞ ঋষিরা হলেন বেদের মূল আবিষ্কারক, ঋষিগণ আবিষ্কার করেছেন মানুষের অন্তর্নিহিত আধাত্মিকতা এবং গুহাবাসী মানুষের অজ্ঞানতাকে দুর করবার পদ্ধতি যা তাকে অমরত্বের পথে নিয়ে যাবে। এই গ্রন্থে মানুষের জীবনধ ধারার সাথে সাথে প্রকৃতির পূজার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বেদের সংখ্যা চারটি। যথা - ১. ঋকবেদ, ২. সামবেদ, ৩. যজুবেদ ও ৪. অথর্ববেদ।
পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ হ'ল 'বেদ', বাকী যেকোনও বা যে সমস্ত ধর্মগ্রন্থ রয়েছে তার প্রত্যেকটিরই স্ব স্ব শিক্ষা রয়েছে কিন্তু তা সবই বেদ-এর অনুসারী।হিন্দু ধর্মের বেদগ্রন্থের শিক্ষা একমাত্র কর্ম। যেহেতু কর্মই মানুষের একমাত্র 'ধর্ম' এবং ধর্মের মাধ্যমেই মানুষ তার নিজের কর্তব্য অনুধাবন করতে পারে। এ জন্য হিন্দু ধর্মে বলা হয়, মানুষ কর্মের মাধ্যমেই ঈশ্বর, স্বর্গ ও যাবতীয় কল্যাণ পেতে পারে এবং মুক্তির পথ অনুসন্ধান করতে পারে।
মূল বেদ ছাড়াও চারটি উপবেদ আছে। আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গন্ধর্বেদ এবং স্থাপত্যর্বেদ। আয়ুর্বেদ হল ভেষজ শাস্ত্র, ধনুর্বেদ হল অস্ত্রবিদ্যা, গন্ধর্বেদ হল সঙ্গীত বিদ্যা আর স্থাপত্যর্বেদ হল কৃষিবিদ্যা। মানবকল্যাণের কথা চিন্তা করে এই বেদ ঋষিগণ রচনা করে থাকেন। উপবেদের শিক্ষা: উপবেদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে চিকিৎসা, সঙ্গীত, স্থাপত্য ও অস্ত্রবিদ্যার শিক্ষা দিয়ে থাকে।
বেদের মূল ভাবকে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য বেদের সাহায্যকারী ছয়খানা অবয়বগ্রন্থ অধ্যয়ন করা আবশ্যক। আর এই অবয়বগুলোকে বলা হয় বেদান্ত। এগুলো হল - ১. শিক্ষা, ২. কল্প, ৩. ব্যাকরণ, ৪. নিরুক্ত, ৫. ছন্দ এবং ৬. জ্যোতিষ। বেদান্তের শিক্ষা: বেদান্ত যদিও বেদের ছয়খানা অবয়ব গ্রন্থ আর শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ এর মূল বিষয় তথাপি এর নিজস্ব একটা শিক্ষা রয়েছে। আর সেটা হল মানুষকে কর্মের চেয়ে শিক্ষার প্রতি অনুগামী করে তোলে।যাতে করে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে স্রষ্টাকে বেশি উপলব্ধি করতে পারে।
.
বেদ কোনও একক মানুষের মতবাদ নয়।
বেদের আগে আর কোনও সভ্যতার উদাহরণ পাওয়া যায় না।
হিন্দু ধর্মই একমাত্র ধর্ম যা অন্ধকার যুগে মানুষকে আলোকবর্ত্তিকার সন্ধান দিয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের যেকোনও ধর্মীয় মতবাদ, যা কোনও বিশেষ মানুষের সৃষ্টি, তার সব কিছুই বেদ-নির্ভর।
কোনও মানুষ বেদকে অস্বীকার করতে পারে কিন্তু বৈদিক কর্মের বাইরে কেউই নয়।
.
 লেখকঃ প্রীথিষ ঘোষ
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।