• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

ভক্তিযোগই হচ্ছে ভগবানকে লাভ করার -সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা

শ্রীমৎ ভগবদ্গীতায় চারটি যোগের কথা বলা হয়েছে ----
১.কর্মযোগ
২. জ্ঞানযোগ
৩. ধ্যানযোগ
৪. ভক্তিযোগ।
-
কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ এবং ধ্যানযোগের মাধ্যমে ভগবানকে আংশিক ভাবে জানা যায়। কিন্ত ভগবদ্গীতায় ভগবান বলেছেন -- “ভক্ত্যা মামভিজানাতি” অথাৎ ভক্তির দ্বারাই ভগবানকে পূর্ণরূপে জানা যায়। তাই ভক্তিযোগই হচ্ছে ভগবানকে লাভ করার -সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।
-
নীচে ভক্তির নয়টি পন্থা অনুশীলন করে ভগবানকে লাভ করেছেন তাঁদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হল --
১. শ্রবণ --- মহারাজ পরীক্ষিত কেবল শ্রবণের মাধ্যমে ভগবদ্ধাম লাভ করেন। তিনি শ্রীল শুকদেবের নিকট থেকে কেবলমাত্র ৭ (সাত) দিন শ্রীকৃষ্ণ মহিমা শ্রবণ করেছিলেন।
২. কীর্তন --- শ্রীল শুকদেব গোস্বামী কীর্তনের মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করেন। তাঁর পিতা মহান ঋষি ব্যাসদেবের নিকট থেকে লব্দ অপ্রাকৃত সংবাদ- ভগবৎ গুন অবিকৃতভাবে কীর্তনের মাধ্যমে।
৩. স্মরণ --- মহারাজ প্রহ্লাদ ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত দেবর্ষি নারদ মুনির উপদেশ অনুসারে সর্বদা ভগবানকে স্মরণের মাধ্যমে পরম গতি প্রাপ্ত হন।
৪. বন্দনা --- কেবল স্তবের দ্বারা ভগবানের বন্দনা করার মাধ্যমে অক্রুর পরমপদ প্রাপ্ত হন।
৫. অর্চন --- (পূজা)- মহারাজ পৃথু কেবল ভগবানের পূজা করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সিদ্ধি প্রাপ্ত হন।
৬. পাদসেবন (সেবা) --- সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, লক্ষীদেবী কেবল একস্থানে উপবেশন করে শ্রী নারায়ণের পাদসেবা করে সাফল্য লাভ করেন।
৭. দাস্য (আজ্ঞা পালন) --- শ্রীরামচন্দ্রের সেবক মহাভক্ত হনুমান কেবল ভগবানের আজ্ঞা পালনের মাধ্যমে পরম গতি লাভ করেন।
৮. সখ্য ( ভগবানের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন) --- মহাবীর অর্জুন ভগবানের সঙ্গে সখ্যতা করার মাধ্যমে পূর্ণ সিদ্ধি অর্জন করেন। অত্যন্ত প্রীত হয়ে ভগবান অর্জুন ও অর্জুনের ভবিষ্যৎ অনুগামী মানুষদের জন্য ভগবদ্গীতার অমৃতময় জ্ঞান উপদেশ করেন।
৯. আত্মনিবেদন --- মহারাজ বলি তাঁর যথা সর্বস্ব এমনকি নিজ দেহটিকে ও ভগবানকে নিবেদনের মাধ্যমে পূর্ণ সাফল্য প্রাপ্ত হন।
অম্বরীষ মহারাজ উপরোক্ত নয়টি ভক্তির পন্থাই অনুশীলন করতেন এবং এভাবেই তিনিও পরমপদ প্রাপ্ত হন।মূলতঃ সকলের হৃদয়ে ভগবানের প্রতি ভক্তি গুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জড় জাগতিক সঙ্গের প্রভাবে তা জড় কলুষের দ্বারা আবৃত হয়ে রয়েছে। এই জড় কলুষ থেকে আমাদের হৃদয়কে নির্মল করতে হবে। তাহলে সুপ্ত কৃষ্ণ ভক্তি জাগ্রত হবে। সেটিই হচ্ছে ভক্তিযোগের পূর্ণ পন্থা। ভক্তিযোগ অনুশীলন করতে হলে সদ্গুরুর তত্তাবধানে কতগুলো বিধিনিষেধ পালন করতে হবে। যেমন - সূর্য উদয়ের পূর্বে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে আরতি করা, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তন করা। ফুল তুলে ভগবানের শ্রীচরণে নিবেদন করা, ভোগ রান্না করে তা ভগবানকে নিবেদন করা, ভক্ত সঙ্গ করা, নিরন্তর শুদ্ধ ভক্তের কাছ থেকে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবন করা, এই ভক্তিযোগ অনুশীলন করলে আমাদের হৃদয়ের কলুষতা দূরীভূত হয়। আমরা কৃষ্ণ ভক্তির স্তরে উন্নীত হতে পারি। তাই সদ্গুরুর তত্ত্বাবধানে বিধিবদ্ধ ভাবে ভক্তিযোগ অবলম্বন করলে অবশ্যই কৃষ্ণ ভক্তি লাভ করা যায়।

Written by : Prithwish Ghosh
Share:

২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

রামায়ন কথা - আদিকাণ্ড- ৫

ইক্ষাকু ক্ষত্রিয় কূলে ভগবান শ্রীরাম আবির্ভূত হয়েছিলেন । ইক্ষাকু কূলের মহান দাতা রাজা হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান রামায়নে আছে । ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র মুনির ফুলে ফলে শোভিত বাগানে প্রত্যহ স্বর্গ থেকে দেবকন্যারা এসে ফুল, ফল নিয়ে যেতো। বিশ্বামিত্র মুনি, তাঁর শিষ্যদের চৌকিদারীতে রেখেও সুফল পেলেন না, দেবতাদের মায়ায় শিষ্যরা নিদ্রামগ্ন হতেই দেবকন্যারা ফুল, ফল নিয়ে গেলো। একদিন মুনি বিশ্বামিত্র তপঃ তেজে নিজে এক মায়া রচলেন। যেই মায়াতে দেবকন্যারা ফুল নিতে আসলে লতাপাতার বেস্টনীতে জড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো। রাজা হরিশ্চন্দ্র সেখান দিয়ে যাবার সময়, সেই দেবকন্যাদের মুক্ত করলেন। বিশ্বামিত্র মুনি যোগবলে সব জেনে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজা হরিশ্চন্দ্রকে বললেন- “হে সম্রাট। তুমি কেন সেই দেবকন্যাদের মুক্তি করেছো?” রাজা বললেন- “হে মহর্ষি সেই দেবকন্যারা আমার নিকট মুক্তি ভিক্ষা চেয়েছিলো। আমি দাতাকে তাঁর ইস্পিত সম্পদ দান করি। ইহা আমার জীবনের প্রতিজ্ঞা।” বিশ্বামিত্র শুনে বললেন- “তাই যদি হয়, তবে তুমি তোমার রাজ্য সম্পদ এখুনি আমাকে দান করে এক বস্ত্রে বিদায় হও। আমি তোমার কাছে তোমার রাজ্য দান চাইছি। ” রাজা হরিশ্চন্দ্র তাই দান করে এক বস্ত্রে বেরিয়ে গেলেন। সাথে থাকলো মহারানী শৈব্যা, পুত্র রোহিতাশ্ব ।
রাজা সসাগড়া রাজ্য মুনিকে দান করেছেন, তাই পৃথিবীতে আর কোথাও যাওয়া যাবে না। কিন্তু কাশীধাম কোনো রাজার রাজত্বে নয়। কাশীধাম ভগবান শিবের ত্রিশূলে অবস্থিত। এই স্থানের রাজা ভগবান শিব । রাজা হরিশ্চন্দ্র স্ত্রী, পুত্র নিয়ে কাশীধামে আসতেই বিশ্বামিত্র পুনঃ এসে বলল- “রাজা দান তো দিলে, কিন্তু দক্ষিণা কই ?” রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন নিজ স্ত্রী শৈব্যা আর পুত্র রোহিতাশ্ব কে কাজের ঝি হিসাবে বিক্রি করে দিলেন। নিজেও চণ্ডালের কাছে বিক্রিত হয়ে মহর্ষি বিশ্বামিত্র কে দান দিলেন। তবুও মুখের প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গলেন না । মহারানী শৈব্যা আর রাজপুত্র রোহিতাশ্ব ঝিগিরি করে বহু কষ্টে দিন যাপন করতে লাগলো । অপরদিকে হরিশ্চন্দ্র কাশীর শ্মশানে ডোম হয়ে জীবন কাটাতে লাগলেন । একদিনের কথা, রোহিতাশ্বকে সর্পে দংশন করলো। ছটফট করতে করতে মায়ের কোলেই মারা গেলো। রানী শৈব্যা কাশীর শ্মশানে পুত্রকে দাহ করতে গেলেন । অন্ধকার রাত্রিতে সেখানে ডোম রূপে হরিশ্চন্দ্রের দেখা পেলেও একে অপরকে চিনলো না। শৈব্যা তখন ডোম হরিশ্চন্দ্রকে দাহ করতে বললে, হরিশ্চন্দ্র বলল- “মূল্য ছাড়া দাহ হবে না। এ আমাদের সর্দারের আদেশ। যাও মূল্য নিয়ে এসো। ” শৈব্যা কাঁদতে কাঁদতে জানালো- মূল্য নেই। সে নিজেই পড়ের বাড়ীর ঝি। অবশেষে শৈব্যা নিজের মলিন ছিন্ন বস্ত্র থেকে সামান্য বস্ত্র ছিড়ে হরিশ্চন্দ্র কে দিয়ে বলল- “এই নিন। আমার কাছে আর কিছুই নেই।”
রাজা হরিশ্চন্দ্র চিতা সাজিয়ে মৃত রোহিতাশ্বকে রেখে মশাল আনতে গেলো। মশাল নিয়ে এসে চিতায় শায়িত নিজ পুত্রকে দেখে ক্রন্দন করতে লাগলেন। শৈব্যা আর হরিশ্চন্দ্রের মিলন হোলো। মৃত পুত্রকে জড়িয়ে হরিশ্চন্দ্র আর শৈব্যা খুব কাঁদলেন । তারপর হরিশ্চন্দ্র তিনটে চিতা সাজালেন, ঠিক করলেন পুত্রের চিতায় আগুন দিয়ে তারাও চিতেতে উঠে অগ্নিতে নিজেদের ভস্ম করবেন । ঠিক এই সময় শ্মশান আলো করে কাশীর রাজা ভগবান শিব ও কাশীর রাণী মাতা গৌরী আবির্ভূত হলেন। ভগবান শিব মহারাজ হরিশ্চন্দ্র আর রানী শৈব্যার প্রশংসা করে রোহিতাশ্বকে প্রাণদান করলেন । রোহিতাশ্ব তার পিতামাতাকে ফিরে পেলো। অপরদিকে মহর্ষি বিশ্বামিত্র মুনি সেখানে উপস্থিত হলেন। বললেন- “হে রাজন। আমি তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। তুমি সত্যি মহান দাতা। সত্যবাদীর সাক্ষাৎ রূপ। যাও তোমাকে তোমার রাজ্য ফিরিয়ে দিলাম। আজ থেকে তুমি সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র রূপে খ্যাত হবে।” রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন রানী শৈব্যা ও রোহিতাশ্বকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরলেন। রাজা আবার রাজাসনে বসলেন। মহারানী শৈব্যা পুত্র রোহিতাশ্বকে ক্রোড়ে নিয়ে রাজার বামে বসলেন। ত্রিলোকে রাজার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো ।
রামায়ন কথা অপূর্ব সঙ্গীত ।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কৃত্তিবাস পণ্ডিত ।।
মহারাজ হরিশ্চন্দ্রের অপূর্ব আখ্যান ।
ত্রিলোকে গাহে রাজার কীর্তি ব্যাখান ।।
( ক্রমশঃ )
Share:

রামায়ন কথা - আদিকাণ্ড পর্ব- ৪

ভগবান ভক্তের প্রদত্ত যেমন পূজা, নৈবদ্য সানন্দে গ্রহণ করেন, তেমনি ভক্ত রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দিলে ভগবান সানন্দে তা মাথা পেতে গ্রহণ করেন । ভগবান শ্রী হরির পরম ভক্ত নারদ মুনির কথা শোনা যাক । একবার নারদ মুনি হিমালয়ে কঠিন যোগসাধনায় নিমগ্ন হয়েছিলেন । অবিরত তুষারপাতেও তাঁর সেই সাধনা ভঙ্গ হয়নি। দেবতারা এসে তাকে আহ্বান করলেও তিনি যোগসাধনা ভঙ্গ করেননি । ইন্দ্রদেবতা তখন মদন দেব ও রতি দেবীর শরণাপন্ন হলেন। মদন দেবতা হিমালয়ে সেই তুষারাছন্ন পরিবেশে বসন্ত সৃষ্টি করে নারদ মুনিকে কামবাণ নিক্ষেপ করে বিদ্ধ করলেন। কিন্তু মদনের বাণ উপেক্ষা করেই নারদের যোগ সাধনা চলতে লাগলো। অবশেষে একদিন নারদের যোগা সমাপ্ত হোলো। নারদ মুনি নিজেকে শিবতুল্য জ্ঞান করলেন, যেহেতু কাম বাণে দেবাদিদেবের মনে কাম জাগেনি, সেইরূপ নারদের ওপর কামবাণ ব্যর্থ হয়েছে- সেইহেতু নারদ মুনি নিজেকে শিবতুল্য জাহির করলেন। নারদের এরূপ অহংকার দেখে প্রজাপতি ব্রহ্মা চিন্তায় পড়ে বৈকুণ্ঠে গেলেন। ভগবান নারায়ণকে অনুরোধ জানালেন নারদের দর্প চূর্ণ করতে । ভগবান নারায়ণ একটি অদ্ভুত লীলা করলেন। যোগমায়া শক্তি অবলম্বন করে একটি মায়াপুরী নির্মাণ করলেন । তথায় সমুদ্র রাজা রত্নাকর কে রাজা বানিয়ে বসালেন। লক্ষ্মী দেবীর অংশ রূপিনী এক সুন্দরী সুশীলা কন্যা সেই রাজ্যের রাজকণ্যা হয়ে নিবাস করতে লাগলেন। বিষ্ণু মায়াতে সেখানে প্রজাদি ঘর গৃহ নির্মিত হল ।
একদা নারদ মুনি ভ্রমণ করতে করতে সেই রাজ্যে উপস্থিত হলেন । তথায় তিনি রাজকণ্যাকে দেখে মোহিত হয়ে ভাবেন এই রাজকন্যাকেই বিবাহ করবেন । রাজকন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন- “হে কন্যে তুমি কেমন পতি আশা কর?” কন্যা বললেন- “আমি হরি সদৃশ পুরুষ কেই পতি রূপে গ্রহণ করবো।” নারদ মুনি ছদ্দবেশী রত্নাকর কে জানালেন শীঘ্র মেয়ের স্বয়ম্বর আয়োজন করতে । এই বলে নারদ মুনি বৈকুণ্ঠে গিয়ে নারায়ণকে বললেন- “প্রভু আমাকে হরি মুখ করে দিন।” হরি শব্দের এক অর্থ বানর , যেহেতু বানর সুযোগ পেলেই হরণ করে। শ্রী নারায়ণ নারদ মুনিকে বানর মুখী করে দিলেন । নারদ মুনি আয়না তে নিজ মুখ না দেখেই স্বয়ম্বরের দিন সেই রাজ্যে গেলেন। তাকে দেখে সকলে হেসে লুটোপুটি খেতে লাগলো । নারদ মুনি ধারনা করলেন তাঁর সুন্দর মুখ দেখে হয়তো সকলে হিংসা বশত হাস্য করছে । কন্যা বরমাল্য নিয়ে ঘুরতে লাগলো। মর্কটের মতো লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নারদ মুনি তার আগে পিছে ঘুরতে লাগলো। কিন্তু কন্যা কিছুতেই তাকে বরমালা দিলেন না । হঠাত সভা মাঝে শ্রী নারায়ণ আবির্ভূত হলেন। কন্যা শ্রী নারায়নের কণ্ঠে মাল্য দিলেন। এই দেখে নারদ মুনি রেগে নদীর ধারে চলে গেলো। জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বৈকুণ্ঠে গিয়ে বলল- “প্রভু আপনি আমাকে ছলনা করলেন?” নারায়ণ বললেন- “দেবর্ষি তুমি হরি মুখ চেয়েছিলে, হরি শব্দের এক অর্থ বাঁদর, তুমি তো বল নি যে আমার মতোন মুখাবয়ব প্রদান করতে।” নারদ মুনি বললেন- “হে প্রভু। আপনি আমাকে যে ছলনা করলেন তার শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। আমি আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি যেমন আমি সেই রাজকণ্যাকে হারালাম , আপনিও আগামী অবতারে বারংবার স্ত্রী বিচ্ছেদের কষ্ট পাবেন।”
নারদের অভিশাপ বাক্য মাথা পেতে নিলেন নারায়ণ । তখন ব্রহ্মা প্রকট হয়ে বললেন- “পুত্র তোমার গর্ব চূর্ণ করবার জন্যই এই লীলা রচনা হয়েছে । সেই কণ্যা স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী। আর সেই রাজা লক্ষ্মী দেবীর পিতা রত্নাকর। তুমি ব্রহ্মচারী, তোমার মনে এইহেন চিন্তা কিভাবে আসে ? কিভাবে তুমি নিজেকে শিবতুল্য মনে কর ?” নারদ মুনির দর্প চূর্ণ হল। তিনি বুঝলেন তিনি মহাপাপ করেছেন। বারংবার নারায়নের চরণে ক্ষমা প্রার্থনা চাইলেন । শ্রীনারায়ন জানালেন , “ভক্তের অভিশাপ অসত্য হবে না। তোমার অভিশাপে বারংবার আমার আর লক্ষ্মী দেবীর বিচ্ছেদ ঘটবেই।” অপরদিকে রাবনের দিগ্বিজয় বেড়ে চলল। যক্ষ, নাগ, গন্ধর্ব, কিন্নর, অসুর, দেবতা, মানব ইত্যাদিরা রাবণের বশ্যতা স্বীকার করলো । কিন্তু সে যখন পাতালপুরী অসুর রাজ বলির রাজ্য আক্রমণ করলো- তখন তার আর রক্ষা থাকলো না। বলির সাথে যুদ্ধে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হোলো। বলি রাবণকে বন্দী বানিয়ে কারাগারে আটকে রাখলো। শেষে মহর্ষি পুলস্ত্য এসে বলিকে অনুরোধ জানিয়ে রাবণ কে মুক্তি করলো ।
( ক্রমশঃ )
Share:

২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

রামায়ন কথা - আদিকাণ্ড ( পর্ব – ৩ )

এবার রামায়ন কাব্যের প্রধান অশুভ চরিত্রের বর্ণনা করা যাক । ভগবান বিষ্ণুর কাছে পরাজিত হয়ে রাক্ষসেরা পাতালে পালিয়েছিলো। এই মুহূর্তে লঙ্কা ছিলো খালি । ব্রহ্মার বংশজ পুলস্ত্য ঋষির বংশধর মহর্ষি বিশ্বশ্রবা মুনির বিবাহ হয়েছিলো ভরদ্বাজ কন্যা লতার সাথে। তাঁহাদের পুত্র কুবের যক্ষ দের নিয়ে লঙ্কাতে বাস করতে থাকলেন । পাতালে থাকা মাল্যবান ও সুমালী মনের মধ্যে লঙ্কা ফিরে পাবার আশাকে জিইয়ে রাখলো ।
গণনা করে দেখলো মহর্ষি বিশ্বশ্রবার সাথে মাল্যবানের কন্যা কেকসীর বিবাহ হলে তাঁদের এক বলশালী পুত্র হবে। সে রাক্ষসদের হৃত গৌরব মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে। প্রাচীন ভারতে আর্য অনার্য বিবাহ হোতো । পরম রূপসী রাক্ষসী কেকসী , বিশ্বশ্রবাকে মায়াতে ফেলে তাকে বিবাহ করে। মুনি বিশ্বশ্রবা সন্ধ্যাকালে স্ত্রীসঙ্গ করে । এমন বলা হয় সন্ধ্যায় স্ত্রীসঙ্গ করলে ভূমিষ্ঠ সন্তান রাক্ষস হয় । সেজন্য হিন্দু ধর্মে সন্ধ্যাকালে কেশ বিন্যাস, তৈল মর্দন, মৈথুন, আহার, নিদ্রা, মলিন বস্ত্র পরিধান করতে মানা আছে । এই সময় সন্ধ্যা আরতি , বীজ মন্ত্র জপ, তুলসী বৃক্ষে প্রদীপ নিবেদনের প্রথা আছে । কেকসীর যখন প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হোলো তখন আকাশে বিনা মেঘে বজ্রপাত, রক্ত বৃষ্টি, চিল শকুনের রব, শেয়াল গর্দভ এর কান্না, নানা রকম অশুভ চিহ্ন ইত্যাদি হোলো । জন্মে সেই শিশু এমন রব করলো যে চতুর্দিক কম্পিত হতে লাগলো। দারুন রব করবার জন্য তার নাম হোলো রাবণ ।

এরপর কেকসি এর একটি শক্তিশালী পুত্রের জন্ম দেন, তার নাম কুম্ভকর্ণ । তার পড়ে শুভ লগ্নে যখন নানা শুভ চিহ্ন দেখা গেলো তখন কেকসির গর্ভ হতে একটি শিশু প্রসব হোলো, তাঁর নাম বিভীষণ । এরপর পুনঃ অশুভ লগ্নে কেকসি একটি কন্যার জন্ম দেন, তাঁর নাম শূর্পনাখা । রাবণ প্রথম জীবনে পিতার নিকট বেদাদি শাস্ত্র পাঠ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, সঙ্গীত শাস্ত্র ইত্যাদি রপ্ত করেছিলো, কিন্তু মাতৃকূল থেকে রাক্ষস সংস্কৃতি লাভ করলো । লঙ্কায় গিয়ে কুবেরকে তাড়িয়ে কুবের এর সব সম্পদ হস্তগত করলো। এমনকি পুস্পক বিমান অবধি। কুবের কৈলাসে আশ্রয় নিলেন যক্ষ দের সহিত । পুনঃ লঙ্কায় রাক্ষস দের আধিপত্য কায়েম হোলো । রাবণ, কুম্ভকর্ণ,বিভীষণ,শূর্পনাখা কঠিন তপস্যা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলো । ব্রহ্মার কাছে রাবণ অমর হবার বর চাইলে ব্রহ্মা দিলেন না। তিনি রাবনের পেটে অমৃত কুম্ভ স্থাপন করে বললেন- “হে রাবণ! যতকাল তোমার উদরে অমৃত কুম্ভ পূর্ণ থাকবে, তোমার মরণ হবে না। তুমি কেবল নর বানরের হাতে মরবে। আজ হতে তুমি আমার বরে নয় টি মস্তক প্রাপ্ত করবে মোট ১০ টি মস্তক হবে তোমার । তোমার নাম হবে দশগ্রীব, দশানন । ” কুম্ভকর্ণ বর চাইতে গেলে দেবতারা দেখলেন এই শক্তিশালী কুম্ভকর্ণ যদি আরোও শক্তি পায় তো ত্রিলোক ধ্বংস করবে। দেবতারা দেবী সরস্বতীর শরণাপন্ন হলেন । দেবী সরস্বতী অভয় দিয়ে কুম্ভকর্ণের জিহ্বায় অধিষ্ঠান করলেন ।

সরস্বতী প্রভাবে কুম্ভকর্ণ বর চাইলেন – “হে প্রজাপতি। তপস্যা করে আমি ক্লান্ত। আমাকে বর দিন যেনো আমি ছ মাস ঘুমাই আর একদিন মাত্র জাগি।” ব্রহ্মা বললেন- “তথাস্তু। কিন্তু অকালে তোমার নিদ্রাভঙ্গ করলে তোমার মৃত্যু নিশ্চিত।” বিভীষণ কিছুই চাইলো না। ব্রহ্মা বললেন- “বিভীষণ তুমি উদার, সাত্ত্বিক। তোমাকে ইচ্ছা মৃত্যুর বর দিলাম ।” শূর্পনাখাকে বর দিলেন- “মায়া বিদ্যায় পারঙ্গদা হবার।” ব্রহ্মার বর পেয়ে রাবণ ত্রিলোক বিজেতা রূপে যুদ্ধে জয়ী হোলো। শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতে রাক্ষস দের তীব্র উৎপীড়ন শুরু হোলো। ময় দানবের রাজ্য আক্রমণ করে রাবন ময় দানবের কন্যা মন্দাদোরী কে বিবাহ করলো । যদিও রাবন একাধিক বিয়ে করেছিলো । কুম্ভকর্ণের বিবাহ হয়েছিলো ত্রিশালা নামক এক রাক্ষসী কন্যার সাথে, বিভীষণ ধর্মমতী সরমা নামক এক গন্ধর্ব কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। শূর্পনাখার সাথে এক রাক্ষসের ভালোবাসা হয়েছিলো, তারা পালিয়ে বিবাহ করেছিলো। কারন সেই রাক্ষস রাবণের সমকক্ষ ছিলো না, ফলে উভয়ের প্রকাশ্যে বিবাহ হবার কোনো সুযোগ ছিলো না । এরপর রাবণ তাদের খুজে বোনের স্বামীকে হত্যা করে। শূর্পনাখা প্রতিশোধের বীজ বুকে নিয়ে বিধবা হয়ে লঙ্কায় থাকতে লাগলো ।

( ক্রমশঃ )
এই পেজের অনুমতী ব্যতিরেক কেউ নিজের নামে লেখাগুলি কপি করলে বা ব্লগে দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । কপি নয় বরং শেয়ার করে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবীদের শ্রীরামের পবিত্র লীলা জানান ।
◄Like our fb page ► ☑ www.facebook.com/shonatonsondesh
Share:

রামায়ন কথা - আদিকান্ড ( পর্ব – ২ )

মহর্ষি বাল্মিকীর কণ্ঠে দেবী সরস্বতী নিবাস করলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না কিভাবে রামায়ন রচনা করবেন । কারন কবিতা লেখতে ছন্দ, অলংকার এর প্রয়োজন হয়। যেগুলো না থাকলে কাব্যাকারে রচিত রামায়ন শ্রুতি মধুর হবে না । একদিনের কথা। মহর্ষি নদীতে আহ্নিক করতে গিয়েছেন । ফুলে ফলে শোভিত বন মাঝে কুলকুল রবে প্রবাহিত হচ্ছিল্ল নদী, আর মুনি সেই নদীর মধ্যে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় ধ্যান করছেন । নদী তটে একটি পুরুষ বক ও একটি নারী বক ঘুরছিলো। সেই জোড়া বক প্রেম বিনিময় করে মৈথুনে নিমগ্ন হয়েছিলো। সেসময় এক ব্যধ এসে বাণ মেরে যুগলের একটি বক কে বধ করে । অপর বকটি এই দেখে শোকে মাথা ঠুকে মারা যায় । মুনি এই দেখে ব্যাধকে শাপ দিয়ে বলেন-

“বিনা কারণে হিংসা কর তুমি পক্ষী জাতি।
এই পাপে নরকেতে হৈবে তোমার স্থিতি ।।”

মুনি বাল্মিকী শাপ দেবার পর ভাবতে লাগলেন, আরে এই তো ছন্দাকারে শাপ বাক্য তাঁর মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে । “জাতি” ‘তি’ আর “স্থিতি”র ‘তি’- পদের অন্তে অন্তে মিল আছে, এটাই তো ছন্দ । এরপর মুনি বাল্মিকী “রামায়ন” গ্রন্থ রচনা করতে বসলেন ।

অপরদিকে ত্রেতা যুগের শেষে রাক্ষস শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছিলো । “রাক্ষস” বলতে কেউ কেউ অনার্য বুঝিয়েছেন । মানে যারা ‘আর্য’ ভাব সংস্কৃতি নেয় নি । বা এদের তামসিক শক্তি বলা যেতে পারে। অখাদ্য, কুখাদ্য এমনকি নর মাংস আহার করতো, কৃত্তিবাসী রামায়নে এমনই লেখা । মালী, সুমালি, মাল্যবাণ নামক তিন রাক্ষস , প্রজাপতি ব্রহ্মার তপস্যা করে প্রজাপতি কে সন্তুষ্ট করে দক্ষিণের ভারত মহাসাগড়ের মধ্যে দ্বীপে বিশ্বকর্মা কে দিয়ে লঙ্কা নগরী স্থাপন করে রাজত্ব করতে লাগলেন । এই রাক্ষস দের আশা তবুও মিটলো না। দক্ষিণ ভারত থেকে ‘আর্য’ সংস্কৃতি বিনষ্ট করে মুনি ঋষি দের তাড়িয়ে দিলো, দক্ষিণ ভাগ হোলো রাক্ষস দের আক্রমণের জায়গা । সেসময় তেমন শক্তিশালী নৃপতি ছিলো না যে কিনা দক্ষিণ ভাগ রাক্ষস আতঙ্কমুক্ত করতে পারে । এই রাক্ষসদের সাহস এত বৃদ্ধি পেলো যে স্বর্গ রাজ্য আক্রমণ করার পরিকল্পনা নিলো। দেবতারা এই জেনে নারদ মুনিকে শান্তিদূত রূপে পাঠালেন। কারণ ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত রাক্ষস দের বিনাশের শক্তি ইন্দ্রের ছিলো না । নারদ মুনি এসে মালী, সুমালি, মাল্যবাণ কে জানালো- “আপনারা যদি স্বর্গ আক্রমণ করেন, তবে দেবতারা শ্রী হরির সহায়তা নেবেন।” রাক্ষসেরা জানালো- “শ্রী হরি যুদ্ধে আসুন। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি যেনো যুদ্ধে সুদর্শন প্রয়োগ না করেন। এটা যুদ্ধের শর্ত।”

দেবতাদের আক্রমণ করলো রাক্ষসেরা। যুদ্ধ চলতে লাগলো। রাক্ষসেরা মায়াবিদ্যার সাহায্য নিলে শ্রী হরি গরুড়ে আসীন হয়ে যুদ্ধে আসলেন । ভগবান নারায়ন বিপুল বেগে অস্ত্র চালনা করে রাক্ষসদের বধ করতে লাগলেন। এই দেখে দেবতারা আনন্দে জয়ধ্বনি দিলেন । রাক্ষস দের বারবার মায়াবিদ্যা করতে দেখে ভগবান নারায়ন সুদর্শন চালনা করলে রাক্ষসেরা বলতে লাগলো- “হে নারায়ন। আপনি যুদ্ধের শর্ত ভঙ্গ করছেন। এই যুদ্ধে শর্ত দিয়েছিলাম আপনি সুদর্শন ধারন করতে পারবেন না।” সকল রাক্ষসেরা নারায়ন কে চক্র ফিরিয়ে নিতে বললে রাক্ষস মালী বললেন- “হে জনার্দন, হে মাধব, আপনার নাম স্মরণেই মহা অপবিত্র মানবও পবিত্র হয়। হে লক্ষ্মীপতি যুদ্ধে আপনার হাতে নিহত হলে আমি অবশ্যই আপনার শাশ্বত ধাম প্রাপ্ত করবো, এই রাক্ষস জন্ম থেকে মুক্তি পাবো। হে দয়ানিধান দর্পহারী নারায়ন, আপনি সুদর্শন দ্বারা আমাকে মুক্তি প্রদান করুন ।” মালীর প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে নারায়ন বললেন- “তথাস্তু।” এরপর ভগবান নারায়ণের সুদর্শন চক্র তীব্র গর্জনে ঘুরতে ঘুরতে কোটি সূর্যের দীপ্তির ন্যায় হয়ে মালীর মুণ্ডচ্ছেদ করলো । বাকী রাক্ষসেরা সুমালী, মাল্যবানের সাথে পাতালে প্রবেশ করলো ।

জয় জয় নারায়ন নারায়ন হরি হরি
তেরি লীলা হে ন্যায়ারী ন্যায়ারী
জয় জয় নারায়ন নারায়ণ হরি হরি
স্বামী নারায়ণ নারায়ণ হরি
জয় নারায়ণ ,
হরি হরি
শ্রীমন নারায়ণ
হরি হরি

( চলবে )
এই পেজের অনুমতী ব্যতিরেক কেউ নিজের নামে লেখাগুলি কপি করলে বা ব্লগে দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । কপি নয় বরং শেয়ার করে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবীদের শ্রীরামের পবিত্র লীলা জানান ।
◄Like our fb page ► ☑ www.facebook.com/shonatonsondesh
Share:

রামায়ন কথা - আদিকাণ্ড ( পর্ব ১ )

নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্ ।
দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততোজয়মুদীরয়েৎ ।।

ভয়হর মঙ্গল দশরথ রাম ।
জয় জয় মঙ্গল সীতা রাম ।।
মঙ্গলকর জয় মঙ্গল রাম ।
সঙ্গতশুভবিভবোদয় রাম ।।
আনন্দামৃতবর্ষক রাম ।
আশ্রিতবৎসল জয় জয় রাম ।।
রঘুপতি রাঘব রাজা রাম ।
পতিতপাবন সীতা রাম ।।
( সন্ত তুলসীদাস গোস্বামী )

ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক পাহাড়ে ঘেরা সুন্দর বন ছিলো । সেই বনে রত্নাকর নামক এক ডাকাত বাস করতো । ব্রাহ্মণ সন্তান চবনের পুত্র হয়েও তিনি ডাকাতি করে পরিবার পালন করতেন । সেই বনে যে যেতো রত্নাকর তাকে হত্যা করে তার সর্বস্ব লুট করতেন । এমনই নিষ্ঠুর ছিলো সেই ডাকাত । সেই সময় ছিলো ত্রেতা যুগের শেষ পর্যায় । একদিন ব্রহ্মা ও নারদ মুনি দুই সন্ন্যাসীর ছদ্দবেশে সেই বনে এসেছিলেন । রত্নাকর তাদের দেখে হত্যা করতে উদ্যত হলে ছদ্দবেশী ব্রহ্মা বললেন- “ওহে রত্নাকর। তুমি এই রকম ভাবে তস্কর বৃত্তি করে কেন হত্যা করছ ? এতে তোমার বিপুল পাপ জমা হচ্ছে ।” রত্নাকর বললেন- “আমি এইভাবে আমার পরিবার পালন করি। যদি পাপ হয় তাহলে আমার পরিবারে সবার পাপ হবে।” ব্রহ্মা বললেন- “তাই যদি হয়, তবে এক কাজ করো। তুমি আমাদের রজ্জুতে আবদ্ধ করে তারপর পরিবারের কাছে শুনে এসো যে তাহারা তোমার পাপের ভাগ গ্রহণ করবেন কিনা?”

রত্নাকর ছদ্দেবশী নারদ ও ব্রহ্মা কে দড়ি দিয়ে বেধে পরিবারের কাছে শুনতে গেলো। বৃদ্ধ চবন বলল- “তুমি যখন ছোটো ছিলে আমি তোমাকে খাইয়েছি । পিতামাতা বয়স্ক হলে তাদের দেখার দায়িত্ব সন্তানের। আমি তোমার পাপের ভাগ কেন নেবো?” চবনের পত্নী তথা রত্নাকরের মা এক কথাই বলল। তখন রত্নাকর নিজ স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী বলল- “বিবাহের পর কন্যার সমস্ত দায়িত্ব স্বামীর হয়। আপনি অগ্নি সাক্ষী রেখে আমাকে বিবাহ করেছেন। আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন আপনার। আমি কেন আপনার পাপের ভাগ নেবো?” শুনে রত্নাকর কাঁদতে কাঁদতে এসে আবদ্ধ মুক্ত করে ছদ্দবেশী ব্রহ্মা ও নারদের চরণে পড়ে বলল- “হে ঠাকুর। আমি নরাধম । বহু ঘৃনিত পাপ করেছি। আমার পাপের ভাগ কেউ নেবে না।” ব্রহ্মা ও নারদ মুনি তখন স্বরূপে এসে বললেন- “হে রত্নাকর। পাপ করলে প্রায়শ্চিত্তের বিধান আছে। তোমাকে দিয়ে আগামী দিনে একটি মহৎ কাজ হবে। তুমি পবিত্র চিত্তে এখন তপস্যা করে প্রায়শ্চিত্ত করো। তুমি ‘রাম’ নাম জপ করো। আমি তোমাকে রাম মন্ত্রে দীক্ষা প্রদান করিব। ” রত্নাকর পুষ্করিণীতে স্নান করতে গেলে পুষ্করিণী শুকিয়ে গেলো। তখন ব্রহ্মা কমণ্ডলুর বারি সেচন করলেন রত্নাকরের মস্তকে । কিন্তু পাপী রত্নাকরের মুখে পবিত্র ‘রাম’ নাম আসলো না। ব্রহ্মা তাকে ‘রাম’ শব্দের উল্টো ‘মরা’ নাম জপ করতে বললেন।

রত্নাকর ‘মরা’ শব্দ করতে করতে ‘রাম’ নাম উচ্চারনে এনে বহু বছর তপস্যা করলো। তপস্যার সময় উই পোকার ঢিপি হয়ে গেলো তার উপরে । ব্রহ্মা দর্শন দিলেন। বললেন- “তুমি রাম কথা লেখবে। ভগবান শ্রী বিষ্ণু অযোধ্যায় নর অবতার নেবেন। তাঁর জীবনি লেখবে তুমি। তুমি আমার কৃপায় দিব্যদৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ দেখতে সমর্থ হবে। বল্মীকের ভেতর তপস্যা করেছিলে তাই তুমি জগতে মহর্ষি বাল্মিকী নামে খ্যাত হবে। তোমার জিহ্বাতে সরস্বতী দেবী অবস্থান করবেন ।” এই ভাবে মহাডাকাত রত্নাকর হলেন দিব্যজ্ঞানী মহর্ষি বাল্মিকী । অপরদিকে একদিন দেবর্ষি নারদ মুনি বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন শ্রী নারায়ন নিজেকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন । মূল স্বরূপে তিনি নব দূর্বাদল বর্ণ ধারন করেছেন। চতুর্ভুজা দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া কমলা দেবী দ্বিভুজা হয়ে নারায়নের বামে অবস্থান করছেন। নারদ মুনি এমন রূপের কারণ জানতে চাইলে শ্রীহরি জানালেন- তিনি এই রূপে মর্তে অবতার গ্রহণ করতে চলেছেন।”

( ক্রমশঃ )
◄Like our fb page ► ☑ www.facebook.com/shonatonsondesh
Share:

১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

একই শিবলিঙ্গ নিজে নিজেই তিনবার রঙ পাল্টায় দিনে!

আপনি কি শিবঠাকুরের খুব ভক্ত? নিজের যেকোনও ভালো কিছুর জন্য তাঁর উপরই ভরসা করে থাকেন? তাহলে নিশ্চয়ই এনেক শিবমন্দিরে গিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। কিন্তু কখনও কি দেখেছেন একই মন্দিরের একই শিবলিঙ্গ নিজে নিজেই সারাদিনে তিনবার তাঁর রঙ পাল্টায়?

অবাক হলেন? সে তো হওয়ারই কথা। কিন্তু এমন জিনিস আপনি অবশ্যই দেখতে পারবেন, যদি যান রাজস্থানে। সেখানকার মাউন্ট আবু মন্দিরে রয়েছে এমন অবাক করা শিবলিঙ্গ। যা সারাদিনে তিনবার তাঁর রঙ পাল্টায়।
এই মন্দিরের নাম অচলেশ্বর মহাদেবের মন্দির। যেটি রয়েছেই অচলেশ্বরে। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ সকালবেলায় থাকে লাল রঙের। বিকেলের দিকে এই শিবলিঙ্গের রঙ নিজে নিজেই হয়ে যায় গেরুয়া রঙের। আর যেই অন্ধকার নেমে আসে এই শিবলিঙ্গের রঙ হয়ে যায় সাদাটে! লোকে বলে এই মন্দিরের শিবঠাকুরের কাছে অবিবাহিতরা তাঁদের বিয়ের জন্য প্রার্থনা করতে আসেন। আর সেই প্রর্থনার পর শিবঠাকুর ঠিক তাঁর মনোকামনা পূরণ করেন।
Share:

০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

হিন্দু ধর্মশাস্ত্র


আমরা সবাই হিন্দু হয়েও মাঝেমধ্যেই শাস্ত্র নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পরি, একদল বলে শাস্ত্রে অমুক লেখা আছে, আরেকদল অন্য শাস্ত্রের মাধ্যমেই অমুক শাস্ত্রবচন খণ্ডন করে। এই ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর, কোনকোন শাস্ত্র মানবো আর কোনপ্রকার মানবোনা, এইনিয়ে বির্তক থেকেই যায়।
আসলে হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুধর্মের পথ চলা।এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে অসংখ্য ঋষিরা তাদের ধর্মপিপাষার থেকে ঈশ্বর সম্পর্কিয় যে উপলব্ধি গ্রন্থের আকারে লিপিবদ্ধ করে গেছেন সেগুলিই আমাদের ধর্মীয় শাস্ত্র।তাদের মধ্যে অনেকেই ঈশ্বর উপলব্ধির নূতন নূতন পথ দেখিয়ে গেছে।হিন্দুশাস্ত্রের গ্রন্থ অনেক ও বিচিত্র।বিভিন্ন স্তরের মানুষেকে বিভিন্নভাবে ধর্মের শিক্ষা দিতে হয় বলে হিন্দুদের শাস্ত্র গ্রন্থের সংখ্যা বেড়েগেছে।তবে সবার আগে মনে রাখতে হবে এই বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্রের মূল হলো বেদ।
হিন্দু শাস্ত্রগ্রন্থ গুলি নিয়ে সামান্য আলোচনা করা যাক।
‪#‎বেদ‬:- হিন্দুদের মূল ধর্মগ্রন্থ।ঋষিদের সাক্ষাৎ উপলব্ধির উপর প্রতিষ্ঠিত বলে বেদের অপর নাম শ্রুতি, সব হিন্দুশাস্ত্রের প্রমাণ নির্ভর করে এই শ্রুতির উপর। পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থের অপেক্ষায় বেদ প্রাচীন। সংস্কৃতে "বিদ্" ধতুর অর্থ জানা।এই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন বলে বেদ শব্দের মূল অর্থ জ্ঞান।
বেদ চারখানি ঋক্‌, সাম,যজুঃ ও অথর্ব বেদ।আবার প্রত্যেক বেদের দুটি ভাগ সংহিতা ও ব্রাহ্মণ।সংহিতা ভাগে আছে মন্ত্র বা স্তোত্র, এবং ব্রাহ্মণভাগে আছে তাদের অর্থ ও ব্যবহারের নির্দেশ।
বৈদিকযুগে প্রতিমাপূজা ছিল না।মন্ত্র দ্বারা অগ্নিতে আহুতি দেওয়াই ছিল সেযুগের ঈশ্বর আরাধনার রীতি।এই বৈদিক কর্মকে যজ্ঞ বলা হয়।বেদের ব্রহ্মণভাগে অনেক ধরনের যজ্ঞের কথা উল্লেখ আছে।সংহিতাভাগের মন্ত্রগুলি এই সমস্ত যজ্ঞের সময় পাঠ করা হয়।কোন যজ্ঞে কখন কিভাবে কোন মন্ত্র উচ্চারণ করা দরকার তা ব্রহ্মণ থেকে জানা যায়।
‪#‎উপনিষদঃ‬-
বেদের কিছু অংশের নাম উপনিষদ।বেদের শেষের দিকে আছে বলে অথবা বেদের সারাংশ বলে এর অপর নাম বেদান্ত।
বেদের যে অংশে যাজ্ঞযজ্ঞের কথা উল্লেখ আছে তাকে কর্মকাণ্ড বলে।উপনিষদ অংশের মুখ্য আলোচ্য বিষয় পারমার্থিক জ্ঞান(ব্রহ্মজ্ঞান)। তাই উপনিষদ গুলিকে জ্ঞানকাণ্ড বলা হয়।
ব্রহ্ম কোথায় এবং কিভাবে আছেন,মানুষ ও জগতের সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধ কি, তাঁকে জানবার উপায় কি এবং প্রয়োজন বা কি এসমস্ত কথা উপনিষদ থেকে জানা যায়।
উপনিষদ অনেক।প্রত্যেকটি বেদেই কতগুলি উপনিষদ আছে।এদের মধ্যে ১১টি উল্লেখযোগ্য--- ঈশ,কেন,কঠ,প্রশ্ন,মুণ্ডক,মাণ্ডূক্য,ঐতরেয়,তৈত্তিরীয়,ছান্দোগ্য,বৃহদারণ্যক ও শ্বেতাশ্বতর।
‪#‎স্মৃতিঃ‬-
হিন্দুরা কিভাবে জীবন যাপন করবে তার নির্দেশ মনু, যাজ্ঞবল্ক্যরা গ্রন্থ রচনা করে গেছেন,হিন্দুদের পারিবারিক জীবনে কি কি অনুষ্ঠান করা উচিৎ এইসব এই গ্রন্থে লেখা আছে।
বর্ণ অনুযায়ী হিন্দুদের কি কাজ করা উচিৎ, কি কাজ করা উচিৎ নয়, তার উল্লেখ আছে।স্মৃতিগুলি সম্পূর্ণ ভাবেই শ্রুতিমূলক।তবে সামাজিক পরিবর্তনের অনুযায়ী বিধিনিষেধ ব্যবস্থাগুলি পরিবর্তন হয়েছে এবং যুগের পরিবর্তনের সঙ্গেও নতুন নতুন স্মৃতি রচনা হয়েছে।যেমন একসময় বঙ্গদেশের হিন্দুসমাজ রঘুনন্দনের স্মৃতির দ্বারা প্রভাবিত ছিল।বর্তমানে আমাদের সমাজ স্মৃতির সমাজ থেকে বহুদূরে।
‪#‎দর্শনঃ‬-
বেদবাক্যের উপর নির্ভর করে ঈশ্বর তত্ত্ব নিয়ে ৬টি স্বতন্ত্র মতবাদের সৃষ্টি। একসঙ্গে এদের ষড়দর্শন বলে।জৈমিনি,ব্যাস,কপিল,পতজ্ঞলি,গৌতম ও ক্ণাদ, এদের রচিত দর্শন গুলি যথাক্রমে পূর্বমীমাংসা,উত্তরমীমাংসা,সাংখ্য,যোগ,ন্যায় ও বৈশেষিক।
পূর্বমীমাংসায় বেদের কর্মকাণ্ড এবং উত্তরমীমাংসায় জ্ঞানকাণ্ড নিয়ে আলোচনা আছে।ব্যাসদেবের রচিত দর্শনকে বেদান্তদর্শন বা ব্রহ্মসূত্র বলা হয়।
‪#‎পুরাণ‬
দর্শনগুলি খুব কঠিন। এইগুলি কেবল পণ্ডিতদের পাঠ্য আমাদের মত সাধারণের কাছে কঠিন। জনসাধারণের জন্য হিন্দুঋষিরা পুরাণ নামে এক শ্রেণীর শাস্ত্র রচনা করেন।সরল ও মনোরম ধর্ম শিক্ষা।নানারকম গল্প ও রূপের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রাচীন ইতিহাসের আভাস এর থেকে পাওয়া যায়।পুরাণ আঠারখানা তাছাড়া উপ-পুরাণও আছে।
‪#‎রামায়ণ‬ ও মহাভারতঃ-
পুরাণের মত হিন্দুদের সহজ জনপ্রিয় দুটি অতিপ্রয়োজনীয় শাস্ত্র রামায়ণ ও মহাভারত।বাল্মীকি ও ব্যাসদেব যথাক্রমে এই দুইখানি মহাকাব্যের রচয়িতা।এদের ইতিহাসের পর্যায়ে ফেলা হয়।
‪#‎গীতাঃ‬-
মহাভারতের একটি অংশের নাম গীতা।যুদ্ধের প্রক্কালে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন কে যে তত্ত্ব উপদেশ প্রদান করেন সেই অংশটি শ্রীমদ্ভগবদগীতা নামে প্রসিদ্ধ। উপনিষদ যেমন বেদের সার, গীতাকেও তেমন উপনিষদের সার বলা যায়।হিন্দু শাস্ত্রগুলির মধ্যে গীতাই সর্বপেক্ষা জনপ্রিয়।
প্রস্থানত্রয়ঃ-
উপনিষদ,বেদান্তদর্শন ও গীতাকে একসঙ্গে প্রস্থানত্রয় বলে।প্রস্থানত্রয় হিন্দুদের প্রধান শাস্ত্র বলে গণ্য।প্রস্থানত্রয়কে কেন্দ্র করে হিন্দুধর্মের প্রধান সম্প্রদায় গুলির মতবাদ গড়ে উঠেছে।সম্প্রদায়ের প্রবর্তক আচার্যরা এর উপর নানান ব্যাখা দিয়েছেন - দ্বৈত,অদ্বৈত,বিশিষ্টাদ্বৈত এইসকল।
তন্ত্রঃ-
ঈশ্বর কে আদ্যাশক্তিরূপে চিন্তা করে তন্ত্র ধারনা তৈরি।তন্ত্রগু

লি সাধারণত শিব ও পার্বতীর নানান কথোপকথন আকারে রচিত।কিছুর প্রশ্নকর্ত্রী পার্বতী এবং উত্তরদাতা মহাদেব, এবং অন্যগুলির প্রশ্নকর্তা শিব এবং উত্তরদাত্রী পার্বতী।প্রথমগুলিকে আগম বলে এবং শেষের গুলিকে নিগম। ৬৪ তন্ত্র আছে, এর মধ্যে --- মহানির্বাণ,কুলার্ণব,কুলসার,প্রপঞ্চসার,তন্ত্ররাজ,রুদ্রযামল,ব্রহ্মযামল,বিষ্ণুযামল অন্যতম।
‪#‎পঞ্চরাত্র‬ সংহিতা ও শৈব আগমঃ-
বৈষ্ণবদের পঞ্চরাত্রসংহিতা ও শৈবদের শৈবাগম তন্ত্রজাতীয় শাস্ত্র।এই শাস্ত্রগুলির দাবি এই যে, বেদ অপেক্ষা পঞ্চরাত্র সংহিতা ও শৈব আগম এই যুগে(কলিযুগের) বেশী উপযোগী। আগে শাস্ত্রেগুলির মত এরা বেদমূলক নয়,তবে বেদের সঙ্গে স্পষ্ট কোন বিরোধ নেই(তবে ফেসবুকে এর পালনকারিরা বেদ বিরোধী প্রচার করেন)
প্রায় ২১৫ খানা আলাদা আলাদা পঞ্চরাত্রসংহিতা গ্রন্থের কথা শোনা যায়, --- ঈশ্বর, পৌষ্কর,পরম, সাত্বত, বৃহৎব্রহ্ম ও জ্ঞানামৃতসারসংহিতা(প্রথমখানি যামুনাচার্য,পরের তিনখানি শ্রীরামানুজাচার্য উল্লেখ করে গেছেন, শেষটি নারদপঞ্চরাত নামে পরিচিত)।
২৮ টি শৈব আগমের কথা জানা যায়,তবে বর্তমানে ২০টির কিছুকিছু অংশ পাওয়া যায় মাত্র।
শ্রীশংকরাচার্যের অদ্বৈতবাদের প্রভাবে এরা অনেকাংশ বৈদান্তিক মতে ফিরে এসেছেন।
(হিন্দুধর্ম থেকে)
Courtesy: Sumit Bhattacharya
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।