১৩ মার্চ ২০১৬

রামায়ন কথা ( আদিকাণ্ড- ১৫ )

হনুমান শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন সূর্য দেবতার কাছে । সূর্য দেবতা তাঁহাকে বৈদিক শাস্ত্রাদি জ্ঞান থেকে আরম্ভ করে যুদ্ধবিদ্যা সকল কিছুই প্রদান করলেন । সূর্য দেবতার দ্বিতীয়া পত্নী ছায়াদেবীর সন্তান ছিলেন শণি । সেসময়ের কথা- শণিদেবের খুব ক্রোধী মেজাজ ছিলো । কোনো কারণে একদিন শণিদেবের সাথে হনুমানের বিবাদ হয়। অবশেষে দুজনের মধ্যে যুদ্ধের সূত্রপাত হয় । যুদ্ধে শণিদেব দারুন ভাবে পরাজিত হয় । তখন সূর্য দেবতা এসে দুজনের মধ্যে মিটমাট করেন । উভয়ে বন্ধুত্ব স্বীকার করেন । শণিদেবতা তখন হনুমান কে বর প্রদান করেন। বলেন- “হে অঞ্জনালাল মারুতি! আমি কথা দিচ্ছি যারা তোমাকে ভজনা করবে তাহাদিগের ওপর আমি কদাপি কুদৃষ্টি দেবো না। তাহাদের সকল গ্রহ দোষ খণ্ডন হবে। নবগ্রহ তাহাদের ওপর সুপ্রসন্ন থাকবে। কলিকালে যাহারা তোমার বন্দনা করবে তাহাদিগের সকল গ্রহদোষ ও শণির দশা খণ্ডন হবে। তাহাদের নবগ্রহ আশীর্বাদ করবেন।” এই কারনে জ্যোতিষীরা “হনুমান চালিশা” পড়বার বিধান দেন। যাই হোক বিদ্যা শিক্ষা সমাপনের পর বালক হনুমান আবার মায়ের কোলে ফিরলেন । কিন্তু তাঁহার দুষ্টুমি কমল না। যেমন নারকেল দিয়ে ঢিলানো বা পক্ক ফলমূল চৌর্য বা ধ্যানরত মুনি ঋষি দের তুলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া, বিশাল বৃক্ষ তুলে উৎপাটন ইত্যাদি। কয়েকবার খেলাচ্ছল্লে কিছু রাক্ষস কেই বাল্যকালে যমালয়ে পাঠালেন । একবার মহর্ষি রুশি তপস্যায় বসেছিলেন একটি বটবৃক্ষ তলে। হনুমান খেলাচ্ছল্লে ভূমি শুদ্ধ তাকে তুলে অন্যত্র রাখলেন। মহর্ষি রুশি অভিশাপ দিলেন- “তুমি তোমার অলৌকিক সকল দৈবশক্তি বিস্মৃত হও।”

এই দেখে অনান্যরা বলল- “মহর্ষি এ আপনি কি করলেন ? হনুমান রূপে দেবাদিদেব অবতার গ্রহণ করেছেন রাক্ষস কূলের সংহারের জন্য। আপনি অভিশাপ দিয়ে তাঁর শক্তি ভুলিয়ে দিলেন?” মহর্ষি রুশি বললেন- “যথা সময়ে কেউ যখন হনুমানের শক্তির কথা স্মরণ করাবে, তখন হনুমানের সমস্ত শক্তির কথা স্মরণ আসবে।” হনুমান তখন থেকে শান্ত হলেন । একদিনের কথা, ইন্দ্র দেবতা যখন স্বর্গে ছিলেন তখন অনান্য অপ্সরারা পুঞ্জস্থলার কথা বলছিল। পূর্বে বলা হয়েছে যে দুর্বাসা মুনির শাপে অপ্সরা পুঞ্জস্থলা, হনুমানের মাতা অঞ্জনা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন । অপ্সরা গন বলল- “হে মহেন্দ্র! অপ্সরা পুঞ্জস্থলা মর্তে জন্ম নিয়েছেন। তিনি দুর্বাসা মুনির শাপকে বাস্তবায়িত করে রুদ্রাবতার হনুমানের জন্ম দিয়েছেন। এখন তাকে স্বর্গে ফিরিয়ে আনা হোক।” ইন্দ্রদেবতা ভাবলেন তাই তো। পুঞ্জস্থলা স্বর্গের অপ্সরা । মর্তলোকে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এখন তাকে স্বর্গে ফিরিয়ে আনা হোক । সেই মতো ইন্দ্র কেশরী মহলে এসে নিজ শক্তি দ্বারা অপ্সরা পুঞ্জস্থলার স্মৃতি ফিরিয়ে দিলেন । অঞ্জনা অনেক মিনতি করলেন যে হনুমান এখন ছোটো। এই অবস্থায় দেহ ত্যাগ করলে হনুমানকে দেখবে কে? সে মা ছাড়া হয়তো আর বাঁচবেই না । ইন্দ্রদেবতা কোনো বাধা নিষেধ শুনতে চাইলেন না। উলটে শাসিয়ে গেলেন। বললেন- “তুমি আমার নির্দেশ না মানলে আমি বৃষ্টি বন্যা সৃষ্টি করে কেশরী রাজ্য ধ্বংস করবো। তুমি তো জানো দেবতাদের শক্তির কাছে মর্ত বাসী কত অসহায়। অতএব আমার নির্দেশ পালন করে স্বর্গে ফিরে চলো।”

অঞ্জনা দেবী আর কি করেন। মৃত্যুর জন্য তৈরী হতে লাগলেন । সর্বদা উদাস ভাব দেখে কেশরী, হনুমান অনেক জিজ্ঞাসা করলো, অঞ্জনা দেবী কিছুই বলেন না । শেষে অঞ্জনা দেবীকে জটিল রোগে ধরল । প্রানবায়ু নির্গত হোলো। এই ঘটনায় যেমন কেশরী শোক পেলেন, তেমনি হনুমান মাতৃবিয়োগে রোদন করতে লাগলেন । হনুমানের সেই রোদন পৃথিবী ছাড়িয়ে স্বর্গ এমন কি ব্রহ্মলোক, কৈলাস, বৈকুণ্ঠ অবধি কাঁপিয়ে দিয়েছিলো । ব্রহ্মা, বিষ্ণু মিলে ইন্দ্র দেবতাকে ভৎসনা করলেন । কি কারনে এমন করেছে জানতে চাইলেন। সবচেয়ে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন ভগবান শিব। তিনি ত্রিশূল দিয়ে ইন্দ্রকে ধ্বংস করতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা, ভগবান বিষ্ণু মিলে ভগবান নীলকণ্ঠকে শান্ত করলেন । ব্রহ্মা বললেন- “দুর্মতি ইন্দ্র, তুমি হনুমানের মাতা কেশরীর প্রান কেড়ে অন্যায় করেছো। হনুমানের মাতার আয়ু এখনও অনেক বাকী। তাঁহার আয়ুস্কাল পূর্ণ হয় নি।” ব্রহ্মা তখন হনুমানের মাতা অঞ্জনার প্রান ফিরিয়ে দিলেন। জীবিত হয়ে অঞ্জনা দেবী পুত্র হনুমান কে ক্রোড়ে নিয়ে বাৎসল্য আদর করতে লাগলেন ।

( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।