১৩ মার্চ ২০১৬

রামায়ন কথা ( আদিকাণ্ড পর্ব – ১৩ )

আজ আমরা বিশ্বকর্মার বানর রূপের কথা বলবো । বিশ্বকর্মাকে নিয়ে পুরানে অনেক আখ্যান লিখিত আছে । তাঁর মধ্যে থেকে একটি আখ্যান শোনা যাক। ঋষি শাপে একদা দেবশিল্পীকে বানর হতে হয়েছিল । ঘটনা টা ঠিক এই রূপ। বিশ্বকর্মা বিয়ে করেছিলেন স্বর্গের অপ্সরা ঘৃতাচীকে ।ঘৃতাচীদেবী একজন অপ্সরা- তাই তিনি নৃত্যকলা কে নিয়ে থাকতে চান- কিন্তু স্বামী বিশ্বকর্মা ঘোর নারাজ। তিনি বলেন বিবাহের পর ওসব চলবে না। একদা স্বর্গে নৃত্য প্রতিযোগিতা হয়েছিল। স্বামীর অমতে ঘৃতাচী দেবী লুকিয়ে নাচতে গিয়ে বিশ্বকর্মার হাতে লাঞ্ছিতা হলেন। বিশ্বকর্মার এক কন্যা হয়- তার নাম চিত্রঙ্গদা। অপূর্ব সুন্দরী চিত্রাঙ্গদার নৃত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল- কিন্তু পিতার বদ মেজাজের জন্য- চিত্রাঙ্গদা চুপি চুপি মায়ের কাছে নৃত্য কলা শিখতো, প্রকাশ্যে শেখার সাহস পেতো না । একসময় সূর্য বংশীয় নৃপতি রাজা সুরথের সাথে চিত্রাঙ্গদার ভালোবাসা হয় । তারা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতেন। কিন্তু দেবতাদের দিব্যদৃষ্টি থাকে। সুতরাং পিতা বিশ্বকর্মার থেকে বেশীদিন লুকিয়ে থাকলো না। মর্তের পিতারা যা করেন- মেয়ের প্রেমিক স্ট্যাটাসে, পয়সায় ছোটো হলে , মেয়ে ভালোবাসায় অন্ধ হলে , মেয়েকে বন্দী করে রাখেন, বিশ্বকর্মা তাই করলেন। এই অবস্থায় মর্তের মেয়েরা যা করে পালিয়ে যায়- চিত্রাঙ্গদাও তাই করলেন।

বিশ্বকর্মা ক্রোধে অন্ধ হয়ে প্রথমে স্ত্রীর সাথে খানিক ঝগড়া করে স্বর্গের দেবতাদের কাছে সাহায্য চাইতে গেলেন। দেবতারা বিশ্বকর্মার বদমেজাজের জন্য সাহায্য করতে চাইলেন না। মর্তের পিতারা যা করে এই সময়, মেয়ের প্রেমিক কে শাস্তি দেবার জন্য নেতা, উচ্চ পদস্থ পুলীশের কাছে যায়- বিশ্বকর্মা সেই মতো প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা বললেন- “মেয়েদের স্বয়ম্বর সভার মাধ্যমে পতি নির্বাচনের অধিকার আমি দিয়েছি, তোমার মেয়ে নিজ পছন্দের পাত্র নির্বাচন করেছে। সে ঠিক কাজ করেছে। ” বিশ্বকর্মা এরপর বৈকুন্ঠে লক্ষ্মী জনার্দনের কাছে গেলেন। মা লক্ষ্মী বললেন- “আমি নিজেই সমুদ্র মন্থনের পর প্রকট হয়ে ভগবান হরির কন্ঠে মাল্য দিয়েছিলাম। আমি কন্যার পতি নির্বাচনের অধিকারকে সমর্থন করি। আমি তোমার কন্যার পক্ষেই আছি।” বিফল হয়ে বিশ্বকর্মা কৈলাশে গেলে গৌরী দেবী জানালেন- “তোমার কন্যা নিজ পাত্র নিজে নির্বাচন করে স্ত্রী ধর্ম পালন করেছে। অতএব আমরা তোমাকে কোনোরূপ সাহায্য করতে পারবো না।” সাহায্য না পেয়ে বিশ্বকর্মা ক্রোধে নিজ মেয়েকে অভিশাপ দিলেন- “বিয়ের পর তুই বিধবা হবি।” চিত্রাঙ্গদা ভাবল তাঁর জন্য রাজার মৃত্যু হবে- তাই এই বিবাহ করা উচিৎ না। এই ভেবে চিত্রাঙ্গদা নদীর জলে ঝাঁপ দিলো। রাজা সুরথ পাগল হয়ে বনে চলে গেলো। মহর্ষি ঋতধ্বজ এর শিষ্যরা চিত্রাঙ্গদাকে নদী থেকে তুলে আশ্রমে নিয়ে গেলো। সুস্থ করলো। মহর্ষি ঋতধ্বজ সব শুনে বিশ্বকর্মা কে অভিশাপ দিলেন- “তুই পিতা না। তুই পশু। তাই তুই পশু যোনিতে বানর হয়ে থাক। যতদিন তুই তোর মেয়েকে রাজা সুরথের সাথে বিবাহ না দিবি, শাপ ফিরিয়ে না নিবি , ততদিন তুই বানর হয়ে থাকবি।”

বিশ্বকর্মা এর পর মর্তে বানর হয়ে জন্মান। ঘৃতাচী দেবীও বানরী হয়ে জন্মান। দুজনের বিবাহ হয়। নল নামে তাঁদের এক পুত্র হয়। বিশ্বকর্মা অবশেষে শাপ তুলে নিয়ে চিত্রাঙ্গদার সাথে সুরথের বিবাহ দেন। এই কাজে মধ্যস্থতা করেন বালক হনুমান আর জাম্বুবান । তখন ঋষি শাপ ও কেটে যায় । নল হলেন ইঞ্জিনিয়ার । যিনি রামসেতু তৈরী করেছিলেন । এই বিদ্যা তিনি তাঁর পিতার কাছে পেয়েছিলেন। নল ছোটোবেলায় খুব চঞ্চল ছিলেন। মুনি ঋষিদের পূজার জিনিস লোটা, আসন, যজ্ঞকাষ্ঠ , জপের মালা, দণ্ড সব নিয়ে নদীতে ফেলে দিতেন । এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন কোনো এক মুনি তাঁকে অভিশাপ প্রদান করেন যে – “যা জলে ফেলবে সে সকল ডুবে যাবে না। সব জলের বুকে ভেসে থাকবে।” শাপে বর হয়েছিলো । পরবর্তী কালে ভারত থেকে লঙ্কা যাবার সেতু নির্মাণ করেছিলেন ।

( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।