০১ এপ্রিল ২০১৬

রামায়ণ কথা ( আদিকাণ্ড- ২৬ )


ভগবান তো এসেছেন। কিন্তু তাঁর শক্তি আসবেন এই অবতারে। ভগবান যখন অবতীর্ণ হন, শক্তিও আসেন। শক্তি বিনা পুরুষ জড়, শব । বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখিত হয়েছে – 

এবং যথা জগৎস্বামী দেবদেবো জনার্দনঃ ।
অবতারং করোতোষা তথা শ্রীস্তৎসহায়িনী ।।
... ... ... ...
রাঘবত্বেহভবৎ সীতা রুক্মিণী কৃষ্ণজন্মনি ।
অন্যেষু চাবতারেষু বিষ্ণোরেষা সহায়িনী ।।
দেবত্বে দেবদেহেয়ং মনুষ্যত্বে চ মানুষী ।
বিষ্ণোর্দেহানুরূপাং বৈ করোত্যেষাত্মনস্তনুম্ ।।

( বিষ্ণুপুরাণ- ১/৯/১৪০, ১৪২-৪৩ )

অর্থাৎ জগৎস্বামী দেবদেব জনার্দন যেমন অবতীর্ণ হন , তাঁর সহায়িনী লক্ষ্মীদেবীও সেইরূপই অবতীর্ণা হন। ... রামাবতারে ইনি সীতা এবং কৃষ্ণাবতারে রুক্মিণী হয়েছিলেন ; অনান্য অবতারেও ইনি বিষ্ণুর সহায়কারিণী । বিষ্ণু যখন দেবরূপে অবতীর্ণ হন তখন ইনি দেবী হন, বিষ্ণু মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হলে ইনি মানবী হন- প্রতি অবতারে বিষ্ণুর দেহের অনুরূপ দেহই পরিগ্রহ করেন । 

একবার মিথিলা রাজ্যে অকাল মহামারী দেখা দিয়েছিলো। ফসল নষ্ট হল। নদী নালা শুকিয়ে কাঠ। চারপাশে খালি দুর্ভিক্ষ আর পশু পক্ষী মানুষের মৃতদেহ- এমন অবস্থা । গাছপালা শুকিয়ে মিথিলা রাজ্য মরুভূমি হল। মিথিলা রাজ্য বর্তমান বিহার আর নেপালের কিছু অংশ নিয়ে ছিল । মিথিলার রাজা জনক মহাচিন্তায় পড়ে কুলগুরু মহর্ষি শতানন্দের শরণাপন্ন হলেন । মহর্ষি বললেন- “রাজন ! দেবী লক্ষ্মী সুখ, সমৃদ্ধি, ঐশ্বর্যের দেবী। তিনি তুষ্টা হলে রাজ্যে অনাচার দূর হয়ে শ্রীবৃদ্ধি পাবে। অতএব তুমি মাতা লক্ষ্মীর উপাসনা কর।” রাজা জনক তাই করলেন । মা লক্ষ্মীর শরণ নিয়ে তপ করতে লাগলেন । দেবী হরিপ্রিয়া সেই তপস্যায় তুষ্ট হয়ে রাজা জনক কে দর্শন দিলেন । রাজা জনক দেবী লক্ষ্মীর অপূর্ব মূর্তি দর্শন করলেন। দেবী কমলা চতুর্ভুজা , হস্তে মঙ্গল কলস, উপরের দুহস্তে পদ্মপুস্প, নীচের এক হস্তে তিনি ঐশ্বর্য প্রদান করছেন, আর এক হস্তে কলস । মস্তকে চারটি হিমালয়ের চূড়া সদৃশ শ্বেত গজ মঙ্গল কলস এর সলিল দ্বারা দেবী ক্ষীরোদার অভিষেক করছেন । সকল প্রকার শ্রীযুক্ত পদ্মাসীনা সেই দেবী অভয় দিয়ে বললেন- “পিতা ! আমি আপনারই কন্যা রূপে আবির্ভূতা হব । আমার আগমনে এই রাজ্য সুজলা সুফলা ধনধান্যে ভরে উঠবে । আপনি শীঘ্রই ভূমি কর্ষণ উৎসবের আয়োজন করুন। সেই উৎসবে আপনি আমাকে প্রাপ্ত করবেন।” 

রাজা জনক তাই করলেন ভূমি কর্ষণ উৎসব আরম্ভ করলেন । বৈশাখের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে মঙ্গলবার পুষ্যা নক্ষত্রে কন্যা রাশিতে ( মতান্তর আছে ) জনক রাজা প্রাপ্তি করলেন সীতা দেবীকে । সেই দিনটি “সীতানবমী” নামে পালিত হয় । মাতা সীতা বসুমতী কণ্যা রূপে অযোনিজা হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন। মা লক্ষ্মীর আগমন হতেই মিথিলা রাজ্য সুখ সমৃদ্ধি ফসলে ভরে উঠলো, দুর্ভিক্ষ মহামারী দূর হল। উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ, মৃদঙ্গ পবিত্র বাদ্য বাজিয়ে রাজা জনক শিশু সীতাদেবীকে ঘরে নিয়ে গেলেন । হরিপ্রিয়া কমলা দেবীর আশীর্বাদ যার উপর থাকে সে রোগ, শোক, ব্যাধি, দারিদ্র মুক্ত হয় । তাই গানে বলা হয় –

এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী
থাকো মা লক্ষ্মী ঘরে ঘরে
গাছে ভরা ফুল আর মাঠে ভরা ধান
দুধে ভাতে বেঁচে থাক মা তোমার সন্তান ।
দীপ জ্বলে শাখ বাঁজে মা তোমার আহ্বানে।
যে বা নারী পূজে তোমায় যেবা স্মরে 
তুমি মা তার দাও মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে । 

যাঁরা অর্থ, ধন, সম্পত্তি পেতে চান তাঁরা মা লক্ষ্মীর অর্চনা করতে পারেন। অর্থ, ধন বলতে কেবল টাকা পয়সা কে বোঝায় না। চারিত্রিক সম্পদ, পারমার্থিক সম্পদ দেবী লক্ষ্মী প্রদান করেন। তবুও যারা অর্থ সম্পদ পেতে চান- তারা সকালে উঠে ভূমিতে চরণ রাখার পূর্বে এই মন্ত্র উচ্চারন করুন – 

লক্ষ্মীঃ শ্রীঃ কমলা বিদ্যা মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সতী ।
পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী ।।
ভূতানামীশ্বরী নিত্যা মতা সত্যাগতা শুভা ।।
বিষ্ণুপত্নী মহাদেবী ক্ষীরোদতনয়া ক্ষমা ।।
অনন্তলোকলাভা চ ভূলীলা চ সুখপ্রদা ।
রুক্মিনী চ তথা সীতা মা বৈ বেদবতী শুভা ।
এতানি পুণ্যনামানি প্রাতরুত্থায় যঃ পঠেৎ ।
মহাশ্রিয়মবাপ্নোতি ধনধান্যমকল্মষম্ ।।

বঙ্গানুবাদ- শ্রী, কমলা বিদ্যা, মাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া , সতী, পদ্মালয়া, পদ্মহস্তা, পদ্মাক্ষী , পদ্মসুন্দরী, ভূতগণের ঈশ্বরী, নিত্যা, সত্যাগতা , শুভা, বিষ্ণুপত্নী, ক্ষীরোদতনয়া, ক্ষমাস্বরূপা, অনন্তলোকলাভা , ভূলীলা, সুখপ্রদা, রুক্মিনী, সীতা, বেদবতী- দেবী লক্ষ্মীর এসকল নাম। প্রাতে উত্থান কালে যিনি দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন, তিনি বিপুল ঐশ্বর্য ও নিস্পাপ ধনধান্য প্রাপ্ত হন । 
( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।