০১ এপ্রিল ২০১৬

রামায়ণ কথা ( আদিকাণ্ড- ২৮)

এভাবে অযোধ্যায় শ্রীরাম বয়োঃবৃদ্ধি পাচ্ছিলেন । তিনি নিত্য বাগানে খেলা করতেন । সখা দের সাথে ভ্রাতার সাথে মিলে কুল ধর্ম মেনে বনে গিয়ে মৃগয়া করতেন । সন্ত তুলসীদাস গোস্বামী লিখেছেন-

বন্ধু সখা সঁগ লেহিঁ বোলাঈ ।
বন মৃগয়া নিত খেলহিঁ জাঈ ।।
পাবন মৃগ মারহিঁ জিয়ঁ জানী ।
দিন প্রতি নৃপহি দেখাবহিঁ আনী ।।

অর্থাৎ- ভ্রাতা সখা পরিবৃত হয়ে শ্রীরামচন্দ্র নিত্য মৃগয়ায় যেতেন ( ক্ষত্রিয় ধর্ম অনুসারে ) । পূত মৃগ শিকার করতেন এবং তা এনে দশরথকে দেখাতেন । 

প্রাচীন কালে ক্ষত্রিয় গণ বনে গিয়ে মৃগয়া করতেন । এমন বহু দৃষ্টান্ত আছে । এক আহার্য হিসাবে মৃগ মাংস সেই যুগে প্রসিদ্ধ ছিল এবং ক্ষত্রিয় গণ তা খেতেন । দ্বিতীয়ত মৃগ চর্ম পবিত্র আসন । এছাড়া শিকাড় করাকে বীরত্ব মানা হত । অবশ্য রামচন্দ্রের হাতে নিহত মৃগ অবশ্যই মুক্তি পেয়েছিলেন । অপরদিকে রাজা জনকের গৃহে সীতা দেবী বৃদ্ধি পেতে লাগলেন । রাজা জনকের রাজ্যে শ্রীবৃদ্ধি ঘটলো । উপযুক্ত পরিমাণে বর্ষণ হল । মাঠগুলি সিক্ত হলে প্রজারা চাষাবাদ করে ধনধান্যে ফুলে উঠলেন । এসবই হয়েছে মাতা লক্ষ্মীর কৃপায়। তিনি নিজেই সীতা রূপে জনক রাজা ও সুনয়নার কোল আলো করে বড় হতে লাগলেন । সীতা দেবী ভগবতী উমামাতার ভক্ত ছিলেন । অপরদিকে রামচন্দ্র ছিলেন শিবভক্ত । রামচন্দ্রের মনোহর রূপ দেখে অযোধ্যার আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই মোহিত হয়ে রামচন্দ্রকে ক্রোড়ে নিয়ে আদর করতেন । এমনই ছিলো রামচন্দ্রের রূপ । পাঁচ বছর বয়স হতে রামচন্দ্রকে ভ্রাতাদের সহিত গুরু বশিষ্ঠের আশ্রমে বিদ্যা শিক্ষার জন্য পাঠানো হল । বশিষ্ঠ মুনির আশ্রমে রামচন্দ্র ও তাঁহার ভ্রাতারা চতুর্বেদ , উপনিষদ, কাব্য, অলংকার, ব্যাকারন, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন বিদ্যা আদি সব শাস্ত্র শিখলেন । 

এরপর অস্ত্র বিদ্যা শুরু হল । প্রথমে মল্ল বিদ্যা শিখলেন। তারপর গদা, তরবারি, বর্শা, লাঠি, ছোড়া ইত্যাদি অস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করলেন । এরপর মহর্ষি বশিষ্ঠ ধনুর্বিদ্যা দিলেন চার রাজকুমারকে । চার ভ্রাতাকে অনেক দিব্যাস্ত্রের জ্ঞান দিলেন। এই অস্ত্র গুলি জগত ধ্বংস করবার শক্তি রাখে । রামচন্দ্রের তীব্র বেগে বাণ নিক্ষেপ, অব্যর্থ নিশানা দেখে দেবতাবৃন্দ আনন্দ প্রাপ্তি করেন । কারন এবার রাবণ অনায়েসে মরবে । একদিন মারীচ রাক্ষস মায়া দ্বারা হরিণ সেজে খোঁজ করতে আসেন । হরিণ রূপী মারীচ বনে ঘুরছিলো। সেসময় রাম লক্ষণ ধনুক হাতে বনে ঘুরছিলেন । মৃগ দেখে রামচন্দ্র বাণ নিক্ষেপ করেন । কৃত্তিবাস পণ্ডিত লেখেছেন- 

মৃগ দেখি রামের কৌতুক হৈল মন ।
ধনুকে অব্যর্থ বাণ যুড়িল তখন ।।
ছুটিল রামের বাণ তারা যেন খসে ।
মহাভীত মারীচ পলায় মহাত্রাসে ।।
শ্রীরামের বাণশব্দে ছাড়িল সে বন ।
জনকের দেশে গেল মিথিলা ভুবন ।। 

রামচন্দ্রের বাণে ভীত হয়ে মারীচ রাক্ষস অযোধ্যার সীমা ছেড়ে সোজা মিথিলায় পলায়ন করলো । 

( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।