১১ জুলাই ২০১৬

ভূতের অজানা রহস্য (পার্ট ০১)

১২ এপ্রিল ১৯৭৪ সালে ভারতে এক প্রাতঃভ্রমণের সময় ইসকন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং এক ভারতীয় ব্যক্তির সাথে কথোপকথন হচ্ছিল -------

শ্রীল প্রভুপাদ – “……… আমি অনেক কিছুই দর্শন করিনি, তার মানে কি সেগুলোর অস্তিত্ব নেই ? আপনি একজন বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণা করছেন, কিন্তু আপনি তা দর্শন করেন নি ।”

ভারতীয় ভদ্রলোক – “আমি অনেক ভূতের গল্প শুনেছি কিন্তু……”
শ্রীল প্রভুপাদ – “না না সেগুলো কোন গল্প না । আমরা ভাগবত থেকে শ্রবণ করি, এটিই হচ্ছে যথার্থ উৎস । আমরা কোন জড় জ্ঞানী ও তথাকথিত পন্ডিতদের কাছ থেকে শ্রবণ করি না । আমরা স্বয়ং ব্যাসদেবের কাছ থেকে শ্রবণ করছি ।…….”

ভারতীয় ভদ্রলোক – “কিন্তু আমার ৮০ বছরের জীবনে ভূতের অস্তিত্বসূচক কোন অভিজ্ঞতা হয়নি ।”
শ্রীল প্রভুপাদ – “না, আপনার সব অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়নি । আপনার অভিজ্ঞতাই সবকিছু নয় । আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা পারমার্থিক কর্তৃপক্ষকে মানতে চাই না । এখানে ব্যাসদেব সমস্ত জ্ঞানের অধিকর্তা এবং ভাগবত হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভিজ্ঞতা । আমরা সেখান থেকে শ্রবণ করছি । আমাদের ভূতের অভিজ্ঞতা না হলেও ! ভূত হচ্ছে একটি জীব যাদের কোন জড়দেহ নেই । যখন কেউ অত্যধিক পাপকার্য করে থাকে তারা জড়দেহ লাভ করতে পারে না । সে মন, বুদ্ধি ও অহংকারে নির্মিত একটি সূক্ষ্ম দেহে অবস্থান করে । এটিই হচ্ছে ভূতের জীবন । যেহেতু তাদের কোন জড়দেহ নেই, তাই কেউ তাদের দেখতে পায় না কিন্তু তারা বিভিন্ন কিছু প্রদর্শন করতে সক্ষম । এটিই ভূতের জীবন । দেখা বা না দেখা কোন বিষয় নেই । তাই আমরা বেদান্ত সূত্র এবং শাস্ত্রচক্ষু দ্বারা দর্শন করতে পারি ।”

বৈদিক শাস্ত্রসমূহে আমরা বিভিন্ন স্থানে ভূতের অবস্থিতির ঘটনা পাই । শ্রীমদভাগবদে দক্ষের ঘটনা রয়েছে এবং চৈতন্য চরিতামৃতে রয়েছে ছোট হরিদাসের গল্প । ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যারা ভূতের উপাসনা করে তারা ভূতলোকে গমন করে । শ্রীল প্রভুপাদের লীলামৃত থেকে আমরা পাই যে, শ্রীল প্রভুপাদ একসময় জন লেননের বাড়িতে থাকার সময় সেখানের এক ভূতকে মুক্ত করেছিলেন । চার সম্প্রদায়েরর আচার্যগণও জীবনে ভূতের অবস্থিতির কথা বলেছিলেন । শ্রীপাদ রামানুচার্যের স্ত্রী একবার ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন, রামানুচার্য তাকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করেছিলেন । শ্রীপাদ মধ্বাচার্যের পিতা মাতা এবং তাদের একদল ব্রহ্মরাক্ষস ভূতের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন যখন তারা ছোট বাসুদেবকে (মধ্বাচার্য) নিয়ে অনন্তসন মন্দির থেকে আসছিলেন তখন মধ্বাচার্যের বয়স ছিল মাত্র ২ সপ্তাহ । মধ্বাচার্যের এক অনুসারী শ্রীপাদ বদরাজ তীর্থ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য সেবক ছিলেন একজন শক্তিশালি ভূত যার নাম ছিল ভূতরাজ । ভূতরাজকে দিয়ে তিনি মায়াবাদীদের পরাজিত করতেন, যারা তাকে ভূতের আক্র্রমণ করার চেষ্টা করত । রাঘবেন্দ্র তীর্থ তার কমন্ডুলুর জল ছিটিয়ে দিয়ে তাকে সেই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দেন । বায়ু পুরাণে বিশদভাবে ভূতের বর্ণনা দেওয়া আছে । এছাড়াও অন্যান্য পুরাণ যেমন-গরুর পুরানে চারটি অধ্যায়ে বিশদভাবে বর্ণনা দেওয়া আছে । অতএব এটি স্পষ্ট যে, বৈদিক শাস্ত্র মতে ভূত বা অদৃশ্য জীবসত্তার অস্তিত্ব রয়েছে ।

বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে থাকে । তাইতো সমগ্রবিশ্বে এবং সব ধর্মে ভূত হতে মুক্ত হওয়ার পন্থার জন্য বহু গবেষনা এবং পদ্ধতি তৈরির প্রচেষ্টা চলছে । পাশ্চাত্য দেশে প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন নামক বহু গবেষনা কেন্দ্র রয়েছে । এখন প্রশ্ন হল কখন একজন মানুষ ভূতের দেহ লাভ করে । উত্তর হল মৃত্যুর পর । অবশ্যই সেই মৃ্ত্যু যদি স্বাভাবিক মৃত্যু না হয়ে দূ্র্ঘটনা বা আত্মহত্যা জনিত হয় তবে সে ভূতের দেহ লাভ করবে (গরুর পুরাণ) । যেহেতু মানুষ জড় জগতের প্রতি, তার পরিবার সমাজের প্রতি অতি আকর্ষিত তাই মায়ার কারনে ভূতুরে অবস্থা প্রাপ্ত হয়েও তারা সেই আকর্ষনে আবদ্ধ থাকে ।

এবার আমরা জানব ভূতরা সাধারনত কোন্ কোন্ স্থানে বেশি থাকে বা থাকতে পারে এ ধরনের স্থানগুলো কি কি ?

শ্মশান/গোরস্থান ঃ- এই সমস্ত এলাকা যত বেশি পুরাতন হবে সেখানে তত বেশি ভূত বা প্রেতাত্মাদের অবস্থিতি বেশি পরিলক্ষিত হবে । তার কারণ হল সেই সূক্ষ্মদেহ প্রাপ্ত আত্মাগুলো তাদের মনুষ্যদেহের প্রতি অতি আকর্ষিত বলে তারা এসকল স্থানে বেশি অবস্থান গ্রহণ করে ।

ঐতিহাসিক স্থান ঃ- অনেক পুরাতন ঐতিহাসিক দালাল, ইমারত রয়েছে যেখানে বহু বছর যাবৎ অনেকেই বসবাস করেন এবং সেখানেই বেশি প্রেতাত্মার সন্ধান পাওয়া যায় । কেননা এসকল স্থানে অনেক আবেগময় স্মৃতি বা ঘটনা সংগঠিত হয়ে থাকে ।

এছাড়াও কোন গণহত্যা হয়েছে এমন কোন স্থানে সেখানে হত্যাকৃত মানুষদের আত্মাদের উপস্থিতি থাকতে পারে । এরকম বিভিন্ন পুরাতন হোটেল, বোডিং হাউস, স্কুল, থিয়েটার, যুদ্ধক্ষেত্রে ভূতের উপস্থিতি থাকতে পারে কেননা এখানে কোন না কোন সময় অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে থাকে ।

(আগামি সংখ্যায় থাকবে ভূত আক্রান্ত ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ভূত থেকে নিজেকে রক্ষার নানা কৌশল) চলবে.........


Written by :  Sankirtan Madhab Das
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।