১১ জুলাই ২০১৬

“শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদ”

  আমরা জানি যে, প্রাচীন উপনিষদগুলিকেই ভিত্তি করে বেদান্ত দর্শন গড়ে উঠেছে | যেখানে, মুখ্যতঃ তিনটি মতবাদ প্রচলিত – ১) শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদ ২) রামানুজাচার্য্যের বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ এবং ৩) মাধবাচার্য্যের দ্বৈতবাদ।

আজ আমি সবার সামনে তুলে ধরবো “শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদ”।


মূলত, শঙ্করাচার্য্য এই বিশ্বসত্তাকে অবিভাজ্য এবং এক কল্পনা করেছেন বলেই তাঁর মতবাদকে অদ্বৈতবাদ বলা হয় | তিনি শিক্ষা দিলেন – ব্রহ্ম সত্য জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ – অর্থাৎ ব্রহ্ম সত্য, এই বিশ্ব মিথ্যা এবং জীবাত্মা ও ব্রহ্ম এক এবং অভিন্ন | এই যে জগৎ প্রত্যক্ষ হচ্ছে যা পরিবর্তনশীল এবং যা নাম ও রূপ এই দুয়ের সমন্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা ভ্রম মাত্র | এই ভ্রম ব্রহ্মের মায়াশক্তির প্রভাব | অর্থাৎ আমাদের এই ভ্রম বা ভুলের কারণ হল মায়া | এই মায়া তত্ত্বও অদ্বৈতবাদের একটি অবিভাজ্য অংশ | এইজন্য এই মতবাদকে মায়াবাদ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে | শঙ্করাচার্য্যের মতে ব্রহ্ম সকল অবস্হাতেই একমেবাদ্বিতীয়ম্ অর্থাৎ ব্রহ্ম এক এবং অদ্বিতীয় |

কোন অবস্হাতেই তিনি বহু নন | ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে জগৎ তা ব্রহ্ম হতে পৃথক নয়; তাকে আমরা ভুল করে বহু আকারে দেখি | শঙ্করাচার্য্যের মতে এই যে দেখার ভুল তার কারণই হল মায়া | মায়া শক্তিটির এমনই ক্ষমতা আছে যা আসল জিনিষটির প্রকৃত রূপকে আবৃত করে রাখে এবং তার বিকৃত রূপটিকে প্রকট করে | সুতরাং দৃশ্যমান বিশ্ব ব্রহ্মের উপরিই প্রতিষ্ঠিত, তাই ব্রহ্ম | কিন্তু তাঁকে দেখার ভুলে আমরা বহুরূপে দেখি | শঙ্করাচার্য্য ব্যাখ্যা করেছেন যে ক্ষর হল জীবজগৎ | এর সর্বদা ক্ষরণ বা ক্ষয় হচ্ছে | আর অক্ষর হল কূটস্হ – জগতের সব কিছুর উৎপত্তির বীজ | শঙ্করাচার্য্যের মতে এটিই মায়া | এই কারণ-রূপিণী মায়া আর কার্য্যরূপী জীবজগতের উপরে আছেন উত্তম পুরুষ যিনি পরমাত্মা | শঙ্করাচার্য্যের মতে অজ্ঞানতাই হল দ্বৈতভাবের উৎপাদক | এই দ্বৈতভাব হতেই সকল কর্ম হয় | দ্বৈতভাব নাশ হলেই নিষ্ক্রিয় আত্মা প্রতিষ্ঠিত হয় আর তাহলেই কর্মসন্ন্যাস হয় | তখনই মানুষের আত্মজ্ঞান লাভ হয় |

হরি ૐ তৎসৎ।

Written by:  জয় রায়
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।