১১ জুলাই ২০১৬

রথযাত্রা নিয়ে কিছু কথা


রথযাত্রার ইতিহাস :

পুরান থেকে আমরা জানতে পারি রথ যাত্রার ইতিকথা । স্কন্দ পুরানে আমরা পাই যে ইন্দ্রদ্যম্ন নামে এক রাজা ছিলেন উত্কল রাজ্যে (বর্তমান উড়িষ্যা) তিনি ছিলেন পরম ভক্ত । তিনি একদিন স্বপ্নাদিষ্ট হন একটি মন্দির নির্মানের জন্যে ।
পরে দেবর্ষী নারদ এসে জানন স্বয়ং ব্রহ্মার ও তাই ইচ্ছা ,তিনি নিজে সেটা উদ্বোধন করবেন । এভাবে কাজ হল এবং নারদ বললেন বহ্মাকে আপনি নিমন্ত্রন করুন । পরে রাজা ব্রহ্মলোকে গেলেন এবং নিমন্ত্রন করলেন ।কিন্তু ব্রহ্ম লোকের সময় এর সাথে তো পৃথিবীর মিল নাই ।পৃথীবিতে কয়েক শত বছর পার হয়ে গেছে । ফিরে এসে রাজা দেখলেন
তাকে কেউ চেনে না । যা হোক তিনি আবার সব করলেন । দৈবভাবে রাজা জানতে পারলেন সমুদ্র সৈকতে একটি নিম কাঠ ভেষে আসবে ,সেটা দিয়েই হবে তৈরি দেব বিগ্রহ ।  পরের দিন পাওয়া গেল সেই নিম কাঠের গুল বা দারুব্রহ্ম । সেটাকে নিয়ে আসা হল প্রাসাদে । কিভাবে মূতি তৈরি হবে এই চিন্তা হচ্ছে যখন , তখন একজন অঞ্জাত পরিচয়
লোক এসে বললেন যে তার নাম বাসুদেব মহারানা তিনি বিগ্রহ তৈরি করবেন । কিন্তু নিভৃতে তৈরি করবেন ,তৈরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিরক্ত করা যাবে না মন্দিরে যাওয়া ও যাবে না ।

এদিকে মূর্তি তৈরি শুরুর কিছু দিন পর রাজা কৌতুহল সংবরন করতে না পেরে মন্দিরে যান এবং দেখেন কেউ নেই ভিতরে আর আমরা যে রূপে এখন জগন্নাথ দেব কে দেখি সেই মূর্তিটি পড়ে রয়েছে । পরে ঐ ভাবেই স্থাপিত হয় মূর্তি । ইন্দ্রদুম্ন রাজা জগনাথ দেবের মূর্তিতেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । পরবর্তিতে শ্রীকৃষ্ন এবং জগনাথ দেব একই সত্ত্বা চিন্তা করে একই আদলে তার পাশে ভাই বললাম এবং আদরের বোন সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হয় । আমাদের এখানে এক রথ যাত্রা হলেও পুরিতে তিনটি রথে হয় । প্রথমে বলরাম তার পর সুভদ্রা এবং শেষে জগন্নাথ । ১১৯৯ খ্রীষ্টাব্দে রাজা অনঙ্গভীমদেব তিন রথের রথ যাত্রা প্রচলন করেন ।

জগন্নাথদেব :

জগন্নাথ দেবের মূর্তির রুপ নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন আছে ।কেন এই রূপ তার । এখন তারই কিছু বিশ্লেষন দেখা যাক । কঠোপনিষদে বলা হয়েছে না আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেবতু । এই দেহই রথ আর আত্মা দেহরূপ রথের রথী । আর ঈশ্বর থাকেন অন্তরে । রথ যাত্রার রুপক কিন্তু এমনই ।যাহোক তিনি আমাদের অন্তরে থাকেন । তার কোন রুপ নেই । তিনি সর্বত্র বিরাজিত অর্থাত্ ঈশাব্যাসমিদং । বেদ বলছে আবাঙমানষগোচর ,মানে মানুষের বাক্য এবং মনের অতিত । আমরা মানুষ তাই তাকে মানব ভাবে সাজাই । এবিষয়ে কৃষ্ন যজুর্বেদিয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে -
অপাণিপাদো জাবানো গ্রহীতা
পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্নঃ ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্ ।।

অনুবাদ :
তার লৌকিক হস্ত নাই ,অথচ তিনি সকল দ্রব্য গ্রহন করেন । তার পদ নাই অথচ সর্বত্রই চলেন । তার চোখ নাই অথচ সবই দেখন ।কান নাই কিন্তু সবই শোনেন ।তাকে জানা কঠিন ,তিনি জগতের আদিপুরুষ ।এই বামনদেব ই বিশ্মাত্মা ,তার রূপ নেই আকার নেই ।উপনিষদের এই বর্নানার প্রতিকি রুপই হল পুরীর জগন্নাথদেব ।তার পুরো বিগ্রহ তৈরি সম্ভব হয়নি .কারন তার রুপ তৈরিতে আমরা অক্ষম ।শুধু প্রতিককে দেখান হয়েছে মাত্র ।তাছাড়া ও আর একটি পৌরানিক কাহিনী আছে সেটা হল ভগবান শ্রীকৃষ্ন ১২ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করেন ,তারপর তিনি আর
বৃন্দাবনে আসেন নি । কিন্তু একবার রথে করে পার্শ্ববর্তী গ্রামে এসেছিলেন বৃন্দাবনবাসি দের সাথে দেখা করতে । বৃন্দাবনবাসিরা কৃষ্নকে প্রানাধিক ভালবাসত তাই তার বিরহে তার প্রিয় জনদের অবস্থা দেখে কিছুক্ষনের জন্যে কৃষ্ন
বলরাম সুভদ্রা তিন জন নির্বাক হয়ে যান এই ভালবাসা দেখে ।তখন তাদের অমূর্ত রুপ ফুটে ওঠে । এই রূপই বর্তমান জগন্নাথ দেবের রুপ ।


রথযাত্রা এবং সামাজিক ঐক্য :

পুরীকে পুরুষত্তোম ক্ষেত্র বলা হয় ।এখানকার রথ যাত্রায় দিন কোন ভেদা ভেদ থাকে না । ধনী ,দরিদ্র ,উচু , নিচু ,সৃষ্প ,অসৃষ্প সবাই এক কাতারে ভগবানকে নিয়ে রাজ পথে নামে ।আর আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভগবান সবার এবং সবাই কে একত্রিত হতে ।কারন ভগবান সকলের ,ভগবানে সবার সমান অধিকার ।গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সবাইকে নিয়ে কীর্তন করতে রথযাত্রা অংশ নিতেন । তাছাড়া প্রভাষখন্ড থেকে জানা যায় যে পুরিতে অভক্তু থেকে বিগ্রহ দর্শন করা যাবে না । আগে প্রসাদ থেতে হবে পরে দেব বিগ্রহ দর্শন ।এখন ও এ নিয়ম চলে আসছে ।পুরীকে শঙ্খক্ষেত্র ও বলা হয় কারন মানচিত্রে এক শঙ্খের মত দেখতে লাগে ।

এটা অতি সংক্ষেপে বর্ননা করলাম ।সকলে ভাল থাকুক জগন্নাথ দেবের কৃপা প্রাপ্ত হোক ,এই
প্রার্থনা ।সবাই কে আবার ও রথযাত্রার শুভেচ্ছা ।

জয় জগন্নাথ ,জয় সুভদ্রা ,জয় বলরাম ।

Written by:  Agni Sampad
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।