১৩ মার্চ ২০১৭

শ্রীকৃষ্ণের প্রচীন নগরীর হদিশ মিলল জলের তলায়! স্বীকৃতি পুরাতত্ত্ব বিভাগের

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেবের অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করেন না? কিন্তু এবার থেকে বিশ্বাস করতে হবে। শুধু তাই নয়। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসটাও নতুন করে লেখার হয়তো সময় এসেছে। পুরাণকে কল্পলোকের গল্পকথা ‌যাঁরা মানেন আসলে ‌যে তা ইতিহাসেরই প্রতিচ্ছবি এ কথা বলাই ‌যায়। অনেকে ধন্ধে রয়েছেন জলের তলায় থাকা প্রাচীন দ্বরকা নগরী কি আসলে বিষ্ণুলোক?
বহু গবেষক মনে করেন, ভারতের অন্যতম মহাকাব্য মহাভারত সত্যি ঘটনা, তার চরিত্র, কাহিনি বিন্যাস রাজনীতি আসলে সমাজ থেকেই নেওয়া, ‌তার জন্যই এই মহাকাব্য অনেকটাই সমকালীন হয়ে রয়েছে সহস্রাব্দ ধরে।
মহাভারত বা পুরাণের সূত্র মতে, পাণ্ডবদের হস্তিনাপুর জয়ের পর, শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব মথুরার পরিবর্তে দ্বারকা শহরে থাকতে শুরু করেন। ‌যা অধুনা গুজরাটে অবস্থিত। কিন্তু এই দ্বারকা নগরী আসলে প্রাচীন দ্বারকা নয়। এটা একটা ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ। শ্রীকৃষ্ণের নগরী দ্বারকা বর্তমানে রয়েছে জলের তলায়। আর তার হদিশ মিলেছে সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে। গুজরাটের আরব সাগরের পশ্চিমে লম্বায় ১৫ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে ছিল প্রাচীন দ্বারকা নগরীর অস্তিত্ব। ‌যার ঐতিহাসিক প্রমাণ্য তথ্য পাওয়া গিয়েছে হালে।




প্রচীন নগরীর ‌পুরো কাঠামো ইমারৎ, অট্টালিকার স্তম্ভ, গ‌ৃহস্থের ব্যবহা‌র্য যে সমস্ত জিনিস জলের তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার C14 কার্বন ডেটিং প্র‌যুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই সমস্ত জিনিসই প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার বছরের পুরনো। অর্থাৎ এতদিন সাড়ে চার হাজার বছরের সিন্ধু সভ্যতাকে ধরে ইতিহাস তার পথ চলা শুরু করেছিল। কিন্তু এই নয়া তথ্য সেই ইতিহাসকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। মহাভারতকে ‌যদি ২৫০০ বছর আগেকার ঘটনা ধরা হয়, তার মানে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী তার থেকেও কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন।
কী ভাবে মিলল এই নগরীর খোঁজ? ভারতের ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ওসেন টেকনোলজি সমুদ্র দূষণ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। অত্যাধুনিক স্ক্যানার ‌যন্ত্র সোনার, ‌যা জলের তলায় বহু নীচ প‌র্যন্ত শব্দ তরঙ্গের বিম পাঠাতে পারে। সেই ‌যন্ত্র মারফৎ জানতে পারে, জলের প্রায় ১২০ ফুট নীচে একটি প্রকাণ্ড জ্যামিতিক কাঠামো রয়েছে। তারই খোঁজ চালাতে গিয়ে গবেষকদের চোখ কপালে ওঠে। উঠে আসে বিশাল এক প্রচীন নগরীর তথ্য। সময়কাল পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু জিনিস, ‌যার থেকে ‌জানা ‌যায়, এই কাঠামো তৈরি হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার বছরেরও আগে।আন্তর্জাতিক ইতিহাস গবেষকদের দাবি, মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে পুরনো ব‌ৃহৎ নগর বলে বিশ্ব ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এই আবিষ্কার বিশ্ব ইতিহাসের পাতাকেই ঘেঁটে দিয়েছে। নতুন করে ইতিহাস লেখার প্রয়োজন রয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মত, সময়ের সঙ্গে প্রকৃতি তার রূপ পরিবর্তন করেছে। ঠিক ‌যে ভাবে টেথিস সাগর সরে গিয়ে হিমালয়ের জন্ম নিয়েছে, ঠিক তেমনই আরব সাগর স্থান পরিবর্তন করায় একটা ব‌ৃহৎ প্রাচীন নগরী জলের তলায় চলে গিয়েছে। ‌যা বহু বছর ধরে মানুষের কাছে অধরা ছিল। তবে এখন ‌যা প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার উপর ভর করে আরও গবেষণা চালাতে হবে। ‌যে ইতিহাস মিলেছে তাকেই মাইল ফলক ধরে চললে ভুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এখানে একটা কথা উল্লেখ্য, একাংশ পৌরাণিক গবেষকদের মত, পুরাণে বলছে, ক্ষীরপাই সমুদ্রের গর্ভে শেষনাগের উপর অনাদি অনন্তকাল ধরে অধিষ্ঠান করছেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু সঙ্গে নারায়ণী। তাহলে কি এই আরবসাগরই পুরাণের ক্ষীরপাই? ‌যেখানে সলিল সমাধিতে রয়েছে বিষ্ণুর অন্যতম অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রাচীন বাসভূমি। তাহলে কি এই প্রাচীন দ্বারকা নগরী আসলে বিষ্ণুলোক? মানুন বা মানুন পুরাণ শুধু কল্পনার গল্প বলে না, হয়তো তার রহস্য উন্মোচন হয়, বহু বছর বাদে। ঈশ্বর ‌যে আছেন তার প্রমাণ দেন প্রকৃতিক গর্ভে লুকিয়ে থাকা অস্তিত্বে। তাইতো কখনও কখনও বিজ্ঞানও নিজের কাছে হেরে ‌যায়। আজ বিজ্ঞানের কাছে ‌যা সত্যি আগামিকাল তা মিথ্যে হয়ে দাঁড়ায়।

Share:

1 Comments:

Unknown বলেছেন...

কোথায় কখন কে হিন্দুধর্মের এই রহস্য আবিস্কারকরবেন ভগবানই জানান।
হবে হয়ত যখন উনি স্বয়ং নিজেকে ধরা দিবেন। আমাদের অপেক্ষায় থাকতেহ!

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।