• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৩ এপ্রিল ২০১৭

জানতে হবে জানাতে হবে :::: শঙ্খ কি এবং কেন ???


No automatic alt text available.
নিত্যপূজায়, পার্বণে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী বিশেষ কিছু উপাচার ব্যবহৃত হয়ে থাকে যার মধ্যে শঙ্খ অন্যতম। শঙ্খ হল এক ধরণের সামুদ্রিক শামুক। এর বৈজ্ঞানিক নাম “turbinella pyrum “। এটি হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি ধর্মে পূজার উপাচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

হিন্দু ধর্মমতে শঙ্খঃ

পবিত্র সনাতন ধর্মে শঙ্খ ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক। একে বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গী হিসেবেও পূজো করা হয়। সৃষ্টির শুরুতে সমুদ্রগর্ভ হতে, পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু ও স্বর্গীয় দেবতাদের তৈরী ঘূর্ণাবর্তের মধ্য থেকে অস্ত্ররূপে শঙ্খকে হাতে ধরে আবির্ভাব হয় ভগবান বিষ্ণুর। অপরদিকে শঙ্খ ধন ও প্রতিপত্তির দেবী মা লক্ষীর আব্রু। “ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ” মতে, শঙ্খ ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠানকারী মন্দির।

২.২ পূজো-অর্চনায় শঙ্খের ব্যবহারঃ

আরতিতে দুই ধরণের শঙ্খ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি পূজোর পূর্বে শঙ্খনাদ ধ্বনি উচ্চারনে আর অন্যটি পূজোর সামগ্রী হিসেবে প্রনিত্য পূজো, য়োজন হয়। কিন্তু কখনোই পূজোর আগে বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত শঙ্খ পূজোর কাজে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

“বরাহ পুরাণ” স্পষ্ট ভাবে বলেছে, কখনই মন্দিরের দ্বার শঙ্খ ধ্বনির উচ্চারণ ব্যতীত খোলা উচিৎ নয়। বামাবর্তী শঙ্খ বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়।

যেহেতু শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খ ব্যবহার নিষিদ্ধ, তাই এগুলো কালো জাদু, যাকে বলা হয় “অঘোরী বিদ্যা” কিম্বা অপদেবতার আরাধনায় কাজে লাগানো হয়।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবসময় মনে রাখা উচিৎঃ

ক) যে শঙ্খ ব্যবহার করা হয়, সেটা কখনোই পূজোর শঙ্খ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
খ) শঙ্খ বাজাবার পর সেটা ধুয়ে রাখা জল কখনোই দেব-দেবীকে অঞ্জলী দেয়া চলবে না।
গ) কখনোই পূজোর কাজে দুক) বাজানোর কাজে টি শঙ্খ রাখা যাবে না।
ঘ) কোনোক্ষেত্রেই শিব পিন্ডিকে নিত্যপূজো চলাকালীন শঙ্খ দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না।
ঙ) দেবাদিদেব মহাদেব এবং সূর্যদেবের স্নানের কাজে কখনোই শঙ্খ ব্যবহার করা যাবে না।

শঙ্খের ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক উপকারিতাঃ

১) শঙ্খকে ওম ধ্বনির উৎপাদক বলা হয়।

২) শঙ্খ আনে সুনাম, দীর্ঘায়ু আর যশ; দূর করে সকল পাপ, ক্লেশ, উৎপন্ন করে পবিত্র জলের প্রস্রবণ।

৩) একবার শঙ্খ বাজালে যে ধ্বনি উৎপন্ন হয় তা থেকে তিন ধরণের শক্তি নির্গত হয়। একটি হল “চৈতন্য”। এই শক্তি বৃত্তাকারে শাঁখের খোলোসের মধ্যভাগ হতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আরেকটি হল “ধ্যান” যা তির্যক সরলরৈখিক পথে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আর সর্বশেষ শক্তিটি হল “আনন্দ” যেটা ক্রমান্বয়ে শঙ্খের মধ্যভাগ হতে ধীরে ধীরে সবার অন্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

৪) প্রকৃতিতে প্রধানত তিন ধরণের শক্তি তরঙ্গ থাকে। এই তরঙ্গগুলোই হল সমগ্র সৃষ্টি জগতের নির্মাণ তন্তু। এদের মধ্যে একটি হল “সত্যবাদ তরঙ্গ” আর বাকী দুটি “রাজসিক (অহঙ্কার অর্থে) তরঙ্গ” এবং “তমসিক (দুষ্প্রবৃত্তি) তরঙ্গ”। এই প্রতিটি তরঙ্গের মধ্যে পাঁচ ধরণের মহাজাগতিক উপাদান থাকে। এরা হল “ভূমি”, “জল”, “আগুন”, “বায়ু” এবং “ইথার”। সত্যবাদ, রাজসিক এবং তমসিক তরঙ্গের সংখ্যা এই পাঁচটি উপাদানের ভিত্তিতে যথাক্রমে ১৫০ টি, ২০০ টি এবং ১৫০ টি (সত্যবাদ তরঙ্গের বিপরীত অনুক্রমে বণ্টিত)। রাজসিক আর তামসিক তরঙ্গদ্বয় সত্যবাদ তরঙ্গকে মন্দিরের পরিবেশে প্রবেশে বাধা দেয়। শঙ্খনাদ রাজসিক এবং তামসিক তরঙ্গদ্বয়কে প্রতিহত করে মন্দিরের পরিবেশ, সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মাঝে সত্যবাদ শক্তিকে প্রবেশ করায় যা মনের সব অহংবোধ, জড়তা, আঁধার কেটে সবকিছুকে পবিত্র করে। আবার শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খে খাঁজগুলো অসম ভাবে বণ্টিত থাকে, যার দরুন এই শঙ্খ বাজালে সত্যবাদ তরঙ্গের ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে রাজসিক আর তমসিক তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে কম্পাঙ্ক বেড়ে যায়, অর্থাৎ তীব্রতা বাড়ে।

৫) “যর্যুবেদ” এবং আধুনিক বিজ্ঞান এর ভাষ্যমতে শঙ্খ থেকে উৎপন্ন কম্পন যে তরঙ্গের সৃষ্টি করে তা বাতাসের সাথে মিশে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।

৬) নিয়ম মাফিক শঙ্খ বাজালে, বাদকের মস্তিষ্কের গোড়ার সুষুম্না কাণ্ড সতেজ থাকে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং রাজসিক ও তমসিক তরঙ্গের অন্তর্গত তেজ ও বায়ুর উপাদানগুলো সাম্যাবস্থায় থাকে।
৭) আয়ূর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থায় শঙ্খচূর্ণ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। শঙ্খ চূর্ণ ক্যালসিয়া, ম্যাগনেসিয়াম এবং লৌহ ধারণ করে যা পেটের পিড়া দূর করে পরিপাক ব্যবস্থাকে সচল রাখে।

৮) শঙ্খের সাথে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সমাহারে তৈরী বড়ি “শঙ্খবতী” যা “ডিসপেপসিয়া” নামক অন্ত্রের রোগের চিকিৎসায় ফলদায়ক। এটি বাত, পিত্ত দমন এবং সৌন্দর্য ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

৯) কিছু কিছু শঙ্খ মুক্তা তৈরী করে।
Share:

বিথঙ্গল আখড়া



হবিগন্জের বানিয়াচং সদর থেকে প্রায় ১১ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে বিথঙ্গল গ্রামে সগৌরবে টিকে আছে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের নান্দনিক আখড়া। ধারনা করা হচ্ছে খৃস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে রামকৃষ্ণ গোস্বামী সমগ্র উপমহাদেশ সফর করে বিথঙ্গলে এসে এ আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন।
Image may contain: outdoor



বিথঙ্গলের আখড়ার মতো এমন আখড়া বাংলাদেশে খুব সম্ভব দ্বিতীয়টি নেই। এর সৌন্দর্য, শৈল্পিক সুষমা খুব সহজেই পর্যটকদের বিমুগ্ধ করতে সক্ষম। আখড়াটি নির্মাণ করা হয়েছে পোড়া মাটির ইট এবং অসংখ্য চিত্র পলক দিয়ে। ২৪ হাত লম্বা, ১২০ টি কোঠা, ত্রিখিলান প্রবেশ পথ সম্বলিত আখড়ার নিকটে ৮০ ফুট উচ্চতার একটি মঠ রয়েছে।

মঠের সামনে আছে একটি নাট মন্দির। পূর্ব পার্শ্বে ভান্ডার ঘর, দক্ষিণে ভোগ মন্দির। জানা গেছে, আখড়ার ১২০টি কক্ষে এক একজন বৈষ্ণব বাস করতেন। এই আখড়াকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি উৎসব পালিত হয়। এখানকার দর্শণীয় বস্তুর মধ্যে রয়েছে ২৫ মন ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি, পিতলের সিংহাসন, রৌপ্য নির্মিত পাখি, মুকুট, কষ্টি পাথরের মূর্তি।
Share:

এই পৃথিবী কি পূর্বে ভারতবর্ষ ছিল ??

No automatic alt text available.কখনো কি প্রশ্ন জাগে না যে, বিচিত্র রকমের স্থান বা দেশ কেন হল । কেনই বা প্রতিটি দেশ ইউরোপ আফ্রিকার মত প্রাচুর্যময় নয় । কোথাও সমৃদ্ধশালী কোথাও কোন প্রাচুর্যের ছোঁয়া নেই । এর পেছনে কিই বা কারণ থাকতে পারে । আরও একটা প্রশ্ন থাকতে পারে তা হল এসমস্ত বিচিত্র দেশের নামকরণ নিয়ে । 

তাই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বৈদিক শাস্ত্র থেকে এর সঠিক রহস্য গ্রুপের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল । বৈদিক শাস্ত্র মতে এক সময় সমগ্র পৃথিবীকেই ইলাবৃত বর্ষ বা ভারতবর্ষ নামে ডাকা হত । এই পৃথিবীর শাসনভারের দায়িত্ব ছিল ইতিহাস বিখ্যাত অনেক অনেক রাজাদের হাতে ।

এক সময় ধীরে ধীরে সেই ভারতবর্ষ ভেঙ্গে গড়ে সাতটি পৃথক মহাদেশ এবং বহু দেশ । মূলত, ককেশাস নামক স্থানকে বলা হয় শ্বেত মানবদের উৎপত্তি উৎস হিসেবে । বর্তমান বিশ্বের পশ্চিমা জগতের যেসব সাদা লোকদের দেখতে পাওয়া যায় তাদের উত্তরসূরীদের বসতি ছিল এই ককেশাস (coucasus) নামক স্থানে ।

জিউস, মোসলেম এবং খ্রিষ্টানদের মতে এ স্থানেই ছিল স্বর্গের উদ্যান এটি হল আব্রাহামের বসতভূমি । যেটিকে ইন্দো ইউরোপীয়ান ককেশিয়ানদের পিতৃভূমি হিসেবে মনে করা হয় । তৈত্তিরীয় (Aitareya) উপনিষদে এ বিষয়ে বলা হয়েছে । ব্রহ্মার পুত্র মরিচীর পুত্র ছিল কশ্যপ মুনি । ১২০ মিলিয়ন বছর পূর্বে কশ্যপ মুনি ইন্দো-ইউরোপীয়ানদের পিতা হয়েছিলেন ।

এসমস্ত ইন্দো-ইউরোপীয়ানদের কিছু পৃথিবীর পশ্চিমে গেল আর কিছু গেল পূর্বে । কশ্যপ মুনি স্বয়ং ক্যাসপিয়ান সাগরের নিকটে ধ্যান মগ্ন হয়ছিল । যার বর্তমান নামকরণ অর্থাৎ ক্যাসপিয়ান সাগর ঐ কশ্যপ মুনির নামেই নামকরণকৃত । সূর্যদেব বিবস্বান ছিলেন কশ্যপ মুনির পুত্র যার স্ত্রী ছিলেন অদিতি । সূর্যদেবের অস্থিত্ব যে পশ্চিমা দেশেও ছিল তার প্রমাণ এখন পৃথিবীর অনেক স্থানে সূর্যদেবতাকে পূজার প্রচলন ।

কশ্যপ মুনি এবং দিতি থেকে সৃষ্ট দৈত্যরা তখন ইউরোপ জুড়ে বিস্তার লাভ করেছিল । বর্তমানের টাইটানস (Titans) এবং টিউটনস (Teutons) ডাচ এবং ডিউটস্চল্যান্ড (Deutschland) এ নামগুলো দেয়া হয়েছে ‘দৈত্য’ শব্দ থেকে । এ থেকে দৈত্যদের অবস্থান যে একসময় ছিল তার প্রমাণ মেলে । ব্রহ্মার আরেক পুত্র অত্রি থেকে সোম বা চন্দ্র হয় । চন্দ্রের পুত্র বুদ্ধের পুত্র ছিল পুরুরভ ।

এভাবে বংশানুক্রমে আয়ু নহুম এবং পরে যথাতির জন্ম হয় । যথাতির পাঁচ সন্তান ছিল । ‘যদু’ থেকে বেড়ে উঠে যদুবংশ যেখানে কৃষ্ণ বলরাম আবির্ভূত হয় এবং পুরু থেকে বেড়ে উঠে পুরুবংশ (যে বংশে কৌরব এবং পান্ডবরা জন্মেছিল) যারা হল ভীষ্ম, ধৃতরাষ্ট্র, অর্জুন, যুদিষ্টির, ভীম, দূর্যোধন এবং মহারাজ পরিক্ষিত জন্ম নেয় । পুরু তখন বর্তমান মিশর স্থানটি পেয়েছিলেন তার রাজ্যের শাসনভার হিসেবে । পুরুর পুত্র ছিল প্রভির এবং প্রভিরের পুত্র ছিল মানুষ্য (Manasyu) যাকে মেনেস নামে ডাকা হত । যিনি পশ্চিমা ইতিহাসবিদদের মতে মিশরের প্রথম বংশের প্রতিষ্ঠাতা । পুরুর বংশ এভাবে ফারাও রাজা পর্যন্ত অতিবাহিত হয়েছিল ।

মিশরকে অজপতি নামে নামকরন করা হয় । এই অজ জাতের পুত্র ছিল অজপতি । অপরদিকে অজ ছিল ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের পিতামহ রামচন্দ্র আবির্ভূত হয়ছিল সূর্যবংশে, সূর্যদেবের আরেক নাম রবি । ‘র’ তখন মিশরে সূর্য বংশের একটি শাখার অন্তর্গত ছিলেন । সেখানকার রাজা হলেন রামেস । যেটি রাম-ইস ভগবান শ্রী রামচন্দ্র থেকেই নামকরণকৃত । পান্ডব পরিবারবর্গও একসময় মিশর এবং ইউরোপে এসেছিল যা এখন সাগরে নিমজ্জিত হয় । এভাবে পিরামিডের গায়ে বৈদিক সংস্কৃতির ছোঁয়া এখনও দেখতে পাওয়া যায় তার বিবরণ আমি পরবর্তী পোষ্টে দিব ।

পরবর্তীতে তারা বর্তমানের ইসরাইলে গমন করে । যেটিকে বিশ্লেষন করলে দাঁড়ায় ইশ্বরাভলয় (ভূমি) তার অর্থ ইশ্বরের বাসস্থান । সুতরাং ইসরাইল ও তখন বৈদিক সংস্কৃতির সুরে নামকরণকৃত হয়েছিল ।

যযাতির তিনজন পুত্র বর্তমান ভারতের বাইরে যে দুটি রাজ্য পেয়েছিল সেগুলো হল তুর্কি এবং তুর্বাসা । যবনরা পেয়েছিল তুর্কি এবং তুর্বাসা পেয়েছিল ফার্সিয়া ইত্যাদি । মহাভারত অনুসারে (আদিপর্ব ৮৫.৩৪) তুর্বাসা দুর্যোধনের হয়ে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছিল ।

অপরদিকে অনু পেয়েছিল গ্রীক এবং ইতালী । পরশুরামের বংশদূতরাও একসময় মিশরের রাজা ছিলেন । পরশুরাম ও যদু বংশজাত যাদের কিছু ইউরোপ এবং এশিয়াতেও এসেছিল । এর পরবর্তীতে বৈদিক সংস্কৃতির প্রধান নীতি বর্ণাশ্রম ধর্ম বিভিন্ন কারনে হারিয়ে যায় । মহাভারত (আদিপর্ব ১৭৪.৩৮) অনুসারে ভীম এবং সহদেব পুলিন্দ (গ্রীকদের) জয় করেছিল কেননা তার ধর্ম পরিত্যাগ করেছিল এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে বর্তমান ক্ষেত্রেও সংস্কৃতির ব্যবহারটাও অপরিসীম ।

বর্তমান ‘নরওয়ে’ দেশটির নাম সংস্কৃত শব্দ ‘নরক’ থেকে এসেছে । ‘সোভিয়াত’ এসেছে ‘শ্বেত’ থেকে । ‘রাশিয়া’ ‘ঋষি’ থেকে এসেছে, এভাবে সাইবেরিয়া শব্দটিও সংস্কৃত থেকে আগত । ‘স্ব্যান্দিনাভিয়া’ ‘স্কন্দ’ থেকে এসেছে । যিনি দেবতাদের প্রধান কমান্ডার হিসেবে ছিলেন ।

(Viking এবং king) শব্দ দুটি এসেছে সিংহ থেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে যে বৈদিক সংস্কৃতির বিদ্যমান ছিল তার প্রমাণ ইউরোপ জুড়ে আবিষ্কৃত কৃষ্ণ, শিব, সূর্যদেব সহ আরও বিভিন্ন মূর্তি । একসময় দেবতা এবং অসুরদের সঙ্গে প্রায় বার বার যুদ্ধ হয়েছিল । পরে ককেশাসের পূর্বদিক দেবতাদের এবং পশ্চিম দিক অসুরদের দেয় । কিছু অসুর সেখানে অবস্থান করেছিল ।

ময়দানব তখন অসুরদের রাজ ছিলেন । তার স্থায়ী বসতি ছিল আলাতল লোক (ভূমন্ডলের ১০,৮৮,০০০ কি.মি. দক্ষিনে) যেখানে ফ্লায়িং সসার নির্মিত হয় । ময়দানবের অনুসায়ী মগরা তাদের সেই বসতির স্থানকে ‘অমরক’ (Amaraka) নামে ডাকত । কেননা অসুরেরা প্রয়ই মনে করে মূত্যু তাদের কিছুই করতে পারবে না । তাই তারা তাদের মাতৃভূমিকে স্বর্গ মনে করত । আর এজন্যই এই নাম পরবর্তীতে আমেরিগো ভেসপুচ্চি (Amerigo vespucci) এটিকে বর্তমানে আমেরিকা নামে পুনস্থাপন করে ।

এভাবে বংশগত দিক বিবেচনা করলে আমরা সবাই শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত । কেননা ব্রহ্মা উৎপত্তির উৎস তাই বলে । আর এ সমগ্র পৃথিবী যে একদম পুরোটাই ভারতবর্ষ ছিল তারও প্রমান খুব সহজেই পাওয়া যায় শাস্ত্র থেকে । উপরোক্ত গবেষণামূলক প্রতিবেদন থেকে অনেক গবেষকগণ স্বীকার করতে এখন আর দ্বিমত করে না ।

কার্টেসীঃ Susanta banda



(বিঃ দ্রঃ- এই প্রতিবেদনটি ছাপা হয় টাইম ম্যাগাজিন ও হিন্দু নিউসে……… তার বঙ্গানুবাদটি এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরা হল ।) http://www.gauranga.org/vedic.htm
Share:

চিন্ময় জগতের দূত


Image may contain: one or more people
পৃথিবী যখন দ্বন্দ্ব, সংঘাত, যুদ্ধ, সন্ত্রাসে বিক্ষুদ্ধ, তিমির রাত্রির অবসানে প্রভাতকিরণছটার প্রকাশের মতো অপ্রাকৃত জগতের বাণী বহন করে নিয়ে এলেন চিন্ময় জগতের দূত শ্রীল প্রভুপাদ । ভগদ্বিমুখ অন্ধ জড়বাদী মানবসমাজের সৃষ্টি করলেন এক পারমার্থিক নবজাগরণের ইতিহাস ।
গুরুদেবের আদেশ লাভ

শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৮৯৬ সালে কোলকাতায় আবির্ভূত হয়েছিলেন । ১৯২২ সালে কোলকাতায় তিনি তাঁর গুরুদেব শ্রীল ভক্তিসিধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের সাক্ষাৎ লাভ করেন । শ্রীল ভক্তিসিধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ছিলেন ভক্তিমার্গের বিদগ্ধ পন্ডিত এবং ৬৪ টি গৌড়ীয় মঠের (বৈদিক সংঘের) প্রতিষ্ঠাতা । তিনি এই বুদ্ধিদীপ্ত, তেজস্বী ও শিক্ষিত যুবকটি সারা বিশ্বে ইংরেজী ভাষায় বৈদিক জ্ঞান প্রচারের কাজে জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেন । শ্রীল প্রভুপাদ এগার বছর ধরে তাঁর আনুগত্যে বৈদিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে ১৯৩৩ সালে এলাহবাদে তাঁর কাছে দীক্ষা পাপ্ত হন ।

১৯২২ সালে শ্রীল ভক্তিসিধান্ত সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল প্রভুপাদকে ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞান প্রচার করতে নির্দেশ দেন । পরবর্তীকালে শ্রীল প্রভুপাদ ভগবদগীতার ভাষ্য লিখে গৌড়ীয় মঠের প্রচারের কাজে সহায়তা করেছিলেন । ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনি এককভাবে একটি ইংরেজী পাক্ষিক পত্রিকা ‘Back To Godhead’ প্রকাশ করতে শুরু করেন । এমনকি তিনি নিজের হাতে পত্রিকাটি বিতরণও করতেন । পত্রিকাটি এখনও সারা পৃথিবীতে নানা ভাষায় তাঁর শিষ্যবৃন্দ কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হচ্ছে ।
জীবনব্রত সাধনের প্রস্তুতি

১৯৪৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদের দার্শনিক জ্ঞান ও ভক্তির উৎকর্ষতার স্বীকৃতিরূপে ‘গৌড়িয় বৈষ্ণব সমাজ’ তাঁকে “ভক্তিবেদান্ত” উপাধিতে ভূষিত করেন । ১৯৫০ সালে তাঁর ৫৪ বছর বয়সে শ্রীল প্রভুপাদ সংসার জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে চার বছর পর ১৯৫৪ সালে বাণপ্রস্থ আশ্রম গ্রহণ করেন এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন, প্রচার ও গ্রন্থ রচনার কাজে মনোনিবেশ করেন । তিনি বৃন্দাবনে শ্রীশ্রীরাধা-দামোদর মন্দিরে বসবাস করতে থাকেন এবং অতি সাধারণভাবে জীবনযাপন করতে শুরু করেন । ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ।

তাঁর গুরুদেবের আদেশ পালন-----

শ্রীশ্রীরাধা-দামোদর মন্দিরেই শ্রীল প্রভুপাদের শ্রেষ্ঠ অবদানের সূত্রপাত হয় । এখানে বসেই তিনি অপ্রাকৃত মহাগ্রন্থ শ্রীমদভাগবতের অনুবাদ কর্মের সূচনা করেন । এখন সেটি ১৮ টি বিপুলায়তন খন্ডে প্রকাশিত হয়ে সারা পৃথিবীতে বিতরিত হচ্ছে ও কৃষ্ণ চেতনার উন্মেষ সাধন করছে ।

১৯৬০ সালে দিল্লীতে ‘পরলোকে সুগম যাত্রা’ নামক প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ ।
১৯৬২ সালে দিল্লীতে শ্রীমদভাগবতের ১ম স্কন্ধের ১ম খন্ড ইংরেজীতে প্রকাশ ।

১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ কপর্দকহীন অবস্থায় আমেরিকায় নিউইয়র্ক শহরে পৌছান । প্রায় এক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করার পর তিনি ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণাবনামৃত সংঘ বা ইসকন । তাঁর সযত্ন নির্দেশনায় এক দশকের মধ্যে গড়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী শতাধিক আশ্রম, বিদ্যালয়, মন্দির ও পল্লী-আশ্রম । বিশ্বের সমস্ত দেশের বুদ্ধিশীল মেধাবী তরুন তরুনীরা এই আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করতে থাকেন ।

১৯৬৬ সালের শেষে ইসকনের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ।
১৯৬৭ সালে ৯ জুলাই পাশ্চাত্যে (সানফ্রান্সিসকো) প্রথম রথযাত্রা উৎসব পালন ।

১৯৬৮ সালে শ্রীল প্রভুপাদ পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পার্বত্য-ভূমিতে গড়ে তোলেন নব বৃন্দাবন, যা হল বৈদিক সমাজের প্রতীক । এই সফলতায় উদ্ধুব্ধ হয়ে তাঁর শিষ্যবৃন্দ পরবর্তীকালে ইউরোপ ও আমেরিকায় আরও অনেক পল্লী-আশ্রম গড়ে তোলেন ।

১৯৬৯ সালে ২৩ জুন লস এঞ্জেলেসে ১ম রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা, যা কয়েকটি টিভি চ্যান্যালে সরাসরি দেখানো হয় যার মধ্যে অন্যতম বি.বি.সি ।

১৯৬৯ সালে ১৪ ডিসেম্বর লন্ডনে শ্রীশ্রী রাধা-লন্ডনেশ্বর বিগ্রহ স্থাপন ও মন্দির উদ্বোধন ।
১৯৭০ সালে সমগ্র বিশ্বের ইসকন পরিচালনার জন্য গভর্নিং বডি কমিশন (জিবিসি) গঠন ।
১৯৭১ সালে জুনে মস্কো পরিদর্শন এবং সেখানে কৃষ্ণভাবনার বীজ রোপন ।

শ্রীল প্রভুপাদের অনবদ্য অবদান হল তাঁর গ্রন্থাবলী । তাঁর রচনাশৈলী আধুনিক, কিন্তু গাম্ভীর্যপূর্ণ ও প্রাঞ্জল এবং শাস্ত্রানুমোদিত । সেই কারনে বিদগ্ধ সমাজের তাঁর রচনাবলী অত্যন্ত সমাদৃত এবং বহু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আজ সেগুলি পাঠ্যরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে । বৈদিক দর্শনের এই গ্রন্থাবলী প্রকাশ করছেন তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গ্রন্থ প্রকাশনী সংস্থা ‘ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট’ । শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের সপ্তদশ খন্ডের তাৎপর্যসহ ইংরেজী অনুবাদ আঠার মাসে সম্পূর্ণ করেছিলেন । বিশ্বের নানা ভাষায় তা অনূদিত হয়েছে ।

১৯৭২ সালে আমেরিকার ডালাসে গুরুকুল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বৈদিক শিক্ষা-ব্যবস্থায় প্রচলন করেন । ১৯৭২ সালে মাত্র তিনজন ছাত্র নিয়ে এই গুরুকুলের সূত্রপাত হয় এবং আজ সারা পৃথিবীর ১৫ টি গুরুকূল বিদ্যালয় ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ২০০০ জন ।

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীল প্রভুপাদ সংস্থার বিশ্ব-মুখ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করেন ১৯৭২ সালে । এখানে ৫০ হাজার ভক্ত সমন্বিত এক বৈদিক নগরীর তিনি সূচনা করেন । এখানে বৈদিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটি বর্ণাশ্রম কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনাও তিনি দিয়ে গেছেন । শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশে বৈদিক ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত এই রকম আর একটি আশ্রম গড়ে উঠেছে বৃন্দাবনের শ্রীশ্রীকৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে, যেখানে আজ দেশ-দেশান্তর থেকে আগত বহু পরমার্থী বৈদিক সংস্কৃতির অনুশীলন করেছেন । তাঁর সবচেয়ে বিস্ময়কর পরিকল্পনা রূপায়িত হতে চলছে শ্রীমায়াপুরে । ৩৬ তলা সমান উঁচু বৈদিক গ্রহমন্ডল মন্দির (বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির) হবে পৃথিবীর এক আশ্চর্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন, (যা এখন কাজ চলছে শেষ হবে ২০১৫-১৬ সালে) এবং পৃথিবীর মানুষকে মহাপ্রভুর বাণী গ্রহনে আকৃষ্ট করবে ।


১৯৭৫ সালে ইসকনের বিজ্ঞান গবেষণামূলক শাখা ‘ভক্তিবেদান্ত ইনিস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন ।

১৯৭৭ সালে এই ধরাধাম থেকে অপ্রকট হওয়ার পূর্বে শ্রীল প্রভুপাদ সমগ্র জগতের কাছে ভগবানের বাণী পৌছে দেবার জন্য তাঁর বৃ্দ্ধাবস্থাতেও সমগ্র পৃথিবী ১৪ বার পরিক্রমা করেন । মানুষের মঙ্গলার্থে এই প্রচার-সূচীর পূর্ণতা সাধন করেও তিনি বৈদিক দর্শন, সাহিত্য ধর্ম ও সংস্কৃতি সমন্বিত ৮০ টি গ্রন্থাবলী রচনা করে গেছেন, যার মাধ্যমে এ জগতের মানুষ পূর্ণ আনন্দময় এক দিব্য জগতের সন্ধান লাভ করবে । তিনি এই জড়বাদী ইন্দ্রিয়তৃপ্তি কেন্দ্রিক সভ্যতায় এক নতুন জীবন-প্রণালী, এক পরিশুদ্ধ সুন্দর পবিত্র জীবনধারা সারা পৃথিবীতে প্রবর্তন করে গিয়েছেন, যা আধুনিক বিশ্বে এক নতুন পারমার্থিক রেনেসাঁ বা নবজাগরনের সূত্রপাত করেছে । এটি মহীরূহের আকার গ্রহণ করে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত হবে, পৃথিবীর মানুষ হবে প্রকৃতই সুখী – শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ।

শ্রীল প্রভুপাদের অবিস্মরণীয় অবদানের কিছু দৃষ্টান্ত------

# সারা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের প্রধান প্রধান শহর-সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০০ এর বেশি কেন্দ্র, মন্দির, কৃষি খামার ।

# পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন গ্রহণ করেছেন; কদাভ্যাস ত্যাগ করে ভক্তিযোগ অনুশীলন করছেন । (আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি তথ্য অনুসারে শুধু আমেরিকাতেই এই সংখ্যা কয়েক লক্ষ, আর এখন সবচেয়ে বেশি প্রচার ও ভক্ত হচ্ছে রাশিয়াতে) ।

# নিউইয়র্কের ‘ভক্তিবেদান্ত আর্কাইভ্স’-এ সংগ্রহীত হয়েছে শ্রীল প্রভুপাদের নানা সময় নানা দেশে প্রদত্ত ২৫০০ ঘন্টারও বেশি ইংরেজী অডিও ভাষণ, ৫০ ঘন্টা ভিডিও, ৩০ হাজারেরও বেশি নানা শিল্পীর অংকিত কৃষ্ণভাবনাময় চিত্রকর্ম ছবি ।

# শ্রীল প্রভুপাদের অনবদ্য ভাষা-সমন্বিত ইংরেজী ভগবদগীতা অ্যাজ ইট ইজ এখন ১০৫ টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা পৃথিবীর প্রত্যেক অঞ্চলে পৌছাচ্ছে । ১৯৯৬ সালের পূর্বেই পাঁচ কোটিরও বেশি সংখ্যায় বিতরিত হয়ে ইতিমধ্যেই 'ভগবদগীতা অ্যাজ ইট ইজ' পৃথিবীর বেস্
ট সেলার হিসেবে গিনেস বুকে স্থান করে নিয়েছে । পৃথিবীর বহু নামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।

# শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থাবলী প্রকাশিত হয় ‘ভক্তি বেদান্ত বুক ট্রাস্ট’ বা বি. বি. টি থেকে, সেটি এখন পৃথিবীর বৃহত্তম প্রকাশনা সংস্থা । যা প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭০ সালে ।

সারা পৃথিবীতে ইসকন মন্দির, কেন্দ্র, কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের সাম্প্রতিকতম খবরাখবর, তথ্যাদি জানতে ইন্টারনেটে ইসকনের জনপ্রিয় ওয়েবসাইটwww.krishna.com দেখুন । এর থেকে ইসকনের আরও অনেক আকর্ষণীয় ওয়েবসাইটর ঠিকানা পাওয়া যাবে ।

তাছাড়া ইসকন চট্টগ্রামের ওয়েবসাইটর ঠিকানাwww.iskconctg.org

ইসকন বাংলাদেশ www.iskconbd.org

ইসকন সিলেট www.iskconsylhet.com

আর এই প্রথম ই-পারমার্থিক পত্রিকা পড়তে পারেন সম্পূর্ণ বাংলায় www.caitanyasandesh.com

আর google এ iskcon দিয়ে সার্চ দিলে হাজার হাজার ওয়েবসাইটর ঠিকানা বের হবে ।


লিখেছেন সুশান্ত বন্দ
Share:

সতীদাহ প্রথা ও বিধবা বিবাহ


মধ্যযুগে যখন ধর্মব্যবসায়ী এবং বিদেশীদের চক্রান্তে সনাতন ধর্মালম্বীদের বেদজ্ঞান হয়ে পড়েছিল অতি দুষ্প্রাপ্য তখন সমাজে অনুপ্রবেশ করে সতীদাহ প্রথা নামক ঘৃন্য প্রথা।এছাড়াও বিধবা নারীদেরকেও পুনরায় বিয়ের সুযোগ না থাকায় অনেক নিপীড়িত হতে হয়,তারা যেন ছিল এক বোঝা।তবে রামমোহন রায় এবং বিদ্যাসাগর দের মত মহান ব্যক্তিত্বরা বেদ এর মাধ্যমে এসব প্রথাকে ভুল প্রমান করেন এবং হিন্দু... সমাজ রক্ষা পায় এক কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে।

অধুনা কিছু নাস্তিক ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মধ্যে কিছু কুচক্রী লোক বেদএর কিছু মন্ত্র এর রেফারেন্স দেয় সতীদাহ প্রথা এর পক্ষে হিসেবে দাবীকরে।তারা অথর্ববেদ ১৮.১.১-২এর রেফারেন্স দেয়।মজার বিষয় হল রেফারেন্সটা দেখলেই বোঝা যায় যে তারা জীবনেও এই মন্ত্রগুলো পড়ে দেখেনি,কিছু নাস্তিকদের পেইজ থেকে কপি পেষ্ট করেছে মাত্র।কারন দেখা যায় যে ওই মন্ত্র দুইটি সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন তো দুরে থাক,বরং স্বামীর মৃত্যুর পরস্ত্রীর সুখী জীবন নিশ্চিত করতে বলেছে এবং প্রয়োজনে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে।দেখা যাক বেদ এর মন্ত্রগুলো-

অথর্ববেদ ১৮.১.৩

ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।

মর্ত্য-হে মনুষ্য,ইয়ং নারী-এই স্ত্রী,পতিলোকম- পতিলোককে অর্থাত্‍ বৈবাহিক অবস্থাকে,বৃণনা- কামনা করিয়া,প্রেতম-মৃত পতির,অনু-পরে,উপ ত্বা-তোমার নিকট,নিপদ্যতে-আসিতেছে,পুরাণম-স নাতন,ধর্ম্মম- ধর্মকে,পালয়ন্তী-পালন করিয়া,তস্য-তাহা র জন্য,ইহ-এই লোকে,প্রজাম্- সন্তানকে,দ্রবিণং- এবং ধনকে,ধেহি-ধারন করাও

অর্থাত্‍,হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরেতোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।

এই বিষয়ে একই ভাবে তৈত্তিরীয় আরন্যক ৬.১.৩ এ বলা হয়েছে-

ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য প্রেতম।
বিশ্বং পুরাণ মনু পালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।

অর্থাত্‍,হে মনুষ্য!মৃত পতির এই স্ত্রী তোমার ভার্যা।সে পতিগৃহ সুখের কামনা করিয়া মৃত পতির পরে তোমাকে প্রাপ্ত হইয়াছে।কিরুপ ভাবে?অনাদি কাল হইতে সম্পূর্ন স্ত্রী ধর্মকে পালন করিয়া।সেই পত্নীকে তুমি সন্তানাদি এবং ধনসম্পত্তি সহ সুখ নিশ্চিত কর।

পরের মন্ত্রটি দেখি,
অথর্ববেদ ১৮.৩.২(এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে)

উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকংগতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভ সংবভূব।।
নারী-হে স্ত্রী!তুমি, এতত্‍ গতাসুম্-এই গতপ্রান পতির,উপশেষে-শয়ন করিয়া আছ(মায়া ধরে আছ),জীবলোকং অভি উদীর্থ-(মায়া ত্যগ করে) বাস্তবতায় ফিরে এস(জীবলোকে),তব- তোমার,হস্তগ্রাভস্য দিধিষোঃ- পাণিগ্রহনকারী,পত্যুঃ-
পতির সঙ্গে,ইদং জনিত্বম-আবার পত্নীত্ব,অভি সংবভুব-সৃষ্টি হল

অর্থাত্‍,হে নারী!মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তবজীবনে ফিরে এস।পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।

সায়নভাষ্যে এই মন্ত্রের অর্থ দেখা যায় এরকম-
"হে মৃতপতীর পত্নী!জীবিত পুত্রপৌত্রের লোক অর্থাত্‍গৃহের কামনা করে শোক ত্যগ কর।মৃত পতির মায়া ত্যগ কর।তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির স্ত্রী হইবার ইচ্ছায় তুমি নিশ্চিতরুপে অনুসরন কর।

প্রায় একইভাবে তৈত্তিরীয় আরন্যক এ বলা হয়েছে ৬.১.১৪ তে,
"হে নারী!তুমি এই মৃতপতির মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আছ।এই মায়াত্যগ কর।পুনরায় পতি কামনা কর এবং পাণিগ্রহনকারী বিবাহের অভিশাষী এই পতিকে জায়াত্বের সহিত প্রাপ্ত হও"

অর্থাত্‍ মন্ত্রদুটিতে সতীদাহ প্রথার কোন কথাই নেইবরং স্বামী মৃত্যুর পর স্ত্রীকে শোকে মুহ্যমান হয়ে না পড়ে শোকত্যগ করে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে বলা হয়েছে এবং প্রয়োজনে পুনরায় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। — with

courtsy:Bangali Hindu Post

Share:

শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান হওয়া সত্ত্বেও কেন একজন জরা নামক সাধারন মানুষ দ্বারা শরবিদ্ধ হলেন ?


ত্রেতাযুগে রাম অবতারের সময়ে জরা ব্যাধ ছিলেন বালিপুত্র অঙ্গদ । রামচন্দ্র বালি কে বধ করেছিলেন । অঙ্গদ পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন । পরবর্ত
ীতে ভগবান রামচন্দ্রের শরণাগত হয়ে পরম ভক্ততে পরিনত হন । ত্রেতাযুগে সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ না হওয়ায় দ্বাপর যুগে স্বয়ং ভগবান ভক্তের এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেন ।

বিশ্রামরত অবস্থায় যখন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার ডান চরণ কমল নাড়াচ্ছিলেন তখন ব্যধ হরিণ ভেবে তীর নিক্ষেপ করেন ।জরা যখন বুঝতে পারেন যে তিনি স্বয়ং ভগবানকে ভুলে তীর নিক্ষেপ করেন তত্‍ক্ষনাত্‍ তিনি ভগবানের চরনে দন্ডবতত্‍পূর্বক ক্ষমা প্রার্থনা করেন । এর পর জরা ভগবানের ডান পায়ের তীর অপসারন করেন এবং নিকটস্থ পুকুরে সেই চরণ ধৌত করলেন যা বর্তমানে প্রবাস তীর্থক্ষেত্র নামে পরিচিত ।এখনো সেই পুকুর রয়েছে যেখানের জল পবিত্ররূপে গণ্য করা হয় । এরপর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জরাকে দুঃখিত না হওয়ার জন্য বললেন এবং পূর্বজন্মের প্রতিজ্ঞার কথা জরাকে স্মরণ করিয়ে দেন । ঠিক যেন রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের মত ঘটনা ।এরপর ভগবান জরাকে কৃপা করেন এবং তত্‍ক্ষনাত্‍ জরার বৈকুন্ঠ গতিপ্রাপ্ত হয় । এবার শ্রীকৃষ্ণ চর্তভুজ রূপে পরিগ্রহ করে সেই স্থান থেকে কিছু দূর হেঁটে হিরণ নদীর তীরে গেলেন এবং স্বীয় দেহে বৈকুন্ঠে প্রত্যাবর্তন করলেন । অমল পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতে এই লীলার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া রয়েছে ।

আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারনা রয়েছে যে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছিল বা নশ্বর দেহ পোড়ানো হয়েছিল ইত্যাদি । কিন্তু এই তথ্য আদৌ সত্য নয় । শ্রীমদ্ভগবদগীতায় স্বয়ং ভগবান উল্লেখ করেছেন যে , "জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম " -আমার জন্ম কর্ম দিব্য । এখানে স্পষ্টত ভগবানের সব লীলাই দিব্য এবং তার দেহ সচ্চিদানন্দময় যা কোন জড় নশ্বর দেহ নয় । ভগবানের জন্মকর্ম যেখানে বড় বড় সাধু যোগী এবং দেবতারাও বুঝতে সক্ষম নয় সেখানে সাধারন মানুষের আর কি কথা । তাই পরিপূর্ণ হ্বদয়াঙ্গম না করে ভগবানের লীলা বিষয় কোন মন্তব্য করা উচিত নয় ।


Courtesy- Rathyatra
Share:

পুঠিয়া শিব মন্দির, রাজশাহী

Image may contain: sky, outdoor, water and natureপুঠিয়া শিব মন্দির, রাজশাহী

Puthia shiv mandir, rajshahi

পুঠিয়া রাজবাড়ীর প্রবেশপথে পুকুর পাড়ে বড় আকৃতির এ মন্দিরটির নাম শিব মন্দির। পুঠিয়ার রাণী ভুবন মোহিনী দেবী ১৮২৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। 

পুরো মন্দিরের দেয়াল পৌরাণিক কাহিনি চিত্র খচিত। মূল্যবান এ স্থাপনাটি দীর্ঘ দিন পড়ে ছিল অযত্ন আর অবহেলায়। তবে সুখের কথা হলো বর্তমানে এটির সংস্কারের কাজ চলছে। এশিয়ার অন্যতম বড় শিব মন্দির বলা হয় পুঠিয়ার এ মন্দিরটিকে। এর লাগোয়া পূর্ব পাশে গোল গম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।
Share:

সনাতন ধর্মের ভয়ংকর দিক হল .... অনেক গুরু

No automatic alt text available.
শুধু বসে বসে মালা চাপলেই সনাতন ধর্মকে রক্ষা করা যাবে না। বসে বসে মালা চাপার জায়গাত্ত তো (মন্দিরগুলো) অন্যরা বেদখল করে নিচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে যে করেই হোক মান্দির গুলো রক্ষা করতে হবে। তাছাড়া সনাতন ধর্মের প্রধান ভিত্তি হল ... সনাতন ধর্মের অনুসারী সকল ভক্তবৃন্দ। দিন দিন আমাদের এ ভিত্তিত্ত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে।

দিন দিন সবাই আমরা বিভিন্ন মত ত্ত পথে বিভক্ত হতে চলেছি। প্রতিদিন ব্যাঙ-এর ছাতার মত নতুন নতুন গুরু'র আবির্ভাব ঘটছে। সবাই আমাদেরকে বিভিন্ন গ্রুপ সাব-গ্রুপ-এ বিভক্ত করে চলেছেন। শিষ্যের দেয়া টাকা-পয়সা খেয়ে গুরুরা পেট মোটা করে খুব আরামেই দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু মন্দির রক্ষা, একতা, ধর্মান্তর প্রতিরোধ ..... এগুলোর জন্য কোন গুরু-ই কাজ করেন না। অথচ এক কাজগুলো তাদেরই করার কথা !!

আরেকটি ভয়ংকর দিক হল .... অনেক গুরু আমাদের গীতা, বেদ ..... এগুলো প্রচার না করে নিজের তৈরি মনগড়া ছন্দ প্রচারে ব্যস্ত। এতে করে সনাতন ধর্মের বিকৃতি ঘটছে .... একতা নষ্ট হচ্ছে।

Pritilata Waddedar
Share:

হিন্দু আমার মন, বল জয় হিন্দু জয়।

No automatic alt text available.হিন্দু আমার মন, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু আমার পণ, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার ধর্ম, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু আমার কর্ম, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার অস্তিত্ব, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু আমার বীরত্ব, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার প্রশ্বাস, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু আমার নিঃশ্বাস, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার প্রাণ, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু আমার ঘ্রাণ, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার দৃষ্টি, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু আমার কৃষ্টি, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার সংস্কৃতি, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু চায় সম্প্রীতি, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার পরিচয়, বল জয় হিন্দু জয়।
হিন্দু তোমার নেই ভয়, বল জয় হিন্দু জয়।।
হিন্দু আমার নীড়, বল জয় হিন্দু জয়।
আমি হিন্দুবীর, বল জয় হিন্দু জয়।।

courtesy : hindu veer
Share:

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদাপি গরিয়েসী

No automatic alt text available.আমরা পাবনার ইলা মিত্রের ন্যায় তেভাগা আন্দোলন করে কৃষকের দাবি আদায়ে সংগ্রাম করেছি , চট্রগ্রামের মাষ্টার দা সূর্যসেন প্রীতিলতা পোদ্দার মত ব্রিটিশ -বিরোধী আন্দোলন করে জীবন দিয়ে বাংলাকে করেছি মুক্ত , ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মত পাক পালামেন্টে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রস্তাব তুলেছি.

স্বাধীন বাংলাকেন্দ্র থেকে রাখাল চন্দ্র বণিক রঙলাল দেব চৌধুরীর ন্যায় স্বাধীনতার সব খবরাখবর ও দেশাত্মবোধক গান প্রচার করেছি, চিত্ত রন্জন দত্তের মত জীবন বাজি রেথে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, ঠাকুর তা গুহের মত জীবন দান করেছি অর্জন করেছি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র ,শিবনারায়ন দাশের দ্বায়া রচনা করেছি মানচিত্র খচিত প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, মনোরঞ্জন ধরের মত উত্থাপন করেছি গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান.

আমৃত্যু লড়েছি সমাধিকার লড়াই এ বর্তমানে আওয়ামী(রমেশ চন্দ্র সুরন্জিতের ন্যায়) -বিএনপি(গয়েশ্বয়র-নিতাই -গৌতমের ন্যায়) জাতীয় পার্টি(মনোরন্জন শীল-সুনীল শুভের ন্যায়) -জাসদ-বাসদ সব দলে অংশগ্রহণ করে অবদান রাখছি রাজনীতিতে[বিগত+ বর্তমান উভয় সরকারে একাধিক মন্রীও রয়েছে -বর্তমানে 12জন Mp ], ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের ন্যায় অবদান রাখছি অর্থনীতিতে সুজিত রায় সামন্তলাল সেনের ন্যায় চিকিত্‍সায় প্রাণ গোপাল দত্তের ন্যায় শিক্ষায়(হাজার হাজার জন primary-high-college-universityএমনকি মাদ্রাসা লেভেলেও)শুভ রায় সমেরন্দ্র কর্মকারের ন্যায় বিজ্ঞানে নির্মেলেন্দু গুণ মহাদেব সাহার ন্যায় সাহিত্যে.

সুবীর নন্দী রথীন্দ্র রায় কুমার বিশ্বজিত্‍ এর মত সঙ্গীতে অমলবোস বিদ্যা সিনহার ন্যায় বিনোদন জগতে ব্রজেন দাস অলোক কাপালী তাপসবৈশ্য এর ন্যায় ক্রীড়াঙ্গনে এমনকি সামরিক বাহিনীতে(মেজর জেনা:সহ) জেলা প্রশাসনে (কমপক্ষে ১0 Dc) সচিবালয়ে,বিচার ব্যবস্থায়(গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের ন্যায়) পুলিশ সুপার(>১০) ওসি(>৩০) উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিযদ লেভেলে ও দিচ্ছে নেতৃত্ব .

তারপরেও যারা দেশ ছাড়ার কথা তোলে তাদের বলছি দূর্বল হৃদয়ে ভক্তির স্থান নেই ,যোগ্যতা বলতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন আর সর্বদা মনে রাখবেন "জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদাপি গরিয়েসী".
shubho chowdhury
Share:

হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক অন্যতম ধর্মীয় উৎসবের মূল্যবান ধামরাইয়ের কাঠের ‘রথ


Image may contain: outdoorস্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ০৯ এপ্রিল সকাল ১০টা ইতিহাসের ধারক ও এদেশের ঐতিহ্যময় ঐতিহাসিক হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসবের মূল্যবান ধামরাইয়ের কাঠের ‘রথ’ টি বর্বর পাক হানাদার বাহিনী ও দেশীয় দালাল, রাজাকার মিলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তখন গোটা দেশেই চলছিল হত্যাযঞ্জ, নির্যাতন, লুটপাট, পাশাপাশি চলছিল যুক্তিযুদ্ধ। ৪০ ফুট প্রস্থে ৭৫ ফুট উচ্চতা ৩ তলা বিশিষ্ঠ ও ৯ টি প্রকোষ্ঠ এবং ৯ টি মাথা বিশিষ্ঠ সৌন্দর্য শৈলীর নানা কারু কার্জ্য খঁচিত সেই রথটির ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো।

বাংলাদেশই নয় পৃথিবীতে এত বড় রথ আর কোথাও নেই। এর খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে। এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এ উৎসব ধর্মীয় স্রোতধারায় প্রতিষ্ঠিত হলেও , বর্তমানে এ উৎসব পুরোপুরি সার্বজনীনতা লাভ করেছে। লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়ে উঠে এ উৎসব। প্রতি বছরই সরকারের মন্ত্রী বা উচ্চ পর্যায়ের কোন না কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা আসেন এই রথ ও তার মাসব্যাপী মেলা উদ্ধোধন করতে।

ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে সেতু বন্ধন অটুট রাখতে ২০১০ সালে ধামরাইয়ে পুরোনো রথটির আদলে নির্মানে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন রথ নির্মাণ করে দেয়। বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের তত্বাবধানে ২০০৯ সালে ধমরাই রথের টেন্ডার হয়। টেন্ডার পেয়ে উই.ডি.সি.কেল.বিন টেকনো. টাচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালের জানুয়ারী থেকে রথ নিমার্ন কাজ শুরু করে। নির্মান কাজ ৬ মাসের মধ্যেই শেষ করে। ২০১০ সালের রথ উৎসব নতুন রথেই অনূষ্ঠিত হয়।

ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী এই রথ ১০৭৯ সালে প্রথম জনৈক রাম জীবন বায় মৌলিকের প্রতিষ্ঠিত ও বাঁশের তৈরীরথে মূর্তি চড়িয়ে রথ যাত্রার শুরু হয়। তবে এর আগে কবে কখন রথ উৎসব শুরু হয়েছে তা অজানা। পরবর্তীতে বাংলা ১২০৪ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলার অর্ন্তগত মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদারগন ঐতিহাসিক রথের নির্মান ব্যয়ভার বহন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে এই রথ না থাকায় উৎসব বন্ধ ছিল এক বছর।

১৯৭৩ সালে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোক জন ছোট আকারে একটি বাশঁ ও কাঠের রথ নির্মান করে উৎসব পালন করে। ১৯৭৪ সালে বৃহৎ রথের আদলে ছোট পরিসরে কাঠের রথ নির্মান করে শুরু করে পুণরায় রথ উৎসবের নবযাত্রা। এ ব্যাপারে ধামরাই রথ কমিটির অন্যতম সদস্য ও শিল্পী সুকান্ত বনিক বলেন, বিগত ২০০৬ সালে ধামরাইয়ের রথ উৎসবে তৎকালীন মাধব মন্দির কমিটির সাধরন সম্পাদক ধামরাইয়ের বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক প্রয়াত ঠাকুর গোপাল বনিকের আমন্ত্রনে রথ উৎসবে বিশেষ অতিথি হয়ে আসেন ঐ সময়ের বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের দূত শ্রীমতি বিনা সিক্রী। ধামরাই বাসীর আন্তরিক দাবীর প্রেক্ষিতে শ্রীমতি বিনা সিক্রী তার ভাষণে পূর্বের আদলে ধামরাইয়ের রথটি নির্মান করে দেবার আশ্বাস দেন।

এরপর রথ ও মাধব মন্দির কমিটির দুই জন কর্মকর্তা বর্তমান প্রয়াত ঠাকুর গোপাল বণিক ও ধামরাইয়ের বিশ্ব কর্মা বলে খ্যাত শিল্পী সুকান্ত বণিক নিজে ধামরাই থেকে ভারতের পুরিতে যান। সেখানেই রথ নির্মান খরচ বিষয়ক ও তত্বাবধায়ক বিষয়ে আলোচনা হয়। ভারত সরকার বাংলাদেশের সেতু বন্ধন অটুট রাখতে ধামরাইয়ে বর্তমান এই রথটির নির্মানে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়করে নির্মানের প্রদক্ষেপ গ্রহন করেন। । লক্ষী রানী জানালেন, রথযাত্রা আসলে তাদের আনন্দের অন্ত থাকে না। ধামরাইয়ের বাসিন্দা শিশু মোঃ জাহিদ ও বিশ্বনাথ জানালেন, শুনেছি আগে যে রথটি ছিলো সেটি ১৯৭১ এর মুক্তিযদ্ধের সময় পাক বর্বর বাহিনীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন ছোট রথেই রথ মেলা দেখবো বলেন। তারা আরো বলেন, এই ধামরাইয়ে রথমেলা হিন্দুদের হলেও সকল ধর্মের মানুষ উপভোগ করে থাকে এখানে কোন ভেদাভেদ নেই.

courtesy : bangali hindu post

Share:

অতি সংক্ষেপে গায়ত্রী মন্ত্রের বর্ননা

No automatic alt text available.ওঁ ভূভবঃ স্বঃ
তত্ সবিতুর্বরেন্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি ।
ধিয়ো যো নং প্রচোদয়াত্ ।।ওঁ।।

অনুবাদ :যিনি ত্রিলোকের স্রষ্টা অথ্যাৎ সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রসবিতা, সে সচ্চিদানন্দঘন নিরাকার পরমব্রহ্মের বরনীয় জ্যোতি কে আমরা ধ্যান করি ।তিনি আমাদের মন ও বুদ্ধিকে শুভ কার্যে প্রেরনা দান করুন।

তাত্পর্যেঃ বলা যায় ভূ ভুবঃ স্বঃ অথ্যাৎ পৃথিবী ,অন্তরীক্ষ ,বিশ্বব্রহ্মন্ডে ,এবং সর্বত্র সেই পরমপুরুষ নিরাকার পরমেশ্বরের প্রভাব বা জ্যোতি বিদ্যমান। তাকে ঘিরেই আমাদের জন্ম ,মৃত্যু ,জীবন সব ।তাই তার কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের জীবনকে সাত্ত্বিক ভাবে অতিবাহিত করার জন্যে কৃপা করেন ।


ঋক ,সাম ,যজুঃ এই তিন বেদেই আমারা মন্ত্রটি পাই যথাক্রমে ঋকবেদ ৩/৬২/১০ যজুঃবেদ ৩/৩৫,৩০/২সামবেদ উত্তর আর্চিক ৬/৩/১০। এই মন্ত্রের দেবতা সবিতা ।
দ্রষ্ট্রা ঋষি বিশ্বামিত্র ,ছন্দ গায়ত্রী এবং এটাই বেদের সর্ব শ্রেষ্ঠ মন্ত্র এবং ছন্দ ।ভগবান
শ্রী কৃষ্ন গীতার বিভূতিযোগে ৩৫নং শ্লোকে বলেছেন ছন্দ সমূহের
মধ্যে আমি গায়ত্রী । এই হল অতি সংক্ষেপে গায়ত্রী মন্ত্রের বর্ননা ।

সূর্যের বিভিন্ন নাম আমরা পাই যেমন :সূর্য ,পুষা ,মিত্র ,সবিতা ,অর্য্যমা ,বিষ্ণু ইত্যাদি এরা সবাই আদিত্য । আমরা দেখছি যে সূর্যের সমার্থক শব্দ সবিতা । সূর্যকে বৈদিক ঋষিরা এই বিশ্বচরাচরের সকল শক্তির উত্স হিসাবে চিন্তা করতেন ।বাস্তবেও অবশ্য তাই ,আমরা সূর্য শক্তিতেই বলিয়ান ।কিন্তু এই মন্ত্র সবিতা সরাসরি সূর্যের সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয় নি ।বেদভাষ্যকার সায়নাচার্য এখানে সূর্য ও সবিতার দুই রকম অর্থ করেছেন ।এই মন্ত্রে সবিতা হল ,সকল কারনের কারন সেই সচ্চিদানন্দ নিরাকার পরম ব্রহ্ম ।তাই সবিতা অর্থ জগত স্রষ্টা ।"সু" ধাতু থেকে সবিতৃ নিষ্পন্ন হয়েছে ।যায় জন্যে সবিতা মানে প্রসবিতা । নিরুক্তিকার যস্ক অর্থ করেছেন "সর্ব্বস্য প্রসবিতা ।"বেদ ভাষ্যে সায়ন ব্যাক্ষা করেছেন তত্সবিতুঃ =জগত্প্রসবিতুঃ = বাংলা হচ্ছে নিখিল বিশ্বের সৃষ্টিকারী ।তাই এই মন্ত্রে আমরা সেই পরমেশ্বরের বরনীয় জ্যোতিকে ধ্যান করছি । যাকে এখানে সবিতা বলা হয়েছে বা নাম দেওয়া হয়েছে ।ঋকবেদের ২য় মন্ডলের ৩৮ সূক্তের ৭থেকে ১১ নং মন্ত্রে সবিতাকে সকল শক্তির উত্স বলে তার স্তুতি করা হয়েছে।
বলা হয়েছে :হে সবিতা ,তুমি সকল কিছু সৃষ্টি করেছ অন্তরীক্ষ ,জল ,স্থল ।তুমি সকল ভূত ,পশুপাখী ,স্থাবর জঙ্গম ইত্যাদিকে স্ব স্ব স্থানে রেখেছ । ইন্দ্র ,বরুন ,মিত্র ,অর্য্যমা ,বা রুদ্র সবাই তোমার শক্তিতে বলিয়ান ।কেউ তোমাকে হিংসা করে না ।হে সবিতা (পরমেশ্বর) তোমার দুতিমান জ্যোতিকে (অথ্যাৎ, সকল প্রকাশ যুক্ত শক্তি এবং অপ্রকাশিত অতিন্দ্রিয় শক্তিকে) আমরা নমষ্কার করি ।তুমি সকলের কল্যান কর । আমাদের জন্যে যেন সকল কিছু শুভ হয় ।এটাই এই গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা সবিতার তাত্পর্য।

বৈদিক ভাব বুঝানো শক্ত কাজ অনেক ক্ষেত্রে নিজে বুঝলেও বোঝানো যায় না অপর কে ,যা হোক চেষ্টা করেছি মাত্র সহজ ভাবে বুঝানোর। নমস্কার।


কৃতজ্ঞতাঃ
অগ্নি সম্পদ (agni sampad)
Share:

ব্রহ্মজ্ঞান

No automatic alt text available.
ওঁ মনোবুদ্ধ্যহঙ্কারচিত্তানি নাহং ন চ শ্রোত্রজিহ্বে ন চ ঘ্রাণনেত্রে।

ন চ ব্যোম ভূমির্ন তেজো ন বায়ুশ্চিদানন্দরূপঃ শিবোঽহং শিবোঽহম্‌।। 

ন চ প্রাণসংজ্ঞো ন বৈ পঞ্চবায়ুর্ন বা সপ্তধাতুর্ন বা পঞ্চকোষাঃ।

না বাক্‌পাণিপাদং ন চোপস্থপায়ুশ্চিদানন্দরূপঃ শিবোঽহং শিবোঽহম্‌।।

ন মে দ্বেষরাগৌ ন মে লাভমোহৌ মদো নৈব মে নৈব মাৎসর্যভাবঃ।

ন ধর্মো ন চার্থো ন কামো ন মোক্ষশ্চিদানন্দরূপঃ শিবোঽহং শিবোঽহম্‌।।

ন পুণ্যং ন পাপং ন সৌখ্যং ন দুঃখং ন মন্ত্রো ন তীর্থং ন বেদা ন যজ্ঞাঃ।

অহং ভোজনং নৈব ভোজ্যং ন ভোক্তা চিদানন্দরূপং শিবোঽহং শিবোঽহম্‌।।

ন মৃত্যুর্ন শঙ্কা ন মে জাতিভেদঃ পিতা নৈব মে নৈব মাতা ন জন্ম।

ন বন্ধুর্নমিত্রং গুরুর্নৈব শিষ্যশ্চিদানন্দরূপঃ শিবোঽহং শিবোঽহম্‌।।

অহং নির্বিকল্পো নিরাকাররূপো বিভুত্বা সর্বত্র সর্বেন্দ্রিয়াণাম্‌।

ন চাসঙ্গতং নৈব মুক্তির্নমেয়শ্চিদানন্দরূপং শিবোঽহং শিবোঽহম্‌।।

বেদান্ত বলেন, এই জগৎটা মিথ্যা , একমাত্র ব্রহ্মই সত্য । সত্য বলতে যা চিরন্তন তাকেই বোঝানো হয় , যা ভবিষ্যতে থাকবেনা , যাকে শুধুমাত্র এখন আছে বলে মনে হচ্ছে , এরকম বিষয়কে সত্য বলা যায়না ; কারণ যার প্রকৃত অস্তিত্ব থাকে , সে কখনও 'নেই ' হয়ে যেতেপারেনা ।
এখানে 'সমুদ্রের জল' আর 'ঢেউ' এর উপমা দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে । একটি তরঙ্গায়িত রূপ এবং ' ঢেউ ' - এই নাম, ঢেউকে সমুদ্র থেকে পৃথক করেছে , কিন্তু ওই ঢেউ যখন সমুদ্রে মিলিয়ে যায় তখন নাম - রূপও চলে যায় অর্থাৎ নাম - রূপ মিথ্যা হয়ে যায় । শুধু অবশিষ্ট থাকে ওর আসল স্বরূপ অর্থাৎ জল । ঠিক এই রকম ভাবে এক সত্তাই আছেন । তিনিই সত্য বা সৎ-স্বরূপ । অসংখ্য নাম - রূপের বিন্দুতে তিনি নিজেকে projected করেছেন । এই projection ই জগৎ ।
বেদান্ত বলে , ব্রহ্ম আসলে জগতে পরিণত হননি , এটা seeming projection ; অর্থাৎ আপাত প্রতীয়মান । আকাশ যেমন বাটির মতো নয় , সূর্য যেমন পূর্বে উঠে পশ্চিমে অস্তগামী হয়না , রেল লাইন যেমন দূরে গিয়ে পরস্পর মিশে যায়না , তেমন সৃষ্টিটাও আসলে হয়নি , রজ্জুতে সর্প ভ্রম হয়েছে । অন্ধকারে একগাছা দড়ি দেখে কেউ ভয় পেল , তারপর আলো এনে দেখা গেল ওটা একগাছা দড়ি , সাপ নয় , তখন সর্প ভীতিও চলে গেল । ঠিক তেমনই মায়া বশতঃ ব্রহ্ম জগত হিসাবে কল্পিত হচ্ছেন । নাম রূপের প্রহেলিকা ভেদ করতে পারলে সাধকের এই জগৎ বোধ চলে যায় , তখন আর জন্ম - মৃত্যুর প্রসঙ্গে কোনও প্রশ্নই ওঠেনা । যা নেই তার আবার ব্যাখ্যা কি ?
বেদান্ত বলেন ঈশ্বর কেন জগৎ সৃষ্টি করলেন এই প্রশ্নই সঠিক নয় । ' কার্য-কারণ সম্বন্ধ ' মায়াধিকৃত জগতের বৈশিষ্ট্য । তাই ' কেন ' ও ' কিভাবে ' -- এই প্রশ্নগুলি মায়ার জগতের বাইরে নিয়ে যাওয়া যায়না । ঈশ্বর কেন সৃষ্টি করলেন এই প্রশ্নের দ্বারা আমরা মায়ার বাইরে ' কার্য-কারণ ' খুঁজতে চাইছি ।
আমরা স্বরূপতঃ ব্রহ্ম , সুতরাং ''আমরা বদ্ধ'', - এটা ভুল । যেহেতু বদ্ধতার ধারণাই ভুল , তাই - ''সাধনা দ্বারা আমাদেরকে মুক্ত ( স্ব - স্বরূপে স্থিত ) হতে হবে'' , - এটা আরেকটা ভুল । এই দুই ভুল একত্রিত হয়ে পরস্পরকে প্রশমিত করবে । বিষে - বিষে বিষক্ষয় হয়ে যাবে । আমরা যা ছিলাম তাই থাকব , ব্রহ্ম ছিলাম ব্রহ্মই থাকব ।

জগতের মুল কারণ স্বরূপ সেই অনন্ত অদ্বৈত সত্তা কেই সনাতন ধর্মে '' ব্রহ্ম '' বলা হয়েছে । ভক্ত সেই অখণ্ড সত্তাকে 'তিনি' বলেন । আর জ্ঞানী বলেন 'আমি' । যেমন স্বামীজী বলেছেন -- '' আমি করি খেলা , শক্তি-রূপা মম মায়া সনে ...... '' । আবার অন্যত্র স্বামীজী ভক্তের ভাবে নিজের সম্বন্ধে বলছেন , --- '' দাস তব জনমে জনমে দয়ানিধে ! ...... '' বস্তুতঃ জ্ঞানীর 'আমি ' আর ভক্তের 'তিনি' একই । হয় বল সবই তিনি , অথবা বল সবই আমি ।


- তাপস ঘোষ
Share:

রামেস্বর মন্দির

No automatic alt text available.২০০৮ সালে হিন্দুর চার প্রধান তীর্থের ১ টি--- রামেশ্বরম-এ যাবার সুযোগ ঘটে। যুগে যুগে কত মহাপুরুষ এই তীর্থে এসেছেন ভাবতেই শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছিল। একালে শঙ্কর আচার্য ,শ্রী চৈতন্য , বিবেকানন্দ --- প্রমুখ মনিষী এস্থানে এসেছেন। ভারতের চেন্নাই (মাদ্রাজ) থেকে ট্রেন-এ এই সমুদ্র দ্বীপে ঢুকে আশ্চর্য হলাম একটা জিনিস দেখে-- ভয়ানক সুনামি দ্বীপের নানা স্থানে আঁচড় কাটলেও রামেস্বর মন্দিরের কোন ক্ষতি হয় নি। পৃথিবীর বৃহত্তম বারান্দা এই মন্দিরেই দেখতে পাওয়া যায়। প্রবাদ এই যে, শ্রী রাম উপাসিত রামেশ্বর শিবলিঙ্গে গঙ্গোত্রী থেকে আনা গঙ্গা জল ঢাললে কোন কোন ভক্ত দিব্যানুভুতি লাভ করেন।
দুঃখের বিষয়-- এই পবিত্র রামসেতু টি জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য ভারত ও শ্রীলংকা সরকার ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ হওয়ায় ওই অঞ্ছলে প্রবেশে তখন নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই দর্শন হয় নি। কিন্তু লক্ষ্মণ তীর্থ নামক মন্দিরে জল মধ্যে ভাসমান রামসেতুর ভাঙা টুকরো দেখতে পাই। ওই টুকরোর কিছুটা আমার ঠাকুর ঘরে নিত্য পূজিত হচ্ছেন। এর শাস্ত্রীয় নাম ---রামশিলা।
হিন্দু সংগঠনগুলির চাপে সেতু পুরোটা ভাংতে পারে নি তৎকালীন সরকার। তবে গোপনে কিছুটা ভেঙে ফেলা হয়। নিজ ধর্ম ও কৃষ্টির প্রতি এই অশ্রদ্ধা হিন্দুকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কবে শেষ হবে এই আত্মঘাতী খেলা? জয় শ্রী রাম,জয় রামেস্বর মহাদেব, জয় সনাতন হিন্দু ধর্ম !

দেবাশিস সিংহা
Share:

শবাসন (Shavasana)


Image may contain: one or more people and indoor য়োগচর্চাকারীমাত্রই জানেন যে, যোগাসনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য আসন হচ্ছে শবাসন। অথচ মজার বিষয় হলো, এই শবাসনকেই অনেকে অত্যন্ত সহজ একটি আসনাবস্থা হিসেবে ধারণা করে নিতে কেন যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তা বোধগম্য নয়।

যোগ-কুশলীদের মতে আসন অভ্যাসের প্রতি পর্যায়ে একবার করে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।ইয়োগার কোন একটি আসন বার কয়েক সম্পূর্ণ অভ্যাসের পর পরই শবাসনের মাধ্যমে দেহমনের বিশ্রাম দেয়া যোগব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। এভাবে একটি যোগাসন অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো একবার ৩০সেঃ থেকে ৪৫সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। বরং অন্য কোন আসনের প্রকৃতি অনুযায়ী দেহের বিশেষ কোন অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গে রক্তসঞ্চালন সাময়িক রুদ্ধ বা প্রচুর রক্ত চালিত করার ফলে যে ভিন্নতা প্রয়োগ করা হয়, তাকে পূর্বাবস্থার উন্নততর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে শবাসনের চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শব অর্থ মৃতদেহ। মৃত ব্যক্তির যেমন তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর কোন কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তেমনি শবাসন অবস্থায় অভ্যাসকারীর দেহের কোন অংশে তার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। মৃত ব্যক্তির মতো আসনচর্চাকারীকেও কিছুক্ষণের জন্য বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরে যেতে হবে। ব্যক্তি আর ব্যক্তিতে থাকবে না। সমস্ত চিন্তা-ভাবনা থেকে মনকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখতে হয়।

প্দ্ধতি:
দু’হাত শরীরের দু’পাশে মেলে রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু উপর দিকে এবং পায়ের পাতা দু’পাশে একটু হেলে থাকবে। অথবা যেভাবে ভালো লাগে সে ভাবেই রাখুন। এবার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল করে দিন। দেহের প্রতিটি জোড়া ও মাংসপেশী আলগা করে দিন। শরীরের কোন অংশে কোনরকম জোর থাকবে না। মন শান্ত, ধীর, চিন্তাশূন্য করে মৃতের মতো কিছুক্ষণ পড়ে থাকুন। শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ সরল ও মন্থর থাকবে। মনে রাখতে হবে, বাস্তব জগৎ থেকে আপনি এখন দূরে আছেন। মনটাকে শিথিল করে অনুভব করুন, আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এখন আর আপনার নেই, কোথায় আছে তাও জানেন না আপনি। এ আসন অবস্থায় যদি ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে বুঝতে হবে আসনটি ঠিকমতো অভ্যাস হচ্ছে।

অনেকের মতে পা থেকে শুরু করে এক এক করে শরীরের এক একটি অংশ শিথিল করে এনে তারপর মাথা শিথিল করতে হবে। প্রক্রিয়াটি আসলেই কঠিন এবং দুর্বোধ্যও। তবে যার কাছে যেভাবে সহজ ও স্বাভাবিক মনে হবে সেইভাবেই করা উচিৎ। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনকে চিন্তাশূন্য করে দেহকে শিথিল করে দেহ ও মনকে কিছুক্ষণ সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেয়া, তা সে যেভাবেই হোক।

উপকারিতা:
শবাসন অসম্ভব উপকারী একটি আসন। দীর্ঘ সময় বা শ্রমসাধ্য কাজের পর অথবা অনিদ্রার পর কিছু সময় এই আসনটি করলে দেহ ও মনের সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়। নতুন জীবনীশক্তি, উদ্যম ও কর্মপ্রেরণা ফিরে আসে। যাদের অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয়, তাদের আসনটি অবশ্যই করা উচিৎ। মন ও স্নায়ুতন্ত্র প্রয়োজনমতো বিশ্রাম না পেলে স্নায়বিক দুর্বলতা, বধিরতা, দৃষ্টিহীনতা প্রভৃতি নানা কঠিন রোগ হতে পারে। এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের এ আসনটি ‘মৃত সঞ্জীবনী’র মতো কাজ করে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় অত্যধিক পড়াশুনার পর এই আসনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে অবসাদ, ক্লান্তি দূর হয়ে শুধু যে নতুন উদ্যম ফিরে আসে তাই নয়, স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। প্রায় সব আসন অভ্যাসের পর কিছুক্ষণ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হয়। কারণ, অন্যান্য আসন অবস্থায় শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রচুর রক্ত চলাচল করে। তারপর শবাসনে বিশ্রাম নিলে রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হৃদরোগীদের জন্য আসনটি অবশ্য করণীয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের দু’মাস আগে থেকে এবং প্রসবের পর অন্ততঃ দু’মাস দিনে কিছু সময় শবাসনে বিশ্রাম নেয়া উচিৎ।

অতএব যুগপৎ অত্যন্ত সহজ এবং কঠিন এ আসনের যথাযথ অনুশীলন যে কারোর নিজের জন্যেই নিয়মিত ও অবশ্যচর্চিত হওয়া উচিৎ নয় কি !

Share:

স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশ

Image may contain: people standing, plant, sky, tree, cloud, flower, outdoor and natureভারত দীর্ঘদিন যন্ত্রণা সয়েছে , সনাতন ধর্মের ওপর বহুকাল ধরে অত্যাচার হয়েছে । কিন্তু প্রভু দয়াময় , তিনি আবার তাঁর সন্তানদের পরিত্রাণের জন্য এসেছেন । পতিত ভারতবর্ষ আবার জেগে ওঠার সুযোগ পেয়েছে । শ্রী রামকৃষ্ণের পদতলে বসে শিক্ষা গ্রহণ করলেই কেবল ভারতবর্ষ উঠতে পারবে । তাঁর জীবন , তাঁর উপদেশ চারদিকে প্রচার করতে হবে , যেন হিন্দু সমাজের সর্বাংশে -- প্রতি অণু পরমাণুতে এই উপদেশ ওতপ্রোত ভাবে ব্যাপ্ত হয়ে যায় । 

 হে বীর হৃদয় বালক গণ , কাজে এগিয়ে যাও । টাকা থাক আর না থাক , মানুষের সহায়তা পাও আর নাই পাও , তোমার তো প্রেম আছে ? ভগবান তো তোমার সহায় আছেন ? অগ্রসর হও , তোমার গতি কেউ রোধ করতে পারবেনা ।  নিজের ভিতর উৎসাহাগ্নি প্রজ্বলিত কর , আর চারিদিকে বিস্তার করতে থাকো ।  তুমি যদি পবিত্র ও অকপট হও , সবই ঠিক হয়ে যাবে । তোমার মতো শত শত যুবক চাই , যারা সমাজের উপর গিয়ে মহা বেগে পড়বে এবং যেখানেই যাবে সেখানেই নবজীবন ও আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চার করবে ।

.আমাদের এখন প্রয়োজন --- শক্তি সঞ্চার । তোমাদের স্নায়ু সতেজ কর । আমাদের আবশ্যক লৌহের মতো পেশী ও বজ্র দৃঢ় স্নায়ু । আমরা অনেক দিন ধরে কেঁদেছি ; এখন আর কাঁদবার প্রয়োজন নেই , এখন নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ হও । তোমাদের উপনিষদ  সেই বল প্রদ আলোক প্রদ দিব্য দর্শন শাস্ত্র আবার অবলম্বন কর , তোমাদের সম্মুখে উপনিষদের এই সত্য সমূহ আছে । ঐ সত্য সমূহ অবলোকন কর , ঐগুলি উপলব্ধি করে কার্যে পরিণত কর ।

এই বীর্য লাভের প্রথম উপায়  উপনিষদে বিশ্বাসী হওয়া এবং বিশ্বাস করা যে ' আমি আত্মা , তরবারি আমাকে ছেদন করতে পারেনা , কোন যন্ত্র আমাকে ভেদ করতে পারেনা , অগ্নি আমাকে দগ্ধ করতে পারেনা , বায়ু শুষ্ক করতে পারেনা , আমি সর্বশক্তিমান , আমি সর্বজ্ঞ । ' 

হে বঙ্গীয় যুবক বৃন্দ , তোমাদের দেশের জন্যে এটা প্রয়োজন , সমুদয় জগতের জন্যে এটা প্রয়োজন । তোমাদের অন্তর্নিহিত ব্রহ্ম শক্তি জাগিয়ে তোল ; সেই শক্তি তোমাদেরকে ক্ষুধা - তৃষ্ণা শীত - উষ্ণতা - সব কিছু সহ্য করতে সমর্থ করবে ।  মহৎ হও । স্বার্থ ত্যাগ ছাড়া কোন মহৎ কার্যই সাধিত হতে পারেনা । অন্যে যাই ভাবুক আর করুক তুমি কখনও তোমার পবিত্রতা , নৈতিকতা আর ভগবৎ প্রেমের আদর্শকে নীচু করোনা । যে ভগবান কে ভালবাসে তার পক্ষে চালাকিতে ভীত হবার কিছু নেই । স্বর্গে ও মর্তে পবিত্রতাই সবচেয়ে মহৎ ও দিব্য শক্তি ।

 প্রার্থনা করি আমার ভিতরে যে আগুন জ্বলছে , তা তোমাদের ভিতর জ্বলে উঠুক , তোমাদের মন - মুখ এক হোক , ভাবের ঘরে চুরি যেন একদম না থাকে । জগতের যুদ্ধ ক্ষেত্রে তোমরা যেন বীরের মতো মরতে পারো । এই সব সময় বিবেকানন্দের প্রার্থনা ।


Share:

হিন্দু ধর্মের ' অ-আ-ক-খ'


হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নামসনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের আকর হল বেদ , যার মুখ্যতঃ দুটি অংশ - ' জ্ঞান কাণ্ড' ও 'কর্ম কাণ্ড' । 

'কর্ম কাণ্ড' যুগ ভেদে পরিবর্তন শীল । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ যখন বললেন - '' কলি যুগে বেদ মত চলে না '' তখন তিনি এই 'কর্ম কাণ্ড' কেই নির্দেশ করেছেন ।' জ্ঞান কাণ্ড' যুগ ভেদে অপরিবর্তনীয় । অরণ্যচারী ঋষি দের সাধনার দ্বারা আবিষ্কৃত পারমার্থিক সত্য এই ' জ্ঞান কাণ্ড' । এটি কোনও সাম্প্রদায়িক মত নয় । হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে যেমন জল হয় , এটা যেমন যে কোনও মানুষের দ্বারা পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হবে , ঠিক তেমনি ' জ্ঞান কাণ্ড ' নির্দেশিত অনুভূতি সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্যে প্রযোজ্য । এখানেই হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মত কে নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছে । অথবা ঐতিহাসিক বিচারে বলতে হয় হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মতের জন্ম দিয়েছে ।হিন্দু ঋষিগণ ধর্মপথ নির্দেশের সময় মানুষের রুচি ও ক্ষমতার ভিন্নতার কথা চিন্তা করেছেন , তাই মূর্তি পূজা থেকে শুরু করে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা পর্যন্ত সবই হিন্দু ধর্মে স্বীকৃত হয়েছে । বিভিন্ন মাপের মানুষের জন্য একই মাপের পোশাক এই ধর্ম দেয়না ।

 হিন্দুরা নিজ নিজ রুচি ও ক্ষমতার স্তর অনুযায়ী নিজের উপযুক্ত সাধন পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । উদ্দেশ্য সবারই এক , এবং তা হল - আত্ম জ্ঞান , অর্থাৎ স্ব-স্বরূপ কে জানা ।হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সাধন পথ গুলিকে মুখ্যতঃ চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে । এগুলি হল জ্ঞান যোগ , কর্ম যোগ , ভক্তি যোগ ও রাজ যোগ ।জ্ঞান যোগে আত্ম বিশ্লেষণ এবং ' শ্রবণ , মনন ও নিদিধ্যাসনের ' দ্বারা ' নেতি নেতি ' বিচারের মাধ্যমে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । আচার্য শঙ্কর এই সাধনা প্রচার করেছেন ।কর্ম যোগে নিষ্কাম কর্ম দ্বারা সকাম কর্ম বন্ধন কেটে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুন কে কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে কর্মযোগে উদ্দীপ্ত করেছেন ।ভক্তিযোগে প্রেমের বন্ধনে ভক্ত সাধক ঈশ্বরকে ধরার চেষ্টা করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য ( মহাপ্রভু ) এই ভাবের প্রচার করেছেন ।রাজযোগে ধ্যান , প্রাণায়াম প্রভৃতি শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সাধক স্ব-স্বরূপ লাভ করেন ।
 মহর্ষি পতঞ্জলি এই সাধন পদ্ধতি প্রচার করেছেন । পৃথক পৃথক ভাবে এই চারটি পথের সাধক অনেক ক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন , যেমন জ্ঞান যোগ মানুষকে শুষ্ক বিচার প্রবণ করতে পারে । কর্ম যোগে কর্ম সকাম হয়ে সাধকের অবনতি ঘটাতে পারে । ভক্তি যোগে গোঁড়ামি আসতে পারে । রাজ যোগে সিদ্ধাই বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের দিকে মন চলে যেতে পারে । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ এই নবযুগের জন্য তাই নির্দেশ করেছেন যোগ - চতুষ্টয়ের সমন্বয় । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - জ্ঞান - কর্ম - ভক্তি অথবা রাজ যোগ এই চারটি পথের যে কোনও একটি অবলম্বন করে সাধক সিদ্ধ হতে পারেন , কিন্তু ' শ্রী রামকৃষ্ণ - রূপ মুষায় ( ছাঁচে) জীবন উৎকীর্ণ করিতে হইলে ( জীবন ঢেলে গঠন করতে গেলে ) সেই জীবনে থাকিবে - চতুর্বিধ যোগের সমন্বয় ' সমন্বয়ের PRACTICAL প্রয়োগ হিসাবে স্বামীজী তুলে ধরেছেন শিব - জ্ঞানে জীব সেবার আদর্শ । এই হল স্বামী বিবেকানন্দ নির্দেশিত 'PRACTICAL বেদান্ত' । বনের বেদান্ত এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজে ও সংসারের সর্বত্র ।

লেখক-তাপস ঘোষ
Share:

প্রহসনঃ দেশের শত্রু তাঁরা ! - আপেল মাহমুদ


Image may contain: one or more people, eyeglasses and textতাঁদের কেউ কেউ জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য, কেউ কেউ আজীবন লড়াই করে গেছেন দেশ ও মানুষের স্বার্থে, কেউবা মেধা দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। অথচ তাঁদের সহায়-সম্পত্তি আজও চিহ্নিত হয়ে আছে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে, যা শত্রু সম্পত্তিরই নামান্তর। দেশের মানুষ যাঁদের নিয়ে গর্ব বোধ করে, তাঁদের জমিজমা রেকর্ড করা হয় শত্রু সম্পত্তি হিসেবে। পাকিস্তান আমলে যে আইনের বলে এ কাজ করা হয়েছিল, পরে সেই আইনের নাম বদল করে অর্পিত সম্পত্তি আইন রাখা হলেও বিষয়বস্তু একই থেকে যায়। বিভিন্ন সময়ে শত্রু সম্পত্তি কিংবা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে যাঁদের জমিজমা রেকর্ড করা হয়, তাঁদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নায়ক স্বাধীনতা সংগ্রামী মাস্টারদা সূর্য সেন, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, বিপ্লবী রবি নিয়োগী, কবি নবীন চন্দ্র সেন, দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র (জি সি) দেব, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শহীদ অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য গোবিন্দ সিংহ মজুমদারসহ আরো অনেক বিশিষ্টজন।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে জীবন উৎসর্গ করেছেন মাস্টারদা সূর্য সেন (১৮৯৪-১৯৩৪)। চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নায়ক হিসেবে মাস্টারদার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে উপমহাদেশের সব স্তরের মানুষ। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার লুট করে তিনি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিলেন।
অথচ রাষ্ট্রীয় নথিতে তিনি দেশের শত্রু। চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে সেই মহান বিপ্লবীর বাড়ি-ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে। কারণ তিনি 'শত্রু রাষ্ট্র' ভারতের বাসিন্দা! নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রাধা রানী দেবী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ব্রিটিশদের চোখে মাস্টারদা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হওয়া স্বাভাবিক। পাকিস্তানি শাসকদের কাছেও তিনি শত্রু বলে গণ্য হতে পারেন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি কেন শত্রু হিসেবে গণ্য হবেন?'
নোয়াপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাস্টারদা সূর্য সেনের বাড়ি ১৯৭৬ সালের ৮ নভেম্বর শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সরকার, যার নথি নম্বর-২৩৯। সে নথিতে সূর্য সেনের হাল সাকিন দেখানো হয়েছে ভারত। অথচ ১৯৩৪ সালে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। রাউজান থানার নোয়াপাড়া মৌজার প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা থেকে জানা যায়, নোয়াপাড়া মৌজায় সূর্য সেনের জমির বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) দাগ নম্বর-১৮৫৪৭, ১৮৫৪৮, ২০২১২, ১৮১৪৮, ১৮২৪০, ১৮১৪৫, ১৮১৪৬, ১৮৫৪৫ ও ১৮৪৮৭। সেখানে জমির পরিমাণ মোট ৮৩ শতাংশ।
তা ছাড়া একই মৌজার বিএস ১৮৫৪১, ১৮৫৪৪, ২০১০৯, ১৮৫৩৯, ১৮৫৪৩, ১৮৬৩৮, ২০১০৮, ১৮৬৩৮ ও ২০১০৭ নম্বর দাগে সূর্য সেনের পরিবারের আরো দুই একর সোয়া আট শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমির শ্রেণী উল্লেখ করা হয়েছে বসতভিটি, পুকুর, পথ, নাল ও খাই (ছোট জলাধার) হিসেবে। ওই জমি ১৯৬৭ সালের ৩০ জানুয়ারি শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, যার নথি নম্বর-৩৫৯। নোয়াপাড়ার পথেরহাট বাজারে ইউনিয়ন তহসিল অফিসে গিয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রঞ্জিত কুমার পালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে সূর্য সেন ও তাঁর পরিবারের সব সম্পত্তি মাস্টারদা সূর্য সেন স্মৃতি সংসদের নামে লিজ দেওয়া হয়েছে। সম্পত্তির ওপর সূর্য সেনের স্মৃতিস্তম্ভ ও হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। তবে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত এসব সম্পত্তি শত্রু বা অর্পিত হিসেবেই তালিকাভুক্ত থাকবে বলে তহসিলদার রঞ্জিত কুমার পাল জানান।
বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট প্রথম দাবি তুলেছিলেন কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১)। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৯ মার্চ তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক-হানাদার বাহিনী। তাঁর লাশের হদিস পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইলে তাঁর বাড়ি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সরকার। 'যাঁর রক্তে দেশ স্বাধীন হলো, তাঁর বাড়ি কিভাবে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হলো' সে প্রশ্ন কুমিল্লার সংস্কৃতি কর্মী জাবেদ আখতারের।
জানা যায়, কুমিল্লা শহরে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বসতবাড়ি জাল দলিলপত্রের মাধ্যমে দখলের চেষ্টা করা হয়। এ ব্যাপারে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি আরমা দত্ত বলেন, 'অনেক চেষ্টা-তদবির করেও দাদুর বাড়ি শত্রু সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়নি। এত বড় দেশপ্রেমিকের বাড়ি-ঘর শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার মতো লজ্জা আর কী হতে পারে?'
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, রবি নিয়োগী ও কবি নবীন চন্দ্র সেনের জমিজমাও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, 'আসলে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার জন্যই তাঁদের শত্রু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'যত বড় দেশপ্রেমিক কিংবা বিপ্লবী হোক না কেন, তাঁদের একমাত্র অপরাধ তাঁরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এ একটি মাত্র কারণেই এ দেশের অসংখ্য মানুষকে শত্রুর তালিকায় ফেলে তাঁদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে।' সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, 'রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অবিচার করেছে জে এম সেন অর্থাৎ যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের প্রতি। তিনি ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সেনের প্রধান অনুসারী এবং ব্যারিস্টার। ১৯২১ সালে স্বাধীনতার জন্য তিনি অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে নিজের আইন পেশা পরিত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। এমন সম্মান দেশের খুব কম মহিলার ভাগ্যেই জুটেছে। অথচ তিনি জীবিত থাকাকালে রহমতগঞ্জের বাড়ি থেকে তাঁকে নির্মমভাবে উচ্ছেদ করে সে বাড়ি দখল করে নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সেখানে তিনি শিশুবাগ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এখনো সে বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। ১৯৩৩ সালে রাঁচী জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় দেশপ্রিয় মারা গেলেও তাঁকে দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি ১৯৬৫ সালের আইনে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ করা দোতলা বাড়ির ফটকে 'শিশুবাগ' লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম আছে সামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইসহাকের।
সিলেটের চৌহাট্টার 'সিংহবাড়ী' দেশবাসীর কাছে রবীন্দ্র ও নজরুল স্মৃতিধন্য হিসেবে পরিচিত হলেও সে বাড়ি বর্তমানে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত। সিংহবাড়ীর অন্যতম উত্তরসূরি সুজেয় সিংহ মজুমদার জানান, তাঁর দাদু গোবিন্দ সিংহ মজুমদারের আমন্ত্রণে কবিগুরু ও বিদ্রোহী কবি সিলেটে এসে সিংহবাড়ীতে অবস্থান করেন। সে বাড়ি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত। তিনি জানান, ৯৫.৬০ শতাংশ জমির ওপর সিংহবাড়ী গড়ে উঠেছে। এ সম্পত্তির ওয়ারিশসূত্রে মালিক উপেন্দ্র নারায়ণ সিংহ মজুমদার, সুধীরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ মজুমদার, শুভব্রত সিংহ মজুমদার ও সত্যব্রত সিংহ মজুমদার। তাঁদের মধ্যে সুধীরেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার ও শুভব্রত সিংহ মজুমদার ভারতে চলে গেলে তাদের জমি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। উপেন্দ্র নারায়ণ সিংহ মজুমদারের চার ছেলে সঞ্জয় সিংহ মজুমদার, সুজেয় সিংহ মজুমদার, জ্যোতির্ময় সিংহ মজুমদার ও সুধাময় সিংহ মজুমদার নিজবাড়িতে থেকে রেকর্ড ও খারিজ করে বসবাস করছেন। কিন্তু অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১-এর তালিকায় পুরো জমিই রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ জরিপে (বিএস) সিংহবাড়ীর ৯৫.৬০ শতাংশ জমিই শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ফলে তাঁরা বাড়ির খাজনা দিতে পারছেন না। ৩০ ধারায় রেকর্ড সংশোধনী মামলা করা হলেও সেটলমেন্ট কোর্ট তা আমলে আনছেন না। ২০০৩ সালে এ সিংহবাড়ী সিলেটের মাকসুদ বখতের কাছে লিজ দেওয়া হলে তা নিয়ে সিলেটে ব্যাপক আন্দোলন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন সে লিজ বাতিল করতে বাধ্য হয়।
শেরপুরে বিপ্লবী রবি নিয়োগীর দুই একর ৩২ শতাংশ জমি ১৯৬৫ সালে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। রবি নিয়োগীর ছেলে রঞ্জিত নিয়োগী ১৯৭৭ সালে আদালতে মামলা করলে ১৯৭৭ সালে রায়ে ওই সম্পত্তি রবি নিয়োগীর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আদালতের রায়ের পরও ১৯৮২ সালে নারায়ণপুর মৌজার বিএস ২৪৬৩, ২৪৬৫ ও ২৪৭৭ নম্বর দাগের সে জমি ফের শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৯৯৩ সালে মামলা করা হলে আদালত ওই জমি শত্রু সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) জরিপে দুই একর ৩২ শতাংশ জমির পরিবর্তে দুই একর ৭৫ শতাংশ জমি শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে রবি নিয়োগীর ছেলে রঞ্জিত নিয়োগী বলেন, 'জমি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে আমাদের বারবার রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। অথচ আমার বাবা দেশের জন্য ৩৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন। তিনি কখনো দেশ ছেড়ে যাননি। জন্মস্থান শেরপুরেই তিনি ২০০২ সালের ১০ মে মৃত্যুবরণ করেন।'
কবি নবীন চন্দ্র সেন লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ রোপণ করেছিলেন। ১৮৭৫ সালে তিনি 'পলাশীর যুদ্ধ' নামে মহাকাব্য লিখে ব্রিটিশদের রোষানলে পড়েছিলেন। অথচ তিনি তখন ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি করতেন। ওই মহাকাব্য লেখার জন্য তিনি তৎকালীন প্রশাসনের নজরবন্দি ছিলেন। মৃত্যুর ৭৩ বছর পর ১৯৮২ সালের দিকে চট্টগ্রাম শহরের জামাল খান রোডে (চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে) তাঁর বাড়ি শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এক সময় তাঁর বাড়িটি জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতা দখল করে নিয়েছিলেন। বর্তমানে সেই বাড়ির প্রায় এক বিঘা জমি বিভিন্ন জন দখল করে আছে বলে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কবি নবীন চন্দ্র সেনের জ্ঞাতী ভাগ্নে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, 'নবীন চন্দ্র সেনের মতো এত বড় কবির বাড়ি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? রাষ্ট্রের উচিত অচিরেই এ গ্লানি থেকে কবিকে মুক্ত করা।'
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর বারদী মৌজার ৬৮৩ নম্বর সিএস দাগের ৫৩ শতাংশ জমি (বাড়ি) শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাদির নামে এক ব্যক্তি বাড়িটি দখল করে বসবাস করছেন। তবে জ্যোতি বসুর নানা শরৎ চন্দ্র দাসের কাছ থেকে পাওয়া একই মৌজার ৯০৬ নম্বর দাগের ৬১ শতাংশ জমি এখনো জ্যোতি বসু ও তাঁর বড় ভাই সৌরিন্দ্র কিরণ বসুর নামে রেকর্ডভুক্ত আছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জমিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে। গোবিন্দ চন্দ্র দেবের জমি সিলেটের বিয়ানীবাজারের লাউতায় এবং জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। দুটি বাড়িই বর্তমানে অবৈধভাবে দখলে আছে। 
Share:

বেদে জল সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?

Image may contain: cloud, sky, ocean, outdoor, nature and waterভূপৃষ্ঠের ৭০.৯ শতাংশই হল জল। পৃথিবীতে যাবতীয় জীবনের লক্ষণ প্রকাশের জন্যে জল অপরিহার্য। পৃথিবীতে পাওয়া বেশিরভাগ জলই সাগর বা মহাসাগরের। এছাড়াও ভূপৃষ্ঠের নীচের ভৌমজল (প্রায় ১.৬ শতাংশ) এবং খুবই নগন্য পরিমাণে (০.০০১ শতাংশ) বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প, মেঘ ও অধঃক্ষেপ পৃথিবীতে জলের অন্যতম উৎস। সমুদ্রের জলই ভূপৃষ্ঠে পাওয়া জলের মূল উৎস (প্রায় ৯৭ শতাংশ); এছাড়া হিমবাহ ও মেরুদেশীয় বরফ (প্রায় ২.৪ শতাংশ) এবং নদী, হ্রদ ও জলাশয় ভূপৃষ্ঠের জলের অন্যতম উৎস (প্রায় ০.৬ শতাংশ)। ভূপৃষ্ঠে পাওয়া জলের খুব সামান্য অংশ বিভিন্ন জীবদেহ এবং তা থেকে উৎপন্ন পদার্থগুলিতে থাকে। 

বেদে জল সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা দেখে নেইঃ 
(ঋগ্বেদ ১০।৯ এবং অথরববেদ ১।৫) 
১। শক্তির উৎসঃ 
आपो हि ष्ठा मयोभुवस्ता न ऊर्जे दधातन | महेरणाय चक्षसे || ऋ10.9.1, अथर्व 1.5.1 
এই জগতকে সুন্দর করে গড়ে তোলার ক্ষমতা জলের আছে। 
২। খাদ্যগুণঃ 
यो वः शिवतमो रसस्तस्य भाजयतेह नः | उशतीरिवमातरः || ऋ10.9.2,अथर्व 1.5.2 
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জল আমাদের পুষ্টি দেয় ঠিক যেমন নবজাতক মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পায়। 
৩। জীবন গুনঃ 
तस्मा अरं गमाम वो यस्य क्षयाय जिन्वथ | आपोजनयथा च नः ||ऋ10.9.3, अथर्व 1.5.3 
জলের ভিতরের জীবন্ত জিনিষ মানুষের জীবনশক্তি বাড়ায়। 
৪। জলের পবিত্র গুণঃ 
शं नो देवीरभिष्टय आपो भवन्तु पीतये | शं योरभि सरवन्तु नः || ऋ10.9.4, अथर्व 1.6.1 
জলের পবিত্র গুণ যেন আমাদের শান্তি ও উন্নতি দান করে। আমাদের রোগশোক থেকে মুক্তি ও সুরক্ষা করুক।
৫। জলের চিকিৎসা গুণঃ 
ईशाना वार्याणां कषयन्तीश्चर्षणीनाम | अपोयाचामि भेषजम || ऋ10.9.5, अथर्व 1.5.4 
জলের রোগমুক্তি ক্ষমতা আছে। আমরা যেন তা জানতে পারি। 
৬। अप्सु मे सोमो अब्रवीदन्तर्विश्वानि भेषजा | अग्निं चविश्वशम्भुवम ||ऋ10.9.6 अथर्व 1.6.2 
জলের রোগমুক্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য দানের ক্ষমতা আছে। 
৭। आपः पृणीत भेषजं वरूथं तन्वे मम | ज्योक चसूर्यं दृशे || ऋ10.9.7, अथर्व 1.6.3 
জলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দিরায়ু দানের ক্ষমতা আছে। 
যজুর্বেদ হতেঃ 
श्वात्रा: पीता भवत यूयमापो अस्माकमान्तरुदरे सुशेवा: | ता अस्मभ्यमयक्ष्मा अनमीवा अनागस: स्वदन्तु देवीरमृता ऋतावृध: || यजु: 4.12 
যখন আমি জলপান করি,আমার পাকস্থলীতে, সাথে সাথে আমাকে অত্যন্ত দ্রুত ভালোলাগার অনুভূতি দেয়। আমি যা পান করি তা যেন আমার রোগমুক্তি ঘটায়, স্বসাদু হয় এবং আমাকে সতেজ করে যাতে আমার গুণাবলী বিকশিত হয়। 
इदमापः प्र वहत यत किं च दुरितं मयि | यद्वाहमभिदुद्रोह यद व शेप उतानृतम || ऋ10.9.8, AV 7.89.3 
এই প্রবাহমান জলধারা যেন আমার মনের সকল কালিমা ধুয়ে নিয়ে যায় আবর্জনার মত। 
आपो अद्यान्वचारिषं रसेन समगस्महि | पোধ स्वानग्ना गहि तं मा सं सृज वर्चसा ||ऋ10.9.9 
জলদূষণ রোধ কর জাতে রোগ না ছড়ায়।

http://bangalihindupost.blogspot.com/2012/04/blog-post_5338.html
Share:

চানক্য-পণ্ডিতের কৌটিল্য-তত্ত্ব ইতিহাসের টেরাকোটায়

Image may contain: one or more people‘মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন।’
এই দুর্দান্ত উক্তিটির বয়স দু’হাজার বছরেরও বেশি, প্রায় আড়াই হাজার বছর। এটা চানক্য-শ্লোক বা বাণী। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কথাটা কতোটা বিশ্বাসযোগ্য ? যদি বলি এর বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য ? একযোগে হামলে পড়বেন অনেকেই। বিশ্বাসযোগ্যই যদি না হবে তো আড়াই হাজার বছর পেরিয়ে এসেও কথাটা এমন টনটনে থাকলো কী করে ! আসলেই তা-ই। কথাটায় একবিন্দুও ফাঁকি দেখি না। হয়তো আমরাই মানি না বলে। অথবা অক্ষরে অক্ষরে এতোটাই মেনে চলি যে, জানান দেবার আর বাকি থাকে না- আমাদের মনটাই ফাঁকি, ওখানে খাঁটি বলে কিছু নেই। আর এজন্যেই কি পবিত্র স্থানে গমনের জন্য হুমড়ি খেয়ে আমাদের মধ্যে এমন হুড়োহুড়ি লেগে যায় ? অসুস্থ হলে যেমন আমরা হন্যে হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটি, এটাও সেরকম। খোশগল্প করার নিয়ত না হলে সুস্থাবস্থায় কেউ কি ডাক্তারের কাছে যান !

চানক্যের আরো কিছু বাণী-
"বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নিচ কারো থেকে ভালো এবং নিচু পরিবার থেকে শুভ-লক্ষণা স্ত্রী- এসব গ্রহণ করা সঙ্গত।”
"মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।”
"যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্য কোনকিছু হাসিল করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্য কোন দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।”
"বিরাট পশুপালের মাঝেও শাবক তার মাকে খুঁজে পায়। অনুরূপ যে কাজ করে অর্থ সবসময় তাকেই অনুসরণ করে।”

বাণী চিরন্তনী জাতীয় কোন গ্রন্থ না হলেও (kautilya) কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে’ চানক্যের (chanakya) এরকম অমর বাণী নিশ্চয়ই অপর্যাপ্ত নয়। তা হবার কথাও নয়। কেননা প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম প্রবক্তা হিসেবে তিনি তাঁর কালজয়ী সংস্কৃত গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্রে’ (Arthashastra) কিভাবে একজন শাসককে আরো ভূখণ্ড ও মূল্যবান সম্পদ নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে তাঁর প্রজাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও জীবনমান উন্নত করার জন্য কাজ করতে হবে তা লিপিবদ্ধ করেন। নামে অর্থশাস্ত্র হলেও গ্রন্থটি মূলত শাসকের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রশাসন ও কূটনীতি বিষয়ক কৌশলের পরামর্শ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাজ্য শাসনের এতোবড়ো গুরুদায়িত্ব পালনের ফাঁকে শাসক-সম্রাটরা কি আদৌ তা পড়তেন বা পড়ার সময় পেতেন ? নিশ্চয়ই পড়তেন। সাম্রাজ্য-শাসক হিসেবে অত্যন্ত পরাক্রমশালী হলেও তাঁদের হয়তো এই বোধটুকু অন্তত ছিলো যে জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান শাসকদের মতো এতো মহাপরাক্রমশালী তাঁরা ছিলেন না। রাজদরবারগুলোতে তাই তৎকালীন জ্ঞানীগুণী ও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী পণ্ডিতদের আনাগোনা থাকতো বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

উদাহরণ হিসেবে আমরা জানি যে, গুপ্ত বংশের বিখ্যাত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যিনি বিক্রমাদিত্য নামেই সমধিক পরিচিত, তাঁর নবরত্ন সভার নয়জন রত্ন ছিলেন- (১) ধন্বন্তরি (২) ক্ষপণক (৩) অমরসিংহ (৪) শঙ্কু (৫) বেতালভট্ট (৬) ঘটকর্পর (৭) কালিদাস (৮) বরাহমিহির (৯) বররুচি। আর এ তথ্য পাই আমরা মহাকবি কালিদাসের (kalidasa) বিখ্যাত সংস্কৃত গ্রন্থ ‘জ্যোতির্বিদ্যাভরণ’-এর একটি সংস্কৃত শ্লোকে-
"ধন্বন্তরি-ক্ষপণকামরসিংহ-শঙ্কু-বেতালভট্ট-ঘটকর্পর-কালিদাসাঃ খ্যাতোবরাহমিহিরোনৃপতেঃ সভায়ং রত্নানি বৈ বররুচির্ণব বিক্রমস্য।”

কিন্তু এযাবৎ যতজন পণ্ডিত-রত্নের কথা আমরা জানি, তাঁদের মধ্যে চানক্য-পণ্ডিতকেই সবচাইতে প্রতিভাবান ও বাস্তববাদী বলে মনে হয়। তাঁর অবস্থিতিকাল কালিদাস যুগেরও আগে। দার্শনিক প্রজ্ঞা আর কূটনৈতিক পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত এই অসাধারণ প্রতিভাধর পণ্ডিত চানক্যের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিলো (vishnugupta) বিষ্ণুগুপ্ত (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০- খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৩)। কিন্তু জন্মগ্রাম ‘চানকা’ থেকে, মতান্তরে পিতার নাম 'চানক' থেকে, ‘চানক্য পণ্ডিত’ হিসেবেই তিনি ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠেন সর্বত্র।

উপমহাদেশের উচ্চতর জ্ঞান আহরণের প্রাচীন ও শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপিঠ যেখানে, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে বর্তমান পাকিস্তানের সেই তক্ষশীলায় তাঁর জন্ম এবং পরবর্তীতে তক্ষশীলা বিদ্যাপিঠেই একজন শিক্ষাগুরু হিসেবে ছিলেন বলে জানা যায়। ফলে সেখানকার পরিবেশ তাঁর সহজাত প্রতিভাকে করে তুলেছে ক্ষুরধার প্রজ্ঞায় উজ্জ্বল। ‘কূটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভুত ছিলেন বলে পরবর্তীতে গোত্র নামটিকে টিকিয়ে রাখার সদিচ্ছা থেকে ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম ধারণ করে লিপিবদ্ধ করেন তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’। কিন্তু এই ‘অর্থশাস্ত্র’ তো আর এমনি এমনি লিখিত হয়নি। এর পেছনের যে ইতিহাস, সেখানেই রয়ে গেছে একজন চানক্য পণ্ডিত বিষ্ণুগুপ্তের কৌটিল্য হয়ে ওঠার ঘটনাবহুল পটভূমি।

কিংবদন্তী আছে, মগধ রাজ্যের পরাক্রমশালী নন্দ বংশের শেষ রাজা, যিনি তার অন্যায় শাসনের জন্য প্রজাসাধারণের কাছে ভীষণ অপ্রিয় ছিলেন, একবার চানক্যকে অপমান করেন। চানক্য এই অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। এদিকে নন্দ রাজার পদস্থ ও উচ্চাভিলাষী তরুণ সামরিক কর্মকর্তা চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে প্রাণ বাঁচাতে তাকে বিন্ধালের জঙ্গলে পলাতক ও নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয়। ঘটনাচক্রে চানক্যের সাথে চন্দ্রগুপ্তের সাক্ষাৎ ঘটে। এই সাক্ষাতের ক্ষণলগ্নই যে একটা বিশাল জাতিগোষ্ঠির ভাগ্যচাকার মোড় ঘুরিয়ে চিরকালের নতুন বাঁক তৈরি করে দেবে তা কে জানতো। চন্দ্রগুপ্ত তাঁর জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে চানক্যকে গুরু, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণাদাতা হিসেবে মেনে নেন। অতঃপর চানক্যের সক্রিয় সহযোগিতায় চন্দ্রগুপ্ত একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং গুরুর সুনিপুণ পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে শেষপর্যন্ত নন্দরাজাকে সিংহাসনচ্যুত করতে সক্ষম হন। মগধের সিংহাসনে আরোহণ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য়েরই দ্বিতীয় পুরুষ হচ্ছেন বিন্দুসারা এবং তৃতীয় প্রজন্ম আরেক প্রতাপশালী শাসক সম্রাট অশোক।

শক্তিশালী নন্দ বংশের শাসন উৎখাতের পেছনে চানক্যের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও কুশলী কর্মকাণ্ড অসাধারণ কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছে। এবং তাঁর অবদানেই সম্রাট অশোকের পিতামহ (chandragupta) চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে উপমহাদেশের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পঞ্চম শতাব্দিতে রচিত প্রাচীন নাট্যকার বিশাখা দত্তের শতশত বছর জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রাজনৈতিক নাটক ‘মুদ্রারাক্ষস’-এ নন্দবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে চন্দ্রগুপ্তের বিশাল মৌর্যসাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চমৎকার বর্ণনা রয়েছে।

তবে এতৎবিষয়ক তথ্যসূত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে যেটিকে বিবেচনা করা হয়, তা হলো গ্রীক দূত মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ (Indica)। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মেগাস্থিনিস (Megasthenes) চন্দ্রগুপ্তের দরবারে অবস্থান করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করেন বলে জানা যায়। এখান থেকেই জানা যায় চন্দ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে আরোহন করেই পাটালিপুত্রকে তার রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন। বিহারের আধুনিক শহর পাটনার কাছেই ছিলো পাটালিপুত্রের অবস্থান। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৯৮ সাল পর্যন্ত চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে সমগ্র রাজ্য জুড়ে শান্তি বিরাজমান ছিলো। প্রজাদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ রাজা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিলো এবং রাজ্য বিকশিত হয়েছিলো সমৃদ্ধিতে। আর এগুলো সম্ভব হয়েছিলো চন্দ্রগুপ্তের জীবনে স্বর্গীয় দূতের মতো অভিভাবক হয়ে আসা সত্যিকারের বন্ধু, দার্শনিক ও গুরু চানক্যের কারণে।

জানা যায়, এর আগে মহামতি আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যুতে গ্রিক শাসনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়, গুরু চানক্যের পরামর্শে এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে পরাজিত করেন এবং পাঞ্জাবকে নিজ শাসনাধীনে আনেন। পরবর্তীতে পশ্চিম ভারতের সকল রাজ্য একে একে জয় করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রগুপ্ত। এই বিশাল সাম্রাজ্য দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য তিনি একটি মন্ত্রীপরিষদ গঠন করে চানক্যকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।

চন্দ্রগুপ্তের অতি-নির্ভরযোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদে বিলাসবহুল জীবন যাপনের অবারিত সুযোগ থাকার পরও, কথিত আছে যে, চানক্য এক শ্মশানবর্তী খুব সাধারণ একটি কুঁড়েঘরে নির্মোহ সন্ন্যাস জীবন-যাপন করতেন। ওখানে থেকেই বিশ্বস্ততার সাথে রাজপ্রদত্ত দায়িত্বপালনের পাশাপাশি শিষ্যবর্গকে রাজ্যশাসন কৌশল শিক্ষাসহ নৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ে জ্ঞান দান করতেন। এসব বিষয়ের কিছু কিছু তাঁর অন্যান্য বিবরণীতে সংগৃহিত হয়েছে। এ ধরনের একটি সংকলন- ‘চানক্য নীতি দর্পণ’। দু’হাজারেরও অধিক বছরের কাল পরিক্রমায় এসেও চানক্য নীতি শ্লোকগুলো এখনো যে গুরুত্বহীন হয়ে যায়নি, এখানেই ধর্ম, দর্শন, নীতিশাস্ত্র, সামাজিক আচরণ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে চানক্যের অভূতপূর্ব দার্শনিক প্রাজ্ঞতা প্রমাণীত। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে অসাধারণ দক্ষ পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চানক্যের খ্যাতি অপরিমেয়। সিদ্ধান্তে অটলস্বভাবী তাঁর কাছে অর্থহীন আবেগের কোন মূল্য ছিলো না। নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন কঠোর।

কালজয়ী গ্রন্থ কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে’ শাসকের প্রতি পরামর্শ হিসেবে চানক্যের কিছু বাণীকে দু’হাজার বছরের এতো দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসে এখনো অসম্ভব সমকালীন মনে হয়-
"যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না এবং শুধু অভিযোগ করে যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।”

"সকল উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর। সেজন্যে সবচেয়ে অধিক মনোযোগ দেয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে। তহবিল তসরূপ বা অর্থ আত্মসাতের চব্বিশটি পদ্ধতি আছে। জিহ্বার ডগায় বিষ রেখে যেমন মধুর আস্বাদন করা সম্ভব নয়, তেমনি কোন রাজ কর্মচারির পক্ষে রাজার রাজস্বের সামান্য পরিমাণ না খেয়ে ফেলার ঘটনা অসম্ভব ব্যাপার। জলের নিচে মাছের গতিবিধি যেমন জল পান করে বা পান না করেও বোঝা সম্ভব নয়, অনুরূপ রাজ কর্মচারির তহবিল তসরূপও দেখা অসম্ভব। আকাশের অতি উঁচুতেও পাখির উড্ডয়ন দেখা সম্ভব; কিন্তু রাজকর্মচারির গোপন কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সমভাবে অসম্ভব।”

যুগে যুগে প্রজাবৎসল শাসককূলের উত্তম শাসনকার্যের সবচাইতে প্রাচীন ও অসাধারণ সহায়িকা হিসেবে রচিত ধর্ম-দর্শন-ন্যায়পরায়ণতা-কূটনীতি-অর্থনীতি-রাষ্ট্রনীতির আকর-গ্রন্থ কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’-কে তৎকালীন প্রজাহিতৈষী মৌর্য শাসকরা যে হেলাফেলা করেননি তা বুঝা যায় চানক্য-সহায়তায় মৌর্যশাসন প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের চব্বিশ বছরের শাসনকালের পরও দ্বিতীয় প্রজন্ম বিন্দুসারা'র জনপ্রিয়তা যাচাই করলে। তারও পরে এই মৌর্য বংশের তৃতীয় শাসক সম্রাট অশোকের শাসনকাল তো প্রতীকী স্থায়িত্ব পেয়ে আছে বর্তমান ভারতের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামে প্রাচীন ও গভীর ঐতিহ্যবাহী অশোক-স্তম্ভের দৃশ্যমান অবস্থিতিতে। এমনকি আরো বহু পরে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্যের সমৃদ্ধিময় শাসনকালের কিংবদন্তীয় উপকথাগুলোর জনপ্রিয় লোকভাষ্য থেকেও তা ধারণা করা যায় হয়তো।

(০২)
এই উপমহাদেশীয় প্রাচীন মাটির সন্তান আমাদেরই পূর্বপুরুষ চানক্য-পণ্ডিত বিষ্ণুগুপ্তের দার্শনিক কৌটিল্য হয়ে ওঠা বা যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’ রচনার কিংবদন্তীয় কাহিনী বর্ণনা করা যতোটা ইন্দ্রীয়সুখের ব্যাপার, একজন কৌটিল্যের উন্মেষের কার্য-কারণ সূত্র খোঁজাটা বোধ করি ততটাই জটিলতার বিষয়। তৎকালীন প্রাচীন ভারতোপমহাদেশীয় আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে অনিবার্যভাবে একজন কৌটিল্যের উন্মেষ না ঘটলে সেসময়কার পরিবর্তন বা অপরিবর্তনহেতু শাসক-মানসের জ্ঞান-বিজ্ঞান স্পৃহা কতোটা ফলবতী হতো বা পরবর্তীকালের শাসকানুকুল্যে সমৃদ্ধ ভারতীয় সভ্যতা আদৌ কোন বাস্তবরূপ পেতো কিনা এবং অন্যান্য উন্নত সভ্যতার সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিনিময় সম্ভাব্যতা কেমন হতো সেসব হয়তো এখন কেবলি কুটতর্ক। তবে কৌটিল্যের কৌটিল্য হয়ে ওঠার পেছনে তৎকালীন ইউরোপীয় বা সুনির্দিষ্টভাবে গ্রিক সভ্যতার সাথে ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিনিময় ব্যবস্থার যথেষ্ট অবদান থাকার সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। কেননা যে সময়টাতে কৌটিল্য ‘অর্থশাস্ত্র’ লিপিবদ্ধ করেন, এর খুব কাছাকাছি সময় পূর্বেই প্লেটোর আলোড়িত গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের জন্ম হয়েছে কেবল। এবং কৌটিল্যের সময়কালে এই দর্শনের বাণী বা প্রভাব গ্রিসের বাইরে ছড়াতে শুরু করেছে এমন ধারণাও করতে পারি আমরা।

গ্রিক দার্শনিক (Plato) প্লেটো (খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৭-খিষ্টপূর্ব ৩৪৭) আশি বছর বয়সে যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন চানক্যের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০-খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৩) বয়স তথ্যানুযায়ী তিন বছর। তাছাড়া চানক্যের সময়কালে পাঞ্জাব যে গ্রিক আধিপত্যে ছিলো এবং গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যুতে পাঞ্জাবে গ্রিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলে গ্রিকদের জন্য সেই অস্থির সময়ে চানক্য মৌর্য শাসক চন্দ্রগুপ্তকে পাঞ্জাবে গ্রিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হন। এছাড়াও খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্তের দরবারে অবস্থান করে তাঁর ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থের মাল-মশলা সংগ্রহের ঘটনা চানক্যের সময়কালেই হয়েছিলো বলে ধারণা। ফলে গ্রিক সংস্কৃতির এতোটা স্পর্শে এসেও চানক্যের মতো অসাধারণ প্রতিভাবান পণ্ডিত-দার্শনিক যে গ্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে একটুও প্রভাবিত হননি সে কথা বলাটা বোধ করি খুবই অযৌক্তিক হবে। তবে এটাও আমাদের ধারণায় রাখতে হবে যে, জ্ঞান হচ্ছে বাতাসের মতো; চিন্তা-চেতনাকে স্বচ্ছ করতে সহায়তা দেয় শুধু, চিন্তার শরীর পুষ্ট হতে প্রয়োজন অন্যকিছু।

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস নিরক্ষর ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কেননা তিনি নিজে কখনোই কিছু লিখে যাননি। তাঁর দার্শনিক শিষ্য প্লেটোর মাধ্যমেই আমরা রূপায়িত সক্রেটিসকে চিনি এবং জানি। ইউরোপীয় রাষ্ট্রদর্শনের উৎস বলে চিহ্ণিত প্লেটোর দর্শন ও রাষ্ট্রচিন্তা বিষয়ক জগৎবিখ্যাত গ্রন্থ (Republic) ‘রিপাবলিক’-এ প্রধান চরিত্র সক্রেটিসের অদ্ভুত ও চমৎকার যুক্তিবিস্তারের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের দর্শনসূত্র এবং একটি আদর্শ রাষ্ট্রের কাল্পনিক রূপরেখা তৈরির যে চমৎকারিত্ব দেখানো হয়েছে তা অভূতপূর্ব। তবে গোটা দর্শনের মূল লক্ষ্যটাই ছিলো সত্য ও ন্যায়ের সন্ধান এবং এর মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলসূত্র ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের স্বরূপ কী হবে তা উপস্থাপন।

সৈয়দ মকসুদ আলী অনুদিত বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত নভেম্বর ১৯৭৩-এ প্রকাশিত ‘প্লেটোর রিপাবলিক’ গ্রন্থটির ‘প্লেটোর রাষ্ট্রদর্শন’ আলোচনায় অনুবাদকের বক্তব্যটি এরকম-
‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে প্রধানত ন্যায়ধর্ম (justice) বিষয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে। গ্রন্থের মূল চরিত্র সক্রেটিস যে সত্যটি তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন তা হলো : অবিচার, অনাচার ও দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে দু’টি শক্তি, একটি সত্যাশ্রয়ী জ্ঞানী মানুষ এবং অপরটি ন্যায়ধর্ম। সত্য ও ন্যায়ের সন্ধান লাভ করতে হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে-সে পথ শিক্ষার, যার মাধ্যমে আত্মোৎকর্ষ লাভ করা যায়।

মজার বিষয় হচ্ছে, চানক্য-পণ্ডিত কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রের’ মূল সংস্কৃত গ্রন্থটির নামের অর্থও নাকি দাঁড়ায় ‘পৃথিবীতে সাধারণ কল্যাণ বিষয়ক বিবরণী’। আর কল্যাণের সাথে খুব স্বাভাবিকভাবে ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টিই জড়িত থাকে। যেহেতু শাসকদের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রশাসন ও কূটনীতি কৌশলের পরামর্শ হিসেবে গ্রন্থটি লিপিবদ্ধ হয়েছে, অতএব শাসকের ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টিই বিবেচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। ‘অর্থশাস্ত্রে’র উপস্থাপনভঙ্গি যদিও ‘রিপাবলিকে’র মতো নয়, তবু প্লেটো ও কৌটিল্য উভয়েই ভিন্ন ভিন্নভাবে তাঁদের নিজেদের মতো করে মানব-চরিত্রের প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণে ব্রতী হয়েছেন। এবং এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রচিন্তায় আসলে মানুষই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অনুঘটক। তবে দেশ কাল রাষ্ট্র পরিবেশ বিচারে মানুষের প্রকৃতি যেহেতু ভিন্ন ও বৈচিত্র্যময়, তাই তাঁদের বিশ্লেষণধর্মিতাও ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে পূর্বোক্ত ‘প্লেটোর রিপাবলিক’ গ্রন্থের অনুবাদকের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য-
‘গ্রিক দার্শনিকগণ, বিশেষত প্লেটো, মানবচরিত্রের বৈচিত্র্য তাঁর রিপাবলিক-এ যেরূপ সূক্ষ্মভাবে উন্মোচিত করেন তার তুলনা বিরল। প্রাচীন ভারতবর্ষে এ কাজটি আংশিকভাবে করেছেন ‘অর্থশাস্ত্রের’ রচয়িতা কৌটিল্য, এবং মহাচীনে কনফুসিয়াস, মেনসিয়াস।’

আরেকটা বিষয় বেশ কৌতুহলের দাবি রাখে। প্লেটোর ‘রিপাবলিকে’ একটি আদর্শ রাষ্ট্রের অধিকর্তা হিসেবে কেন দার্শনিকগণকেই মনোনীত করা উচিত, এর সপক্ষে যুক্তি বিস্তার করতে গিয়ে এক জায়গায় সক্রেটিস বলছেন-
‘আমার মতে দার্শনিকগণই রাষ্ট্রের অধিপতি হবার যোগ্য। কেবল তাই নয়, আমরা যাদের রাজা বা শাসক বলি তাদেরও প্রজ্ঞাশক্তিতে যথেষ্টভাবে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। বস্তুত রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দর্শনের মধ্যে সমন্বয় না ঘটলে এবং যেসব সাধারণ স্বভাববিশিষ্ট লোকসমষ্টি যথেচ্ছাচারে লিপ্ত থাকে তাদের কঠোরভাবে সংযত করা না হলে রাষ্ট্র ত দূরের কথা, গোটা মানবজাতিও বিপদ-মুক্ত হতে পারবে না। এমন কি প্রিয় গ্লাউকন, আমরা যে আদর্শ রাষ্ট্রের বর্ণনা দিয়েছি তাও এরূপ অস্বাভাবিক অবস্থায় অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। অনেকের কাছেই কথাটা হয়ত কূটাভাসের মতো শোনাবে; কেননা, আমি জানতাম তোমাদের মধ্যে অনেকেই আমার রাষ্ট্রকল্পনায় বিশ্বাসী নও এবং এজন্যেই হয়ত বিশ্বাস করতে পারছ না যে, রাষ্ট্রের বা ব্যক্তির কল্যাণ কেবল আমার প্রস্তাবিত পথেই আসতে পারে।’

বিষয়টা কাকতালিয় কিনা জানি না, চানক্যের উপরোল্লিখিত কিংবদন্তীয় জীবনেতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, উপমহাদেশের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার বিশাল সাম্রাজ্য দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে গুরু চানক্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। আমরা এও জানতে পারি, এই সাম্রাজ্য পরিচালনায় গুরু চানক্যের পরামর্শ ও অবদানই মূখ্য ছিলো। আর অতি বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে এতো বড়ো ক্ষমতা পরিচালনা করেও ব্যক্তিগতভাবে চানক্য ছিলেন জাগতিক সমস্ত বিয়য়ের প্রতি একেবারেই নির্মোহ ও সন্ন্যাস জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। এমনকি সবসময় কৌপিন-বস্ত্র পরিধান ও শ্মশানবর্তী এক সাধারণ কুড়েঘরে অবস্থান করে শিষ্যদেরকে ন্যায় ও দর্শনশাস্ত্রে জ্ঞানশিক্ষা দান করতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন তিনি। প্লেটোর ‘রিপাবলিকে’ সক্রেটিস কথিত রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দর্শনের মধ্যে এমন অদ্ভুত সমন্বয়ক ভূমিকার উদাহরণ চানক্য ছাড়া আর রয়েছে কিনা জানা নেই।

বক্তব্যের স্পষ্টতার জন্য বলে রাখা জরুরি যে বক্ষ্যমান আলোচনার অর্থ এই নয় যে, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’কে গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন বা ‘রিপাবলিক’ এর অনুসৃতি হিসেবে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এ দুটোতে বরং ভিন্নতাই বেশি পরিলতি হয়। সামাজিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ পরিস্থিতি ও জনরুচি সাপেক্ষে এই ভিন্নতাটাই অধিকতর যৌক্তিক। ‘রিপাবলিকে’ মূলত একটি কাল্পনিক নগররাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা তৈরি যতটুকু প্রাধান্য পেয়েছে, অন্যদিকে ‘অর্থশাস্ত্রে’ প্রাধান্য পেয়েছে শাসকের কূটনীতি ও রাজ্যশাসন কৌশলের উৎকর্ষ অর্জন। তবে উভয়ক্ষেত্রে সাযুজ্য হলো শেষবিচারে একজন শাসকের ন্যায়পরায়ণ হয়ে ওঠা বা সর্বক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করা। আর এখানেই বুঝি সেই কথাটাই প্রযোজ্য হয়ে ওঠে যা এ লেখায় বলার চেষ্টা করা হয়েছে- ‘গ্রেট ম্যান থিংক এলাইক’।

(০৩)
প্রায় সমসাময়িক রাষ্ট্রচিন্তক বা দার্শনিক হিসেবে প্লেটো ও চানক্য তথা কৌটিল্য, দু’জনের মেধা-মননে গুণগত মিল থাকলেও তাঁদের নিজ নিজ যাপিত জীবন অনুযায়ী অবস্থানগত অমিলটাই লক্ষ্য করা যায় বেশি।

প্লেটো রাষ্ট্রীয় মতাবলয়ের বাইরে ও দূরবর্তী নিরীহ অবস্থানে থেকে রাষ্ট্রচিন্তায় ভাবিত একজন দার্শনিক। ধারণা, কল্পনা ও যুক্তিই হচ্ছে তাঁর দর্শন-সূত্র তৈরির মূল হাতিয়ার। অন্যদিকে ক্ষমতাবলয়ের প্রায় কেন্দ্রে অবস্থান ছিলো বলে চানক্য একেবারে নির্মোহ ও ঋষিস্বভাবী পণ্ডিত হলেও শাসক-মানসকেও নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রভাবিত করার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে একজন বাস্তববাদী রাষ্ট্রচিন্তক ও দক্ষ পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চিন্তাকে বাস্তবায়নের সুযোগই তার শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার ছিলো।

আবার সক্রেটিসের জবানিতে প্লেটো বিশ্বাস করতেন- ‘দেহের সৌন্দর্যের চাইতে চিন্তার সৌন্দর্য অধিকতর মোহময় ও এর প্রভাব যাদুতুল্য।’ অর্থাৎ কল্পনার বিমূর্ত চেহারায় তুষ্ট তিনি। অন্যদিকে সিদ্ধান্তে অটলস্বভাবী অসাধারণ দক্ষ পরিকল্পনাবিদ চানক্যের কাছে অর্থহীন আবেগের কোন মূল্য ছিলো না। নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নে ছিলেন কঠোর। অর্থাৎ প্রয়োগযোগ্যতা ও মূর্ততাই তাঁর আরাধ্য।

তবে ভিন্ন প্রেক্ষিত থেকে যে ভিন্নতাটা সবচাইতে পীড়াদায়ক হয়ে দেখা দেয় আমাদের কাছে, তা হলো- প্রায় আড়াই হাজার বছরের ব্যবধানে এসেও বাস্তবতার মাটি না পাওয়া প্লেটোর ইউরোপকেন্দ্রিক একটা কাল্পনিক দর্শনকে খুব ভালোভাবে মনে রেখে এর অসম্ভব পরিচর্যা করে যেতে আমরা সক্ষম হলেও নিজস্ব রাষ্ট্রচিন্তা ও অসাধারণ পরিকল্পনাকে বাস্তবতায় রূপদানকারী আমাদের অত্যন্ত আপন একজন চানক্য পণ্ডিত কৌটিল্যকে ‘অর্থশাস্ত্রের’ দুষ্প্রাপ্রাপ্যতার মতোই আমরা ভুলতে বসেছি প্রায়। আর এখানেই বুঝি কৌটিল্য পুনঃবিশ্লেষণের দাবি রাখে।

(০৪)
দর্শনের ক্ষেত্রে যেকোনো তত্ত্বের প্রকৃত ভিত্তি হচ্ছে এর প্রয়োগযোগ্যতা ও জনমানুষের চিন্তাবিশ্বের ধারাবাহিক বিবর্তনকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা। এ নিরিখে প্লেটোর ‘রিপাবলিক’ কেবল একটি আদর্শ রাষ্ট্রের কাল্পনিক স্বরূপ অন্বেষণই ছিলো না, তারচে’ও বহু বহু গুণে বেশি ছিলো মানবজাতির চিন্তাজগতে যুক্তির শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দর্শনসূত্র খোঁজার এক যুগান্তকারী পদ্ধতির উদ্ভাবন। এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমী’র প্রাক্তন মহাপরিচালক মযহারুল ইসলামের বক্তব্যকে প্রতিধ্বনিত করে বলা যায়-

‘বলা হয়ে থাকে যে সমস্ত ইউরোপের আধুনিক দর্শন প্লেটোর ফুটনোট মাত্র। কথাটিতে হয়তো কিছু অতিরঞ্জন দোষ আছে; কিন্তু প্লেটোকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতার মর্মার্থ, বিশেষভাবে ইউরোপীয় দার্শনিক চিন্তাধারাকে যথাযথভাবে অনুধাবন করা যায় না। প্লেটোর পটভূমিকাতেই পরবর্তী দর্শন ও দর্শনসংশ্লিষ্ট মানবজ্ঞান প্রসার লাভ করেছে। প্লেটোর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ রিপাবলিক।… প্লেটো তাঁর রিপাবলিকের এক জায়গায় মন্তব্য করেছেন, আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের স্থান হতে পারে না। কারণ, কবিরা কল্পনাবিলাসী। কিন্তু প্লেটোর নিজের লেখাও কাব্যধর্মী। কাব্যধর্মী বলেই তার আবেদন হৃদয় স্পর্শ করে। রিপাবলিক শুধু দার্শনিক জ্ঞানের বিচিত্র চর্চায় সমৃদ্ধ নয়- এর উপস্থাপনরীতি উৎকৃষ্ট সাহিত্যের সূর্যালোকে সঞ্জীবিত।
দর্শন ও সাহিত্য, উভয়দিক থেকেই প্লেটোর অবদান বিস্ময়কর এবং অবিনশ্বর। প্লেটো সর্বকালের এক মহান প্রতিভা।’

অন্যদিকে কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ একধরনের সাহিত্যগুণসম্পন্ন দর্শন হলেও তাকে মূলত সাধারণজনস্পর্শ-বিচ্ছিন্ন প্রাচীন ভারতীয় রাজন্যবর্গের ন্যায়ানুগ রাজ্যশাসনের নিমিত্তে লিপিবদ্ধ অসাধারণ নীতিশাস্ত্র বা গাইডলাইন বলা চলে। সভ্যতার অনিবার্য গতিময়তায় সেই প্রতাপ বিকিরণকারী রাজন্যপ্রথার গতি-সঙ্কোচনের ফলে এটিকে হয়তো একটি জনবিচ্ছিন্ন সম্ভ্রান্ত রাজ-দর্শন হিসেবেই ইতিহাসের টেরাকোটায় অতিমহার্ঘ উপকরণের পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। এতে করে সমকালীন রাষ্ট্র ও কূটনীতি দর্শনে দক্ষ পরিকল্পনাবিদ কৌটিল্যের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, মেধা, ন্যায়পরায়ণতা ও ব্যতিক্রমী প্রতিভার স্বীকৃতি হয়তো এতটুকু ক্ষুণ্ন হয় নি বা হবে না, কিন্তু ইউরোপীয় চিন্তাদর্শনে নির্মিত আমাদের সর্বব্যাপী রাষ্ট্র-ভাবনা ও দর্শনে কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ যদি শেষপর্যন্ত ‘চানক্য-পণ্ডিতের কৌটিল্য-পুরাণ’ হিসেবেই এনটিক-মর্যাদায় স্থির হয়ে যায়, তাতেও বোধ করি আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
তবুও কৌটিল্য এবং ‘অর্থশাস্ত্র‘ একান্ত আমাদেরই এক ঐতিহ্য-সম্পদ।

কৃতজ্ঞতা ও তথ্যঋণ-সূত্র:
১) প্লেটোর রিপাবলিক/ অনুবাদ: সৈয়দ মকসুদ আলী/ বাংলা একাডেমী, ঢাকা, নভেম্বর ১৯৭৩।
২) রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (ramkrishnabh.blogspot)
তথ্য উৎস: রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য কর্তৃক উল্লেখিত-
[Philosophy of Chanakya• Kautilya's Arthashastra (full 1915 Shamasastry text, divided into 15 books)• Kautilya: the Arthshastra - Chanakya's revered work• Philosophy and Biography]

লিখেছেনঃ রণদীপম বসু
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।