• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

০৮ জুন ২০১৭

মৃত্যুবিজেতা- ক্ষুদিরাম বসু

রাজদ্রোহী ১৮ বছরের আসামীকে কাটগড়ায় জেরা করা হচ্ছে।
- তুমি মৃত্যুকে ভয় পাও না?
ভয় পাব কেন? আমি গীতা পড়েছি!
প্রশ্নকর্তার ভুরু কুঁচকে গেল। এরকম দুর্বিনীতকে বেশী প্রশ্ন করার আর প্রয়োজন নেই।
- আচ্ছা, তোমার শেষ ইচ্ছে কি?
আমি ভালো বোমা বানাতে পারি । আমি চাই দেশের সব ছেলেমেয়েদের বোমা বানানো শিখিয়ে দিতে।
এ কি রে বাবা! এ ছেলের তো বুকে ভয়-ডর কিছু নেই! একে তো ঝুলিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেয়া হয়েছে। এখন রায় কার্যকর করতে হব।
ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় তাকে ১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট ভোর ৫টায়।
ভারতবাসী কেঁদেছিল-
'একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে
মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী।
শনিবার বেলা দশটার পরে
জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো
হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি
দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো
তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি'
লতা মুঙ্গেশকরের কন্ঠে এই গান শুনে বুকের ভেতর একবার হলেও মুচড়ে ওঠেনি এমন বাঙালি কম। আজ এই মহানায়কের জন্মদিন। ৩ ডিসেম্বর। ৩ ডিসেম্বর ১৮৮৯ সালে জন্মেছিলেম এই মৃত্যুবিজেতা- ক্ষুদিরাম বসু! ক্ষমা কোরো আমাদের।

(c)স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

হে পবিত্র আর্যভূমি, তোমার তো কখনও অবনতি হয় নাই। কত রাজদণ্ড চূর্ণ হইয়া দূরে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে ।

আমরা সকলেই ভারতের অধঃপতন সম্বন্ধে শুনিয়া থাকি। এককালে আমিও ইহা বিশ্বাস করিতাম। কিন্তু আজ অভিজ্ঞতার দৃঢ়ভূমিতে দাঁড়াইয়া, সংস্কারমুক্ত দৃষ্টি লইয়া সর্বোপরি দেশের সংস্পর্শে আসিয়া উহাদের অতিরঞ্জিত চিত্রসমূহের বাস্তবরূপ দেখিয়া সবিনয়ে স্বীকার করিতেছি, আমার ভুল হইয়াছিল। হে পবিত্র আর্যভূমি, তোমার তো কখনও অবনতি হয় নাই। কত রাজদণ্ড চূর্ণ হইয়া দূরে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে, কত শক্তির দণ্ড এক হাত হইতে অন্য হাতে গিয়াছে কিন্তু ভারতবর্ষে রাজা-রাজসভা অতি অল্প লোককেই প্রভাবিত করিয়াছে। উচ্চতম হইতে নিম্নতম শ্রেণী অবধি বিশাল জনসমষ্টি আপন অনিবার্য গতিপথে ছুটিয়া চলিয়াছে, জাতীয় জীবনস্রোত কখনও মৃদু অর্ধচেতনভাবে, কখনও প্রবল জাগ্রতভাবে প্রবাহিত হইয়াছে। শত শতাব্দীর সমুজ্জ্বল শোভাযাত্রার সম্মুখে আমি স্তম্ভিত বিস্ময়ে দণ্ডায়মান। সে শোভাযাত্রার কোন কোনও অংশে আলোকরেখা স্তিমিতপ্রায়, পরক্ষণে দ্বিগুণ তেজে ভাস্বর, আর উহার মাঝখানে আমার দেশমাতৃকা রানীর মতো পদবিক্ষেপে পশুমানবকে দেবমানবে রূপান্তরিত করিবার জন্য মহিমময় ভবিষ্যতের অভিমুখে অগ্রসর হইতেছেন; স্বর্গ বা মর্তের কোন শক্তির সাধ্য নাই—এ জয়যাত্রার গতিরোধ করে।

হে ভ্রাতৃবৃন্দ, সত্যই মহিমময় ভবিষ্যৎ! প্রাচীন উপনিষদের যুগ হইতে আমরা পৃথিবীর সমক্ষে স্পর্ধাপূর্বক এই আদর্শ প্রচার করিয়াছেঃ ‘ন প্রজয়া ন ধনেন ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ’—পারে। জাতির পর জাতি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হইয়াছে এবং বাসনার জগতে থাকিয়া জগৎ-রহস্য সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াছে। তাহারা সকলেই ব্যর্থ হইয়াছে, প্রাচীন জাতিসমূহ ক্ষমতা ও অর্থগৃধ্নুতার ফলে জাত অসাধুতা ও দুর্দশার চাপে বিলুপ্ত হইয়াছে—নূতন জাতিসমূহ পতনোন্মুখ । শান্তি অথবা যুদ্ধ, সহনশীলতা অথবা অসহিষ্ণুতা, সততা অথবা খলতা, বুদ্ধিবল অথবা বাহুবল, আধ্যাত্মিকতা অথবা ঐহিকতা—এগুলির মধ্যে কোন্‌টির জয় হইবে, সে প্রশ্নের মীমাংসা এখনও বাকি।
বহু পূর্বে আমরা এ-সমস্যার সমাধান করিয়াছি, সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়া সেই সমাধান অবলম্বন করিয়াই চলিয়াছি, শেষ অবধি ইহাই ধরিয়া রাখিতে চাই। আমাদর সমাধান—ত্যাগ, অপার্থিবতা।
সমগ্র মানবজাতির আধ্যাত্মিক রূপান্তর—ইহাই ভারতীয় জীবন-সাধনার মূলমন্ত্র, ভারতের চিরন্তন সঙ্গীতের মূল সুর, ভারতীয় সত্তার মেরুদণ্ড-স্বরূপ, ভারতীয়তার ভিত্তি, ভারতবর্ষের সর্বপ্রধান প্রেরণা ও বাণী। তাতার, তুর্কী, মোগল, ইংরেজ—কাহারও শাসন কালেই ভারতের জীবনসাধনা এই আদর্শ হইতে কখনও বিচ্যুত হয় নাই।

ভারতের ইতিহাসে কেহ এমন একটি যুগ দেখাইয়া দিন দেখি, যে-যুগে সমগ্র জগৎকে আধ্যাত্মিকতা দ্বারা পরিচালিত করিতে পারেন, এমন মহাপুরুষের অভাব ছিল। কিন্তু ভারতের কার্যপ্রণালী আধ্যাত্মিক—সে-কাজ রণবিদ্যা বা সৈন্যবাহিনীর অভিযানের দ্বারা হইতে পারে না। ভারতের প্রভাব চিরকাল পৃথিবীতে নিঃশব্দ শিশিরপাতের ন্যায় সকলের অলক্ষ্যে সঞ্চারিত হইয়াছে, অথচ পৃথিবীর সুন্দরতম কুসুমগুলি ফুটাইয়া তুলিয়াছে। নিজস্ব শান্ত প্রকৃতির দরুন এ-প্রভাব বিদেশে ছড়াইয়া পড়িবার উপযুক্ত সময় ও সুযোগের প্রয়োজন হইয়াছে, যদিও স্বদেশের গণ্ডিতে ইহা সর্বদাই সক্রিয় ছিল। শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, ইহার ফলে যখনই তাতার, পারসীক, গ্রীক বা আরব জাতি এদেশের সঙ্গে বহির্জগতের সংযোগ-সাধন করিয়াছে, তখনই এদেশ হইতে আধ্যাত্মিকতার প্রভাব বন্যাস্রোতের মতো সমগ্র জগৎকে প্লাবিত করিয়াছে। সেই এক ধরনেরই ঘটনা আবার আমাদের সম্মুখে দেখা দিয়াছে। ইংরেজদের জলপথ ও স্থলপথ এবং ঐ ক্ষুদ্র দ্বীপের অধিবাসীদের অসাধারণ বিকাশের ফলে পুনরায় সমগ্র জগতের সঙ্গে ভারতেরসংযোগ সাধিত হইয়াছে, এবং সেই একই ব্যাপারের সূচনা মাত্র, বৃহত্তর ঘটনাপ্রবাহ আসিতেছে।
বাণী ও রচনা-৫।৩৭৫

(c)স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা 
Share:

স্বামীজির উপদেশ

স্বামীজি তাঁর গুরুভাই স্বামী অখন্ডানন্দজীকে লিখছেন......
`খেতড়ি শহরের গরীব নীচ জাতিদের ঘরে ঘরে গিয়া ধর্ম উপদেশ করিবে আর তাদের অনান্য বিষয়, ভূগোল ইত্যাদি মৌখিক উপদেশ করিবে ।বসে বসে রাজভোগ খাওয়ার, আর 'হে প্রভু রামকৃষ্ণ' বলায় কোন ফল নাই, যদি কিছু গরীবদের উপকার করিতে না পারো। মধ্যে মধ্যে অন্য অন্য গ্রামে যাও, উপদেশ কর, বিদ্যা শিক্ষা দাও। কর্ম, উপাসনা, জ্ঞান—এই কর্ম কর, তবে চিত্তশুদ্ধি হইবে, নতুবা সব ভস্মে ঘৃত ঢালার ন্যায় নিষ্ফল হইবে ।গুণনিধি আসিলে দুইজনে মিলিয়া রাজপুতানার গ্রামে গ্রামে গরীব দরিদ্রদের ঘরে ঘরে ফের ।যদি মাংস খাইলে লোকে বিরক্ত হয়, তদ্দণ্ডেই ত্যাগ করিবে, পরোপকারার্থে ঘাস খাইয়া জীবন ধারণ করা ভাল। গেরুয়া কাপড় ভোগের জন্য নহে, মহাকার্যের নিশান-কায়মনোবাক্য 'জগদ্ধিতায়' দিতে হইবে ।পড়েছ, 'মাতৃদেবো ভব, পিতৃদেবো ভব';আমি বলি, 'দরিদ্রদেবো ভব, মূর্খদেবো ভব'।
দরিদ্র, মূর্খ, অজ্ঞানী কাতর—ইহারাই তোমার দেবতা হউক, ইহাদের সেবাই পরমধর্ম জানিবে।'
(c)স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

অভাববোধে করাটা দুর্বলতা, অভাববোধেই আমাদের ভিক্ষুক ক’রে ফেলে।

*“স্বর্গ আমাদের বাসনাসৃষ্ট কুসংস্কার - মাত্র, আর বাসনা চিরকালেই বন্ধন — অবনতির দ্বারস্বরূপ। ব্রহ্মদৃষ্টি ছাড়া আর কোন ভাবে কোন বস্তুকে দেখো না। তা যদি কর, তা হ’লে অন্যায় বা মন্দ দেখবে; কারণ আমরা যে বস্তু দেখতে পাই, তার উপর একটা ভ্রমাত্মক আবরণ প্রক্ষেপ করি, তাই মন্দ দেখতে পাই। এই-সব ভ্রম থেকে মুক্ত হও এবং পরমানন্দ উপভোগ কর। সব রকম ভ্রম থেকে মুক্ত হওয়াই মুক্তি।
এক হিসাবে সকল মানুষই ব্রহ্মকে জানে; কারণ সে জানে, ‘আমি আছি’; কিন্তু মানুষ নিজের যথার্থ স্বরূপ জানে না। আমরা সকলেই জানি যে, আমরা আছি, কিন্তু কি ক’রে আছি, তা জানি না। অদ্বৈতবাদ ছাড়া জগতের অন্যান্য নিম্নতর ব্যাখ্যা আংশিক সত্যমাত্র। কিন্তু বেদের তত্ত্ব এই যে, আমাদের প্রত্যকের ভিতর যে আত্মা রয়েছে, তা ব্রহ্মস্বরূপ। জগৎপ্রপঞ্চের মধ্যে যা কিছু সব — জন্ম, মৃত্যু, বৃদ্ধি, উৎপত্তি স্থিতি ও প্রলয় দ্বারা সীমাবদ্ধ। আমাদের অপরোক্ষানুভূতি বেদেরও অতীত; কারণ বেদেরও প্রামাণ্য ঐ অপরোক্ষানুভূতির উপর নির্ভর করে। সর্বোচ্চ বেদান্ত হচ্ছে — প্রপঞ্চাতীত সত্তার তত্ত্বজ্ঞান।
‘সৃষ্টির আদি আছে’ বললে সর্বপ্রকার দার্শনিক বিচারের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়।
জগৎপ্রপঞ্চের অন্তর্গত অব্যক্ত ও ব্যক্ত শক্তিকে ‘মায়া’ বলে। যতক্ষণ সেই মাতৃরূপিণী মহামায়া আমাদের ছেড়ে না দিচ্ছেন, ততক্ষণ আমরা মুক্ত হ’তে পারি না।
জগৎটা আমাদের উপভোগের জন্য পড়ে রয়েছে; কিন্তু কখনও অভাববোধ ক’রে কিছু চেও না। অভাববোধে করাটা দুর্বলতা, অভাববোধেই আমাদের ভিক্ষুক ক’রে ফেলে। আমরা ভিক্ষুক নয়, আমরা রাজপুত্র!”
- স্বামী বিবেকানন্দ
....................................
[ বাণী ও রচনা ৪র্থ খন্ড ২২৮ পৃঃ ]

(c)স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব

কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনে স্বামী বিবেকানন্দ কি প্রভাব রেখেছিলেন তা ফুটে ওঠে তাঁর 'বিবেকানন্দ' শিরোনামের কবিতায়। এই কবিতা খানি কবির প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালকের' অন্তর্গত। আসুন পড়ে ফেলি কবিতাটি।
------------------------------------------------
বিবেকানন্দ
~~~~~~~~
জয়,—তরুণের জয় !
জয় পুরোহিত আহিতাগ্নিক, —জয়, —জয় চিন্ময়!
স্পর্শে তোমার নিশা টুটেছিলো,— উষা উঠেছিলো জেগে
পূর্ব তোরণে, বাংলা-আকাশে,— অরুণ-রঙিন মেঘে;
আলোকে তোমার ভারত, এশিয়া,— জগৎ গেছিলো রেঙে ।
হে যুবক মুসাফের,
স্থবিরের বুকে ধ্বনিলে শঙ্খ জাগরণপর্বের!
জিঞ্জির-বাঁধা ভীত চকিতেরে অভয় দানিলে আসি,
সুপ্তের বুকে বাজালে তোমার বিষাণ হে সন্ন্যাসী,
রুক্ষের বুকে বাজালে তোমার কালীয়-দমন বাঁশি!
আসিলে সব্যসাচী,
কোদণ্ডে তব নব উল্লাসে নাচিয়া উঠিলো প্রাচী!
টঙ্কারে তব দিকে-দিকে শুধু রণিয়া উঠিলো জয়,
ডঙ্কা তোমার উঠিলো বাজিয়া মাভৈঃ মন্ত্রময়;
শঙ্কাহরণ ওহে সৈনিক,— নাহিকো তোমার ক্ষয়;
তৃতীয় নয়ন তব
ম্লান বাসনার মনসিজ নাশি জ্বালাইতো উৎসব!
কলুষ-পাতকে, ধূর্জটি, তব পিনাক উঠিতো রুখে,
হানিতে আঘাত দিবানিশি তুমি ক্লেদ-কামনার বুকে,
অসুর-আলয়ে শিব-সন্ন্যাসী বেড়াতে শঙ্খ ফুঁকে!
কৃষ্ণচক্র-সম
ক্লৈব্যের হৃদে এসেছিলে তুমি ওগো পুরুসোত্তম,
এসেছিলে তুমি ভিখারির দেশে ভিখারির ধন মাগি
নেমেছিলে তুমি বাউলের দলে,— হে তরুণ বৈরাগী !
মর্মে তোমার বাজিতো বেদনা আর্ত জীবের লাগি ।
হে প্রেমিক মহাজন,
তোমার পানেতে তাকাইলো কোটি দরিদ্র-নারায়ণ;
অনাথের বেশে ভগবান এসে তোমার তোরণতলে
বার-বার যবে কেঁদে-কেঁদে গেলো কাতর আঁখির জলে,
অর্পিলে তব প্রীতি-উপায়ন প্রাণের কুসুমদলে ।
কোথা পাপী ? তাপী কোথা ?
-ওগো ধ্যানী তুমি পতিতপাবন-যজ্ঞে সাজিলে হোতা!
শিব-সুন্দর-সত্যের লাগি শুরু ক’রে দিলে হোম,
কোটি পঞ্চমা আতুরের তরে কাঁপায়ে তুলিলে ব্যোম,
মন্ত্রে তোমার বাজিলো বিপুল শান্তি স্বস্তি ওঁ!
সোনার মুকুট ভেঙে
ললাট তোমার কাঁটার মুকুটে রাখিলে সাধক রেঙে!
স্বার্থ-লালসা পাসরি ধরিলে আত্মাহুতির ডালি,
যজ্ঞের যূপে বুকের রুধির অনিবার দিলে ঢালি,
বিভাতি তোমার তাই তো অটুট রহিলো অংশুমালী!
দরিয়ার দেশে নদী!
—বোধিসত্ত্বের আলয়ে তুমি গো নবীন শ্যামল বোধি!
হিংসার রণে আসিলে পথিক প্রেম-খঞ্জর হাতে,
আসিলে করুণা-প্রদীপ হস্তে হিংসার অমারাতে,
ব্যাধি-মন্বন্তরে এলে তুমি সুধা-জলধির সংঘাতে!
মহামারী-ক্রন্দন
ঘুচাইলে তুমি শীতল পরশে, —ওগো সুকোমল-চন্দন!
বজ্র-কঠোর, কুসুম-মৃদুল,—আসিলে লোকোত্তর;
হানিলে কুলিশ কখনো, —ঢালিলে নির্মল নির্ঝর,
নাশিলে পাতক, —পাতকীরে তুমি অর্পিলে নির্ভর।
চক্র-গদার সাথে
এনেছিলে তুমি শঙ্খ-পদ্ম,—হে ঋষি, তোমার হাতে;
এনেছিলে তুমি ঝড়-বিদ্যুৎ,—পেয়েছিলে তুমি সাম,
এনেছিলে তুমি রণ-বিপ্লব,—শান্তি-কুসুমদাম;
মাভৈঃ-শঙ্খে জাগিছে তোমার নরনারায়ণ-নাম!
জয়,-তরুণের জয়!
আত্মাহুতির রক্ত কখনো আঁধারে হয় না লয়!
তাপসের হাড় বজ্রের মতো বেজে ওঠে বার-বার!
নাহি রে মরণে বিনাশ,—শ্মশানে নাহি তার সংহার,
দেশে-দেশে তার বীণা বাজে— বাজে কালে-কালে ঝঙ্কার!
------------------------------------
[জীবনানন্দ দাশ (/dʒɪbɒnʌnɒndɔː dʌʃ/) (ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ - অক্টোবর ২২, ১৯৫৪; বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ - কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত।]

(c) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস

ইনি সেই ব্যাক্তি যিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, "Vivekananda entered my life." তিনি লিখেছেন, 'ত্যাগে বেহিসাবি, কর্মে বিরামহীন, প্রেমে সীমাহীন স্বামীজির জ্ঞান ছিল যেমন গভীর তেমনি বহুমুখী। ... আমাদের জগতে এরূপ ব্যাক্তিত্ব বাস্তবিকই বিরল। স্বামীজি ছিলেন পৌরুষসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ মানুষ।.... ঘন্টার পর ঘন্টা বলে গেলেও সেই মহাপুরুষের বিষয় কিছুই বলা হবে না। এমনি ছিলেন তিনি মহত্, এমনি ছিল তাঁর চরিত্র- যেমন মহাণ তেমনি জটিল। ... আজ তিনি জীবিত থাকলে আমি তাঁর চরণেই আশ্রয় নিতাম।"
ইনিই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস। তাঁর অন্তরঙ্গ বাল্যবন্ধু চারুচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ' সুভাষের সঙ্গে আবাল্য খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশেছি। তাই জোর করে বলতে পারি যে, বিবেকানন্দের প্রভাব যদি সুভাষের উপর না পড়ত তবে সুভাষ "সুভাষ" হত না, "নেতাজী" হত না। হয়ত অ্যাডভোকেট জেনারেল হত কিম্বা ব্যারিস্টার হত, কিন্তু আইএনএ যে ফর্ম করেছে সেই "নেতাজী সুভাষচন্দ্র"কে আমরা পেতাম না।'
স্কুল জীবনে নেতাজী তাঁর প্রধান শিক্ষক শ্রীযুক্ত বেণীমাধব দাসের সংস্পর্শে খুব প্রভাবিত হন।
তাঁর প্রভাবেই বালক সুভাষের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম, কাব্য ও সৌন্দর্যচেতনা, আদর্শবাদ ও নীতিবোধের স্ফুরণ ঘটে। কিন্তু বালক সুভাষ ব্যাকুল প্রাণে এমন একটি আদর্শের সন্ধান করছিলেন যার ওপর ভিত্তি করে সমস্ত জীবনকে গড়া যায়, যা তাঁর সমস্ত সত্ত্বাকে আলোড়িত করতে পারে।
এমন সময় এক সহপাঠীর (আত্মজীবনী মতে সহপাঠীর নাম: সুহৃদচন্দ্র মিত্র) মাধ্যমে তাঁর হাতে এল- 'স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা।' এবং তারপর............. আসুন নেতাজীর মুখেই শুনি-
"কয়েক পাতা উলটেই বুঝতে পারলাম, এই জিনিসই আমি এতদিন ধরে চাইছিলাম। বইগুলো বাড়ি নিয়ে এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। পড়তে পড়তে হৃদয়-মন আচ্ছন্ন হয়ে যেতে লাগল। ...........
দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগল, আমি তাঁর বই নিয়ে তন্ময় হয়ে রইলাম।............. বিবেকানন্দের প্রভাব আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল।.... তাঁর মধ্যে আমার জীবনের অসংখ্য জিজ্ঞাসার সহজ সমাধান খুঁজে পেয়েছিলাম।"
(আত্মজীবনী: 'ভারত পথিক', পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৪)
গৈরিক বস্ত্র পরে স্বামী বিবেকানন্দ যদি বিশ্বে এত খ্যাতি পেতে পারেন তবে আমি কেন কোট প্যান্ট পড়ব? – বাল্যকালে নেতাজী সুভাষ তাঁর পিতাকে এই কথা বলেছিল, অর্চনা, ২০১১, পৃঃ ৪৬।
ছবি; বালক নেতাজি

(c) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

অতি কট্টরপন্থী হিন্দুদের যা হজম হয় না তাহল, স্বামিজী'র সবাইকে নিয়ে চলার, গ্রহিষ্ণুতার মতাদর্শ।

ইদানীং একটি ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে সবাই স্বামিজী'র সমালোচনা করছেন বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন আঙ্গিকে। কেউ কেউ যারা নিজেদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে দাবি করেন, তাদের মতে স্বামিজী যথেষ্ট পরিমাণে হিন্দুত্ববাদী ছিলেন না আর যেসব হিন্দুত্ববাদীরা স্বামিজী-কে আদর্শ বলে মানেন তাদেরকে প্রকৃত হিন্দুত্ববাদী বলে মনে করেন না বরং হেয়দৃষ্টিতেই দেখেন। আবার, কেউ কেউ যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করেন তারা সমালোচনা করে প্রাণপণে চেষ্টা করেন এটাই প্রমাণ করতে যে, স্বামিজী কোন দৈবিক সত্তা ছিলেন না, ছিলেন একজন মানুষ অথচ সমালোচনার সময়ে এমনভাবে তা উপস্থাপন করেন যেন মানুষ হিসেবে স্বামিজী'র ন্যূনতম কোন ত্রুটিই গ্রহণীয় নয়; কারণ, তিনি মানুষের স্তরে নয় তিনি অতিদৈবিক স্তরের।

দেখুন, অতি কট্টরপন্থী হিন্দুদের যা হজম হয় না তাহল, স্বামিজী'র সবাইকে নিয়ে চলার, গ্রহিষ্ণুতার মতাদর্শ। তাদের মতে, অন্য পথের অনুসারিদের ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিক্রিয়ায় যেহেতু এই কট্টরপন্থার উদ্ভব তাই যে কেউ গ্রহিষ্ণুতার কথা বলবেন তিনিই বর্জনীয় এবং নিন্দার্হ। কিন্তু, এরা ভুলে যান তারা যে আদর্শের নামে চালিত বলে দাবি করেন সেই 'হিন্দু' নাম বহনকারী ধর্মটি কোন প্রচলিত আচারিক ধর্ম নয় বরং একটি দর্শন যা নিয়ত পরিবর্তনীয় এবং যা কিছুই ভাল তাকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নেয়ার মত শক্তিশালী, তা সেই ভালো যদি গোবরে পদ্মফুলও হয় তবুও তাকে চিনে নিয়ে গ্রহণ করতে পারে। স্বামিজী'র আদর্শিক গ্রহিষ্ণুতাও সেই দর্শনের ভিত্তিতেই বিচার করতে হবে, যেখানে নিজের স্বকীয়তাকে ভিত্তি করেই অন্যের ভালকে নিজের ভিতরে আত্মস্থ করার উদারতা আছে। আবার, স্বামিজী বারবার বলেছেন কখনোই নিজের উদারতাকে নিজের দুর্বলতা না ভাবতে। অন্যের প্রতি কোন অন্যায় বা যেছে গিয়ে অত্যাচার না করতে; কিন্তু, তাই বলে অন্য কেউ অত্যাচার করতে আসলে সেই অত্যাচারকে উদারতা দেখিয়ে সহ্য করার নামে কাপুরুষতা নয় বরং, যথাসাধ্য সাহসের সাথে তার প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করতে। তাই, অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তাদের অন্যতম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দকে।

অপরদিকে, মুক্তমনারা স্বামিজী'র সমালোচনা করতে গিয়ে 'স্ববিরোধিতা'-র অভিযোগ তুলেন। তবে, তারা ভুলে যান ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে খণ্ড খণ্ডভাবে বলা কথা কখনোই একটি মানুষের আপোসকামিতাকে বা 'স্ববিরোধিতা' নামের আড়ালে ভণ্ডামিকে সূচিত করেনা। কোন প্রেক্ষাপটে একজন ব্যক্তি কি কথা বললেন, তা বিচার করতে হয় সে নির্দিষ্ট সময়ের নিরিখে। প্রত্যেক মানুষেরই অধিকাংশ কথারই কিছু না কিছু পূর্বাপর থাকে; একটি মানুষকে তাই বিচার করতে এগুলোও মাথায় রাখতে হয়। মানুষ কোন যন্ত্র নয় যার কৃত কাজ দিয়েই তার প্রকৃতি/ প্রবৃত্তি-কে এককথায় প্রকাশ যাবে, মানুষ এক জটিলতায় পূর্ণ, বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ একটি সামাজিক প্রাণি। আর, স্বামিজী'র মত একজন মহামানবকে বিচার করতে গেলে শুধু কিছু কথার বা বক্তৃতার খণ্ডাংশ নিয়ে বিচার করা একধরনের বাতুলতাই বটে; স্বামী বিবেকানন্দের জীবনকে বিচার করতে হলে তা করতে হবে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, অভিজ্ঞতার বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে, সংক্ষিপ্ত কলেবরে নয়। কারণ, এতে সে বিচার অপূর্ণ থাকবে, কখনোই পূর্ণ নয়। আর একজন মানুষকে যখন আপনি মানুষ হিসেবে সমালোচনা করবেন তখন আপনি নিশ্চয়ই সমালোচনা করে এভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারেননা যাতে সে প্রশ্ন শুনে মনে হয়, এমন 'দেবমানব'-র এই এই ত্রুটি থাকে কি করে? আপনি একজনের সমালোচনা করবেন মানুষ হিসেবে আর প্রত্যাশা করবেন ত্রুটিহীন দেবতার, এমন স্ববিরোধিতাও নিশ্চয়ই গ্রহণীয় নয়।
তাই, বলব সমালোচনা করুন তবে সেই সমালোচনা যেন কখনো অন্ধ অযৌক্তিক আক্রোশে পরিণত না হয়।

অবশেষে, আমাদের আদর্শ স্বামিজী মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি-
নমোঃ শ্রীযতিরাজায় বিবেকানন্দ সূরয়ে
সচ্চিৎসুখস্বরূপায় স্বামিনে তাপহারিণে।।

(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা)
Share:

১৮ই ফেব্রুয়ারীতে বাংলার আধ্যাত্মিক ভাবান্দোলনে দু'জন নক্ষত্রের আবির্ভাব

১৮ই ফেব্রুয়ারীতে বাংলার আধ্যাত্মিক ভাবান্দোলনে দু'জন নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটেছিল- যারা শুধু যে আধ্যাত্মিক ভাবপ্রবাহের সঞ্চালন করেছিলেন তা নয়, তারা বদলে ফেলেছিলেন সমসাময়িক যুগের গোটা সংস্কৃতি ও মানুষের চিন্তাধারা, এমনকি আজও তাদের জীবন ও শিক্ষা চর্চিত হচ্ছে দেশে দেশে। বিশেষত হিন্দুর ধর্ম জীবনের বিরাট অংশজুড়ে এঁদের অবস্থান। একজন মধ্যযুগে ইসলামি আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হিন্দুর জন্য ত্রাতা হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ্যবাদ ও নানান অপপ্রথা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন ব্যাপক ভক্তি আন্দোলনের সূচনা করে। যার হৃদয় ছিল প্রেমে পরিপূর্ণ। যার জন্য, এমনকি আমাদের হুমায়ুন আজাদের মত কট্টর আধ্যাত্মিকতা-অবিশ্বাসী মানূষকেও লিখতে হয়েছিল- 'প্রেম একবারই মানবমূর্তি ধরেছিল পৃথিবীতে শ্রীচৈতন্য রূপে'! শ্রীচৈতন্যদেব জন্মেছিলেন ১৪৮৬ সনের ১৮ই ফেব্রুয়ারী। ন্যায়শাস্ত্রের তুখোড় পন্ডিত, অদ্বৈত মতের সন্ন্যাসী হয়েও তিনি দ্বৈত পথের সাধনাকেই প্রদীপ্ত করেছিলেন।

অপরজন? উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী নবজাগরণের ইতিহাসের একটা প্রখর দ্যুতিময় নক্ষত্র, স্বদেশে বিদেশে নন্দিত। কথায় কথায় গল্প বাঁধতে পারতেন আর সেইসব গল্প দিয়ে কত জটিল তত্ত্বকথাকে মানুষের মাঝে সরল করে দিতেন। কত শত উপমা। রোঁমারোঁলা বলেছিলেন- 'এগুলো জগতের উপমা সাহিত্যের আকর'। প্রমথনাথ বিশী 'উপমা কালিদাসস্য' উলটে বলেছিলেন- 'উপমা রামকৃষ্ণস্য'! হ্যাঁ রামকৃষ্ণদেবের কথা বলছি। প্রায়-অশিক্ষিত দক্ষিণেশ্বরের এই ক্ষ্যাপা বামুনের কাছে বসে তত্ত্বকথা শুনতো কোলকাতার বিদ্বৎ সমাজ। হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি যখন ইংরেজের প্রভাবে পাশ্চাত্যের গ্রাসে তখন ইনিই এসেছিলেন প্রাচীন ভারতের বার্তা নিয়ে। আমাদের একজন 'বিবেকানন্দ' উপহার দিয়েছিলেন। শুনিয়েছিলেন 'যত মত তত পথ' এর মত উদার বাণী। শ্রীরামকৃষ্ণও জন্মেছিলেন ১৮ই ফেব্রুয়ারীতে! তবে সেটা ১৮৩৬ সালে। এই দুই ভাববাদী বাঙালী দখল করে আছেন হিন্দুর ঠাকুরঘরের উপাসনার বেদী যুগযুগ ধরে। দু'জনই মুগ্ধ করে রেখেছেন হাজার হাজার বাঙালীর বিরাট বিরাট মাথাগুলোকেও!

তাঁদের প্রেম ও করুণা, তাদের শিক্ষা ও সাধনা- যা আজও নিরবে প্লাবিত করে চলেছে আমাদের সমাজ, আমাদের দিন ও রাত, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এই দুই মহামানবকে জন্মদিনে প্রণাম জানাই।

(c) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

প্রত্যেক জাতের একটা সংস্কৃতি আছে। চাইলেই উপড়ে ফেলা যায় না।

স্বামী বিবেকানন্দ লিখছেন....

'...ঐ যে হিমালয় পাহাড় দেখছ, ওরই উত্তরে কৈলাস, সেথা বুড়ো শিবের প্রধান আড্ডা। ও কৈলাস দশমুণ্ড-কুড়িহাত রাবণ নাড়াতে পারেননি, ও কি এখন পাদ্রী ফাদ্রীর কর্ম!!
ঐ বুড়ো শিব ডমরু বাজাবেন, মা কালী পাঁঠা খাবেন, আর কৃষ্ণ বাঁশী বাজাবেন,—এ দেশে চিরকাল। যদি না পছন্দ হয়, সরে পড় না কেন? তোমাদের দু-চারজনের জন্য দেশসুদ্ধ লোককে হাড়-জ্বালাতন হ'তে হবে বুঝি? চরে খাওগে না কেন?—এত বড় দুনিয়াটা পড়ে তো রয়েছে ! তা নয়। মুরদ কোথায়? ঐ বুড়ো শিবের অন্ন খাবেন, আর নিমকহারামি করবেন, ...'
(প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য)

___________________________
বুদ্ধিমান বুঝিয়া লইবেক। 😜

It's not religion or God that you should respect, Its your tradition and culture. প্রত্যেক জাতের একটা সংস্কৃতি আছে। চাইলেই উপড়ে ফেলা যায় না। তোমার যদি গা চুলকোয় তাহলে নিজেই কেন দূরে থাকো না বাপু?

(c) বিশাখদত্ত দত্ত
Share:

Religion is a necessary thing to very few; and to the vast mass of mankind it is a luxury.

"Religion is a necessary thing to very few; and to the vast mass of mankind it is a luxury."

একমাত্র স্বামী বিবেকানন্দই হয়ত জন্মেছিলেন একজন সন্ন্যাসী হয়েও এই কথাগুলোকে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে নির্ভয়ে বলতে! যাদের কাছে পর্যাপ্ত অন্ন নেই তাদের কাছে ধর্মের কচকচানি যে বড় রকমের বিদ্রুপ সেটা তিনি বলতে পেরেছিলেন এভাবে! বলেছিলেন- "First bread and then religion....... It is an insult to a starving people to offer them religion; it is an insult to a starving man to teach him metaphysics."

ধর্মকে আসতে হবে মানুষের কল্যাণে। লেকচারবাজীতে ধর্ম নেই!- "If a religion cannot help man wherever he may be, wherever he stands, it is not of much use; it will remain only a theory for the chosen few. Religion, to help mankind, must be ready able to help him in whatever condition he is, in servitude or in freedom, in the depths of degradation or on the heights of purity; everywhere, equally, it should be able to come to his aid."

তথাকথিত ধার্মিকদের বুঝিয়েছেন- ''Beliefs, doctrines, sermons do not make religion. It is realisation, perception of God, which alone is religion.......... Books never make religions, but religions make books. We must not forget that.............. Realisation is real religion, all the rest is only preparation — hearing lectures, or reading books, or reasoning is merely preparing the ground; it is not religion." কোন অনুভবহীন পুঁথিপড়ুয়ার বাগাড়ম্বরে ধর্ম থাকে না।

''Realisation is the soul, the very essence of religion......Realise your true nature. That is all there is to do. Know yourself as you are—infinite spirit. That is practical religion.'' অন্ধের মত কোন মতবাদের যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে যাওয়াটাও ধর্ম নয়। কোন পুরাতন সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা নয়। বরং বলতে পারা- সত্য যদি হয় তা চিরন্তন সত্যই- এই সত্যের অনুভব নিজেকেই করতে হয়- ''Religion is not only based upon the experience of ancient times, but that no man can be religious until he has the same perceptions himself.''

"The essential thing in religion is making the heart pure; the Kingdom of Heaven is within us, but only the pure in heart can see the King. While we think of the world, it is only the world for us; but let us come to it with the feeling that the world is God, and we shall have God.'' বারবার বলেছেন এই কথা! এই জগতই ঈশ্বর! অন্ধরা চিরকাল তার বিরুদ্ধে গেছে। বারবার বলেছেন পবিত্রতা ও নিঃস্বার্থপরতাই বড় ধর্ম, দরিদ্রের সেবা করাতেই ঈশ্বরের উৎকৃষ্ট পূজা! কে আর শুনেছে? সারাদিন দুষ্কর্ম আর কুচিন্তার বোঝা ভারী করে করে বছরে দু'তিনবার ঈশ্বর/আল্লাকে স্মরণ করাই যাদের কাছে ধর্ম- এসব কথা কি তাদের জন্য?

"The secret of religion lies not in theories, but in practice To be good and to do good—that is the whole of religion. 'Not be that crieth "Lord, "Lord", but he that doeth the will of the Father." সে কি কথা? ঘুষের টাকা আল্লা/ভগবানের নাম করে মন্দিরে/মসজিদে দিলেই তো ধর্ম হয়ে যায়! পুরোহিত আর মোল্লারা এসে পা চাটে! আর কি চাই বলুন ?

আজ কোন ধর্মের ঘোরে আমরা বাস করি? "We are all in the dark; religion is to us a mere intellectual assent, a mere talk, a mere nothing."

আজ থেকে ১০০ বছর আগে একজন ৩০ বছর বয়সী বাঙালী যুবক সন্ন্যাসী বিশ্ব দরবারে উন্মুক্ত করেছিলেন এই কথাগুলো! তিনি এই কোলকাতার ছেলে! যে কোলকাতা আজ ফতোয়াবাজীর প্রাণকেন্দ্র হতে চলেছে। কিন্তু এই কথাগুলো সবার জন্য।

(c) বিশাখদত্ত দত্ত 
Share:

ব্রাহ্ম ধর্ম নিয়ে কিছু কথা

ব্রাহ্ম ধর্ম নিয়ে অনেকের কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে আবার অধিকাংশের এ নিয়ে কোন ধারণাই নেই। আমি সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু লিখছি। অবশ্যই হিন্দু ও ব্রাহ্মের তূলনামূলক আলাপই মূখ্য। যারা হিন্দু ধর্মের সাথে ব্রাহ্ম ধর্মের বিস্তর ফারাক দেখতে পান- তারা এটার নৈকট্যকে আড়াল করেন। এটা অজ্ঞতাবশত হয় সাধারণত। ব্রাহ্মধর্ম সম্পর্কে আমাদের এই অজ্ঞতার কারণ কি? মূল কারণটা হল- আমাদের বর্তমান সমাজে 'ব্রাহ্ম' বলে কোন কিছু আর বলতে গেলে নেই-ই। যদি আশেপাশে কিছু থাকত তাহলে আপনার জানার কৌতূহল হত, কৌতূহল মেটানোর সুযোগও থাকত। কিন্তু ব্রাহ্মরা নেই কেন? সেটাও আলোচনায় আসবে।

ব্রাহ্ম শব্দটা কোত্থুকে এলো? 'ব্রহ্ম' থেকে ব্রাহ্ম। রাজা রামমোহন ব্রহ্ম এর উপাসককে ব্রহ্মবাদী না বলে ব্রাহ্ম বললেন। এই ব্রহ্ম কোথায় পেলেন তিনি? আজ্ঞে বেদ থেকে। ওটা রাজা রামমোহনের নিজের সৃষ্ট কোন ধারণা নয়। বেদের ব্রহ্মকে তিনি নিজের মত করে ব্যাখ্যাও করেননি। একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম বলাটাও হাস্যকর; কেন না বৈদিক সনাতন ধারা কোন বহু-ঈশ্বরবাদী তত্ত্ব নয়। বরং বলা যেতে পারে তিনি ব্রাহ্ম মতে দ্বৈত বেদান্তকে মানেননি। তিনি অদ্বৈত সিদ্ধান্তকে ধরেছিলেন। বেদান্তই ছিল ব্রাহ্ম ধর্মের মূল ভিত। বেদান্ত কি? আজ্ঞে মূখ্যত উপনিষদগুলোই হল বেদান্তের প্রাণ। তাহলে হিন্দুর সাথে ব্রাহ্মের পার্থক্যটা কোথায়?

পার্থক্য দেখাচ্ছি। ব্রাহ্মধর্ম উঠে এসেছিল হিন্দু ধর্মের আচার ও প্রথাবদ্ধতার নিগড় থেকে। বহু দেবদেবী নির্ভর ধর্মাচার ভেঙে ব্রাহ্মধর্ম বলেছিল এক পরব্রহ্মের উপাসনাকেই সার করতে। প্রতিমা উপাসনারও দরকার নেই। এই মতামত একেবারেই নতুন নয় হিন্দুর ইতিহাসে। নিরাকারবাদী বৈদিক উপাসকের অভাব ছিল না কখনো। দেবদেবী অস্বীকার করলেও কেউ অহিন্দু হয় না যতক্ষণ না সে ব্যক্তি বৈদান্তিক সিদ্ধান্তকে অস্বীকার না করছে। ব্রাহ্মরা তা তো করেনি। ব্রাহ্মরা, কোলকাতার ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাবু সমাজ নিজেদের সাধারণ অজ্ঞ পুরোহিত শাসিত হিন্দু রীতিনীতি থেকে স্বতন্ত্র করতে বেদান্তের ব্রহ্মবাদ নিয়েই নিজেদের আলাদা করলেন। এখানে একটু পার্থক্য আছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল- উপাসনা প্রণালীতে। ব্রাহ্ম উপাসনার ধরণ ছিল খ্রিষ্টীয়। উপাসনা গৃহও তৈরি হত গীর্জার আদলে। উপাসনার পদ্ধতিও ছিল বাইবেলের মত করেই সাজানো! এর মাধ্যমে তাদের পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ আর বৃটিশ সাহেবদের আনুকুল্য লাভের গন্ধটাই বেশী পাওয়া যেত। মোদ্দা কথা হল- তারা হিন্দুদের হাজার হাজার অপ্রোজনীয় আচার-বিচারের বালাই ছেড়ে, হিন্দু দর্শনের ব্রহ্মকে ধরেছিলেন আর তাতে একটু খ্রীষ্টিয় বাতাস বইয়ে দেন!

কিন্তু তারা অদ্বৈত বেদান্তী কখনোই হননি। তাদের উপাসনার ধারাটা ছিল দ্বৈত। তারা মনের ভেতর ব্রহ্মের সাকার প্রতিমা সাজিয়ে তাকে বাইরে নিরাকার বলে ভজনা করতেন! অদ্বৈত যেমন বলে নির্গুণ ব্রহ্ম- তিনি উপাধিরহিত, এরা তেমন বলতেন না। এরা দ্বৈতবাদের মত করেই ব্রহ্মকে মাতা, পিতা, বন্ধু, সখা, প্রভূ বলে প্রার্থনা করতেন। এতে বাঙালীর কিছু উপকার হয়েছে। কিসে উপকার জানেন? ব্রাহ্মদের মাথা থেকে এত সুন্দর সুন্দর উপাসনার গান বেরিয়েছিল, যাদের ব্রহ্মসঙ্গীত বলা হয়, এই গানগুলো ভাষার লালিত্যে অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথের মত মহাপ্রতিভা যেখানে গান লিখছেন, নরেন্দ্রনাথ (বিবেকানন্দ) যেখানে গাইছেন- ভাবতে পারেন কি হচ্ছিল সে পরিবেশে?

কিন্তু ব্রাহ্ম ধর্ম টিকল না কেন? এর কিছু কারণ আছে। ব্রাহ্মধর্মের বিভাজনের কথা জানেন তো? ব্রাহ্ম সমাজ ভেঙে দু'ভাগ হল। কেশব সেন, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীরা বেরিয়ে এসে নব-বিধান ব্রাহ্ম সমাজ গড়লেন। নব-বিধান কেন? তাদের বক্তব্য ছিল- ব্রাহ্মধর্ম একটা নতুন মত। এর মধ্যে কোন হিন্দুভাব থাকবে না। অথচ ব্রাহ্মসমাজীরা তখনো তাদের সমস্ত দৈনন্দিন রীতিনীতি হিন্দু নিয়মেই করতেন। যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িটি হয়ে উঠেছিল ব্রাহ্মসমাজের প্রাণকেন্দ্র সেটাই হয়েছিল আক্রমণের লক্ষ্য। ঠাকুরবাড়ির লোকেরা তখনো উপবীত পড়ত, হিন্দু আচার মানত নানান সামাজিক অনুষ্ঠানে। আধুনিক ব্রাহ্মরা মানলেন না। বিজয়কৃষ্ণরা সইতে পারলেন না আর। পৈতা ছুঁড়ে ফেললেন। নতুন বিধান চাই আমরা। হয়ে গেল 'নব বিধান ব্রাহ্ম সমাজ'! আদি ব্রাহ্ম সমাজের চাইতে এই নববিধান ব্রাহ্ম সমাজের দ্রুতি ছিল অনেক অনেক বেশী! এর কারণ কেশব চন্দ্র সেনের মত একজন ছিল তাদের নেতা। এখানেই শেষ নয়! এখনো কিছু দেখা বাকি!

কেশব সেনের সাথে বিজয়কৃষ্ণ আর থাকলেন না! বাঙালী কোন্দল না করে কি থাকতে পারে? বিজয়কৃষ্ণ পরে আর ব্রাহ্মও থাকলেন না। তিনি ঘোর বৈষ্ণব হয়ে গেলেন। এর পেছনে রামকৃষ্ণ দেবের প্রভাব কতটা তাও ভাবার। কেশব ও বিজয় দু,জনই রামকৃষ্ণের ভক্ত ছিলেন। ব্রাহ্ম আন্দোলনে বলতে গেলে রামকৃষ্ণ পরমহংসই জল ঢালেন। কেশব নিজের দলটল ছেড়ে রামকৃষ্ণের কাছে গিয়ে পড়ে থাকতেন। রামকৃষ্ণ তাদের মজা করে বলতেন 'ব্রহ্মদত্যি!' রামকৃষ্ণের মূল শিক্ষাটা ছিল- যা ইচ্ছে কর না বাপু, শুধু আমার মতটাই ঠিক, অপরেরটা বেঠিক, শুধু আমিই ঠিক পথে আছি, আর কেউ নেই- অমন গোঁড়ামি কোরো না। তোমরা যাকে ব্রহ্ম বল আমি তাকে কালী বলি! সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে বসে থাকলেও সাপ, হেললে দুললেও সাপ। চিনি এমনি খাও আর জলে গুলে খাও মিষ্টিই লাগবে! অর্থাৎ ব্রহ্মকে যে যেভাবেই ডাকুক না কেন- বস্তু তো এক। রামকৃষ্ণের এই 'যত মত তত পথ' দর্শন ছিল বাঙালী নবজাগরণের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী আলো! এতে ব্রাহ্মধর্মের গোঁড়ামিতে ঘা লাগে। কেশব সেনের মত প্রচারের ধারাতেও রামকৃষ্ণ বারবার আলোচিত হতেন। রামকৃষ্ণকে নিয়ে সাহেবদের পত্রিকায় কলাম লিখেছিলেন তিনি। ধীরেধীরে তিনি গোঁড়া মতবাদ থেকে সরে আসেন। তিনি রামকৃষ্ণের মতবাদ থেকেই বলতে থাকেন- যে যে মতেই ডাকো না কেন আন্তরিক হলে, ব্যকুল হলে, সবাই সত্যকে জানতে পারে।

ব্রাহ্ম ধর্মের সবচেয়ে বেশী দ্রুত বিলুপ্ত হবার কারণ হল- এটা বাবু সমাজের ধর্ম হয়েছিল। কখনো সাধারণ মানুষের কাছে তা যেতে পারেনি। আরেকটা মোক্ষম কারণ হল স্বামী বিবেকানন্দের উদয়। স্বামী বিবেকানন্দ যৌবনের শুরুর দিকে ব্রাহ্ম অনুসারী হলেও তিনি রামকৃষ্ণের শিক্ষাতেই পেয়েছিলেন নিজের পূর্ণতা। শিকাগো ধর্মসভায় বিবেকানন্দের সাফল্য ও দেশ-দুনিয়া এক করে ফেলা খ্যাতি তাকে ব্রাহ্ম সমাজের চক্ষুশূল করে ফেলে। শিকাগোতে অবস্থানরত ব্রাহ্ম প্রতিনিধি প্রতাপচন্দ্র মজুমদার বিবেকানন্দের পেছনে কিরকম উঠেপড়ে লেগেছিলেন সেসব হয়ত কেউ কেউ পড়েছেন। এমনকি ঠাকুর পরিবারের বলয়টিও এই নব্য হিন্দু জাগরণকে মেনে নেয়নি। রবীন্দ্রনাথ সে সময়টাতে এই ব্যাপারে যথেষ্ট নেতিবাচক ছিলেন বলেই বোঝা যায়। রবীন্দ্রনাথের ভেতর ইতিবাচক ভাবনা আসে ভগিনী নিবেদিতার সংস্পর্শে আসার পর। তারও অনেক পর রবীন্দ্রনাথকে আমরা দেখছি রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের প্রশস্তি গাইতে। সে এক পরবর্তীকালের পরিবর্তিত রবীন্দ্রনাথ! পরিণত রবীন্দ্রনাথও।

কবিগুরু তাঁর 'গোরা' উপন্যাসে যে সমাজচিত্র এঁকেছেন, তাতে যে ব্রাহ্ম-হিন্দু দার্শনিক বাদানুবাদ দেখিয়েছেন, এবং উপন্যাসের মূল নায়ক 'গোরা' করেছেন- এর সবটার পেছনেই ভগিনী নিবেদিতার শক্তিশালী প্রভাবটা স্পষ্ট! রবীন্দ্র গবেষকরা বলেন 'গোরা' আসলে নিবেদিতার প্রতিরূপ। কিন্তু এই উপন্যাসেও কি কবিগুরু কোন সমাধানে আসতে পেরেছিলেন? শেষমেষ গিয়ে মানবধর্মে সমপর্ণ করেছেন সবাইকে। ম্রিয়মান ব্রাহ্মধর্মের যে দার্শনিক সংকীর্ণতা ছিল সেটাকে তিনি মানবধর্মের আলোতে এনে বুজিয়ে দিতে চাইলেন। বিবেকানন্দের মতাদর্শ ভারতের বুকে আছড়ে পড়াতে একদিকে যেমন গোঁড়া পুরোহিতকুলে ঘা লাগে তেমনি অপরদিকে হিন্দু-বিরোধী স্রোতগুলোতেও ভাটা পরে। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, অন্যকে ছোট করে বড় হওয়া যাবে না, অপরের মুক্তিতেই আমাদের মুক্তি! বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আচার-বিচার-প্রথা-পুঁথি-পত্র এমনকি মন্দির-উপাসনালয়ও ধর্ম নয়- ধর্ম অনুভবের, ধর্ম আচরণের। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, জীবের সেবা-ই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপাসনা। এর চেয়ে বড় ধর্ম নেই! বিবেকানন্দ বলেছিলেন- আমাদের জনজীবনের বহু আচারই হতে পারে একদম অকেজো, তাই বলে তাকে লাথি মেরে দূরে সরাতে হবে না, সংস্কারের নামে মানুষকে আঘাত করা কেন? মানুষকে উপযুক্ত শিক্ষা দাও, তারাই বুঝতে পারবে তাদের করণীয় কি! বিবেকানন্দ বলেছিলেন- হিন্দু শুধু একটা ধর্ম নয়, এটা এখানকার ভৌগলিক সংস্কৃতির নাম! এটাকে ছুঁড়ে ফেলে কিছু করা যাবে না এই ভূমিতে। কেউ চাইলেও পারবে না! বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আমাদের অনেক ধর্ম হয়েছে, আমাদের এখন অন্ন চাই! আমাদের সবার আগে চাই স্বাধীনতা! আমাদের চাই শিল্প ও বিজ্ঞান! বিবেকানন্দ হিন্দুর চিরন্তন আদর্শের সাথে, হিন্দুর দর্শনের সাথে পাশ্চাত্যের ভাবনার সামঞ্জস্য করতে পেরেছিলেন। কবিগুরুর কথাতেও আমরা পেয়েছিলাম, তিনি বলছেন- রামমোহনের পর একমাত্রে বিবেকানন্দই পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে একটা সেতু হতে পেরেছিলেন!

বিবেকানন্দের এই সেতু হয়ে ওঠায় আমরা দেখেছি বহু পাশ্চাত্য নরনারীকে বেদান্তের আলোতে নিয়ে আসে, হিন্দু শিক্ষিত সমাজের ধর্ম বিমুখতাকে ভেঙে নতুন করে ভাবতে শেখায়, ব্রাহ্মদের যে হিন্দু-ধারা বিরোধী প্রচার তা একদম মুখ থুবরে পড়ে, খ্রীষ্টান মিশনারিদের ধর্মান্তরিতকরণের মহোৎসব নিষ্প্রাণ হয়ে যায়! দেশপ্রেম, মানবসেবা ও দর্শনের সাথে লোকপ্রথার এমন অভূতপূর্ব সমন্বয় বিবেকানন্দের আগে কারো ভেতর দেখা যায়নি। বিবেকানন্দের এই আবির্ভাব ব্রাহ্মসমাজকে সমাপ্ত করেছে না বলে বলা যায় আত্মস্থ করেছিল যা সে সময়ের ইতিহাস পড়লেই ভালভাবে বুঝতে পারবেন। আমার এই পোস্ট একটা প্রাইমারি স্কেচ। এতে ব্রাহ্মসমাজের উত্থান ও পতন নিয়ে কিছু ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। যাদের এই বিষয়ে আরও জানার আগ্রহ আছে তারা আশা করি নিজে থেকেই পড়াশোনা করে নেবেন আরও।

(c)
বিশাখদত্ত দত্ত
Share:

বর্তমান পরিস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশন

স্বামী বিবেকানন্দ একবার এক দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলে ত্রাণ পাঠানোর জন্য বেলুড় মঠের জমি বেচে
দিতে চেয়েছিলেন। মঠ-ফট করার আগে মানুষ বাঁচানো জরুরী। আদর্শ বাঁচানোটাই জরুরী! ওটা সর্বাগ্রে দরকার। পরে গুরু-ভায়েরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে মঠের জমি বাঁচান। স্বামীজি আজকের এই আধুনিক বেলুড় মঠ দেখে যেতে পারেননি।

৮০ এর দশকের একটা সময়ে রামকৃষ্ণ মিশন বামদের গ্রাস থেকে নিজেদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে সরকারের কাছে নিজেদের মাইনরিটি স্ট্যাটাস চেয়ে বসে! তারা হিন্দু নয়। তারা অন্য টাইপের চিজ! তারা অন্য রকম মাইনরিটি। অবশ্য কোর্ট এই আর্জি খারিজ করে। এতে অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনের ভেতরেই অনেক শোরগোল হয়, ফাটলও ধরে। স্বামীজি আদর্শ বাঁচাতে জমি বেচতে চেয়েছিলেন, আর এরা জমি বাঁচাতে আদর্শ! অনেক দিন পার হয়ে গেল। এখন আর তেতো অতীত মনে করা কেন?

ভারতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের দিনে বিবেকানন্দ একটা আইকন হয়েছিলেন। গান্ধী, নেহেরু, নেতাজী, অরবিন্দ সবার কথাতেই দেখবেন সেটা। তখন অনেক অনেক বিপ্লবী তরুন রামকৃষ্ণ মঠেও যোগ দিয়েছিলেন। সেই দিন কি আর আছে? এখনও স্বামী বিবেকানন্দের নামটা আছে অবশ্য। ওটা ভাঙিয়ে যুগের পর যুগ টিকে থাকা যাবে।

আমাকে বিভিন্ন সময় অনেকে বলেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে কিছু লিখতে। বর্তমান পরিস্থিতিটা কি? কেন আপনি চোখে দেখেন না? ভারতের প্রসঙ্গে পরে আসছি। বাংলাদেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হিন্দু নিগ্রহের যে ঘনঘোর তা আপনি টের পান না বুঝি? তা রামকৃষ্ণ মিশন কি করতে পারে? নাসিরনগরে উপজেলা পরিষদে গিয়ে সরকারি সুরক্ষায় থেকে মৌলভীবৃন্দ বেষ্টিত হয়ে রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার সম্পাদক বলতে পারেন- 'এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা!' এর চেয়ে বেশী তারা কি করতে পারেন? চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় নিয়ে আনন্দেই তো দিনাতিপাত করছেন, করেই যাবেন। কথা হচ্ছে- তাদের কি দরকার পড়েছে কিছু বলার? মশাই যারা তাদের চর্ব্যচোষ্য জুটিয়ে যাচ্ছে তাদের অস্তিত্বই যখন বিপন্ন তখন তাদের পাশে দাঁড়ানোটা শুধু দায়িত্ব-কর্তব্য না, কৃতজ্ঞতার পর্যায়েও পরে। অবশ্য রামকৃষ্ণ মিশনের ভরণ-পোষণ উঁচুতলার বাবুরা করেন। বাবুদের সাথে বেশ স্বচ্ছ একটা তেলাতেলি ভাব তাদের আছে।

দিনাজপুরে একবার কয়েকঘর হিন্দু বাড়িতে সহীহ আগুন দেবার পর সেই পরিবারগুলোকে তৎক্ষণাৎ আশ্রয় দেয় ইসকন। আমি ইসকনের ভাবাদর্শের কট্টর বিরোধী হলেও তাদের এই সৎসাহস ও সুবিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান করি। অপরদিকে রামকৃষ্ণ মিশনের স্থানীয় ব্রাঞ্চ সাহায্যে যায় ঘটনার কয়েকদিন পর। দিনাজপুরের রামকৃষ্ণ মিশন নিজেই একটা দুঃস্থ প্রতিষ্ঠান। তাদের বড়সড় ত্রাণ দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তো আরও বুর্জোয়ানির্ভর কর্তাভজা রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রাঞ্চ ছিল, তারা কিছু পাঠাতে পারত না? ঢাকার এক বরেণ্য সন্ন্যাসী বললেন- 'এগুলো পলিটিক্যালি এফেক্টেড এরিয়া। এখানে আমরা গেলে আমাদেরও একটা রাজনৈতিক পরিচয় বানিয়ে দেবে ওরা।' ঘেন্নায় জিভ আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল আমার! এরা বিবেকানন্দের অনুগামী?

যে সকল হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিন্দুর অর্থায়নে চলে অথচ হিন্দুর বেদনায় সামান্যতম সহানুভূতি দেখায় না, এদের অবিলম্বে বর্জন করুন। আমাদের প্রভূত আধ্যাত্মিকতা আছে। এখন অস্তিত্ব বাঁচানোটাই ফরজ! বাংলাদেশে স্বামী অক্ষরানন্দজী এবং স্বামী অমৃতত্ত্বানন্দজীর পর বিবেকানন্দের সুরে কথা বলার মত আর কোন সন্ন্যাসী দেখা যায়নি। এখন যারা আছেন এদের কেউ কেউ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কেউ কেউ মারাত্মক কপটাচারী, অনেকের কাছে ভীরুতাই ধর্মবিশেষ, যারা ভীরুতাকে সহনীয়তা বলে; আবার একদল নির্বিঘ্নচিত্ত সদাচারী কুলীন বৈরাগী- কার ঠাকুরঘরে আগুন লাগল আমার জেনে কাজ কি, আমি কলাটা পেলেই হল! এরা কোনদিন আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের জন্য টু-শব্দ করে না। চলুন তাদের সাষ্টাঙ্গ পেন্নাম ঠুকে আসি!

ভারতে রামকৃষ্ণ মিশনের গোড়া তো বাংলা। বাংলায় রামকৃষ্ণ মিশন কখনো স্পেসিফিক্যালি হিন্দুর হয়ে কথা বলে? বলে না। সর্বধর্মসমণ্বয়ের কথা বলে। আমি এই থিওরিকে লজিক্যালি সাপোর্টও করি। তবে সর্বধর্ম সমণ্বয়ের কথা বলব আর এদিকে স্বধর্মের লোক অত্যাচারে মরবে- তা নিয়ে কিচ্ছুটি বলব না- এমন আদর্শ কি বিবেকানন্দের? নাকি ঠাকুর রামকৃষ্ণের? নাকি বেদান্তের? এখানেও একই লজিক- রামকৃষ্ণ মিশন রাজনীতির বলয়ে যাবে না? হা-হতোস্মি মহারাজ! ন্যায়ের কথা যদি রাজনীতিতেই পড়ে, সত্য যদি একটা দলের দিকেও যায়- তবে তা বলা কি অধর্ম? আবু-পাহাড়ে বসে যে বিবেকানন্দ বৃটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের কল্পনা করতে পারেন, আপনি সেই বিবেকানন্দকে চেনেন তো? সন্ন্যাসী ঢাল তলোয়ার না ধরুক, অন্যায়ের বিপক্ষে দুটো মৃদু বচন তো দিতে পারেন!

পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দু সংগঠনগুলো পিঠ-বাঁচানো, গা-বাঁচানো নীতিতেই চলে। আজকে আমার লেখায় পুষ্পেন্দু বাবু কমেন্টে লিখলেন- নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায় না। এসব পেসাদভোজী ভজগোবিন্দ আর 'জয় ঠাকুর' 'জয় গুরুর' দল কবে এই সত্যকে অনুভব করবে?

(c)বিশাখদত্ত দত্ত
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।