০৮ জুন ২০১৭

কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব

কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনে স্বামী বিবেকানন্দ কি প্রভাব রেখেছিলেন তা ফুটে ওঠে তাঁর 'বিবেকানন্দ' শিরোনামের কবিতায়। এই কবিতা খানি কবির প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালকের' অন্তর্গত। আসুন পড়ে ফেলি কবিতাটি।
------------------------------------------------
বিবেকানন্দ
~~~~~~~~
জয়,—তরুণের জয় !
জয় পুরোহিত আহিতাগ্নিক, —জয়, —জয় চিন্ময়!
স্পর্শে তোমার নিশা টুটেছিলো,— উষা উঠেছিলো জেগে
পূর্ব তোরণে, বাংলা-আকাশে,— অরুণ-রঙিন মেঘে;
আলোকে তোমার ভারত, এশিয়া,— জগৎ গেছিলো রেঙে ।
হে যুবক মুসাফের,
স্থবিরের বুকে ধ্বনিলে শঙ্খ জাগরণপর্বের!
জিঞ্জির-বাঁধা ভীত চকিতেরে অভয় দানিলে আসি,
সুপ্তের বুকে বাজালে তোমার বিষাণ হে সন্ন্যাসী,
রুক্ষের বুকে বাজালে তোমার কালীয়-দমন বাঁশি!
আসিলে সব্যসাচী,
কোদণ্ডে তব নব উল্লাসে নাচিয়া উঠিলো প্রাচী!
টঙ্কারে তব দিকে-দিকে শুধু রণিয়া উঠিলো জয়,
ডঙ্কা তোমার উঠিলো বাজিয়া মাভৈঃ মন্ত্রময়;
শঙ্কাহরণ ওহে সৈনিক,— নাহিকো তোমার ক্ষয়;
তৃতীয় নয়ন তব
ম্লান বাসনার মনসিজ নাশি জ্বালাইতো উৎসব!
কলুষ-পাতকে, ধূর্জটি, তব পিনাক উঠিতো রুখে,
হানিতে আঘাত দিবানিশি তুমি ক্লেদ-কামনার বুকে,
অসুর-আলয়ে শিব-সন্ন্যাসী বেড়াতে শঙ্খ ফুঁকে!
কৃষ্ণচক্র-সম
ক্লৈব্যের হৃদে এসেছিলে তুমি ওগো পুরুসোত্তম,
এসেছিলে তুমি ভিখারির দেশে ভিখারির ধন মাগি
নেমেছিলে তুমি বাউলের দলে,— হে তরুণ বৈরাগী !
মর্মে তোমার বাজিতো বেদনা আর্ত জীবের লাগি ।
হে প্রেমিক মহাজন,
তোমার পানেতে তাকাইলো কোটি দরিদ্র-নারায়ণ;
অনাথের বেশে ভগবান এসে তোমার তোরণতলে
বার-বার যবে কেঁদে-কেঁদে গেলো কাতর আঁখির জলে,
অর্পিলে তব প্রীতি-উপায়ন প্রাণের কুসুমদলে ।
কোথা পাপী ? তাপী কোথা ?
-ওগো ধ্যানী তুমি পতিতপাবন-যজ্ঞে সাজিলে হোতা!
শিব-সুন্দর-সত্যের লাগি শুরু ক’রে দিলে হোম,
কোটি পঞ্চমা আতুরের তরে কাঁপায়ে তুলিলে ব্যোম,
মন্ত্রে তোমার বাজিলো বিপুল শান্তি স্বস্তি ওঁ!
সোনার মুকুট ভেঙে
ললাট তোমার কাঁটার মুকুটে রাখিলে সাধক রেঙে!
স্বার্থ-লালসা পাসরি ধরিলে আত্মাহুতির ডালি,
যজ্ঞের যূপে বুকের রুধির অনিবার দিলে ঢালি,
বিভাতি তোমার তাই তো অটুট রহিলো অংশুমালী!
দরিয়ার দেশে নদী!
—বোধিসত্ত্বের আলয়ে তুমি গো নবীন শ্যামল বোধি!
হিংসার রণে আসিলে পথিক প্রেম-খঞ্জর হাতে,
আসিলে করুণা-প্রদীপ হস্তে হিংসার অমারাতে,
ব্যাধি-মন্বন্তরে এলে তুমি সুধা-জলধির সংঘাতে!
মহামারী-ক্রন্দন
ঘুচাইলে তুমি শীতল পরশে, —ওগো সুকোমল-চন্দন!
বজ্র-কঠোর, কুসুম-মৃদুল,—আসিলে লোকোত্তর;
হানিলে কুলিশ কখনো, —ঢালিলে নির্মল নির্ঝর,
নাশিলে পাতক, —পাতকীরে তুমি অর্পিলে নির্ভর।
চক্র-গদার সাথে
এনেছিলে তুমি শঙ্খ-পদ্ম,—হে ঋষি, তোমার হাতে;
এনেছিলে তুমি ঝড়-বিদ্যুৎ,—পেয়েছিলে তুমি সাম,
এনেছিলে তুমি রণ-বিপ্লব,—শান্তি-কুসুমদাম;
মাভৈঃ-শঙ্খে জাগিছে তোমার নরনারায়ণ-নাম!
জয়,-তরুণের জয়!
আত্মাহুতির রক্ত কখনো আঁধারে হয় না লয়!
তাপসের হাড় বজ্রের মতো বেজে ওঠে বার-বার!
নাহি রে মরণে বিনাশ,—শ্মশানে নাহি তার সংহার,
দেশে-দেশে তার বীণা বাজে— বাজে কালে-কালে ঝঙ্কার!
------------------------------------
[জীবনানন্দ দাশ (/dʒɪbɒnʌnɒndɔː dʌʃ/) (ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ - অক্টোবর ২২, ১৯৫৪; বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ - কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত।]

(c) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।