০৮ জুলাই ২০১৭

দিনাজপুরে হাজার বছরের সপ্তরথ মন্দির আবিষ্কার দুই মাস ধরে খনন চলছে

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় একটি সপ্তরথ হিন্দু মন্দির খুঁজে পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি দল। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই খননে আবিষ্কৃত এই মন্দিরটির আনুমানিক বয়স প্রায় ১ হাজার বছর। খননকাজে নিয়োজিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশে এটিই প্রথম আবিষ্কৃত সপ্তরথ মন্দির।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে স্থানীয়ভাবে বুড়ির থান/বুড়ি মাতারানীর মন্দির থান নামে পরিচিত এই ঢিবিটি পূর্ব-পশ্চিমে ৮০ মিটার আর উত্তর-দক্ষিণে ৬০ মিটার মাপের। খননদলের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ঢিবিটি পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের লিচু বাগানের মধ্যেও বিস্তৃত।

আবিষ্কৃত মন্দিরটি ঢিবির আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকের অংশটি অভিক্ষেপ বিশিষ্ট শক্ত কাঠামোর (৬.২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও  ৬.২৫ মিটার প্রস্থ), মাঝখানে গর্ভগৃহ (২ মিটার দৈর্ঘ্য ও  ২ মিটার প্রস্থ)। পূর্বদিকে সংযুক্ত রয়েছে ৮ মিটার বর্গাকার একটি কক্ষ। এই কক্ষটিতে ছিল মন্দিরের মণ্ডপ।

পুরো মন্দিরটির আকার ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে আরো সময় লাগবে বলে জানান খনন দলের পরিচালক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন। তিনি আরও জানান যে, রথ শব্দটি প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য গঠন ও শৈলী প্রকাশকারী পরিভাষা। দেয়ালের বহির্গাত্রের উলম্ব অভিক্ষেপগুলোকে রথ বলা হয়। তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, মন্দিরটি ভারতের বর্তমান উড়িশ্যায় উদ্ভুত কলিঙ্গ মন্দির স্থাপনা রীতির অনুসারী। মন্দিরটির রথবিশিষ্ট গর্ভগৃহের উপরিকাঠামো হিসেবে রেখা দেউল ধরনের শিখর ছিল বলে অনুমান করছেন ড. স্বাধীন সেন।

তিনি আরো জানান, গর্ভগৃহের কেন্দ্রে একটি সপ্তরথ অভিক্ষেপবিশিষ্ট পাথরের বেদি রয়েছে। এই বেদির পশ্চিমপাশের অর্ধবৃত্তাকার খাঁজের মধ্যে প্রতীমার নিম্নাংশ প্রবিষ্ট করে রাখা হতো। তবে খননের সময় এই জায়গাটিতে একটি ছোট মাটির তৈরি ঘট পাওয়া গেছে। এখনও বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতীমার প্রতীকী প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ঘট পূজা করে থাকেন। উড়িষ্যার মন্দির স্থাপত্যরীতির অনুরূপ ইট নির্মিত মন্দিরের উপস্থিতি বাংলা অঞ্চলে বিরল নয়। গত বছর কাহারোল উপজেলার মাধবগাঁওয়ে একই দল একটি নবরথ মন্দির খনন করেছিলেন।
অধ্যাপক স্বাধীন জানান যে, উপরের এই মন্দিরটি পূর্বেকার আরেকটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের উপরে নির্মিত হয়েছে। ওই স্থাপনার অংশবিশেষ উন্মোচিত হওয়ায় তার প্রকৃতি ও পরিবর্তন এখনো স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব হয় নাই। ওই স্থাপনাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করতে আরো সময় প্রয়োজন।

খননদলের সহযোগী পরিচালক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান জানান, বিরল উপজেলার এই প্রত্নস্থানগুলো প্রথম শনাক্ত করেন ২০০৪-২০০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের গবেষণা শিক্ষার্থী খন্দকার মেহবুবুল ইসলাম। তার গবেষণা ও পরবর্তী গবেষণায় এই উপজেলায় মোট ১২২ টি বিভিন্ন কালপর্বের প্রত্নস্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল। খননকৃত প্রত্নস্থানটি পারুলগঙ্গা নামের একটি নদীর মৃত খাতের দুই পাশ ধরে রৈখিক বিন্যাসে ছড়িয়ে থাকা একটি মানববসতির অংশ ছিল। তিনি আরও জানান, এই অঞ্চলের নদীব্যবস্থার বদলের সঙ্গে এই বসতিগুলোর বিকাশ ও বিলুপ্তির ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।

খননের সহকারী পরিচালক ও পিএইচডি গবেষণা শিক্ষার্থী আবির বিন কায়সার শুভ বলেন, পুরো প্রত্নস্থানটি যথাযথভাবে খনন ও নথিভুক্তকরণ করতে আরও চার মাস সময় প্রয়োজন হবে। খননের স্তরবিন্যাস বুঝে এখানে মানুষের বসতির পরিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন বলে তিনি বলেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে পরিচালিত এই খননে অর্থায়ন করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।

এখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থী, মহাস্থানগড় থেকে আসা ১৫ জন বিশেষজ্ঞ শ্রমিক ও কাহারোল থেকে আসা ২৫ জন শ্রমিক প্রত্নস্থানটি খননে অংশ নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম খননস্থলটি পরিদর্শন করে জানান, এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইত্তেফাক/এমআই
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।