• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রসঙ্গ : গরু নিয়ে করা কুটুক্তি ! হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না ঠিক আছে, কিন্তু গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি জুতা পড়ে কেন ?

ধর্ম নিয়ে চুলকানো মুসলমানদের স্বভাব। এই চুলকাতে গিয়ে মুসলমানরা নানা প্রশ্ন করে আপনাকে ক্ষতবিক্ষত করবে, আপনি যদি ঠিকঠাক মতো জবাব দিতে না পারেন, মুসলমানদের কাছে আপনি হেয় হবেন এবং এই সুযোগে ইসলামকে তারা শ্রেষ্ঠধর্ম হিসেবে তুলে ধরবে। মুসলমানদের অনেক গুলো প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো গরু সংক্রান্ত। তাই মুসলমানদের প্রশ্নবান থেকে আপনাদের রক্ষা করার জন্য, এই পোস্টে দিলাম, আমার জানা, গরু সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের জবাব।

মুসলমান :- আপনারা হিন্দুরা গরুর মাংস খান না কেন ?

হিন্দু :- আপনারা শুয়োরের মাংস খান না কেন ?

মুসলমান : আমাদের ধর্মে নিষেধ আছে, তাই।

হিন্দু :- গরুর মাংস খাওয়াও হিন্দু ধর্মে নিষেধ আছে। বরাবর ?

মুসলমান :- হুম, কিন্তু আপনারা গরুর মাংস না খেলেও তো গরুর দুধ খান ?

হিন্দু :- এজন্যই তো গরু কেটে তার মাংস খাই না। গরু জাতির প্রতি এটা আমাদের হিন্দুদের কৃতজ্ঞতা। ছোট বেলায় মায়ের দুধের পাশাপাশি গরুর দুধ খেয়েছি, তাই গরু আমাদের দুধমাতা। হালিমা যেমন ছিলো আপনাদের নবীর দুধমাতা, নবীর কাছে তার যথেষ্ট সম্মান ছিলো। আমাদের কাছেও তেমনি গরুর সম্মান। তাছাড়াও সারা বছর গরুর দুধ খাই, যা আদর্শ খাদ্য। খাওয়ার জন্য নির্বিচারে গরু কেটে খেয়ে ফেললে, এই আদর্শ খাদ্য পাবেন কোথা থেকে ? আপনারাও তো এই গরুর দুধ ছোটবেলায় খেয়েছেন, এখনও খান; তাহলে গরুর প্রতি আপনাদের কোনো কৃতজ্ঞতা নেই কেন ?

এটাও মনে রাখবেন, মানুষ মায়ের দুধ খায় মাত্র এক বছর, কিন্তু গরুর দুধ খায় সারাজীবন। এই সূত্রে, গরু মাতৃসমতুল্য।

মুসলমান :- হুম, তা না হয় বুঝলাম। গাই গরু না হয় দুধ দেয়, তাই তার মাংস খান না; কিন্তু বলদ গরু তো আর দুধ দেয় না, তার মাংস খান না কেন ?

হিন্দু :- আপনার জন্ম নিশ্চয় আপনার মা একা দেয় নি ? আশা করি আর বেশি কিছু বলতে হবে না। তাছাড়া চাষের কাজে বলদ গরু এখনও অপরিহার্য। আর এই উপমহাদেশে গরুর মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো কৃষিকাজ, যা আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন, আরব্য মরুভূমির সংস্কৃতির প্রভাবে সেটা আপনারা ভুলে যেতে পারেন, আমরা হিন্দুরা কিন্তু সেটা ভুলি নি। সবচেয়ে বড় কথা, আপনারা শুকর খান না, শুকরকে ঘৃণা করেন বলে; আর আমরা গরু খাই না, গরুকে শ্রদ্ধা করি বলে, দুটোর মধ্যে কিন্তু আকাশ পাতাল প্রভেদ। আচ্ছা, বলতে পারবেন, এমন কোন প্রাণী আছে, যাকে আপনারা শ্রদ্ধা করেন এবং কিন্তু তাকে হত্যা করে তার মাংস খান না ?


হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না কেনো ? এই প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব যখন দিলাম। তখন মুসলমানরা আবার প্রশ্ন তুললো, তাহলে হিন্দুরা গরুর চামড়ার জুতা পড়ে কেনো ? এরপর হয়তো এই প্রশ্ন করবে যে, হিন্দুরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি ঢাক বাজিয়ে পূজা করে কেনো ? এজন্য সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথেই দিলাম এবং সেটা যে খুব ভদ্র ভাষায় নয়, সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন।

গাছ কাটলে কাঠ হয়, আর কাঠ পুড়লে হয় কয়লা । একটা বাচ্চাও এই গাছ, কাঠ ও কয়লার পার্থক্য বুঝবে। কিন্তু সীলগালা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মুসলমানরা এটা কখনো বুঝবে না। গাছের, কাঠের এবং কয়লার ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। এ তিন জিনিস কখনোই এক নয়, তাই তাদের আলাদা আলাদা নাম। একই ভাবে গরু, গরুর মাংস এবং গরুর চামড়া তিনটিই সম্পূর্ণ পৃথক জিনিস।

আপনি যদি জঙ্গলে গিয়ে বাস করতে বাধ্য হন, তাহলে জংলীদের কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাকে পালন করতেই হবে, না হলে আপনি জঙ্গলে টিকতে পারবেন না। তেমনি মুসলমানদের দেশে বাস করতে গেলে, ইসলামিক সংস্কৃতির কিছু অংশ আপনাকে যেমন পালন করতেই হবে, তেমনি তার কিছু কিছু রেশ আপনার অজান্তেই আপনার কালচারে ঢুকে যাবে। গরুর চামড়া দিয়ে জুতা বা ঢাক বানানোর ব্যাপারটিও এই রকম। মুসলমানরা এই উপমহাদেশে আসার আগে থেকেই হিন্দুরা তাদের পূজা-প্রার্থনা এবং তাতে গান-বাজনা করে আসছে। তখন কি ঢাক এ গরুর চামড়া ব্যবহার করা হতো ? আর গরুর চামড়া ব্যবহার করলেও তাতে করতো মৃত গরুর চামড়া, কোনো কারণে যে গরু মারা গিয়েছে, তাকে হত্যা করা হয় নি, এই কাজটি করতো হিন্দু সম্পদ্রায়েরই মুচি বা ঋষিরা। মহাদেব শিবও বাঘের চামড়া পরিধান করতেন, এর অর্থ হলো মৃত পশুর চামড়া ব্যবহার শাস্ত্র সম্মত এবং তাতে কোনো দোষ নেই।

এখানে বলে রাখি, ঢাকের এক পাশে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় গরু বা মহিষের মোটা চামড়া, অন্য পাশে ছাগল বা ভেড়ার পাতলা চামড়া; চিকন এবং মোটা এই দুই ধরণের শব্দ তৈরির জন্যই এই ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে যেহেতু গরুর চামড়ার ব্যবহার বেশি এবং প্রক্রিয়াজাত করণের পর কোনটা কিসের চামড়া তা বোঝা যায় না, সেহেতু ঢাক তৈরির কারিগরদের অজ্ঞাতে মহিষের চামড়ার পরিবর্তে গরুর চামড়া ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বা গরুর চামড়ার সহজলভ্যতার জন্যও এটা ঘটতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে যে ঢাকে মহিষ এবং ছাগলের চামড়াই ব্যবহার হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না এবং তা থেকে উৎপন্ন কোনো জিনিসও সজ্ঞানে ব্যবহার করে না। 

(C) নীল আকাশের চাঁদনী‎
Share:

কখন থেকে সিদুঁর ব্যবহার করি কেন জেনে রাখুন।

মহারাজ শান্তুনু গঙ্গাদেবীকে বিবাহ করিবেন বলিয়া মনস্থির করিলেন।যেহেতু গঙ্গা দেবী দেবকুল এবং শান্তুনু মানবকুল,তাই তাহারা উভয়েই সংকটে পড়িলেন যে,এই বিবাহের বৈধতা থাকিবে কি না!

যেহেতু ব্রক্ষ্রা সকল কুলের সৃষ্টিকারী,তাই তাহারা উভয়ে ব্রক্ষ্রার শরনাপন্ন হইলেন এবং স্ময়ং ব্রক্ষ্রা ও উপস্থিত হইলেন।

ব্রক্ষ্রা এ বিবাহে অস্বীকৃতি জানাইলেন।কারন কুল,ধর্ম,বর্ন,গোত্র বিপন্ন হইলে, বিবাহের পরবর্তী সময়ে সংঘাত অনিবার্য। তখন দেবকুল রানী গঙ্গা দেবী ব্রক্ষ্রা কে ১টি প্রশ্ন করিলেনঃ-

"যদি দেবকুলের কোন নারী দেবকুলের কোন বরপতি খুজিঁয়া না পায়,তাহাহইলে কি সে নারী সারাজীবন অবিবাহিত থাকিবেন?"

তাহাহইলে তো সমাজে অনাচার এবং সংঘাত অহরহর ঘটিতে থাকিবে কারন উপযুক্ত অবিবাহিত নারী স্বর্প বিষের সমতুল্য।কারন তাহারা যে কোন সময় পরিবার,সমাজ এবং ধর্ম সকলকে আঘাত করিতে পারিবে,তাই ইহা ১মাত্র বিবাহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন সম্ভব।

তখন ব্রক্ষ্রা পড়িলেন বিপাকে!ব্রক্ষ্রা তখন মহারাজ শান্তুনু কে কহিলেন,ঠিক আছে তোমরা যদি এমন ১টা কিছু করিয়া দেখাইতে পার যেখানে দেহ থাকিবে ২টা কিন্ত মন এবং প্রান থাকিবে ১টা,তাহাহইলে আমি এ বিবাহের অনুমতি পারিবো।মহারাজ শান্তুনু তখন চিন্তা করিলেন,যদি ২জনকে ১ প্রানে আনিতে হয় তাহাহইলে যদি আমার রক্ত ওর দেহে প্রবেশ করাইলে আমরা উভয়েই ১ প্রানের স্তম্ভ লাভ করিতে পারিবো।

মহারাজ শান্তুনু সাথে সাথে নিজের বাম হস্তের বৃদ্ধাংগুলী কাটিয়া নিজ রক্ত গঙ্গা দেবীকে খাওয়ানোর জন্য উদৃত্ব্য হইলেন।ব্রক্ষ্রা ইহাতে বাঁধা প্রদান করিলেন এবং কহিলেন, আমিই জগতের সকল কুল সৃষ্টি করিয়াছি।তোমাদের কে পৃথিবীতে এবং স্বর্গলোকে পাঠাইনো হইল শান্তি এবং ধর্ম স্থাপনের আশায়।রক্ত পান করিলে তোমাদের মধ্যে আর রাক্ষস, দৈত্য, দানব এবং অসুর কুলের মধ্যে কোন ভেদাবেদ থাকিবে না।

তাই আমার মতে,তুমি গঙ্গা দেবীর শরীরে তোমার রক্ত এমন ১টা জায়গায় লেপন কর, যেখানে যে কোন নারীর সর্ব্বলোকের সর্ব্ব দৃষ্টি ঐ খানে গিয়া পড়িবে।

আরো মনে রাখিতে হইবে যে,তাহা কোন নারীর জীবনে মাত্র ১বার রক্ত তিলক গ্রহন করিতে পারিবে এবং ২য় বারের ইহার কোন বৈধতা থাকিতে পারিবে না।

তখন মহারাজ শান্তুনু নিজের বাম হস্তের বৃদ্ধাংগুলীর রক্ত গঙ্গা দেবীর ললাটে লেপ্টাইয়া দিলেন এবং সেই থেকে হিন্দু সমাজের নারীদের ললাট রক্ত তিলকের শোভা বর্ধনে সিদুঁর ফোঁটার প্রচলন ঘটাইলো।

এখানে আরো বলা বাহুল্য যে,"যেহেতু ব্রক্ষ্রা ২জনকে ১ প্রনে অধিষ্ঠিত করিয়াছিলেন এবং শান্তুনু র রক্ত প্রান গঙ্গা দেবীর শরীরে প্রবেশ করাইয়াছিলেন সেহেতু স্বামীর প্রান প্রয়ান মানেই স্ত্রীর প্রান প্রয়ান ঘটিবে বলিয়া নিশ্চিত করনে সমগ্র ব্রক্ষ্র সমাজ #সতীদাহ প্রথার প্রচলন ঘটাইলেন"।

#সিদুঁর স্থাপনের আরো কিছু যুক্তিকতাঃ-

----------------------------------------------------------

(১) কোন নারীর জীবনে কপালে সিদুঁর ১বারেই উঠে বলিয়া বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে ব্রাম্মণ গন কখনো সিদুঁর প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন না।

(২) যাহার কপালের সিদুঁরেরর ফোঁটা যত উজ্জল থাকে তাহার প্রতি পরপুরুষের কামশক্তির দৃষ্টি তত ম্লানের দিকে ধাবিত হয়।

(৩)কপালে সিদুঁর নিয়ে চলাচল মানেই স্বামীর রক্ত নিজ শরীরে বয়ে বেড়ানো।

(৪) সিদুঁরের রং যদি লাল না হইয়া অন্য রং সৃষ্টি হইত, তাহা হইলে কখনো ইহা কপালে স্থান পাইতো না কারন ইহা মূলত রক্ত তিলক হইতে উৎপত্তি।

(৫) সিদুঁর মূলত কালীমাতার ভয়ংকর রুপ।কারন অসুরদের রক্তঝরানোর মুহুত্বে কালী মাতার শরীরে মহাদেবের রক্ত তিলক ছিলো।অসুরেরা তাই লাল রংকে বেশী ভয় পায়।তাই ইহা অসুর প্রতিষেধক হিসাবেও কাজ করে।।

(c) Sumon Roy‎
Share:

পরমব্রহ্মের অস্তিত্বের স্বপক্ষে একটি ক্ষুদ্র রচনা

ঠিক ১ ঘণ্টা পরেই স্বামী মহানন্দের বিতর্কে অংশ নেওয়ার কথা । যারা প্রতিপক্ষ তারা নাস্তিক; বিতর্কের বিষয় – ঈশ্বরের অস্তিত্ব (পক্ষে/বিপক্ষে)।

.
স্বামী মহানন্দ ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষে বিতর্কে অংশ নেওয়ার জন্য যাত্রা পথে গাছতলায় বসে পড়লেন । বিতর্ক শুরু হতে আর মাত্র ১৫ মিনিট বাকি, কিন্তু স্বামীজির দেহে ক্লান্তি না থাকা সত্ত্বেও শিষ্য ভজহরির মনে সন্দেহের দানা বাঁধল স্বামীজি কি তাহলে যুক্তিবাদী নাস্তিকদের কাছে নিশ্চিত হারতে হবে জেনেই পরাজয় মেনে নিয়ে যাত্রাপথে বিলম্ব করছেন । স্বামী মহানন্দ তার শিষ্যের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে আশ্বস্ত করলেন কেন এই বিলম্ব সেকথা একটু পরেই বুঝতে পারবে।

এদিকে বিতর্কের মঞ্চে প্রতিপক্ষ নাস্তিকরা বিরক্তি প্রকাশ করছে । নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেল অথচ মূর্খ ধর্ম গুরুর কোনো দেখা নেই, হারবে জেনে গুরু বৃন্দাবনে পালিয়েছে —- এসব কথা বলতে বলতে তারা নিজেদের জয়ী ভেবে মুচকি হাসি হাসতে লাগলো ।

.নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৩০ মিনিট পরে স্বামীজি বিতর্কের মঞ্চে প্রবেশ করলেন । প্রতিপক্ষ নাস্তিকরা তাদের সময়ের মূল্য বুঝিয়ে স্বামীজিকে জ্ঞান দিতে লাগলেন । স্বামীজি বললেন বিতর্কের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ ঘন্টা । আমি বিলম্ব করেছি ৩০ মিনিট । কিন্তু এই বিতর্ক আমি ৩ মিনিটেই শেষ করে দেব , সময়ের মূল্য কতখানি তা তোমাদের বোঝাবোও বটে । 

স্বামীজির কথা শুনে সাথে সাথে হাসির রোল পড়ে গেলো । সবাই একটু থামতেই প্রতিপক্ষের এক জন বললেন, তা স্বামীজি আপনি আগে বলুনতো আপনি যদি এতোই সময়জ্ঞান রাখেন তাহলে এখানে আসতে আপনার এত বিলম্ব হল কেনো।

.স্বামীজি বললেন, তাহলে শোনো – আমার এখানে আসার পথে একটি নদী পার হতে হয়েছিল । দুর্ভাগ্যবশত নদী পার হতে গিয়ে নৌকাটি নদীর মাঝপথে ডুবে যায় । কিন্তু মুহূর্তেই জল ভেদ করে উঠে এল বিশাল এক গাছ, গাছ নিজ থেকেই কাঠ হয়ে গেল তারপর সেই কাঠ থেকে এক নিমিষেই তৈরী হয়ে গেলো বিশাল এক নৌকা । আমি সেই নৌকায় পার হয়ে এখানে এলাম – তাই একটু বিলম্ব বৈকী!!

স্বামীজির এই কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। কেউ হাহা কিংবা কেউ হোহো। প্রতিপক্ষ নাস্তিক বন্ধুরা বলতে লাগলেন এই বিজ্ঞানের যুগে কেউ আপনার এই মনগড়া গল্প বিশ্বাস করবে? একটা নৌকা তৈরী করতে গাছকে যন্ত্রের সাহায্যে কাঠ তৈরী করতে হয় তারপর সেই কাঠ দিয়ে কারিগরের হাতে নৌকা তৈরী হয় । মানুষের হাতের ছোঁয়া ছাড়া নৌকা তৈরী? স্বামীজি আপনি কি বলছেন!! এতো পাগলের প্রলাপ । হো হো হো হো ।

চারিদিকে যখন হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে তখন স্বামী মহানন্দ উচ্চ -কন্ঠস্বরে বলে উঠলেন এবার থামো । সবাই স্বামীজির দিকে তাকিয়ে রইলেন। স্বামীমহানন্দ তখন বললেন – সামান্য একটি নৌকা মানুষ/কারিগর ছাড়া তৈরী হতে পারে – এটা বিশ্বাস করতে পারছো না । অথচ তোমরাই বলছ মানুষ এর মতো একটি সেরা জীব যে দেখতে পারে, চলতে পারে, শুনতে পারে, খাবার হজম করতে পারে , এর দেহের ভেতর যে সূক্ষ্মাতি-সুক্ষ্ম মানব যন্ত্র রয়েছে – কারো পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কারিগরের হাতের ছোঁয়া ছাড়াই এই মানুষ পৃথিবীতে তৈরী হয়েছে । আমি তোমাদের এই কথা কেনো গ্রহন করতে যাবো? কোন যুক্তিতে? আমার সঙ্গে দীর্ঘ ১ ঘন্টা বিতর্ক করতে চাও কিন্তু তার সারবত্তা কি? তোমাদের যুক্তি তোমরাই মানতে চাইছো না।

প্রতিপক্ষ নাস্তিকরা একে অপরের দিকে আতঙ্কের দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো । চারিদিকে নিস্তব্ধ নীরবতা । হঠাৎ স্বামীজির শিষ্য ভজহরির কন্ঠে ধ্বনিত হল-

জয় স্বামী মহানন্দের জয়।
জয় স্বামী মহানন্দের জয়।

(C) Kanchan Das
Share:

ভগবান চক্রপাণি শ্রীহরি।

নদীতে অধিকতর বলবান কুমীর কতৃক আক্ৰান্ত গজেন্দ্ৰকে উদ্ধার করার কাহিনী শ্ৰীমদ্ভাগবতের অষ্টম স্কন্ধে বৰ্ণিত হয়েছে । যেহেতু ভগবান পরম - জ্ঞানস্বরপ , তাই তার দিব্য নাম এবং তার চিন্ময় স্বরপে কোন পাৰ্থক্য নেই । কুমীর কতৃক আক্ৰান্ত হয়ে গজেন্দ্ৰ অত্যন্ত পীড়িত হয়েছিল ।

সাধারণত হাতী যদিও কুমীরের থেকে অধিক শক্তিশালী কিন্তু জলে কুমীর হাতীর থেকে অধিক শক্তিশালী। গজেন্দ্ৰ পূৰ্ব্বজন্মে ভগবানের এক মহান ভক্ত ছিলেন , তাই তার পূর্বকৃত সুকৃতির প্রভাবে তিনি দিব্য নাম উচ্চারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন । এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে রক্ষা করেছিলেন

জড় জগতে প্রতিটি জীবই সর্বদা দুঃখ - দুৰ্দশায় পীড়িত, কেননা এই জগতটি এমনই যে প্ৰতি পদক্ষেপেই প্ৰত্যেককে কোন না কোন প্রকার দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয় । কিন্তু কারো যদি পূর্বজন্মের সুকৃতি থাকে , তাহলে তিনি ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের চিন্ময় আনন্দে এই ''দুঃখ্যালয়মশাশ্বতম'' জগতে অবস্থান করেন। সেকথা শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় প্ৰতিপন্ন হয়েছে,

''চতুর্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনোহর্জুন,

আর্তো জিজ্ঞাসুরর্থাথী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ''।। ৭/১৬

''অর্থাৎ হে ভরত শ্রেষ্ঠ অর্জুন, আর্ত, অর্থাথী, জিজ্ঞাসু এবং জ্ঞানী এই চার প্রকার পুন্যকর্মা ব্যাক্তিগন আমার ভজনা করেন।

কিন্তু যারা দুস্কৃতকারী এবং পাপী তারা দুঃখ - দুৰ্দশায় আর্ত হলেও ভগবানের শরণাগত হতে পারে না । সে কথাও শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় প্ৰতিপন্ন হয়েছে ।

''ন মাং দুস্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ,

মায়য়াপহৃতজ্ঞানা আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ''। ৭/১৫

অনুবাদঃ মূঢ়া , নরধম , মায়য়া দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবসমপন্ন, সেই সমস্ত দুস্কৃতিকারীরা কখনও আমার শরনাগত হতে পারে না''।

গজেন্দ্ৰ যখন আর্ত হয়ে ভগবানের শরণাগত হন। এবং চিৎকার করে তাকে রক্ষা করার জন্য ভগবানকে ডাকতে থাকেন তখন ভগবান তার নিত্য বাহন গরুড়ের পিঠে চড়ে তৎক্ষণাৎ সেখানে এসে উপস্থিত হন এবং দুঃখী গজেন্দ্ৰকে উদ্ধার করেন।

গজেন্দ্ৰ পরমেশ্বর ভগবানের সঙ্গে তার সম্পৰ্ক সম্বন্ধে অবগত ছিলেন । তিনি ভগবানকে আদিপুরুষ বা পরম ভোক্তা বলে সম্বোধন করে ডাকতে থাকেন।

ভগবান এবং জীব উভয়ই চেতন এবং তাই উভয়ই ভোক্তা ; কিন্তু ভগবান হচ্ছেন পরম ভোক্তা , কেননা তিনি সবকিছুর স্ৰষ্টা । একটি পরিবারে যেমন পিতা এবং পুত্ৰ উভয়ই নিঃসন্দেহে ভোক্তা , কিন্তু পিতা হচ্ছেন মুখ্য ভোক্তা এবং পুত্ৰ গৌণ ভোক্তা ।

ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত ভালভাবেই জানেন যে এই ব্ৰহ্মাণ্ডের সবকিছুই ভগবানের সম্পত্তি এবং জীব তার জন্য বরাদ্দ অংশটুকুই কেবল ভোগ করতে পারে । যা তার জন্য বরাদ্দ করা হয়নি , তা জীব স্পর্শ করতেও পারেন না। এইভাবে ভগবান এবং জীবের মধ্যে পাৰ্থক্য যিনি অবগত তিনি ভগবানকে প্ৰথমে নিবেদন না করে কোন কিছু গ্ৰহণ করেন না।

গজেন্দ্ৰ ভগবানকে সমগ্ৰ জগতের প্রভু বলে সম্বোধন করেছেন , সেই সূত্ৰে তিনি গজেন্দ্ৰরও প্ৰভু । ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত গজেন্দ্ৰ কুমীরের আক্ৰমণ থেকে রক্ষা লাভের বিশেষ যোগ্য ছিলেন এবং ভগবান যেহেতু প্ৰতিজ্ঞা করেছেন যে তার ভক্ত কখনো বিনষ্ট হবেন না , তাই গজেন্দ্রর পক্ষে রক্ষা লাভের জন্য ভগবানের কাছে প্ৰাৰ্থনা যথাৰ্থই উপযুক্ত ছিল এবং ভগবানও তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়েছিলেন ।

ভগবান সকলেরই পালক , তবে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে ভগবানের শ্ৰেষ্ঠত্ব অস্বীকার করে তার সমকক্ষ হওয়ার দাবী করার পরিবর্তে যারা তার মাহাত্ম্য স্বীকার করে তার শরণাগত হন , তাদের তিনি সর্বপ্ৰথমে রক্ষা করেন । ভগবান সর্বদাই পরম উৎকৃষ্ট । ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত ভগবানের সঙ্গে তার পাৰ্থক্য সম্বন্ধে অবগত । ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত সৰ্বতোভাবে ভগবানের শরণাগত বলে ভগবান তাকে প্ৰথম সুযোগ দেন ।

কিন্তু যারা ভগবানের অস্তিত্ব অস্বীকার করে নিজেদের ভগবান বলে প্রচার করে , সেই সমস্ত অসুরদের ভগবান কিছু সীমিত শক্তি অনুমোদন করেন যার প্রভাবে তারা আত্মরক্ষা করে । যেহেতু ভগবান হচ্ছেন সকলের থেকে শ্ৰেষ্ঠ , তাই তার পূৰ্ণতাও সর্বশ্ৰেষ্ঠ । তার পূৰ্ণতা কেউ কল্পনাও করতে পারে না ।

তাই ভগবান চক্ৰপাণি শ্ৰীহরি সেই শরণার্থী গজরাজের আর্তনাদ শ্ৰবণ করে পক্ষীরাজ গরুড়ের পৃষ্ঠে আরোহণপূর্বক তার চক্রের দ্বারা কুমীরের বদন দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন এবং কৃপাপূর্বক গজরাজের শুড় ধরে তাকে কুমীরের মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

(C) প্রসেনজিৎ মোহন দাশ
Share:

শিক্ষাবিদ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিশারদ, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা যোগেশচন্দ্র ঘোষ



''খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
আমার দেশের মাটি''

মানুষকে রোগ থেকে স্বল্প মূল্যে মুক্তি দিতে এক রসায়নবিদ ও পাশ্চাত্যে বিদ্যাপ্রাপ্ত চিকিৎসক দেশীয় গাছপালা থেকে ওষুধ তৈরির কাজে আত্মনিয়োজিত হন । নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তিনি ১৯১৪ সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী গেন্ডারিয়ায় ৭১ দীননাথ সেন রোডে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলেন ‘সাধনা ঔষধালয়’। শত বছরের ঐতিহ্যস্নাত প্রতিষ্ঠান সাধনা ঔষধালয় উপমহাদেশের আধুনিক আয়ুর্বেদ ঔষধালয়ের অন্যতম পথিকৃৎ এক প্রতিষ্ঠান, এর শেকড় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গেন্ডারিয়ায় হলেও তা একসময় ডানা মেলেছিল চীনসহ ইউরোপ-আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে। বিপুল সাফল্যের কারনে এক সময় চীন ও উত্তর আমেরিকায় সাধনা ঔষধালয়ের শাখা বা এজেন্সী ছিল ।

ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদের ইতিহাস ৫ হাজার বছরের পুরনো হলেও এ শাস্ত্রের প্রথম লিখিত বই ‘চরক সংহিতা’। বইটির রচয়িতা চরকের জন্ম ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সংস্কৃতে লিখিত বইটি অনূদিত হয়েছে ল্যাটিন, আরবি, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায়। আজ থেকে হাজার বছর আগে যখন আজকের পাশ্চাত্যে হাসপাতালের ধারণা ছিল না, তখন এখানে আয়ুর্বেদের বেশ কয়েকটি আরোগ্যশালার উল্লেখ পাওয়া যায়। এতে স্পষ্ট হয়, আয়ুর্বেদ সাধারণ মানুষের চিকিৎসা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত ছিল। তারপর হাজার বছরের পথপরিক্রমায় আয়ুর্বেদের জনপ্রিয়তা যখন ক্ষীণ হয়ে এসেছিল, তখন একে পুনরুজ্জীবন করতে নেমেছিলেন পাশ্চাত্য প্রবর্তিত শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ।

শিক্ষাবিদ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিশারদ, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ১৮৮৭ সালে মাদারীপুর গোঁসাইরহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০২ সালে ঢাকা জুবিলী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯০৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ, ১৯০৬ সালে কুচবিহার কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯০৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে এমএ পাস করেন।

স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি স্বদেশীকতা ও জাতীয়তাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকান্ডের খোঁজখবর রাখতেন তিনি। তাঁর বন্ধুদের অনেকেই তখন বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি সরাসরি এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়ার সময়ে সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ই তাঁকে দেশজ সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য ব্যাপক উৎসাহিত করেন।

১৯০৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইংল্যান্ড চলে যান। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি-বাকরি নিয়ে বেশ স্বচ্ছন্দেই জীবন অতিবাহিত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে দেশে ফিরে আসেন।

১৯০৮ সালে দেশে ফিরেই যোগেশচন্দ্র ঘোষ যোগ দেন ভাগলপুর কলেজে। সেখানে একটানা চার বছর রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে গৌরবের সঙ্গে কাজ করেন। পরে চলে আসেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। ১৯১২ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর তিনি জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি তাঁর চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজকেও একই গতিতে এগিয়ে নিয়ে যান।

১৯১৪ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত সাধনা ঔষধলায় পরিচালনার কাজে তার নিরলস গবেষণা এ দেশে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি ও আয়ুর্বেদ ওষুধ প্রস্তুত প্রণালিকে আধুনিক মানে উন্নীত করেছিল । তিনি আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সম্পর্কিত বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তার গ্রন্থাবলীর মধ্যে ‘অগ্নিমান্দ্য ও কোষ্ঠবদ্ধ’, ‘আরোগ্যের পথ’, ‘গ্রহ-চিকিৎসা’, ‘চর্ম ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি’, ‘চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা ও মুখরোগ চিকিৎসা’, ‘আমরা কোন পথে’, ‘আয়ুর্বেদ ইতিহাস Whither Bound Are We I Home Treatment ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যোগেশচন্দ্র ঘোষ ১৯১১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত লন্ডন কেমিক্যাল সোসাইটির ফেলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেমিক্যাল সোসাইটির সদস্য ছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে এদেশের বহু হিন্দু পরিবার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ ফেলে দেশ ত্যাগ করে ভারত চলে যায়; অনেক মুসলিম পরিবার বাংলাদেশে চলে আসে, কিন্তু যোগেশচন্দ্র ঘোষ তা করেননি। তিনি দেশের মায়ায় বাঁধা পড়ে এখানেই থেকে যান। বারবার তাঁর জীবনে নানা দুঃসময় এসেছে, তবু কেউ তাঁকে নিজ দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে পারেনি। ১৯৬৪ সালে যখন হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার শহর হিসেবে ঢাকার কুখ্যাতি ছড়িয়েছে, তখনও নির্দ্বিধায় সব সঙ্কট মোকাবিলা করেছেন তিনি।

সাংবাদিকদের কাছে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আসিফ সিরাজ নামে এক ভদ্রলোক জানিয়েছিলেন, ''সেই দুর্যোগকালে আমরা তাঁর কাছে ছুটে যাই তাঁর সাহায্যের আশায়। তিনি আমাদের বিমুখ করেননি। তাঁর সাধনা ঔষধালয়ের বিরাট লৌহকপাট খুলে দেন। গেন্ডারিয়া, দনিয়া ও শনিরআখড়ার ভীতসন্ত্রস্ত হিন্দু পরিবার তাঁর কারখানায় নিশ্চিন্তে আশ্রয় পায়, বেঁচে যায়।

দারোয়ানরা বন্দুক হাতে পাহাড়া দিতেন, আর আমরা ছেলেরা রাস্তায় লাঠি-হকিস্টিক নিয়ে এবং কারখানার ভেতরে হামলা হলে তিনি দারোয়ানদের গুলি চালানোর হুকুম দেয়ায় রায়টকারীরা হামলা করার সাহস পায়নি। এখন ভাবি, কারখানার নিরাপত্তা, লুটপাটের কথা ভেবে তিনি তো আমাদের ফিরিয়েও দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, আর এখানেই তাঁর মহানুভবতা, মানবতাবোধ। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। এমন মানুষকেও মরে যেতে হয় হায়েনাদের হাতে। গেন্ডারিয়ার এমন কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্রীড়া সংগঠন নেই, যারা তাঁর কাছ থেকে কমবেশি আর্থিক সহযোগিতা পায়নি।’'

পঁচিশে মার্চ ১৯৭১। পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার অনেকেই এরই মধ্যে শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুরো এলাকায় বাড়ি আর কারখানা মিলিয়ে চৌহদ্দিতে কেবল যোগেশচন্দ্র ঘোষ থেকে গেলেন। বিরাট এলাকাজুড়ে তাঁর একমাত্র সাধনাস্থল সাধনা ঔষধালয় কারখানা। এখানেই তিনি কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়, করেছেন গবেষণা। এখানকার একেকটা ইটে আছে তাঁর মমতার ছোঁয়া! নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সাথীরা কারখানার শ্রমিকরা।

সবাই যখন কাজ সেরে ফিরে যেত তখন কেবল থাকতেন সুরুজ মিয়া এবং রামপাল। সুরুজ মিয়া এবং রামপাল কারখানার দারোয়ান। তাঁরা দীর্ঘ ১৭ বছর যোগেশচন্দ্রের সঙ্গে কাটিয়েছে। ২৫ শে মার্চের পর সবাই যখন একে একে চলে গেল, গেলেন না কেবল এই ২ জন ! ২৫ শে মার্চের পরের ঘটনা। ৩ এপ্রিল গভীর রাত। একটি মিলিটারী জীপ এসে থামলো। ৫/৬ জন পাকিস্তানী সৈনিক জীপ থেকে নামলো। একে একে গেটের তালা ভেঙ্গে ফেললো তারা। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লো।

পাহারাদার সুরুজ মিয়ার হাতের বন্দুকও গর্জে উঠেছিল । সেনাদের দিকে তাক করে তিনিও গুলি ছোড়া শুরু করলেন। শুরু হলো অসম যুদ্ধ। সামান্য অস্ত্র, সামান্যতম অস্ত্রচালনায় পারদর্শী একজন সাধারণ বাঙ্গালী সুরুজ মিয়া পাহারাদারের কাছে হার মানলো পাকিস্তানী সৈন্যরা। রাতের আধারে পাক সেনারা একপ্রকার পালিয়ে গেল। সুরুজ মিয়া যোগেশ চন্দ্রকে বললেন সেখান পালিয়ে যেতে। যোগেশ বাবুর এক কথা, মরতে হয় দেশের মাটিতে মরব। আমার সন্তানসম এই সব ছেড়ে আমি কোথায় যাবো ?

পাকিস্তানী আর্মি আবারও ফিরে এলো, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এবং লোকবল নিয়ে। পাক সেনারা নীচে সবাইকে লাইন করে দাঁড় করালো। পরে যোগেশচন্দ্র ঘোষকে উপরে নিয়ে গেল, পাকিস্তানী সেনারা তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে, বুলেটের গুলিতে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে । তাদের উল্লাসধ্বনি নীচে পর্যন্ত ভেসে আসছিল, নীচের লোকজন সুযোগ বুঝে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। জানা যায়, পাকিস্তানি আর্মিরা শুধু তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লুটে নিয়ে গিয়েছিল যোগেশ চন্দ্র ঘোষের অর্জিত অনেক অর্থ-সম্পদ। সেদিন ছিল ৪ এপ্রিল। তখন যোগেনচন্দ্র ঘোষের বয়স ৮৪ বছর ।

অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ছিলেন সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ পরিবারের সদস্যের মতোই আপন করে নিতেন। শেষের দিকে খুব বেশি একটা বাইরে বেরোতেন না, শুধু নিজের পড়াশোনা আর গবেষণা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন, সকাল-বিকাল ঘরের সামনের খোলা ছাদে পায়চারি করতেন। প্রতিদিন ঘণ্টাখানেকের জন্য নিচে নেমে আসতেন; রোগী দেখতেন; ব্যবস্থাপত্র দিতেন। এছাড়া অফিস ও কারখানার কাজকর্ম তদারকি করতেন এবং ‘সাধনার বাঁদর’ বলে খ্যাত কুঠুরি মৃগয়াদের খাদ্য খাওয়াতেন। এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন রুটিন।

অধ্যক্ষ ডা. যোগেশচন্দ্র ঘোষ নিজের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশজ মানুষের সংযোগের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘'ব্যক্তিগত কল্যাণের ঊর্ধ্বে উঠিয়া দেশের বৃহত্তম কল্যাণ কামনায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করিলে সেই প্রতিষ্ঠান দেশেরও প্রিয় হয়। সিংহ যখন জাগে, তখন তাহার স্বপ্ন, তন্দ্রা এবং নিদ্রা যায় না, তাহার সিংহত্ব জাগে। জাতি যখন জাগে, তখন সকল দিক দিয়াই জাগে। একার চেষ্টাতে জাগে না, সকলের চেষ্টাতেই জাগে। সর্বপ্রকার পরিপুষ্টি লইয়া দেশ উন্নতির পথে অগ্রসর হউক, এই কামনা প্রতিদিনের কামনা। সুতরাং জনসাধারণ সাধনা ঔষধালয়কে তাঁহাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বলিয়া গণ্য করিবেন না কেন ?'’

(C) Ashish Roy
Share:

শিব ধ্বংসকর্তা ও মঙ্গলময় সত্ত্বা

প্রথমা পত্নী দাক্ষায়ণী সতীর শবদেহ স্কন্ধে শিব

যজুর্বেদে শিবের দুটি পরস্পরবিরোধী সত্ত্বার উল্লেখ রয়েছে। এখানে একদিকে তিনি যেমন ক্রুর ও ভয়ংকর (রুদ্র); অন্যদিকে তেমনই দয়ালু ও মঙ্গলময় (শিব)। এই কারণে চক্রবর্তী মনে করেন, "যে সকল মৌলিক উপাদান পরবর্তীকালে জটিল রুদ্র-শিব সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছিল, তার সবই এই গ্রন্থে নিহিত রয়েছে। মহাভারতেও শিব একাধারে "দুর্জেয়তা, বিশালতা ও ভয়ংকরের প্রতীক" এবং সম্মান, আনন্দ ও মহত্ত্বের দ্বারা ভূষিত । শিবের নানা নামের মধ্যে তাঁর এই ভয়াল ও মঙ্গলময় সত্ত্বার বিরোধের উল্লেখ রয়েছে।

রুদ্র (সংস্কৃত: রুদ্র) নামটি শিবের ভয়ংকর সত্ত্বার পরিচায়ক। প্রথাগত ব্যুৎপত্তি ব্যাখ্যা অনুসারে, রুদ্র শব্দটির মূল শব্দ হল রুদ্-, যার অর্থ রোদন করা বা চিৎকার করা।স্টেলা ক্র্যামরিক অবশ্য এর একটি পৃথক ব্যুৎপত্তি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ব্যাখ্যাটি বিশেষণ রৌদ্র শব্দটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যার অর্থ বন্য বা রুদ্র প্রকৃতির। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তিনি রুদ্র নামটির অর্থ করেছেন যিনি বন্য বা প্রচণ্ড দেবতা। এই ব্যুৎপত্তিব্যাখ্যা অনুসারে, আর. কে. শর্মা রুদ্র শব্দের অর্থ করেছেন ভয়ংকর। মহাভারতের অনুশাসনপর্বের অন্তর্গত শিব সহস্রনাম স্তোত্রে শিবের হর (সংস্কৃত: हर) নামটির উল্লেখ করা হয়েছে তিন বার। এটি শিবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। অনুশাসনপর্বে তিন বারই এই নামের উল্লেখ করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নতর অর্থে। আর. কে. শর্মা এই তিনটি উল্লেখে হর নামটির অর্থ করেছেন "যিনি বন্দী করেন", "যিনি এক করেন" এবং "যিনি ধ্বংস করেন"। শিবের অপর দুই ভয়ংকর রূপ হল "কাল" (সংস্কৃত: काल) ও "মহাকাল" (সংস্কৃত: महाकाल)। এই দুই রূপে শিব সকল সৃষ্টি ধ্বংস করেন। ধ্বংসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিবের অপর একটি রূপ হল ভৈরব (সংস্কৃত: भैरव)। "ভৈরব" শব্দটির অর্থও হল "ভয়ানক"।

অপরপক্ষে শিবের শংকর (সংস্কৃত: शङ्कर) নামটির অর্থ "মঙ্গলকারক" বা "আনন্দদায়ক"।এই নামটি শিবের দয়ালু রূপের পরিচায়ক। বৈদান্তিক দার্শনিক আদি শংকর (৭৮৮-৮২০ খ্রি.) এই সন্ন্যাসজীবনের নাম হিসেবে নামটি গ্রহণ করে শংকরাচার্য নামে পরিচিতি লাভ করেন। একই ভাবে শম্ভু (সংস্কৃত: शम्भु) নামটির অর্থও "আনন্দদায়ক"। এই নামটিও শিবের দয়ালু রূপের পরিচায়ক।

👏 লেখার মাধ্যমে যদি কোন ভূল হয় সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

(C) Aashis Sarkar
Share:

শিবের রূপ

শিব ও পার্বতী। শিব এখানে ত্রিনয়ন, মস্তকে অর্ধচন্দ্রধারী, সর্প ও নরকরোটির মালা পরিহিত, সর্বাঙ্গে বিভূতি-মণ্ডিত এবং ত্রিশূল ও ডমরুধারী। তাঁর জটাজুট থেকে গঙ্গা প্রবাহিত।

তৃতীয় নয়ন:

শিবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তাঁর তৃতীয় নয়ন। এই নয়ন দ্বারা শিব কামকে ভস্ম করেছিলেন। বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে শিবের যে ত্র্যম্বকম্ (সংস্কৃত: त्र्यम्बकम्) নামটি পাওয়া যায় তার প্রকৃত অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ধ্রুপদি সংস্কৃতে অম্বক শব্দের অর্থ চক্ষু; মহাভারতে শিবকে ত্রিনয়ন রূপে কল্পনা করা হয়েছে; তাই উক্ত নামটির আক্ষরিক অর্থ করা হয়ে থাকে "তৃতীয় নয়নধারী"। যদিও বৈদিক সংস্কৃতে অম্বা বা অম্বিকা শব্দের অর্থ মা; এই প্রাচীন অর্থের ভিত্তিতে ত্র্যম্বকম্ নামটির আক্ষরিক অর্থ করা হয়, তিন জননীর সন্তান। ম্যাক্স ম্যুলার ও আর্থার ম্যাকডোনেল শব্দটির শেষোক্ত অর্থটিকেও ধরেছেন। তবে শিবের তিন জননী সংক্রান্ত কোনো কাহিনির প্রচলন নেই। তাই ই. ওয়াশবার্ন হপকিনস মনে করেন, এই নামটির সঙ্গে তিন জননীর কোনো সম্পর্ক নেই; বরং অম্বিকা নামে পরিচিত তিন মাতৃদেবীর সঙ্গে এটি সম্পর্কযুক্ত। শব্দটির অন্য একটি অর্থ করা হয় "যাঁর তিন স্ত্রী বা ভগিনী বর্তমান"। কেউ কেউ মনে করেন, শব্দটি এসেছে রুদ্রের সঙ্গে শিবের সমত্বারোপের ফলস্রুতিতে। কারণ রুদ্রের সঙ্গে দেবী অম্বিকার একটি সম্পর্ক রয়েছে।

অর্ধচন্দ্র:

শিবের মস্তকে একটি অর্ধচন্দ্র বিরাজ করে। এই কারণে শিবের অপর নাম চন্দ্রশেখর (সংস্কৃত: चन्द्रशेखर)। রুদ্রের রুদ্র-শিব রূপে বিবর্তনের প্রথম যুগ থেকেই এই অর্ধচন্দ্র শিবের একটি বৈশিষ্ট্য। সম্ভবত বৈদিক ও পরবর্তীকালের সাহিত্যে চন্দ্রদেবতা সোম ও রুদ্রের একীভবনের সূত্রেই শিবের এই বৈশিষ্ট্যটির উদ্ভব ঘটেছিল।

বিভূতি:

শিব তাঁর সর্বাঙ্গে বিভূতি বা ভস্ম মাখেন। ভৈরব ইত্যাদি শিবের কয়েকটি রূপ প্রাচীন ভারতীয় শ্মশান বৈরাগ্য দর্শনের সঙ্গে যুক্ত। রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে সম্পর্কহীন কয়েকটি গোষ্ঠী এই মত অনুযায়ী ধর্মসাধনা করেন। থেরবাথ বৌদ্ধধর্মের পালি ধর্মগ্রন্থেও এই শ্মশান সাধনার উল্লেখ রয়েছে। এই কারণে শিবের অপর নাম শ্মশানবাসী ও বিভূতিভূষণ।

জটাজুট:

শিবের মস্তকের কেশরাশি জটাবদ্ধ। এই কারণে শিবের অপর নাম জটী বা কপর্দী ("কপর্দ বা কড়ির ন্যায় কেশযুক্ত")।

নীলকণ্ঠ:

একবার দেবতা আর অসুর মধ্যে যুদ্ধে অমৃত পানের জন্যে দেবতারা সমুদ্রমন্থন করছিলেন। মন্থনকালের এক পর্যায়ে সমুদ্র থেকে হলাহল বিষ উত্থিত হলে তার বিষাক্ত নির্যাষে দেবতারা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দেবতাদের রক্ষা করার জন্য ভগবান শিব সেই বিষাক্ত বিষ পান করেন। এর ফলে উনার কন্ঠ নীল হয়ে যায়। একারনেই ভগবান শিব নীলকণ্ঠ (সংস্কৃত: नीलकण्ठ) নামে পরিচিত হন।

গঙ্গার মর্ত্যে অবতরণকালে শিব তাঁকে জটায় ধারণ করছেন; সম্মুখে পার্বতী, নন্দী ও ভগীরথ, সন্ত নারায়ণের হিন্দি পাণ্ডুলিপির চিত্র, ১৭৪০ খ্রি.

পবিত্র গঙ্গা:

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, গঙ্গা নদীর উৎস শিবের জটা।এই কারণে শিবের অপর নাম গঙ্গাধর।

ব্যাঘ্রচর্ম: শিবের পরিধেয় বস্ত্র ব্যাঘ্রচর্ম বা বাঘছাল। এই কারণে শিবের অপর নাম কৃত্তিবাস। শিব ব্যাঘ্রচর্মের আসনের উপর উপবিষ্টও থাকেন। উল্লেখ্য, ব্যাঘ্রচর্মের আসন ছিল প্রাচীন ভারতের ব্রহ্মর্ষিদের জন্য রক্ষিত একটি বিশেষ সম্মান।

সর্প: শিবের গলায় একটি সাপ সর্বদা শোভা পায়।

ত্রিশূল: শিবের অস্ত্র হল ত্রিশূল।

ডমরু:

শিবের হাতে ডমরু নামে একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র শোভা পায়। নটরাজ নামে পরিচিত শিবে নৃত্যরত মূর্তির এটি একটি বিশিষ্ট দিক। ডমরুধারণের জন্য নির্দিষ্ট একটি মুদ্রা বা হস্তভঙ্গিমা ডমরুহস্ত নামে পরিচিত। ডমরু কাপালিক সম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

নন্দী:

নন্দী নামে একটি পৌরাণিক ষাঁড় শিবের বাহন। শিবকে পশুদের দেবতা মনে করা হয়। তাই তাঁর অপর নাম পশুপতি (সংস্কৃত: पशुपति)। আর. কে. শর্মার মতে, পশুপতি শব্দটির অর্থ "গবাদি পশুর দেবতা"। অন্যদিকে ক্র্যামরিক এই নামটিকে প্রাচীন রুদ্রের অভিধা আখ্যা দিয়ে এর অর্থ করেছেন "পশুদের দেবতা"।

গণ:

শিবের অনুচরদের গণ বলা হয়। এঁদের নিবাসও কৈলাস। এঁদের ভৌতিক প্রকৃতি অনুসারে ভূতগণ নামেও অভিহিত করা হয়। এঁরা সাধারণত দয়ালু। কেবল কোনো কারণে তাঁদের প্রভু ক্রুদ্ধ হলে এঁরা প্রভুর সঙ্গে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠেন। শিব স্বীয় পুত্র গণেশকে তাঁদের নেতা মনোনীত করেন। এই কারণেই গণেশ গণপতি নামে অভিহিত হন।

কৈলাস:

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, শিবের অধিষ্ঠান হিমালয়ের কৈলাস পর্বতে। হিন্দুপুরাণ অনুসারে, লিঙ্গাকার কৈলাস পর্বত মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

বারাণসী:

বারাণসী শিবের প্রিয় নগরী। এই নগরী হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই নগরী কাশীধাম নামে পরিচিত।

 লেখার মাধ্যমে যদি কোন ভূল হয় সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

(C) Aashis Sarkar
Share:

অনেকেই প্রশ্ন করেন বেদে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কেন প্রতিমা পূজা করে?

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী প্রতিমাপূজা আরাধনার সূচনাপর্বের বিষয়। প্রথমেই বলে রাখা উচিৎ, হিন্দুদের পূজা “মূর্তি পূজা” নয়, বরং এটা সঠিকভাবে বলা উচিত “প্রতিমা পূজা”।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কখনোই মূর্তিকে পূজা করে না; বরঞ্চ মূর্তির মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঈশ্বরকে আহ্বান করে ঈশ্বরকেই পূজা করা হয়। এজন্যই বলা হয় হিন্দুরা ‘মূর্তিকে’ নয়, ‘মূর্তিতে’ পূজা করে।

প্রতিমার মাধ্যমে ঈশ্বরের পূজা করার অর্থ হল ঈশ্বরের প্রতি নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ় করা। বেদ যখন রচিত হয় তখন মানুষের মধ্যে তেমন কোন কর্মচঞ্চলতা ছিল না। যজ্ঞানুষ্ঠানই ছিল ঋষিদের প্রধান কর্ম। যজ্ঞের মাধ্যমে হোমানল জ্বালিয়ে তখন দেবতাদের আহ্বান করা হত, অগ্নির মাধ্যমেই দেবতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হতো পুষ্পাঞ্জলি। তাই, বেদে প্রতিমা পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না।

এই কলিযুগে সনাতন ধর্মের নিরাকার উচ্চ স্তরের উপাসনা প্রায় অসম্ভব। কারণ, কলি যুগে আমাদের মন এতই চঞ্চল যে একে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। মনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, চোখের মধ্যে কোন বস্তুর ছবি ফেলা। পরবর্তীতে, ওই ছবিটি যদি নাও থাকে তাহলেও চোখের সামনে তার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে। তাই, সাধারণ মনোনিবেশ তথা চিত্তকে বিষয়বাসনা থেকে সরিয়ে একাগ্রচিত্তে ভগবানকে স্মরণ করার জন্য প্রতিমাপূজা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।

এর উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি শিশুকে প্রথম পাঠদানের সময় অনেক রঙিন ছবি সম্বলিত বই দেওয়া হয় যাতে ঐ বইটির প্রতি শিশুর আকর্ষণ বাড়ে। এখানে ছবি মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে বর্ণমালা। ঠিক তেমনি আমাদের চঞ্চল মন প্রতিমার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখানে, ঈশ্বরের করুণা লাভই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।

পরিশেষে একটি কথাই বলা যায় সনাতন ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদে নিরাকার উপাসনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, কলিযুগের জীবের উদ্দেশ্যে গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন যে, অব্যক্ত উপাসনা দেহাভিমানী জীবের পক্ষে সম্ভবপর নয়। তাই, দেহাভিমানী জীবের জন্য সগুণ সাকার উপাসনাই শ্রেষ্ঠ ও সহজতর। আর এই সকল কারণেই, বর্তমান কলিযুগে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিমা পূজার মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করে থাকে।

==========================

👉 লাইক এবং শেয়ার করে সকলকে জানার জন্য সুযোগ করে দিন।

(C) Pinakesh Chakraborty‎
Share:

কপালে সিঁদুর/ টিপ পরার পাঁচটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

মহিলাদের মধ্যে সিঁদুর/টিপ পরার একটি সাধারণ চল রয়েছে৷ ট্র্যাডিশনাল ড্রেসের সঙ্গে টিপ না পরলে যেন সাজ ঠিক সম্পূর্ণ হয় না৷ শুধু তাই নয়৷ শিশুদের কপালেও টিপ পরান মায়েরা ৷ সেই টিপ নজরের হাত থেকে শিশুকে বাঁচায় কি না তা বিতর্কিত৷ তবে টিপের মাহাত্ম্য রয়েছে শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে৷ শুনতে অবাক লাগলেও একথা সত্যি যে টিপের উপরে আপনার মস্তিষ্ক চোখ এবং কানের অনেক উপকারিতা নির্ভর করে৷ জেনে নিন টিপ আপনার শরীরকে কি কি ক্ষেত্রে সুস্থ রাখতে পারে৷

১. আমাদের দু’টি ভ্রুয়ের মাঝখানে সিঁদুর/টিপ পরার প্রচলন রয়েছে৷ তার একটি প্রধান কারণ হল মস্তিষ্কের এই জায়গাই সব গুরুত্বপূর্ন নার্ভগুলির সংযোগস্থল৷ এই জায়গাটি ধর্মীয় মতে ত্রিনেত্রের স্থান৷ তাই এই জায়গায় টিপ পরলে তা আমাদের শান্ত ও জাগ্রত রাখতে সাহায্য করে৷ শুধু তাই নয় এটি মেডিটেশনেও সহায়তা করে৷

২. মস্তিস্কের এই একটি পয়েন্টে আঙুলের চাপ মাথা ব্যাথা কমাতে পারে৷ শরীরের এই অংশে শিরা উপশিরা গুলি এক কেন্দ্রমুখী৷ ফলে এই জায়গাটিতে চাপ দিলে শিরা উপশিরাগুলি শিথিল হয়৷ ব্যাথা কমে৷তাই এই পয়েন্টে সিঁদুর/টিপ পরলে মাথার আরাম হয়।

৩. আমাদের মুখে যে সব শিরা উপশিরা ছড়ানো রয়েছে তার কেন্দ্রস্থল হচ্ছে কপালের এই অংশটি৷ ফলে এই স্থানে অল্প চাপ পড়লে আমাদের নাক, মাথা, ও মুখের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়৷ এর ফলে নাক বন্ধ থাকলে এই পয়েন্টে চাপ দিলে নাক খুলে যায়৷ সাইনাসের ব্যাথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়৷ মুখে রক্ত সঞ্চালন বাড়ার ফলে মুখ উজ্জ্বল হয় এবং তা বহুদিন পর্যন্ত মুখে বলিরেখা ফুটতে দেয় না৷

৪. চোখের শিরার ফাইবার বহনকারী শিরাগুলির কেন্দ্রস্থল আমাদের কপালে৷ আমাদের চোখের চারপাশে যত পেশি রয়েছে সেগুলি এই শিরার সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে এই স্থানে চাপ বা মেসেজ করলে তা আমাদের চোখের পক্ষে উপকারী৷ দূরের এবং কাছের জিনিসকে স্পষ্ট করে দেখতে চোখের যে পেশি ব্যবহৃত হয় তাকে শক্তিশালী রাখতে পারে এই জায়গার মেসেজও৷

৫. ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে সিঁদুর/টিপ৷ মনকে শুধু শান্ত করা নয় এই স্থানে সিঁদুর/টিপ পরতে যে চাপ বা মেসেজ পরে তাতে মুখের শিরা উপশিরা ও পেশি শিথিল হয়৷ ফলে এটি মানষিক চাপ কমাতে পারে আপনার৷ প্রতিদিন কয়েক সেকেন্ডের জন্য এই স্থানে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি মিলতে পারে৷

(C) Ajaana Sharma
Share:

ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের মাহাত্ম্য বর্ণনা

ঋ‌ষিগণ বল‌লেন -- বিশ্বব‌ন্দিত ভগবান শংকর ! এবার আমরা বাস‌ু‌দেব শ্রীকৃ‌ষ্ণের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর‌তে চাই ।

ম‌হেশ্বর বল‌লেন -- মু‌নিবরগণ ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মার থে‌কেও শ্রেষ্ঠ । সেই সনাতন পুরুষ‌কে শ্রীহ‌রি বলা হয় । তাঁর দেহকা‌ন্তি জাম্বূনদ নামক সুব‌র্ণের ন্যায় তেজস্বী । তি‌নি মেঘবিহীন আকা‌শে উ‌দিত সূ‌র্যের ন্যায় তেজস্বী । তাঁর দশ হাত এবং সেগু‌লি মহান তেজসম্পন্ন । তি‌নি দেবতা‌দের চির শত্রু দৈত্য‌দের বিনাশকারী । তাঁর বক্ষঃস্থ‌লে শ্রীবৎ‌সের চিহ্ন শোভা পায় । তি‌নি হৃষীক অর্থাৎ ই‌ন্দ্রিয়া‌দির প্রভু হওয়ায় তাঁ‌কে হৃষী‌কেশ বলা হয় ।

সমস্ত দেবতা তাঁর পূজা ক‌রেন । ব্রহ্মা তাঁর উদর থে‌কে এবং আ‌মি তাঁর মস্তক থে‌কে উৎপন্ন হ‌য়ে‌ছি । তাঁর মাথার চুল থে‌কে নক্ষত্র ও তারা উদ্ভূত হ‌য়ে‌ছে । দেবতা এবং অসুর তাঁর দে‌হের রোম থে‌কে সৃষ্ট । সমস্ত ঋ‌ষি এবং সনাতনলোক তাঁর শ্রী‌বিগ্রহ থে‌কে উৎপন্ন । শ্রীহ‌রি স্বয়ং সমস্ত দেবতা এবং ব্রহ্মার ধাম । তি‌নিই সমস্ত জগ‌তের স্রষ্টা এবং ত্রি‌লো‌কের স্বামী ।

তি‌নিই সমস্ত চরাচ‌রের প্রাণী‌দের সংহার ক‌রেন । তি‌নি দেবতা‌দের ম‌ধ্যে শ্রেষ্ঠ , তাঁ‌দের রক্ষক এবং শত্রুসন্তপ্তকারী । তি‌নি সর্বজ্ঞ , সব‌কিছু‌তে প‌রিব্যাপ্ত , সর্বব্যাপক এবং সর্ব‌দি‌কে মুখসম্পন্ন । তি‌নিই পরমাত্মা , ই‌ন্দ্রিয়াদির প্রেরক এবং সর্বব্যাপী ম‌হেশ্বর । ত্রি‌লো‌কে তাঁর থে‌কে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই । তি‌নিই সনাতন , মধুসূদন এবং গো‌বিন্দ ইত্যা‌দি না‌মে প্র‌সিদ্ধ ।

সজ্জন‌কে সম্মান প্রদর্শনকারী এই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুরু‌ক্ষে‌ত্রের যুদ্ধে সমস্ত রাজা‌দের সংহার করা‌বেন । তি‌নি দেবতা‌দের কার্য‌সি‌দ্ধির জন্য পৃ‌থিবী‌তে মানব - শরীর ধারণ ক‌রে আ‌বির্ভূত হ‌য়ে‌ছেন । তার শ‌ক্তি এবং সহায়তা ছাড়া দেবতারা কো‌নো কাজই কর‌তে পা‌রেন না । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল প্রাণীর অগ্রগণা , তাই সমস্ত দেবতা তাঁর চর‌ণে মাথা নত ক‌রে ।

দেবতা‌দের রক্ষা এবং তাঁ‌দের কার্য - সাধ‌নে রত এই ভগবান বাসু‌দেব ব্রহ্মস্বরূপ । তি‌নি ব্রহ্ম‌র্ষি‌দের সর্বদা শরণ দি‌য়ে থা‌কেন । ব্রহ্মা এবং আ‌মি ---- দুজ‌নেই তাঁর শরী‌রের ম‌ধ্যে অত্যন্ত সু‌খে অবস্থান ক‌রি । সমস্ত দেবতাও তাঁর শ্রী‌বিগ্র‌হে সুখপূর্বক বাস ক‌রেন ।

তাঁর চোখদু‌টি কম‌লের ম‌তো সুন্দর । তাঁর বক্ষঃস্থ‌লে লক্ষ্মীর বাস , তিনি সর্বদা লক্ষ্মীর স‌ঙ্গে বাস ক‌রেন । তাঁর বি‌শেষ অস্ত্র হল শার্ঙ্গধনুক , সুদর্শন চক্র , নন্দন নামক ধনুক ।তাঁর ধ্বজা‌তে গরু‌ড়ের চিহ্ন আছে । তি‌নি উত্তম শীল , শম , দম , পরাক্রম , বীর্য , সুন্দর দেহ , সুন্দর দর্শন , সু‌ডৌল আকৃ‌তি , ধৈর্য , সরলতা , কোমলতা , রূপ ও বল ইত্যাদি সদ্গুণসম্পন্ন । সর্বপ্রকার দিব্য এবং অদ্ভূত অস্ত্রশস্ত্র তাঁর কা‌ছে সর্বদা মজুত থা‌কে । তি‌নি যোগমায়াসম্পন্ন এবং সহস্র নেত্র সংব‌লিত । তাঁর কো‌নো বিনাশ নেই ।

তি‌নি উদার‌চিত্ত , মিত্র‌দের প্রশংসক , জ্ঞা‌তি এবং বন্ধু - বান্ধব‌দের প্রিয় , ক্ষমাশীল , অহংকারর‌হিত , ব্রাহ্মণভক্ত , বেদ উদ্ধারকারী , ভয়ার্ত মানু‌ষের ভয় হরণকারী ও মিত্র‌দের আনন্দবর্ধনকারী । তি‌নি সমস্ত প্রাণী‌কে শরণ প্রদান ক‌রেন , দীনা‌র্তের রক্ষায় সদা তৎপর , শাস্ত্রজ্ঞাতা , অর্থসম্পন্ন , সমস্ত জগ‌তের বন্দনীয় , শরণাগত শত্রু‌কেও আশ্রয় প্রদান ক‌রেন , ধর্মজ্ঞ , নী‌তিজ্ঞ , নী‌তিমান , ব্রহ্মবাদী এবং জি‌তে‌ন্দ্রিয় । সেই পর‌মেশ্ব‌র‌কে পূজা কর‌লে পরম ধ‌র্মের সি‌দ্ধি হয় ।

তি‌নি মহা‌তেজস্বী দেবতা । তি‌নি প্রজা‌হিতা‌র্থে ধ‌র্মের জন্য কোটি কো‌টি ঋ‌ষি সৃ‌ষ্টি ক‌রে‌ছেন । তাঁর সৃষ্ট সনৎকুমার প্রমুখ ঋ‌ষি আজও গন্ধমাদন পর্ব‌তে তপস্যায় রত আ‌ছেন , তাই ধর্মজ্ঞ উত্তম বক্তা বাসু‌দেব‌কে সর্বদা প্রণাম করা উ‌চিত । ভগবান নারায়ণ দেব‌লো‌কে সর্ব‌শ্রেষ্ঠা । যে তাঁ‌কে বন্দনা ক‌রে , তি‌নিও তার বন্দনা করেন । যে তাঁ‌কে সম্মান ক‌রে , তি‌নিও তাঁর সম্মান ক‌রেন ।

এইরূপ অর্চিত হ‌লে অর্চনা ক‌রেন , পূ‌জিত হ‌লে পূজা ক‌রেন , দর্শনকারী‌দের ওপর সর্বদা কৃপাদৃ‌ষ্টি রা‌খেন এবং শরণাগত‌কে শরণ প্রদান ক‌রেন । আ‌দি‌দেব ভগবান বিষ্ণুর এই উত্তম ব্রত । সজ্জন ব্য‌ক্তি সর্বদাই তাঁর এই ব্রত আচরণ ক‌রেন । তি‌নি সনাতন দেবতা , তাই দেবগণ সর্বদাই তাঁ‌কে পূজা ক‌রেন । যারা তাঁর অনন্যভক্ত , তাঁরা নি‌জেদের সাধনায় অনুরূপ নির্ভয়পদ প্রাপ্ত হন ।

‌দ্বিজগ‌ণের উ‌চিত মন , বাক্য ও ক‌র্মের দ্বারা সর্বদা সেই ভগবা‌নের পূজা করা , প্রণাম করা এবং যত্নসহকা‌রে উপাসনা করে দেবকীনন্দনকে দর্শন লাভ করা ।

মু‌নিবরগণ ! আ‌মি আপনা‌দের এক উত্তম মার্গ জান‌ালাম । কেবল ভগবান ভগবান বাসু‌দেব‌কে দর্শন কর‌লে আপনা‌দের সব দেবতার দর্শন লাভ হ‌বে ।

আ‌মিও মহাবরাহরূপ ধারণকারী সর্ব‌লোক‌পিতামহ জগদীশ্বর‌কে নিত্য প্রণাম ক‌রি । আমরা সকল দেবতা তাঁর শ্রী‌বিগ্র‌হে বাস ক‌রি , সুতরাং তাঁ‌কে দর্শন কর‌লে তিন দেবতার ( ব্রহ্মা , বিষ্ণু , ম‌হেশ্ব‌রের ) দর্শন লাভ হয় । এ‌তে কো‌নো স‌ন্দেহ নেই ।

ত‌পোধনগণ ! আ‌মি আপনা‌দের ওপর অনুগ্রহ ক‌রে ভগবা‌নের প‌বিত্র মাহাত্ম্য এই জন্য শোনালাম , যা‌তে আপনারা যত্ন সহকা‌রে যদু‌শ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণের পূজা ক‌রেন ।

দেব‌র্ষি নারদ বল‌লেন - প্রভ‌ু ! ভগবান শংকর হিমালয় শিখ‌রে যাঁর মাহাত্ম্য আমা‌দের ব‌লে‌ছি‌লেন , সেই ব্রহ্মভূত সনাতন পুরুষ আপ‌নিই , শ্রীকৃষ্ণ । আপনার প্রভা‌বে আর এক‌টি আশ্চ‌র্যের ব্যাপার হল এই যে আমরা আপনা‌কে দে‌খে বি‌স্মিত হ‌য়ে‌ছি এবং আমা‌দের পূর্বকথা স্মরণ হ‌য়ে‌ছে । প্র‌ভো ! দেবা‌দি‌দেব ভগবান শংকর আপনার এরূপ মাহাত্ম্যের কথা বর্ণনা ক‌রেছি‌লেন ।

জয় রা‌ধে

জয় শ্রীহরির জয় ।

জয় ভক্তগ‌ণের জয় ।

(C) Joy Shree Radha Madhav
Share:

গর্ভধান সম্বন্ধীয় কথা। জানতে হলে পোষ্টটি পড়ুন।

বিবাহিত অর্থাৎ দাম্পত্য জীবনের মূল লক্ষ্য হল সুস্থ- সবল , গুণবান, যশস্বী, ধার্মিক, সুশীল সন্তান প্রাপ্তি । স্ত্রী পুরুষের স্বাভাবিক গঠন এমন যে তারা পরস্পর মিলিত হলে স্ত্রী গর্ভবতী হয় । কিন্তু এই মিলনের জন্য তিথি নক্ষত্র, দিন ক্ষণ, শুভ ও অশুভ বিচার করে দিন নির্ধারণ করা হয় তবে তার সুপ্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে।তাই আমাদেরকে সবসময় শাস্ত্রের অন্তর্গত নিয়ম গুলো পালন করতে হবে এবং জীবন যাপন করতে হবে।কারন আমাদের পূর্বের মুনি ঋষিরা ও এভাবে চলে আসছে। শাস্ত্রের বহির্গত যে কাজ গুলো আছে তা আমাদের করা ঠিক না।

স্মৃতি শাস্ত্রে লিখিত আছে-

নিষেকাদ্ বৈজিকং চৈনো গার্ভিকং চাপমৃজ্যতে ।

ক্ষেত্রসংস্কার সিদ্ধিশ্চ গর্ভাধানফলং স্মৃতম্ ।।

অর্থাৎ- বিধি বিধান মতো এবং সংস্কার মতো গর্ভাধান থেকে শুভগুণ সম্পন্ন সুযোগ্য সন্তান সৃষ্ট হয় । আর এই সংস্কার থেকেই বীর্য ও গর্ভ সংক্রান্ত পাপের নাশ হয়। দোষ নষ্ট হয় । ক্ষেত্র সংস্কার হয় । এগুলিই হল গর্ভাধান সংস্কারের ফল বা পরিণতি ।

নানা সমীক্ষা ও গবেষোণার দ্বারা এটা প্রত্যক্ষ করা হয়েছে গর্ভাধান কালে স্ত্রী- পুরুষ যেমন ভাবনায় ভাবিত থাকেন, বা তাদের মানসিক অবস্থা যেমন থাকে তা তাদের রজঃ বীর্যে প্রতিফলিত হয়। সেই থেকে সৃষ্ট সন্তানের ওপরে সেই ভাবনা পড়ে। সুশ্রত সংহিতায় লেখা আছে –

আহারাচার চেষ্টা ভিয়াদৃশোভি সমন্বিতৌ ।

স্ত্রীপুংসৌ সমুপেয়াতাং তয়োঃ পুত্রোত্তপি তাদৃশঃ ।।

( সুশ্রত সংহিতা / শরীর ২/৪৩/৫০ )

অর্থাৎ- নর নারী যেমন আহার ব্যবহার বা প্রচেষ্টায় মিলিত হয়ে পরস্পর সহবাস করে তাদের পুত্র সন্তানও তেমনি স্বভাব প্রাপ্ত হয় ।

ঋতুকালের চতুর্থ দিনে স্নান করে পবিত্র হয়ে শ্রদ্ধা ভরে সাত্ত্বিক ভাবে ঈশ্বর, মহাপুরুষ দিগকে প্রণাম করে তাহার পর স্বামীর সাথে সহবাস করলে সুশীল, ধার্মিক, উত্তম সন্তান লাভ হয় । রাত ১২ টা থেকে ভোর ৩ টের মধ্যে সহবাসের ফলে যে সন্তান জন্ম হয়- যে ভক্ত হয় । অর্থাৎ ধার্মিক হয় । ঋতুর চতুর্থ, ষষ্ঠ, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, একাদশ রাত্রে সহবাস অতি উত্তম। একদাশী, দ্বাদশী বা কোন ব্রতের আগে বা ব্রতের দিন বা ব্রতের পরের দিন সহবাস করলে সন্তান অসুর হয়ে জন্মায়। অমাবস্যা, পূর্ণিমা, চতুর্দশী, রবিবার, সংক্রান্তি, অষ্টমী , গ্রহণ, বারবেলা, কালবেলা, রাক্ষসীবেলা, শণিবার, মঙ্গলবার, পূজা পর্বের দিন সহবাসে উৎপন্ন সন্তান রাক্ষস ও দুঃখী হয়। সকালে, সন্ধ্যায়, দুপুরে সহবাস নিষিদ্ধ। দৈত্যমাতা দিতি জোর করে কশ্যপ মুনিকে প্রাতঃকালে সহবাসে বাধ্য করলে তাহাদিগের হিরন্যক্ষ – হিরন্যকশ্যপ নামক দুই অসুর পুত্র ও হোলিকা নামক এক আসুরী কন্যা জন্মায়। কেকসী সন্ধ্যাকালে বিশ্রবা মুনিকে সহবাসে বাধ্য করলে তাদের সন্তান রাবণ রাক্ষস হয়। সুতরাং ঐ সময়ে সহবাস নিষিদ্ধ ।অল্প কথায় গর্ভাধান একটি পবিত্র কর্ম। শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধ শয্যায়, শুদ্ধ চিত্তে সহবাসে লিপ্ত হতে হয় তবেই সুশীল, ধার্মিক, সুকুমার সুকুমারী পুত্র বা কন্যা সন্তান লাভ হয় । ক্লান্ত, চিন্তিত, ভয়ার্ত, পায়খানা- প্রস্রাবের বেগ , ক্ষুধা, পিপাসা , মানসিক প্রতিকূলতার সময় সহবাস নিষিদ্ধ । গর্ভধারণের সময় ধর্ম চিন্তা করলে সন্তান ধার্মিক হয় । গর্ভাধানের আগে এই মন্ত্র পড়তে হয়-

গর্ভং ধেহি সেনাবালি গর্ভং ধেহি প্রথুষ টুকে ।

গর্ভং তে অশ্বিনী দেবাবাধাতাং পুষ্কর স্রজৌ ।।

অর্থাৎ- সেনাবালি দেবি! এবং হে বিস্তৃত প্রথুষটুকা দেবী, তুমি এই স্ত্রীকে গর্ভধারণের সামর্থ্য দাও ও তাকে পুষ্ট করো। কমল মালায় অশ্বিনীকুমার ভাতৃদ্বয় তার গর্ভকে পুষ্ট করুন ।

(C) Feni Sonatoni Songho
Share:

হিন্দু বিয়েতে সাত পাকে ঘোরা হয় কেন ?

 হিন্দু মতে বিয়েতে আমরা দেখতে পাই, আগুনের কুন্ডলীর চারপাশে বর-বউকে ঘুরতে। একে সাত পাকে বাঁধা পড়া বলা হয়। বলা হয়, এর মাধ্যমে অগ্নিদেবতাকে বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। শুধু আগুনের চারপাশে ঘোরাই নয়, এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিতে হয় একে অপরকে।

 প্রথম প্রতিশ্রুতি- প্রথমে বর তাঁর বউ এবং তাঁর ভাবী সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন নেবেন।

দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি- এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে সবরকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন।বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি স্বামীর সবরকম যন্ত্রণায় পাশে থাকবেন।

তৃতীয় প্রতিশ্রতি- এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন এবং তাঁদের দেখভাল করবেন। একই প্রতিশ্রুতি এবার কনেও করেন।

চতুর্থ প্রতিশ্রুতি- স্ত্রীর কাছে তাঁর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতু দেন।

 পঞ্চম প্রতিশ্রুতি- যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন স্ত্রী।

ষষ্ঠ প্রতিশ্রুতি- স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

সপ্তম প্রতিশ্রুতি- শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবেও সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন বর। বিনিময়ে স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

 যদি কোন ভূল হয়,ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

(C) Feni Sonatoni Songho
Share:

দীক্ষা কি? দীক্ষা গ্রহণ করার আবশ্যকতা কোথায়?

দীক্ষা সর্বকার্যে শুদ্ধিকারক। অদীক্ষিত কোন ব্যক্তি যদি আধ্যাত্মিকতার যেকোন কার্য করুক না কেন? তৎসমুদয়ের কোন মূল নেই। তাই প্রত্যেকে দীক্ষা গ্রহণ করা অবশ্যই উচিত। দীক্ষা ব্যতীত কোন ভক্তকে ভগবান নিজেও দর্শন দেন না তা শাস্ত্রে বিধিত আছে।

দীক্ষা কি?

দীয়ন্তে জ্ঞানমত্যন্তং ক্ষীয়তে পাপসঞ্চয়ঃ।

তস্মাদ্‌ দীক্ষেতি সা প্রোক্তা মুনির্ভিস্তত্ত্বদর্শিভিঃ।।

দিব্যজ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কৃত্যা পাপস্য সংক্ষয়ম্‌।

তস্মাদীক্ষেতি সা প্রোক্তা মুনির্ভিস্তত্ত্ববেদিভিঃ।।

(রুদ্রযামল ও যোগিনী তন্ত্রে)

অনুবাদঃ যে কার্য পাপক্ষয় করিয়া দিব্য জ্ঞান প্রকাশ করে, তাহাই দীক্ষা। প্রকৃতপক্ষে দীক্ষার অর্থ বর্ণ বা শব্দ বিশেষ, শ্রবণ করা নহে। বর্ণ বা বর্ণগুলি শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্ম বলিয়া পরিকীর্তিত আছে। সেই শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্মই বর্ণ। সেই বর্ণই ভগবানের নাম। নাম এবং নামী অভেদ, কিছুই প্রভেদ নাই। এইভাবে যেই নাম বা মন্ত্র গ্রহণ করা হয় তাহাই দীক্ষা। যিনি নামে এবং মন্ত্র এ মন্ত্রের অভীষ্ট দেবতাকে এক ভাবেন, তিনি প্রকৃত দীক্ষিত। দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করিলে শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্ম অভীষ্ট দেবতার না হয় এবং হৃদয়ে নিজ ইষ্ট দেবতার ভাব উদ্দীপন না হয়, তবে সেইরূপে মন্ত্র বা দীক্ষা গ্রহণ করিয়া দীক্ষা বা মন্ত্র গ্রহণ শব্দ প্রয়োগ না করাই শ্রেয়ঃ। দৃঢ় বিশ্বাস বা ভক্তিই মূল।

দীক্ষা গ্রহণ করার আবশ্যকতাঃ

অদীক্ষিতাং লোকানাং দোষং শৃনু বরাননে।

অন্নং বিষ্ঠা সমং তস্য জলং মূত্র সমং স্মৃতম্‌।

যৎ কৃতৎ তস্য শ্রাদ্ধং সর্বং যাতিহ্যধোগতিম্‌।।১

(তথাহি মৎস্যর্সূক্তে)

অর্থঃ অদীক্ষিত ব্যক্তি অন্ন বিষ্ঠার সমান, জল মূত্রতুল্য। তাহারা শ্রাদ্ধাদি কার্য যাহা কিছু করে, তাহা সমস্তই বৃথা।

ন দীক্ষিতস্য কার্যং স্যাৎ তপোভির্নিয়মব্রতৈ।

ন তীর্থ গমনে নাপি চ শরীর যন্ত্রণৈঃ।।২

অদীক্ষিতা যো কুর্বন্তি তপো জপ পূজাদিকাঃ।

ন ভবতি ক্রিয়া তেষাং শিলায়ামুপ্ত বীজবৎ।।৩

অর্থঃ দীক্ষা গ্রহণ না করিলে কোন কার্য করিবার অধিকার জন্মে না। সেই জন্য জপ, তপ, নিয়ম, ব্রত, তীর্থ, ভ্রমণ উপবাসাদি শারীরিক কষ্ট দ্বারা কোন ফল দর্শিবে না।

অদীক্ষিতোহপি মরণে রৌরবং নরকং ব্রজেৎ।

অদীক্ষিতস্য মরণে পিশাচত্বং ন মুঞ্চতি।।

অদীক্ষিত ব্যক্তিগণ মৃত যদি হয়।

রৌরব নরকে বাস জানিবে নিশ্চয়।।

স্কন্ধ পুরাণেতে তার আছয়ে বর্ণন।

মৃত্যু পরে হবে তার পিশাচে জনম।।

দীক্ষা মূলং জপং সর্বং দীক্ষা মূলং পরং তপঃ।

দীক্ষামাশ্রিত্য নিবসেৎ কৃত্রশ্রমে বসদ্‌।।

জপ, তপ, তন্ত্র, মন্ত্র, দীক্ষা মূল হয়।

দীক্ষা ভিন্ন সর্বকার্য হইবেক ক্ষয়।।
Share:

পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম কে তৈরি করেছেন?

পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম কে তৈরি করেছেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে সকলেই যে নামটি বলবেন তা হলো ক্রিস্টোফার কলম্বাস। কিন্তু এর বাইরে কেউ কি কখনো শুনেছেন যে, আধুনিক পৃথিবীর মানচিত্রের ধারণা সর্বপ্রথম মহাভারতে উল্লেখ করা হয়েছে?

আজ্ঞে হ্যাঁ, পৃথিবীর প্রথম মানচিত্রের ধারণা দিয়েছিল ভারতীয়রাই।

ধারণা করা হয় কলম্বাস ৫২৫ বছর আগে বিশ্বের প্রথম মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। তিনি জম্মগ্রহণ করেন ইটালিতে ১৪৫১ সালে এবং মারা যান স্পেনে ১৫০৬ সালে। কলম্বাস ছিলেন একজন নাবিক। তার নেশা ছিল নতুন নতুন ভূ-খণ্ড অবিষ্কার করা।

এখন মূল বিষয়ে আসা যাক। পৃথিবীর বৃহত্তম ও অন্যতম প্রাচীন মহাকাব্য ‘মহাভারত’। সুবিখ্যাত মহাভারত মূলত একটি ইতিহাস নির্ভর মহাকাব্য হলেও এটা যুগ যুগ ধরে ধর্মের শিক্ষা ভারতবাসীকে দিয়ে এসেছে। তাই এটা সনাতনীদের কাছে একটি ধর্মগ্রন্থও বটে। মহাভারত রচিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগে।

আজ থেকে ৫০১৫ বছর আগে মহামুনি বেদব্যাস লিখে যান মহাভারত। এই গ্রন্থে ইতিহাস এবং ধর্মের বিষয়গুলো খুব পরিস্কারভাবে ব্যাখা করা হয়েছে। সবচেয়ে শুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হল পৃথিবীর ভৌগলিক গঠনের চিত্র পরিস্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে মহাভারতে। ভারতীয় হিন্দু সভ্যতাই বিশ্বের মানচিত্র সর্বপ্রথম তৈরি করেছিল। তবে গভীর দৃষ্টিভঙ্গীর অভাব ও প্রচার না হওয়ার কারণে তা অনেকটা অধরা থেকে গেছে মহাভারতের পাঠক ও ভক্তদের কাছে।

বেদব্যাস লিখে গিয়েছিলেন, প্রথিবীর ভূ-প্রকৃতির গঠন এবং মাটির উপর পৃথিবীর ভরের অবস্থান সম্পর্কে। (ছবির আকারে শ্লোকটি দেওয়া হয়েছে)

বেদব্যাস মহাভারতের ভীষ্ম পর্বে বর্ণনা করেছেন, ‘হে সর্বশক্তিমান! এই দ্বীপের নাম হল সুর্দশন চক্র যা গোলাকার। এটা নক্ষত্রমণ্ডলী থেকে দেখা যায়, যেমন মানুষ তার উল্টা প্রতিবিম্ব দেখে দর্পণে। এর দুটো খণ্ডিত অংশ পিপল (অশ্বত্থ) গাছের পাতার মতো দেখতে। অপর দুটো অংশ দেখতে খরগোশের মতো।

যদি আমরা এই খণ্ডিত অংশগুলো একত্রিত করি তাহলে দেখব তা দেখতে পৃথিবীর বর্তমান মানচিত্রের মত।

বেদব্যাস মহাভারতে লিখেছেন, এই দ্বীপকে ডাকা হয় সুদর্শন। এই দ্বীপটি দেখতে গোলাকার। এটা নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে পূর্ণ। এখানে পর্বতরাজি রয়েছে মেঘমালার মতো। এখানে অনেক বড় বড় শহর রয়েছে। সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ অনেক রাজ্য রয়েছে এখানে। এই গ্রহ ফল-ফুলে শোভিত বৃক্ষরাজিতে পূর্ণ। বিভিন্ন প্রকার ফসল ও আরও অনেক সম্পদে সমৃদ্ধ এই গ্রহ। এই দ্বীপরাজি সকল দিক থেকে লবণের সাগর দ্বারা বেষ্টিত।

বেদব্যাস আরও উল্লেখ করেছেন পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ সম্পর্কে। তিনি লিখেছেন, চাঁদ হলো পৃথিবীরই একটা প্রতিরূপ। আয়নায় প্রতিবিম্বিত মানুষের মুখের মতো চাঁদের ভূ-মণ্ডলের গঠনও পৃথিবীর অনুরূপ।

হিন্দু শাস্ত্র থেকে আমরা জানি ‘সপ্তদ্বীপা বসুন্ধরা’। চারিদিকে জল দ্বারা বেষ্টিত এই সাতটি ‘দ্বীপ’ বলতে বর্তমান সময়ের একেকটি মহাদেশকে বোঝানো হয়েছে। পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশের কথা সর্বপ্রথম সনাতন ধর্মগ্রন্থেই উল্লেখ পাওয়া যায়।

(C) Feni Sonatoni Songho
Share:

২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ব্রিলিয়ান্ট ছেলে মেয়েগুলো দেশ বিদেশের নানা বই পড়ে কিন্তু গীতা, রামায়ন পড়েছে কি ?

কখনো খেয়াল করেছেন, আপনার পাশের বাসার ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটি দেশ বিদেশের নানা বই পড়ে। অথচ কখনো সে গীতা, রামায়ণ কিংবা মহাভারত পড়েনি। হুমায়ুন আহমেদের হিমু, মিসির আলী কিংবা রবি ঠাকুরের "শেষের কবিতা " কতজনেই তো পড়েছে। অথচ তাদের ৫০% ও গীতা পড়েছে কি-না সন্দেহ! এদের মধ্যে অনেকেই রামায়ণ, মহাভারত চোখেও দেখেনি। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? যার বই পড়ার অভ্যাস নেই, সে না হয় গীতা পড়েনা। কিন্তু বই পড়ুয়া ছেলেটির হাতে কেন কখনো গীতা উঠে না? যারা গীতা পড়েন বা যারা পড়েছেন, তাদের নিয়ে এই মুহুর্তে একটা জরিপ করেন। "কেন আপনি গীতা পড়েন? " এই প্রশ্নটা যদি গীতা পড়েছেন এমন কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, তবে যদি আমি ভুল না করে থাকি তবে ৯৫% মানুষের উত্তর হবে - গীতা পড়লে পূণ্য হয়, তাই গীতা পড়ছি। আমার মনে হয় এখানেই প্রবলেমটা।

স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে সারাজীবন আপনি রাত জেগে পড়েছেন শুধু পড়লে ভালো রেজাল্ট করা যায়, এই একটা কারণেই। আর সেজন্যই একাডেমিক লাইফের পড়াগুলো আমাদের ৯০% মনেই থাকেনা। কারণ সেই জায়গায় আমাদের স্বার্থ ছিল। অথচ কোনো একটা গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্য কিংবা অন্য যেকোনো বই একবার পড়লেই সেটা সারাজীবন মনে থাকে। কারণ সেখানে আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। হুমায়ুন আহমেদের হিমু গল্প পড়ে কতজনই তো হলুদ পাঞ্জাবি পরে হিমু সেজেছিল। মুলত এরপর কয়েকবছর হলুদ পাঞ্জবীর বেশ প্রচলন হয়েছিল ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে। এর মানে হলো বইয়ের সে কাহিনীকে তারা নিজদের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। ঠিক এতটাই ভালোবাসা ছিল। গীতা পড়লে পূণ্য হবে, পূণ্য হলে মৃত্যুর পর স্বর্গে যাওয়া যাবে। শুধু এই কারণে যদি গীতা পড়ার পরামর্শ দেয়া হয়, তবে আজীবন মানুষ গীতায় পড়বে কিন্তু গীতার মর্মবাণী কেউ উপলব্দি করতে পারবেনা। স্কুলগামী ছোট শিশুটি পাপ পুণ্যের কী বুঝে? সে বুঝে হ্যারি পটার আর কার্টুন। তাকে সেভাবে বুঝান গীতা। গীতাকে পূণ্যের চাবিকাঠি হিসেবে না দেখিয়ে বরং আনন্দের উপাদান হিসেবে উপস্থাপন করা না গেলে, জেনারেশন চেঞ্জ হবে তবু গীতাপাঠে কেউ উৎসাহিত হবে না।

আপনি গল্প, উপন্যাস ভালোবাসেন? একবার রামায়ন মহাভারত নিন। এখানের কাহিনীগুলো আপনার গল্প উপন্যাসের চাইতেও বেশি ভালো লাগবে। গীতা পুরোটাই তো একটা কাহিনী। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যেসব উপদেশ দিয়েছেন বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সেসব আপনি উপন্যাস পাগল ছেলেটিকে উপন্যাসের মত করে উপস্থাপন করুন। আমি নিশ্চিত তার ভালো লাগবে। যে কবিতা ভালোবাসে তাকে গীতার শ্লোকগুলো ছন্দে ছন্দে উপস্থাপন করুন, তার ভালো লাগবে। কার্টুন পাগল শিশুটিকে আপনি ধর্মীয় ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে গীতা বুঝিয়ে দিন। দেখবেন কখন যে আপনার ঘরের শিশুটি মীনা কার্টুনের বই পড়া শেষ করে গীতা পড়তে শুরু করে দিয়েছে।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- "যে আমাকে যেভাবে ভজনা করে আমি তাকে সেভাবেই সাড়া দেই। "

_____________________

Satyajit Chakraborty
Writer, Public Spraker & Corporate Trainer.
Founder, Bangladesh Career Club
Share:

২১ ডিসেম্বর ২০১৭

তপ্তকুণ্ড (বিজ্ঞান যেখানে ব্যর্থ )

চারদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা আর এই ঠান্ডা পরিবেশে কোনো জলধারা যে তপ্ত জল সরবরাহ করতে পারে এটি কি কল্পনা করা যায়? অথচ, ভারতের চারটি স্থানেই এরকম অলৌকিক কুণ্ড রয়েছে যা সবসময়েই তপ্ত জল সরবরাহ করে । বিজ্ঞান এ অলৌকিক ব্যপারটির কী ব্যখ্যা দাঁড় করাবে? আজ সেই তপ্তকুণ্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরব ।

বদ্রীনাথ হিমালয়ে এ প্রচন্ড ঠান্ডা । কোথাও কোথাও বরফ পড়তে দেখা যায়, কিন্তু তার মধ্যে এই হিমালয়ের প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ভারতের চারটি ধাম – জগন্নাথপুরী, দ্বারকা, বদ্রিকাশ্রম, রামেশ্বরে তপ্তকুণ্ড রয়েছে, যাতে স্নান করে তীর্থযাত্রীগণ তাদের পথশ্রম জনিত ক্লান্তি দূর করেন । তপ্তকুণ্ডের জল এতটাই গরম যে, যাত্রীরা কাপড়ে চাল বেঁধে ওখানে রাখছেন । পাঁচ মিনিটের মধ্যে তা অন্ন হয়ে যাচ্ছে এবং তা ভগবানকে ভোগ দিয়ে প্রসাদ হিসেবে খাচ্ছেন । ওখান থেকে একটি ধারা নিয়ে অন্য কুয়াতে স্নান করা যায় । এখানে বদ্রীনাথেও তপ্তকুণ্ডের অবস্থান দেখা যায় ।

বিভিন্ন পুরাণে কথিত আছে ভৃগু ঋষির অভিশাপে অগ্নিদেব তার শাপ কাটানোর জন্য ব্যাসদেবের কাছে আসেন । তখন ব্যাসদেব অগ্নিকে বললেন এই বদ্রীকাশ্রমে তপস্যা করতে যার ফলে এই শাপ মুক্ত হতে পারবে । ব্যাসদেবের কথায় অগ্নিদেব এখানে তপস্যা শুরু করলেন আর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান দেখা দেয় । ভগবান অগ্নিদেবকে বললেন, এই ধামের মহিমা এতটাই যে যা দর্শন মাত্রেই জীবকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করে । তুমি এমনিতেই সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত হয়েছ, আর এখন থেকে তুমি এখানেই অবস্থান করো, এ স্থান ছেড়ে যেও না । এখানে যত মানুষ আসবে তাদেরকে তুমি পাপ থেকে মুক্ত করো । এইভাবে ভগবানের আদেশে অগ্নিদেব অগ্নিকুণ্ড বা তপ্তকুণ্ড রূপে এখানে সহ চারটি ধামে অবস্থান করেছেন । তীর্থযাত্রী মাত্রই ঐ কুণ্ডে স্নান করে সমস্ত কলুষ তো মুক্ত হবেনেই পরন্তু হাল্কা উষ্ণতায় স্নান এতটাই আরামদায়ক যে, সকলের পথশ্রমের ক্লান্তি নিবারণ করে । মহিলা ও পুরুষদের দুটি আলাদা কুণ্ডে পৃথকভাবে স্নানের ব্যবস্থা রয়েছে ।

courtesy by: সুশান্ত বন্দ
Share:

দেবী সরস্বতী, নিত্য তিনি বিদ্যাদেবী কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস কি?

দেবনাগরী:- সরস্বতী
লিপ্যন্তর:- সনাতনী জ্ঞানমঞ্জুরী
অন্তর্ভুক্তি:- ত্রিদেবী, জ্ঞানদেবী, সংগীতাজ্ঞ ও শিল্পকলা
আসন:- শ্বেত পদ্মাসন
আবাস:- ব্রহ্মলোক
মন্ত্র:- ॐ শ্রী সরস্বত্যৈ নমঃ
সঙ্গী:- ব্রহ্মা জ্ঞানীরুপে
বাহন:- ময়ূর, হংস
পিতৃতর্পণ:- শুক্লামাঘী তিথি শুক্লাপঞ্চমী(বসন্ত পঞ্চমী)
সমাপন:- তশীতলষষ্ঠী

সরস্বতীর পূজার প্রচলন তথ্য:-

সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার হিন্দু দেবী। তিনি সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতী, এই ত্রিদেবীর অন্যতম। এই ত্রিদেবীর কাজ হল ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে যথাক্রমে জগৎ, সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস করতে সাহায্য করা। সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগবেদে। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্তপঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে। এই দিন ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতেখড়ি হয়। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরাও সরস্বতীর পূজা করেন। জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া), নেপাল, বাংলাদেশ, গ্রেটব্রিটেন, সাইপ্রাস, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার প্রচলন আছে।

সরস্বতীর মূর্তি কল্পনা তথ্য:-

ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত মূর্তিকল্পটিতে দেবী সরস্বতীকে শ্বেতবর্ণা, শ্বেত পদ্মে আসীনা, মুক্তার হারে ভুষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণা পুস্তক ধারিণী এক দিব্য নারী মূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে। তাই ধ্যান মন্ত্রে বলা হয়েছে:-

ওঁ তরুণশ কলমিন্দো র্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরন মিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে।
নিজকর কমলোদ্যল্লেখনী পুস্তকশ্রীঃ সকল বিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ।।

অনুবাদ:- “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেত পদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভমানা বাগ্‌দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।”

আবার পদ্মপুরাণে উল্লিখিত সরস্বতীস্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে:-

শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা।।

অনুবাদ:- “দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা। অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা।

সরস্বতী মূর্তির প্রকাশ:-

ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরালবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদ পুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা হাতে বীণাধারিণী রুপে পূজিত হন।

শ্রী শ্রী সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ

ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।

প্রনাম মন্ত্রঃ

নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।

সরস্বতীর স্তবঃ

শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা। শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ। পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।। স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্। যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।

সনাতনী পুরাণে সরস্বতীর প্রকাশ:-

ব্রহ্মা তাঁর কন্যা সরস্বতীর প্রতি দুর্ব্যবহার করলে শিব তাঁকে শরবিদ্ধ করে হত্যা করেন। তখন ব্রহ্মার পত্নী গায়ত্রী কন্যা সরস্বতীকে নিয়ে স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য গন্ধমাদন পর্বতে তপস্যা শুরু করেন। তাঁদের দীর্ঘ তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব ব্রহ্মার প্রাণ ফিরিয়ে দেন। সেই থেকে শিবের নির্দেশে গায়ত্রী ও সরস্বতীর তপস্যাস্থলে দুটি প্রসিদ্ধ তীর্থ সৃষ্টি হয়। জগতে সকল দেবতা তীর্থ আছে, শুধু ব্রহ্মার তীর্থ নেই – একথা ভেবে ব্রহ্মা পৃথিবীতে নিজের তীর্থ স্থাপনে উদ্যোগী হলেন। তিনি একটি সর্বরত্নময়ী শিলা পৃথিবীতে নিক্ষেপ করলেন। সেটি চমৎকারপুরে এসে পড়ল। ব্রহ্মা সেখানেই নিজের তীর্থ স্থাপন করবেন বলে ভাবলেন। ব্রহ্মার নির্দেশে সরস্বতী পাতাল থেকে উঠে এলেন। ব্রহ্মা তাঁকে বললেন, “তুমি এখানে আমার কাছে সব সময় থাকো। আমি তোমার জলে ত্রিসন্ধ্যা তর্পণ করব।” সরস্বতী ভয় পেয়ে বললেন, “আমি লোকের স্পর্শ ভয় পাই বলে সব সময় পাতালে থাকি। কিন্তু আপনার আদেশ আমি অমান্যও করতে পারি না। আপনি সব দিক বিচার করে একটি ব্যবস্থা করুন।” তখন ব্রহ্মা সরস্বতীর অবস্থানের জন্য একটি হ্রদ খনন করলেন। সরস্বতী সেই হ্রদে অবস্থান করতে লাগলেন। ব্রহ্মা ভয়ংকর সাপেদের সেই হ্রদ ও সরস্বতীর রক্ষক নিযুক্ত করলেন।
(তথ্যসূত্র:- স্কন্ধপুরাণ)

"শুক্ল যজুর্রবেদ" অনুসারে, একসময় ইন্দ্রের শরীরের শক্তি চলে যাওয়ার ফলে তিনি মেষ আকৃতি গ্রহণ করেন। সেসময় ইন্দ্রের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল স্বর্গের অশ্বিনীদ্বয়ের উপর এবং সেবা-শুশ্রুষার ভার ছিল সরস্বতীর হাতে। সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ইন্দ্র সরস্বতীর গানবাজনা ও সেবায় সুস্থ হওয়ার পর তাকে মেষটি দান করেন।
(তথ্যসূত্র:- শুক্ল যজুর্রবেদ)

বাল্মীকি রামায়ণে সরস্বতীর প্রকাশ:-

রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকি যখন ক্রৌঞ্চ হননের শোকে বিহবল হয়ে পড়েছিলেন, সে সময় জ্যোতির্ময়ী সরস্বতী তার ললাটে বিদ্যুৎ রেখার মত প্রকাশিত হয়েছিলেন। (তথ্যসূত্র:- বাল্মীকি রামায়ণ)

সরস+বতী=সরস্বতী অর্থ জ্যোতিময়ী। ঋগ্বেদে এবং যর্জুবেদে অনেকবার ইড়া, ভারতী, সরস্বতীকে একসঙ্গে দেখা যায়। বেদের মন্ত্রগুলো পর্যালোচনায় প্রতীতী জন্মে যে, সরস্বতী মূলত সূর্যাগ্নি। ব্রহ্মা যখন সৃষ্টিকার্য শুরু করেন তখন জ্ঞান সংকটে সৃষ্টিকার্যের ব্যাঘাত ঘটে। তখনই ব্রহ্মা বিষ্ণুর স্মরণাপন্ন হয়, পালনকারী বিষ্ণু সমাধানের পথ না পেয়ে শিবকে স্তব করে। অতঃপর শিব বৈকুণ্ঠে উপস্থিত হয় এবং সৃষ্টিকারী ব্রহ্মাকে বলেন, গায়ত্রী কন্যা (ব্রহ্মা ও ব্রহ্মাপত্নী গায়ত্রী কন্যা) সরস্বতীই আপনার জ্ঞানধারী হবে। তখন ব্রহ্মাদেব সরস্বতীকে প্রকট করলেন। এরপরে বিষ্ণু সরস্বতীকে ময়ূর প্রদান করলেন এবং শিব শ্বেতপদ্ম ও বীণা প্রদান করে, তখন ব্রহ্মা সরস্বতীকে শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষণা করে। পরক্ষণে সরস্বতী ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে বললেন, হে ত্রিদেব আপনারা আমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন "আমি কৃতার্ত" মার্জনা করবেন কিন্তু আমার অস্তিত্ব কি? তখন ব্রহ্মা দেবী সরস্বতীকে সর্বদেবসত্তা, বিষ্ণু সর্বজ্ঞানী, শিব সর্বপূজিত বরে ধন্য করেন। এই ত্রিদেবের বরে সরস্বতী এক বিরাট জোতির্ময় রুপ ধারণ করে, যা সূর্যের ন্যায় আলোকময়; সেইক্ষণ থেকে দেবী সরস্বতী সূর্যাগ্নি নামে খ্যাত। আজ সমগ্র বিশ্বে যে বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, বিদ্যা, সংগীত, ও শিল্পকলার প্রকাশ তা দেবী সরস্বতীর কৃপান্নিত জ্ঞানালোকে।

সর্বসাকুল্যে দেবী সরস্বতী সৃষ্টির আদি থেকে আজ আধুনিককাল পর্যন্ত পূজিত হয়ে আসছেন, সনাতনী সমাজ তথা হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী সরস্বতী শান্তির প্রতীক ও জ্ঞানের ভাণ্ডার। বিভিন্ন পুরাণ ও বেদ সম্বন্ধে হিন্দুরা অবগত নাহলেও, সৃষ্টির এই প্রাচীন দেবী পরিপূর্ণ ভাবে আজ সনাতনী সমাজে পরিলক্ষিত একজন। এই দেবী সবাইকে বিদ্যা বুদ্ধি প্রদান করুক এই কামনায় করি।

(c) Mishon Mojumder
Share:

১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বেদ ও শ্রী কৃষ্ণ

✍বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান এবং সেটি ভগবান থেকে প্রকাশিত হচ্ছে. বেদ শাশ্বত ও অপৌরুষেয়ঃ.

পরম জ্ঞান নিত্য ও কোন মানুষের রচিত নয়.

শাস্ত্রীয় ইতিহাস অনুসারে, সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মান্ডের প্রথম জীব স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা. এই বেদ-জ্ঞান লাভ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণর নিকট থেকে,

তার বেণুধ্বনির মাধ্যমে.

যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্ব্বং যো বৈ

বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. (- 1/24 গোপালতাপনী উপনিষদ)

"যিনি সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মাকে বৈদিক জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন এবং পূর্বে বৈদিক জ্ঞান বিস্তার করেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণই."

.
ব্রহ্মসংহিতায় শ্রীকৃষ্ণকে বেদের সারসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে (তুষ্টাব বেদসারেণ স্তোত্রেণানেন কেশবম - 5/28).

বেদ অনুসারে,

ব্রহ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণু হতে উদ্ভূত,  আর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীবিষ্ণুরও উৎস. জড় জগতে ভগবানের তিনটি পুরুষাবতার - বিষ্ণুরূপ প্রকাশিতঃ

.

(1) প্রথম পুরুষাবতারঃ কারণোদকশায়ী বিষ্ণু বা মহাবিষ্ণু - কারণ-উদক সাগরে (কার্যকারণ মহাসাগর) শায়িত এই মহাবিষ্ণুর বিরাট শরীর থেকে কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড (universes এর ক্লাস্টার) প্রকাশিত হয়, মহাপ্রলয়ে (অবলুপ্তি) সমস্ত জড় ব্রহ্মান্ড ধ্বংস হয়ে সূক্ষ্ম জড় উপাদনরূপে (মহত্তত্ব) তাঁর দিব্য শরীরে বিলীন হয়.

.

(২) দ্বিতীয় পুরুষাবতারঃ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু - মহাবিষ্ণু নিজেকে কোটি কোটি রূপে বিস্তার করে প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করে ব্রহ্মান্ডের গর্ভোদকে শয়ন করেন.

তারপর ব্রক্ষ্মাকে সৃষ্টি করেন. ব্রহ্মার মাধ্যমে সূর্য ও চতুর্দশ ভুবন বা গ্রহলোকসমূহ (গ্রহ সিস্টেম) সৃষ্টি করেন.

.

(3) তৃতীয় পুরুষাবতারঃ - ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু - প্রতি ব্রহ্মান্ডে শ্রীবিষ্ণু নিজেকে অসংখ্য রূপে বিস্তার করে করে জীবসত্তাকে ভগবদধামে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক জীব হৃদয়ে পরমাত্মারূপে অবস্থান করেন.

.

এইভাবে, কোটি কোটি, অসংখ্য অনন্তরূপে ভগবান নিজেকে বিস্তার করেন, কিন্তু তিনি 'অদ্বৈতম' (অ দ্বৈত) তিনি এক ও অভিন্ন এবং সকল রূপের পরম উৎস শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ, এটিই বৈদিক শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত.🙂

ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে (5/33) -

অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম

আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ.

বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ

গোবিন্দম-আদি পুরুষং তমহং ভজামি ..

"যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপ সম্পন্ন, আদি পুরাণপুরুষ হয়েও নিত্য নব নবায়মান যৌবন সম্পন্ন সুন্দর পুরুষ, বেদাদি শাস্ত্র পাঠে দুর্লভ কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তির লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি."

.

বেদে সর্বদেবতার উপাস্য ভগবান রূপে শ্রীবিষ্ণুকে স্তুতি করা হয়েছে, যেমন ঋগবেদে (১/২২/২০) বলা হয়েছে -

ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা

পশ্যন্তি সূরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম.

তদবি প্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংষঃ

সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম ..

.

"পরমেশ্বর বিষ্ণুই হচ্ছেন পরম সত্য.

সুরগন তাঁর পাদপদ্ম দর্শনে সর্বদাই উদগ্রীব. সূর্যের মতোই ভগবান তাঁর শক্তি রশ্মির বিস্তার করে সর্বত্র ব্যাপ্ত আছেন. "🙂

ঋগবেদে ১/২২/১৭ ১/২২/১৮,১/১৫৪/১, ১/১৫২/২, ১/১৫৪/৩, ১/১৫৪/৪, ১/১৫৪/৬ নং মন্ত্রে বিষ্ণুর কথা বলা হয়েছে. 🙂

অথর্ব বেদে বলা হয়েছে, যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. অর্থাৎ - "ব্রহ্মা, যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন,

সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ." 🙂

.

শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণেরই প্রকাশ বা বিস্তার, শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত, যেমন সকল বেদ উপনিষদের সার গীতোপনিষদ, ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে - শমং চ বিষ্ণো (১১/২৪), প্রতপন্তি বিষ্ণুো- (১১/৩০), আদিত্যানাম অহং বিষ্ণু (১০/২১) ইত্যাদি. শ্রীকৃষ্ণই শ্রীবিষ্ণুরূপে সর্বজীবের অন্তরস্থিত পরমাত্মা - অহমাত্মা গূঢ়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ (১০/২০).

বিষ্ণুমূর্তি-সমূহ, রাম-নৃসিংহ ইত্যাদি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণরই প্রকাশ, অংশ, কলা. শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান (এতে চাংশ কলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্ত ভগবান স্বয়ম - ভাগবতম ১/৩/২৪). ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণপরাৎপর পুরুষ, সেজন্য তাঁর থেকে অসংখ্য ভগবৎ-রূপ বিস্তার হলেও তিনি তাঁর পূর্ণ স্বরূপে নিত্য বিরাজমান. শ্রী ঈশোপনিষদে যেমন বলা হয়েছে (১ আবাহন)

ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে.

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ..

"পরমেশ্বর ভগবান সর্বতোভাবে পূর্ণ. তিনি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ বলে এই দৃশ্যমান জগতের মতো তাঁর থেকে উদ্ভূত সব কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ.

যা কিছু পরম পূর্ণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা সবই পূর্ণ.

কিন্তু যেহেতু তিনি হচ্ছেন পরম পূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখন্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন. "🙂

.

ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কয়েকটি উক্তিঃ

বেদ্যং পবিত্রং ওঙ্কার - ৯/১৭- আমাকে পবিত্র ওঙ্কার বলে জানবে. 🙂

.

প্রণবঃ সর্ববেদেষু - ৭/৮ - সমস্ত বেদে উল্লেখিত প্রণব (ভগবানের নির্বিশেষ নাম) আমিই.

.

বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম - 15/18 - বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে খ্যাত

.

বেদানং সামবেদোহস্মি - ১১/২২ - সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ

.

ঋক সাম যজুরেব চ - ৯/১৭- ঋক, সাম, যজুর্বেদাদি ও আমি

.

বৃহৎসাম তথা সাম্নাং গায়েত্রী ছন্দসামহম - ১০/৩০- আমি

.

সামবেদের মধ্যে বৃহৎসাম, সমস্ত ছন্দের মধ্যে গায়েত্রী.

.

অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ - ৯/২৯- আমি সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা, প্রভু.

.

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও বিপ্লবাত্মক কথা বলেছেন - তিনি বলেন (গীতা ২/৪২)

"বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ-আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে. ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊধ্বে আর কিছুই নেই.🙂 "

.

ভগবদগীতাকে সমস্ত বেদ-উপনিষদের সার-নির্যাস বলা হয় (সর্বোপনিষদোগাবো). ভগবান শ্রীকৃষ্ণর উক্তি ও ভগবদগীতার তথ্যের সাথে বেদ-উপনিষদের মৌল তত্ত্বের সুস্পষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে. নিম্নে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করুন -

.

1. ভগবদগীতা - 8/9 নং শ্লোক ও 13/18 নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (3/8) নং শ্লোক একই

2. গীতার 15/14 নং শ্লোক আর বৃহদারণ্যক উপনিষদ 5/9/1 নং শ্লোক একই.

3. গীতার 9/10 নং শ্লোক আর ঐতরেয় উপনিষদ 3/11 নং শ্লোক এক.

4. গীতার 15/18 নং শ্লোক আর ছান্দোগ্য উপনিষদ 8/12/13 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.

5. গীতার 7/2 নং শ্লোক আর মুন্ডক উপনিষদ 1/3 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.

6. গীতার 10/২ নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ 6 / 7-8 নং শ্লোক একই.

7. গীতার 2/20 নং শ্লোক আর কঠোপনিষদ 1/2/18 নং শ্লোক একই.

(সংক্ষিপ্ত)

(C)Nilardhitaa Sharma

Share:

জ্ঞান-সঙ্কলিণী তন্ত্র হইতে দেবাদিদেব মহাদেব ও জগৎ জননী মাতার কথোকপোথন।

দেবী বললেন – হে দেব শক্তি কে? এবং শিব কে? তা আগে আমাকে বলুন তারপর জ্ঞানের বিষয়ে বলবেন।

মহাদেব বললেন – হে দেবী চিত্ত যখন অস্থির তখন তাতে শক্তি অবস্থান করেন এবং চিত্ত যখন স্থির হয় তখন তাতে শিব অবস্থান করেন। চিত্ত স্থির হলে জীব দেহ ধারণ করেই সিদ্ধি বা মোক্ষ লাভ করে থাকে।

দেবী জিজ্ঞেস করলেন – শরীরের কোন স্থানে তিন প্রকারের শক্তি , ছয় প্রকারের চক্র, একুশ টি ব্রহ্মাণ্ড ও সাত প্রকারের পাতাল অবস্থিত আছে তা আমাকে বলুন।

মহাদেব বললেন- উর্দ্ধশক্তি কণ্ঠে, অধোশক্তি গুহ্যদেশে এবং মধ্য-শক্তি নাভিতে অবস্থিত। আর যিনি এই তিন শক্তির বাইরে তাকেই নিরঞ্জন ব্রহ্ম বলে। গুহ্য চক্রকে আধার, লিঙ্গ-চক্রকে স্বাধিষ্ঠান, নাভি-চক্রকে মনিপুর, হৃদয়-চক্রকে অনাহত, কণ্ঠ-চক্রকে বিশুদ্ধ এবং মস্তক-চক্রকে সহস্রদল বলে। যিনি এই ছয় চক্রকে ভেদ করতে পারেন তিনি চক্রাতীত ও নমস্য ব্যক্তি। শরীরের উর্দ্ধ দিক হল ব্রহ্মলোক। এবং শরীরের নীচের দিক হল পাতাল লোক। এই শরীর বৃক্ষের মত কিন্তু এর উর্দ্ধদিক হল সেই বৃক্ষের মূল স্বরূপ এবং নিম্নদিক হল সেই বৃক্ষের শাখা স্বরূপ।

দেবী বললেন – হে শিব, হে শঙ্কর, হে ঈশান, হে পরমেশ্বর আমাকে বলুন এই দেহের মধ্যে কি ভাবে দশ প্রকার বায়ু অবস্থিত এবং যে দশটি দরজা আছে সেগুলি কি কি ?

মহাদেব বললেন – হৃদয়ে প্রাণবায়ু, গুহ্যদেশে অপাণবায়ু, নাভিদেশে সমান বায়ু, কণ্ঠে উদানবায়ু, দেহের ত্বকে ও সারা দেহ জুড়ে ব্যান বায়ু অবস্থিত। নাগ বায়ু উর্দ্ধপান হতে আগত এবং কূর্ম্মবায়ু তীর্থ দেশে আশ্রিত। কৃকর বায়ু মানসিক ক্ষোভে, দেবদত্ত বায়ু হাই তুললে এবং ধনঞ্জয় বায়ু গভীর চিৎকার করলে নিবেশিত হয়ে সাম্য রক্ষা করে। এই দশ প্রকার বায়ু নিরালম্ব (অবলম্বন শূন্য) এবং যোগীগণের যোগ সম্মত। আমাদের শরীরের নবদ্বার প্রত্যক্ষ করা যায় এগুলি হল দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি নাসারন্ধ্র, মুখ, গুহ্য ও লিঙ্গ এবং দশম দ্বার হল মন।

দেবী বললেন – সারা শরীর জুড়ে যে নাড়ী অবস্থিত তা কয় ভাগে বিভক্ত? কুণ্ডলিনী শক্তি ও তা থেকে উৎপন্ন যে দশটি নাড়ী সে সম্বন্ধে আমাকে বলুন।

মহাদেব বললেন – ঈড়া, পিঙ্গলা এবং সুষুম্না এই তিনটি নাড়ী উর্দ্ধগামিনী; গান্ধারী, হস্তি জিহ্বা ও প্রসবা এই তিনটি নাড়ী দেহের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত আছে। শরীরের দক্ষিণ অঙ্গে অলম্বুষা ও যশা এই দুটি ও বাম অঙ্গে কুহু ও শঙ্খিনী এই দুটি নাড়ী ব্যবস্থিত। এই দশ প্রকার নাড়ী হতেই শরীরে নানা নাড়ী উৎপন্ন হয়েছে এবং বাহাত্তর হাজার প্রসূতিকা নাড়ী শরীরের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। যে যোগী এই সমস্ত নাড়ী গুলিকে জানেন তিনি যোগ লক্ষণ যুক্ত হয়ে যান এবং জ্ঞাননাড়ী হতেই যোগীগণ সিদ্ধিলাভ করে থাকেন।

দেবী বললেন – হে ভূতনাথ, হে মহাদেব, হে পরমেশ্বর তিন দেবতার সম্বন্ধে আমাকে বলুন তদের তিন প্রকার গুণ ও ভাব কি কি?

মহাদেব বললেন – রজো ভাবে ব্রহ্মা, সত্ত্ব ভাবে বিষ্ণু ও ক্রোধ ভাবে রুদ্র অবস্থিত আছেন। এই হল তিন দেবতা, এই হল তিন প্রকার গুণ। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এই তিন দেবতার মূর্ত্তি একই, যার মনে এই তিন দেবতার পৃথক পৃথক ভাব পরিকল্পিত হয় তার মুক্তি কখনোই হয় না। দেহের মধ্যে ব্রহ্মা বীর্য্যরূপে, বিষ্ণু বায়ু রূপে ও রুদ্র মন রূপে অবস্থিত আছেন, এই তিন দেবতা ও এই তিন গুণ। দয়া ভাবে ব্রহ্মা, শুদ্ধ ভাবে বিষ্ণু ও অগ্নি ভাবে রুদ্র অবস্থান করে এই তিন দেবতা, এই তিন গুন। এই জগৎ চরাচর সকল কিছুই সেই সেই এক পরমব্রহ্ম থেকেই উৎপন্ন হয়েছে, যার মধ্যে এই জগৎ সম্বন্ধে নানা ভাবের সৃষ্টি হয় তার মুক্তি কখনই হয় না। আমিই সৃষ্টি, আমিই সময়, আমি ব্রহ্মা, আমি হরি, আমি রুদ্র, আমি শূন্য, আমি সর্বব্যাপী ও আমিই নিরঞ্জন ব্রহ্ম। আমি সর্বময়, আমি নিষ্কাম, আমার উপমা আকাশ, শুদ্ধ স্বভাব ও নির্ম্মল ব্রহ্ম স্বরূপ মনও আমি, এর মধ্যে কোন সংশয় নেই। যে বীর জিতেন্দ্রিয়, ব্রহ্মচারী, সুপণ্ডিত, সত্যবাদী, দানশীল, অন্য ব্যাক্তির হিতে রত (পরোপকারী) তাকেই ভক্ত বলে। ব্রহ্মচর্য তপস্যার মূল এবং দয়া ধর্মের মূল তাই যত্ন সহকারে দয়া ও ব্রহ্মচর্যের আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত।

দেবী বললেন – হে যোগেশ্বর, হে জগন্নাথ, হে উমাপ্রাণবল্লভ, বেদ, সন্ধ্যা, তপস্যা, ধ্যান, হোম, কর্ম ও কুল কি তা আমাকে বলুন?

মহাদেব বললেন – হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ বা একশ বাজপেয় যজ্ঞের যে পুণ্যফল তা ব্রহ্মজ্ঞানের পুণ্যফলের ষোলকলার এক কলারও সমান নয়। সব সময়ে শুচি হয়ে সকল পুণ্যতীর্থে ভ্রমণ করে যে পুণ্যফল তা ব্রহ্মজ্ঞানের পুণ্যফলের ষোলকলার এক কলারও সমান নয়। না বন্ধু, না পুত্র, না পিতা, না সখা, না স্বামী কাউকেই সেই গুরুর সাথে তুলনা করা যায় না যে সেই পরম পদ দেখিয়ে দিতে পারেন। 
না বিদ্যা, না তীর্থ, না দেবতা কেউ সেই গুরুর সাথে তুলনীয় নয় যে সেই পরম পদ দেখিয়ে দিতে পারেন। এবং সেই পরম পদ পাওয়ার জন্য গুরু শিষ্যকে যে একাক্ষর মন্ত্র নিবেদন করেন সারা পৃথিবীতে এমন কোন দ্রব্যই নেই যার দ্বারা গুরুর সেই ঋণ শিষ্য শোধ করতে পারে।

 যাকে তাকে এই সুগোপনীয় ব্রহ্মজ্ঞান দেওয়া যায় না কেবলমাত্র সদগুরু(?) তার যে কোন ভক্ত শিষ্যকেই এই ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করবেন। জ্ঞানী মাত্রেই মন্ত্র, পূজা, তপ, ধ্যান, হোম, জপ, বলিক্রিয়া ও সন্ন্যাস আদি সকল প্রকার লৌকিক কাজ পরিত্যাগ করবেন। সংসর্গেই (সঙ্গগুণ) সকল প্রকার দোষ ও নিঃসঙ্গ(একাকী) থাকলেই সকল প্রকার গুণের উৎপত্তি হয়ে থাকে তাই সব রকমের চেষ্টা দ্বারা সব রকমের সঙ্গ পরিত্যাগ করবে। অকার সত্ত্বগুণ, উকার রজোগুণ এবং মকার তমোগুণ এই তিন গুনের আধারই প্রকৃতি। অক্ষরই প্রকৃতি এবং অক্ষরই স্বয়ং ঈশ্বর (পুরুষ)। প্রকৃতি এই পুরুষ থেকেই এসেছেন এবং সত্ত্ব, রজ:, তম: এই তিন গুনের দ্বারা বদ্ধ হয়েছেন। 

সেই মায়া স্বরূপ প্রকৃতি পালন, সৃষ্টি, সংহার এই তিন শক্তিবিশিষ্ট এবং সেই মায়াই অবিদ্যা, মোহিনী, শব্দরূপা ও যশস্বিনী হয়েছেন। অকার ঋকবেদ, উকার যজুর্বেদ ও মকার সাম বেদ এই তিনটি মিলিত হয়েই অথর্ব্ববেদ হয়েছে। ওঁকার প্লুত স্বর এবং একে ত্রিনাদও বলা হয়ে থাকে। অকার ভূলোক, উকার ভুবর্লোক ও ব্যঞ্জন সহ মকার স্বর্গলোক এবং এই তিন অক্ষরেই আত্মা বিশেষ ভাবে অবস্থিত থাকে। অকার পৃথিবী এবং হলুদ বর্ণের। উকার অন্তরীক্ষ এবং বিদ্যুৎ বর্ণ সংযুক্ত এবং মকার স্বর্গ এবং শুক্ল বর্ণ সংযুক্ত। এবং এই সকল বর্ণ সংযুক্ত একাক্ষর প্রণব ওঁকারই একমাত্র নিশ্চিত ব্রহ্ম। আসন করে এবং চিন্তাশূন্য ভাবে প্রতিদিন বসবে কিন্তু খেয়াল রাখবে ঘুমিয়ে না পড় এই ভাবে প্রতিদিন বসলেই যোগী হওয়া যায় এটাই শিবের কথা এর অন্যথা নেই। যে ব্যাক্তি প্রতিদিন এই ব্রহ্মজ্ঞানের কথা পাঠ বা শ্রবণ করে সে ব্যাক্তি সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ আত্মা হয়ে শিবলোক প্রাপ্ত হয়।

দেবী বললেন – স্থূল লক্ষণ কি, কি ভাবে মনের বিলয় ঘটে থাকে স্থূল ও সূক্ষ্মের লক্ষণ স্বরূপ যে পরমার্থ নির্বাণ তা কি?

মহাদেব বললেন- যখন জ্ঞান হয় তখন অন্ধকার স্বরূপ পাপ আর বিদ্যমান থাকে না। তখনই মনের বিলয় ঘটে থাকে। এবং যখন জ্ঞান জন্মায় তখন পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ এই পঞ্চভূত হতে সৃষ্ট যে দেহ তা স্থুলরূপে অবস্থিত করে আর জ্ঞান লাভ করলে এর যে অন্যথা অবস্থান তাই সূক্ষ্মরূপে অবস্থিত থাকে।

- ইতি জ্ঞান-সঙ্কলিণী তন্ত্র

(C)এস.এম পারিয়েল কুমার
Share:

নারদের জীবন চরিত

নারদ হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে- ব্রহ্মার মানসপুত্র। ইনি ত্রিকালজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও তপস্বী। নারদ শব্দের অর্থ জল। ইনি সবসময় তর্পণের জন্য জলদান করতেন বলে এঁর নাম হয় নারদ।

ভগবত মতে- ইনি জনৈক ব্রাহ্মণের এক দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি তাঁর মায়ের আদেশে সবসময় যোগীদের সেবা করতেন এবং এই যোগীদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে ধর্মপরায়ণ হয়ে উঠেন। এই সময় সাপের কামড়ে তাঁর মায়ের মৃত্যু ঘটে। এরপর ইনি তপস্যার জন্য বনে যান। ইনি মাত্র একবার ঈশ্বরের দর্শন লাভ করতে সক্ষম হন। ঈশ্বরকে পাবার জন্য আকুল চেষ্টা করেও ঈশ্বরকে ইনি দ্বিতীয় বার দর্শন করতে পারলেন না। এরপর ইনি বিভিন্ন সাধুদের সেবা করে তাঁর বুদ্ধিকে দৃঢ় করেন এবং ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থেকেই পৃথিবী ভ্রমণ করতে থাকেন। এই ভ্রমণের মধ্য দিয়েই ইনি ঈশ্বরে লীন হয়ে যান।


এরপর কল্প শেষে বিষ্ণু যখন সমুদ্রের জলে শায়িত ছিলেন, তখন তাঁর নিঃশ্বাস যোগে নারদ বিষ্ণুর অন্তরে প্রবেশ করেন। বিষ্ণু তাঁর নিদ্রা ত্যাগ করে যখন সৃষ্টির ইচ্ছা করেন তখন তাঁর ইন্দ্রিয় থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয় এবং ব্রহ্মার মন থেকে নারদ আবির্ভূত হন। ইনি সেই থেকে দেবদত্ত বীণায় হরি গান করে সর্বত্র ভ্রমণ করতে থাকেন।


ব্রহ্মাবৈবর্ত পুরাণের মতে- এঁর জন্ম হয়ে ছিল ব্রহ্মার কণ্ঠ থেকে। প্রথমে ব্রহ্মা তাঁকে সৃষ্টির ভার দেন। সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত থাকলে ঈশ্বর চিন্তা বিঘ্নিত হবে বিবেচনা করে ইনি ব্রহ্মার আদেশ মানতে রাজী হলেন না। ফলে ব্রহ্মা তাঁকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, নারদকে গন্ধমাদন পর্বতে গন্ধর্বযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হবে। যথা সময়ে ইনি গন্ধর্বযোনিতে জন্মগ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নাম ছিল উপবর্হণ। এই জন্মে ইনি চিত্ররথের ৫০টি কন্যাকে বিবাহ করেন। এর পরে ইনি এক আসরে রম্ভার নাচ দেখে উত্তেজিত হলে, তাঁর বীর্যপাত হয়। এতে ব্রহ্মা আরও ক্রুদ্ধ হয়ে- তাঁকে মানুষ হয়ে জন্মানোর অভিশাপ দেন। ব্রহ্মার এই অভিশাপে কলাবতী নামক এক নারীর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণরা নারদকে ব্রহ্মার পুত্র জেনে তাঁকে বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত করেন। এরপর তিনি বিষ্ণুর ধ্যান করতে করতে ব্রহ্মে লীন হয়ে যান।


কয়েক কল্প পরে ব্রহ্মা পুনরায় সৃষ্টি আরম্ভ করলে আবার ইনি জন্মগ্রহণ করেন। এইবার ইনি বীণা যোগে সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলকে মোহিত করা শুরু করেন। পুরাণ মতে- নারদ সর্বদাই নানা রাগ-রাগিণী যুক্ত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কিন্তু সবসময় তাঁর সঙ্গীতে কিছু না কিছু ত্রুটি থেকে যেতো। কিন্তু নারদ এই ত্রুটি নিজে বুঝতে পারতেন না, সেই কারণে নারদ তাঁর নিজের গান নিয়ে খুব গর্ব করতেন। নারদের এই গর্বকে খর্ব করার জন্য একবার রাগ-রাগিণীরা বিকলাঙ্গ নর-নারীর রূপ গ্রহণ করে নারদের যাত্রা পথে উপস্থিত হলেন। নারদ এই বিষয় অবগত ছিলেন না বলে- ইনি উক্ত বিকলাঙ্গ নারী-পুরুষরূপী রাগ-রাগিণীকে তাঁদেরকে বিকলাঙ্গের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।

 তখন তাঁরা বললেন যে, তাঁরা নারদের বিকৃত সঙ্গীতের রূপ। নারদ এই কথা শুনে ব্যাকুল হয়ে, তাঁদেরকে প্রকৃষ্টরূপে সঙ্গীত পরিবেশনের উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তাঁরা বললেন যে, মহাদেবের গান শুনলে তাঁদের বিকলাঙ্গতা দূর হবে। এরপর নারদ মহাদেবের কাছে সঙ্গীত শোনার আবেদন জানালে- মহাদেব জানালেন যে, প্রকৃষ্ট শ্রোতা ছাড়া তিনি গান শোনাবেন না। পরে নারদ মহাদেবের পরামর্শ অনুসারে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু-কে অনুরোধ করে আসরে নিয়ে আসেন। মহাদেবের গান শোনার পর রাগ-রাগিণীদের বিকলাঙ্গতা দূর হয়। এই সঙ্গীতের মর্ম ব্রহ্মা বুঝতে পারলেন না। কিন্তু বিষ্ণু কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে ইনি আংশিক দ্রবীভূত হন। 

বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশ ব্রহ্মা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশই গঙ্গা নামে খ্যাত হয়। নারদের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করে, বিষ্ণু উলুকেশ্বর নামক এক গন্ধর্বের কাছে তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য পাঠান।

তাঁকে বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। ইনি কৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত পূর্বেই কংসকে জানিয়েছিলেন, ধ্রুবের তপস্যায় মন্ত্রদাতা ছিলেন, মহাদেব-পার্বতীর বিবাহের ঘটক ছিলেন, দক্ষের অহঙ্কার নাশে ইনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। রাময়ণের মূল কাহিনী তিনি বাল্মীকিকে শুনিয়েছিলেন। পরে এই কাহিনী অবলম্বনে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন। এছাড়া ইনি দূত হিসাবেও বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইনি কথা গোপন করে রাখতে পারতেন না। কখনো কখনো অবিবেচকের মতো কথা বলে, বিপর্যয় ডেকে আনতেন। কংসের কাছে কৃষ্ণের কাছে জন্মগ্রহণ এবং কৃষ্ণকর্তৃক কংসবধের কথা বলেছিলেন। বিন্ধ্যপর্বতের কাছে সুমেরুর গুণকীর্তন করে, পৃথিবী বিপর্যস্ত করেন। পরে এই বিপর্যয় থেকে অগস্ত্য মুনি পৃথিবী রক্ষা করেন।

(C) Sk Basak
Share:

ত্রিসন্ধ্যা বা নিত্য কর্ম করার নিয়ম??


১। সূর্যোদয়ের কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে। (একে বলে ব্রাহ্ম মুহুর্তে উঠা) ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা গুরু স্মরণ করে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র এবং যাদের দীক্ষা বা (মন্ত্র) হয়নি তারা ঈশ্বরের যে কোন নাম জপ করবেন কমপক্ষে ১০৮ বার করে যতবার বেশি করা যায় জপ করবেন ও ঈশ্বরের স্মরণ ও মনন করবেন। এটা হল ১ম (সন্ধ্যা)। এটা সূর্য উঠার আধ ঘণ্টা পর পর্যন্ত চলতে পারে। ঈশ্বরের যে কোন নামে তাঁকে ডাকতে হবে একেই বলে জপ। আর তাঁর রূপকে চিন্তা করাকেই বলে ধ্যান।

২। এভাবে স্নানের পর দুপুরে বা তার একটু আগে পরে একইভাবে কমপক্ষে ১০৮ বার করে যতবার পারবেন জপ করবেন। এভাবে ঈশ্বরের নাম করা ও তাঁর স্মরণ করা হল ২য় সন্ধ্যা।

৩। এভাবে সূর্যাস্তের অর্ধ ঘণ্টা পর থেকে শোবার আগে যে কোন সময়, তবে সন্ধ্যা আরতির সময় করা বেশী উত্তম। একই ভাবে ১০৮ বা অধিক বার তাঁর নাম জপ ও তাঁকে স্মরণ করতে হবে। এটি হল ৩য় সন্ধ্যা। এভাবে ত্রিসন্ধ্যা করা একান্ত কর্তব্য (এছাড়াও শোবার সময় উঠার সময় হাই তোলার সময়, হাঁচি, কাশিতে সর্বদা তাঁর নাম করতে হয়)। মনে রাখতে হবে ঈশ্বরকে মহিলা, পুরুষ, বৃদ্ধ, বনিতা, শরীরের যে কোন অবস্থায় যে কোন কালে, যে কোন স্থানে তাঁর নাম মনে মনে করবেন।

কারণঃ

শ্রীমদ্ভাগবত গীতার ৮/৫ শ্লোকে আছে-

অন্তকালে চ মামেব স্মরণ মুক্তা কলেবরম্ য়ঃ
 প্রয়াতি স মদ্ভাবং য়াতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ।।

অর্থাৎ মৃত্যুকালে বা দেহত্যাগকালে যে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বা তাঁর নাম করে সে আমার ভাব অর্থাৎ ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হয় বা ঈশ্বর লাভ করে। মৃত্যু মানুষকে যে কোন সময় গ্রাস করে, বলে কয়ে আসে না। তাই যে কোন স্থানে দেহের যে কোন অবস্থায় মন্দিরে-শৌচালয়ে যে কোন স্থানে তাঁর নাম করা কর্তব্য। তাই সর্বদা এমনকি শৌচ কালেও ঈশ্বরকে মনে মনে ডাকা (জপ) স্মরণ (ধ্যান) করা যায়। সুতরাং যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা তার গুরু নির্ধারিত ইষ্ট মন্ত্র জপ করবেন। যাদের দীক্ষা হয়নি তবুও তারা ঈশ্বরের যে কোন নামে জপ করতে পারে যেমন- ওঁ

(অউম্), ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, রাম, কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, হরি নারায়ণ, ইত্যাদি যে কোন নামে ডাকবেন। সঙ্গে গায়ত্রী মন্ত্র জানা থাকলে সেটি পারলে জপ করা যায়।

গায়ত্রী মন্ত্রঃ

ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্ বরেণ্যং ভর্গদেবস্য
 ধীমহি ধিয়ো ইয়েনঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।

গায়ত্রীর অর্থঃ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ অর্থ- স্বর্গ, মর্ত্য, অন্তরিক্ষ ব্রহ্মাণ্ড যাঁর থেকে উৎপন্ন হয়েছে সেই জ্যোতির্ময় পরমাত্মার ধ্যান করি, আমাদের বুদ্ধি (মতি পরমাত্মার দিকে পরিচালিতহউক।

সর্বদা জানবেনঃ পূজার চেয়ে নামজপ বা নাম করা বড় তাঁর চেয়ে ঈশ্বরের ধ্যান করা আরো বড়। তাই জপ, ধ্যান অবশ্যই কর্তব্য। তবে বিশেষ দিনে পূজা করা কর্তব্য। জপ ধ্যান সর্বদা কর্তব্য। তাছাড়াও শয়নকালে বা উঠার সময়, হাঁচি, কাশি, হাইতোলা যে কোন সময় যে কোন কর্মের শুরুতে ও শেষে তাঁর নাম করা কর্তব্য। যেমন- গা মোড়াবার সময় রাম রাম, হরিবোল, হরে রাম, হর

(C) Sujit Kumar Pandey 
Share:

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাঃ পর্ব - ১১

আমরা সকলেই ভারতের অধঃপতন সম্বন্ধে শুনিয়া থাকি। এককালে আমিও ইহা বিশ্বাস করিতাম। কিন্তু আজ অভিজ্ঞতার দৃঢ়ভূমিতে দাঁড়াইয়া, সংস্কারমুক্ত দৃষ্টি লইয়া সর্বোপরি দেশের সংস্পর্শে আসিয়া উহাদের অতিরঞ্জিত চিত্রসমূহের বাস্তবরূপ দেখিয়া সবিনয়ে স্বীকার করিতেছি, আমার ভুল হইয়াছিল। হে পবিত্র আর্যভূমি, তোমার তো কখনও অবনতি হয় নাই। কত রাজদণ্ড চূর্ণ হইয়া দূরে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে, কত শক্তির দণ্ড এক হাত হইতে অন্য হাতে গিয়াছে কিন্তু ভারতবর্ষে রাজা-রাজসভা অতি অল্প লোককেই প্রভাবিত করিয়াছে। উচ্চতম হইতে নিম্নতম শ্রেণী অবধি বিশাল জনসমষ্টি আপন অনিবার্য গতিপথে ছুটিয়া চলিয়াছে, জাতীয় জীবনস্রোত কখনও মৃদু অর্ধচেতনভাবে, কখনও প্রবল জাগ্রতভাবে প্রবাহিত হইয়াছে। শত শতাব্দীর সমুজ্জ্বল শোভাযাত্রার সম্মুখে আমি স্তম্ভিত বিস্ময়ে দণ্ডায়মান। সে শোভাযাত্রার কোন কোনও অংশে আলোকরেখা স্তিমিতপ্রায়, পরক্ষণে দ্বিগুণ তেজে ভাস্বর, আর উহার মাঝখানে আমার দেশমাতৃকা রানীর মতো পদবিক্ষেপে পশুমানবকে দেবমানবে রূপান্তরিত করিবার জন্য মহিমময় ভবিষ্যতের অভিমুখে অগ্রসর হইতেছেন; স্বর্গ বা মর্তের কোন শক্তির সাধ্য নাই—এ জয়যাত্রার গতিরোধ করে।

হে ভ্রাতৃবৃন্দ, সত্যই মহিমময় ভবিষ্যৎ! প্রাচীন উপনিষদের যুগ হইতে আমরা পৃথিবীর সমক্ষে স্পর্ধাপূর্বক এই আদর্শ প্রচার করিয়াছেঃ ‘ন প্রজয়া ন ধনেন ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ’—পারে। জাতির পর জাতি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হইয়াছে এবং বাসনার জগতে থাকিয়া জগৎ-রহস্য সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াছে। তাহারা সকলেই ব্যর্থ হইয়াছে, প্রাচীন জাতিসমূহ ক্ষমতা ও অর্থগৃধ্নুতার ফলে জাত অসাধুতা ও দুর্দশার চাপে বিলুপ্ত হইয়াছে—নূতন জাতিসমূহ পতনোন্মুখ । শান্তি অথবা যুদ্ধ, সহনশীলতা অথবা অসহিষ্ণুতা, সততা অথবা খলতা, বুদ্ধিবল অথবা বাহুবল, আধ্যাত্মিকতা অথবা ঐহিকতা—এগুলির মধ্যে কোন্‌টির জয় হইবে, সে প্রশ্নের মীমাংসা এখনও বাকি।

বহু পূর্বে আমরা এ-সমস্যার সমাধান করিয়াছি, সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়া সেই সমাধান অবলম্বন করিয়াই চলিয়াছি, শেষ অবধি ইহাই ধরিয়া রাখিতে চাই। আমাদর সমাধান—ত্যাগ, অপার্থিবতা।

সমগ্র মানবজাতির আধ্যাত্মিক রূপান্তর—ইহাই ভারতীয় জীবন-সাধনার মূলমন্ত্র, ভারতের চিরন্তন সঙ্গীতের মূল সুর, ভারতীয় সত্তার মেরুদণ্ড-স্বরূপ, ভারতীয়তার ভিত্তি, ভারতবর্ষের সর্বপ্রধান প্রেরণা ও বাণী। তাতার, তুর্কী, মোগল, ইংরেজ—কাহারও শাসন কালেই ভারতের জীবনসাধনা এই আদর্শ হইতে কখনও বিচ্যুত হয় নাই।

ভারতের ইতিহাসে কেহ এমন একটি যুগ দেখাইয়া দিন দেখি, যে-যুগে সমগ্র জগৎকে আধ্যাত্মিকতা দ্বারা পরিচালিত করিতে পারেন, এমন মহাপুরুষের অভাব ছিল। কিন্তু ভারতের কার্যপ্রণালী আধ্যাত্মিক—সে-কাজ রণবিদ্যা বা সৈন্যবাহিনীর অভিযানের দ্বারা হইতে পারে না। ভারতের প্রভাব চিরকাল পৃথিবীতে নিঃশব্দ শিশিরপাতের ন্যায় সকলের অলক্ষ্যে সঞ্চারিত হইয়াছে, অথচ পৃথিবীর সুন্দরতম কুসুমগুলি ফুটাইয়া তুলিয়াছে। নিজস্ব শান্ত প্রকৃতির দরুন এ-প্রভাব বিদেশে ছড়াইয়া পড়িবার উপযুক্ত সময় ও সুযোগের প্রয়োজন হইয়াছে, যদিও স্বদেশের গণ্ডিতে ইহা সর্বদাই সক্রিয় ছিল। শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, ইহার ফলে যখনই তাতার, পারসীক, গ্রীক বা আরব জাতি এদেশের সঙ্গে বহির্জগতের সংযোগ-সাধন করিয়াছে, তখনই এদেশ হইতে আধ্যাত্মিকতার প্রভাব বন্যাস্রোতের মতো সমগ্র জগৎকে প্লাবিত করিয়াছে। সেই এক ধরনেরই ঘটনা আবার আমাদের সম্মুখে দেখা দিয়াছে। ইংরেজদের জলপথ ও স্থলপথ এবং ঐ ক্ষুদ্র দ্বীপের অধিবাসীদের অসাধারণ বিকাশের ফলে পুনরায় সমগ্র জগতের সঙ্গে ভারতেরসংযোগ সাধিত হইয়াছে, এবং সেই একই ব্যাপারের সূচনা মাত্র, বৃহত্তর ঘটনাপ্রবাহ আসিতেছে।

বাণী ও রচনা-৫।৩৭৫
Share:

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাঃ পর্ব- ১০

আর্য-বাবাগণের জাঁকই কর, প্রাচীন গৌরব ঘোষণা দিনরাতই কর, আর যতই কেন তোমরা ‘ডম্‌ম্‌ম্‌’ বলে ডম্ফাই কর, তোমরা উচ্চবর্ণেরা কি বাঁচে আছ? তোমরা হচ্ছ দশ হাজার বছরের মমি!! যাদের ‘চলমান শ্মশান’ বলে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ঘৃণা করেছেন, ভারতে যা কিছু বর্তমান জীবন আছে, তা তাদেরই মধ্যে। আর 'চলমান শ্মশান' হচ্ছ তোমরা। তোমাদের বাড়ি-ঘর-দুয়ার মিউজিয়াম, তোমাদের আচার-ব্যবহার, চাল-চলন দেখলে বোধ হয় যেন ঠানদিদির মুখে গল্প শুনছি! তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আলাপ করেও ঘরে এসে মনে হয়, যেন চিত্রশালিকায় ছবি দেখে এলুম। এ মায়ার সংসারে আসল প্রহেলিকা, আসল মরু-মরীচিকা তোমরা—ভারতের উচ্চবর্ণেরা। তোমরা ভূতকাল—লুঙ্ লুঙ্ লিট্ সব এক সঙ্গে।

বর্তমানকালে তোমাদের দেখছি বলে যে বোধ হচ্ছে, ওটা অজীর্ণতাজনিত দুঃস্বপ্ন। ভবিষ্যতের তোমরা শূন্য, তোমরা ইৎ—লোপ লুপ্। স্বপ্নরাজ্যের লোক তোমরা, আর দেরি করছ কেন? ভূত-ভারত-শরীরের রক্তমাংসহীন কঙ্কালকুল তোমরা. কেন শীঘ্র শীঘ্র ধূলিতে পরিণত হয়ে বায়ুতে মিশে যাচ্ছ না?

হুঁ, তোমাদের অস্থিময় অঙ্গুলে পূর্বপুরুষদের সঞ্চিত কতকগুলি অমূল্য রত্নের অঙ্গুরীয়ক আছে, তোমাদের পূতিগন্ধ শরীরের আলিঙ্গনে পূর্বকালের অনেকগুলি রত্নপেটিকা রক্ষিত রয়েছে। এতদিন দেবার সুবিধা হয় নাই।…অবাধ বিদ্যাচর্চার দিনে উত্তরাধিকারীদের দাও, যত শীঘ্র পার দাও, আর নূতন ভারত বেরুক।

বেরুক লাঙল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে-মালা মুচি-মেথরের ঝুপড়ির মধ্য হতে। বেরুক কারখানা থেকে, হাট থেকে, বাজার থেকে। বেরুক ঝোড় জঙ্গল পাহাড় পর্বত থেকে। এরা সহস্র সহস্র বৎসর অত্যাচার সয়েছে—তাতে পেয়েছে অপূর্ব সহিষ্ণুতা। সনাতন দুঃখ ভোগ করেছে—তাতে পেয়েছে অটল জীবনীশক্তি। এরা এক মুঠো ছাতু খেয়ে দুনিয়া উলটে দিতে পারবে, আধখানা রুটি পেলে ত্রৈলোক্যে এদের তেজ ধরবে না; এরা রক্তবীজের প্রাণ-সম্পন্ন। আর পেয়েছে অদ্ভুত সদাচার-বল, যা ত্রৈলোক্যে নাই। এত শান্তি, এত প্রীতি, এত ভালবাসা, এত মুখটি চুপ করে দিনরাত খাটা এবং কার্যকালে সিংহের বিক্রম!! অতীতের কঙ্কালচয়! এই সামনে তোমার উত্তরাধিকারী ভবিষ্যৎ ভারত! ঐ তোমার রত্নপেটিকা, তোমার মাণিকের আংটি—ফেলে দাও এদের মধ্যে, যত শীঘ্র পার ফেলে দাও; আর তুমি যাও হাওয়ায় বিলীন হয়ে, অদৃশ্য হয়ে যাও, কেবল কান খাড়া রেখো; তোমার যাই বিলীন হওয়া, অমনি শুনবে কোটিজীমুতস্যন্দী ত্রৈলোক্যকম্পনকারী ভবিষ্যৎ ভারতের উদ্বোধন-ধ্বনি—‘ওয়াহ্ গুরু কি ফতে’।

-বাণী ও রচনা ৬।৮১
Share:

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনাঃ পর্ব - ০৯

কবিতার নাম ‘সখার প্রতি’। কবি- স্বামী বিবেকানন্দ। ‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ এই বিখ্যাত উক্তিটি কে না শুনেছেন। আমরা এখন তার উৎস সম্পর্কে জানব। ‘সখার প্রতি’ কবিতাটি স্বামী বিবেকানন্দের জীবন বেদ বলা চলে। কবিতাটি যখন তিনি লিখছেন তখনো তিনি বিশ্বনন্দিত বিবেকানন্দ নন। তখন তাঁর বয়সও খুব বেশী নয়। ত্রিশেরও কম। রবীন্দ্রনাথে চেয়ে বয়সে দু’বছরের ছোট স্বামী বিবেকানন্দের আয়ুষ্কালও দীর্ঘ ছিল না। মাত্র ঊনচল্লিশ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। এই স্বল্পদৈর্ঘ জীবনে যে বিপুল কাজ তিনি করে গেছেন তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা তাঁর জীবন দর্শন ও কর্মপরিধি আলোচনা করব না এখানে। আমরা নজর দেব ‘সখার প্রতি’র প্রতি।

স্বামীজির সংস্কৃত, বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় অত্যদ্ভুত দখল ছিল। জানতেন ফার্সি, উর্দুও। তাঁর পত্রাবলীর ভাষা দেখে অবাক হতে হয় যে সেই সময়ে এই রীতির ভাষা ব্যবহারের চল আদও ছিল না। শোনা যায় তাঁর ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য’ প্রকাশিত হবার পর রবীন্দ্রনাথ বিমোহিত হয়ে বলেছিলেন ভবিষ্যতের বাংলার লেখ্যরূপ এরকমই হবে! ‘বাঙালা ভাষা’ নামে স্বামী বিবেকানন্দের একটা সারগর্ভ প্রবন্ধও আছে। এখানে আপাতত সেসবের কথা আনব না। কবিতার প্রসঙ্গে আসি। রবীন্দ্র সমসাময়িক যুগে মুক্তক ছন্দের চল খুব বেশী ছিল না। কবিগুরুও অনেক পরিণত বয়সে গিয়ে মুক্ত ধারায় লিখেছেন। সবকিছু বিচার করে মুক্ত ছন্দের কবিতা নিয়ে কথা তুললে আমার যে নামটি সর্বাগ্রে মনে আসে- তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ! আমি আগে একটা আলোচনায় বলেছিলাম সংস্কৃত কাব্যে এক্রস্টিকের মত রীতিরও সুচারু প্রয়োগ ঘটান তিনি। স্বামিজির কবিতা যা আছে তা হাতে গোনা। অধিকাংশই ইংরেজী ভাষায়। বাংলা যে কয়েকটা কবিতা পাওয়া যায়- তাতে দেখা যায় তিনি ছন্দ নিয়ে স্বেচ্ছাচারী ছিলেন। আবেগের কাছে ছন্দকে তিনি জিতে যেতে দেননি। এমন ভাবা অত্যন্ত মূর্খতা হবে যে- স্বামীজী ছন্দ বুঝতেন না। তিনি সংস্কৃত কাব্যে সুপন্ডিত ছিলেন। মাইকেল মধুসূদনে বিমুগ্ধ ছিলেন। অতি অল্প বয়সে ‘সঙ্গীত-কল্পতরু’ নামের দুরূহ বইয়ের সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। যাই আলোচনায় ইচ্ছুক পাঠকদের সাথে এ নিয়ে আরও কথা বলা যাবে আপাতত আমরা ‘সখার প্রতি’ পড়ে দেখি।

সখার প্রতি
________________
আঁধারে আলোক-অনুভব, দুঃখে সুখ, রোগে স্বাস্থ্যভান;
প্রাণ-সাক্ষী শিশুর ক্রন্দন, হেথা সুখ ইচ্ছ মতিমান্?
দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলে অনিবার, পিতা পুত্রে নাহি দেয় স্থান;
'স্বার্থ' স্বার্থ সদা এই রব, হেথা কোথা শান্তির আকার?
সাক্ষাৎ নরক স্বর্গময়—কেবা পারে ছাড়িতে সংসার?
কর্ম-পাশ গলে বাঁধা যার-ক্রীতদাস বল কোথা যায়?
যোগ-ভোগ, গার্হস্থ্য-সন্ন্যাস, জপ-তপ, ধন-উপার্জন,
ব্রত ত্যাগ তপস্যা কঠোর, সব মর্ম দেখেছি এবার;
জেনেছি সুখের নাহি লেশ, শরীরধারণ বিড়ম্বন;
যত উচ্চ তোমার হৃদয়, তত দুঃখ জানিহ নিশ্চয়।
হৃদিবান্ নিঃস্বার্থ প্রেমিক! এ জগতে নাহি তব স্থান;
লৌহপিণ্ড সহে যে আঘাত, মর্মর-মূরিত তা কি সয়?
হও জড়প্রায়, অতি নীচ, মুখে মধু, অন্তরে গরল—
সত্যহীন, স্বার্থপরায়ণ, তবে পাবে এ সংসারে স্থান।
বিদ্যাহেতু কবি প্রাণপণ, অর্ধেক করেছি আয়ুক্ষয়—
প্রেমহেতু উন্মাদের মতো, প্রাণহীন ধরেছি ছায়ায়;
ধর্ম তরে করি কত মত, গঙ্গাতীর শ্মশানে আলয়,
নদীতীর পর্বতগহ্বর, ভিক্ষাশনে কত কাল যায়।
অসহায়-ছিন্নবাস ধ'রে দ্বারে দ্বারে উদরপূরণ—
ভগ্নদেহ তপস্যার ভারে, কি ধন করিনু উপার্জন?
শোন বলি মরমের কথা, জেনেছি জীবনে সত্য সার—
তরঙ্গ-আকুল ভবঘোর, এক তরী করে পারাপার—
মন্ত্র-তন্ত্র, প্রাণ-নিয়মন, মতামত, দর্শন-বিজ্ঞান,
ত্যাগ-ভোগ-বুদ্ধির বিভ্রম; 'প্রেম' 'প্রেম'-এই মাত্র ধন।
জাব ব্রহ্ম, মানব ঈশ্বর, ভূত-প্রেত-আদি দেবগণ,
পশু-পক্ষী কীট-অনুকীট-এই প্রেম হৃদয়ে সবার ।
'দেব' 'দেব'-বলো আর কেবা? কেবা বলো সবারে চালায়?
পুত্র তরে মায়ে দেয় প্রাণ, দস্যু হরে—প্রেমের প্রেরণ ।।
হয়ে বাক্য-মন-অগোচর, সুখ-দুঃখে তিনি অধিষ্ঠান,
মহাশক্তি কালী মৃত্যুরূপা, মাতৃভাবে তাঁরি আগমন।
রোগ-শোক, দারিদ্র-যাতনা, ধর্মাধর্ম, শুভাশুভ ফল,
সব ভাবে তাঁরি উপাসনা, জীবে বলো কেবা কিবা করে?
ভ্রান্ত সেই যেবা সুখ চায়, দুঃখ চায় উন্মাদ সে জন—
মৃত্যু মাঙ্গে সেও যে পাগল, অমৃতত্ব বৃথা আকিঞ্চন।
যতদূর যতদূর যাও, বুদ্ধিরথে করি আরোহণ,
এই সেই সংসার-জলধি, দুঃখ সুখ করে আবর্তন।
পক্ষহীন শোন বিহঙ্গম, এ যে নহে পথ পালাবার
বারংবার পাইছ আঘাত, কেন কর বৃথায় উদ্যম?
ছাড় বিদ্যা জপ যজ্ঞ বল, স্বার্থহীন প্রেম যে সম্বল;
দেখ, শিক্ষা দেয় পতঙ্গম-অগ্মিশিখা করি আলিঙ্গন।
রূপমুগ্ধ অন্ধ কীটাধম, প্রেমমত্ত তোমার হৃদয়;
হে প্রেমিক, স্বার্থ-মলিনতা অগ্নিকুণ্ডে কর বিসর্জন।
ভিক্ষুকের কবে বলো সুখ? কৃপাপাত্র হয়ে কিবা ফল ?
দাও আর ফিরে চাও, থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।
অনন্তের তুমি অধিকারী প্রেমসিন্ধু হৃদে বিদ্যমান,
'দাও, দাও'-সেবা ফিরে চায়, তার সিন্ধু বিন্দু হয়ে যান।
ব্রহ্ম হ'তে কীট-পরমাণু, সর্বভূতে সেই প্রেমময়,
মন প্রাণ শরীর অর্পণ কর সখে, এ সবার পায়।
বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।