১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

মহামুনি ব্যাসদেব সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানুন


                                                     ব্যাসদেব কে? 
                                              কি তার জন্ম বৃত্তান্ত?
              কিভাবে ব্যাসদেব বেদগ্রন্থ ও আটারো পুরাণ রচনা করলো কি তার পূর্ণ ইতিহাস ?
              সনাতন ধর্মের গ্রন্থ ও পুরাণগুলো গদ্য আকারে না হয়ে কেন শ্লোকে রচিত হলো?

(ব্যাসদেবের জন্ম ও তার জীবন বৃত্তান্ত পর্ব ):-মহামুনি বশিষ্ঠের পুত্র শক্তি। শক্তি যখন কল্মাষপাদের হাতে মৃত্যু বরণ করলেন, তখন তাঁর একমাত্র পুত্র পরাশর তখন মাতৃগর্ভে। জন্মের পর থেকে মাতা অদৃশ্যন্তী এবং পিতামহ ঋষি বশিষ্ঠ দেবের রক্ষণাবেক্ষেণে পরাশর ক্রমে মহাপন্ডিত হয়ে উঠলেন। একদিন পরাশর মুনি নদীপার হবেন - খেয়া নৌকা চালাচ্ছে মৎস্যগন্ধা নামে এক ধীবর-পালিত কন্যা (ধীবর একজন জেলেদের রাজা, একদিন ধীবর নদীতে মাছ ধরতে যাই আর যে মাছগুলো ধরেছিলেন তার একটি মাছের ভেতরে এক কন্যা শিশু পায় তখন ধীবর সেই মেয়েটির নাম রাখে মৎস্যগন্ধা)। তখন পরাশর মুনি বলেন মাতা আমি যমুনার ওপারে যাব আমাকে কি পার করে দিবেন? মৎস্যগন্ধা বলেন হে মুনিবর আসুন। পরাশর নৌকায় উঠে বসলেন। কিছুটা দূর যাওয়ার পরপরাশর মুনি বললেন মাতা আপনার নৌকায় মাছের গন্ধ আসছে কেন? 

তখন মৎস্যগন্ধা বললেন মুনিবর মাছের গন্ধ আমার শরীর থেকে আসছে। পরাশর জিজ্ঞাসা করলো, কিভাবে? মৎস্যগন্ধা বললেন , আমার জন্ম হয়েছিল মাছের ভেতরে আর জন্ম লগ্ন থেকে আমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ আসছে। পরাশর মুনি বললেন মাতা আপনি নদী পারে আমাকে সহায়তা করেছেন, আপনি যদি চান আপনার এই উপকারের ফলস্বরূপ আমি আপনার জন্ম লগ্ন থেকে অর্জিত করা এই মাছের গন্ধ আমার যোগ তপস্যা শক্তি তেজর্ভূষী (তেজর্ভূষী বলতে ধোঁয়া সংস্কৃত ভাষায় ধোঁয়াকে র্ভূষী বলে) দ্বারা দূর করতে পারি। মৎস্যগন্ধা তখন বললেন, আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ হবো। পরাশর মুনি বললেন,কিন্তু আপনি আমার তেজর্ভূষী ধারন করতে অক্ষম হইবেন যার ন্যায় আপনার কোলে এক পুত্র সন্তানের আবির্ভাব হবে। তখন মৎস্যগন্ধা বলেন, হে মহর্ষি আমি একজন কুমারী মেয়ে। 

পরাশরমুনি বললেন, এতে আপনার কুমারীত্বের কোনও ক্ষতি হবে না। মৎস্যগন্ধা তখন আর চিন্তানা করে বললো ঠিক আছে মহর্ষি। অতঃপর পরাশর মুনি বললেন মাতা সামনে একটি দ্বীপ দেখা যাচ্ছেঐখানে নৌকা স্থির করুন, অতঃপর মৎস্যগন্ধা যমুনার মধ্যেবর্তী সেই তীরে নৌকা স্থির করলেন। নৌকার একপারে মৎস্য গন্ধা অন্য পারে পরাশর অবস্থিত ছিলেন। তত্ক্ষণাত্ মহর্ষি পরাশর নৌকার ওপার থেকেতপস্যা শক্তি দ্বারা তেজর্ভূষী উৎপক্তি করলেন এবং পরাশরের কল্যাণে ঐ কন্যার গায়ের মৎস্যগন্ধ দূর হলো-তখন তাঁর নাম হলো পদ্মগন্ধা। কিন্তু পদ্মগন্ধার কোলে এক পুত্রের আবির্ভাব হয়, তখন পরাশর ঐ পুত্রের নামে রাখে কৃষ্ণ। যমুনার মধ্যেবর্তী এক দ্বীপে জন্ম গ্রহন করেছেন ব'লে তাঁর অপর পরিচয় হলো 'দ্বৈপায়ণ'। 

মৎস্যগন্ধা ঐ পুত্রসন্তানকে নিয়ে ধীবর রাজ গৃহে চলে যায়। পদ্মগন্ধার কোলে নবজাতক দেখে ধীবর প্রশ্ন করলেন পুত্রী তোমার কোলে এই শিশু কোথায় থেকে এলো? পদ্মগন্ধা তখন বিস্তারিত খুলে বলে, কিন্তু ধীবর রাজ বলেন পুত্রী তুমি কুমারী এই শিশু তোমার কাছে থাকলে তোমার বিবাহ অসম্ভব। তখন পদ্মগন্ধা বলল পিতা আমি আর কি করতে পারতাম? ধীবর রাজ বললো, চলো পুত্রী যার শক্তিতে এই শিশু আবির্ভূত সেই কোনও সমাধান দিবে। অতঃপর ধীবর রাজ ও পদ্মগন্ধা পরাশর মুনির আশ্রমের উদ্দেশ্য প্রস্থান করলেন। আশ্রমে গিয়ে ধীবর রাজমহর্ষি পরাশর কে বোঝালেন ও পদ্মগন্ধা বললেন, মহর্ষি আমার এই পুত্র সন্তান কে আপনার রক্ষণাবক্ষেণে রাখুন তাকে আপনার মতো একজন মহর্ষি মহাপন্ডিত হিসেবে গড়ে তুলুন। 

হে মহর্ষি আমি নিরুপায় আমার এই সন্তান আমারকাছে থাকলে আমার সতীত্ব নিয়েপ্রশ্ন উঠবে। তখন মহর্ষি পরাশর বলে দাও মাতা, ঐ পুত্র হস্তান্তর করার পর পদ্মগন্ধার নাম হয় সত্যবতী (পরবত্তী কালে হস্তিনারাজ শান্তনু এই সত্যবতীকেই বিয়ে করেছিলেন)( ব্যাসের জন্ম বৃত্তান্ত কথা সমাপ্ত )(ব্যাসদেবের জীবন বৃত্তান্ত পর্ব) :-দ্বৈপায়ণ ক্রমে ক্রমে বড় হয়ে উঠেছে কিন্তু তাঁর খেলারমতি বেশি। এ নিয়ে মহর্ষি পরাশর খুব চিন্তিত দ্বৈপায়ণকে কিভাবে পাঠ্যসূচি মনোযোগী করা যায়, এমন কি মহর্ষি বহুবার বোঝাই কিন্তু দ্বৈপায়ণ কিছুতেই বুঝতে রাজি নই। লেখাপড়ায় দ্বৈপায়ণ সম্পূর্ণ অমনোযোগী। 

দ্বৈপায়ণ যখন আটবছর বয়সী তখন একদিন মহর্ষিপরাশরের পাঠশালায় সব ছাত্ররা যখন জ্ঞান পাঠে মগ্ন তখন মহর্ষি পরাশর দেখলেন দ্বৈপায়ণ ক্রিয়াকর্মে মগ্ন,অতঃপর মহর্ষি দ্বৈপায়ণকে পাঠশালা থেকে তাড়িয়ে দিলেন। মন খারাপ করেদ্বৈপায়ণ আশ্রমের পুকুর ঘাটে গিয়ে বসেন। ঠিক সেই সময় ঐখানে আশ্রমের নারীরা পুকুর থেকে জল মাটির কলসী ভর্তি করে একটা স্থানে শান্ বাধানো(অর্থাৎ পাথরের পাকা ঘাট) ঘাটে রাখে সেখান থেকে আরেক নারী কলসী তুলে নিয়ে যায়। এভাবে (দীর্ঘদিন) দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকে। যখন নারীরা পুকুর থেকে চলে যাই তখন প্রায় বেলা শেষ, দ্বৈপায়ণ তখন হাতমুখ দৌত করার জন্য ঘাটে নামে। হঠাৎ দ্বৈপায়ণের দৃষ্টি পরে পুকুর ঘাটের উপর, তিনি দেখলেন শান্ বাধানো ঘাটের ক্ষয় হয়েছে। তখন তিনি ঐ ঘাট স্পর্শ করে দেখলেন, আর গভীর ভাবে চিন্তা করলেন সামান্য মাটির পাত্রের র্ঘষণে যদি শান্ বাধানো ঘাটের ক্ষয় হতে পারে, তাহলে পুনঃ চেষ্টায় আমার জড় বুদ্ধি দূর করে পাঠশালায় অন্য সব শিক্ষাথীর্দের মতো জ্ঞানী হতে পারবো না কেন। 

দ্বৈপায়ণ তত্ক্ষণাত্ আশ্রমে ফিরে গিয়ে জ্ঞান পাঠে যোগ দেয়। মহর্ষি পরাশর দেখে দ্বৈপায়ণ ফিরে এসে জ্ঞান পাঠে যোগ দিয়েছে। সেদিন থেকে শুরু হয় পাঠ্যক্রম আর ক্রমেশে দ্বৈপায়ণ পাঠশালায় সর্ব শ্রেষ্ঠ শিক্ষাথীর্র গৌরব অর্জন করে। পূর্ণ জ্ঞান অর্জনসমাপন করার পরে দ্বৈপায়ণকে মহর্ষি পরাশর ব্যাস উপাধি প্রদান করে। সেদিন থেকে তাঁর নাম হয় 'কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ ব্যাসদেব'। কিছুদিন পর ব্যাসদেব যোগ তপস্যায় লিপ্ত হয় এবং কঠোর তপস্যা করে। তপস্যায় ব্যাসদেব পূর্ণ রুপে আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করে এবং নিজেকে ত্বত্ত জ্ঞানেজ্ঞানান্নীত করে মহাজ্ঞানী স্বীকৃতি অর্জন করে।
(দ্বৈপায়ণ থেকে ব্যাসদেব নামে পরিচিতি পর্ব সমাপ্ত)(সনাতন ধর্মের গ্রন্থ।।।।।

(c) Sonju KarmaKar


Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।