০২ ডিসেম্বর ২০১৭

ব্রহ্মা কর্তৃক ত‌মোগুণ , র‌জোগুণ ও স‌ত্ত্বগু‌ণের কার্যা‌দির বর্ণনা - ১

" ব্রহ্মা বল‌লেন - মহ‌র্ষিগণ ! তিন প্রকার গুণ যখন সাম্যাবস্থা প্রাপ্ত হয় , তখন তা‌কে বলা হয় অব্যক্ত প্রকৃ‌তি । অব্যক্ত সবই প্রাকৃত কা‌র্যে ব্যাপক , অ‌বিনাশী এবং স্থির স্বভাব‌বি‌শিষ্ট ।

উপ‌রিউক্ত তিন গু‌ণে যখন বৈষম্য আ‌সে তখন সে‌টি পঞ্চভূ‌তের রূপ ধারণ ক‌রে এবং তার থে‌কে নবদ্বারসম্পন্ন নগর ( শরীর ) উৎপন্ন হয় । এই নগ‌রে জীবাত্মা‌কে বিষয়া‌দির দি‌কে প্রে‌রিতকারী একাদশ ই‌ন্দ্রিয় থা‌কে ।

ম‌নের দ্বারা তার অ‌ভিব্য‌ক্তি হয় । বু‌দ্ধি এই নগ‌রের প্রভু । এ‌তে যে তিন‌টি স্রোত ( চিত্তরূপ নদীর প্রবাহ ) , তা সর্বদা পূর্ণ থা‌কে । এগু‌লি পূর্ণ করার জন্য তিন‌টি গুণময় না‌ড়ি আছে । তা‌দের সত্ত্ব , রজ ও তম বলা হয় । এরা পরস্পর এ‌কে অ‌ন্যের আ‌শ্রিত এবং এ‌কে অপরের সাহা‌য্যে টি‌কে থা‌কে ।

যেখা‌নে ত‌মোগুণ বাধা পায় সেখানে র‌জোগুণ বৃ‌দ্ধি পায় , যেখা‌নে র‌জোগুণকে দমন করা হয় সেখা‌নে সত্ত্বগুণ বৃ‌দ্ধিলাভ ক‌রে । তম‌কে অন্ধকাররূপ ব‌লে জান‌তে হ‌বে । এর অপর নাম মোহ । এ‌টি অধ‌র্মের দি‌কে প্রেরণ ক‌রে এবং পাপকারী‌দের ম‌ধ্যে নিশ্চিতরূপে বিদ্যমান থা‌কে । ত‌মোগু‌ণের এই স্বরূপ অন্যান্য গু‌ণের স‌ঙ্গেও মি‌শ্রিত দেখা যায় ।

র‌জোগুণ হল প্রকৃ‌তিরূপ । এ‌টি সৃ‌ষ্টির উৎপ‌ত্তির কারণ । সমস্ত প্রাণীর ম‌ধ্যেই এই প্রবৃ‌ত্তি দেখা যায় । এর দ্বারাই দৃশ্য জগ‌তের উৎপ‌ত্তি হ‌য়ে‌ছে ।

সর্ব প্রাণী‌তে স্থিত প্রকাশ অহংকারশূন্যতা এবং শ্রদ্ধা - এগু‌লি সত্ত্বগু‌ণের স্বরূপ । সাধু ব্যক্তিরা নিরহংকা‌রের প্রশংসা করে‌ছেন । এবার আ‌মি যু‌ক্তিপূর্বক , য‌থোপযুক্তভা‌বে এই তিন গুণা‌দির কা‌র্যের যথার্থ বর্ণ‌না কর‌ছি । মন দি‌য়ে শো‌নো ।

মোহ , অজ্ঞ‌ান , ত্যাগহীনতা , কর্মা‌দির সম্ব‌ন্ধে নির্ণয় কর‌তে না পারা , নিদ্রা , অহংকার , ভয় , লোভ , শোক , শুভ ক‌র্মে দোষ দেখা , স্মরণ - শক্তির অভাব , প‌রিণাম চিন্তা না করা , না‌স্তিকতা , দুশ্চা‌রিত্রা , নি‌র্বি‌শেষতা ( ভা‌লো - মন্দ বি‌বেচনার অভাব ) , ই‌ন্দ্রি‌য়ের শৈ‌থিলা , হিংসা‌দি নিন্দনীয় দো‌ষে প্রবৃত্ত হওয়া , অকার্য‌কে কার্য এবং অজ্ঞান‌কে জ্ঞান ব‌লে ম‌নে করা , শত্রুতা , কা‌জে মন না দেওয়া , অশ্রদ্ধা , মূ‌র্খের ম‌তো চিন্তা , কু‌টিলতা , কো‌নো কিছু বোঝার ক্ষমতা না থাকা , পাপ করা , অজ্ঞান , আলস্য ইত্যা‌দির জন্য দেহের জড়তা , ভাব - ভ‌ক্তি না থাকা , অ‌জি‌তে‌ন্দ্রিয়তা এবং নীচ ক‌র্মে আসক্তি - এই সবই হল ত‌মোগু‌ণের কাজ ।

এতদ্বাতীত আরও যেসব বিষয় ইহ‌লোকে নি‌ষিদ্ধ বলা হয় , সেগু‌লিও ত‌মোগু‌ণের কার্য বলে জান‌বে । দেবতা , ব্রাহ্মণ ও বে‌দের নিন্দা করা , দান না করা , অ‌ভিমান , মোহ , ক্রোধ , অসহশীলতা এবং মাৎসর্য - এসবই তামস আচরণ । ( বি‌ধি এবং শ্রদ্ধার‌হিত ) বৃথা কার্য শুরু করা , দেশ - কাল - পাত্র বিচার না ক‌রে অশ্রদ্ধা এবং অব‌হেলাপূর্বক দান করা , দেবতা ও অ‌তি‌থি‌দের না দি‌য়ে আহার করাও তাম‌সিক কার্য ।

অ‌তিবাদ , অক্ষমা , মাৎসর্য , অ‌ভিমান এবং অশ্রদ্ধা‌কে ত‌মোগু‌ণের ফল বলে মানা হয় । জগ‌তে এইরূপ আচরণ‌বিশিষ্ট এবং ধর্ম মর্যাদা ভঙ্গকারী যেসব পাপী ব্য‌ক্তি আ‌ছে , তা‌দের সকল‌কেই ত‌মোগুণী বলা হয় । এরূপ পাপী মানুষ‌দের পরবর্তী জ‌ন্মে যে যো‌নি‌তে যাওয়া অ‌নিবার্য তার পরিচয় জানা‌চ্ছি ।

এ‌দের ম‌ধ্যে অ‌নে‌কে নরকগামী হয় , আর কিছু তির্যক যো‌নি‌তে জন্মগ্রহণ ক‌রে । স্থাবর ( বৃক্ষ - পর্বত ইত্যা‌দি ) , পশু , , মালবাহী জীব , , রাক্ষস , , সর্প , , কীট - পতঙ্গ , , পক্ষী , , অণ্ডজ প্রাণী , , চতুষ্পদ প্রাণী , , মানসিক ভারসাম্যহীন , , কালা - বোবা ইত্যা‌দি ও অনন্যা যত পাপময় রোগযুক্ত ( কুষ্ঠ ইত্যা‌দি ) মানুষ , তারা সক‌লেই ত‌মোগু‌ণে আচ্ছন্ন র‌য়ে‌ছে । নিজ কর্মানুসা‌রে উপযুক্ত এইসব দুরাচারী জীব সর্বদা দুঃখে নিম‌জ্জিত থা‌কে ।

তা‌দের চিত্তবৃ‌ত্তির প্রবাহ নিম্নগামী । তাই তা‌দের অর্বাক স্রোতা বল‌া হয় । এরা সক‌লেই ত‌মোগুণী । তম ( অবিদ্যা ) , মোহ ( অ‌স্মিতা ) , মহা‌মোহ ( রাগ , আস‌ক্তি ) , ক্রোধ নামযুক্ত তা‌মিস্র এবং মৃত্যুরূপ অন্ধতা‌মিস্র - এই পাঁচপ্রকা‌রের তামসী প্রকৃ‌তি বলা হয় । বিপ্রবরগণ ! বর্ণ , গুণ , যো‌নি এবং তত্ত্ব অনুসা‌রে আ‌মি ত‌মোগুণের সম্পূর্ণ বর্ণনা করলাম ।

যা‌দের দৃ‌ষ্টি অসার ত‌ত্ত্বে নিবদ্ধ থা‌কে - এমন কোন্ ব্য‌ক্তি এই বিষয়‌কে ভা‌লোভা‌বে বুঝ‌তে পার‌বে ? এই বিপরীত দৃ‌ষ্টিই ত‌মোগু‌ণের প‌রিচয় । ত‌মোগু‌ণের স্বরূপ ও তার কার্যা‌দির নানাপ্রকার গু‌ণের যথাবৎ বর্ণনা করা হল । যে ব্য‌ক্তি এই গুণগুলি ঠিকভা‌বে জা‌নে , সে তাম‌সিক গুণ থে‌কে সর্বদা মুক্ত থা‌কে ।
লেখকঃ Joy Shree Radha Madhav

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।