০২ ডিসেম্বর ২০১৭

ভক্তি কাকে বলে

যে কর্ম দ্বারা মনে, ঈশ্বরের প্রতি ঐকান্তিক প্রেম জন্মায় এবং ঈশ্বর ‘সর্ব ভূতময়’ এই জ্ঞানের উদয় হয়ে সকল জীবের প্রতি দয়া স্নেহ ও ভালবাসা জন্মায় তাকে-ই বলে ভক্তি।


গুরু ভক্তি অভিলাষে
থাকবি তক্তে বসে,
নাম ধরে ডাকবি ...ওরে ভোলামন,
মিলবে তোর মনের মানুষ .....যা বলি তাই শোন .......

ভগবান সর্বশক্তিমান, অন্তর্যামী, বিচারকর্তা, এই জ্ঞান উদয় হওয়াতে ভগবানের প্রতি ভয় জন্মায়, ভয় হতে ভগবানে বিশ্বাস আসে। এই বিশ্বাস ক্রমে ক্রমে অটল বিশ্বাসে পূর্ণ হলে, তখন-ই আসে ভগবানে পূর্ণ ভক্তি। এই ভক্তি ক্রমে ক্রমে অচলা ভক্তিতে পরিণত হলে তাকে বলে প্রেম। যখন ভক্তের মনে প্রেমের সঞ্চার হয় তখন ভগবানকে কাছে পাওয়ার জন্য ভক্তের মন উদগ্রীব হয়ে উঠে। ভক্তির অপর নাম --- ভালবাসা। ভালবাসা, ভক্তি, স্নেহ, প্রেম বস্তুত একই, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন নামে অভিহিত হয়ে থাকে। পরমেশ্বর ভগবানকে সাকার ভাবে শ্রদ্ধার সাথে তার সেবা পূজা অচর্না এবং ভগবানের নাম, গুণগান, শ্রবণ কীর্ত্তন, করার নাম-ই ভক্তি মার্গ বা ভক্তি যোগ। যারা ঈশ্বরকে সাকার রূপ ভেবে তার সেবা পূজা ও ভক্তি নিবেদন করে তাদের কে বলা হয় ভক্ত।

ভক্তি যোগের মাধ্যমে উপাসনায় ব্রতী হওয়া সহজ ও উত্তম পথ। ‘জীব-ঈশ্বরে’ মানব মনে সাতন্ত্র বোধের কারণে ঈশ্বরের সাথে, আমি-তুমি, তুমি-আমি এরূপ অনুভাবাত্মক জ্ঞানের উদয় হয়। যারা ভক্তি মার্গের মাধ্যমে ঈশ্বর উপাসনায় ব্রতী হয় তাদের কে বলা হয় ভক্ত। ভক্তের মনে ভক্তির অঙ্কুর হলে তখন ভগবানের নামের প্রতি শ্রদ্ধা হয় এবং নামে রুচি হয়। আর তখন-ই ভক্তের মন বলে --- তুমি ভগবান আমি ভক্ত, আমি তোমার শ্রীচরণের দাস-তুমি-ই আমার প্রভূ, তুমি সৃষ্টিকর্তা; আমি সৃষ্ট, আমি অধম অপরাধী, তুমি মহান আমার সকল অপরাধ ক্ষমা কর। মানুষ নিজেকে অপরাধী মনে করলে মনে অনুশোচনা হয়, মনে অনুশোচনা হলে, অসৎ-মিথ্যাকে ত্যাগ করা এবং সৎ ও সত্যকে গ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট হয়।

সংস্কৃত ভজ্ ধাতু হতে ভক্তি শব্দের উৎপত্তি, সংস্কৃত ভজ্ ধাতুর বাংলা অর্থ হল ভেদ জ্ঞান জীব-ঈশ্বরে মানব মনের যে অভেদ জ্ঞান তাকেই বলে অদ্বৈতবাদ; “জীব-ঈশ্বরে” মানব মনের যে স্বাতন্ত্রবোধ একেই বলে দ্বৈতবাদ। এই দ্বৈতবাদী চিন্তা ধারার কারণে ভক্তি মার্গ বা ভক্তিযোগের উৎপত্তি। জ্ঞান মার্গের চিন্তা ধারায়, ঈশ্বর নিরাকার সর্বভূতময়, জীব-ঈশ্বরে অভেদ জ্ঞান। কর্মমার্গ চিন্তা ধারায়, ঈশ্বর আমাতেই বিরাজমান (পরমাত্মা) জ্যোতিঃ স্বরূপ। এই জ্ঞান মার্গ, কর্মমার্গ বিষয়ে অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন অতি সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না, এবং ধারণায় আনতে পারে না, তাই মায়ামুগ্ধ সংসারী মানুষের জন্য ভক্তিমার্গ-ই শ্রেষ্ঠ।

লেখকঃ প্রীথিষ ঘোষ
Share:

1 Comments:

Unknown বলেছেন...

একটু সহজ ভাষায় আমায় বলবেন। ভক্তি, প্রেম, ভালোবাসা, ভক্ত, সমর্পণ কী? ভালো করে বললে আমার ঢাকা
ভালো হয়। দয়া করে বলুন।

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।