মহাভারতের কাহিনী পর্যালোচনা করলে একটি জিনিস আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, “রাজ্য ও ক্ষমতার লালসা এমনই এক বিচিত্র স্বভাব তৈরি করে, যেখানে স্নেহ,আত্মীয়-স্বজন বা বৈবাহিক সম্পর্ক- কোন কিছুরই দাম থাকে না।”
যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বিদর্ভ এর রাজা ভীষ্মক। যার মেয়ে রুক্মিণীকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণবিয়ে করে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্মিণীর এই বিয়ের মধ্য একটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করেছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি রুক্মিণীর ভালোবাসা হয়তো এখানে প্রধান প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছে কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই বিবাহের বাড়তি ফলটা ভেবেছিলো তাঁর অনুকূলে ফলবে। কিন্তু, সেটা ঘটেনি।
ভীষ্মকের মেয়ে রুক্মিণীকে বিয়ে করে শ্রীকৃষ্ণ ভেবেছিলেন, - মেয়ের জন্যই বৈবাহিক কারণেভীষ্মক শ্রীকৃষ্ণের অনুকূলে আচরণ করবে। অর্থ্যাৎ এই বিবাহের মাধ্যমে যাদব ও বিদর্ভের মধ্য একটি সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটা হয় নি।
কারণ, ভীষ্মক চেয়েছিল তাঁর মেয়ে রুক্মিণীকে নিজের অনুগত শিষ্য জরাসন্ধের সেনাপতি ‘শিশুপালে’র সাথে বিয়ে দিতে। অন্যদিকে, ভীষ্মকের ছেলে রুক্মী ছিল শিশুপালের অন্ধ সমর্থক। এই অবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুকৌশলে রুক্মিণীকে বিয়ের আগের দিন বিদর্ভ থেকে হরণ করে দ্বারকায় নিয়ে যায় এবং সেখানে রুক্মিণীর ইচ্ছায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাদের বিয়ে হয়।
বিবাহসভায় জরাসন্ধ-শিশুপালের এই অপমান ভীষ্মককে সহ্য করতে হয় এবং এই ঘটনায় ভীষ্মক আরও ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভেবেছিলেন- এই ক্ষোভ সাময়িকভাবে থাকবে এবং মেয়ের প্রতি স্নেহবশতই ভীষ্মকের কৃষ্ণ-বিরোধিতা কমে আসবে ও জরাসন্ধের সাথে ভীষ্মকের দূরত্ব বাড়বে। কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি।
একটি বিষয় এখানে স্পষ্ট যে, “মহাভারতে কুরু-পাণ্ডবের জ্ঞাতি-রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগে এতদিন ধরে মগধরাজ জরাসন্ধকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছিল, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন নিজের হাতে।”
আর সেজন্যই, যতক্ষণ না অধার্মিক জরাসন্ধকে শেষ করা যাচ্ছে; ততক্ষন যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের ফলপ্রাপ্তি অসম্ভব।
মহাভারতের সময়ে কুরুবংশ, মদ্রবংশ, দ্রুপদ, ভীষ্মক (ভোজ বংশের অধিপতি), শিশুপাল, পৌন্ড্র-বাসুদেব, সিন্ধুরাজ বৃদ্ধক্ষত্র এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম (যাদবকুল ও বৃষ্ণিবংশ) এঁরাই ছিল সবথেকে শক্তিশালী রাজা।
এদের মধ্য জরাসন্ধ ছিল ক্ষত্রিয় বিরোধী। যিনি ৮৬ জন রাজাকে বন্দী করে রেখেছিলো;১০০ জন পূর্ণ হলেই তিনি তাদের বলি দিতেন। মগধরাজ জরাসন্ধের নিজেরই ছিল বিশ অক্ষৌহিনী সৈন্য। তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে বহু রাজা উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতে পালিয়ে যায়। চেদিরাজ শিশুপাল জরাসন্ধের সেনাপতি।
সেসময় বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশের নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন; যার রাজা ছিল পৌন্ড্র-বাসুদেব (যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতই চক্রক্ষেপণ করতে পারে বলে নিজেই “বাসুদেব” উপাধি ধারণ করেছিলো)। এই পৌন্ড্র-বাসুদেব ছিল শ্রীকৃষ্ণ বিরোধী। এদের সঙ্গে যুক্ত ছিল প্রতাপশালী বীর ভীষ্মক; যার মেয়ে রুক্মিণীকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিয়ে করেছিলেন।
আমরা সকলেই জানি যে, “শান্তিস্থাপন ও ধর্মরাজ্য সংস্থাপন”- এই দুই কাজ করতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। যুদ্ধমত্ত অধার্মিক শক্তিকে ধ্বংস করে নতুনভাবে যুধিষ্ঠিরের মত শান্তিকামী ও ধার্মিক রাজাকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষে নতুন ভাবে রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আর সেজন্যই, রাজসূয় যজ্ঞের মাধ্যমে অধার্মিক জরাসন্ধকে বধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠিরের হাতে। এটাই ছিল ধর্মরাজ্য প্রবর্তনের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রথম প্রয়াস।
শ্বশুর জরাসন্ধের জোর দেখিয়ে কংসের অত্যাচার যখন চরমে উঠলো; তখন শ্রীকৃষ্ণ কংসকে বধ করেন। কংস মারা যাবার পরে মথুরাবাসী একটা বড় অত্যাচার থেকে মুক্তি পেল; কিন্তু তাঁরা এবার আরও বড় আক্রমণের মুখে পড়ে গেলেন। কংসের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুই স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়ে পিতা জরাসন্ধকে উত্তেজিত করলেন পতি হত্যাকারী শ্রীকৃষ্ণকে চরম দণ্ড দেওয়ার জন্য। কিন্তু, জরাসন্ধ বার বার মথুরা আক্রমণ করেও, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে পরাজিত করতে পারে নি।
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বিদর্ভ এর রাজা ভীষ্মক। যার মেয়ে রুক্মিণীকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণবিয়ে করে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্মিণীর এই বিয়ের মধ্য একটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করেছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি রুক্মিণীর ভালোবাসা হয়তো এখানে প্রধান প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছে কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই বিবাহের বাড়তি ফলটা ভেবেছিলো তাঁর অনুকূলে ফলবে। কিন্তু, সেটা ঘটেনি।
ভীষ্মকের মেয়ে রুক্মিণীকে বিয়ে করে শ্রীকৃষ্ণ ভেবেছিলেন, - মেয়ের জন্যই বৈবাহিক কারণেভীষ্মক শ্রীকৃষ্ণের অনুকূলে আচরণ করবে। অর্থ্যাৎ এই বিবাহের মাধ্যমে যাদব ও বিদর্ভের মধ্য একটি সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটা হয় নি।
কারণ, ভীষ্মক চেয়েছিল তাঁর মেয়ে রুক্মিণীকে নিজের অনুগত শিষ্য জরাসন্ধের সেনাপতি ‘শিশুপালে’র সাথে বিয়ে দিতে। অন্যদিকে, ভীষ্মকের ছেলে রুক্মী ছিল শিশুপালের অন্ধ সমর্থক। এই অবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুকৌশলে রুক্মিণীকে বিয়ের আগের দিন বিদর্ভ থেকে হরণ করে দ্বারকায় নিয়ে যায় এবং সেখানে রুক্মিণীর ইচ্ছায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাদের বিয়ে হয়।
বিবাহসভায় জরাসন্ধ-শিশুপালের এই অপমান ভীষ্মককে সহ্য করতে হয় এবং এই ঘটনায় ভীষ্মক আরও ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভেবেছিলেন- এই ক্ষোভ সাময়িকভাবে থাকবে এবং মেয়ের প্রতি স্নেহবশতই ভীষ্মকের কৃষ্ণ-বিরোধিতা কমে আসবে ও জরাসন্ধের সাথে ভীষ্মকের দূরত্ব বাড়বে। কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি।
একটি বিষয় এখানে স্পষ্ট যে, “মহাভারতে কুরু-পাণ্ডবের জ্ঞাতি-রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগে এতদিন ধরে মগধরাজ জরাসন্ধকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছিল, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন নিজের হাতে।”
আর সেজন্যই, যতক্ষণ না অধার্মিক জরাসন্ধকে শেষ করা যাচ্ছে; ততক্ষন যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের ফলপ্রাপ্তি অসম্ভব।
মহাভারতের সময়ে কুরুবংশ, মদ্রবংশ, দ্রুপদ, ভীষ্মক (ভোজ বংশের অধিপতি), শিশুপাল, পৌন্ড্র-বাসুদেব, সিন্ধুরাজ বৃদ্ধক্ষত্র এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম (যাদবকুল ও বৃষ্ণিবংশ) এঁরাই ছিল সবথেকে শক্তিশালী রাজা।
এদের মধ্য জরাসন্ধ ছিল ক্ষত্রিয় বিরোধী। যিনি ৮৬ জন রাজাকে বন্দী করে রেখেছিলো;১০০ জন পূর্ণ হলেই তিনি তাদের বলি দিতেন। মগধরাজ জরাসন্ধের নিজেরই ছিল বিশ অক্ষৌহিনী সৈন্য। তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে বহু রাজা উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতে পালিয়ে যায়। চেদিরাজ শিশুপাল জরাসন্ধের সেনাপতি।
সেসময় বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশের নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন; যার রাজা ছিল পৌন্ড্র-বাসুদেব (যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতই চক্রক্ষেপণ করতে পারে বলে নিজেই “বাসুদেব” উপাধি ধারণ করেছিলো)। এই পৌন্ড্র-বাসুদেব ছিল শ্রীকৃষ্ণ বিরোধী। এদের সঙ্গে যুক্ত ছিল প্রতাপশালী বীর ভীষ্মক; যার মেয়ে রুক্মিণীকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিয়ে করেছিলেন।
আমরা সকলেই জানি যে, “শান্তিস্থাপন ও ধর্মরাজ্য সংস্থাপন”- এই দুই কাজ করতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। যুদ্ধমত্ত অধার্মিক শক্তিকে ধ্বংস করে নতুনভাবে যুধিষ্ঠিরের মত শান্তিকামী ও ধার্মিক রাজাকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষে নতুন ভাবে রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আর সেজন্যই, রাজসূয় যজ্ঞের মাধ্যমে অধার্মিক জরাসন্ধকে বধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠিরের হাতে। এটাই ছিল ধর্মরাজ্য প্রবর্তনের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রথম প্রয়াস।
শ্বশুর জরাসন্ধের জোর দেখিয়ে কংসের অত্যাচার যখন চরমে উঠলো; তখন শ্রীকৃষ্ণ কংসকে বধ করেন। কংস মারা যাবার পরে মথুরাবাসী একটা বড় অত্যাচার থেকে মুক্তি পেল; কিন্তু তাঁরা এবার আরও বড় আক্রমণের মুখে পড়ে গেলেন। কংসের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুই স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়ে পিতা জরাসন্ধকে উত্তেজিত করলেন পতি হত্যাকারী শ্রীকৃষ্ণকে চরম দণ্ড দেওয়ার জন্য। কিন্তু, জরাসন্ধ বার বার মথুরা আক্রমণ করেও, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে পরাজিত করতে পারে নি।
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন