• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৭ এপ্রিল ২০২১

কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের উপর গণহত্যা নিয়ে লেখা বই "Our moon has blood clot" হতে একটি ঘটনা

 একে একে জ্বলে উঠল ২৩ টি চিতার আগুন। এদের মধ্যে ৪টি শিশু। ন'জন মহিলা। ২৩টি চিতাতেই আগুন লাগাল একজনই। চোদ্দ বছর বয়সের বিনোদ ধর। কারণ গোটা গ্রামে কাশ্মীরি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই একজনই বেঁচে গেছিল।

গ্রামের নাম ওয়াধামা। কাশ্মীরের গান্ধেরবালে অবস্হিত ছোট একটা জনপদ। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার নির্বাচনী ক্ষেত্র।১৯৯০ এর রাজ্যব্যাপী কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতদের ব্যাপক গণহত্যা, অবর্নণীয় নির্যাতন, হিন্দু মেয়েদের ধর্ষন ও লুন্ঠনের পর যে গণহারে কাশ্মীরি পন্ডিতদের নিষ্ক্রমন ঘটেছিল কাশ্মীর উপত্যকা থেকে, নিজেদের পুরুষের পর পুরুষ ধরে গড়ে তোলা কৃষ্টি, সভ্যতার, ভালবাসার, সাধনার ভূমি থেকে- তার পরেও মুষ্টিমেয় কিছু কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিত থেকে গেছিলেন ভিটে-মাটি খেতি-বাড়িকে আঁকড়ে ধরে। ওয়াধামা ছিল তেমনই একটা গ্রাম। চারটি মাত্র হিন্দু পন্ডিত পরিবারের বাস ছিল। চাষ বাস আর নিজেদের মহল্লার ছোট মন্দির। এর মধ্যেই আনাগোনা নির্বিবাদী মানুষগুলোর। তবু যেন ইসলামি খিলাফৎ গঠনের জন্য যে রক্তে ভেজা বুলডোজার চালানো হচ্ছিল কাশ্মীর জুড়ে তার পথে ছোট্ট কাঁটা হয়ে ছিল তারা।


প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাত। ২৫ শে জানুয়ারী, ১৯৯৮। গ্রামে কিছুদিন ধরেই অস্ত্রধারী লোকজনের আনাগোনা বাড়ছিল। সেদিন সন্ধ্যায় বিনোদের মা যখন রান্না চাপিয়েছিলেন, বাড়িতে ঢুকে পড়ল তেমন চারজন জেহাদী। সন্ধ্যার মৃদু আলোতেও চকচক করছিল তাদের বন্দুকের নল। বিনোদের মা'কে তারা চা বানাতে নির্দেশ দিল।চা খেয়ে তারা দরজার বাইরে গেল। হঠাৎ ভেসে এল বন্দুকের কান ফাটানো শব্দ গ্রাম থেকে। বিনোদ তাড়াতাড়ি মা'কে টেনে আনতে গেল। পারল না। পিছন থেকে গুলি এসে ফেলে দিল ওর মা'কে।বিনোদ ছাদের দিকে লাগালো দৌড়।লুকিয়ে পড়ল জমিয়ে রাখা ঘুঁটের স্তূপের পিছনে।ক্রমাগত ভেসে আসছে বন্দুকের শব্দ চারপাশ থেকে ওদের বাড়ির দিকে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মসজিদের আজানের শব্দ। সেদিন ছিল শাব-এ-কদরের রাত। রমজান মাসের যে রাতে কিনা মহম্মদের কাছে কোরানের প্রথম আয়াত এসেছিল। ততক্ষনে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়েছে ওদের একমাত্র মন্দিরটায়। কাশ্মীরের হাজার হাজার ধ্বংস হয়ে যাওয়া হিন্দু মন্দিরের তালিকায় আর একটা ছোট্ট সংযোজন। কয়েকজন অস্ত্রধারী জেহাদী উঠে এল ওপরে।খুঁজছে আর কেউ বেঁচে আছে কিনা। কোন কাফেরের আজ নিস্তার নেই। লুকিয়ে থাকা বিনোদের মুখের কাছ থেকে ঘুরে গেল তাদের বন্দুকের নল।

মাঝরাতের পর আর কোন শব্দ নেই। বিনোদ আস্তে আস্তে নেমে এল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বাড়ির উঠোন। গ্রামের বাকি সব হিন্দু পন্ডিত পরিবারের সদস্যদের ২৩টা লাশ পড়ে আছে ।হাঁ করে দাড়িয়ে দেখল বছর ১৪র ছেলেটা। বাবা, মা, কাকা, দাদা....... আশ্চর্য এক যান্ত্রিকতায় ঘর থেকে কম্বলগুলো টেনে টেনে এনে শরীরগুলো ঢেকে দিল ছেলেটা। বাইরে তখন হিমঠান্ডা, নিস্তব্ধতা। তারপর ধীর পায়ে আবার ওপরে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল ঘুঁটের স্তূপের পিছনে।

সকাল হল। আর্মি এল, পুলিশ এল। একে একে এল গ্রামবাসীরাও। মাঝখানে ২৩টা মৃতদেহের স্তূপ। ওপাশে যন্ত্রনায়, আতঙ্কে বোবা হয়ে যাওয়া এক কিশোর। চেঁচিয়ে উঠল গ্রামবাসীদের দিকে: ' এদের মধ্যে কোন হারামি যেন হাত না লাগায়'। ২৩টা চিতা জ্বালাল নিজের হাতে। তখন কাশ্মীরে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল। ফারুক আবদুল্লা আর সৈফুদ্দিন সোজের সাথে গুলমার্গের বর্ণাঢ্য জাতীয় গেমসের উদ্বোধন উপভোগ করতে এসেছিলেন। তিনি এলেন গ্রামে। দোষীদের সাজা দেবার প্রতিশ্রুতি এল যথারীতি। দিল্লীতে শরনার্থী কাশ্মীরি পন্ডিতরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তাদের ওপর নেমে এল জলকামান, লাঠি। না। কোন অপরাধী ধরা পড়েনি আজও। যেমনটা বরাবর হয়ে এসেছে কাশ্মীরে।

যে খবর হারিয়ে যায় বিস্মৃতির আড়ালে, তা কেঁদে মরে এখনও কাশ্মীরের উপত্যকায় চিনারের বনে, ঝিলামের স্রোতে। যে মানবাধিকারের বাতেলা দেওয়া বুদ্ধিজীবি, শিল্পজীবি, সংবাদজীবি ঈশরাত জাহান বা আফজাল গুরু বা বুরহান ওয়ানিদের জন্য মুখের রক্ত তুলে ফেলে, তারা কখনই তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিনারিতে তুলে আনবে না এই নিষ্পাপ হিন্দু শিশুদের রক্তাক্ত মুখের ছবি। অনাথ হয়ে যাওয়া হিন্দু শিশুদের কথা, যারা একদিন ভারতের আর পাঁচটা শিক্ষিত পরিবারের মত বড় হবার স্বপ্ন দেখেছিল।

এই পোস্টেই বা ক'জন লাইক দেবেন। কারণ পলিটিকালি কারেক্ট থাকার কিছু অসাম্প্রদায়িক pre defined মাপকাঠি তো নির্ধারন করাই আছে এই দেশে। বিনোদের ঠাঁই হয় জম্মুর বি এস এফ ক্যাম্পে। চিরকালের মত পিছনে পড়ে থাকে চোদ্দ পুরুষের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম। রূপকথার দেশের মত যার সৌন্দর্য। সোনায় লেখা যে মাটির ইতিহাস।কণিষ্কের কাশ্মীর, ললিতাদিত্যের কাশ্মীর, জয়াপীড়ের কাশ্মীর।সেই কাশ্মীরি হিন্দুরা কিনা কাঁদছে নিদারুণ নিপীড়ন, নির্যাতনে। কারণ ইতিহাস বলে কাশ্মীরি হিন্দুরা কখনও অস্ত্র ধরতে শেখেনি। তাই তাতার লুঠেরা কাদির খাঁর কবলে পড়ে যে মৃত্যু ও লাঞ্ছনার পরম্পরা শুরু হয়েছিল তা যেন আজও দেখে চলেছে ডাল লেকের জল। তাই বিনোদ আর ফিরে যেতে ভরসা পায় না তাঁর গ্রামে। পড়াশুনার শেষে সরকারি চাকরির দৌলতে মাঝে মাঝে শ্রীনগরে আসতে হয় তাঁকে। কখনও কখনও ক্ষীর ভবানীর মন্দিরে গিয়ে দাঁড়ালে মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। চোখ ভরে আসে জলে। এটুকুই তার মন্দিরে গিয়ে পাওয়া। আর তো কিছুই পাওয়ার নেই। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের রুগী সে জীবনের মত। যেমনটা দেশ ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে দেশ-বিদেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাশ্মীরি পন্ডিতরা। যাদের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বারবার। যেমনটা আমরা বাঙালীরা ভুলে গেছি ফেলে আসা পূর্ববঙ্গের হিন্দু গণহত্যার মর্মান্তিক স্মৃতি। ভেবেছি ভুলে যাবার প্রাণপনে চেষ্টায় ইতিহাসকে বুঝি থমকে দেওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাস জেনে রাখতে হয়, শত্রুকে চিনে রাখতে হয়। কাশ্মীরিরা ইতিহাস মনে রাখতে চায়নি। তার ফলে তাদের শুনতে হয়েছিল শেখ আবদুল্লার থেকে (মাত্র দু প্রজন্ম আগে ধর্মান্তরিত মুসলমান): রালিভ, চালিভ ইয়া গালিভ। আমাদের মত হয়ে যাও, নয় পালিয়ে যাও, নয়তো মরো।

কিন্তু শেখসাহেব ভুলে গিয়েছিলেন যে ইতিহাস পালায় না, সে তার যন্ত্রণা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। কালচক্রে সে আবার ফিরে আসে তার বদলা নিয়ে। ইতিহাস বড় বিচিত্র পথে প্রতিশোধ নেয়।

-----------

তথ্যসূত্র:

Mumbai mirror

Our moon has blood clot

দেবতাত্মা হিমালয়(প্রবোধ সান্যাল)

Exodus of Kashmiri Pandits: What happened on January 19, 26 years ago?

26 years ago on this day, Kashmiri Pandits had witnessed a hysteric, macabre night in the form of blaring threats and slogans, asking them to flee their homeland, convert or die.



Post-Curtesy by: Prithwish Ghosh

Share:

ভগবদগীতা কেন অধ্যয়ন করব ?

 ভগবদগীতা কেন অধ্যয়ন করব

======================

ভগবদগীতা আপনাকে নিমোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান প্রদান করে ------


১। সকল শোক ও উদ্বেগ থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায়? -- (ভঃগীঃ ২/২২)

২। শান্তি লাভের জন্য স্থির মন ও দিব্য বুদ্ধিমত্তা লাভের উপায় কি? -- (ভঃগীঃ ২/৬৬)

৩। কেবল ভগবৎপ্রসাদেই কেন গ্রহণ করা উচিত? -- (ভঃগীঃ ৩/৩১)

৪। কর্তব্যকর্মে নিয়োজিত থেকে মন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব কি? -- (ভঃগীঃ ৩/৪৩)

৫। কিভাবে জীবনে পূর্ণতা লাভ করা যায়? -- (ভঃগীঃ ৪/৯)

৬। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ কিভাবে অর্জন করা যায়? -- (ভঃগীঃ ৪/১১)

৭। কিভাবে সদগুরু শরণাগত হতে হয়? -- (ভঃগীঃ ৪/৩৪)

৮। পাপীরা দুঃখের সাগর অতিক্রম করবে কিভাবে? -- (ভঃগীঃ ৪/৩৬)

৯। মানুষ কেন দুঃখের ফাঁদে আটকে পড়ে? -- (ভঃগীঃ ৫/২২)

১০। শান্তির সূত্র কি? -- (ভঃগীঃ ৫/২৯)

১১। মন কার শত্রু ও কার বন্ধু? -- (ভঃগীঃ ৬/৬)

১২। মন নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা সম্ভব কি? -- (ভঃগীঃ ৬/৭)

১৩। চঞ্চল মনকে কিভাবে জয় করা যায়? -- (ভঃগীঃ ৬/৩৫)

১৪। পূর্ণ জ্ঞান কি? -- (ভঃগীঃ ৭/২)

১৫। কিভাবে মুক্তি অর্জন করা যায়? -- (ভঃগীঃ ৭/৭)

১৬। মায়াকে অতিক্রম করার গোপন রহস্য কি? -- (ভঃগীঃ ৭/১৪)

১৭। পাপ কত প্রকার? কিভাবে পাপকে দগ্ধীভূত করতে হয়? -- (ভঃগীঃ ৯/২)

১৮। আমাদের পরম লক্ষ্য কি? -- (ভঃগীঃ ৯/১৮)

১৯। মানুষ কি তার পছন্দমত গ্রহলোকে যেতে পারে? -- (ভঃগীঃ ৯/২৫)

২০। আমাদের অর্পিত দ্রব্যসমগ্রী কি ভগবান গ্রহন করেন? -- (ভঃগীঃ ৯/২৬)

২১। এই জড় জগতে সুখ লাভের উপায় কি? -- (ভঃগীঃ ৯/৩৪)

২২। মানব জীবনের পরম সিদ্ধি কি? -- (ভঃগীঃ ১০/১০)

২৩। আমাদের হৃদয়ে সঞ্চিত কলুষতা কিভাবে দূর করা যায়? -- (ভঃগীঃ ১০/১১)

২৪। পরম পুরুষোত্তম ভগবান কে? -- (ভঃগীঃ ১০/১২-১৩)

২৫। কৃষ্ণ অর্জুনের নিকট বিশ্বরূপ প্রকাশ করেছিলেন কেন? -- (ভঃগীঃ ১১/১)

২৬। ভগবদগীতার সার কথা কি, আমাদের ক্লেশের কারণ কি? -- (ভঃগীঃ ১১/৫৫)

২৭। রজো ও তমো গুণের কারণ কি? -- (ভঃগীঃ ১৪/২৬)

২৮। আমরা কি ভগবানকে দেখতে পারি, কথা বলতে পারি এবং তাঁর কথা শ্রবণ করতে পারি? -- (ভঃগীঃ ১৫/৭)

২৯। দেহত্যাগের সময় জীব তার সাথে কি নিয়ে যায়? -- (ভঃগীঃ ১৫/৮)

৩০। কিভাবে ভগবানের কাছে পৌঁছাতে হয়? -- (ভঃগীঃ ১৮/৬৬)

Post Curtesy by: Prithwish Ghosh




Share:

রুর মহিমা সম্বন্ধে একটি গল্প

 গুরুর যে বিরাট মহিমা তা বলে শেষ করা যায় না। গুরুর মহিমা সম্বন্ধে একটি গল্প বলি --

এক ভক্ত নিষ্ঠাসহকারে প্রাণ দিয়ে তাঁর গুরুকে সেবা করত। কিন্তু ভক্তের আয়ু শেষ হয়ে গেলে যমদূত তাকে নিতে আসে। ভক্ত বুঝতে পেরে অনবরত গুরুবন্দনা করতে থাকে। ভক্ত গুরুবন্দনায় রত থাকা অবস্থাতেই যমদূত তাকে যমের কাছে ধরে নিয়ে এসেছে। যম তাকে দেখে চমকে উঠলেন। তাঁর দূতকে তিনি বললেন -- “এ তুমি কী করেছ? যে গুরুবন্দনা করছে তাকে তুমি কেন আনলে?” 

এই বলে যমও তার সঙ্গে গুরুবন্দনা শুরু করে দিলেন, কারণ গুরু একজনই।


গুরুবন্দনার রহস্য হল যে একজন যদি গুরুবন্দনা করে তবে সঙ্গে সঙ্গে যারা গুরুবরণ করেছে তাদেরও গুরুবন্দনা করতে হয়। নয়তো গুরুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়।

যম খুব বিপদে পড়ে গেলেন। এদিকে লোকটির আয়ুও শেষ হয়ে গেছে, সুতরাং তাকে নিতেই হবে। আবার ওদিকে সে এমনভাবে গুরুবন্দনা করে চলেছে যে তাকে তিনি ছুঁতেও পারছেন না। আবার, যদি তাকে আয়ু দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংসারে, তাহলেও তাকে ভূত ভেবে সমাজে আত্মীয়-পরিজনেরা কেউ গ্রহণ করতে পারবে না।

নিরুপায় হয়ে তিনি তখন বিষ্ণুর কাছে গেলেন পরামর্শ নিতে এবং সাহায্য চাইতে। 

বিষ্ণু বললেন -- “আমি তো কিছুই করতে পারব না, কারণ আমিই তো জগতে গুরুবাদ রেখে এসেছি। সেটি তো তাহলে অপবাদে পরিণত হবে। আমি নিজেও তো সেই এক গুরুকেই বন্দনা করছি”।

বিষ্ণু কোন উপায় না দেখে তাঁর গুরু মহেশ্বরকে অহ্বান করলেন। মহেশ্বর বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হয়েই গুরুবন্দনা শুরু করলেন। বিষ্ণুও তাঁর গুরু মহেশ্বরকে বন্দনা করতে লাগলেন।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রবর্তিত নিয়ম সবকিছুই রয়েছে এই গল্পটির মধ্যে। এই গল্পটি সবাই মনে রাখার মত। এই নিয়মগুলি এতই তাৎপর্যপূর্ণ যে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরও ভঙ্গ করতে পারেন না।

গুরু শুধু ব্যক্তি নয় এবং নাম-রূপ বা ভাবও নয় তিনি 'বিশুদ্ধবোধের বিগ্রহ'। ভিন্ন ভিন্ন নামে এই এক গুরুকেই আমরা সকলে সেবা করে যাচ্ছি। এই গুরুকেই ইষ্ট, মা, আত্মা, ব্রহ্ম বা ভগবান বলে কেউ, আবার কেউ বলে রাম বা কৃষ্ণ। 

গুরু মানে মহৎ, প্রতিটি উন্নতি এই গুরুই করছেন। অথচ তাঁর কাছ থেকে পেয়েও সবাই তাঁকেই অবজ্ঞা করে। গুরু হলেন অখণ্ড সত্তা, শক্তি, জ্ঞান, আনন্দ ও প্রেম। এই গুরুর কাছ থেকেই সবাই সব কিছু পায়। 

ভক্ত সেজন্য কারোকে অবজ্ঞা করে না। সে নিজে সব সহ্য করে কিন্তু অপরের দোষ বা ত্রুটি দেখে না।

জয় গুরু।

Post Curtesy by: Prithwish Ghosh
Share:

সেক্যুলার ও 'সর্বধর্মসমন্বয়কারী' থেকে সাবধান

অনেকদিন আগে একটা গল্প শুনেছিলাম যে, গাছ কুঠারকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি আমাকে কাটো কেন? 

উত্তরে কুঠার বলেছিল তোমার জাতিভাই আমার 'হাতল' হয়েছে, নয়তো তোমাকে কাটার ক্ষমতা আমার নেই। 

তখন গল্প-কথাটা বুঝিনি কিন্ত এখন বুঝছি।


সনাতনধর্মের কিছু 'হিন্দু' পন্ডিত আছে যারা নিজেদের সুবিধার জন্য সনাতন শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে আর নিজেদের 'সেক্যুলার' বা 'সর্ব্বধর্মসমন্বয়কারী' বলাতে বিধর্মীরা আমাদের শাস্ত্রের ভুল ধরে। আগে এই তথাকথিত 'হিন্দু' পন্ডিতদের ধরে ঠিক করতে হবে পরে দেখা যাবে কে সনাতন ধর্মের ভুল ধরে। 

আমি সনাতন ধর্মের সকল ভাই বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি আপনারা যখন শাস্ত্র ব্যাখ্যা করবেন তা যেন শাস্ত্র-সিদ্ধান্ত ব্যতীত না হয়, কারণ আপনি যদি ভুল ব্যাখ্যা করেন তাহলে আপনার এক ভুলের জন্য কেউ নিজের জীবনকেই হয়ত বা ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে তাই সাবধান।

আসুন, 'সেক্যুলার' শব্দটি সম্পর্কে জেনে নিই।

 'সেকুলারিজম’ (Secularism) এমন একটি মতবাদ, যে মতবাদে মানবজাতির ইহজগতের কল্যাণ চিন্তার উপর গড়ে উঠবে এমন এক নৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে থাকবেনা সৃষ্টিকর্তা ও পরকাল বিশ্বাস ভিত্তিক কোন ধরনের বিবেচনা। [Oxford Dictionary]


* ‘সেকুলারিজম’ (Secularism) হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন যা সকল ধর্ম বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে। [Encyclopedia বা বিশ্বকোষ]


* ‘সেকুলারিজম’ (Secularism) এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সাধারণ শিক্ষা ও সামাজিক সংস্থা পরিচালনায় কোন ধরনের ধর্মীয় উপাদান অন্তর্ভুক্ত হবে না। [Encyclopedia বা বিশ্বকোষ]


* ‘সেকুলারিজম’ (Secularism) এমন একটি মতবাদ যা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র বলে বিবেচিত নয়। যা কোন ভাবেই কোন ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়। এটি ধর্মীয় আইন-কানুন বহির্ভূত একটি ব্যাবস্থা।[Random House Dictionary of English Language College Edition, Newyork-1968]


* ‘সেকুলারিজম’ (Secularism) এমন একটি ব্যবস্থা যার অধীনে নৈতিকতা ও শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মের উপর ভিত্তি করে হবেনা। এটি ইহজাগতিক বা পার্থিব, ধর্মীয় কিংবা আধ্যাত্মিক নয়। [The Advanced Learner’s Dictionary of Current English]


* সমাজ সংগঠন, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ধর্ম সংশ্লিষ্ট হতে পারবে না এমন বিশ্বাসের নাম হলো ‘সেকুলারিজম’ । [Oxford Advance Learner’s Dictionary]


* 'সেকুলারিজম’ (Secularism) বলতে সেই ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে মানবকল্যাণ নির্ধারিত হবে যুক্তির মাধ্যমে, ওহী বা ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে নয়। আর যুক্তি পরিক্ষিত হবে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। [Encyclopedia of Religion & Ethics]


* 'সেকুলারিজম’ (Secularism) বলতে বুঝায় নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্ম কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয় এই মতবাদ।[বাংলা একাডেমী কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত English-Bengali Dictionary]


সুতরাং ‘সেকুলারিজম’ (Secularism) আর নাস্তিকতা যে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ উপরের আলোচনায় পর এ ব্যাপারে আর কোন বিতর্কের অবকাশ নাই।


Post Curtesy: Prithwish Ghosh

Share:

শ্রী হয়গ্রীব হলেন ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অবতার।

শ্রী হয়গ্রীব হলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অবতার।তিনি হিন্দু ধর্মের জনপ্রিয় দেবতা।ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার পূজা করা হয় ।আসামের হয়গ্রীব মাধব মন্দির তার মধ্যে অন‍্যতম।তার নামে হয়গ্রীব উপনিষদ রয়েছে।

'মধু' এবং 'কৈটভ' নামের দুটি অসুর বেদের সৃষ্টির সময়ে ব্রহ্মার থেকে সেগুলি চুরি করে নেয়। ব্রহ্মা বিষ্ণুকে যোগনিদ্রা থেকে জাগিয়ে বেদ উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। তখন বিষ্ণু 'হয়গ্রীবে'র রূপ ধারণ করে রসাতলে যান এবং বেদসমূহ উদ্ধার করে এনে ব্রহ্মাকে দেন।  এর পরে বিষ্ণু উত্তর-পূর্বে এসে হয়গ্রীব রূপে শুয়ে পড়েন। মধু এবং কৈটভ ঘুরে এসে বিষ্ণুকে যুদ্ধ করতে বলে। সেই যুদ্ধে বিষ্ণু অসুর দুজনকে পরাস্ত করে প্রাণনাশ করেন।












আরেক মতে ভগবান বিষ্ণু ঔর্বঋষির তপস্যা ভঙ্গকারী জ্বরাসুর, হয়াসুর ইত্যাদি পাঁচজন অসুরকে বধ করে হয়গ্রীব মাধব নামের পর্বতে অবস্থান করে আছেন। কালিকা পুরাণ মতে, এই তীর্থস্থানের প্রতিষ্ঠাতা ঔর্বঋষি।।

দেবীভাগবত পুরাণেও এক আশ্চর্য কাহিনির সন্ধান মেলে। সূর্যের ছেলে রেবন্ত কোনো এক সময় উচ্চৈঃশ্রবা নামক ঘোড়ায় চড়ে বৈকুণ্ঠে বেড়াতে এসেছিলেন। উচ্চৈঃশ্রবা একে অশ্বরাজ, সে ও লক্ষ্মীর মতোই সমুদ্রমন্থনের সময় উদ্ভূত। ঘোড়াটিকে লক্ষ্মী নিজের ভাইয়ের মতো দেখতেন। তাই উচ্চৈঃশ্রবা বৈকুণ্ঠে আসতেই তিনি স্বামীকে ছেড়ে ঘোড়ার আদরযত্ন নিয়ে পড়লেন। ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা রেবন্তকে দেখে অবাক হলেন নারায়ণও। তিনি লক্ষ্মীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই ছেলেটি কে?” লক্ষ্মী তখন ঘোড়ার আপ্যায়নে ব্যস্ত। কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেও কথার উত্তর না পেয়ে লক্ষ্মীর উপর বেজায় খাপ্পা হয়ে উঠলেন নারায়ণ। স্ত্রীকে অভিশাপ দিয়ে বসলেন, “ঘোড়া নিয়ে এত আদিখ্যেতা যখন, তখন মর্ত্যে মাদীঘোড়া হয়ে জন্মাও গে!” যতই হোক, নারায়ণ লক্ষ্মীর স্বামী; লক্ষ্মীও নারায়ণের স্ত্রী। অভিশাপ শুনে লক্ষ্মীর খুব কষ্ট হল। নারায়ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিভাবে তিনি শাপমুক্ত হয়ে আবার বৈকুণ্ঠে ফিরতে পারবেন। নারায়ণ বললেন, মর্ত্যে গিয়ে লক্ষ্মীর নারায়ণ-তুল্য এক ছেলে হবে। তারপরই লক্ষ্মী বৈকুণ্ঠে ফিরতে পারবেন। এরপর যথারীতি মর্ত্যে মাদী ঘোড়া হয়ে জন্মালেন লক্ষ্মী। মর্ত্যে গিয়ে তিনি শিবের তপস্যা করলেন। তপস্যায় তুষ্ট হয়ে শিব বর দিতে এলে লক্ষ্মী বললেন, তার সন্তান যেন নারায়ণের ঔরসেই জন্মায়। শিবের পরামর্শে নারায়ণ হয়গ্রীব অবতার গ্রহণ করে ঘোটকীরূপিণী লক্ষ্মীকে বিয়ে করলেন। তাদের ছেলে হলে লক্ষ্মী শাপমুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠে ফিরে গেলেন।


অন‍্যমতে, ঋষি কশ‍্যপ ও দনুর পুত্র হয়গ্রীব আদ‍্যাশক্তি মহামায়ার বরে বলীয়ান হয়ে ইন্দ্রের অমরাবতী আক্রমণ করে। দেবীর বরে অন্য কোনো হয়গ্রীবই তাকে হত‍্যা করতে পারবে। তখন দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে যান। ভগবান বিষ্ণু মধু -কৈটভের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে ধনুকের উপর মাথা রেখে নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। তখন ব্রহ্মা ভম্রিদের আদেশ দেন ভগবান বিষ্ণুর ধনুকটির জ‍্যা কর্তন করার। পরিবর্তে, ভম্রিরা যজ্ঞের বেদির বাহিরে পরে থাকা আহুতি পাবে। তখন জ‍্যা কাটতেই ভগবান বিষ্ণুর মস্তক কেটে লবণ সাগরে পড়ল। দেবতারা তখন দেবী মহামায়ার স্তব করলে দেবী মহামায়া বলেন যে তার মায়াতেই এসব ঘটেছে। পূর্বে বিষ্ণু দেবী লক্ষ্মীর দিকে তাকিয়ে হাসলে দেবী লক্ষ্মী মনে করেন যে বিষ্ণু তার রূপকে অবহেলা করছেন। দেবী লক্ষ্মী তখন ভগবান বিষ্ণুকে অভিশাপ দিয়ে বসেন যে তার এই সুন্দর মস্তক কেটে যাবে। সে অভিশাপই সত‍্য হয়েছে। তখন তিনি ব্রহ্মাকে বিষ্ণুর মস্তকে হয় বা অশ্বের মস্তক লাগাতে বলেন। ব্রহ্মা তা-ই করলেন। তখন বিষ্ণুর নাম হয় হয়গ্রীব। ভগবান হয়গ্রীব তখন দানব হয়গ্রীবকে যুদ্ধে পরাস্ত খরে তাকে হত‍্যা করেন। হয়গ্রীব ছিলেন মহাজ্ঞানী। তিনি মহর্ষি অগস্ত‍্যকে ললিতোপাখ‍্যান শ্রবণ করান ।

হয়গ্রীব উপনিষদ্‌

হয়গ্রীব উপনিষদ্‌ বা হয়গ্রীবোপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: हयग्रीव उपनिषत्) হল একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি ১০৮টি উপনিষদের অন্যতম। হয়গ্রীব উপনিষদ্‌ সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং বিষ্ণুর অশ্বমস্তক-বিশিষ্ট অবতার হয়গ্রীবের প্রতি উৎসর্গিত। এটি বিষ্ণু-উপাসক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ এবং অথর্ববেদের সঙ্গে যুক্ত। যে হয়গ্রীব বেদের মূর্তস্বরূপ চিত্ত বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞানী, সেই হয়গ্রীবের পূজার মন্ত্রগুলি এই উপনিষদের প্রধান আলোচ্য।

কথিত আছে, বিষ্ণুর বাহন গরুড় তিরুবন্তিপুরমে শ্রী বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সন্ত ও গুরু বেদান্ত দেশিকাকে হয়গ্রীব মন্ত্রগুলি শিখিয়েছিলেন।

হয়গ্রীব উপনিষদ্‌ দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এই উপনিষদে মোট শ্লোকের সংখ্যা ২০। ব্রহ্মা তার পুত্র ঋষি নারদকে শিক্ষা দিচ্ছেন - এই আকারে এই উপনিষদ্‌টি রচিত হয়েছে। গ্রন্থের শুরুতেই বিষ্ণুকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে বন্দনা করা হয়েছে এবং তার কাছে তার সকল ভক্তের কল্যাণকামনা করা হয়েছে। সকলের কল্যাণের জন্য ইন্দ্র, গরুড়, সূর্য ও বৃহস্পতিকেও বন্দনা করা হয়েছে।


নারদ তার পিতা ব্রহ্মাকে সকল পাপ নির্মূলকারী এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ বিতরণকারী ব্রহ্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন। ব্রহ্মা বলছেন, যে হয়গ্রীবের মন্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারে, সে শ্রুতি, স্মৃতি, ইতিহাস ও পুরাণ শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং ধনবান হতে পারেন। এরপর ব্রহ্মা হয়গ্রীব পূজার বিভিন্ন মন্ত্র বর্ণনা করতে শুরু করেন।


প্রথম মন্ত্রে বিষ্ণুকে হয়গ্রীব রূপে জাগতিক বিশ্বের বাইরে অবস্থানকারী ও ত্রাণকর্তারূপে বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় মন্ত্রে হয়গ্রীবকে ঋক্‌, সাম, যজুর্বেদ ও ওঙ্কারের মূর্তি বলা হয়েছে। তাকে পৃথিবীতে বেদ-আনয়নকারী অশ্বমস্তক-বিশিষ্ট অবতার বলা হয়েছে। তৃতীয় মন্ত্রে বেদের মূর্তি হয়গ্রীবের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে তিনি যেন এই উপনিষদের পাঠকের কাছে বেদজ্ঞান প্রকাশ করেন এবং বলা হয়েছে এই দেবতার গুণকীর্তন করেন ওঙ্কার ও বেদসমূহ। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষির নাম হিসেবে ব্রহ্মা, অত্রি, রবি, সবিতা ও ভার্গবের নাম করা হয়েছে। এই মন্ত্রগুলির ছন্দ হল গায়ত্রী, ত্রিষ্টুভ ও অনুষ্টুভ এবং দেবতা হলেন হয়গ্রীব। বীজমন্ত্রটি হল হ্লৌঁ, শক্তি হল সোহম, কীলক হল হ্লুঁ, বিনিয়োগ হল ভোগ ও মোক্ষ। শেষে অ, উ ও ম এই তিন অক্ষরের সাহায্যে অঙ্গন্যাসের কথা বলা হয়েছে। এরপর ধ্যানমন্ত্রটি বর্ণিত হয়েছে। এই ধ্যানমন্ত্রের সাহায্যে পূজক দেবতার মূর্তিটি মনে মনে কল্পনা করতে পারেন। এই মন্ত্রে হয়গ্রীবকে চতুর্ভূজ বলা হয়েছে। তার চার হাতের তিনটিতে রয়েছে শঙ্খ, সুদর্শন চক্র ও গ্রন্থ এবং চতুর্থ হাতে রয়েছে মহামুদ্রা। ২৯-অক্ষরবিশিষ্ট মন্ত্র (ওঁ শ্রীঁ হ্লৌঁ ওঁ নমো ভগবতে হয়গ্রীবায় বিষ্ণবে মহ্যং মেধাং প্রজ্ঞাং প্রয়চ্চ স্বাহা) ও ২৮-অক্ষরবিশিষ্ট মন্ত্র (ওঁ শ্রীঁ হ্রীঁ ঐঁ ঐঁ ঐঁ ক্লীঁ ক্লীঁ সৌহ্‌ সৌহ্‌ হ্রীঁ ওঁ নমো ভগবতে হয়গ্রীবায় মহ্যং মেধাং প্রজ্ঞাং প্রয়চ্চ স্বাহা) - এই দুই মন্ত্রের কথা বলে প্রথম অধ্যায় শেষ হচ্ছে।


দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতে ব্রহ্মে হয়গ্রীবের বীজমন্ত্রটির কথা বলছেন। তিনি এই মন্ত্রটি প্রথমে শিবকে শিখিয়েছিলেন। শিব এই মন্ত্র সঙ্কর্ষণকে, সঙ্কর্ষণ নারদকে এবং নারদ ব্যাসকে শেখান। ব্যাসকে জগতকে এই মন্ত্র শিক্ষা দেন। হয়গ্রীবের বীজমন্ত্রটিকে এই উপনিষদে "মন্ত্ররাজ" বলা হয়েছে। এই মন্ত্র সূর্য ও অন্যান্য দেবতারা জপ করেন এবং এই মন্ত্রই হয়গ্রীবের বাণীমূর্তি। যিনি এই মন্ত্র জপ করেন, তিনি সর্বোচ্চ জ্ঞান এবং দিকপাল, রাজন্যবর্গ ও নাগের অধিপতি হন।


কথিত আছে অন্য একটি মন্ত্র অমৃতং কুরু কুরু স্বাহা (অনুগ্রহ করে আমাকে অমর করুন) জপকারীকে জ্ঞান, ধন ও অষ্ট সিদ্ধ প্রদান করে। আরও বলা হয়েছে হ্লৌঁ সকলসম্রাজ্ঞেন সিদ্ধিং কুরু কুরু স্বাহা এই সকল মন্ত্রগুলি জানতে সাহায্য করে। যারা এই মন্ত্রগুলি জপ করে, তাদের সব পাপ ধুয়ে যায় এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র হয়। জীবনে সে দেহের উপর কর্তত্ব করে এবং মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ করে। প্রজ্ঞানং ব্রহ্ম, (জ্ঞানই ব্রহ্ম), তত্ত্বমসি (তুমিই সে), অয়মাত্মা ব্রহ্ম (আমার আত্মাই ব্রহ্ম) এবং অহং ব্রহ্মাস্মি (আমিই ব্রহ্ম) - এই চারটি বৈদিক মহাবাক্যের অর্থ সে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়। এরপর চারটি বৈদিক মন্ত্র পাঠ করা হয়। এগুলি হল : (১) যদ্‌ বাক্‌ বদন্তি, (২) গৌরিমিমায়া, (৩) ওষ্টাপিধান ও (৪) সা সর্পরীরাতিম।


উপনিষদ্‌ গ্রন্থাবলির রীতি অনুসারে, হয়গ্রীব উপনিষদের শেষে এই গ্রন্থটির মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে। একাদশী তিথিতে এই উপনিষদ পাঠ করলে হয়গ্রীবের আশীর্বাদ পাওয়া যায় এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে জীবনের শেষে মোক্ষ লাভও হয়ে থাকে। গ্রন্থের শেষে একটি প্রার্থনায় বলা হয়েছে এই মন্ত্রগুলি ব্রহজ্ঞান এবং এই ভক্ত যেন হয়গ্রীব এবং এই মন্ত্রগুলিকে কখনও না ভুলে যান।

তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া


Share:

০৬ এপ্রিল ২০২১

ধর্ম্ম ও Religion

আমার ধর্ম আমাকে শিক্ষা দেয় সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির গুনগান করতে ,জীবের সেবা করতে; সেটা ক্ষুদ্র পীপিলিকা হোক বা হাতীই হোক, ঈশ্বরের সৃষ্টি ধ্বংস করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা নয়। নৈতিক মূল্যবোধই ধর্ম্ম। এক আর্থসামাজিক সমাজ থেকে অন্য সমজে তাকে পৃথক করা যায় না। ধর্ম্ম কে বাদ দিলে মানুষ পশু তে পরিণত হয়। হিন্দুশাস্ত্র তাই বলেছেন -----

-

“আহার নিদ্রা ভয় মৈথুনম্ চ সমানামেতৎ পশুভির্নরানাম্; ধর্ম্মো হি তেষাম্ বিশেষো ধর্ম্মেণ হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ”। 

-

…........ অর্থাৎ আহার, নিদ্রা, ভয়, মৈথুন এই গুণগুলি মানুষের মত পশুদের ও বিশেষত্ব।। 

-

------ কেবল ধর্ম্ম ই (মনুষ্যত্ব) মানুষকে অন্য পশুদের থেকে পৃথক করে। সুতরাং ধর্ম্মবোধ (মনুষ্যত্ব) মানুষের আদিম অনুভূতি, ধর্ম্ম কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর একান্ত নয়। ধর্ম্ম ও Religeon সম্পূর্ণ পৃথক ধারণা ও তত্ত্ব। একজন ব্যক্তি মানুষের সাথে বিশ্বগোষ্ঠীস্তর অবধি মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর একাত্মতা ও মিলনই ধর্ম্ম, পক্ষান্তরে Religion হল ধর্ম্ম পালনের গোষ্ঠীগত পদ্ধতি। Religeon মানুষ দ্বারা সৃষ্ট, প্রচারিত ও প্রসারিত। এক Religion অন্য Religion কে আক্রমণ করে, হত্যা করে বা হত্যা করতে শেখায়। কিন্তু বিশ্বধর্ম্মজননী হিন্দুধর্ম্ম, ধর্ম্মপু্স্তক বেদ-বেদান্ত-শ্রীগীতা-শ্রীচণ্ডী মানুষকে ভালবাসতে শেখায়, মানুষের আত্মিক উন্নতির কথা বলে ।

-------- জয় মা তারা .......


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

যজ্ঞ করা কেন জরুরি তা কি জানেন? আসুন, জেনে নিই।

 পুজো করার যত পদ্ধতি আছে, তারমধ্যে যজ্ঞ সর্ব্বশ্রেষ্ঠ। যে কোন ধরনের পূজা সম্পূর্ণ হয় যজ্ঞ সম্পদানের মাধ্যমে। অনেকেই বাড়িতে পুজো করেন সাথে বিশেষ যজ্ঞের আয়োজনও করেন। তাতে নাকি বিশেষ ফল লাভ করা যায়। বলা হয়, যজ্ঞ হিন্দুধর্মের অন্যতম কৃত্যানুষ্ঠান। দেবতার অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে অগ্নিতে আহুতি প্রদান অনুষ্ঠানই যজ্ঞ। এর মাধ্যমে সম্পদ বা সমৃদ্ধি লাভ, শত্রুর বিনাশ, যুদ্ধ জয়, রোগারোগ্য ও স্বর্গ লাভ ইত্যাদি কামনা করা হয়। বৈদিক যুগে এর উদ্ভব ঘটে এবং ক্রমশ তা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।



বৈদিক শাস্ত্রানুসারে, যজ্ঞের মাধ্যমে যা অগ্নাহুতি দেওয়া হয় তা সম্পূর্ণরূপে দেবতার কাছে পৌছায়। এজন্যই বৈদিক ঋষিরা যজ্ঞের কথা বার বার বলে গেছেন বেদের মাধ্যমে।

বিভিন্ন ধরনের সমসার সরল সমাধান যজ্ঞের মাধ্যমে সম্ভব, তা সে অর্থ, কর্ম, শারীরিক বা বশীকরণ যাই হোক না কেন।

নব-গ্রহের সমসার জন্য নব-গ্রহ যজ্ঞ , সন্তান সমসার জন্য গোপাল-হোম , আর্থিক সমসস্যার জন্য মহা-লক্ষ্মীর যজ্ঞ ইত্যাদি করার বিধান দেওয়া আছে আমাদের শাস্ত্রাগুলোতে।

কিন্তু যজ্ঞ করার সাথে সাথে বা একবার করার পরপরই ফলপ্রসু হবে এমন তা নয়। যজ্ঞ সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পরপর বা প্রতিদিন করার বিধান দেওয়া আছে শাস্ত্রে এবং তাহলেই ফলের আশা করা যেতে পারে।

যজ্ঞ করার সময় শুধু কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে --- 

★ যজ্ঞের আগুন যেন নিভে না যায়। 

★ আহুতি-মন্ত্র শুদ্ধ উচ্চারণ করতে হবে। 

★ শুদ্ধ ঘি হতে হবে গরুর দুধের। 

★ প্রতিটা যজ্ঞের নির্দিষ্ট কাঠ আছে, সে খেয়াল রাখতে হবে। 

★ ভক্তিযুক্ত চিত্তে মন্ত্রেচ্চারণ করতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু নিয়ম আছে।

যজ্ঞ করতে গেলে ভুল হবে, তাহলে অনিষ্ট হবে ---- এই ধারনাকে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করতে হবে।

শুদ্ধ মনে ভক্তিভাবে মন্ত্র উচ্চারণ করে অগ্নিতে আহুতি দিলে সরাসরি দেবতার কাছে পৌছাবে, এই ভেবে করলেই ফলপ্রসু হবে যজ্ঞ। তাই যজ্ঞ শেষে বলা হয় -- ভোঃ ভোঃ বহ্নে মহাশক্তে সর্বকামপ্রদায়ক। কর্মান্তেওপি সংপ্রাপ্তে সান্নিধ্যং কুরু সাদরম্।।

যাইহোক, যজ্ঞ করলে ফল অবশ্যই হবে এবং যে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব এ কথা শাস্ত্রে সুন্দর ও পরিষ্কার ভাবে লেখা আছে।

-------------------------------------------------------------------

ছবি ★ তারকেশ্বরের তোতাপুরী আশ্রমে স্বামী কাশিকানন্দ যজ্ঞ করছেন।

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

দুষ্টু নিমাই শিষ্ট 'শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য'

 শ্রী গৌর হরির পিতা জগন্নাথ মিশ্র ও মাতা শচী দেবী। জগন্নাথ মিশ্রের পরপর আট কন্যা হয়। কিন্তু কেহই জীবিত ছিলনা। তার পরে এক পুত্র হয়। নাম তার বিশ্বরূপ। পুত্রের বয়স যখন আট বছর তখন জগন্নাথ মিশ্রের বাবা-মায়ের নিকট হতে একটা পত্র আসল। তাতে লেখাছিল যে, সত্বর যেন স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সিলেট তাঁদের কাছে আসেন। পিতার মাতার এই আজ্ঞা পেয়ে শচী দেবী ও জগন্নাথ মিশ্র শ্রীহট্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং কিছুদিন পর নিজ গৃহে মাতা-পিতার নিকট পৌছান।

১৪০৬ শকাব্দের মাঘ মাসে শচী দেবী আবার গর্ভস্ত হলেন। শোভা দেবী (শাশুড়ীমাতা) রাত্রিতে স্বপ্ন দেখেন যে, কোন মহাপুরুষ তাঁকে বলছেন যে, পুত্রবধুর গর্ভে স্বয়ং ভগবান প্রবেশ করেছেন এবং শচীদেবীকে নবদ্বীপ পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। এইজন্য জগন্নাথকে শচীদেবীসহ নবদ্বীপে যাওয়ার জন্য শোভা দেবী আদেশ করলেন। জগন্নাথ মিশ্র মহাশয় শচীদেবীকে নিয়ে নবদ্বীপের বাড়ীতে আসলেন। শচীর দেবীর গর্ভ দশমাস উত্তীর্ণ হল তবু পুত্র কন্যা কিছুই হল না। ক্রমে একাদশমাস, দ্বাদশ মাস উত্তীর্ণ হল তবুও সন্তানের জন্ম হল না। ১৪০৭ শকাব্দের ফাল্গুন মাস আসল জগন্নাথ মিশ্র ব্যস্ত হয়ে শ্বশুর নীলাম্বর চক্রবর্তীকে ডাকালেন।

নীলাম্বর পন্ডিত গননা করে বললেন অতি সত্বর শচীর সন্তান হবে। তার গর্ভে কোন এক মহাপুরুষ জন্ম নেবেন। একথা শুনিয়া সকলে স্বস্তি পেলেন।

চৌদ্দশত সাত শকে মাস যে ফাল্গুন।

পৌর্নমাসী সন্ধ্যাকালে হৈল শুভক্ষণ,

সিংহ রাশী, সিংহ লগ্ন উচ্চ প্রহসন।

ষড়বর্গ অষ্টবর্গ সবর্ব শুভক্ষণ।

অর্থাৎ ১৪০৭ শকাব্দে জাহ্নবী তীরস্থ পরীশোভিত নবদ্বীপ নগরে। মনোহর ফাল্গুন মাসে, নির্মল পূর্ণিমা সন্ধ্যায় শ্রী গৌরাঙ্গদেব অবতীর্ণ হলেন। যখন পূর্ণিমা সন্ধ্যায় পূর্বদিকে একখানা উজ্জ্বল থালার মত চন্দ্র উদিত হল। অমনি গৌরাঙ্গ সিংহ রাশিতে পূবর্বফাল্গুনী লক্ষত্রে মাতৃগর্ভ হতে অবির্ভত হলেন। নবদ্বীপবাসী প্রফুল্ল মনে হরিধ্বনি করতে লাগলেন। এভাবে হরিধ্বনির সহিত গৌরাঙ্গ দেব অবিভূত হয়ে ছিলেন। নীম বৃক্ষের তলে জন্ম হয়েছিল বলে শচীমাতা ছেলের নাম নিমাই রাখলেন।

সেসময় নবদ্বীপ বুদ্ধিমান ও নৈয়ায়িক পন্ডিত দ্বারা পূর্ণছিল। ভক্তির লেশ ছিল না। এমনই সময় শ্রী গৌরহরি ভক্তিরস বিতরণের জন্য নদীয়ায় অবর্তীর্ণ হলেন।

কলোহ প্রথম সন্ধ্যায়ং গৌরাঙ্গ অহর মহীতটে।

ভাগীরথী তটে ভূবী ভবিষ্যামী সনাতন। --- ব্রহ্ম পূরাণ, অর্থাৎ কলির প্রথম সন্ধ্যায় গৌরাঙ্গরূপে এই ধরাতলে ভগীরথী তীরে আবির্ভূত হব।

চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি দোলপূর্ণিমার রাত্রে চন্দ্রগ্রহণের সময় নদিয়ার মায়াপুরে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম। তাঁর পিতামাতা ছিলেন অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত নবদ্বীপের অধিবাসী জগন্নাথ মিশ্র ও শচী দেবী। চৈতন্যদেবের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ওড়িশার জাজপুরের আদি বাসিন্দা। তাঁর পিতামহ মধুকর মিশ্র ওড়িশা থেকে বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন।

চৈতন্যদেবের পিতৃদত্ত নাম ছিল বিশ্বম্ভর মিশ্র। প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন স্বনামধন্য পণ্ডিত। তর্কশাস্ত্রে নবদ্বীপের নিমাই পণ্ডিতের খ্যাতি ছিল অবিসংবাদিত। জপ ও কৃষ্ণের নাম কীর্তনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ যে ছেলেবেলা থেকেই বজায় ছিল, তা জানা যায় তাঁর জীবনের নানা কাহিনি থেকে। কিন্তু তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল সংস্কৃত গ্রন্থাদি পাঠ ও জ্ঞানার্জন। 

পিতার মৃত্যুর পর গয়ায় পিণ্ডদান করতে গিয়ে নিমাই তাঁর গুরু ঈশ্বর পুরীর সাক্ষাৎ পান। ঈশ্বর পুরীর নিকট তিনি গোপাল মন্ত্রে দীক্ষিত হন। এই ঘটনা নিমাইয়ের পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। বাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর পণ্ডিত থেকে ভক্ত রূপে তাঁর অপ্রত্যাশিত মন পরিবর্তন দেখে অদ্বৈত আচার্যের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় বৈষ্ণব সমাজ আশ্চর্য হয়ে যান। অনতিবিলম্বে নিমাই নদিয়ার বৈষ্ণব সমাজের এক অগ্রণী নেতায় পরিণত হন।

কেশব ভারতীর নিকট সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষিত হওয়ার পর নিমাই 'শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য' নাম গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি জন্মভূমি বাংলা ত্যাগ করে কয়েক বছর ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান পর্যটন করেন। এই সময় তিনি অবিরত কৃষ্ণনাম জপ করতেন। জীবনের শেষ চব্বিশ বছর তিনি অতিবাহিত করেন জগন্নাথধাম পুরীতে। ওড়িশার সূর্যবংশীয় সম্রাট গজপতি মহারাজা প্রতাপরুদ্র দেব চৈতন্যমহাপ্রভুকে কৃষ্ণের সাক্ষাৎ অবতার মনে করতেন। মহারাজা প্রতাপরুদ্র চৈতন্যদেব ও তাঁর সংকীর্তন দলের পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিলেন। জীবনের শেষপর্বে চৈতন্যদেব ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতেন এবং অধিকাংশ সময়েই ভাবসমাধিস্থ থাকতেন।

তিনি শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণাবতার। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ছিলেন ভাগবত পুরাণ ও ভগবদ্গীতা-য় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে সৃষ্ট বৈষ্ণব ভক্তিযোগ মতবাদের একজন বিশিষ্ট প্রবক্তা। তিনি বিশেষত রাধা ও কৃষ্ণ রূপে ঈশ্বরের পূজা প্রচার করেন এবং 'হরে কৃষ্ণ' মহামন্ত্রটি জনপ্রিয় করে তোলেন। সংস্কৃত ভাষায় 'শিক্ষাষ্টক' নামক প্রসিদ্ধ স্তোত্রটিও তাঁরই রচনা। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতানুসারে, ভাগবত পুরাণের শেষের দিকের শ্লোকগুলিতে রাধারানির ভাবকান্তি সংবলিত শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য রূপে অবতার গ্রহণের কথা বর্ণিত হয়েছে।

চৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্বাশ্রমের নাম গৌরাঙ্গ বা নিমাই। তাঁর গাত্রবর্ণ স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাঁকে গৌরাঙ্গ বা গৌর নামে অভিহিত করা হত। অন্যদিকে নিম বৃক্ষের নিচে জন্ম বলে তাঁর নামকরণ হয়েছিল নিমাই। ষোড়শ শতাব্দীতে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী সাহিত্য বাংলা সন্তজীবনী ধারায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছিল। সেযুগে একাধিক কবি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী অবলম্বনে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর চৈতন্য চরিতামৃত, বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের চৈতন্য ভাগবত, এবং লোচন দাস ঠাকুরের চৈতন্যমঙ্গল।

ছেলেবেলায় দুষ্টুমি করাটা সকলেরই মজ্জাগত। দুষ্টুমী না করলে ছেলেবেলা সার্থক হয় না। এবার এমন একজন বিখ্যাত মানুষের নাম শোনাব, যাঁর দুষ্টুমিতে সারা নবদ্বীপ ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিল।

ঠাকুরদা, মধুকর মিশ্র ওড়িশার যাজপুর থেকে রাজা ভ্রমরের অত্যাচারের ভয়ে ,অবিভক্ত বাংলার শ্রীহট্টে এসে বসবাস শুরু করেন। এই শ্রীহট্টই হলো এখনকার সিলেট। পরে, মধুকর মিশ্রের ছেলে জগন্নাথ মিশ্র সংস্কৃত শেখার জন্য নদীয়া জেলার নবদ্বীপে এসে সেখানেই থেকে যান।

পড়াশুনো শেষ হলে, জগন্নাথ মিশ্র, নীলাম্বর চক্রবর্তীর মেয়ে শচীদেবীকে বিয়ে করেন। এঁদের পরপর সাত মেয়ে হলেও সব কটা অকালে মারা যায়। পরে, দুই ছেলে -- বিশ্বরূপ আর বিশ্বম্ভর কিন্তু অকালে মারা যান নি। সেকালে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যেত সবার। ষোলো বছরে বিশ্বরূপের বিয়ের কথা হলে, তিনি সন্ন্যাসী হয়ে সংসার ছেড়ে চলে যান।

জগন্নাথ মিশ্র ভাবলেন- অল্প বয়সে বেশী পড়াশোনার করার ফলেই বড় ছেলের এই হাল! একে তো সাত মেয়ে মারা গেছে, তার ওপর বড় ছেলে বিবাগী হয়ে চলে গেল, ফলে বিশ্বম্ভর কে আর পড়াশোনা করতেই পাঠালেন না!

বিশ্বম্ভরের ডাক নাম ছিল নিমাই! 

কিন্তু, মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক! দুষ্টু নিমাই পরে কি হয়েছিল, সেটা বলছি!

তার আগে ওর ছেলেবেলার কথা বলে নিই! খুব মজা পাবে।

ওহো! নিমাইয়ের জন্ম তারিখটা তো বলতেই ভুলে গেছি। ১৪৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি দোলপূর্ণিমার সন্ধে ৬ টা থেকে ৭টার মধ্যে চন্দ্রগ্রহণের সময় নদিয়ার মায়াপুরে নিমাইয়ের জন্ম।

পাঁচ বছর থেকেই মহা দুষ্টুমি শুরু করেছিল এই নিমাই। তখনকার সব লোক গঙ্গাতে স্নান করতে যেতেন। একটা বিশ্বাস তখনও ছিল, এখনও আছে! গঙ্গাতে স্নান করলে নাকি সব পাপ দূর হয়। তাছাড়া, তখন তো আর ঘরে ঘরে স্নানঘরে শাওয়ার, বাথটাব ছিল না! ফলে লোকে গঙ্গাতেই স্নান করত। আর সেখানেই শুরু হত নিমাইয়ের দুষ্টুমি! ব্রাহ্মণরা স্নান করে উঠলেই গায়ে গোবোর মেশান কাদা ছুঁড়ে দিতেন। কারও শিবঠাকুর নিয়ে পালিয়ে যেতেন। বাচ্চা মেয়েদের চুলে ওকরা নামের একটা কাঁটা ওয়ালা ফলের বীচি ছুঁড়ে দিতেন। চুল জট পাকিয়ে যেত। সে এক কেলেঙ্কারী!

জগন্নাথ মিশ্র সাধে কি, দুঃখ করে লিখেছিলেন --

“এহি যদি সর্বশাস্ত্রে হবে গুণবান্।

ছাড়িয়া সংসার সুখ করিবে পয়ান।।

অতএব ইহার পড়িয়া কার্য্য নাই।

মূর্খ হৈয়া ঘরে মোর থাকুক নিমাঞি।।”

তোমরা ভাবছ, আমি বানান ভুল করেছি? আরে না! এটা ১৪৭৩ সালে লেখা! তখনকার বানান গুলো এরকমই ছিল। আমি ওটা অবিকল তুলে দিয়েছি।

ওই বাচ্চা মেয়েরা নিজেদের বাবা মার কাছে গিয়ে বলত ---

“বলে মোরে চাহে বিভা* করিবারে”

*বিভা = বিবাহ বা বিয়ে।

পরে আর এক মেয়ে বলছে--

“পূর্বে শুনিলাম যেন নন্দের কুমার।

সেইমত কি তোমার পুত্রের ব্যাবহার।।”

আর একজন ব্রাহ্মণ জগন্নাথ মিশ্রকে বলছেন ---

“সন্ধ্যা করি যেই জলেতে নামিয়া।

ডুব দিয়া লৈয়া যায় চরণ ধরিয়া।।”

বোঝো কাণ্ড নিমাইয়ের! 

ওই পাঁচ বছর বয়সেই ডুব সাঁতার শিখে গেছিল। ব্রাহ্মণ, স্নান সেরে জপ করছেন জলে নেমে আর নিমাই ডুব সাঁতার দিয়ে ব্রাহ্মণের পা টেনে আবার জলে ফেলে নাকানী চোবানী খাওয়াচ্ছেন! 

“কেহ বলে মোর শিবলিঙ্গ করে চুরি।

কেহ বলে মোর লয়ে পলায়ে উত্তরী*।।”

*উত্তরী= উত্তরীয় বা গায়ে দেওয়ার চাদর!

এবার দিনে দিনে বেড়েই চলল, নিমাইয়ের দুষ্টুমী! একদিন এঁটো রান্নার হাঁড়ির ওপর বসে খালি দুলতে লাগল! আর সঙ্গে ঠন্ ঠনা ঠন্ আওয়াজ !!

মা, শচী দেবী বকলেন! বললেন -- ভদ্রতা জানিস না? 

নিমাই নাকি এর উত্তরে বলেছিলেন -- (এটা পরে অন্য লোকে লিখেছেন)

“প্রভু বলে মোরে, না দিস পড়িতে।

ভদ্রাভদ্র মূর্খ বিপ্র জানিবে কি মতে।।

মূর্খ আমি না জানি যে ভাল মন্দ স্থান।

সর্বত্র আমার এক অদ্বিতীয় স্থান।।”

এখন আর জগন্নাথ বাবুর কোনো উপায় থাকল না! গ্রামের সকলের পরামর্শে, নিমাইকে গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলে পাঠিয়ে দিলেন পড়তে! 

শচী দেবীর হলো বিপদ! ছেলে আর বই ছেড়ে ওঠে না! শচী দেবী ভাবলেন- ছেলে পাগল হয়ে গেছে!

এ ব্যাপারে লেখা আছে --

“কিবা স্নানে কি ভোজনে কিবা পর্যটনে।

নাহিক প্রভুর আর চেষ্টা শাস্ত্র বিনে।।

আপনি করেন প্রভু সুত্রের টিপ্পনী।

ভুলিয়া পুস্তক রসে সর্বে দেবমণি।।

না ছাড়েন শ্রীহস্তে পুস্তক একক্ষণে।.....

পুঁথি ছাড়িয়া নিমাঞি না জানে কোনো কর্ম।

বিদ্যারস ইহার হয়েছে সর্বধর্ম।।

একবার যে সুত্র পড়িয়া প্রভু যায়।

আরবার উল্টিয়া প্রভু সবারে ঠেকায়।।”

এই দুষ্টু নিমাই কালে কালে হয়ে উঠলেন মস্ত পণ্ডিত! নাম হলো চৈতন্যদেব!


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

ভগবান শিবের এই মন্ত্রটি অন্ততঃ দশবার পাঠ করুন, যে কোনও অসুস্থ্যতা থেকে দ্রুত আরোগ্যলাভ করবেন

 আপনি কি নিত্য পূজা করেন?

যদি করেন তো  নিত্যকর্মের পর সংক্ষেপে ভগবান শিবের পূজা করুন ও তারপর নিম্নলিখিত মন্ত্রটি অন্ততঃ দশবার পাঠ করুন। সম্ভব হলে অসংখ্যবার পাঠ করুন। যে কোনও অসুস্থ্যতা থেকে দ্রুত আরোগ্যলাভ করবেন। 

মন্ত্র

------

'ওঁ ত্র্যম্বকম্ যজামহে সুগন্ধিম্ পুষ্টিবর্ধনম্।

উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঅমৃতাৎ।।

নমস্তে অস্তু ভগবন্

বিশ্বেশ্বরায় মহাদেবায়

ত্রম্ব্যকায় ত্রিপুরান্তকায়

ত্রিকালাগ্নিকালায়

কালাগ্নিরুদ্রায় নীলকণ্ঠায়

মৃত্যুঞ্জয়ায় সর্বেশ্বরায়

সদাশিবায়

মাম্ রক্ষ রক্ষ

মম আয়ুর্দেহি বলম্ দেহি

বীর্যম্ বৃদ্ধি কুরু করু স্বাহা।' 

★ মন্ত্রটি পাঠের সময় মনে ধারনা করবেন যে -- ভগবান শিব নিজ হাতে আপনার মাথায় ব্রহ্মতালুতে রোগনিবৃতকারী ওষধি কলসীতে করে ঢেলে দিচ্ছেন। এই ওষধি আপনার সারা শরীরের ভিতর ও বাইরে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমস্ত রোগ-জীবানু, মল-ময়লা, ব্যথা-বেদনা সারিয়ে আপনাকে সুস্থ্য করে দিচ্ছে এবং আপনি ধীরে ধীরে আপনার সুস্থ্যতাও ফিরে পাচ্ছেন।

তিনদিন পর থেকে আপনি এই চমৎকার লক্ষ্য করবেন। ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে করুন, নিশ্চয়ই আপনার এই উপলব্ধি হবে বলে, আমি পৃথ্বীশ, মনে করি।

এই পোস্ট পড়ে কোলকাতার একজন মহিলা এডভোকেট তার দীর্ঘদিনের অসুস্থ্যতা থেকে রেহাই পেয়েছেন বলে -- কয়েকদিন আগেই আমায় জানিয়েছেন। আপনিও ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে জপ করুন, অবশ্যই সুস্থ্য হবেন।

ধন্যবাদ।


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য, কেউ শুদ্র। তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়।

 "শূদ্র" শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতে অনুনোমোদিত, অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত ইত্যাদি।

বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতে বোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্‌ - যজুর্বেদ ৩০.৫) একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের ঘোষনা দিয়েছে মানব সভ্যতার কাঠামো হিসেবে।

* ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রাহ্মন এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রাহ্মনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য।

8 ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)

* সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজনব্রাহ্মণ হন।

* নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩)

* ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২) তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩)

* হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)

* শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১) এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

* মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।

* রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

* ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন।

* ঋষি বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।

* বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।

পবিত্র বেদ ঘোষনা করেছে সাম্যের বানী ---

"অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস

এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায়

যুবা পিতা স্বপা রুদ্র

এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥"  --  (ঋগবেদ ৫.৬০.৫)

বঙ্গানুবাদ --- "কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য, কেউ শুদ্র। তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়। ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে। ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি।পুরুষার্থী সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।"

তাহলে দেখুন,কি ভূলটাই না করে চলেছি আমরা!


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

মা যশোরেশ্বরী

সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন এবং তিনি নিরাকার, তিনি সর্বত্রই বিরাজমান এ বিশ্বাস সকল মানুষই পোষণ করে। তিনি করুনাময় জীব-জগতের পালন কর্তা। কিন্তু মানুষের মন অতি চঞ্চল, কল্পনায় অবগাহন করে চোখের নিমিষে কেউ বিশ্বব্রহ্মান্ড ঘুরে আসে, কেউ গাড়ি, বাড়ি, বিত্ত, বৈভব বৃত্তি গড়ে তোলে, আবার কেউ সেই নিরাকারের নির্দিষ্ট রুপ কল্পনার মধ্য দিয়ে গুনসম্পন্ন দেব-মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে। অন্তরের খাঁটি বিশ্বাস দ্বারা ধর্ম জেগে ওঠে কর্মের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে নিরাকার সৃষ্টিকর্তার আরাধনার লক্ষ্যে তাঁর একটি রূপ বা মুর্তি স্থাপনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাভরে পূজো অর্চনা, গুনগান করে সাধনায় সিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সাধারণ ভক্তগণ প্রতিমা পূজা করে থাকেন। 


ঈশ্বর, ভগবান বা পরমপিতার শক্তি সর্বত্রই বিরাজমান। অদৃশ্য সেই মহাশক্তিকে নিরাকার ভাবনা, ধ্যান বা যজ্ঞের দ্বারা আয়ত্ব করা সাধারণ ভক্তের জন্য দুসাধ্য ব্যাপার। কেননা সংসারে স্বাত্ত্বিক রাজসিক, তামসিক এই তিন গুণের মানুষ আছেন। বর্তমান সময়ে তামসিক ও রাজসিক মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই দেব-দেবীর মুর্তি বা প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে সাধন ভজনে দ্রুততার সাথে নিবিষ্ট হওয়া বা মনোনিবেশ করা সম্ভব। 

তন্ত্রশাস্ত্র বলেছেন ---- ‘ গাভীর দুগ্ধ তাহার রক্ত হইতে সম্ভুত। রক্ত গাভীর সর্বাঙ্গেই বিরাজিত তাই বলিয়া গাভীর যে কোন অঙ্গে হস্তার্পণ করিলেই দুগ্ধ পাওয়া যায় না। একমাত্র স্তন হইতেই উহা ক্ষরিত হয়। সেই শ্রী ভগবানের উপস্থিতি সর্বত্র সকল সময়ে থাকিলেও তাঁহার স্বরূপ উপলদ্ধি প্রতিমাতেই সর্বাঙ্গসুন্দররূপে হইয়া থাকে।’.

প্রাচীন কাল থেকেই সনাতনী হিন্দু সংস্কৃতিতে তন্ত্রশাস্ত্রমত প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। তান্ত্রিক মতে পূজায় প্রতীক বা প্রতিমা থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে পূজার সকল অর্ঘ প্রতিমা বা মুর্তিকে অবলম্বন করে আবর্তমান। আর বৈদিক মতে, অগ্নিকে সকল শক্তি বা দেবতার উৎস বিশ্বাস ধারণ করে অগ্নিতে দেবতার উদ্দেশ্যে যজ্ঞাহুতি প্রদান করা হয়। আগুন বা অগ্নিকে পবিত্র বা নির্মল শক্তি হিসেবে গন্য করা হয়। অগ্নিতে সকল মোহ, দ্বেষ, কাম-ক্রোধ বিসর্জ্জন দিলে আত্মশুদ্ধি ঘটে।

শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রে আট প্রকার বিগ্রহের কথা বলা হয়েছে ----

‘শৈলী দারুময়ী লৌহ লেপ্যা লেখ্যা সৈকতী।

মনোময়ী মনিময়ী প্রতিমাষ্টবিধা স্মৃতা॥’

------- শিলাময়ী, কাষ্ঠময়ী, লৌহ (সুবর্ণাদিময়ী) লেপ্যা, (মৎচন্দনাদিময়ী) লেখ্যা (চিত্রপটময়ী) বালুকাময়ী, মনোময়ী ও মনিময়ী এই আট প্রকার প্রতিমা হইতে পারে।’ 

তাই মানবজীবনকে স্বার্থক করে তুলতে স্ব স্ব আরাধ্য দেবতা, ঈশ্বর, ভগবান, পরমপিতা যে যে নামেই সম্বোধন করুন না কেন সেই নিরাকার অসীমকে একটি রূপকল্পের গন্ডিতে এনে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সাধন-ভজন করলে তাঁকে পাওয়ার উচ্ছাসে জীবন আন্দময় হয়ে ওঠে এবং সেখানেই প্রতিমা পূজা বা যজ্ঞের সার্থকতা। 

ভগবদ্ গীতায় বলা হয়েছে ---- ‘ময়া তশুমিদং সবং জগদব্যক্ত মুর্তিন।’ ----- অর্থাৎ আমি অব্যক্তরূপে জগৎ সংসার ব্যপিয়া আছি। যিনি ব্যক্ত সাকার; তিনিই অবতার, আবার অব্যক্ত অবস্থায় নিরাকার। অর্থাৎ প্রতীক বা প্রতিমা অব্যক্ত নিরাকার ব্রহ্ম বা আরাধ্য দেবতার প্রতিনিধি। 

সনাতনী শাক্ত বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মের শক্তি হলেন ব্রহ্মময়ী কালী। 

আর কয়েকদিন আগেই কার্তিক অমাবস্যায় হল সেই কালীর বৃহৎ পূজা। মনের অন্ধকার দূর করতে প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে সেখানে কালীমুর্তি স্থাপন করা ছিল এই দিনের মুখ্যকর্ম আর সেই কর্মেই ভৌতিক জীবনের সাফল্যতা। 

এই কালীপূজা বাংলায় প্রগৈতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে। রাজা থেকে প্রজা, ধনী থেকে দরিদ্র, কেউই বাদ নেই, শক্তিমান হতে সবাই আশা করে। তাই দেখি -- বার ভূঁইয়াদের অন্যতম যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে 'যশোরেশ্বরী' কালিকা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে এবং শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন। ভারতচন্দ্র রায় গুনকর তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে লিখেছেন ---

'যশোর নগর ধাম .... প্রতাপ আদিত্য নাম

মহারাজা বঙ্গজ কায়স্থ ।

নাহি মানে বাদশায় .... কেহন নাহি আটে তায়

ভয়ে সব ভূপতি দ্বারস্থ ।।

বরপুত্র ভবানীর .... প্রিয়তম পৃথিবীর

বাহান্ন হাজার যার ঢালী ।

ষোড়ষ হলকা হাতি .... অযুত তুরঙ্গ সাথী

যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী ॥

.

এই আদ্যাশক্তি পরমাপ্রকৃতি যদিও তত্ত্বত অসঙ্গা নির্বিকারা ব্রহ্মচৈতন্যস্বরূপা তবুও নিজ শক্তিবলে তিনিই জগৎ রূপে প্রকাশিত হয়েছেন। সেই আদ্যাশক্তি সূক্ষ্মা, স্থূলা, ব্যক্ত ও অব্যক্ত স্বরূপিণী। নিরাকারা হয়েও সাকারা। তিনি কৃপা না করলে কে তাঁকে জানতে পারে?

-----

স্থানটির নাম ঈশ্বরীপুর। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। এখন এলাকাটি বংশীপুর হিসেবে পরিচিত। সাতক্ষীরা শহর থেকে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক ধরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার গেলে শ্যামনগর। এই উপজেলা সদর থেকে সুন্দরবনের দিকে সোজা আরও ৫ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই বংশীপুর বাজার। এর কিছু দূরেই সুন্দরবন। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের স্মৃতি বিজড়িত এই এলাকার অনেক ইমারত এখন হয়েছে পোড়ো বাড়ি। পঞ্চদশ শতকে যে জনপদ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেই এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, অতীত স্মৃতিতে। অতীতের স্মৃতি হিসেবে যশোরেশ্বরী কালী মন্দির, দুর্গ, নগর প্রাচীরের কিছু অংশ। বর্তমানে হারিয়ে যাওয়া এক কালের আদি যমুনা নদীর পাশেই এ ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে কালের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজ্যের রাজধানী ঈশ্বরীপুর। 

১৫৭৩ সালে সিংহাসনে বসেন দাউদশাহ। তার দুই বাল্যবন্ধু শ্রী হরিকে “বিক্রমাদিত্য” এবং জানকিকে ‘বসন্তরায়’ উপাধি দিয়ে তিনি তাদের মন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। বর্তমানে সুন্দরবন ঘেরা এই এলাকার জলদস্যু, মগ, পর্তুগীজদের লুটতরাজ এবং অত্যাচার দমনের জন্য নবাব দাউদ শাহ বিক্রমাদিত্য ও বসন্তরায়কে দায়িত্ব দেন। বসন্তরায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর এসে ঘাঁটি গাড়েন। এ কারণে এখানকার নাম হয় বসন্তপুর। এখনও এই এলাকাটি বসন্তপুর নামে পরিচিত। বিক্রমাদিত্যকে দেয়া হয় অন্য এক এলাকার দায়িত্ব। 

বিক্রমাদিত্যের পুত্র প্রতাপাদিত্য পিতার জীবদ্দশায় একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময়ে নবাব দাউদ শাহের সাথে বিরোধ দেখা দেয় সম্রাট আকবরের। সম্রাট আকবর নবাব দাউদ শাহকে শিক্ষা দেয়ার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। তিনি বিরাট এক রণতরী ও সৈন্য বহর নিয়ে যুদ্ধে চলে আসেন। ইতিহাসবিদদের মতে, ওই নৌবহরের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং সম্রাট আকবর। সম্রাট আকবর ও নবাব দাউদ শাহের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় ‘রাজমহল’ নামক স্থানে। দীর্ঘ যুদ্ধে নবাব দাউদ শাহ পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে গোপনে তার সমুদয় ধনসম্পদ পাঠিযে দেন রাজা প্রতাপাদিত্যের কাছে। এ বিপুল ধনসম্পদ নিয়ে পরে প্রতাপাদিত্য ঈশ্বরীপুরে তৈরি করেন বিলাশ বহুল রাজধানী। এক স্থানের ‘যশ’ অন্যস্থানে এনে রাজ্য গড়ার কাহিনী লোকমুখে ফিরতে ফিরতে এ এলাকার নাম হয় যশোজুর বা যশোর।

রাজা প্রতাপাদিত্য নিজেকে ‘স্বাধীন রাজা’ হিসেবে ঘোষণা করেন ১৫৯৯ সালে। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার ইসলাম খাঁর সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতাপাদিত্য ঈশ্বরীপুরে নির্মাণ করেন বহু ইমারত ও দুর্গ। বহিশত্রু থেকে রাজ্য রক্ষা করার জন্য তিনি মুকুন্দপুর থেকে কালীগঞ্জ থানা হয়ে আশাশুনি থানা পর্যন্ত ‘গড়’ খনন করেন। ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত ঈশ্বরীপুরের অনেক স্থান এখনও জঙ্গলাকীর্ণ ও পরিত্যক্ত। কিছু দূর গেলে চোখে পড়ে যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। অনেকে এই মন্দিরকে যশোরেশ্বরী দেবীর মন্দির বলে থাকে। এ মন্দিরের কিছু দূরেই রয়েছে ভাঙ্গা বাড়ির মতো ছিল জাহাজঘাটা। এই দুদলি নামকরণেরও ইতিহাস রয়েছে। যমুনা নদীর তীরে ছিল যশোর রাজ্যের রাজধানীর নৌবাহিনীর সদর দফতর। রাজা প্রতাপাদিত্যের নৌবাহিনীর প্রধান ‘ফেডারিক ডুডলির’ নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয় দুদলি। এখানকার চিহ্নটি মুছে গেছে। দখল হয়ে গেছে এই ঐতিহাসিক স্থানটি। ইতিহাস বিজড়িত আজকের জঙ্গলাকীর্ণ সুন্দরবন দেখে বিশ্বাস না হলেও এ কথা সত্য যে, এক সময় এখানে ছিল একটি রাজ্যের রাজধানী। ছিল জনবসতি। ছিল রাজা বাদশাহের পদচারণা। ইতিহাস ও ভগ্ন পুরাকীর্তির কিছু চিহ্ন এখন ও অতীত স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। 

(ছবি -- যশোরেশ্বরী কালী)

 (সাতক্ষীরায় বাড়ী অধুনা ঢাকার প্রতিষ্ঠিত এডভোকেট, Arpan Chakraborty -র 

পাঠানো ছবি ও বিবরণ অনুযায়ী Post-টা করলাম)

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

যশোরেশ্বরী ও বারাসাতের আমডাঙা মন্দিরের 'মা করুণাময়য়ী' ঠাকুরানীর ইতিহাস

 ভারতে মুঘল রাজবংন্সের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের উত্তরসুরী রূপে দিল্লীর সিংহাসনে বসলেন হুমায়ুন পুত্র আকবর। তাঁর লক্ষ্য ছিল এক বিশাল শক্তিশালী সাম্রাজ্য গঠন। সম্রাটের এই সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। সম্রাট আকবর এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে যুবরাজ সেলিমকে বাংলাদেশ অভিজানে পাঠান। কিন্তু যশোরের জমিদার প্রতাপাদিত্য (বারোভুঁইয়া) মা যশোরেশ্বরীর আশীর্ব্বাদী ফুল অবলম্বন করে মুঘল আক্রমণের মোকাবিলা করেন। সেই যুদ্ধে যুবরাজ সেলিম পরাজিত হলেন। এর পর সম্রাট আকবর অম্বররাজ সেনাপতি মানসিংহকে দ্বিতীয় বারের জন্য বাংলাদেশ আক্রমনে পাঠান। কৌশলী সেনাপতি মানসিংহ তাঁর চর মারফৎ প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানলেন যে, প্রতাপাদিত্যের শক্তি ও পরাক্রমের উৎস হলেন শ্রীশ্রী মাতা যশোরেশ্বরী।

তাই মানসিংহ এক ব্রাহ্মণের সহায়তায় মন্দির থেকে যশোরেশ্বরী মাতার বিগ্রহকে সরিয়ে নিজ শিবিরে নিয়ে আসেন। এই সংবাদে বিষ্ময়ে হতবাক্ হয়ে প্রতাপাদিত্য মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রামানন্দগিরি গোস্বামীকে যৎপরনাস্তি তিরস্কিৃত করলেন। শোকে বিহ্বল পরম ধার্মিক ব্রাহ্মণ দুঃখে উন্মাদ হয়ে যশোর ত্যাগ করেন। অম্বররাজ ঠিক সেই মুহুর্তে মোঘল বাহিনী নিয়ে প্রতাপাদিত্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তাঁকে পরাজিত ও বন্দী করে বাংলাদেশ দখল করলেন।

বাংলাদেশ অভিযান সফল হওয়ার পর অম্বররাজ মাতৃ বিগ্রহকে সন্মানের সাথে অম্বর প্রাসাদে অধিষ্ঠান করালেন। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সেই 'যশোরেশ্বরী' মাতৃবিগ্রহ রাজস্থানের অম্বর ফোর্টে আজও অবস্থান করছেন।

অম্বর ফোর্টে মাতৃবিগ্রহ অধিষ্ঠানের পরেই মহারাজ মানসিংহ দেবীর কাছে স্বপ্নাদেশ পান যে - তিনি যেন, দেবীর প্রধান পুরোহিত পরম ভক্ত ব্রাহ্মণ রামানন্দগিরি গোস্বামীকে দিয়ে দেবীর বিকল্প করুণাময়ী মাতৃমূর্ত্তি তৈরী ও প্রতিষ্ঠান করে আসেন। দেবীর আদেশে মানসিংহ বাংলাদেশে এসে রামানন্দগিরির খোঁজ করে যমুণা শাখা সূবর্ণাবতী (বর্তমান নাম সুঁটির খাল -- জবরদখল হয়ে এই নাম হয়েছে) নদীর তীরবর্তী মাতার বর্ত্তমান মন্দিরের নিকট সেই ব্রাহ্মণের দেখা পান এবং যশোরেশ্বরীর বিকল্প করুণাময়ী মাতৃমূর্ত্তি তৈরী ও  প্রতিষ্ঠান করে আসেন। প্রাচীন সেই পুরোহিতের নাম ও নদীর তীরবর্তী স্থান অনুযায়ী ঐ স্থানের নাম হয় ‘রামডাঙ্গা’। পরবর্ত্তী কালে বাংলা ভাষার বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সেটি ‘আমডাঙ্গা’ নামে এবং মন্দিরটি ‘আমডাঙ্গা করুনাময়ী মঠ’ নামে পরিচিত।

এর পর প্রায় দুশো বছর অতিবাহিত করার পর ১৭৫৬ সালে ইংরেজদের উৎখাত করার জন্য সিরাজদ্দৌলা যখন কলকাতা আক্রমণ করেন তখন নবাবের সেই বাহিনীতে নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও ছিলেন। বর্ত্তমান মন্দিরের নিকট নবাবের শিবির হয়েছিল। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র সেই শিবিরের পাশে ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাতৃমূর্ত্তির জীর্ণ দশা দেখতে পান। সেই সময়েই তিনি মাতৃমূর্ত্তির সামনে বসে প্রার্থনা করেন -- যদি মা তার মনোকামনা পূর্ণ করেন, তা হলে তিনি মাতার মন্দিরের তথা পূজার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাদি গ্রহন করবেন।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজদ্দৌলা পরাজিত ও নিহত হবার পর বাংলার সিংহাসনে বসলেন মীরজাফর, তার পর তাকে পরাজিত করে তার জামতা মীরকাশিম সিংহাসনে বসেন। ১৭৬৪ খ্রীষ্টাব্দে নবাব মীরকাশিম কৃষ্ণচন্দ্রকে মুঙ্গেরে বন্দী করে প্রাণদন্ডের আদেশ দেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের এই বিপদে আমডাঙ্গা করুনাময়ী মঠের মোহান্ত পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে করুনাময়ী মাতৃদেবীর আরাধনা করে দৈব শক্তির প্রভাবে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে বিপদ-মুক্ত করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র মাতৃদেবীর এই অপার করুণায় খুশী হয়ে আমডাঙ্গা করুনাময়ী মঠ সংস্কারে ব্রতী হন। শোনা যায় তাঁরই প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মঠের বর্ত্তমান দ্বিতল মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় থেকে এই ‘মঠ’ শুধু বাংলাদেশ নয় সারা ভারতেও পরিচিতি লাভ করে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত করুনাময়ীর জাগ্রত রুপ দর্শন করতে আসা শুরু করেন। মা করুনাময়ীর অপার করুণায় ভক্তগণের মনোবাঞ্ছা পূ্রণ সহ বিবিধ রোগ, জ্বালা নিবারণেরর এক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় এই ‘মঠ’।

মঠের প্রথম সেবাইত রামানন্দগিরির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে পরবর্ত্তী কালের মোহান্তগণ মঠকে  ধর্মীয় তথা আধ্যাত্মিক দিক থেকে এক উজ্জ্বল অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে গিরি অধ্যায়ের শেষ মোহান্ত রতন গিরি মোহান্ত পদে উত্তরাধিকার নিয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালতের সম্মতি অনুযায়ী মহামান্য হাওড়া জেলা জজ করুনাময়ী মঠের পর্যবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ তথা প্রশাসক রুপে দায়িত্ব পান। মঠ পরিচালন সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালন কমিটির প্রথম সম্পাদক হন প্রকাশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় মহাশয়। ইতিপূর্বে করুনাময়ী মঠ তারকেশ্বর মন্ডলীর অর্ন্তভুক্ত হয়েছিল। মোহান্ত পদে গিরি অধ্যায়ের সমাপ্তির পর আশ্রম অধ্যায়ের সূচনা হয়। আমডাঙ্গা মঠের আশ্রম পর্বের প্রথম মোহান্ত হয়ে আসেন দন্ডীস্বামী অচ্যুৎ আশ্রম। পরবর্তী কালে একে একে মোহান্ত পদে অভিষিক্ত হন দন্ডীস্বামী নৃ্সিংহ আশ্রম ও দন্ডীস্বামী বিশ্বেশ্বর আশ্রম, তাঁর আমলে মঠের পূজা ভোগ ও বলিদান সংক্রান্ত বিষয়ে মঠ কমিটির সহিত তাঁর মতবিরোধ চরমে ওঠে। এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৬২ সনে মঠে এক ধর্মীয় বিচার সভা আহূত হয়। এই ধর্মীয় বিচার সভায় কোন সুষ্ঠ নিষ্পত্তি না হওয়ায় অভিমানে দন্ডীস্বামী বিশ্বেশ্বর আশ্রম মঠ পরিত্যাগ করে কাশীবাসী হন। তৎপরবর্ত্তি কালে এক টানা প্রায় ২০ বৎসর মঠ পরিচালন ব্যবস্থা কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকে। মঠ পরিচালন সমিতির দ্বিতীয় সম্পাদক নিযুক্ত হন শ্রীযুক্ত সুধাংশু বন্দোপাধ্যায় মহাশয়। তাঁর আমলে মঠের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে এলাকার জনসাধারণ মহামান্য হাওড়া জেলা জজের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি তদন্ত করে কমিটি বাতিল করে দেন।

১৯৮৩ সালের মে মাসে মহামান্য হাওড়া জেলা জজ নূতন পরিচালন সমিতি গঠন করেন এবং এই নবগঠিত পরিচালক সমিতির সম্পাদক রূপে মাননীয় শ্রীযুক্ত শঙ্কর ঘোষ মহাশয়কে মনোনীত করেন। ইতিমধ্যে ১৯৮৪ সালে দীর্ঘ ২২ বছর বাদে মঠে মোহান্ত রুপে তারকেশ্বর মন্ডলীর প্রতিনিধি হয়ে আসেন দন্ডীস্বামী শিবাশ্রম মহারাজ। তাঁর সভাপতিত্বে এবং শ্রীযুক্ত শঙ্কর ঘোষ মহাশয়ের সহৃদতায় মঠে এক স্বর্গীয় অনুভূতি বিরাজ করতে থাকে।

বর্ত্তমান মন্দির সংলগ্ন মায়ের উল্লিখিত ফাঁকা জমিতে মায়ের বাৎসরিক উৎসব উপলক্ষে ২৫ শে ও ২৬ শে ডিসেম্বর বৃহৎ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মঠের বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘রত্নবেদী’। ভারতের মধ্যে একমাত্র শ্রীক্ষেত্র ছাড়া আর কোন তীর্থক্ষেত্রে এই রত্নবেদী নেই। রত্নবেদীর মহাত্ম হল ১০৮ টি নারায়ণ শীলার উপর প্রতিষ্ঠিত এই আসন। শোনা যায় এই রত্নবেদীর আকর্ষনেই মহাসাধক রামপ্রসাদ ও পরমহংস ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের আগমন ঘটেছিল এই মঠে। 

মঠের দ্বিতীয় দ্রষ্টব্য স্থান হল ‘পঞ্চমুন্ডী আসন’। তন্ত্র সাধকেরা এই আসনে বসে তন্ত্র সাধন করেন। উল্লেখ্য, ব্রহ্মপরায়ন উপাধিকারী সেবাইত নারায়ণ গিরি এই আসনে বসেই সাধনার দ্বারা দৈববলে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে রক্ষা করেন।

মঠের তৃতীয় দ্রষ্টব্য স্থান হল ‘মনসা বেদী (বাস্তুতলা)’। নিষ্ঠাভরে এই বেদীতে দুধ কলা সহযোগে পূজা দিলে সর্পদংশন ভয় দূ্র হয়। এছারা ব্রজমোহন মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের প্রেমময় যুগল মূর্ত্তি মন্দিরের আকর্ষণ বৃদ্ধি করছে। সর্বোপরি শ্রীশ্রী করুনাময়ী মাতা ঠাকুরাণীর কষ্ঠিপাথরের নির্মিত মূর্ত্তিটি মাতার নামকে স্বমহিমায় উজ্জ্বল করে রেখেছে। মাতার সম্মুখের চন্দন কাঠের সূক্ষ কারুকার্য্য শোভিত দরজাটিও দীর্ঘ ৪৫০ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আজও অক্ষত অবস্থায় বর্ত্তমান আছে।

জয় কালী ......

জয় কালী ............

জয় কালী ..............


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

সহজ কালী 'পূজা পদ্ধতি'

 সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন এবং তিনি নিরাকার, তিনি সর্বত্রই বিরাজমান এ বিশ্বাস সকল মানুষই পোষণ করে। তিনি করুনাময় জীব-জগতের পালন কর্তা। কিন্তু মানুষের মন অতি চঞ্চল, কল্পনায় অবগাহন করে চোখের নিমিষে কেউ বিশ্বব্রহ্মানন্ড ঘুরে আসে, কেউ গাড়ি, বাড়ি, বিত্ত, বৈভব বৃত্তি গড়ে তোলে, আবার কেউ সেই নিরাকারের নির্দিষ্ট রুপ কল্পনার মধ্য দিয়ে গুনসম্পন্ন দেব-মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে। অন্তরের খাঁটি বিশ্বাস দ্বারা ধর্ম জেগে ওঠে কর্মের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে নিরাকার সৃষ্টিকর্তার আরাধনার লক্ষ্যে তাঁর একটি রূপ বা মুর্তি স্থাপনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাভরে পূজো অর্চনা, গুনগান করে সাধনায় সিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সাধারণ ভক্তগণ প্রতিমা পূজা করে থাকেন। ঈশ্বর, ভগবান বা পরমপিতার শক্তি সর্বত্রই বিরাজমান। অদৃশ্য সেই মহাশক্তিকে নিরাকার ভাবনা ধ্যান বা যজ্ঞের দ্বারা আয়ত্ব করা সাধারণ ভক্তের জন্য দুসাধ্য ব্যাপার। কেননা সংসারে স্বাত্ত্বিক রাজষিক, তামসিক এই তিন গুণের মানুষ আছেন। বর্তমান সময়ে তামসিক ও রাজষিক মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই দেব-দেবীর মুর্তি বা প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে সাধন ভজনে দ্রুততার সাথে নিবিষ্ট হওয়া বা মনোনিবেশ করা সম্ভব। তন্ত্রশাস্ত্র বলেছে, ‘ গাভীর দুগ্ধ তাহার রক্ত হইতে সম্ভুত। রক্ত গাভীর সর্বাঙ্গেই বিরাজিত তাই বলিয়া গাভীর যে কোন অঙ্গে হস্থার্পণ করিলেই দুগ্ধ পাওয়া যায় না। একমাত্র স্তন হইতেই উহা ক্ষরিত হয়। সেই শ্রী ভগবানের উপস্থিতি সর্বত্র সকল সময়ে থাকিলেও তাঁহার স্বরূপ উপলদ্ধি প্রতিমাতেই সর্বাঙ্গসুন্দররূপে হইয়া থাকে।’.

সনাতনী হিন্দু সংস্কৃতিতে তন্ত্রশাস্ত্র মত প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। তান্ত্রিক মতে পূজায় প্রতীক বা প্রতিমা থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে পূজার সকল অর্ঘ প্রতিমা বা মুর্তিকে অবলম্বন করে আবর্তমান। আর বৈদিক মতে, অগ্নিকে সকল শক্তি বা দেবতার উৎস বিশ্বাস ধারণ করে অগ্নিতে দেবতার উদ্দেশ্যে যজ্ঞাহুতি প্রদান করা হয়। আগুন বা অগ্নিকে পবিত্র বা নির্মল শক্তি হিসেবে গন্য করা হয়। অগ্নিতে সকল মোহ দ্বেষ, কাম-ক্রোধ বিসর্জ্জন দিলে আত্মশুদ্ধি ঘটে।

শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র অষ্ট প্রকার বিগ্রহের কথা বলেছে ----

‘শৈলী দারুময়ী লৌহ লেপ্যা লেখ্যা সৈকতী।

মনোময়ী মনিময়ী প্রতিমাষ্টবিধা স্মৃতা॥’

.


------- শিলাময়ী, কাষ্ঠময়ী, লৌহ (সুবর্ণাদিময়ী) লেপ্যা, (মৎচন্দনাদিময়ী) লেখ্যা (চিত্রপটময়ী) বালুকাময়ী, মনোময়ী ও মনিময়ী এই আট প্রকার প্রতিমা হইতে পারে।’

তাই মানবজীবনকে স্বার্থক করে তুলতে স্ব স্ব আরাধ্য দেবতা, ঈশ্বর, ভগবান, পরমপিতা যে যে নামেই সম্বোধন করুন না কেন সেই নিরাকার অসীমকে একটি রূপকল্পের গন্ডিতে এনে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সাধন-ভজন করলে তাঁকে পাওয়ার উচ্ছাসে জীবন আন্দময় হয়ে ওঠে এবং সেখানেই প্রতিমা পূজা বা যজ্ঞের সার্থকতা।

ভগবদ্ গীতায় বলা হয়েছে ----

‘ময়া তশুমিদং সবং জগদব্যক্ত মুর্তিন।’ ----- অর্থাৎ আমি অব্যক্তরূপে জগৎ সংসার ব্যপিয়া আছি। যিনি ব্যক্ত সাকার; তিনিই অবতার, আবার অব্যক্ত অবস্থায় নিরাকার। অর্থাৎ প্রতীক বা প্রতিমা অব্যক্ত নিরাকার ব্রহ্ম বা আরাধ্য দেবতার প্রতিনিধি।

আর কয়েকদিন বাদেই দীপান্বিতা, মনের অন্ধকার দূর করতে প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে সেখানে কালীমুর্তি স্থাপন করা এই দিনের মুখ্যকর্ম। আর সেই কর্মেই ভৌতিক জীবনের সাফল্যতা।

এই কালীপূজা বাংলায় প্রগৈতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে। রাজা থেকে প্রজা, ধনী থেকে দরিদ্র, কেউই বাদ নেই, শক্তিমান হতে সবাই আশা করে। তাই দেখি -- বার ভূইয়াদের অন্যতম যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে 'যশোরেশ্বরী' কালিকা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে এবং শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন। ভারতচন্দ্র রায় গুনকর তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে লিখেছেন ---

'যশোর নগর ধাম .... প্রতাপ আদিত্য নাম

মহারাজা বঙ্গজ কায়স্থ ।

নাহি মানে বাদশায় .... কেহন নাহি আটে তায়

ভয়ে সব ভূপতি দ্বারস্থ ।।

বরপুত্র ভবানীর .... প্রিয়তম পৃথিবীর

বাহান্ন হাজার যার ঢালী ।

ষোড়ষ হলকা হাতি .... অযুত তুরঙ্গ সাতি

যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী ॥

.

এই আদ্যাশক্তি পরমাপ্রকৃতি যদিও তত্ত্বত অসঙ্গা নির্বিকারা ব্রহ্মচৈতন্যস্বরূপা তবুও নিজ শক্তিবলে তিনিই জগৎ রূপে প্রকাশিত হয়েছেন। সেই আদ্যাশক্তি সূক্ষ্মা, স্থূলা, ব্যক্ত ও অব্যক্ত স্বরূপিণী। নিরাকারা হয়েও সাকারা। তিনি কৃপা না করলে কে তাঁকে জানতে পারে?

একজন তান্ত্রিক প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী মনে করে এবং সেই চৈতন্যময়ী শক্তিকে বাঙালি হিন্দুর মানবীয় উপলব্ধির সীমানায় নিয়ে এসে সেই চৈতন্যময়ী শক্তির সঙ্গে মাতাপিতার সর্ম্পক স্থাপন করে, সেই চৈতন্যময়ী শক্তিকে দেবীরূপে কল্পনা করে পূজা করে। তন্ত্রের প্রধান একটি সিদ্ধান্তই হল এই যে প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী মনে করা। কিন্তু, বিশ্বজগতে সবই তো শক্তির সমাহার। যে শক্তিকে জড়বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। আধুনিক সভ্যতা এই মূলতত্ত্বের ওপরই প্রতিষ্ঠিত।

প্রকৃতির সূত্র আবিস্কার করে এই শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা যৌক্তিক এই প্রশ্নও তো আজকাল উঠছে । এই দৃষ্টিভঙ্গি হটকারী কিনা, পরিবেশ বিপর্যয়ের মূলে এই দর্শন সক্রিয় কিনা- এসব প্রশ্নও নিয়েও তো আমরা আজ উদ্বিগ্ন।

তন্ত্র কিন্তু প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। তার কারণ, তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী জেনেছে, 'মা' বলে জেনেছে, মায়ের দেবীপ্রতিমা কল্পনা করেছে; দেবী মা (প্রকৃতি) কে একজন তান্ত্রিক নিষ্ঠাভরে ভজনা করতে চায়, আরাধনা করতে চায়, পূজা করতে চায়। পাশাপাশি একজন তান্ত্রিক মনে করেন, একজন ভক্ত চৈতন্যময়ী শক্তির অনুগত থাকলে চৈতন্যময়ী শক্তির কৃপায় তার অশেষ কল্যাণ সাধিত হতে পারে।

..............

আসুন অনেক মন্ত্রের মধ্যে উচ্চারনে সহজ এবং সরল একটি সহজ প্রক্রিয়া এবং ধ্যান মন্ত্র জেনে নিই -----

৺রী মায়ের ছবি/মূর্ত্তি/ঘট/পটের সামনে শুদ্ধাসন পেতে বসুন ------------

ভক্তিযুক্ত মনে ----------

-

১ম ধাপ --- (করজোড়ে নীচের ধ্যান মন্ত্র পাঠ করুন)

ওঁ শবারুঢ়াং মহাভীমাং ঘোরদংস্ট্রাং বরপ্রদাম।

হাস্যযুক্তাং ত্রিনেত্রাঞ্চ কপালকর্ত্তৃকাকরাম।।

মুক্তকেশীং লোলজিহ্বাং পিবন্তীং রুধিরং মুহু।

চতুর্ব্বাহু যুতাং দেবীং বরাভয়করাং স্মরেৎ।।


২য় ধাপ ----- (গায়ত্রী দ্বারা মাতৃমন্ত্র জাগ্রত বা শক্তিশালী করুন)

মায়ের গায়ত্রী মন্ত্র -- ওঁ কালিকায়ৈ বিদ্মহে শশ্মানবাসিন্যৈ ধিমহি তন্নো ঘোরে প্রচোদয়াৎ ……… (১০ বার জপ করুন)

এর পর নিচের মন্ত্রে হাতে একটু জল নিয়ে জপ বিসর্জন করুন ----

ওঁ গুহ্যাতিগুহ্য গোপ্তৃীং ত্বং গৃহানস্মতং কৃতং জপো,

সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি তৎ প্রসাদৎ সুরেশ্বরী৷৷


৩য় ধাপ ------ এবার পঞ্চোপচারে দেবীর পূজা করুন -----

ক্রীং এষ গন্ধঃ শ্রীমৎ দক্ষিণা কালিকায়ৈ নমঃ

ক্রীং এতানি পুষ্পানি শ্রীমৎ দক্ষিণা কালিকায়ৈ নমঃ

ক্রীং এষ ধূপঃ শ্রীমৎ দক্ষিণা কালিকায়ৈ নমঃ

ক্রীং এষ দীপঃ শ্রীমৎ দক্ষিণা কালিকায়ৈ নমঃ

ক্রীং এতৎ নৈবেদ্যং শ্রীমৎ দক্ষিণা কালিকায়ৈ নমঃ


৪র্থ ধাপ ------ এবার প্রণাম করুন ------


মা কালীর প্রণাম মন্ত্র

---------------------------------

ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।

শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণি নমোহস্তুতেঃ।।

ওঁ সৃষ্টি-স্থিতি বিনাশানাং শক্তিভৃতে সনাতনী।

গুণাশ্রয়ে গুণময়ী নারায়ণি নমোহস্তুতেঃ।।

ওঁ শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে।

সর্বস্যার্তি হরে দেবী নারায়ণি নমোহস্তুতে।।

ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বহা স্বধা নমোঽস্তুতে।।


৫ম ধাপ ------- (মায়ের কবচ পাঠ করুন)


কালীকবচম

========

ভৈরব উবাচ --

কালিকা যা মহাবিদ্যা কথিতা ভুবি দুর্ল্লভা।

তথাপি হৃদয়ে শল্যমস্তি দেবি কৃপাং কুরু।।

কবচন্ত মহাদেবী কথয়সানুকম্পা।

যদি নো কথ্যতে মাতব্বিমুঞ্চামি তদা তনুম।।


দেব্যুবাচ --

শংকাপি জায়তে বৎস তব স্নেহাৎ প্রকাশিতম।

ন বক্তব্যং ন দ্রষ্টব্যমতি গুহ্যতমং মহৎ।।

কালিকা জগতাং মাতা শোকদুঃখাদি বিনাশিনী।

বিশেষত কলি যুগে, মহাপাতকহারিণী।।

কালী মে পুরুতঃ পাঠু পৃষ্ঠতশ্চ কপালিনী।

কুল্বা মে দক্ষিনে পাতু করণৌ চগ্রোপ্রভামতা।।

বদনং পাতু মে দীপ্তা নীলা চ চিবুকং সদা।

ঘনা গ্রীবাং সদা পাতু বলাকা বাহুযুগ্মকম।।

মাত্রা পাতু করদ্বন্দং বক্ষো মুদ্রা সদাবতু।

মিতা পাতু স্তনদ্বন্দং যোনিং মন্ডল দেবতা।

ব্রাম্মী মে জঠরং পাতু, নাভিং নারায়ণীং তথা।

ঊরু মাহেশ্মরী নিত্যং চামুন্ডা পাতু লিঙ্গকম।

কৌমারী চ কটিং পাতু তথৈব জানুযুগ্মকম।

অপরাজিতা পাদৌ মে বারাহী পাতু চাঙ্গুলীঃ।

সন্ধিস্থানং নারসিংহী পত্রস্থা দেবতাবতু

রক্ষাহীনঞ্চ যৎ স্থানং বর্জ্জিতং কবচেন তু।

তৎ সর্ব্বং রক্ষ মে দেবী কালিকে ঘোর দক্ষিণে।

ঊর্দ্ধং-মধ্যস্তথা দিক্ষু পাতু দেবী স্বয়ং বপুঃ।।

হিংস্রেভ্যঃ সর্ব্বদা পাতু সাধকঞ্চ জলাধিকাৎ।

দক্ষিণা কালিকে দেবী ব্যাপকত্তে সদাবতু।

ইদং কবচমজ্ঞাতা যো জপেদ্দেবদক্ষিনাম

ন পুজাফলমাপ্নোতি বিঘ্নস্তস্য পদে পদে।

কবচেনাবৃতো নিত্যং যত্র তত্রৈব গচ্ছতি

তত্র তত্রভয়ং তস্য ন ক্ষোভং বিদ্যতে ক্কচিৎ।

----------- দক্ষিনকালিকা কবচং সম্পূর্ণম্ -----


৬ষ্ঠ ধাপ ------ এর পর আবার জপ, নিচে জপ মন্ত্র দেওয়া ----- জপ করুন

*** ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ


এর পর নিচের মন্ত্রে হাতে একটু জল নিয়ে জপ বিসর্জন করুন ----

ওঁ গুহ্যাতিগুহ্য গোপ্তৃ ত্বং গৃহানস্মতং কৃতং জপং,

সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি তৎ প্রসাদৎ সুরেশ্বরী৷৷


৭ম ধাপ ------ এরপর শ্রীশ্রীদক্ষিণকালিকা স্তোত্রম্ পাঠ করুন ----


শ্রীশ্রীদক্ষিণকালিকা স্তোত্রম্

======================

ওঁ কৃশোদরি মহাচণ্ডী মুক্তকেশিং বলীপ্রিয়ে।

কুলাচারপ্রসন্নাস্যে নমস্তে শঙ্করপ্রিয়ে।।

ঘোরদংষ্ট্রে কোটোরাক্ষি কিটিশব্দ প্রসাধিনী।

ঘুরঘোররাবাস্ফারে নমস্তে চিতাবাসিনী।।

বন্ধুকপুষ্পসঙ্কাশে ত্রিপুরে ভয়নাশিনী।

ভাগ্যোদয়সমুৎপন্নে নমস্তে বরবন্দিনী।।

জয় দেবি জগদ্ধাত্রী ত্রিপুরাদ্যে ত্রিদেবতে।

ভক্তেভ্যো বরদে দেবি মহষঘ্নি নমোহস্তুতে।।

ঘোরবিঘ্নবিনাশায় কুলাচারসমৃদ্ধয়ে।

নমমি বরদে দেবি মুণ্ডমালা বিভূষনে।।

রক্তধারাসমাকীর্ণে করকাঞ্চীবিভূষিতে।

সর্ব্ববিঘ্নহরে কালী নমস্তে ভৈরবপ্রিয়ে।।

নমস্তে দক্ষিণামূর্ত্তে কালী ত্রিপুরভৈরবী।

ভিন্নাঞ্জনচয়প্রক্ষে প্রবীণশবসংস্থিতে।।

গলচ্ছ্রোণিতধারাভিঃ স্মেরাননসরোরুহে।

পীনোন্নতকুচদ্বন্দ্বো নমস্তে ঘোরদক্ষিণে।।

আরক্তমুখশান্তাভির্নেত্রালিভির্বিরাজিতে।

শবদ্বয় কৃতোত্তংসে নমস্তে মদবিহ্বলে।।

পঞ্চাশন্মুণ্ডঘটিতমালা লোহিত লোহিতে।।

নানামণিবিশোভাঢ্যে নমস্তে ব্রহ্মসেবিতে।।

শবাস্থিকৃতকেয়ুর, শঙ্খ-কঙ্কন-মণ্ডিতে।

শববক্ষঃ সমারুঢ়ে নমস্তে বিষ্ণুপূজিতে।।

শবমাংস কৃতগ্রাসে অট্টহাসে মুহুর্মুহু।

মুখশীঘ্রস্মিতামোদে নমস্তে শিববন্দিতে।।

খড়্গমুণ্ডধরে বামে সব্যে (অ) ভয়বরপ্রদে।

দন্তুরে চ মহারৌদ্রে নমস্তে চণ্ডনাদিতে।।

ত্বং গতিঃ পরমা দেবি ত্বং মাতা পরমেশ্বরী।

ত্রাহি মাং করুণাসাদ্রে নমস্তে চণ্ডনায়িকে।।

নমস্তে কালিকে দেবি নমস্তে ভক্তবৎসলে।

মুর্খতাং হর মে দেবি প্রতিভা জয়দায়িনী।।

গদ্যপদ্যময়ীং বাণীং তর্কব্যাকরণাদিকম্।

অনধীতগতাং বিদ্যাং দেহি দক্ষিণকালিকে।।

জয়ং দেহি সভামধ্যে ধনং দেহি ধনাগমে।

দেহি মে চিরজীবিত্বং কালিকে রক্ষ দক্ষিণে।।

রাজ্যং দেহি যশো দেহি পুত্রান্ দারান্ ধনং তথা।

দেহান্তে দেহি মে মুক্তিং জগন্মাতঃ প্রসীদ মে।।

ওঁ মঙ্গলা ভৈরবী দুর্গা কালিকা ত্রিদশেশ্বরী।

উমা হৈমবতীকন্যা কল্যাণী ভৈরবেশ্বরী।।

কালী ব্রাহ্মী চ মাহেশী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।

বারাহী বাসলী চণ্ডী ত্বাং জগুর্ম্মুনয়ঃ সদা।।

উগ্রতারেতি তারেতি শিবত্যেকজটেতি চ।

লোকোত্তরেতি কালেতি গীয়তে কৃতিভিঃ সদা।।

যথা কালী তথা তারা তথা ছিন্না চ কুল্লকা।

একমূর্ত্তিশ্চতুর্ভেদ দেবি ত্বং কালিকা পুরা।।

একত্রিবিধা দেবী কোটিধানন্তরূপিনী।

অঙ্গাঙ্গিকৈর্নামভেদৈঃ কালিকেতি প্রগীয়তে।

শম্ভুঃ পঞ্চমুখেনৈব গুণান্ বক্তুং ন তে ক্ষমঃ।

চাপল্যৈর্যৎ কৃতং স্তোত্রং ক্ষমস্ব বরদা ভব।।

প্রাণান্ রক্ষ যশো রক্ষ পুত্রান্ দারান্ ধনং তথা।

সর্ব্বকালে সর্ব্বদেশে পাহি মাং দক্ষিণকালিকে।।

যঃ সংপূজ্য পঠেৎ স্তোত্রং দিবা বা রাত্রিসন্ধ্যায়োঃ।

ধনং ধান্যং তথা পুত্রং লভতে নাত্র সংশয়।।


শ্রীমন্মহাকালবিরচিত শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।


৮ম ধাপ ------ এবার বন্দনা করুন ---

ওঁ মহামায়ে জগন্মাত কালিকে ঘোর দক্ষিণে ৷

গৃহাণ্ বন্দনে দেবী নমস্তে শংকর প্রিয়ে ৷৷

ওঁ প্রচন্ডে পুত্রদে নিত্যং সুপ্রীতে সুর নায়িকে ৷

কুলদ্যোতকরে চোগ্রে জয়ং দেহী নমোহস্তুতে ৷৷


৯ম ধাপ ----------- এর পর অপরাধ ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচের মন্ত্র পড়ে কাজ শেষ করে আপনার সমস্যা বা মনোবাসনা মায়ের চরণে নিবেদন করুন -----

ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ য়দ্ ভবেৎ ৷

পুরনং ভবতু যৎ সর্ব, তৎ প্রসাদৎ সুরেশ্বরী ৷৷


(কৃতজ্ঞতা স্বীকার -- শ্রী গুরুদেব)

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

আমরাই তো অমৃতের পুত্র, আমরাই শিব

শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং

আমাদের মৃত্যু হতে অমৃতে নিয়ে যাও

-----------------------------------------------

সত্যম্, শিবম্, সুন্দরম্।

আমরা জানি ও মানি -- শিব সত্য ও সুন্দর। আবার এ ও জানি -- যত্র জীব তত্র শিব। 

'মনো বুধ্যহংকার চিত্তানি নাহং

ন চ শ্রোত্র জিহ্বা ন চ ঘ্রাণনেত্রম্।

ন চ ব্যোম্ ভূমির্ন তেজো ন বায়ুঃ

চিদানন্দ রূপঃ শিবোহং শিবোহম্।।'

--- আমি মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার, কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা, চোখ, ক্ষিতি, বায়ু, অগ্নি, ব্যোম বা বায়ু নই, আমি চিদাত্মা, চিদানন্দ স্বরূপ শিব -- শিবোহম্।

'অহং ভবানয়ঞ্চৈব রুদ্রোহয়ং যো ভবিষ্যতি।

একং রূপং ন ভেদোহস্তি ভেদে চ বন্ধনং ভবেৎ।।

তথাপীহ মদীয়ং শিবরূপং সনাতনম্।

মূলভূতং সদা প্রোক্তং সত্যং জ্ঞানমনন্তকম্।।' (জ্ঞানসংহিতা)।

--- আমি, তুমি, এই ব্রহ্মা এবং রুদ্র নামে যিনি উৎপন্ন হবেন, এই সকলই এক। এদের মধ্যে কোনো ভেদ নাই, ভেদ থাকলে বন্ধন হত। তথাপি আমার শিবরূপ সনাতন এবং সকলের মূল স্বরূপ বলে কথিত হয়, যা সত্য জ্ঞান ও অনন্ত স্বরূপ।

"যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ।" --- যখন আলো ছিল না, অন্ধকারও ছিল না; দিন ছিল না, রাত্রিও ছিল না; সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না -- তখন কেবলমাত্র ভগবান শিবই ছিলেন। শিব ব্যতীত কারো সম্পর্কে এভাবে বলা হয়নি। শুধুমাত্র শিবের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে -- "শিব এব কেবলঃ"। সুতরাং সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন।

সেই নিরাকার, সর্বব্যাপী পরমব্রহ্ম অমর ও আদি, যিনি রামেরও উপাস্য আবার যিনি রাবনেরও উপাস্য। যিনি শান্ত সদাশিব, যিনি অশান্ত রুদ্র, যিনি অজ্ঞানীর জ্ঞান, সেই তাঁকে একবার পাবার আশায় যুগ থেকে যুগে মানবকুল হিমালয়কে অতিক্রম করে চলেছেন মানস সরোবর ও কৈলাসে। 

মর্তলোকের সীমান্তে দন্ডায়মান হয়ে মানুষ অমরত্বের সন্ধানে, অমৃতের পুত্র কন্যাগন অমর্ত্যলোকের দ্বারে যাওয়ার বাসনায় মগ্ন থাকেন -- তুষারসমাকীর্ণ যে স্থানে মহাদেব বাস করেন বলে বিশ্বাস, যে পথে স্বয়ং মহাদেব মহামায়াকে নিয়ে চলাচল করেন। সম্মুখে অমরাবতী কৈলাস আর পিছনে যাত্রীরা দীর্ঘ পথে মৃত্যুকে ত্যাগ করে এসেছেন। অসত্যের থেকে সত্যকে, ভয় কে জয় করেছেন, তাই জয়ধ্বনি বিঘোষিত হয় --

‘অসতো মা সদগময়, 

তমসো মা জ্যোতির্গময়, 

মৃত্যোর্মাহমৃতং গময়।

আবিরাবির্ম এধি, 

রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্।’

— আমাদেরকে অসত্য হতে সত্যে নিয়ে যাও, আমাদের আঁধার হতে জ্যোতিতে নিয়ে যাও, আমাদের মৃত্যু হতে অমৃতে নিয়ে যাও, আমাদের নিকট আবির্ভূত হও, আবির্ভূত হও আমাদের নিকট আগমন কর। হে রুদ্র, তোমার যে করুণাপূর্ণ দক্ষিণমুখ, তদ্দ্বারা আমাদেরকে নিত্য রক্ষা কর।

হাজার হাজার বছর ধরে সনাতন হিন্দু ধর্ম 'সর্বপথ সম্ভব' দর্শনে বিশ্বাস করে। 

নানা মত সঙ্গে নিয়ে চলাই সনাতন হিন্দুর ঐতিহ্য। 

সনাতন হিন্দু ধর্ম বলে -- 'সত্য একটাই'। 

সনাতন হিন্দু ধর্ম বলেছেন --

'সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ 

সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ 

সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু মা কশ্চিদ্ দুঃখভাগভবেৎ।' 

--- সবাই সুখী হোক, সবাই হোক নীরোগ, সবার মঙ্গল হোক, কেউ যেন দুঃখ না পায়। 

সনাতন হিন্দু কখনও বলেনি শুধু হিন্দুরা সুখে থাক, সনাতন ধর্ম চেয়েছে সকলকে সুখী রাখতে। 

সনাতন হিন্দুরা কখনও কোনও মতকে আক্রমণ করেনি, পৃথিবীর কোনও ধর্মীয় সমাজকে তলোয়ার নিয়ে আঘাত করেনি। 

সম্প্রসারণবাদ ভারতের রক্তে নেই। 

সনাতন হিন্দু দেশের সমাজ 'বসুধৈব কুটুম্বকম' আদর্শ নিয়েই বাঁচে। 

আমাদের গর্ব করা উচিত আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। মহামারী থেকে বাঁচতে, রোগের জ্বালা থেকে সকলকে সুস্থ্য হয়ে উঠতে, করোনার মৃত্যুভ্রুকুটি থেকে বাঁচতে, মৃত্যুর অন্ধকারকে মুছে দিতে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিজেদের প্রয়াসে আলো জ্বালাতে বলেছেন। 

আসলে তিনি আমাদের হৃদয়ে সঞ্জীবনী আলোকবর্তিকা জ্বালাতে বলেছেন।

আমাদের মৃত্যুঞ্জয়ী হতে বলেছেন।

সকলকে সত্য ও সুন্দরের প্রতিভূ স্বরূপ শিব হতে বলেছেন।

সকলে বলুন --- আমরাই তো অমৃতের পুত্র, আমরাই শিব -- শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং।


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh


Share:

১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

সরস্বতী দেবী কে?

সরস্বতী শব্দটি ‘সার’ এবং ‘স্ব’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। সেই অনুসারে সরস্বতী শব্দের অর্থ যিনি কারো মধ্যে সারজ্ঞান প্রকাশ করেন। আবার সরস্বতী শব্দটি সংস্কৃত ‘সুরস বতি’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হচ্ছে জলের আধার। সরস্বতী সাক্ষাৎ দেবী মূর্তি এবং নদী-দুইরূপেই প্রকটিত। ঋগবেদে(২/৪১/১৬) বর্ণনা করা হয়েছে- 

অম্বিতমে নদীতমে সরস্বতী। 

অপ্রশস্তা ইব স্মসি প্রশস্তিমন্ব নস্কৃধি।।

অর্থাৎ “মাতৃগণের মধ্যে শ্রেষ্ট, নদীগণের মধ্যে শ্রেষ্ট, দেবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ট হে সরস্বতী, আমরা অসমৃদ্ধের ন্যায় রয়েছি, আমাদের সমৃদ্ধশালী করো।” সরস্বতী দেবী জ্ঞান, সঙ্গীত, কলা এবং বিদ্যার দেবী। 

সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী গোলোকে শ্রীকৃষ্ণের কন্ঠদেশ থেকে দেবী সরস্বতী উদ্ভূতা হয়েছিলেন। চৈতন্য ভাগবত (আদিলীলা ২/৯-১৪) তে বর্ণনা করা হয়েছে- 

পূর্বে ব্রহ্মা জন্মিলেন নাভিপদ্ধ হৈতে। 

তথাপিও শক্তি নাই কিছুই দেখিতে।। 

তবে যবে সর্ববারে লইলা শরণ, 

তবে প্রভু কৃপায় দিলেন দরশন। 

তবে কৃষ্ণ কৃপায় স্ফুরিত সরস্বতী। 

তবে সে জানিলা সর্ব অবতার স্থিতি।। 

এক সময় শ্রীব্রহ্মা সৃষ্টিকার্যের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। শান্তভাবে ধ্যানস্থ আছেন। কী করবেন, কী করা উচিত চিন্তা করছেন। এমন সময় তাঁর শরীর থেকে এক সুন্দরী দেবীমূর্তি প্রকাশিত হয়। দেবী ব্রহ্মাজীকে বললেন, হে বিধাতা আমি আপনার থেকে প্রকাশিত হলাম। এখন দয়া করে আপনি আমার স্থান এবং কী কর্ম তা নির্দেশ করুন। ‘ব্রহ্মা বললেন “তোমার নাম সরস্বতী। তুমি অবস্থান করো সকলের জিহ্বাতে বিশেষভাবে সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের জিহ্বাতে তুমি নৃত্য করো।পৃথিবীতে তুমি একটি নদীরূপে প্রকাশিত হও।”

দেবী সরস্বতী প্রশ্ন করলেন- হে বিধাতা, আপনি বললেন, আমি সবার জিহ্বাতে অবস্থান করবো; আবার বললেন, নদীরূপে থাকবো। এর ব্যাখ্যা কী? ব্রহ্মা বললেন-সরস্বতী তুমি যখন লোকের জিহ্বাতে অবস্থান করবে, তথন লোকের জিহ্বা থেকে বাকশক্তি হবে। তাই তোমার নাম বাকদেবী। তুমি আমার মুখ থেকেই প্রকাশিত। তুমি পবিত্রবতী। জগৎ-সংসারে বহু অপবিত্র মানসিকতা সম্পন্ন জীব থাকবে, অপবিত্র মানুষের জিহ্বায় কদর্য বাক্য স্ফুরিত হবে, সেসব জিহ্বাতে তুমি অবস্থান করে সুখি হতে পারবে না। 

হে সরস্বতী, তুমি সাক্ষাৎ বুদ্ধি স্বরূপিণী। তুমি বলো, কোথায় তুমি আনন্দ লাভ করবে? সরস্বতী বললেন-যে সমস্ত ব্যক্তি পরম সুন্দর পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করেন, তাদের জিহ্বায় সর্বদা পরম প্রভুর নাম কীর্তিত হবে। আমি তাঁদের পবিত্র জিহ্বায় অধিষ্ঠান করবো। 

ব্রহ্মাজী ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করেছেন-সেই পরম সুন্দর ভগবান কে? তিনি বর্ণনা করেছেন, “সেই পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দ। তিনি অনাদির আদি এবং সর্বকারণের পরম কারণ। সেই আদি এবং সর্বকারণের পরম কারণ। সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।” কলিসন্তরণ উপনিষদে বর্ণনা করা হয়েছে- 

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। 

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

ইত ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মাষ নাশনম্। 

নাতো পরতর উপায় সর্ববেদেষু দৃশ্যতে।। 

শ্রীমদ্ভাগবতে (১১/৫/৩২) বর্ণনা করা হয়েছে- 

কৃষ্ণবর্ণ তিষাকৃষ্রং সাঙ্গোপাঙ্গোঅস্ত্রপার্ষদম্। 

যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্ত হি সুমেধসঃ।।

কলিযুগে সুমেধাসম্পন্ন মানুষেরা কৃষ্ণনাম কীর্তনের দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন। 

পুরাণে সরস্বতী 

বেদের যজ্ঞধাত্রী সরস্বতী পুরাণে ধরা দিয়েছেন বিচিত্র লীলাময়ী রূপে। অনেকগুলো পুরাণেই আমরা সরস্বতীর সাক্ষাৎ পাই। কিন্তু বৈদিককালের সরস্বতী মৌলিক ভাবনিচয় পুরাণের বর্ণনায় কোথাও ক্ষুণ্ণ হয়নি বরং হয়েছে অধিকতর সুপ্রকাশিত। দেবী ভাগবতে (৯/৭) বলেন, দেবী সরস্বতী আদ্যা প্রকৃতির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। তিনি বোধস্বরূপিণী, সমুদয় সংশয়ছেদনকারিণী এবং সর্বসিদ্ধি প্রদায়িণী। সঙ্গীতের সন্ধান ও তাল প্রভৃতির কারণ স্বরূপিণীও তিনিই। 

দেবী সরস্বতীর উপদেশ 

মহর্ষি কশ্যপের এক বংশের ছিলেন তার্ক্ষ্য। সেই তার্ক্ষ্য ঋষি একদিন তপস্যাকালে দেবী সরস্বতীর সাক্ষাৎ পেলেন। শ্বেতবসনা, বীণাধারিণী, দুগ্ধবর্ণা দেবী সরস্বতী। ঋষি তাঁকে প্রণতি নিবেদন করলেন। 

দেবী বললেন, হে বৎস, তোমার মনে অনেক প্রশ্ন আছে বলে জানি। তুমি যদি এখন কিছু জানতে চাও, তবে বলো। তার্ক্ষ্য ঋষি জানালেন হে ভদ্রে, দয়া করে বলুন ইহলোকে মানুষের কল্যাণ কীভাবে হবে? দেবী সরস্বতী বললেন, হে তপবোন, যে ব্যক্তির হৃদয় শুদ্ধ, শাস্ত্র নির্দেশ যে যত্ন সহকারে পালন করে, তারই যথার্থ কল্যাণ হয়। কী কর্ম করলে মানুষ এ জীবনের পর উর্ধ্বগতি বা নিম্নগতি লাভ করে? যদি কোনো ব্যক্তি অন্য সাত্ত্বিক ব্যক্তিকে ধন দান, আশ্রয় দান, চিকিৎসা দান, অন্ন দান, বস্ত্র প্রভৃতি দান করে তবে সুখময় স্বর্গীয় গ্রহলোকে উপনীত হবে। যে ব্যক্তি কাম ও ক্রোধ দ্বারা নিরন্তর মোহাচ্ছন্ন থাকে, সে ঘোরতর নরকলোকে নিপতিত হবে।

হে দেবী, কারা বৈকুণ্ঠ বা গোলোক ধামে উপনীত হতে পারবে? যাঁরা যজ্ঞাবশেষ ভোজী অর্থাৎ শ্রীহরির মহাপ্রসাদ যাঁরা ভোজন করেন, যাঁরা সত্যব্রত অর্থাৎ ভগবৎ-ভক্তি অনুশীলন করেন, যাঁরা শ্রদ্ধাবান অর্থাৎ ভগবান ও ভক্তের নির্দেশ মেনে চলতে আগ্রহান্বিত, যাঁরা নিরহংকার অর্থাৎ ভগবৎ সম্বন্ধ ছাড়া অন্য কারো সম্বন্ধে আকৃষ্ট নন, তাঁরাই শ্রীহরির সেবা করার উপযুক্ত হন। পরিণামে তাঁরা অতি পবিত্র ধাম গোলোক লাভ করেন এবং পরম সত্য স্বরূপ শ্রীকৃ্ষ্ণকে তাঁরা নিরীক্ষণ করে থাকেন। 

ঋষি তার্ক্ষ্য আবার স্বরসতী দেবীকে প্রশ্ন করলেন, হে পরমাত্মারূপা প্রজ্ঞা, আপনি কে? দেবী সরস্বতী বললেন, আমি পরাপর বিদ্যারূপা দেবী। অর্থাৎ পরা বিদ্যা হচ্ছে ভগবান ও ভক্তি সম্বন্ধীয় বিদ্যা এবং অপরা বিদ্যা হচ্ছে জড়জগতের কর্মকান্ডীয় বিদ্যা। এ উভয় বিদ্যাই আমি জিবকে প্রদান করি

হে ঋষি, যারা বহু বহু বর্ষব্যাপী সুখ ভোগের উদ্দেশ্যে উচ্চতর লোক ব্রহ্মলোক, স্বর্গলোক ইত্যাদি গ্রহে যাওয়ার জন্য কামনা করে, তাদের আমি দান ব্রত ইত্যাদির নানাবিধ পুণ্য পবিত্র কর্মে প্রবৃত্ত করি। আর যাঁরা ভগবদ্ধধামে গোলোকে বৈকুণ্ঠে যাত্রা করবার আকাঙ্ক্ষা করেন, তাঁদের আমি ভক্তি বিদ্যা দান করি। 

তার্ক্ষ্য বললেন, হে দেবী সকল পন্ডিত ব্যক্তি বিশ্বস্ত মনে যাকে শ্রেয় জ্ঞান করে ইন্দ্রিয় সংযম প্রভৃতি কঠোর ব্রত অনুষ্ঠান করেন, সেই দুঃখশোক শূন্য মোক্ষ কী? সাংখ্য শাস্ত্রে যাঁকে চিরন্তন ও শ্রেষ্ঠ বলে নির্দেশ করে, সেই পরমাত্মা কে? আমি জানি না, তাই আপনি দয়া করে সেই বিষয়ে উপদেশ দিন। 

দেবী সরস্বতী বললেন, হে তার্ক্ষ্য, বিচক্ষণ পন্ডিত ব্যক্তিরা শোকরহিত ও বিষয় বাসনা শূন্য হয়ে ব্রতপরায়ণ হন এবং ভক্তিযোগে যে আদি পুরুষকে প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, তিনি হচ্ছে সেই পরম ব্রহ্ম, পরমাত্মা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। হে ঋষি, যে স্থানে ভক্তরা সেই পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির উদ্দেশ্যে যাবতীয় কর্ম করেন, সেই স্থান আমার আশ্রয়স্বরূপ। 

সরস্বতী পূজার বর্তমান প্রেক্ষাপট 

বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ধর্মের নামে নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে ব্যস্ত। এমনকি মানুষ মনে করছে তারা ধর্ম করছে, কিন্তু দেব-দেবীদের সামনে যে আচরণ করছে, তা এমনকি সভ্য সমাজে অপাঙক্তেয়। যুবক-যু্বতী, মধ্য বয়স্করা বলিউডের গানের তালে তালে নিজেদের ইন্দ্রিয় তোষণের চেষ্টা করছে, আর ভাবছে সে মায়ের বা দেবীর আরাধনা করছে। যে ধরনের আচরণ সে এমনকি নিজের মায়ের সম্মুখে করতে পারে না, সেই অসদাচরণ জগজ্জননী মায়ের তথাকথিত পূজার ছলে করছে।

এমনকি শোনা যায়, মায়ের পূজার জন্য যে অর্থ সংগ্রহ করনে, তা তারা নিজেদের ইন্দ্রিয় তোষণের জন্য বিভিন্ন জাগতিক (তথা যৌন উদ্দীপক) গানের আসরের আয়োজন করছে। কখনো কখনো মদ্যপানের জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই যথার্থ মনোভাব ও ভাগগাম্ভীর্য নিয়ে পূজা সম্পাদন করা। সর্বতোভাবে সন্তুষ্ট করে না এমন সব গান বা কার্য থেকৈ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা। পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে, কোন কার্য মাতা সরস্বতীকে সন্তুষ্ট করতে পারে। আমরা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করব কোন মনোভাবে আমাদের মায়ের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা উচিত, কোন বাহ্যিক বিষয় মায়ের প্রার্থনায় গুরুত্ব বহন করে না, কোন প্রতিমায় মা অবস্থান গ্রহণ করেন।

সরস্বতী পূজা কি লৌকিক প্রথা? 

আমরা বেশির ভাগই ধর্ম করি, পূর্বপুরুষের ধারা অনুযায়ী অথবা সকল কর্মের ফল লাভের জন্য অথবা না বুঝে আনন্দ পাই বলে পূজার লৌকিক প্রয়াস করি। এধরনের প্রয়াসের ফলে মনের শান্তি অনুভব হয় বটে; কিন্তু তা কি আমাদের বিদ্যা লাভের প্রকৃত উদ্দেশ্যে সাধিত হয়? এ ধরণের লৌকিক প্রয়ােসই লৌকিকতা বা প্রথাগত ধর্মাচার বলে পরিগণিত হয়।

উইকিপিডিয়া-এর সংজ্ঞানুযায়ী, লৌকিকতা ও কর্তব্যবোধে আচরিত অনুভূতিবিহীন ধর্মাচরণকে  Ritual বলা হয়। আমরা হয়তো বেশির ভাগই লৌকিকতার  কারণেই পূজা করছি; কিন্তু কীভাবে ধর্মাচরণ করলে বা পূজা করলে লৌকিকতা মুক্ত হয়ে প্রকৃত অর্থেই বিদ্যা লাভের  পথে এগিয়ে যেতে পারব, সেভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত। প্রার্থনা বলতে শাস্ত্রে বলা হয়েছে-“প্রার্থনা হলো এমন একটি কার্য যার দ্বারা একজন ব্যক্তি তার মন  ও চিত্তকে ভগবানে/দেবতার কাছে নির্দিষ্ট করতে পারে। প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা ভগবানের/দেবতার কাছে আমাদের অসহায়ত্ব ও ক্ষুদ্রত্ব স্বীকার করে তাঁর চরণে সমর্পিত হই। প্রার্থনা মগ্ন হওয়ার অর্থ, পরমেশ্বর ভগবান/আরাধ্য দেবতার কথা স্মরণ করা, তাঁকে দর্শন করা, তার সঙ্গে কথা বলা অথবা তাঁর বিষয়ে চিন্তা করা। শ্রীমদ্ভাগবতে প্রার্থনায় আমাদের যা করতে বলঅ হয়েছে তা হলো:

১. তাঁর মহিমা কীর্তন, ২. কৃতজ্ঞতা স্বীকার, ৩. হৃদয়ের আকুলতা, ৪. ক্ষমা প্রার্থনা

প্রার্থনা আমাদের হৃদয় থেকে উৎসারিত হওয়া উচিত। যদি প্রার্থনা হৃদয় থেকে না আসে, তবে সেটা শুধুমাত্র মুখের কসরত ছাড়া আর কিছু হবে না। প্রাথমিক অবস্থায় হৃদয় থেকে প্রার্থনা করা কঠিন হতে পারে, তাই ভগবান/দেবতার কাছে আমাদের বিনীত হওয়ার অক্ষমতার জন্য অনুতপ্ত হয়ে বিনীত প্রার্থনা করা উচিত।


(লেখক : শ্রীপাদ মিত্রগোপা কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী)

Courtesy: Sankirtan Madhava Das

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।