• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

১৭ জানুয়ারী ২০১৯

সরস্বতী পূজা পদ্ধতি - সম্পূর্ণ বাংলায় সরস্বতী পূজা পদ্ধতি মন্ত্রসহ



সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম প্রচলিত পূজা। সরস্বতী দেবীকে শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী ও আশীর্বাদাত্রী মনে করা হয়। বাংলা মাঘ মাসের ৫মী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলায় সফলতার আশায় শিক্ষার্থীরা দেবীর পূজা করে থাকে।

বাকদেবী, বিরাজ, সারদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা, পৃথুধর, বকেশ্বরী সহ আরো অনেক নামেই দেবী ভক্তের হৃদয়ে বিরাক করে।

পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে উথ্থান। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী ব্রহ্মা এক স্বকীয় নিদর্শন।

পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়। পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার বস্র পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকে। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার অারেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান।





পূজা পদ্ধতি _ গৌরমোহন দাস

 দেবতা জাগ্রতকরণ :
                   উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ শ্রীগুরো ত্যজ নিদ্রাং কৃপাময়।
                  উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ গৌরাঙ্গ জহি নিদ্রাং মহাপ্রভো।
                  শুভদৃষ্টিপ্রদানেন ত্রৈলোক্যমঙ্গলং কুরু ॥
                   ঈশ্বর শ্রীহরে কৃষ্ণ দেবকীনন্দন প্রভো।
                   নিদ্রাং মুঞ্চ জগন্নাথ প্রভাতসময়ো ভবেৎ ॥
                    উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ গোবিন্দ উত্তিষ্ঠ পরমেশ্বর।
                   উত্তিষ্ঠ কমলাকান্ত ত্রৈলোক্যংমঙ্গলং কুরু ॥

গঙ্গা প্রণাম :  
            ওঁ বিষ্ণুপাদার্ঘ্যসম্ভূতে গঙ্গে ত্রিপথগামিনি।
           ধর্মদ্রবীতি বিখ্যাতে পাপং মে হর জাহ্নবি॥
           শ্রদ্ধয়া ভক্তি সম্পন্নে শ্রীমাতর্দেবী জাহ্নবি।
          অমৃতেনাম্বুনা তব ভাগীরথি পুণীহি মাম্ ॥

অগ্নি প্রজ্বলন এবং জল শুদ্ধি  :
          ওঁ-কারস্য ব্রহ্ম ঋষির্গায়ত্রীচ্ছন্দেগ্নির্দেবতা সর্বকর্মারম্ভে বিনিয়োগ।
          ওঁ সপ্তব্যাপহৃতিনাং প্রজাপতিঋষি গায়ত্রী-উষ্ণিগনুষ্টুপ-বৃহতি পংক্তিত্রিষ্টুপজগত্যশ্ছন্দাংসি অগ্নির্বায়ু সূর্যবরুণ বৃহস্পতিন্দ্র বিশ্বেদেবা দেবতাঃ প্রাণায়ামে বিনিয়োগঃ। গায়ত্র্যাঃ      বিশ্বামিত্রঋষির্গায়ত্রিচ্ছন্দঃ সবিতা দেবতা প্রাণায়মে বিনিয়োগঃ॥
গায়ত্রী শিরস প্রজাপতিঋষির্ব্রহ্মবায়ু অগ্নি সূর্যাশ্চতস্রোদেবতাঃ প্রাণায়ামে বিনিয়োগঃ॥
আসন শুদ্ধিমন্ত্র :
         ওঁ অস্য আসনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষি সুতলং ছন্দঃ।
        কূর্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ॥ ১
           ওঁ পৃথ্বিত্বয়া ধৃত্বা লোকা দেবিত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।       
          ত্বং চ ধারায় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরুচাসনম্॥ ২
বামে- গুরুভ্যো নমঃ, ডানে- গণেশায় নমঃ, ঊর্ধ্বে- ব্রহ্মণে নমঃ,
নিচে-অনন্তায় নমঃ, সামনে-শিবায় নমঃ।

আচমন :
        (জল হাতে রেখে)
       ওঁ শং নো দেবীরভিষ্টয় আপোভবন্তু পীতয়ে।
       শংযোরভিস্রবন্তু  ন ॥ ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু । বলে জল দ্বারা ৩ বার মুখ মার্জনা

হাত জোড় করে
        ওঁ তদবিষ্ণু পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ।
         দিবীব চক্ষুরাততম ॥
ওঁ শঙ্খচক্রধরং বিষ্ণুং দ্বিভূজং পীতবাসসম্।
প্রারম্ভে কর্মণ কর্তা পাবনং তং স্মরেদ্ধরিম ॥
      ওঁ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি।
      স্মরন্তি সাধবঃ সর্বে সর্বকর্মসু মাধবম্ ॥
             ওঁ অপবিত্র পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা
              যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তÍÍরঃ শুচি॥ (বৃ.ভক্তিতত্ত্বসার)
তুলসী প্রণামমন্ত্র :   
           ‘ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসীদেবৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ।
            বিষ্ণুভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈ নমো নমঃ॥
তিলক ধারণ :   
      কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম।
      পুণ্য যশস্যমায়ুষ্যং তিলকং মে প্রসাদ তু ॥

চন্দন তিলক :
             কান্তিং লক্ষ্মী ধৃতিং সৌম্যং সৌভাগ্যমতুলং।
            দদাতু চন্দনং নিত্যং সততং ধারয়াম্যহম্ ॥
১. ললাটে কেশবায় নমঃ        ২. কণ্ঠে পুরুষোত্তমায় নমঃ
৩. বাম হাতে বাসুদেবায় নমঃ      ৪. ডান হাতে দামোদরায় নমঃ
৫. নাভিতে নারায়ণায় নমঃ      ৬. হৃদয়ে মাধবায় নমঃ
৭. ডানপাশে গোবিন্দায় নমঃ      ৮. বামপাশে ত্রিবিক্রমায় নমঃ
৯. ডান কানের মূলে মধুসূদনায় নমঃ  ১০. বামকানের মূলে বিষ্ণবে নমঃ
১১. মাথার মধ্যে হৃষিকেশায় নমঃ ১২. মেরুদণ্ডে পদ্মনাভায় নমঃ
১৩. নাকের ডগায় পবনায় নমঃ    ১৪. বাসুদেবায় নমঃ বলে ঘ্রাণগ্রহণ
শিখাবন্ধন    :
       ওঁ ব্রহ্মবাণী সহস্রাণি শিবানী শতেন চ  
       বিষ্ণোর্নামসহস্রেণ শিখাবন্ধনং করোম্যহম্ ॥
      ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎসবির্তুবরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি।
       ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ॥
শিখা মোচন :  
       ওঁ গচ্ছন্তু সকলা দেবা ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরাঃ।
       তিষ্ঠত্বত্রাচলা লক্ষ্মীঃ শিখামুক্তং করোম্যহম॥

কর শুদ্ধি :
            ‘ঐঁ’ মন্ত্রে ডান হাতে একটি ফুল নিয়ে ওঁ মন্ত্রে উহা দুই হাতে পেষণ করে ঈশান কোণে ফেলতে হবে।
ফুল শুদ্ধিমন্ত্র :       ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে
                        পুষ্পচয়াবকীর্ণে চ হুঁ ফট স্বাহা।
  এরপর - এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ।
     এতে গন্ধেপুষ্পে এতঃ সম্প্রদানৈ ওঁ শ্রীশ্রীদেবতায় নমঃ ॥
ধূপদীপ শুদ্ধি     :   ওঁ এতৌ ধূপদীপৌ বং নমঃ (বলে ধূপ ও দীপে ফুল দিবেন)
শঙ্খশুদ্ধি         :   এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ হুং হুং হুং নমঃ মহাশঙ্খায় স্বাহা।
ঘণ্টাশুদ্ধি         :   এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ জয়ধ্বনি মন্ত্রমাতঃ স্বাহা।
ঘট স্থাপনমন্ত্র    :     ওঁ সর্বতীর্থদ্ভবং বারি সর্বদেব সমন্বিতম।
                          ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবগণৈঃ সহ॥
                         ওঁ  স্থাং স্থীং স্থিরোভব।
                      ওঁ স্থিরোভব বিড়বঙ্গ আশুর্ভব বাজ্যর্বন।
                      পৃথুর্ভব সুষদস্তমগ্নেঃ পরীষবাহন॥
প্রাণ প্রতিষ্ঠা :
     প্রতিমার হৃদয়ে আঙ্গুল রেখে
 ওঁ মনোজ্যোতিজ্যোষতামাজ্যস্য বৃহস্পতির্যজ্ঞমিমং তনোত্বরিষ্ঠং যজ্ঞং সমিমং দধাতু। বিশ্বে দেবাস ইহ মাদায়ন্তা মোং প্রতিষ্ঠ ॥
 ওঁ অস্যৈ প্রাণাঃ প্রতিষ্ঠন্তু অস্যৈ প্রাণাঃ ক্ষরন্তু চ। অস্যৈ দেবত্ব সিদ্ধয়ে স্বাহা॥
        অর্ঘ্যজলের ছিটা দিয়ে কম পক্ষে দশবার গায়ত্রী মন্ত্র জপ:
ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎসবির্তুবরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি। ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াঃ॥
সামান্যার্ঘ্য স্থাপন :
              পূজা করতে বসে সামনে (মাটিতে) ত্রিভুজ এঁকে তাকে ফুল-চন্দন দিয়ে পূজা করবে।
           এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অনন্তায় আধারশক্তয়ে নমঃ।
          এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ প্রকৃত্যৈ নমঃ।     এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কূর্মায় নমঃ।
          এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অনন্তায় নমঃ।     এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ পৃথিব্যৈ নমঃ।
কোষা প্রক্ষালন করে তার অগ্রভাগ (সরু দিক) দেবতার দিকে ত্রিকোণের উপর স্থাপন করে উহা জলপূর্ণ করে এবং অগ্রভাগে গন্ধপুষ্প, আতপতণ্ডুল, বিল্বপত্র ও দূর্বা প্রদান করতে হবে। এরপর কোষে জল স্পর্শ করে
      ওঁ শন্নো আপো ধণ¡ন্যাঃ শমনঃ সন্তুনূপ্যা।
      শণœঃ সমুদ্রিয়া আপঃ শমনঃ সন্তুকূপ্যাঃ ॥
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু ॥
         ওঁ কুরুক্ষেত্র গয়াগঙ্গা প্রভাস পুষ্করাণি চ।
          তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি পূজাকালে/স্নানকালে ভবন্তীহ॥
সূর্যার্ঘ্য দান :
(পূজামন্ত্র : ওঁ হ্রীং হ্রীং সূর্যায় নমঃ)
ওঁ নমঃ সবিত্রে জগদেকচক্ষুষে জগৎপ্রসূতিস্থিতিনাশহেতবে।
এয়ীময়ায় ত্রিগুণাত্মধারিণে বিরিঞ্চিনারায়ণ শঙ্করাত্মনে॥
ওঁ এহি সূর্য সহস্রাংশো তেজোরাশে জগৎপতে।
অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহাণার্ঘং দিবাকর ॥
সূর্য প্রণাম :
        ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম।
         ধ্বন্তারিং সর্ব পাপঘœং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্॥

সংকল্প :
        ওঁ তৎ সৎ, অদ্য........    ,মাসে......       .পক্ষে.....তিথ্যো ....... গোত্র মম সংকল্পিতং.......পূজনকর্মাহং   ........উপাচারে/যথাসাধ্য সংকল্প মস্তু /করিষ্যামি।

দেবতাদিগকে গন্ধপুষ্পদান :
                 এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ সিদ্ধেদাত্রে শ্রীগণেশায় নমঃ।
                এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ শ্রীলক্ষ্মীকান্তায় নারায়ণায় নমঃ।
               এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ শিবাদি পঞ্চ দেবতাভ্যো নমঃ।
               এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহেভ্যো নমঃ।
              এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ।
               এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ মৎসাদি দশাবতারেভ্যো নমঃ।

জল দান মন্ত্র :

ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ।   ওঁ ব্রাহ্মণেভ্যো নমঃ     আচার্যেভ্যো নমঃ।
ঋষিভ্যো,      দেবেভ্যো,        বেদেভ্যো নমঃ।
বায়বে, মৃত্যবে, বিষ্ণবে নমঃ।        বিশ্রবণায়, উপজায় নমঃ।

পিতৃ-মাতৃ প্রণাম :
               ওঁ পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ  পিতাহি পরমং তপঃ।
                পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতাঃ॥
       যৎ প্রসাদাৎ জগৎদৃষ্টং পূর্ণকামো যদাশীষা।
        প্রত্যক্ষ দেবতা মে তুভ্যং মাত্রে নমো নমঃ ॥
গুরু প্রণাম :  
            ওঁ অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম
            তদ্পদংদর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥
     ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধ্যস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া
    চক্ষুরুনমিলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥
গণেশ প্রণামমন্ত্র :
           ওঁ দেবেন্দ্রমৌলিমন্দার মকরন্দ-কণারুণাঃ।
            বিঘ্নং হরস্তু হেরম্ব চরণাম্বজরেণব্ ঃ দিবাকরম্॥
          ওঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।
         বিঘ্নং নাশ্চকরং দেবং হেরম্বং প্রণাম্যাহম্॥
    ওঁ সিদ্ধিদাত্রে গণেশায় সর্ববিঘ্নং প্রশান্তয়ে লেখকায় নমস্তুভ্যং দেবাগ্রযজ্ঞভাগিনে॥

শ্রীকৃষ্ণ/বিষ্ণু/নারায়ণ প্রণামমন্ত্র :

      ওঁ ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রাহ্মণ হিতায় চ।
      জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥
     ওঁ কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে।
     প্রণতঃ ক্লেশ নাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥
      হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে।
      গোপেশ গোপীকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তুতে ॥

নারায়ণ প্রণামমন্ত্র :
                 ওঁ ত্রৈলোক্যপূজিত শ্রীমন্ সদা বিজয়বর্ধন।
                 শান্তি কুরু গদাপাণে নারায়ণ নমোহস্তুতে ॥(জ্ঞানমঞ্জরী ২/১৮৭)
লক্ষ্মী ধ্যানমন্ত্র :
    ওঁ পাশাক্ষ মালিকাম্ভোজ শৃণিভির্যামসৌম্যয়োঃ।
    পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্য মাতরম্ ॥
     গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ নানালঙ্কার ভুষিতাম।
     রৌ´পদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তুং॥
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র :
                        ওঁ নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
                      যা গতিস্তৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াৎ ত্বর্দর্চ্চনাৎ।
                  এষ সচন্দন পুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলি ওঁ শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ॥
লক্ষ্মী প্রণামমন্ত্র :

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মলয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ॥

লক্ষ্মী গায়ত্রীমন্ত্র :
  মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রিয়ৈ ধীমহি তন্নঃ    শ্রীঃ  প্রচোদয়াৎ।

সরস্বতী ধ্যানমন্ত্র :

 ওঁ তরুণ-শকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ
কুচভরণমিতাঙ্গী সন্নিষণা সিতাজে।
নিজকর কমলোদ্যল্লেখনী পুস্তকশ্রীঃ
সকল বিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগ্দেবতা নমঃ॥
মন্ত্র : ওঁ সরস্বতৈ নমঃ।

সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র :
ওঁ সরস্বতৈ নমো নিত্যং ভদ্রকাল্লৈ নমো নমঃ।
 বেদ- বেদাঙ্গ বেদান্তÍ বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ স্বাহা ॥
এষ স চন্দন পুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ওঁ সরস্বতৈ নমঃ ॥

সরস্বতী প্রণামমন্ত্র :

ওঁ জয় জয় দেবী চরাচরসারে।    কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
 বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তে ॥
 ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
    বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহী নমোহস্তুতে ॥
সরস্বতী গায়ত্রীমন্ত্র : ওঁ বাগদেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তনো দেবী  প্রচোদয়াৎ ওঁ।

লোকনাথ প্রণামমন্ত্র :    নমস্তে আর্তত্রাণায় সর্বসিদ্ধি প্রদায়িণে।
                             নমস্তে লোকনাথায় ব্রহ্মত্মনে নমো নমঃ ॥


দেবদেবী    বীজমন্ত্র    জপের মন্ত্র    প্রণাম/উৎসর্গের মন্ত্র

কৃষ্ণ         ওঁ ক্লীং       ওঁ ক্লীং কৃষ্ণঃ           ওঁ ক্লীং কৃষ্ণায় নমঃ/স্বাহা
বিষ্ণু          ওঁ           ওঁ বিষ্ণু                ওঁ বিষ্ণবে নমঃ/স্বাহা
নারায়ণ       ওঁ           ওঁ নারায়ণঃ            ওঁ নারায়ণায় নমঃ/স্বাহা
গণেশ      ওঁ গং          ওঁ গং গণেশ         ওঁ গং গণেশায় নমঃ/স্বাহা
লক্ষ্মী         ওঁ শ্রীং      ওঁ শ্রীং লক্ষ্মী            ওঁ শ্রীং লক্ষ্মী দেব্যৈ নমঃ/স্বাহা
সরস্বতী      ওঁ ঐঁং     ওঁ ঐং সরস্বতী         ওঁ ঐং সরস্বতী দেবৈ নমঃ/স্বাহা
শিব          ওঁ           ওঁ শিবঃ                  ওঁ শিবায় নমঃ/স্বাহা
দুর্গা      ওঁ হ্রীং দুর্গাঃ    ওঁ হ্রীং দুর্গাঃ           ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ/স্বাহা
কালী    ওঁ হ্রীং         ওঁ হ্রীং কালী              ওঁ হ্রীং কালীকায়ৈ নমঃ/স্বাহা
রাম    ওঁ রাং           ওঁ রাং রাম              ওঁ রাং রামচন্দ্রায় নমঃ/স্বাহা
চণ্ডী    ওঁ হ্রীং          ওঁ হ্রীং চণ্ডী                 ওঁ হ্রীং নমশ্চণ্ডীকায়ৈ/স্বাহা
গুরু    ওঁ ঐং        ওঁ ঐং (অমুক) গুরু        ওঁ ঐং (অমুক) গুরবে নমঃ/স্বাহা
কার্তিক    ওঁ কাং       ওঁ কাং কার্তিক          ওঁ কাং কার্তিকেয়ায় নমঃ/স্বাহা
বনদুর্গা    ওঁ হ্রীং       ওঁ হ্রীং বনদুর্গা              ওঁ হ্রীং বনদুর্গায়ৈ নমঃ/স্বাহা
মঙ্গলচণ্ডী    ওঁ হ্রীং     ওঁ হ্রীং মঙ্গলচণ্ডী            ওঁ হ্রীং মঙ্গলচণ্ডিকায়ৈ নমঃ/স্বাহা
শীতলা    ওঁ হ্রীং    ওঁ হ্রীং শীতলা    ওঁ হ্রীং শ্রী শীতলায়ৈ নমঃ/স্বাহা
সর্বদেবদেবী    ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং    ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং ওঁ    ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং নমঃ/স্বাহা

শান্তিপাঠ :
         মধুবাতা ঋতায়তে        মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব।
            মাধ্বীর্ণ সন্তোষধীঃ॥
    মধু নক্তমুতোষসো           মধুমৎ পার্থিবং রজঃ।              মধু দ্যৌরস্তু নঃ পিতা॥
    মধুমান্নো বনস্পতি           মধুমান্নোনস্তু সূর্যঃ।                  মাধ্বী গার্বো ভবন্তু। (ঋগে¦দ-১/৯০/৬-৮)

ওঁ দ্যৌঃ শান্তিরন্তরিক্ষং শান্তিঃ
পৃথিবী শান্তিরাপঃ শান্তি রোষধয়ঃ শান্তিঃ॥
বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বেদেবাঃ শান্তি ব্রহ্ম শান্তিঃ
সর্বং শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ সা মা শান্তিরেধি॥ (শুক্ল যজুর্বেদ ৩৬/১৭)

       ওঁ অসতো মা সদ্গময়    তমসো মা জ্যোতির্গময়
         মৃত্যুর্মাহমৃতংগময়         আবিরাবি র্ম এধি।

ওঁ সর্বেষাং মঙ্গলাং ভুয়াৎ           সর্বে সুখিনঃ ভবন্তু
সর্বে সন্তু নিরাময়া               সর্বে ভদ্রাণী পশন্তু
মা কশ্চিদ্ দুঃখ ভাক্ ভবেৎ ॥ (বৃহদারণ্যক উপনিষদ)

ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি ন-স্তার্ক্ষ্যােরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু ॥
     ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি ॥ (অথর্ববেদীয় শান্তিমন্ত্র)

                        ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যৎ ভবেৎ।
                        পূর্ণং ভবতু তৎ প্রসাদাৎ জনার্দন ॥
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং        পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায়        পূর্ণমেবাবশিষ্যতে॥
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি ॥ (শুক্ল যজুর্বেদ)

ভোগ নিবেদন :
    ভোগ নিবেদন পাত্রে একটি করে তুলসী পাতা দিতে হবে। ভোগ নিবেদন পাত্রের পাশে গ্লাসে জল দিতে হবে, কর্পূর দিতে পারলে ভাল হয়। ভোগ নিবেদনে আপনার গুরু প্রদত্ত দীক্ষামন্ত্র/পঞ্চতত্ত্ব/হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কমপক্ষে ১০ বার (প্রতি পাত্রের জন্য) জপ করুন এবং পূর্বের মতো বীজমন্ত্র উচ্চারণ করে ফুল, জল অর্পণ করুন।
নিবেদনের প্রণাম মন্ত্র : 
    সমানায় স্বাহা     উপানায় স্বাহা   
    অপানায় স্বাহা     ব্যানানায় স্বাহা
               পস্তুরমসি  স্বাহা
ভূ পতয়ে নমঃ         ভূব পতয়ে নমঃ
স্ব পতয়ে নমঃ         ভূভূর্বস্ব পতয়ে নমঃ
       নারায়ণ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ।

এতৎ সোপকরণামান্ননৈবেদ্যং ওঁ শ্রীশ্রীদেব /শ্রীশ্রীদেব্যৈ নমঃ (নৈবেদ্যে ফুল দিতে হবে)।
ভোগ নিবেদনের পর : বিগ্রহের বীজমন্ত্রে ধ্যানমন্ত্র অনুযায়ী ধ্যান করতে হবে (কমপক্ষে ১০ বার

পঞ্চতত্ত্ব বন্দনা :
     জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ।
    শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌরভক্তবৃন্দ॥
মহামন্ত্র :
       হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
      হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

লক্ষ্মীর পাঁচালী :

আরতী    : ১. ধূপ ২.পঞ্চদীপ ৩. কর্পূরদীপ ৪. জলশঙ্খ ৫. রুমাল/পাখা (শীতে পাখা বন্ধ) ৬. পুষ্পচন্দন।

                   ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যৎ ভবেৎ।
                     পূর্ণং ভবতু তৎ প্রসাদাৎ জনার্দন ॥
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং        পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায়        পূর্ণমেবাবশিষ্যতে॥
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি ॥ (শুক্ল যজুর্বেদ)
                                                         ......................................................................................................................................................................

কালী প্রণামমন্ত্র :
      ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রাকালী কপালিনী।
       দুর্গা শিবা ক্ষমাধাত্রী স্বাহা সদা নমোহস্তুতে ॥
         সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
                 শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে॥ (শ্রীশ্রীচণ্ডী-১১/১০)

তুলসী চয়নমন্ত্র :      ওঁ তুলস্যমৃতনামামি সদা ত্বং কেশবপ্রিয়ে।
                 কেশবার্থে চিনোমি ত্বাং বরদা ভব শোভন্ ে॥
আরতী তত্ত্ব :
১.       ধূপ        ক্ষিতিতত্ত্ব      দেহের প্রতীক                 দেহ সমর্পণ।     
২.     পঞ্চদীপ    তেজতত্ত্ব        পঞ্চপ্রাণের প্রতীক           পঞ্চপ্রাণ সমর্পণ    
৩.    কর্পূরদীপ   বায়ুতত্ত্ব        মন বুদ্ধির প্রতীক                 মনসমর্পণ।            
৪.    জলশঙ্খ    জলতত্ত্ব         স্নেহ, প্রীতির প্রতীক, হৃদয় পবিত্রতার             প্রীতিসমর্পণ।
৫.   বস্ত্র/রুমাল  আকাশতত্ত্ব     লজ্জা, ভয়াদির প্রতীক-হৃদয়পাত্র ভরা             প্রীতি সমর্পণ।
৬.    পুষ্পচন্দন   ভক্তিমাখা        আত্মসমর্পণ                              সর্বতোভাবে নিজেকে দান।
৭.  পাখা/চামর  অহংকার তত্ত্ব      অহংসত্ত্বা ঈশ্বরে মিলিয়ে দেয়া।
[
(ওঁ-কার আকৃতিতে আরতী করতে হয়। শ্রীমুখে ৩ বার, বুকে ১ বার, নাভিতে ১ বার, চরণে ২ বার সর্বাঙ্গে ৭ বার মোট ১৪ বার। ১৪ বারের কম নয়, বেশি যত খুশি)
রাধাকৃষ্ণ শয়নমন্ত্র :      আগচ্ছ শয়নস্থানং প্রিয়াভিঃ সহ কেশব।
                             দিভ্য পুষ্পাঢ্য শয্যায়াং সুখং বিহর মাধব॥

সিঁদুর পরার মন্ত্র :
         ওঁ শিরোভূষণং সিন্দুরং ভর্তারায়ুর্বিবর্ধনং
        সর্বরত্নাকরং দিব্যং সিন্দুরং পতিগৃহ্যতাম্ ॥

মৃত্যু সংবাদ শোনা মাত্র যে মন্ত্র বলতে হয় :

ওঁ কৃত্বাতু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা।
মৃত্যুকালবশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম॥
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্।
 দহেয়াং সর্বগাত্রাণি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু॥

পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র (৩ বার পাঠসহ)
=================
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
প্রনাম মন্ত্র
=======
নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
সরস্বতীর স্তব
=======
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।

তথ্য সুত্র - ইন্টারনেট
Share:

০৭ জানুয়ারী ২০১৯

কলিযুগের গুপ্ত বৃন্দাবন

পাপ ভারাক্রান্ত পৃথিবীর বেদনায় বেদনার্থ হইয়া দ্বাপরে প্রার্থনা করেছিলেন ব্রম্মা আর কলির যুগে শ্রী অদ্বৈতাচার্য। শ্রী অদ্বৈতাচার্য শ্রীহট্র নিবাসী একজন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত ও নৈষ্ঠিক ব্রাক্ষন ছিলেন।সদাশিবের অবতার হিসাবে তাঁর পরিচিতি ছিল। নবদ্বিপের শান্তিপুরে শ্রী অদ্বৈতাচার্য বসবাস করতেন। তিনি প্রতিদিন মদন গোপালের পাদপদ্মে গঙ্গাজল তুলসী দিয়ে বলিতেন-“প্রভূ মদন গোপাল তুমি ধরার বুকে নামিয়া আস। সত্য ধর্ম সংস্থাপন কর”।



তিনি দূর চিত্তে বলতেন- “করাইবো কৃষ্ণ সর্ব নয়ন গোচর,তবে সে অদ্বৈত নাম কৃষ্ণের কিংকর”ভক্তের ডাকে ভগবান সাড়া দিলেন। একদিন শ্রী অদ্বৈতাচার্য গঙ্গার তীরে বসিয়া মদন গোপাল বলে কাঁদতে ছিলেন। হঠাৎ দেখিলেন একটি তুলসী পত্র স্রোতের বিপরীত দিকে ভাসিয়া চলিছে। তিনি বিস্মিত হলেন এবং তুলসী পত্রের অনুগমন করিলেন। নদীয়ার গঙ্গার ঘাটে তখন অগনিত নরনারী স্নান করছিলেন। উক্ত তুলসী পত্রটি শ্রী হট্রনিবাসী উপেন্দ্র মিশ্রের পুত্র জগন্নাথ মিশ্রের সহধর্মিনী এবং নীলাম্বর চক্রবর্তীর কন্যা শচীদেবীর নাভিমূলে এসে ঠেকিয় স্থির হলো। শ্রী অদ্বৈতাচার্য বুঝিলেন মদন গোপাল এই ভাগ্যবতী রমনীর গর্ভেই আসিবেন। শ্রী চৈতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ মাতৃগর্ভ সিন্ধুতে আসেন শ্রী হট্র(সিলেট) জেলার ঢাকা দক্ষিন গ্রামে। জগন্নাথ মিশ্রের মাতৃদেবী শোভাময়ী স্বপ্নে দেখেন তাঁর পুত্রবধুর গর্ভে স্বয়ং নারায়ন আবির্ভূত হবেন। তিনি গঙ্গাতীরে জন্মিবেন।

স্বপ্ন দেখে শোভাময়ী দেবী পূত্র ও পুত্রবধুকে নবদ্বিপে পাঠাইয়া দিলেন। এবং যাবার সময় বলেছিলের যিনি আসিবেন তাঁকে আমায় দেখাইও। মহাপ্রভূ শচী দেবীর দশম গর্ভের সন্তান। শচী দেবী ও জগন্নাথ মিশ্রও সপ্নে দেখেছিলেন-শচী কহে-“ মুঞি দেখো আকাশ উপরে,দিব্য মূর্তি লোক সব যেন স্তুতি করে”।

উভয়েই প্রতিক্ষায় থাকলেন সেই উন্নতসত্তা মহাপুরুষের শুভ আবির্ভাবের জন্য। কিন্তু কোথায় সেই মহাপুরুষ! দশ মাস-এগারো মাস-বার মাস গিয়ে তের মাস চলিল। শচীদেবীর জনক প্রখ্যাত জ্যোতিষি নীলাম্বর চক্রবর্তী গনিয়া কহিলেন, এই মাসেই শুভ লগ্নে এক সুলক্ষন পুত্র জন্মিবে।

আবির্ভাবঃ– ফাল্গুন মাস নব-বসন্ত দোল পূর্নিমা তিথি। এই দিনটিতে প্রতি বছরই পূর্নচন্দ্র তাঁর অমল-ধবল-স্নিগ্ধ কিরনে ধরনীকে স্নান করিয়ে দেয়ার জন্য স্বগর্বে উদিত হন। কিন্তু ৮৯২ বঙ্গাব্দের ২৩ ফাল্গুন(১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দ) শনিবারে যেনো চন্দ্রের পূর্নতা, স্নিগ্ধতা,শুভ্রতা, সকলই কোন অদ্বিতীয় অভিমর্ত্য চন্দ্রের নিকট তিরস্কৃত। ভূলোকের চন্দ্রের পূর্নতা গোলকের চন্দ্রের পূর্নতার নিকট পরাভূত। এ সত্য প্রচারের জন্য অকলঙ্ক শ্রী চেতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর আবির্ভাবের পূর্বে জগচ্চন্দ্র রাহুগ্রস্থ হয়ে পড়ল অর্থাৎ চন্দ্র গ্রহন হল। বিশ্বের চতুর্দিকে হরি নামের ধ্বনি উঠল। কর্মকোলাহল রেখে সবাই খোল করতাল নিয়ে হরিনাম কীর্ত্তন
করছে। হরি নামে মুখরিত চারিদিক এ সময়ে সিংহলগ্নে সিংহ রাশিতে শ্রীশচীর গর্ভসিন্ধু হতে শ্রী মায়া পুরে পূর্ন শশী আনিন্দ্য সুন্দর অমৃত পুরুষ উদিত হলেন। অচৈতন্য বিশ্বে চৈতন্য সঞ্চার হলো। মায়া মরুতে অমৃত মন্দাকিনী প্রবাহিত হলো। অবিরল ধারায় হরি কির্ত্তন সুধাসঞ্জীবনী বর্ষিত হওয়ায বিশ্বের হরিকির্ত্তন-দুর্ভিক্ষ-দুঃখ বিদূরিত শান্তিপুরে শ্রী অদ্বৈতাচার্য ও ঠাকুর হরিদাসসহ সকল ভক্তবৃন্দ আনন্দে নূত্য করলেন।

ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তীকালে বিশ্বম্ভর, নিমাই ও শ্রী চৈতন্য নামের মধ্য দিয়ে বাঙালি সমাজের অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হবেন এটা কে বুঝতে পেরেছিলেন? শ্রী চৈতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ ১৪৯১ থেকে ১৪৯৭ পর্যন্ত শাস্ত্রীয় বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

আনুমানিক ১৫০৫ সাল থেকে তাঁর অধ্যাপনার সূচনা ঘটে। ১৫০৮ সালে গয়াধামে ঈশ্বরপুরীর কাছে দীক্ষাগ্রহণের পর নবদ্বীপে ফিরে বপ্রকাশ ও সংকীর্তন আরম্ভ করেন তিনি। ১৫০৯ সালের শেষদিকে সংকীর্তনাদির অবসান ঘটিয়ে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন ১৫১০ সালে। এরপর তিনি রাঢ়, নীলাচল, বঙ্গদেশ, বৃন্দাবন, প্রয়াগ, কাশী, শান্তিপুর প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণ করে ভক্তিবাদ প্রচার করেন। ১৫৩৩ সালের ২৯ জুন তিনি দেহান্তরী হন।

গুপ্ত বৃন্দাবনঃ-মহাপ্রভু কলিযুগে যুগধর্ম প্রচার করার জন্য অবতরণ করবেন শ্রীজগন্নাথের আঙ্গিনায়, তাই লীলাক্ষেত্র বিস্তার ও লীলাপার্ষদ সাজানোর আয়োজন চলছে চারিদিকে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন লীলা সহচর হয়ে জন্ম হয়েছে দেব-দেবী ও ঋষিকল্প অনেক মহাজনদের। কারণ তাঁরা লীলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ভগবানের আগমনকে স্বাগত জানাবার জন্য ধরাধামে নেমে এসেছেন আগে ভাগেই। গৌরাঙ্গ লীলার শুভ বাস্তবায়নের জন্য শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণেও জন্ম নিলেন লীলা সহচরের। ‘শ্রী’ শব্দের অর্থ ‘ভক্তি ঐশ্বর্য’, আর ‘হট্ট’ শব্দের অর্থ ‘মিলনমেলা’।

তাই শ্রীহট্ট নামটি হল ভক্তের মিলন মেলা। এ হাটে আসে অনেকেই কেনাবেচা করতে। এখানে অমূল্য প্রেমধন ‘শ্রী’ সম্পদ বিনামূল্যে বিক্রি হয়।আর এধন বিক্রি করবেন কষিত-কাঞ্চন-বর্ণধারী গৌর হরি। তাই শ্রীহট্টে মিলায়েছেন আগাম মেলা। এটিই শ্রীহট্ট নামের বৈশিষ্ট্য। আর ঢাকাদক্ষিণের ‘দক্ষিণ’ হওয়ার তাৎপর্য হল- কৃষ্ণের বামে রাই কিশোরী ব্রজের যুগলরূপের বিগ্রহ। আর কৃষ্ণের দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে গৌরহরি যেন কৃষ্ণকে ঢেকে অর্থাৎ দ্বাপর লীলা আবরণ করে মধুময় নবদ্বীপ লীলা বিহার করছেন। তাছাড়া এই গৌরলীলা মাধুর্য আস্বাদনে যমের দক্ষিণ দুয়ারটিও বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে- এই তো ঢাকাদক্ষিণ নামের সার্থকতা। সন্ন্যাস গ্রহণের পর শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু একবার মহাপ্রভুকে শান্তিপুরে শ্রীল অদ্বৈত আচার্যের বাড়ীতে নিয়ে আসেন এবং শোকাতুরা জননী শচীদেবীকে পুত্রের দর্শনের জন্য সেখানে নিয়ে আসা হয়। মা এবং ছেলের অপূর্ব মিলনের আনন্দের মধ্য দিয়ে সন্ন্যাসী নিমাই মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খান অদ্বৈতের গৃহে। মা জানেন নিমাই সন্ন্যাসী হয়েছে ঠিকই কিন্তু সংসারের কাজ এখনও তাঁর বাকি আছে- গর্ভাশয়ে থাকাবস্থায় তাঁর ঠাকুর-মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এখনও অপূর্ণ রয়েছে। শোভাদেবী আজও হয়তো তাঁর চোখ খুঁইয়ে নাতীর দর্শন আশায় কোনরকমে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাই মা শচীদেবী তাঁকে ঢাকা দক্ষিণে ফিরে গিয়ে তাঁর ঠাকুরমার শেষ ইচ্ছাটি পূর্ণ করার জন্য সন্ন্যাসী নিমাইকে নির্দেশ দিলেন।

বললেন-তোমার পিতামহী আমাকে বলেছিলেন, হে ভাগ্যবতি! তোমার এই গর্ভবাস হতে যে পরম পুরুষ উদয় হবেন, তাঁকে দেখবার জন্য বিশেষ উৎকণ্ঠিতায় আছি। অতএব তাঁকে শীঘ্রই আমার নিকট পাঠাবে। আমি তাঁর মহাবাক্য স্বীকার করে, তোমাকে গর্ভে নিয়ে নবদ্বীপে এসেছিলাম। অতএব এখন তোমাকে আমার প্রতিশ্রুতি বাক্য পালন করতে হবে। অর্থাৎ এখান হতেই তোমাকে পিতামহীর সাথে মিলবার জন্য যেতে হবে।

১৫১০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে মায়ের কথামত মহাপ্রভু তাঁর পিতামহীকে দর্শন দেবার জন্য ঢাকাদক্ষিণে আসতে মনস্থ করলেন। মহাপ্রভু মাতৃবাক্য শ্রবণ করে স্বীয় অচিন্তনীয় শক্তিপ্রভাব বিস্তার করে গুপ্তলীলা সহকারে পিতামহী সদনে যাবার জন্য উপক্রম করলেন। শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণে যাবার পথে তিনি প্রথমে তাঁর পূর্বপুরুষের নিবাসস্থল শ্রী হট্রের বালাগঞ্জের বরুঙ্গাতে পদার্পণ করলেন। সেখানে তিনি হলচাষরত গো-মোচন করলেন এবং গো- মুখে হরিনাম উচ্চারিত করে গো-মুক্ত করলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু আদিতে প্রপিতামহ শ্রীপাদ মধুকর মিশ্রের বাসভূমি বরগঙ্গা (বুরুঙ্গা) নামক স্থানে পদার্পণ করলেন। তথায় কৃষকগণকে মধ্যাহ্ন সময়ে হালচাষ করতে দেখে, করুণানিধির হৃদয় গো-গণের প্রতি সদয় হল। তিনি তখন কৃষকগণকে বললেন, মধ্যাহ্নকালে চাষ করা মহা পাপ। তোমরা গো-মোচন কর। এই আদেশ শ্রবণ করে রামদাস নামক জনৈক কৃষক সন্ন্যাসবেশী শ্রীগৌরাঙ্গকে বলল, ধান্যক্ষেত্রে অতি অল্প জল রয়েছে। সেইজন্য আজই এই জমি চাষ করা প্রয়োজন। এরর্প শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হল সমীপে গমন করলেন।

শ্রীমন্মহাপ্রভু গোপৃষ্ঠে হস্তস্থাপন করে হরিধ্বনি করতে লাগলেন। তাঁর শ্রীমুখোচ্চারিত শ্রীহরিধ্বনি শ্রবণ করে গো-সকলও মধুময় হরিধ্বনি করতে লাগল। কৃষকেরা প্রায় জলশূন্য কৃষিক্ষেত্রের জন্য বড়ই ব্যস্ত ছিল, কিন্তু সেই ধান্যক্ষেত্রটি সহসা জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। চাষীগণ এইসব অলৌকিক ঘটনা দেখে শীঘ্র গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীগণকে এই অদ্ভুত কথা বললেন। তাহা শ্রবণান্তে, সেই গ্রামস্থ মিশ্রবংশীয় জনগণ সেখানে এসে শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে তাঁর প্রপিতামহ শ্রীপাদ মধুকর মিশ্রের বাড়িতে আনয়ন করলেন। মহাপ্রভুর এরূপ অলৌকিক ভাব দেখে তাঁরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে সাক্ষাৎ নারায়ণজ্ঞানে যথোচিত সেবা করলেন।

এখান থেকে মহাপ্রভু তাঁর পিতৃনিবাস তথা পিতামহ উপেন্দ্র মিশ্রের ঢাকাদক্ষিণের ঠাকুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। ১৫১০ সালের চৈত্রমাসের কোন এক রবিবারে ছুটে আসেন ঢাকাদক্ষিণের গুপ্ত বৃন্দাবন ধামে। তাঁর পিতামহী শোভাদেবী অধীর আগ্রহে নাতীর দর্শন আশায় পথ চেয়ে বসেছিলেন। তাঁর দীর্ঘদিনের আশা আজ ফলবতী হতে চলল ধর্মপরায়ণা শ্রীল উপেন্দ্র মিশ্রের পতœী বৃদ্ধা শ্রীমতি শোভাদেবী, সর্বদাই মনে মনে চিন্তা করতেন যে, আমি কখন আমার নাতীকে দেখতে পাব। মহাপ্রভু গর্ভাবস্থায় তাঁর চিন্ময়ী দৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন পিতার ঢাকাদক্ষিণের নিবাসস্থানটি। আজ তিনি সেই স্মৃতি বিজরিত শান্তির নীড়ে আবার ফিরে এসেছেন। ঘুরেফিরে দেখছেন বাড়ীর চারিদিক। হঠাৎ শ্রীল পরমানন্দ মিশ্রের পতœী সুশীলাদেবীর নজর পড়ল সন্ন্যাসীর দিকে। কি দিব্যকান্তি চেহারা! আজানুলম্বিত বাহু, সুঠাম পূর্ণদেহী নবীন দণ্ডধারী গৌর তনু! দেখলে মন জুরিয়ে যায় একেবারে। সুশীলাদেবী মুগ্ধনয়নে ভাল করে দেখে নিলেন সন্ন্যাসীকে। পরে দর্শন আশা কিঞ্চিৎ প্রশমিত করে তিনি শ্বাশুড়ী শোভাদেবীকে এই শুভ সংবাদটি দেবার জন্য গৃহাভ্যন্তরে চলে এলেন। সংবাদ পেয়ে শোভাদেবী গৃহাভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন নবীন সন্ন্যাসীকে। শোভাদেবীর মনে আনন্দ আর ধরে না। যে স্বপ্নের প্রাণপুরুষকে দেখার জন্য এতদিন যাঁর তৃষিত নয়ন অপেক্ষা করছিল, সেই প্রাণের ঠাকুর সাক্ষাৎ নারায়ণ আজ তাঁর নয়ন-মন আলো করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁরই সামনে। একি অদ্ভুত অপার আনন্দ! সেই বৃদ্ধা শ্রীমতি শোভাদেবী, গৃহ হতে বের হয়ে এসে শ্রীনারায়ণস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুকে দেখে স্বয়ং ঈশ্বর এখানে এসেছেন এই কথা মনে ভেবে বড়ই প্রফুল্লা হলেন। তারপর তিনি তাঁকে বসতে আসন দিলেন এবং ধর্মপরায়ণা বৃদ্ধা সাশ্রুনয়নে, পুলকিত শরীরে, ধীরে ধীরে মধুর বাক্যে তাঁর স্তব করলেন। নররূপধারী পদ্মপলাশলোচন সচ্চিদানন্দবিগ্রহ স্বর্ণবর্ণ বিষ্ণুকে নমস্কার। হে পুরুষোত্তম! তোমাকে নমস্কার। হে বাঞ্ছিতপ্রদ ভগবান্! তোমাকে প্রণাম করি। ঠাকুরমা দেখছেন সন্ন্যাসীকে, কিন্তু তিনি দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় আদরের নাতীকে। নিশ্চয়ই নারায়ণরূপী এই সন্ন্যাসী তাঁর নাতীর খবর রাখেন। তাই অস্থিরচিত্তে শোভাদেবী এই একটি জিঙ্গাসা নিয়ে সন্ন্যাসীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। তিনি সন্ন্যাসীর মধ্যে দেখতে চেয়েছিলেন স্বপ্নে দেখা সেই প্রাণময় শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিটি।

কিন্তু তিনি আজ দেখছেন কৃষ্ণতনু মূর্তির বদলে তাঁর সামনে গৌরতনু এক নবীন সন্ন্যাসীর দিব্য মূর্তি। তিনি নাতীর কাছে প্রশ্ন ছিলেন, “তোমাকে আমি তো মাতৃগর্ভে এমনরূপে দেখিনি, তোমার মুরলীধারী নবীন-নটবর বেশ শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিটি তুমি কোথায় লুকালে!” প্রভু আর কি করেন, সরল বিশ্বাসী ঠাকুর মা শোভাদেবীকে গৌরা-কৃষ্ণরূপ যুগল মূর্তিতে দর্শন দান করে ধন্য করলেন। মহাপ্রভু পিতামহী শোভাদেবীর অন্তরের ভাব বুঝে তাঁকে দিব্যচক্ষু দান করে চাক্ষুষভাবে দেখিয়ে দিলেন তাঁর আপন স্বরূপটি। জগদীশ্বর শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু পিতামহীর সেই কথা শ্রবণান্তে কৃপা করে তাঁকে আপন পরিচয় প্রদান করলেন। সুশীলাদেবী সন্ন্যাসীবেশী এক সুন্দর মহাপুরুষকেই দেখলেন, কিন্তু শোভাদেবী তাঁর মধ্যে দেখলেন সাক্ষাৎ ভগবানকেই। ভক্তের কাছে লুকাতে পারেননি তিনি, ভক্তবৎসল ভগবান্ সন্ন্যাসীবেশের মধ্যেই শোভাদেবীকে দেখালেন তাঁর ভগবৎ স্বরূপটি আর সুশীলাদেবী সন্ন্যাসবেশীকে দেখলেন। তিনি শোভাদেবীকে বললেন, “আমি সেই তো সেই- যিনি তোমার ঘরের নিমাই, তিনিই আবার দ্বাপরের কৃষ্ণ কানাই।” শোভাদেবী ও মহাপ্রভুর ভক্তিপূর্ণ এই ভাববিলাস তাঁর অন্য নাতী প্রদ্যুম্ন মিশ্র সাক্ষাৎ দর্শন করে গর্ভানিষ্ঠান সময়ে, যেরূপে শোভা দেবীর প্রতি দৈববাণী করেছিলেন, তাহাই প্রদর্শিত হল।

পরম ভক্তিমতী বৃদ্ধা, শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রীকৃষ্ণ, এই দুইরূপ দেখে বিস্মিত ও পুলকিত হয়ে বললেন, হে ভগবান! তোমাকে নমস্কার। মহাপ্রভু শোভাদেবীকে বলেন, “কষ্ট নিও না ঠাকুর মা, আমার এই যুগলমূর্তি ঠাকুর বাড়ির দেবালয়ে প্রতিষ্ঠিত করে নিত্য পূজার্চনা করবে। আমার বংশের সন্তানেরা শ্রী হট্রের ঢাকাদক্ষিণের দেবালয়ের গৌরবেই আবহমানকাল বেঁচে থাকবে। শ্রী হট্র তথা ঢাকাদক্ষিণ আজ থেকে গুপ্ত বৃন্দাবন বলে পরিচিত হবে। আমি নিত্যকাল এখানে লীলা করব। “বাসুদেব ঘোষ কহে করি জোড় হাত, যেই গৌর সেই কৃষ্ণ সেই গন্নাথ”আসলে কৃষ্ণরূপটি বৃন্দাবনের আর গৌররূপটি নবদ্বীপের। দ্বাপর শেষে কলিতে তাই শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য। কলি এসেছে, তাই দ্বাপরের কৃষ্ণের প্রয়োজন এবার চৈতন্যে সীমায়িত হয়েছে। কাজেই প্রেমের রাজা শ্রীচৈতন্যই বামা নায়িকা শ্রীরাধার মত বেদনাভারে প্রাণকৃষ্ণকে খুঁজতে খুঁজতে নামের বাহারে পাগলপারা হয়ে সকলকে প্রেম দান করছেন আর শ্রীমুখে বলছেন, “গোকুলের যে প্রেম হলো নাকো সারা নদীয়ায় তা হবে সারা।”রাধার যে প্রেম কৃষ্ণকে ঘিরে, দ্বাপরে তা পূর্ণ হয় নি, তাই অন্তঃ-কৃষ্ণ বহিঃ-রাধা হয়ে রাধাভাবে আবিষ্ট হয়ে গৌর সুন্দর একই অঙ্গে দুইরূপ হয়ে আস্বাদন করছেন আপনি আপনাকে। এই তো গৌর হরি, কলির প্রেমরতন, দ্বাপরের কৃষ্ণ-কানাই। আমরা তাঁর ভাবগ্রাহী যুগলতনুর রস আস্বাদনের আশায় পথ চেয়ে বসে রই। “স্মরনেরে নব গৌরচন্দ্র মাধব মনোহারী।” পরমাত্মা পূর্ণব্রহ্ম সনাতন দ্বাপরে এসেছিলেন কৃষ্ণ হয়ে, এবার এসেছেন গৌরতনু গৌরহরি হয়ে এই গৌরতনু শ্রীরাধার ভাবকান্তি হৃদয়ে ধারণ করে গৌরহরি হয়েছেন।

কৃষ্ণই রাধা, রাধাই কৃষ্ণ; ভাববিলাসে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে অনন্য রসব্যঞ্জন করেন, আবার ঘনায়িত প্রেমবিগ্রহ হয়ে আপামর ভক্তসঙ্গে প্রেমরসনির্যাস আস্বাদন করেন এবং প্রেমধন্য হয়ে ঐ অপ্রাকৃত রস ভক্তের মাঝে বিতরণ করেন এই রঙ্গমঞ্চের লীলানটবর গৌরসুন্দর নরবপু ধারণ করে সর্বোত্তম নরলীলা করবার জন্য এবার এসেছেন ধরার ধূলায় নেমে। মহাপ্রভু ও তাঁর পার্ষদগণ এক অভিনব প্রেমের উদার দৃষ্টি মেলে তাকিয়েছিলেন পৃথিবীর পাপাসক্ত মানুষের পানে। সে দৃষ্টিতে ছিল প্রাণঢালা প্রেম আর প্রাণপুটিত রসমাধুর্যপূর্ণ অমিয় রসধারা। তিনি পুরাণ-প্রাণ পুরুষ, অনন্য প্রেমের ঠাকুর। তিনি তাঁর অপূর্ব কৃষ্ণকথামৃত দান করে কলিহত জীবের ত্রাণকর্তা হিসেবে আপনার জনের মত মানুষের কাতারে নেমে এসেছেন। নাম আর প্রেমের মালা গেঁথে তিনি জগতের গলায় পরিয়ে দিয়েছেন অমূল্য এক বরণমালা।

কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী বলেছেন- “এই গুপ্ত ভাবসিন্ধু, ব্রহ্মা না পায় একবিন্দু,হেন ধন বিলাইল সংসারে”।

Post Courtesy:  Sagar Bhowmick
Share:

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব

কৃষ্ণের শৈশব সম্বন্ধে কতকগুলি বিশেষ অনৈসর্গিক কথা পুরাণে কথিত হইয়াছে। একে একে তাহার পরিচয় দিতেছি।

১। পূতনাবধ। পূতনা কংসপ্রেরিতা রাক্ষসী। সে পরমরূপবতীর বেশ ধারণ করিয়া নন্দালয়ে কৃষ্ণবধার্থ প্রবেশ করিল। তাহার স্তনে বিষ বিলেপিত ছিল। সে শ্রীকৃষ্ণকে স্তন্যপান করাইতে লাগিল। কৃষ্ণ তাহাকে এরূপ নিপীড়িত করিয়া স্তন্যপান করিলেন যে, পূতনার প্রাণ বহির্গত হইল। সে তখন নিজ রূপ ধারণ করিয়া ছয় ক্রোশ ভূমি ব্যাপিয়া নিপতিত হইল।
মহাভারতেও শিশুপালবধ-পর্বাধ্যায়ে পূতনাবধের প্রসঙ্গ আছে। শিশুপাল, পূতনাকে শকুনি বলিতেছেন। শকুনি বলিলে, গৃধ্র, চীল এবং শ্যামাপক্ষীকেও বুঝায়। বলবান্ শিশুর একটা ক্ষুদ্র পক্ষী বধ করা বিচিত্র নহে।

কিন্তু পূতনার আর একটা অর্থ আছে। আমরা যাহাকে “পেঁচোয় পাওয়া” বলি, সূতিকাগারস্থ শিশুর সেই রোগের নাম পূতনা। সকলেই জানে যে, শিশু বলের সহিত স্তন্যপান করিতে পারিলে এ রোগ আর থাকে না। বোধ হয়, ইহাই পূতনাবধ।

২। শকটবিপর্যয়। যশোদা, কৃষ্ণকে একখানা শকটের নীচে শুয়াইয়া রাখিয়াছিলেন। কৃষ্ণের পদাঘাতে শকট উল্টাইয়া পড়িয়াছিল। ঋগ্বেদসংহিতায় ইন্দ্রকৃত ঊষার শকটভঞ্জনের একটা কথা আছে। এই কৃষ্ণকৃত শকটভঞ্জন, সে প্রাচীন রূপকের নূতন সংস্কারমাত্র হইতে পারে। অনেকগুলি বৈদিক উপাখ্যান কৃষ্ণলীলান্তর্গত হইয়াছে, এমন বিবেচনা করিবার কারণ আছে।

৩। তাহার পর মাতৃক্রোড়ে কৃষ্ণের বিশ্বম্ভরমূর্তিধারণ, এবং স্বীয় ব্যাদিতানন-মধ্যে যশোদাকে বিশ্বরূপ দেখান। এটা প্রথম ভাগবতে দেখিতে পাই। ভাগবতকারেরই রচিত উপন্যাস বোধ হয়।

৪। তৃণাবর্ত। তৃণাবর্ত নামে অসুর কৃষ্ণকে একদা আকাশমার্গে তুলিয়া লইয়া গিয়াছিল। ইহার যেরূপ বর্ণনা দেখা যায়, তাহাতে বোধ হয়, ইহা চক্রবায়ু মাত্র। চক্রবায়ুর রূপ ধরিয়াই অসূর আসিয়াছিল, ভাগবতে এইরূপ কথিত হইয়াছে। এই উপাখ্যানও প্রথম ভাগবতেই দেখিতে পাই। সুতরাং ইহাও অমৌলিক সন্দেহ নাই। চক্রবায়ুতে ছেলে তুলিয়া ফেলাও বিচিত্র নহে।

৫। কৃষ্ণ একদা মৃত্তিকা ভোজন করিয়াছিলেন। কৃষ্ণ সে কথা অস্বীকার করায়, যশোদা তাঁহার মুখের ভিতর দেখিতে চাহিলেন। কৃষ্ণ হাঁ করিয়া বদনমধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড দেখাইলেন। এটিও কেবল ভাগবতীয় উপন্যাস।

৬। ভাগবতকার আরও বলেন, কৃষ্ণ হাঁটিয়া বেড়াইতে শিখিলে তিনি গোপীদিগের গৃহে অত্যন্ত দৌরাত্ম্য করিতেন। অন্যান্য দৌরাত্ম্যমধ্যে, ননী মাখন চুরি করিয়া খাইতেন।
বিষ্ণুপুরাণেও এ কথা নাই; মহাভারতেও নাই।

হরিবংশে ননী মাখন চুরির কথা প্রসঙ্গক্রমে আছে। ভাগবতেই ইহার বাড়াবাড়ি। যে শিশুর ধর্মাধর্মজ্ঞান জন্মিবার সময় হয় নাই, সে খাদ্য চুরি করিলে কোন দোষ হইল না। যদি বল যে, কৃষ্ণকে তোমরা ঈশ্বরাবতার বল; তাঁহার কোন বয়সেই জ্ঞানের অভাব থাকিতে পারে না। তাহার উত্তরে কৃষ্ণোপাসকেরা বলিতে পারেন যে, ঈশ্বরের চুরি নাই। জগতই যাঁহার—সব ঘৃত নবনীত মাখন যাঁহার সৃষ্ট—তিনি কার ধন লইয়া চোর হইলেন? সবই ত তাঁহার। আর যদি বল, তিনি মানবধর্মাবলম্বী-মানবধর্মে চুরি অবশ্য পাপ, তাহার উত্তর এই যে, মানবধর্মাবলম্বী শিশুর পাপ নাই, কেন না, শিশুর ধর্মাধর্ম জ্ঞান নাই। কিন্তু এ সকল বিচারে আমাদের কোন প্রয়োজনই নাই—কেন না, কথাটাই অমূলক। যদি মৌলিক কথা হয়, তবে ভাগবতকার, এ কথা যে ভাবে বলিয়াছেন, তাহা বড় মনোহর।

ভাগবতকার বলিয়াছেন যে, ননী মাখন ভগবান্ নিজের জন্য বড় চুরি করিতেন না; বানরদিগকে খাওয়াইতে না পাইলে শুইয়া পড়িয়া কাঁদিতেন। ভাগবতার বলিতে পারেন যে, কৃষ্ণ সর্বভূতে সমদর্শী; গোপীরা যথেষ্ট ক্ষীর নবনীত খায়,—বানরেরা পায় না, এজন্য গোপীদিগের লইয়া বানরদিগকে দেন। তিনি সর্বভূতের ঈশ্বর, গোপী ও বানর তাঁহার নিকট ননী মাখনের তুল্যাধিকারী।

এই শিশু সর্বজনের জন্য সহৃদয়তাপরবশ, সর্বজনের দুঃখমোচনে উদ্যুক্ত। তির্যকজাতি বানরদিগের জন্য তাঁহার কাতরতার ভাগবতকার এই পরিচয় দিয়াছেন। আর একটি দুঃখিনী ফলবিক্রেত্রীর কথা বলিয়াছেন। কৃষ্ণের নিকট সে ফল লইয়া আসিলে কৃষ্ণ অঞ্জলি ভরিয়া তাহাকে রত্ন দিলেন। কথাগুলির ভাগবত ব্যতীত প্রমাণ কিছু নাই; কিন্তু আমরা পরে দেখিব, পরহিতই কৃষ্ণের জীবনের ব্রত।

৭। যমলার্জুনভঙ্গ। একদা কৃষ্ণ বড় “দুরন্তপনা” করিয়াছিলেন বলিয়া, যশোদা তাঁহার পেটে দড়ি বাঁধিয়া, একটা উদূখলে বাঁধিয়া রাখিলেন। কৃষ্ণ উদূখল টানিয়া লইয়া চলিলেন। যমলার্জুন নামে দুইটা গাছ ছিল। কৃষ্ণ তাহার মধ্য দিয়া চলিলেন। উদূখল, গাছের মুলে বাধিয়া গেল। কৃষ্ণ তথাপি চলিলেন। গাছ দুইটা ভাঙ্গিয়া গেল।

এ কথা বিষ্ণুপুরাণে এবং মহাভারতের শিশুপালের তিরস্কারবাক্য আছে। কিন্তু ব্যাপারটা কি? অর্জুন বলে কুরচি গাছকে; যমলার্জুন অর্থে জোড়া কুরচি গাছ। কুরচি গাছ সচরাচর বড় হয় না, এবং অনেক গাছ ছোট দেখা যায়। যদি চারাগাছ হয়, তাহা হইলে বলবান্ শিশুর বলে ঐরূপ অবস্থায় তাহা ভাঙ্গিয়া যাইতে পারে।

কিন্তু ভাগবতকার পূর্বপ্রচলিত কথার উপর, অতিরঞ্জন চেষ্টা করিতে ত্রুটি করেন নাই। গাছ দুইটি কুবেরপুত্র; শাপনিবন্ধন গাছ হইয়াছিল, কৃষ্ণস্পর্শে মুক্ত হইয়া স্বধামে গমন করিল। কৃষ্ণকে বন্ধন করিবার কালে গোকুলে যত দড়ি ছিল, সব যোড়া দিয়াও কচি ছেলের পেট বাঁধা গেল না। শেষে কৃষ্ণ দয়া করিয়া বাঁধা দিলেন।

বিষ্ণুর একটি নাম দামোদর। বহিরিন্দ্রিয়নিগ্রহকে দম বলে। উদ্ উপর, ঋ গমনে, এজন্য উদর অর্থে উৎকৃষ্ট গতি। দমের দ্বারা যিনি উচ্চস্থান পাইয়াছেন, তিনিই দামোদর। শঙ্করাচার্য দামোদর শব্দের অর্থ গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি বলেন, “দমাদিসাধনেন উদরা উৎকৃষ্টা গতির্যা তয়া গম্যত ইতি দামোদরঃ।” মহাভারতেও আছে, “দমাদ্দামোদরং বিদুঃ।”

কিন্তু দামন্ শব্দে গোরুর দড়িও বুঝায়। যাহার উদর গোরুর দড়িতে বাঁধা হইয়াছিল, সেও দামোদর। গোরুর দড়ির কথাটা উঠিবার আগে দামোদর নামটা প্রচলিত ছিল। নামটি পাইয়া ভাগবতকার দড়ি বাঁধার উপন্যাসটি গড়িয়াছেন, এই বোধ হয় না কি?
এক্ষণে নন্দাদি গোপগণ পূর্ববাসস্থান পরিত্যাগ করিয়া বৃন্দাবনে চলিলেন। কৃষ্ণ নানাবিধ বিপদে পড়িয়াছিলেন, এইরূপ বিবেচনা করিয়াই তাঁহারা বৃন্দাবন গেলেন, এইরূপ পুরাণে লিখিত আছে। বৃন্দাবন অধিকতর সুখের স্থান, এ জন্যও হইতে পারে। হরিবংশে পাওয়া যায়, এই সময় ঘোষনিবাসে বড় বৃকের ভয় হইয়াছিল। গোপেরা তাই সেই স্থান ত্যাগ করিয়া গেল।

=বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়=

Post Courtesy: Sagar Bhowmick
Share:

শিবলিঙ্গে দুধ-জল ঢালার কারন - সবাইকে মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো


                                                                         *"ওঁ নমঃ শিবায়ঃ*

আজ আমরা একটা সনাতনী নিয়মধারা শিবলিঙ্গে দুধজল ঢালার কারণ সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করবো, যা অনেকেরই অজানা। সবাইকে মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো। আশাকরি সবারই ভাল লাগবে।

 একবার দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধে অমৃত পানের জন্য দেবতারা সমুদ্রমন্থন করেন। সমুদ্রমন্থনের সময় এক পর্যায়ে সমুদ্র থেকে হলাহল নামক মারাত্নক বিষ উত্থিত হয়েছিলো। যেটার চারদিকে ছড়িয়ে পড়া ও বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল জীবের জীবন বিপন্ন করার ক্ষমতা ছিলো অত্যাধিক।


ভগবান নারায়নের পরামর্শে, শিবশঙ্কর সকল দেবতাদের অনুরোধে এই বিষ থেকে সবাইকে রক্ষা করার ঐশ্বরিক দায়িত্ব নেন । এরপর দায়িত্ব সম্পন্নের জন্যই তিনি সমস্ত বিষ পান করেন এবং কন্ঠে তা সংরক্ষন করে রেখে দেন। আর সে জন্যই শিবের আরেক নাম নীলকন্ঠ। হলাহল বিষের বিষাক্ততার মাত্রা ছিলো প্রচন্ড রকমের বেশি। যদিও শিবের উপরও তার প্রভাব পড়েছিলো। কিন্তু হলাহল বিষের তাপমাত্রার প্রভাব প্রশমিত করার জন্য দেবতারা শিবের জন্য গঙ্গা অভিষেক করেন। আর এই গঙ্গা অভিষেকের মাধ্যমে দেবতারা শিবকে প্রসন্ন করেছিলেন। শিবের সেই গঙ্গা অভিষেকে শুধুমাত্র সাপেরা এগিয়ে এসেছিলো এই ঐশ্বরিক কারণ সমর্পনের জন্য। তারা নিজেরাও বিষের কিছু অংশ পান করে ও তাদের বিষদাঁতে কিছু বিষ গ্রহণ করে। সে জন্যই সেদিন থেকেই কিছু সাপ বেশি বিষাক্ত হয়ে ওঠে।


সমুদ্র মন্থনের সময় যে গঙ্গা অভিষেক করা হয়েছিল, শিবের উপাসকদের দ্বারা শিবলিঙ্গে ডাবের জল বা দুধ ঢালার কারণ হচ্ছে, শিবের প্রতি ভক্তদের ভক্তি প্রতিভাস করার জন্য। শিবের পূজায় শিবলিঙ্গে ডাবের জল বা দুধ ঢালা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অভিষেক ছাড়া শিবের পূজা অসম্পূর্ণ। অভিষেকের সময় এই ডাবের জল বা দুধ ঢালা খুবই পবিত্র। কারণ অভিষেকের দ্বারাই শিবের প্রতি ভক্তদের গভীর অনুরক্তি প্রকাশিত হয়।

এখানে অনেকে বলে থাকে, শিবলিঙ্গে দুধ ঢেলে দুধ অপচয় করা হচ্ছে, যদিও এটা মোটেই সঠিক নয়। কারণ এই দুধের বেশ খানিকটা অংশ চরণামৃত বানানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এবং পূজা শেষে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ আকারে বিতরণ করা হয়। তাই দুধ ঢালা কোনো ক্রমেই অপচয় নয় বরং এটা নিষ্কলুষ ভক্তির বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

 শিবলিঙ্গে দুধ ঢালা নিয়ে অনেকেরই মতানৈক্য আছে। শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার কথা শুনলেই এক শ্রেণীর তথাকথিত অজ্ঞ গোষ্ঠী অপপ্রচার করে বেড়ায় যে এটা নাকি অপচয়। ৩৬৪ দিনে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগলে তারা খবর না নিয়ে মদ গাজা প্রভৃতি নেশা দ্রব্যে মগ্ন থাকে যখন শিব রাত্রি আসে তখনই তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বলে, একদিনের শিব রাত্রিতে নাকি ৩৬৪ দিনে অপুষ্টিতে থাকা শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগে।


আশাকরি যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করেন, পোষ্টখানা পড়ে বিকৃত মনাদের বিকৃত মানষিকতা ঠিক করে নিবে বলে আশা রাখি। তাছাড়া এই পৃথিবীতে আমরা সবাই নিতান্তই তুচ্ছ, আমাদের নিজের বলে কোনো কিছুই নেই। তাই শিবলিঙ্গে দুধ ঢালা নিয়ে কৈফিয়ত চাওয়ারও কোনো কারণ নেই। মনে রাখতে হবে বাবা মহেশ্বর পরম বৈষ্ণব, অর্থাৎ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর একনিষ্ঠ এবং প্রধান ভক্ত।

 পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর পরমেশ্বরের সংহারী প্রতিরুপ ভোলামহেশ্বরের চরণকমলে, সবার মঙ্গল, কল্যাণ আর সবাঙ্গীন আনন্দময়তার জন্য প্রার্থনা আমাদের।


"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শিবশম্ভুর জয়!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post Courtesy: দেবেন্দ্র
Share:

কর্মের ফল তো ভোগ করতেই হবে

একটি দৃষ্টান্ত হলো -
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্ম , অর্জুনের বানে ভূমিতে ধরাশায়ী হয়ে প্রচন্ড বেদনায় ছটফট করছিলেন । একে একে সবাই উনাকে দেখতে আসছিলেন । একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণও উনাকে দেখতে এলেন ।
শ্রীকৃষ্ণ কে দেখে ভীষ্ম বললেন , " হে জনার্দন , আমি পূর্ব জন্মেএমন কি পাপ করেছিলাম যে এই জন্মে এত বড় শাস্তি এত কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে ?" ভগবান বললেন , " আপনি তো নিজেই পূর্ব জন্মের কথা স্মরন করতে পারেন , তাহলে আপনি নিজেই দেখুন না আপনি পূর্ব জন্মে কি পাপ করেছিলেন ? "
ভীষ্ম বললেন , " আমি তো দেখতে দেখতে গত ১০০ জনমের কর্ম দেখে ফেলেছি , কিন্তু এই ১০০ জনমের মধ্যে আমি এমন কোনো কর্ম করিনি যেটাতে আমি এত বড় শাস্তি পেতে পারি । "


ভগবান বললেন , " আপনি কৃপা করে এই ১০০ জনমের ঠিক একটি জনম আগে দেখুন ( অর্থাৎ ১০১ নং জনম ) , উওর আপনি পেয়ে যাবেন । "
তখন পিতামহ ভীষ্ম চোখ বন্ধ করে ধ্যান পূর্বক দেখতে লাগলেন - ঐ জনমে তিনি একজন খুবই ধার্মিক রাজা ছিলেন । একদিন তিনি বিশাল সৈন্যদল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন । পথের মাঝে একটি সাপ এসে তাদের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় । এক সৈনিক এসে বললো , " মহারাজ , একটি সাপ রাস্তার মাঝে বসে আছে , কি করবো ? " রাজা বললেন , " তুমি সাপটিকে একটি লাকড়িতে বেঁধে পাশের জঙ্গলে ফেলে দাও ।"
সৈনিক তাই করলো , কিন্তু সাপটি জঙ্গলে একটি বিশাল কাঁটার ঝোপের মধ্যে আটকে গিয়ে প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে অবশেষে পাঁচদিন পর মারা গেল ।
পিতামহ ভীষ্ম তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন , " দেখলাম আমার পাপ কর্ম , কিন্তু আমিতো সাপটিকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলে ফেলেদিয়েছিলাম , নাহলে তো সাপটি আমার রথের চাকার নীচে চাপা পরেই মারা যেতো ।"

ভগবান বললেন , " কিন্তু আপনিতো ঐ সাপটির কি পরিনতি হলো তা একবারও ফিরে দেখলেন না বা ঐ সাপটিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন নি , তাই আজ আপনার এই পরিনাম । অথচ আপনার পুন্য কর্ম এত বেশী ছিল যে গত ১০০ জনমেও আপনি কোন পাপের ফল ভোগ করেন নি । "

মানুষ জেনেই হোক বা না জেনেই হোক যে কর্ম করছে তার ফল ভোগ অবশ্যই করতে হবে । কেউ এই জনমে বা কেউ পরের জনমে ভোগ করছে । কুকুর , ছাগল , বাঘ ইত্যাদি জন্তু জানোয়ারেরা পূর্ব জন্মে এই ধরনের নীচ কর্ম জেনে শুনে করেছে বলেই তারা এই রুপে অনেক যাতনার শিকার হচ্ছে ।

তাই বন্ধুরা সাবধানেই প্রত্যেকটি কর্ম করা উচিত । ভগবানের নাম স্মরন করে সর্ব কর্ম উনাতে অর্পন পূর্বকই করা উচিত ।

Post Courtesy: Sagar Bhowmick
Share:

সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদের ব্যাখ্যা

সনাতন বৈদিক বা হিন্দুধর্মের জন্মান্তরবাদ (পুনর্জন্ম) সম্পর্কে  কিছু জানার জন্য আমাদের কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। ব্যাখ্যা গুলো এমন-

  •  হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে যে জীবের মৃত্যুর পর জীব পুনরায় জন্মগ্রহন করে। হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কিন্তু সকলেই মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী। পুনর্জন্মের অর্থ হলো-
“জীবের মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় নতুন দেহ ধারণ করে”।
 
  • যদিও বহু ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাসী, তবু একমাত্র হিন্দুধর্মেই এই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। আত্মার নতুন দেহ ধারণের মূলে রয়েছে। আত্মা যে এক শাশ্বত সত্ত্বা, এই ধারণা। বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যেও আত্মা এক অবিনাশী সত্ত্বা- এই বিশ্বাস না থাকলে জীবের পুনর্জন্মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সেই কারণে হিন্দু জড়বাদী তত্ত্ববাদীগণ কোন শাশ্বত আত্মার অস্তিত্বে, মুত্যু পরবর্তী জীবনে এবং আত্মার পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেনা।
  •   হিন্দুধর্মে জীবাত্মা এক অপরিবর্তনীয় সত্ত্বা। যার প্রকৃতি হলো ঐশ্বরিক। যেমন অগ্নি থেকে নির্গত অগ্নি স্ফুলিঙ্গ অগ্নির সংঙ্গে অভিন্ন, তেমনি যে জীবাত্মা ঈশ্বর থেকে উদ্ভূত সেই জীবাত্মা ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন। জীবাত্মার এই প্রকৃতি স্বীকার করে নিলেই জীবাত্মার জন্মান্তর গ্রহণ এবং জন্মান্তরের মধ্য দিয়ে তার বিবর্তনকে সমর্থন করা চলে। আত্মা নিত্য, শাশ্বত সত্ত্বা হওয়াতে, আত্মার জন্ম ও মৃত্যুকে যথাক্রমে সম্পূর্ণ নতুন প্রারম্ভ বা পরিপূর্ণ বিনাশ রূপে গ্রহণ করা চলে না। বরং জীবাত্মার পুনর্জন্ম অর্থ হলো নতুন দেহধারণ এবং মৃত্যু অর্থ হলো জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করাকে বোঝায়।
  •   গীতায় বলা হয়েছে-
“যেমন মনুষ জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে সেই রূপে
আত্মা জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর পরিগ্রহ করে”।

আত্মার শাশ্বত প্রকৃতি যেমন জীবের জন্মান্তর গ্রহণ সম্ভব করে তোলে, ঈশ্বরের সঙ্গে জীবাত্মার অভিন্নতা জন্মান্তর গ্রহণের বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। বেদে, উপনিষদে এবং ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, জীবাত্মা স্বরূপতঃ ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন। কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তি বশতঃই আত্মাকে দেহ ধারণ করতে হয়।

  •   জীবের একাধিক জন্ম-গ্রহণের কারণ হলো তার ভোগাকাঙ্ক্ষা। গীতায় বলা হয়েছে-
“পুরুষ প্রকৃতির সংসর্গ বশতঃ প্রকৃতির গুণ অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ, তমো গুণের ধর্ম সুখ দুঃখ মোহাদিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েন এবং আমি সুখী, আমি দুঃখী, আমি কর্তা, আমার কর্ম ইত্যাদি অভিমান করতঃ কর্ম নাশে আবদ্ধ হন। এই সকল কর্ম ফলভোগের জন্য তাকে বার বার জন্ম গ্রহন করতে হয়।"

সুতরাং 'এই প্রকৃতির সংসর্গ থেকে মুক্ত হতে না পরলে, তার জন্মকর্মের বন্ধন থেকে নিস্তার নেই।'

  •   আত্মা পরমাত্মা থেকে ভিন্ন এবং দেহ-মন সংগঠনের সঙ্গে অভিন্ন, এই ভ্রান্ত ধারণার জন্যই আত্মার পুনঃ পুনঃ দেহধারণ। জীবাত্মা তার যথাযথ স্বরূপ সাময়িকভাবে বিস্মৃত হয় সত্য, কিন্তু জীবাত্মার ঐশ্বরিক প্রকৃতি লুপ্ত হয় না এবং জীবাত্মাকে তার সুপ্ত ঐশ্বরিক প্রকৃতিকে লাভ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। জীব পুনঃ পুনঃ জন্ম গ্রহণের মধ্য দিয়ে তার লক্ষ্য লাভ করার দিকে চালিত হয়। অর্থাৎ জীবের সঙ্গে তার ঐশ্বরিক প্রকৃতির তাদত্ম্যের উপলব্ধি- এই লক্ষ্যে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত জীবের পুনর্জন্মের নিরোধ ঘটে না। বস্তত: এই ধারণাই পুনর্জন্মের বিষয়টিকে তাৎপর্যময় করে তোলে। সকল বদ্ধ জীবই এই পুনর্জন্মের অধীন। আর পুনর্জন্ম বন্ধ বা না হওয়ার অর্থ জীবাত্মার পরমাত্মায় বিলীন বা মহামিলন হওয়া।
  •   কাজেই পুনর্জন্ম কোনী রহস্যময় অদৃষ্টের খেয়াল খুশীর ব্যাপার নয়। বরং এক ঐশ্বরিক পরিকল্পনার বা জগতের নৈতিক শৃঙ্খলার অংশ স্বরূপ। যা সকল প্রাণীতেই সংঘটিত হয়ে থাকে, তা সে বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক।

 পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণীসহ সকল পূণ্য- মহাত্মাদের চরণকমলে সবারই মঙ্গলময়, কল্যাণময়, সুন্দরময়, শান্তিময় আর আনন্দময় জীবনের প্রার্থনা আমাদের।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post courtesy: দেবেন্দ্র
Share:

মানবদেহের সাত চক্র - সবার জানা খুবই জরুরি

দেহচক্রের কথা শুনলেই আমরা একটু চিন্তিত হয়ে যাই। মনের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন উকিঁঝুকি দিতে থাকে । আমাদের দেহে আবার চক্র আসবে কোথা থেকে? এ চক্রগুলো কোথায় থাকে, এ চক্রগুলোর কাজই বা কী ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের দেহে একটি দুটি নয়, সাত সাতটি চক্র আছে। আমরা বেশির ভাগ সময় অনেক গোপন সত্য জানা থেকে পিছিয়ে থাকি। আমাদের দেহের নিম্নাঙ্গে, তলপেটে, নাভিতে, হৃদয়ে, কণ্ঠে, দু'চোখের মাঝে ও মাথার ওপরে আছে সাতটি চক্রের অবস্থান। চক্রগুলো হলো:-

  •   মূলাধার চক্র,
  •   স্বাধিষ্ঠান চক্র,
  •   নাভিচক্র,
  •   হৃদচক্র,
  •   বিশুদ্ধ চক্র,
  •   আজ্ঞা চক্র ও
  •   সহস্রার চক্র।
দেহ একটা রঙের বাক্সের মতো। 'দিব্যশক্তি' শিশুর মতো এ দেহেরঙতুলি নিয়ে নানান ভঙ্গিমায় খেলা করতে থাকে। খেলার জন্য তার পছন্দের জায়গা ‘চক্র’। এক-একটি চক্র তার কাছে এক-একটি প্লে-গ্রাউন্ড। খামখেয়ালি ভাবে সে চক্রে চক্রে নেচে বেড়ায়। তার নৃত্যের তালে তালে আমাদের জীবন হয়ে উঠে ছন্দোময়, প্রেমময় ও আলোকময়। তাই ইংরেজি ‘হিউম্যান বিইং’ শব্দটি মানুষের জন্য সঠিক ভাবে প্রযোজ্য।

Human Being=`Hue+Man+Being’, where Hue means Color, Man means Manifestation and Being means Light. অর্থাৎ হিউম্যান বিইং অর্থ ‘রঙরূপ আলো’।

প্রতিটি চক্রের সাথে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড়িত। যখন যে চক্রে দিব্যশক্তি খেলা করে তখন সে চক্রের ওপর ভাল-মন্দ দুরকমের প্রভাব পড়ে। যেমন, বিশুদ্ধ চক্রে খেলা করলে কথা বলার শক্তি ও গানের সুরধারা আসে। আবার সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও মন খারাপ হয়ে থাকে। এভাবে অন্যান্য চক্রের ওপরও প্রভাব ফেলে থাকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ দিব্যশক্তির এই খেলায় এক পর্যায়ে সব মন্দ হয়ে ওঠে ভালো। এমনকি রোগ সারানো সহ বিভিন্ন মিরাকলও ঘটে।

এবার জানা যাক চক্র বিষয়ে:-

  ১. মূলাধার চক্র(Root/Ovaries/Testes)


মূলাধার চক্র দেহের মেরুদন্ডের শেষ প্রান্তে বা নিম্নাংশে অবস্থিত। এটিকে কুণ্ডলিনী বলে। এ চক্রের চারটি দল। এর রঙ লাল। এটি আমাদের চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ চক্রটি চেতন থেকে অবচেতন পর্যন্ত বিস্তৃত। জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি-এ চারটির নিয়ামক এ চক্র। কামশক্তির আধার এটি। এটিতে আছে অস্থিধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তি খেলা করলে কামনা বাড়ে। জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। রোগ হয়।

২. স্বাধিষ্ঠান চক্র(Abdomen/Pancreas glands)


স্বাধিষ্ঠান চক্র দেহের তলপেট বা অগ্নাশয় নিয়ে গঠিত। এ চক্রের ছয়টি দল। এর রঙ গাঢ় গোলাপি। এটি আমাদের লোভ, কামনা, বাসনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটিতে আছে মেদ ধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তির নৃত্যে কামনা বাড়ে। বাসনা বাড়ে। লোভ বাড়ে। বমি হয়, ডায়রিয়া হয়, ভয় কাজ করে।
 
৩. মণিপুর বা নাভিচক্র(Solar plexus/Adrenal glands)

মণিপুর চক্র দেহের নাভি বা বৃক্কাশয় বা পাকস্থলির নিচের শিরাজাল নিয়ে গঠিত। এ চক্রের দশটি দল। এটির রঙ বেগুনি। এটি আমাদের উচ্চ চেতনা, জীবনীশক্তি, আবেগ, বাসনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটিতে আছে মাংসধাতুর শক্তি। তেজশক্তির আধার এটি। এ চক্রে দিব্যশক্তি মণিপুরি নৃত্য করে। দিব্যশক্তির উন্মাদ নাচের তালে দেহের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। পেটের পীড়া হয়।

৪. অনাহত বা হৃদচক্র(Heart/Thymus gland)

 হৃদচক্র আমাদের বুকের মাঝখানে অবস্থিত। এ চক্রের বারটি দল। এর রঙ সোনালি-গোলাপি। এটি আমাদের আবেগ, রাগ-অনুরাগ, প্রেম, বিরহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটির অনেক গভীরে আত্মা থাকে। এটিতে আছে রক্ত ধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তির খেলায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। প্রেম-ভালবাসা হয়, বিরহ আসে। বুক- পিঠ ব্যথা করে, হৃদরোগ হয়।
 
৫. বিশুদ্ধ চক্র(Throat/Thyroid gland)

  বিশুদ্ধ চক্র আমাদের কণ্ঠে অবস্থিত। এ চক্রের ষোলটি দল। এর রঙ ধূসর। এটি আমাদের ভাবপূর্ণ মন ও বাহির মনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ চক্র মানসিক শক্তি ও মনের সব ভাব প্রকাশ করে থাকে। এটিতে আছে স্নিগ্ধ শক্তি। এ চক্রে শিশু খেলা করলে কথা বলার শক্তি আসে। গানের সুর আসে। সর্দি, কাশি, গলা-ঘাড় ব্যথা ও মন খারাপ হয়।

৬. আজ্ঞা চক্র(Third Eye/Pineal gland)

 আজ্ঞা চক্র আমাদের দু'ভুরুর মাঝখানে অবস্থিত। এ চক্রের দুটি দল। এর রঙ সাদা। এটি আমাদের গতিময় মন, ইচ্ছা, দিব্যদৃষ্টি, মানসিক গঠন ও মনের সব চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটিতে আছে মজ্জা ধাতুর শক্তি। এ চক্রে দিব্যশক্তির খেলায় মন কাজ করে। চিন্তাশক্তি আসে। ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা আসে। কবিতা, উপন্যাস লেখাসহ সব সৃষ্টিশীল কাজ করার ক্ষমতা আসে। মাথা ঘোরায়। কখনওকখনও মাথা চিন্তাশূন্য হয়ে পড়ে।

৭. সহস্রার চক্র(Crown/Pituitary gland)


 সহস্রার চক্র আমাদের মাথার ঠিক ওপরে অবস্থিত। এ চক্রের সহস্রটি দল। এটিতে নির্দিষ্ট কোনো রঙ নেই। এটি আমাদের উচ্চ চেতনা বা অধিচেতনা, অর্ন্তদৃষ্টি, বোধিসত্ব চেতনা, দিব্য চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটির তিনটি অংশ আছে- সচ্চিদানন্দ(সৎ, চিৎ, আনন্দ), নিচ থেকে উপরে আনন্দ অংশ, এর উপরে চিৎ(দর্পণ) অংশ এবং এরও উপরে সৎ(মহাশূন্যতারুপী অন্ধকার) অংশ। এ চক্রে দিব্যশক্তির খেলায় দিব্যজ্ঞান আসে। মানুষ জাগতিক ও মহাজাগতিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে জানতে পারে। মাথার তালু জ্বলে যায়।



  আমাদের দেহের চক্রগুলো একই সাথে গোলাকার ও লম্বাকার। সব চক্রের কেন্দ্র হৃদয় বা অনাহত বা হৃদচক্র। চক্রগুলো সবসময় দেহের মধ্যে সক্রিয় থাকে। প্রতিটি চক্র অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। একটিতে কাজ হলে, অন্যটির উপরও প্রভাব পড়ে। প্রতিটি চক্র দেহের সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি মানুষের ইচ্ছানুযায়ী দিব্যশক্তি কাজ করে থাকে, অন্যদিকে উল্টাটাও সত্য।


 বিভিন্ন যোগী, ঋষি, সাধক-সাধিকারা এই চক্রের অনুশীলন করে থাকেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে এটি করা কঠিন। কেউ যদি নিজে নিজে এটি করতে চান, করতে পারেন। কিন্তু এতে ঝুঁকি থেকে যায়। এজন্য একজন গুরু বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা অতীব প্রয়োজন। নাহলে গ্রন্থের মাধ্যমে এর অনুশীলন অনেক ক্ষেত্রে বিপদ বা শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনে।

 পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী ও সকল ভক্ত-পার্ষদের শ্রীচরণে সবার জন্য নিরন্তর মঙ্গল, কল্যাণ, শান্তি, আনন্দ ও সুন্দরময় জীবনের প্রার্থনা আমাদের।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"

!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

post courtesy: Debendra Biswas
Share:

০৬ জানুয়ারী ২০১৯

বিশ্বের প্রথম মহিলা অ্যাম্পিউইটি হিসেবে ভারতকন্যা অরুনিমা সিনহার অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয়

আমরা জীবনে কত ক্ষুদ্র ব্যাপার নিয়ে আক্ষেপ করি, হতাশ হই, অহংকার করি, কাড়াকাড়ি করি, "লড়াই" করি.....একে বলে লড়াই, একে বলে জীবন❤
"দিনটা ছিল ২০১১ সালের ১২ই এপ্রিল।

বাইশ বছরের একটা মেয়ে লক্ষনৌ থেকে পদ্মাবতী এক্সপ্রেসে উঠেছিল দিল্লী যাবে বলে। রাতের ট্রেন, তাড়াহুড়োয় সে একাই চলেছে।

মনে তার চাপা আনন্দ। CISF এ চাকরিটা এবার বোধ হয় হয়েই যাবে। আর হবে নাই বা কেন? জাতীয়স্তরের ভলিবল খেলোয়াড় সে, সঙ্গে ফুটবলও খেলে মাঝেমাঝেই। স্পোর্টস কোটায় অনেকদিন আগেই তার চাকরিটা হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল, এখনো যে হয়নি এটাই আশ্চর্যের।

মেয়েটা যখন লক্ষনৌ থেকে ট্রেনে উঠল তখন রাত প্রায় বারোটা। হঠাৎ ইন্টারভিউয়ের চিঠি আসায় তাড়াহুড়োয় রিজার্ভেশন কিছুতেই পাওয়া যায়নি, মেয়েটা কোনোরকমে জেনারেল কামরায় একটু জায়গা পেয়ে চুপ করে বসেছিল। ঘুমোলে চলবে না, সঙ্গের ব্যাগে টাকাপয়সা, রেজাল্ট, খেলার সার্টিফিকেট সবই আছে।

তবু একনাগাড়ে বসে থাকলে সবারই ঝিমুনি আসে। তার ওপর রাতের ট্রেন এমনিতেই জোরে চলে। ফলে পদ্মাবতী এক্সপ্রেস যখন চেনাতি ষ্টেশন থেকে জোরে হুইসল বাজিয়ে রওনা দিল, মেয়েটা ঘুমে প্রায় ঢুলে পড়েছে পাশের দেহাতী মহিলাটির কাঁধে। সারাদিন মাঠে প্র্যাকটিস করে এমনিতে ক্লান্ত ছিল, তার ওপর জানলা দিয়ে আসা ঠাণ্ডা হাওয়া, ঘুম তো আসতে বাধ্য।

কামরার অন্য লোকেরাও ঝিমোচ্ছে। কেউ বা তখনো জেগে আছে, হাই তুলছে ঘনঘন।

মেয়েটা একটা ব্যাপার বুঝতে পারেনি, ও যেখানে বসেছিল, তার চেয়ে কয়েকহাত দূরে তিনজোড়া চোখ ওর ওপর সমানে নজর রাখছিল। একা সোমত্ত মেয়ে রাতের সাধারণ কামরায় বিরল তো বটেই, তবে তার চেয়েও বেশি যেটা ওই চোখগুলোকে আকর্ষণ করছিল, সেটা হল মেয়েটার গলায় ট্রেনের দুলুনিতে মৃদুমন্দ দুলতে থাকা খাঁটি সোনার হারটা। টি-শার্টের ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

লোকতিনটে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। যখন বুঝল মেয়েটা অকাতরে ঘুমোচ্ছে, ক্লান্ত চোখদুটো একদম বোজা, নিঃশ্বাস পড়ছে একলয়ে, তখন একজন আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল।

মেয়েটা বসেছিল লোয়ার বার্থের একদম কোণায়। লোকটা কিছুই হয়নি এমন ভাব করে বাথরুম যেতে যেতে একটুও না ঝুঁকে অভিজ্ঞ হাতটা রাখল মেয়েটার গলায়।

কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড। তারপরেই টান মেরে ছিঁড়ে নিল হারটা।

পরিকল্পনাটা ছিল, লোকটা হারটা ছিনিয়ে নিয়েই বাথরুমের দিকে চলে যাবে, আর সেটা মেয়েটা বা অন্য কেউ দেখে ফেলার আগেই বাকি দুজন গিয়ে পরিস্থিতি বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।

কিন্তু প্ল্যানমাফিক ব্যাপারটা এগোল না। মেয়েটার গলা থেকে হারটা ছিনিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার ঘুম ভেঙে গেল, মুহূর্তে কি হচ্ছে বুঝতে পেরে হাত দিয়ে লোকোটার কাছ থেকে হারটা টানতে শুরু করল মেয়েটা।

মুশকো লোকটা পরিস্তিহিত বেগতিক দেখে সেই অবস্থাতেই টানতে টানতে বাথরুমের দিকে চলল। বাকি দুজন লোকও এগিয়ে আসতে লাগল। মেয়েটাও ছাড়ার বান্দা নয়, এই হারটা তার সর্বস্ব, সে হ্যাচড়াতে হ্যাচড়ড়াতে লোকটার সঙ্গে যেতে লাগল, সঙ্গে মুখে চিৎকার করতে লাগল, “চোর! চোর! বচাইয়ে মুঝে!”

অদ্ভুত ব্যাপার! মেয়েটার তারস্বরে চিৎকারে যারা জেগেছিল তারা তো সচকিত হয়ে উঠলই, কামরায় যারা ঘুমোচ্ছিল, তারাও ধড়মড়িয়ে উঠল। কিন্তু তিনটে লোকের সঙ্গে একটা মেয়ে একা লড়ে যাচ্ছে দেখেও তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। তারা শুধু নিজেদের চোখগুল দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে দৃশ্যটা গিলতে লাগল।

একজনও এগিয়ে এল না।

ওদিকে মেয়েটা লোকতিনটের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে করতে বাথরুমের আগের ফাঁকা জায়গাটায় এসে পড়েছে। ট্রেন ততক্ষণে বেরিলির কাছাকাছি এসে গেছে, হু হু করে হাওয়া ঢুকছে খোলা দরজা দিয়ে।

মেয়েটার হাতদুটো মুচড়ে ধরেছিল একটা লোক, সেই অবস্থাতেই একটা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সে প্রাণপণে ঘুষি চালাল লোকটার মুখে। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় লোকটা ওর পেটে প্রচণ্ড জোরে হাত দিয়ে আঘাত করল। আঘাতের তীব্রতায় মেয়েটার নাকমুখ কুঁচকে গেলেও সে ততক্ষণে দাঁত বসিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে তৃতীয় লোকটার হাত, চামড়া ছিঁড়ে মাংস দেখা যাচ্ছে সেখানে।

মিনিটতিনেকের মধ্যেই লোকগুলো প্রমাদ গুণল। বেরিলি ষ্টেশন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকবে ট্রেন, এই মেয়ে তো সহজে ছাড়ার বান্দা নয়! এত কিল-চড়-ঘুসিতেও ঠাণ্ডা হচ্ছে না!

লোকতিনটে একঝলক নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করল, তারপর চোখ বুলিয়ে কামরার ভেতরের দিকে। সেখানে তখনো অন্তত তিরিশজোড়া চোখ এদিকে উৎসুক নয়নে চেয়ে আছে, কিন্তু কারুর কোন বক্তব্য নেই। নাহ, এদের নিয়ে চাপ নেই।

যে লোকটা হারটা প্রথম ছিঁড়তে গিয়েছিল, সে নিজের ঠোঁটটা চেটে নিল একবার, মেয়েটার দুটো হাতই পেছন দিকে চেপে ধরা আছে, তবু সে পা দিয়ে লাথি কষিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম লোকটা ইশারা করতেই প্রায় আলোর গতিতে লোক তিনটে গিয়ে গেল দরজার দিকে, তারপর হু হু গতিতে ছুটতে থাকা ট্রেন থেকে পোড়া সিগারেটের টুকরো ফেলার মত ছুঁড়ে ফেলে দিল বাইশ বছরের জাতীয় স্তরে ভলিবল খেলা মেয়েটাকে।

মুহূর্তে একরাশ কালো শূন্যতা। অন্ধকার হয়ে গেল একটা সোনালী ভবিষ্যৎ। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল অনেক স্বপ্ন।

মেয়েটা ছিটকে পড়ল পাশের রেললাইনের ট্র্যাকে। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিয়তির টানে সেই লাইনে ছুটে এল আরেকটা ট্রেন। ওর বাঁ পা’টা ট্রেন থেকে পড়ে আগেই ভেঙে গিয়েছিল, এবার তার ওপর ট্রেন ছুটে গিয়ে বড় থেকে ছোট, সবরকম হাড়গুলোকে ধুলোর মত গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিল। তলপেটে আগে থেকেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল, এখন প্রচণ্ড আঘাতে চিড় ধরল তলপেটের নীচের হাড়গুলোতেও। কোমরের প্রধান হাড়টাও মড়মড়িয়ে ভেঙে গেল।

অমানুষিক কষ্ট সহ্য করতে করতে মেয়েটা জ্ঞান হারাল।

কি ভাবছেন? কষ্টে মুচড়ে উঠছে মন? রাগ হচ্ছে কামরার নীরব দর্শকগুলোর প্রতি?

দাঁড়ান। গল্প এখনো শেষ হয়নি।

কাট-টু।

২০১১ থেকে এবার সোজা চলে আসুন ২০১৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারি। হ্যাঁ হ্যাঁ, মাত্র গতকালই। গতকাল সেই মেয়েটা অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয় করেছে। বিশ্বের প্রথম মহিলা অ্যাম্পিউইটি হিসেবে।




হ্যাঁ, এই ভারতকন্যার নাম অরুনিমা সিনহা।

অরুণিমা ২০১৩ সালেই মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে, তার একটা পা প্রোস্থেটিক, অর্থাৎ অ্যাম্পিউট করা। আর বাকি শরীরটা অজস্র জায়গায় ভাঙা।

একটা রাতের মধ্যে সে যখন জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় থেকে প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়েছিল, আশপাশের মানুষগুলর চোখে ফুটে উঠেছিল বেদনা, হতাশা।

আহা! এমন মেয়েটা শেষ হয়ে গেল!

সেই করুণা অরুণিমা নিতে পারেনি। সে কারুর করুণার পাত্রী নয়। সেই ভয়াবহ ঘটনার পর মাসকয়েক হাসপাতালে থেকে সে যখন ছাড়া পেয়েছিল, তারপর থেকেই শুরু করে দিয়েছিল বিরামহীন ট্রেনিং। মাত্র দুইবছরের মধ্যে প্রথম মহিলা অ্যাম্পিউটি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে সে চমকে দিয়েছিল সবাইকে।

সঙ্গে সে এই ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যেই শুরু করে দিয়েছে নিজের সংস্থা অরুণিমা ফাউন্ডেশন যারা দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের খেলায় প্রেরণা জোগায়, সাহায্য করে। ২০১৫ সালে সে পেয়েছে পদ্মশ্রী, সংবর্ধিত হয়েছে দেশেবিদেশে।

গতকাল অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয় করার পর সে জানিয়েছে পৃথিবীর সব উঁচু শৃঙ্গগুলো সে জয় করতে চায়। চূড়ায় উঠে সে বলতে চায়, “দ্যাখো আই এম অন দ্য টপ!"

সে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায় হতাশা, অসম্ভব, শেষের মত শব্দগুলোকে। পাল্টে দিতে চায় সেই মানুষগুলোর ধারণাকে যারা ভেবেছিলেন ও চিরকালের মত শেষ হয়ে গেছে।

আসুন মন থেকে শুভেচ্ছা জানাই, গর্বিত হই এই ভারতীয়ের জন্য।

এই জয় সে উৎসর্গ করেছে তার সবচেয়ে শ্রদ্ধার ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দকে।

বিনোদন জগতের সামান্য মুচমুচে খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি, কিন্তু এই ধরণের সত্যিকারের হিরোদের আমরা কজন চিনি? কজন জানি?

অরুণিমা-র মত হিরো আরো উঠে আসুক, সমস্ত নেগেটিভিটিকে হেলায় ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে জয় করুক তারা স্বপ্ন, এমনই আশা রইল।

যারা প্রতিনিয়ত জীবনসংগ্রামে, পরীক্ষায়, বা সামাজিক সমস্যায় হতাশ হয়ে পড়েন, তাঁদের মনেও কিন্তু কোন এককোণে অরুণিমা সিনহা লুকিয়ে রয়েছে।

দরকার শুধু তাকে মন থেকে বের করে আনার!

#দেবারতি_মুখোপাধ্যায়"

Share:

শ্রীশ্রী শিবের অষ্টোত্তর শতনাম

শ্রীশ্রী শিবের প্রণাম মন্ত্রঃ

নমস্তুভ্যং বিরূপাক্ষং নমস্তে দিব্যচক্ষুষে।

নমঃ পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ।।

নমস্ত্রিশূলহস্তায় দণ্ডপাশাংসিপাণয়ে।

নমস্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ।।



শ্রীশ্রী শিবের অষ্টোত্তর শতনামঃ

দিকপতি মহাদেব পৃথিবীর পতি ।

ভূত-গতি ভুত-পতি আর শান্তমতি ।।

শান্তিময় আর নাম হয় হরি হর।

শিবশম্ভু কহে মোরে আর দিগম্বর ।।

দাতা ভোক্তা নাম মোর কর অবধান।

দিনমনি মহীপাল আর অনুপম।।

ভৈরবগণের প্রভু জানিবে শিবানী ।

আশুতোষ কৃপাসিন্ধু আর শূলপাণি।।

ভূতচক্র ভুতপতি আর খগেশ্বর।

খেপা খ্যাতি নাম মোর খ্যাত চরাচর।।

শ্রী অঙ্গ আমারে কহে কাল কালময়।

ত্রিশূলধারী আর নাম সদা দয়াময়।।

জগত পালন নাম বিষ্ণুর ভবন।

ভরণীর নাম এই অতি মনোরম।।

অপর নাম গৌরীবর বলে সর্বজন।

কল্পজাত কল্পময় জানে ত্রিভুবনে।।

কৃপাণধারী কহে মোরে জগত মাঝারে।

সংসারনাশক নাম বিখ্যাত সংসারে।।

রমণীর প্রমুগ্ধ হয় আর এক নাম।

সর্ব্বদেব অধিকারী সুন্দর সুঠাম।।

ত্র্যম্বক এক নাম অপর ত্রিপুরারি।

সকলেতে নাম লয় ত্রি-জগৎ ভরি।।

দীনদুঃখী বলি মোর হয় এক নাম।

আরো কহে সবে মোরে নবঘনশ্যাম।।

ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান কেহ কেহ বলে।

বৃষভ বাহন কেহ বলয়ে আমারে।।

বিঘ্নহারী মম নাম জানিবে শিবানী।

অপর নাম হয় বিভু শূলপাণি।।

ত্রিশূলধারী নাম মোর বিদিত ভুবন।

অন্য নাম চণ্ডীবর জ্ঞাত সর্বজন।।

যোগীশ্রেষ্ট বলে দেবী জানিবে আমাকে।

যোগেশ্বর বলে মোরে ব্রম্মাণ্ডের লোকে।।

যমরাজ, কাল, যম, হয় মোর নাম।

শব, মড়া, মম নাম বিদিত ভুবন।।

অন্য এক নাম দেবী ভোলানাথ কয়।

অন্য নাম মহাকাল অপর অভয়।।

ভোলা নামে ডাকে মোরে বিশ্বের মাঝারে।

নীলকণ্ঠ নাম মম খ্যাত চরাচরে।।

উমাপতি নাম মম খ্যাত জগত ঈশ্বর।

নিজে হর হই আমি নাম গৌরীবর।।

বাতরূপী আমি হই জানিবে শিবানী ।

তব স্বামী হই আমি তুমি দাক্ষায়ণী।।

ধূর্জ্জটি অপর নাম খ্যাত চরাচর।

ব্রহ্মাণ্ডে বিখ্যাত নাম আমিই ঈশ্বর ।।



-শ্রীশ্রী শিবের অষ্টোত্তর শতনাম সম্পূর্ণ-



‘শিব বলে কথা মোর শুনিলে মঙ্গলা।

পড়িবে আমার শাস্ত্র বিপদের বেলা।।’

পোষ্ট কার্টেসীঃ অমিত 
Share:

০৩ জানুয়ারী ২০১৯

শ্রী শ্রী " সফলা " একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

 পৌষ মা‌সের কৃষ্ণপ‌ক্ষের একদশীর নাম " সফলা " । ব্রহ্মাণ্ড পুরা‌ণে যু‌ধি‌ষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবা‌দে এই তি‌থির মাহাত্ম্য ব‌র্ণিত হ‌য়ে‌ছে । যু‌ধি‌ষ্ঠির বল‌লেন __ হে প্রভু ! পৌষ মা‌সের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম , বি‌ধি এবং পূজ্য‌দেবতা বিষ‌য়ে আমার কৌতূহল নিবারণ করুন ।

শ্রীকৃষ্ণ বল‌লেন __ হে মহারাজ ! আপনার প্র‌তি স্নেহবশত সেই ব্রত কথা বিষ‌য়ে বল‌ছি । এই ব্রত আমা‌কে যেরকম সন্তুষ্ট ক‌রে , বহু দানদ‌ক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞা‌দি দ্বারা আ‌মি সেরকম সন্তুষ্ট হই না । তাই যত্নসহকা‌রে এই ব্রত পালন করা কর্তব্য । পৌষ মা‌সের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম " সফলা " । নাগ‌দের ম‌ধ্যে যেমন শেষ নাগ , পক্ষী‌দের ম‌ধ্যে যেমন গরুড় , মানু‌ষের ম‌ধ্যে যেমন ব্রাহ্মণ , দেবতা‌দের ম‌ধ্যে নারায়ণ সর্ব‌শ্রেষ্ঠ , তেমনই সকল ব্র‌তের ম‌ধ্যে একাদশী ব্রতই সর্ব‌শ্রেষ্ঠ । হে মহারাজ ! যারা এই ব্রত পালন ক‌রেন , তারা আমার অত্যন্ত প্রিয় । তা‌দের এজগ‌তে ধনলাভ ও অনায়া‌সে প্রাপ্ত হওয়া যায় ।



ম‌হিষ্মত না‌মে এক রাজা প্র‌সিদ্ধ চম্পাব‌তি নগ‌রে বাস কর‌তেন । রাজার চারজন পুত্র ছিল । কিন্তু তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র লুম্ভক সর্বদা পরস্ত্রী গমন , মদ্যপান প্রভৃ‌তি অসৎ কা‌র্যে লিপ্ত ছিল । সে সর্বক্ষণ ব্রাহ্মণ , বৈষ্ণব ও দেবতা‌দের নিন্দা করত । পু‌ত্রের এই আচর‌ণে ক্ষুব্ধ হ‌য়ে রাজা তা‌কে রাজ্য থে‌কে বের ক‌রে দি‌লেন । স্ত্রী - পুত্র , পিতা - মাতা , আত্মীয়স্বজন প‌রিত্যক্ত হ‌য়ে সে এক গভীর ব‌নে প্র‌বেশ করল । সেখা‌নে কখনও জীবহত্যা আবার কখনও চু‌রি ক‌রে জীবন ধারণ কর‌তে লাগল ।

‌কিছু‌দিন প‌রে এক‌দিন সে নগ‌রে প্রহরী‌দের কা‌ছে ধরা পড়ল । কিন্তু রাজপুত্র ব‌লে সেই অপরাধ থে‌কে সে মু‌ক্তি পেল । পুনরায় সে ব‌নে ফি‌রে গি‌য়ে জীবহত্যা ও ফলমূল আহার ক‌রে দিন যাপন কর‌তে লাগল । ঐ ব‌নে বহু বছ‌রের পুরা‌নো এক‌টি বিশাল অশ্বত্থ বৃক্ষ ছিল । সেখা‌নে ভগবান শ্রী বাসু‌দেব বিরাজমান ব‌লে বৃক্ষ‌টি দেবত্ব প্রাপ্ত হ‌য়ে‌ছে । সেই বৃক্ষত‌লে পাপবু‌দ্ধি লুম্ভক বাস করত । বহু‌দিন পর তার পূর্বজ‌ন্মের কোন পুণ্য ফ‌লে সে পৌষ মা‌সের দশমী দি‌নে কেবল ফল আহা‌রে দিন অ‌তিবা‌হিত করল । কিন্তু রা‌ত্রি‌তে অসহ্য শী‌তের প্র‌কো‌পে সে মৃতপ্রায় হ‌য়ে রা‌ত্রিযাপন করল । পর‌দিন সূ‌র্যোদয় হ‌লেও সে অ‌চেতন হ‌য়েই প‌ড়ে রইল । দুপু‌রের দি‌কে তার চেতনা ফিরল । ক্ষুধা নিবার‌ণের জন্য সে অ‌তিক‌ষ্টে কিছু ফল সংগ্রহ করল । এরপর সেই বৃক্ষত‌লে এ‌সে পুনরায় বিশ্রাম কর‌তে থাকল । রা‌ত্রি‌তে খাদ্যাভা‌বে সে দুর্বল হ‌য়ে পড়ল ।







সে প্রাণরক্ষা‌র্থে ঈশ্ব‌রের উ‌দ্দে‌শে ফলগু‌লি নি‌য়ে _ " হে ভগবান ! আমার কি গ‌তি হ‌বে " ব‌লে অশ্রুপাত কর‌তে কর‌তে সেই বৃক্ষমূ‌লে , " হে লক্ষ্মীপ‌তি নারায়ণ ! আপ‌নি প্রসন্ন হোন " ব‌লে নি‌বেদন করল । এইভা‌বে সে অনাহা‌রে ও অ‌নিদ্রায় সেই রা‌ত্রি যাপন করল । ভগবান নারায়ণ সেই পাপী লুম্ভ‌কের রা‌ত্রি জাগরণ‌কে একাদশীর জাগরণ এবং ফল অর্পণ‌কে পূজা ব‌লে গ্রহণ কর‌লেন । এইভা‌বে অজ্ঞাতসা‌রে লুম্ভ‌কের সফলা একাদশী ব্রত পালন হ‌য়ে গেল । প্রাতঃকা‌লে আকা‌শে দৈববাণী হল _ হে পুত্র তু‌মি সফলা ব্র‌তের পুণ্য প্রভা‌বে রাজ্য প্রাপ্ত হ‌বে । সেই দৈববাণী শোনা মাত্র লুম্ভক দিব্যরূপ লাভ করল । স্ত্রীপুত্র সহ কিছুকাল রাজ্যসুখ ভো‌গের পর পু‌ত্রের উপর রা‌জ্যের ভার দি‌য়ে সে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করল । অব‌শে‌ষে মৃত্যুকা‌লে সে অ‌শোক অভয় ভগবা‌নের কা‌ছে ফি‌রে গেল ।

‌হে মহারাজ ! এভা‌বে সফলা একাদশী যি‌নি পালন ক‌রেন , তি‌নি জাগ‌তিক সুখ ও প‌রে মু‌ক্তি লাভ ক‌রেন । এই ব্র‌তে যারা শ্রদ্ধাশীল তাঁরাই ধন্য । তাঁ‌দের জন্ম সার্থক , এ‌তে কোন স‌ন্দেহ নেই । এই ব্রত পাঠ ও শ্রব‌ণে মানু‌ষের রাজসূয় য‌জ্ঞের ফল লাভ হয় ।
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।