• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৫ এপ্রিল ২০১৯

হিন্দুসঙ্গীতের মূলভিত্তি হল তার রাগরাগিণী।

হিন্দুসঙ্গীতের মূলভিত্তি হল তার রাগরাগিণী। ছয়টি মূলরাগ আর তা থেকে উৎপন্ন রাগিণী আর তাদের পুত্রগণক্রমে ১২৬টি শাখাপ্রশাখায় বিস্তৃত হয়েছে। প্রত্যেক রাগের আবার অন্ততঃ পাঁচটি করে সুর আছে, যেমন ‘বাদী’ অর্থাৎ রাগরাগিণীতে যে স্বরের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, তার নাম বাদী। বাদীর সহগামী সুরকে বলে ‘সংবাদী’ আর বাকী সব সুরকে বলে ‘অনুবাদী’ বা অংশ; আর যে রাগে যে সুর সংযোজিত হলে রাগভ্রষ্ট হয়, তাকে বলে ‘বিবাদী’। রাগের বাদী সুর হচ্ছে রাজা, সংবাদী সুর প্রধানমন্ত্রী, অনুবাদী সুর ভৃত্য আর বিবাদী সুর বৈরী অর্থাৎ শত্রুর মত। প্রাচীন ঋষিরা মানুষ আর প্রকৃতির মধ্যে শব্দের ঐক্যসূত্র আবিস্কার করেছিলেন।

ভারতীয় সঙ্গীতে সুরসপ্তক বাইশটি ‘শ্রুতি’ তে বিভক্ত। শ্রুতি হচ্ছে স্বরগত শ্রবণেন্দ্রিয়গ্রাহ্য সূক্ষ্মবিভাগ মাত্র। পাশ্চত্য সঙ্গীতের স্বরগ্রামের মাত্র বারটি শ্রুতির সাহায্যে এ রকম সূক্ষ্ম বিস্তার দুস্প্রাপ্য। আবার হিন্দু পুরাণের এই সপ্তসুরের প্রত্যেক সুরের একটি করে বর্ণ আছে; যেমন



সা- হরিৎবর্ণ – ময়ূরের কেকাধ্বনি,

রে- রক্তবর্ণ- ভরতপক্ষী,

গা- স্বর্ণবর্ণ – ছাগ,

মা- হরিদ্রাভ- শ্বেতবর্ণ, সারস পক্ষী

পা- কৃষ্ণবর্ণ- বুলবুল পাখী

ধা- হরিদ্রাবর্ণ – অশ্বের হ্রেষারব

নি- সকল বর্ণের সমন্বয়- হস্তীর বৃংহিত ধ্বনি ।

( যোগী কথামৃত... পরমহংস যোগানন্দ )
Share:

ভারতবর্ষে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ খুবুই জাগ্রত

ভারতবর্ষে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ খুবুই জাগ্রত। জ্যোতির্লিঙ্গ ও সাধারণ ও শিব মন্দিরের মধ্যে তফাৎ এই যে জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি ভগবান শিব স্বয়ম্ভু রূপে বা কোনো ভক্তকে কৃপা করে নিজে জ্যোতি রূপে বিরাজ করছেন। জ্যোতির্লিঙ্গ গুলিকে সাক্ষাৎ ভগবান শিব মানা হয়।



১) সোমনাথ - ইনি ভারতের আমেদাবাদে অবস্থিত ।

২) মল্লিকার্জুন- ইনি শ্রীশৈল অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত ।

৩) শ্রীমহাকালেশ্বর- ইনি উজ্জয়নী মানে মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত ।

৪) ওঁঙ্কারেশ্বর- ইনি নর্মদা তট মানে মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত ।

৫) শ্রীবৈদ্যনাথ- ইনি ঝাড়খণ্ডে দেওঘরে অবস্থিত। তবে এঁনার আসল মন্দির নিয়ে মতভেদ আছে ।

৬) শ্রীনাগেশ্বর- ইনি গুজরাটে অবস্থিত ।

৭) শ্রীকেদারনাথ- ইনি উত্তরাখণ্ড রাজ্যে অবস্থিত। ঋষি নরনারায়ণের তপঃভূমি ।

৮) শ্রীত্র্যম্বকেশ্বর- ইনি নাসিকে অবস্থিত গোদাবরী তটে । গোদাবরী ভারতের পুন্যা নদী গুলির একটি ।

৯) শ্রীরামেশ্বর- ইনি তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। নামের সাথেই এঁনার পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে 'রামনাথ' নামক আরোও একটি লিঙ্গ আছে। তামিল উপকথা মতে হনুমান জী এই লিঙ্গ কৈলাশ থেকে এনেছিলেন।

১০) শ্রীভীমশঙ্কর - ইনি মহারাষ্ট্রে অবস্থিত। তবে অনেকের মতে ইনি অসমে অবস্থিত । জায়গা নিয়ে মতভেদ আছে।

১১) শ্রীবিশ্বেশ্বর- ইনি কাশীতে অবস্থিত।

১২) শ্রীঘুষ্ণেশ্বর- ইনি ইলাপুরে মানে মহারাষ্ট্রে অবস্থিত।
Share:

বছরে মাত্র একদিন নাগপঞ্চমী তিথি ছাড়া বাকী সব দিন এই মন্দির বন্ধ থাকে

উজ্জয়নীর মহাকাল মন্দিরের নাম সবাই শুনেছেন। উজ্জয়নী রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজধানী। রাজা বিক্রমাদিত্য ভগবান মহাকাল আর মাতা হরসিদ্ধিদেবীর ভক্ত ছিলেন। উজ্জয়নীতে 'নাগচন্দ্রেশ্বর' নামক আর একটি শিব মন্দির আছে। কিন্তু এই মন্দিরে রোজ পূজা, রোজ ভক্ত সমাগম নিষিদ্ধ। এমনকি বছরে মাত্র একদিন নাগপঞ্চমী তিথি ছাড়া বাকী সব দিন এই মন্দির বন্ধ থাকে। অর্থাৎ বছরে একটি দিন মাত্র খোলা থাকে। নাগজাতি ভগবান শিবের ভক্ত। এমনকি ভগবান শিবের কণ্ঠের বাসুকী নাগের মাল্য থাকে। বলা হয় নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরে তক্ষক নাগ বিরাজ করেন। অনন্ত, তক্ষক, বাসুকী নাগকে তিন ভ্রাতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহর্ষি কশ্যপের পত্নী কদ্রু দেবীর সন্তান এঁনারা।

 নাগেদের বাস পাতালে। অনন্ত নাগের ওপর ভগবান বিষ্ণু শয্যা রূপে ক্ষীর সাগরে বিরাজ করেন। আর বাসুকী নাগ ভগবান শিবের ভক্ত ও ভগবান শিবের কণ্ঠে থাকেন। এই মন্দিরে অদ্ভুত এক হর গৌরীর প্রতিমা আছে, যা সাধারণত অন্য মন্দিরে দেখা যায় না। আমরা সাধারণত ভগবান বিষনুকেই নাগছত্রের তলে বিরাজ করতে দেখি কিন্তু এই মন্দিরে ভগবান শিব পার্বতীর মস্তকে নাগছত্র দেখা যায়। এমনকি মাতা উমা ও ভগবান শঙ্কর নাগের ওপর বিরাজিত । এখানে ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর সাথে গণেশ ঠাকুর আছেন। কথিত আছে একবার তক্ষক নাগ ভগবান শিবের তপস্যা করে অমরত্বের আশীর্বাদ পান। এরপর তক্ষক নাগের ইচ্ছা হয় যে সে মহাকাল বনে ভগবান শিবের সান্নিধ্যে এমন স্থানে থাকবেন, যেখানে হৈচৈ কোনো বিঘ্ন যেনো না আসে। ভগবান শিব ভক্তের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে এই মন্দিরে বিরাজ হলেন। তাই নাগ পঞ্চমী তিথি ছাড়া বছরের সব দিন এই মন্দির বন্ধ থাকে। বাকী দিন গুলিতে কেও যান না, পূজাপাঠও করেন না। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে কালসর্প দোষের উল্লেখ আছে। বলা হয় কালসর্প দোষে পীড়িত কেও এই মন্দিরে নাগপঞ্চমীর দিন ভগবান শিবের দর্শন, পূজা করলে সেই দোষ নিবারণ হয়, এছাড়াও সর্পভয় দূর হয় । এই মন্দির বহু প্রাচীন । রাজা ভোজ এই মন্দিরের নির্মাতা, পরে রাজা সিন্ধিয়াজী এই মন্দিরের সংস্কার করেন। নাগরাজের ওপর বিরাজিত ভগবান শিবের বিরাজিত দিব্য স্বরূপ দেখতে এখানে প্রচুর ভীর হয়। লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। কোনোদিন মধ্যপ্রদেশ আসলে অবশ্যই নাগপঞ্চমীর দিন এই মন্দিরে যাবেন। ছবিতে দর্শন করুন 'নাগচন্দ্রেশ্বর' ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর বিগ্রহ ।




( ইওটিউব ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত )
Share:

শিবলিঙ্গ শিবের আদি অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ

লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক।শিবলিঙ্গ মঙ্গলময় ঈশ্বরের প্রতীক।নিরাকার নির্গুণ শিব প্রণবে(অউম্) ‘ম-কার’ ‘মিতি’ বা ‘অপীতি’ অর্থাৎ লয়ের প্রতীক।মহাপ্রলয়ে সর্বভুত যাতে লীন থাকে তিনিই মহারূদ্র মহেশ্বর।"লিঙ্গ" শব্দটিও একই অর্থ পোষণ করে, লিন্ ও অঙ্গা অর্থাৎ প্রলয়ে সর্বভূত যাতে লীন হয়।



পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়,পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়,প্রাণাদি পঞ্চ,পঞ্চ মহাভূত,অন্তঃকরণের বুদ্ধি প্রভৃতি চারিভেদ,কাম ও কর্ম এই আটটিপুরীকে সুক্ষ্মশরীর বলা হয়।কর্মসমূহ সুক্ষ্মরূপে ইহাতে লীন থাকে বলে এই সুক্ষ্মশরীরকে লিঙ্গশরীরও বলা হয়।

শিবলিঙ্গ শিবের আদি অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ।শিব এক অনাদি অনন্ত লিঙ্গস্তম্ভের রূপে আবির্ভূত, বিষ্ণু বরাহ বেশে স্তম্ভের নিম্নতল ও ব্রহ্মা ঊর্ধ্বতল সন্ধানে রত।শিবলিঙ্গ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে।ইষ্ঠ লিঙ্গ,ভব লিঙ্গ ও প্রাণলিঙ্গ।

ইষ্ঠ লিঙ্গ,যেখানে স্বয়ম মহেশ্বর বিদ্যমান,এই লিঙ্গে ভগবান ভক্তকে বর দান করেন।ভব লিঙ্গ,এতে ভগবান সদাশিব নিরাকার,এই লিঙ্গ অন্তর আত্মা দ্বারা দৃশ্যমান হয়,এটি স্থান বা সময়ের অধীন নয়।প্রাণ লিঙ্গ,ইহা পরমেশ্বরের সত্য স্বরুপ,যা কঠোর তপস্যা দ্বারা প্রাপ্ত হয়,ভারতের কেদারনাথ শিবলিঙ্গ প্রাণ লিঙ্গ।

ইহা গোল কিম্বা উপবৃত্তাকার যা কোন বৃত্তাকার ভূমি কে কেন্দ্র করে স্থাপিত।এই গোল ভূমি কে আদি পরশক্তি।আর সেই গোল কিম্বা বৃত্তাকার অংশ দ্বারা অসীম কে বোঝান হয় যার কোন আদি অন্ত নেই অর্থাৎ যা সর্ববিরাজমান।
Share:

গন্ধর্বরাজ পুস্পদন্ত ভগবান শিবের কৃপায় তিনি অষ্টসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

গন্ধর্বরাজ পুস্পদন্ত ছিলেন পরম শিবভক্ত। ভগবান শিবের কৃপায় তিনি অষ্টসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। এই সিদ্ধির একটি হল ‘অণিমা’। এই অনিমা নামক সিদ্ধির সহায়তায় যোগসিদ্ধ সাধক নিজেকে ক্ষুদ্র করে আকাশমার্গে বিচরণ করতে পারেন । একদিন পুস্পদন্ত এই সিদ্ধির সহায়তায় বিচরণ করার সময় ধরিত্রীধামে কাশীরাজের পুস্পবাগান দেখতে ফেলেন। নানবিধ পুস্পে শোভিত সেই রাজার বাগান থেকে নিত্য পুস্প সংগ্রহ করে বাবা বিশ্বনাথের পূজোর জন্য মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হত। পুস্পদন্ত মনে করলেন সেই পুস্প নিয়ে ভগবান শিবের পূজা করবেন। এই ভেবে পুস্পদন্ত সেই সকল পুস্প নিয়ে চলে গেলেন। রোজ এমন করতেন। রাজা ভাবলেন কোনো চোর এই কাজ করছে। এই ভেবে সৈন্য পাহারায় রাখলেন। কিন্তু যোগসিদ্ধ পুস্পদন্তের টিক্কির নাগালও এই সেনারা পেলো না। কাশীরাজ ভাবলেন এ নিশ্চয়ই তাহলে কোনো মায়াবী ব্যক্তির কাজ। সেইজন্য কাশীরাজ কাশীর সিদ্ধ যোগী মহাত্মাদের শরণ নিলেন। সিদ্ধ মহাত্মারা যোগসাধনায় দেখলেন এ এক শিবভক্ত যোগীর কাজ।


সিদ্ধযোগীরা রাজাকে আদেশ দিলেন বাবা বিশ্বনাথের পবিত্র নির্মাল্য ও অভিষেকের জল ফুল বাগানে ছিটিয়ে দিতে। তাহলে যখন সেই মায়াবী চোর ফুলচুরি করতে আসবে তখন সে তার শক্তি হারাবে আর ধরা পড়বে। রাজা সেই মত ব্যবস্থা করে দিলেন। বাগানে সৈন্য পাইক আর সেই সিদ্ধ মহাত্মাদের নিয়ে গেলেন। পরদিন প্রভাতে পুস্পদন্ত যোগবলে পুনঃ শিব পূজার পুস্প চুরি করতে এলে ধরা পরে গেলেন। যোগশক্তি সকল লুপ্ত হল। এখন পুস্পদন্ত বিপদে পড়ে ভগবান শিবকে ডাকতে লাগলেন। ভগবান শিব আশুতোষ- অল্পেই তুষ্ট হন। পুস্পদন্ত এক সুন্দর স্তব করে ভগবান শিবকে প্রসন্ন করতে লাগলেন। পুস্প দন্তের গদ্গদ ভক্তিতে উচ্চারিত সেই স্তব শুনে বাবা বিশ্বনাথের ভক্ত সেই যোগীদের অশ্রুধারা বয়ে চলল। এত সুন্দর শিব স্তব। মহাত্মা যোগীদের কেহ কেহ ভাবে বিভোর হয়ে গেলেন সেই স্তব শুনে। এ তো সামান্য চোর নয়। ভগবান শিবের পরম ভক্ত ।

পুস্পদন্তের স্তব শুনে ভগবান শিব প্রসন্ন হয়ে পুনঃ পুস্পদন্তকে যোগশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। পুস্পদন্ত অদৃশ্য হয়ে পলায়ন করলো। সাধু মহাত্মারাও, কাশীরাজকে বোঝালেন এ কোনো সাধারণ চোর নয়- ভগবান শিবের পরম ভক্ত। সাধু যোগীরা পুস্পদন্তকৃত সেই শিবস্তব জনমানসে প্রচার করলেন। সেই স্তবই “শিবমহিস্ন স্ত্রোত্রম্‌” নামে খ্যাত।
Share:

আমাদের শাস্ত্রে অন্যান্য লিঙ্গের তুলনায় বাণালিঙ্গের পূজায় বেশি প্রশংসা লক্ষ্য করা যায়।

আমাদের শাস্ত্রে অন্যান্য লিঙ্গের তুলনায় বাণালিঙ্গের পূজায় বেশি প্রশংসা লক্ষ্য করা যায়। বাণ নামে এক ভক্ত অসুর ছিলেন। তিনি শিবকে তুষ্ট করার জন্য সুন্দর সুন্দর লিঙ্গ তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করতেন। সুতরাং বাণাসুরের দ্বারা তৈরি লিঙ্গকে বাণলিঙ্গ বলে অভিহিত করা হয় । এই সম্বন্ধে পুরাণে যে কাহিনি আছে তা এরকম – অতি প্রাচীনকালে ভারতে বাণ নামে একজন ক্রোধ জয়কারী অসুর ছিলেন। তিনি সর্বদা মহাদেবেন সেবা ও পূজায় রত থাকতেন । বাণ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ একজন শিল্পী । তিনি প্রত্যহ নিজ হাতে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করতেন। আবার পরে তা ধুমধাম করে পূজা করে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করতেন। এইভাবে প্রায় শত বছর কেটে গেল। 

তাঁর এরূপ ভক্তিতে স্বয়ং মহাদেব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন এবং একদিন তিনি ভক্তের কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন- “হে বাণ! তোমার উপর আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। তুমি কি বর চাও বল- আমি এখনই তা পূর্ণ করব।” ভক্ত বাণ মহাদেবের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে বললেন- “হে প্রভু, শাস্ত্রমতে শুভ লক্ষণযুক্ত শিবলিঙ্গ তৈরী করতে আমার খুব কষ্ট হয়। অথচ আমি এরূপ শিবলিঙ্গ তৈরী করার ব্রত নিয়েছি। তাই আমার একান্ত প্রার্থনা- আপনি শুভ লক্ষণযুক্ত কিছু লিঙ্গ আমাকে দিন। আর ঐসব লিঙ্গের অর্চনার দ্বারা সমস্ত অভিলাষ যেন পূর্ণ হয় এবং আমি কৃতার্থ হই।” জগতের অধীশ্বর মহাদেব বাণের এরূপ প্রার্থনা শোনার পর কৈলাস পর্বতের শিখরে ফিরে গেলেন এবং সেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় চৌদ্দ কোটি শিবলিঙ্গ প্রস্তুত করলেন। তারপর একদিন শুভক্ষণে নন্দি- ভৃঙ্গিদের দিয়ে ওই শুভ শিবলিঙ্গগুলি বাণাসুরকে প্রদান করলেন। বাণ লিঙ্গগুলি পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তিনি আর লিঙ্গ প্রস্তুত করতে চাইলেন না। তবে এই বিশাল সংখ্যক লিঙ্গগুলি নিয়ে বাণ চিন্তায় পড়লেন। ভাবলেন- যুগে যুগে মানবদের সর্ববিধ মঙ্গলের জন্য এই লিঙ্গগুলি বেগবতী নদীর মধ্যে স্থাপন করা উচিৎ। এরূপ চিন্তা করে তিনি বিভিন্ন পবিত্র স্থানে অনেকগুলি লিঙ্গ স্থাপন করলেন এবং অন্যান্য সমস্ত লিঙ্গগুলির মধ্যে তিনকোটি কালিকাগর্তে , তিনকোটি শ্রীশৈলে , এককোটি কন্যকাশ্রমে এক কোটি নেপালে রক্ষা করেছিলেন। বাণাসুর দ্বারা স্থাপিত এসব লিঙ্গগুলি নদীর স্রোতে ভেসে আসে কিংবা পর্বতের বিভিন্ন জায়গায় এখনও কুড়িয়ে পাওয়া যায় – এইসব ভেসে আসা লিঙ্গ বা কুড়িয়ে পাওয়া লিঙ্গগুলিকে বাণলিঙ্গ বলে চিহ্নিত করা হয় । বিভিন্ন লক্ষণযুক্ত বাণলিঙ্গ আছে। তাঁর পূজানের ফলাফলও পৃথক আছে। বাণলিঙ্গ পূজনের ফলে পূজকের সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি পায়। সুখ, সৌভাগ্য ও আরোগ্য লাভ হয়। যোগঐশ্বর্য ও বিভূতি লাভ হয় । মোট কথা সংসারে শ্রীবৃদ্ধি , আরোগ্যলাভ, সুখ শান্তি- ঐশ্বর্য সবই বানলিঙ্গ পূজা ও ভক্তি দ্বারা লাভ করা যায় ।




( শিব এবং শিবলিঙ্গ মাহাত্ম্য... স্বামী বেদানন্দ... গিরিজা পাবলিশার্স )
Share:

দোল খেলার প্রবর্তক ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন কি ছিলেন না তা বিতর্কিত বিষয়।

হোলি বা দোলখেলার নামের সাথে সাথে আমাদের মনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ও রাধিকা সহিত বৃন্দাবনে দোল খেলার চিত্র ভেসে ওঠে। দোল খেলার প্রবর্তক ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন কি ছিলেন না তা বিতর্কিত বিষয়। তবে দোলের রঙে বৃন্দাবন রাঙিয়ে উঠতো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাতেই। ভারতে অনেক আধ্যাত্মিক কবি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দোল খেলা কে নিয়ে পদাবলী রচনা করেছিলেন।



ড্যাম তুক্ষ্মারে রঙ্গরঙ্গী
হৈঁ ঔরন রঙ্গ সুহাই ।
নিতহী হোরী খেলিয়ৈ হো ,
তুম সঙ্গ যাদব রাই ।।
য়হ ফাগুয়া হম পাবহীঁ ,
হো চিতওইয়ানি মৃদু মুসকান ।
সুর শ্যাম ঐসে করৌজু ,
তুম হৌ জীবন প্রধান ।।
( সুরদাস )

ফাগ কে ভীর অভীরন মৈ গঁহি
গোবিন্দ লৈ গঈ ভীতর গোরী ।
ভাঈ করী মনকী পদমাকার
উপর নায় আবীর কী ঝোরী ।।
ছীন পিতম্মর কম্মর তৈঁমু
বিদা দাঈ মীড়ি কপোলন বোরী ।
নৈণ নচাই কন্যো মুসক্যাই
লালা ফিরি আইয়ো খেলন হোরী ।।
( পদ্মাকর )

বৃন্দাবনে দোল খেলার একটি রেওয়াজ এখনও চলে আসছে। নন্দগাঁও অল্প দূরে রাধারানীর জন্মস্থান “বরসানা” গ্রাম । প্রাচীন একটি কিংবাদন্তী যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বরসানা গ্রামে রাধারানীকে রঙ দিতে গিয়ে ধরা পরে রাধারানীর সখীদের হাতের লাঠির সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। এই অনুষ্ঠান “লাঠমার হোলি” নামে খ্যাত। এখনও ‘নন্দগাঁও’ থেকে লোকেরা বরসানাবাসীদের রঙ দিতে যায় । সেখানে বরসনাবাসী মেয়েরা লাঠি বা কঞ্চি হাতে তাদের তাড়া করে। এই অবস্থায় ধরা পড়লে সেই পুরুষকে নারী সাজিয়ে ছেরে দেওয়া হয়। পরদিন বরসনার পুরুষেরা নন্দগ্রামে রঙ দিতে যায়। ধরা পড়লে সেখানেও একই শাস্তির নিয়ম।

এই ভাবেই এই উৎসব চলছে। আধ্যাত্মিক পীঠভূমি ভারতে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবের পেছনে এমন রেওয়াজ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষ উৎসবে শান্তি, আনন্দ খুঁজে পায়।
Share:

শ্রীশ্রীগীতাকে সমস্ত ধর্মগ্রন্থের সার বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

 শ্রীশ্রীগীতাকে সমস্ত ধর্মগ্রন্থের সার বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি সর্বশাস্ত্রময়ী ভগবতী গীতা। গীতাকে মা বলেও সম্বোধন করা হয় । কারণ গীতা হল জীবের আধ্যাত্মিক জননী । মা যেমন সন্তান কোলে নিয়ে আদর যত্ন করে মানুষ করে তোলে, তেমনি গীতা মাতাও তাঁর অনন্ত আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা দিয়ে সন্তানরূপা মানব – মানবীদের মনকে পূর্ণতা দান করেন। গীতা জ্ঞান ও প্রেমমূর্তি । এটি আবার পূর্ণ যোগশাস্ত্র । অপরদিকে গীতা হল কর্মমুখী জীবনচেতনার অপরিহার্য দলিল । গীতা যেমন মানুষকে নিরন্তর সৎ কর্ম করতে অনুপ্রেরণা দেয়, তেমনি প্রবল জপ- ধ্যানের মাধ্যমে স্থিতপ্রজ্ঞ বা ব্রহ্ম্যস্বারূপ্য লাভ করতেও বলে। গীতা জীবকে ব্রহ্মের সাথে একাত্মা অনুভূতি লাভের কথা নির্দ্ধিতায় ঘোষণা করছে। গীতামাতার মূল বৈশিষ্ট্য হল- মোহগ্রস্ত জীবকে আত্মার স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়াতে দারুন তৎপরতা দেখানো। বলতে কি সাধারণ মানুষ ইন্দ্রিয় জগতের দিকে ছুটে যায় এবং ভোগবাসনায় মেতে থাকে। আর পদে পদে দুঃখ – যন্ত্রনা ভোগ করে। ফলে তার জীবনের কোনো উচ্চ দৃষ্টি থাকে না। গীতা মোহগ্রস্ত এইসব মানুষদের মনে আশার আলো জ্বালিয়ে দেয় এবং হৃদয়কে উচ্চ জীবচেতনা তথা ব্রহ্মভাবনা সঙ্গে জোড়া লাগাতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। গীতা তাই সাক্ষাৎ করুণাঘন ভগবানের বাঙ্‌ময় মূর্তি, ভগবানের প্রাণ এবং হৃদয় । গীতার সমান এ- সংসারে কিছুই নেই। যাগযজ্ঞ , তপস্যা , জপ, ধ্যান , তীর্থ ভ্রমণ প্রভৃতি গীতার ব্রহ্মচেতনাকে লাভ করারই উপর বেশী গুরুত্ব দেয়। তাই গীতা হল পৃথিবীর সর্বদেশের মানবের আধ্যাত্মিক জননী , গীতার অনন্ত ভাব যা সমুদ্রের চেয়েও গভীর , আকাশের চেয়েও বেশী ব্যাপ্তিশীল। গীতা হল বেদ বা উপনিষদের সার বাণী। স্বয়ং নারায়ণের অংশসম্ভূত বেদব্যাসের রচনা এবং কৃষ্ণ ভগবানের মুখনিঃসৃত অমৃত কথা যা কুরুখেত্রের যুদ্ধে প্রচারিত হয়েছিলো। যেহেতু এটি সাক্ষাৎ ভগবানের বাণী তাই একমাত্র গীতাশাস্ত্র পাঠ করলেই জীবনে অনন্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ হয় এবং মন পূর্ণতায় ভরে যায়।




( গুরুতত্ত্ব ও মন্ত্রসিদ্ধি... স্বামী বেদানন্দ... গিরিজা পাবলিশার্স )
Share:

বৈশাখ মাসের মঙ্গলবারে পালিত হয় ঘৃহে গৃহে মা মঙ্গলচণ্ডীর পূজা।

 চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের দেবী চণ্ডীই হলেন মা মঙ্গলচণ্ডী। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের দ্বিতীয় পার্টে দেবী চণ্ডীর "কমলেকামিনী" রূপের বর্ণনা আছে। ধনপতি বণিক ছিলেন চণ্ডিবিরোধী। সিংহল যাত্রাকালে দেবীর এই রূপ দেখেন। কিন্তু পরে কারারুদ্ধ হন। তার সন্তান শ্রীমন্ত দেবীর এই রূপ দেখে সিংহলে গিয়ে বন্দী হন। এরপর অবশ্য দেবীর কৃপায় পিতা পুত্রের কারাবাস থেকে মুক্তিলাভ ঘটে। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম তাঁর রচিত “চণ্ডীমঙ্গলে” এর “বণিক খণ্ড” এ লিখেছেন "কমলেকামিনী" রূপের কথা-



হেলায় কামিনী উগারএ গজনাথে
পলাইতে চাহে গজ ধরে বাম হাতে ।
পুনুরপি আনি তারে করএ গরাস
দেখিআ আমার হৃদে লাগিল তরাস ।
পুরুষ দেখিআ রামা নাহি করে লাজ
বামকরে ধরিআ গিলএ গজরাজ ।
খদির তাম্বুল রঙ্গ ওষ্ঠে নাহি ছাড়ে
গজ গিলে কামিনী চোয়াল নাহী নাড়ে ।।

( চণ্ডীমঙ্গল কাব্য... কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম )

কমলেকামিনী দেবীর একটি রূপ। তিঁনি সমুদ্রের মাঝে প্রস্ফুটিত কমলে বিরাজিতা। একটি হস্তী ধরে গিলে নিচ্ছেন আবার তা উদ্গীরন করছেন। এই দৃশ্য দেখেছিলেন ধনপতি বণিক ও তার অনেক পরে শ্রীমন্ত বণিক। কিন্তু সিংহলের রাজাকে এই দৃশ্য দেখাতে পারেনি। রাজা ক্রোধে দুজনকে আজীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়ে দেয়। পরে অবশ্য দেবীর স্বপ্নাদেশে রাজা, পিতা ও পুত্রকে মুক্তি দেয়। শ্রীমন্ত এর সাথে রাজা তার কন্যার বিবাহ দেন। দেবীর কৃপায় রাজাও কমলেকামিনী রূপ দর্শন করতে পেরেছিলেন। মঙ্গলচণ্ডীর দেবীর পাঁচালীতে এই আখ্যান পাঠ করা হয়।

Post: Sumon Basak
Share:

সনাতন ধর্ম মতে বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস এবং উদযাপিত রীতি

ঐতিহাসিকদের মতে, পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সাথে সম্পর্কিত যা Vaisakhi (বৈশাখী / ভৈশাকী) ও অন্য নামে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। এই Vaisakhi-কে Baisakhi উচ্চারণও করা হয়। হিন্দু ও শিখগণ এই উৎসব পালন করে। ভৈশাক (বৈশাখ) শব্দটি লিঙ্গ পুরাণ ৫৫/২২ নং শ্লোক হতেও পাওয়া যায় ।


ভারতের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নববর্ষের উৎসবগুলো হিন্দু বিক্রমী দিনপঞ্জির সাথে সম্পর্কিত। এই দিনপঞ্জির নামকরণ করা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে। ভারতের গ্রামীণ বাঙ্গালি সম্প্রদায়ে ভারতের অনেক অঞ্চল ও নেপালের মত বিক্রমাদিত্যকে বাংলা দিনপঞ্জির আবির্ভাবের স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু সেই অঞ্চলগুলোর মত বাংলায় বঙ্গাব্দের দূচনা ৫৭ খ্রিস্টপূর্বে হয়নি, বরং ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল, যা নির্দেশ করছে বঙ্গাব্দের সূচনা প্রমাণ সময়কে কোন একসময় পরিবর্তিত করা হয়েছে। মনে করা হয় শশাঙ্কের শাসনামলেই এই পরিবর্তন হয়।

ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোতে যে বাংলা দিনপঞ্জি ব্যবহার করা হয়ে তা সংস্কৃত গ্রন্থ সূর্য সিদ্ধান্ত এর উপর ভিত্তি করে লেখা। এখানে মাসগুলোর ঐতিহাসিক সংস্কৃত নামগুলো রাখা হয়েছে যার প্রথম মাসের নাম হল বৈশাখ। তাদের দিনপঞ্জিটি হিন্দু দিনপঞ্জি ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত এবং বিভিন্ন বাঙ্গালি হিন্দু উৎসবের দিন নির্ধারণে সেটি ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বাঙ্গালিদের জন্য প্রতি বছর ১৪ বা ১৫ এপ্রিলে এই উৎসব হয়ে থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর নেতৃত্বে গঠিত হওয়া ১৯৬৬ সালের একটি কমিটিতে পুরনো বাংলা দিনপঞ্জিকে সংশোধিত করা হয়। এখানে প্রথম পাঁচ মাসকে ৩১ দিন, আর বাকি মাসগুলোকে ৩০ দিন বানানো হয়। প্রতি অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসে ৩১ দিন ধার্য করা হয়। ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই দিনপঞ্জি গ্রহণ করা হয়। এরপর, জাতীয় দিনপঞ্জির সূচনা ও প্রতি বছর নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই হয়ে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে মহাসমারোহে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষারম্ভ পয়লা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিতে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে সমগ্র পশ্চিম বাংলায়। বাংলার গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন সাধিত হয়ে সকলে একসূত্রে বাঁধা পড়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে। সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন পালিত হয় গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এদিন গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত হয় চড়ক মেলা। এই মেলায় অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসী বা ভক্তগণ বিভিন্ন শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করে আরাধ্য দেবতার সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা এবং সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জন করে থাকেন।

এছাড়া, বহু পরিবারে বর্ষশেষের দিন টক এবং তিতা ব্যঞ্জন ভক্ষণ করে সম্পর্কের সকল তিক্ততা ও অম্লতা বর্জন করার প্রতীকী প্রথা একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান। পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ প্রতিটি পরিবারে স্নান সেরে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করার রীতি বহুলপ্রচলিত। বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে, যার পোশাকি নাম হালখাতা । এই উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। নতুন খাতায় মঙ্গলচিহ্ন স্বস্তিক আঁকা হয়ে থাকে।

গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য প্রাঙ্গনে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলা সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়।
Share:

জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য

সমুদ্রের জল মেঘে পরিণত হয়,বর্ষার ধারায় মেঘ নেমে আসে এবং তার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে,পুনরায় সমুদ্রে প্রবেশ করা।তেমনই আমাদের প্রকৃত আলয় হচ্ছে ভগবদ্ধাম। আমরাও আত্মারূপে ভগবানের কাছে থেকে এসেছি। কিন্তু এখন জড়জাগতিক জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছি।
এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে,প্রকৃত আলয় ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া-সেটিই হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য।



কেউ এখানে কোনরকম বোঝাপড়া করে,আজীবন টিকে থাকতে পারে না। কেউ মনে করতে পারে-আমি তো বেশ ভালই আছি,আমার জীবন খুব সুখের,তাই আমি চিরকাল এখানেই থাকতে চাই।

কিন্তু তুমি বেশিদিন এখানে থাকতে পারবে না। জীবনের আয়ূ শেষ হলে,তোমাকে এখান থেকে জোর করর বের করে দেওয়া হবে। তারপর পরবর্তী জীবন কেমন হবে সে সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না-এটিই শেখায় কৃষ্ণভাবনামৃত দর্শণ।

কৃষ্ণভাবনামৃত অর্থাৎ কৃষ্ণ (ভগবান) কথা লোকমাঝে প্রচার করার উদ্দেশ্যই ইহা-মানুষকে দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ জীবন থেকে মুক্তিলাভে সাহায্য করা। কিন্তু ভগবান সম্পর্কে অনভিজ্ঞ মানুষ,এই সহায়তাকে তাদের রুচিগত ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করা রূপে দর্শণ করে,ভুল বুঝে আরও বিপথগামী হচ্ছে।
কৃষ্ণ হলেন ভগবান।

তাঁর আলয় থেকেই আমরা সকল আত্মারা এসেছি। তাই
" কৃষ্ণকথা প্রচার কোন সাম্প্রদায়িক আন্দোলন নয়,এটি সকলের মঙ্গলের জন্য একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন"।

তবে কি কেউ যখন ভগবান সম্পর্কে জানতে পারবে,তখন তার জীবন আর ততটা দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ থাকবে না?

তাও নয়। কিছুটা জ্ঞান লাভ করলে চলবে না,পুর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হবে।

'জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বত'

'তত্ত্বত' মানে হচ্ছে পুর্ণরূপে। আর এই পূর্ণ জ্ঞান একমাত্র ভগবদগীতায় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা জনে-জনে গীতার জ্ঞান বিতরন করে চলেছি। আপনাদের অনুরোধ সেই শিক্ষা লাভ করে,জীবনের পূর্ণতা প্রাপ্ত হউন।

স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এই জগৎকে 'দুঃখালয়ম'- দুঃখের আলয়,এবং 'অশাশ্বতম'-অনিত্য। অর্থাৎ যাহা আজীবন নয় এইরূপে ব্যাখ্যা করেছেন।

' মামুপেত্য পুনর্জন্ম দুঃখালয়ম অশাশ্বতম
নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ'

"যে সকল মহান ভক্তিযোগী আমাকে প্রাপ্ত হয়েছেন,তাঁরা আর কখনই দুঃখের আলয়,অশাশ্বত এই জগতে ফিরে আসবে না।"
মামুপেত্য- কেউ যদি আমার কাছে ফিরে আসে,তাঁর আর পুনর্জন্ম হবে না।

Post Courtesy: Lincon Mondal

Share:

মহাদেবের শিরে অর্ধচন্দ্রের উদয় কাহিনী

দক্ষযজ্ঞে স্বামীর অপমানে দেহত্যাগ করা সতীর দেহটি কোলে তুলে ভগবান শিব বিলাপ করতে থাকেন পাগলের মতো। দুচোখ বয়ে গেল অশ্রুধারায়। জগত সংসার ক্রমশ শূন্য থেকে শূন্যতর মনে হতে লাগল। মনে হল, যে জগতে সতী নেই, সেই জগতের কোন প্রয়োজন নেই! সব লয় হোক! প্রলয় হোক চরাচরে! তখন সতীর দেহটি কাঁধে তুলে উঠে দাঁড়ালেন ভোলানাথ, শুরু করলেন প্রলয়কারী তাণ্ডব নাচ।




সেই প্রলয়নৃত্য থামিয়ে সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য শিবের কাছ থেকে সতীকে আলাদা করতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং বিষ্ণু। তিনি তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ একন্নটি অংশে খন্ডিত করে দিলেন। সেই অংশমালা একে একে ঝরে ঝরে পড়তে লাগল ধরণীর নানা প্রান্তে। সেই প্রান্ত-দেশসমূহে কালে কালে গড়ে উঠল দেবী সতীর এক একটি পীঠ।

সতীর দেহ শিবের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিতেই শিব অনেকটা শান্ত হলেন বটে। কিন্তু তাঁর রুদ্রতেজ কম হল না। সেই তেজের প্রভাবে সূর্য মুমূর্ষু হয়ে গেলেন। সেই তেজের আগুনে যে পথে শিব গমন করেন সে-পথের বৃক্ষ-পাহাড়-জনপদ সব ভস্ম হয়ে যেতে লাগল। তখন এই রুদ্রতেজ প্রশমণের উপায় খুঁজতে দেবতারা গেলেন ব্রহ্মার কাছে। অনেক ভেবেচিন্তে ব্রহ্মা দেবতাদের বললেন, উপায় আছে একটাই, সেজন্য চাই অমৃতের কলস আর ষোলকলাময় চন্দ্র।

ব্রহ্মার অনুরোধে দেবতারা নিয়ে এলেন অমৃতের কলস। দেবতাদের প্রার্থনায় ষোলকলায় সেজে এলেন চন্দ্র। রাত্রিকালে তিনি যে শীতলতা আর প্রশান্তি চরাচরে ছড়িয়ে থাকেন, অমৃতের কলসে অবগাহন সেই শীতলতা ও প্রশান্তি অমৃতের মধ্যে সঞ্জীবিত করতে তাঁকে অনুরোধ করলেন ব্রহ্মা। তখন ব্রহ্মার প্রার্থনায় চন্দ্র অমৃতের কলসে প্রবেশ করলেন। তারপর সেই অমৃতের কলস নিয়ে দেবতারা শিবের কাছে গেলেন, প্রার্থনা জানালেন সেই অমৃত গ্রহণ করার জন্য। অমৃত দেখে শিব প্রসন্ন হলেন এবং কলসে আঙুল ডুবিয়ে সুধা তুলতে গেলেন। তখন তাঁর নখের আঘাতে দ্বিধা হলেন কলসে থাকা চাঁদ। হায় হায়, এ কী হল! বড় অঘটন ঘটে গেল তো! সেই অঘটনে ভাঙ্গা চাঁদকে আত্মত্যাগের মহিমায় মহীয়ান করে তুলতে শিব তাঁকে ধারণ করলেন নিজের মাথায়। অমনি শিবের সমস্ত শরীর প্রশান্তিতে ভরে গেল। সমস্ত তেজ কন্ঠে এসে ঠাঁই পেল। সমস্ত দুঃখ যেন প্রশমিত হল নিমেষে। তারপর থেকেই চিরকাল প্রশান্তির প্রতীকরূপে শিবের শিরশোভা হয়ে রয়ে গেলেন এই অর্ধ আকারের চন্দ্র।

Courtesy by: Nabo Kumar Sarkar
Share:

কৃষ্ণ বলরাম অর্থনীতি

কৃষ্ণ বলরাম অর্থনীতির মূল কথা হচ্ছে কৃষি এবং গোরক্ষা। বাণ্যিজিক যদিও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তবে সে বাণিজ্য নাট-বোল্ট বা লিপস্টিক কিংবা মদ-মাংস ভত্তিক বানিজ্য নয়, কৃষি এবং গোরক্ষা ভিত্তিক। কৃষ্ণ বাঁশি বাজিয়ে গাভী এবং ষাঁড়দের নিয়ন্ত্রন করতেন । আর বলরাম লাঙ্গল দিয়ে কৃষিকাজের মহিমা প্রতিষ্ঠা করেন । গাভী থেকে পাই সুষম পানীয় দুধ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জ্বালানী ঘুঁটে এবং জৈব সার । ষাঁড় থেকেও পাই ঘুঁটে এবং জৈব সার আর ষাঁড় দিয়েই লাঙ্গল চালিয়ে পাই ধান, চাল, শাক-সবজি ইত্যাদি । এরই নাম KB Economics (কৃষ্ণ বলরাম অর্থনীতি)



তিন মাসে তিন ডাবল

কোন কোন ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে ডাবল হয় । কিন্তু সেই ডাবল হওয়াটা স্বপ্ন মাত্র কেননা ইতিমধ্যেই জিনিসের দাম কমপক্ষে তিন ডাবল হয়ে গেছে । প্রতি বছর এইভাবে মদ্রাস্ফীতি হয় । আট বছর আগে ৫০ টাকা দিয়ে এক লিটার তেল না কিনে সেই ৫০ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে আট বছর পরে সেটাকে ডাবল করে অর্থাৎ ১০০ টাকায় এক লিটার তেল কেনার মতো বোকামি আর কি হতে পারে? মাঝখানে শুধু আট বছর অন্য কেউ আপনার টাকা নিয়ে ব্যবসা করে নিল । এছাড়া বিভিন্ন ফান্ডে টাকা রেখে অনেকে তিন বছরে সর্বহারাদের থেকেও নিঃস্ব হতে হয় । অনেক শেয়ার মার্কেটেও বিপুল টাকা হারিয়েছেন । তাছাড়া বাংলাদেশে ইউনিপাই ২ আর ডেস্টিনের খবরতো সবারই জানা আছে । লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু । পৃথিবীতে যতো রকমের ব্যাঙ্ক আছে, তাদের মধ্যে সব থেকে লাভজনক এবং নিরাপদ ব্যাঙ্ক হচ্ছে কৃষ্ণের ব্যাঙ্ক । কৃষ্ণের ব্যাঙ্ক হচ্ছে জমি । মনে করুন আপনি একটি মাত্র ধানের বীজ নিলেন । সেটিকে আধা ইঞ্চি জমিতে রোপন করলেন । তিন মাস ধরে অতি সামান্য যত্ন করার ফলে আপনি সেই একটি ধানের বীজ থেকে কম পক্ষে তিন গুণ ধান পাবেন । অর্থাৎ তা তিন মাসে তিন ডাবল হল । আবার এইভাবে যদি বার বার জমা দিতে থাকেন, তাহলে চক্রবৃদ্ধি সুদের তো কোন তুলনাই চলে না । এইভাবে একট মাত্র ধানের বীজকে আট বছর ধরে চাষ করলে তো তা যে কত ডাবল হবে, তাঁর হিসাব করাও মানুষের পক্ষে কঠিন ।

মানুষ বেশী, জমি কম

অনেকে যুক্তি দেখান যে এই পৃথিবীতে মানুষ বেশী, জমি কম । সে কথা টাকার ক্ষেত্রে আরও বেশো প্রযোজ্য । সমুদ্র পরিমান বেকার সমস্যা দেখে আমরা সকলেই বুঝতে পারছি যে এই পৃথিবীতে মানুষ বেশী টাকা কম । কিংবা টাকার বন্টন সমানভাবে হচ্ছে না । একইভাবে আমরা বলতে পারি যে জমির বন্টনও ঠিকভাবে হচ্ছে না । প্রাচীন রাজারা প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজন অনুসারে জমি বন্টন করে দিতেন রেশনের মতো । এ কথা সত্য বাংলাদেশ ও ভারতের কোটি কোটি লোক ভাত খায় । সেই ভাত কি আকাশ থেকে আসে? তা অবশ্যই জমি থেকে আসে । তাঁর মানে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমি অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে । যন্ত্র সভ্যতার ফলে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানই কৃষি বিহীন রান্নাঘর হয়ে যাবে । অর্থাৎ সবাই খাবার খাবে কিন্তু কেউ চাষ করবে না । শ্রীল প্রভুপাদ ১৪ বার পৃথিবী ভ্রমন করে বলেছিলেন যে এই পৃথিবীতে জমি বেশী, মানুষ কম । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখনও হাজার হাজার এখনও হাজার হাজার একর চাষ যোগ্য জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকে । কোটি কোটি বিভ্রান্ত মানুষ অভার টাইম ডিউটি করবে, রাতভর ট্রাক চালাবে, তবু জমি চাষের মতো নোংরা কাজ করবে না । কিন্তু সেই নোংরা জমি থেকে উৎপন্ন খাবার কিন্তু কারও কাছেই নোংরা বলে মনে হয় না । কৃষিবাদীরা জানেন যে এই জমি চাষ হচ্ছে ভগবানের পূজা স্বরূপ (বিষ্ণুরারাধ্যতে পুংসাং নান্যত্তৎতোষ কারণম্‌)।

জমির দাম বেশী

অনেকে আবার বলেন যে জমির দাম এত বেশি হয়ে গেছে যে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে জমি কেনা সম্ভব না । প্রাচীন কালে জমিকে রেশন মূল্যে বন্টন করা বা বিনামূল্যে প্রজাদের মধ্যে ভূমিদান করা রাজাদের কর্তব্য ছিল । যন্ত্র সভ্যতার অধ্যুষিত গণতন্ত্রে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা কেবলই বাড়বে । এছাড়া জমি কিনতে সক্ষম ব্যক্তিও আজকাল পরিশ্রমের ভয়ে জমি কিনতে আগ্রহী নয় ।

পরিশ্রম করব কেন?

এইভাবে শহরমুখী মানুষের সংখ্যা কলিযুগে কেবলই বাড়বে । মানুষেরা মনে করে (সকলেই এমন নয়) যে, বাজারে যদি দুধ (নকল দুধ) পাই, তাহলে গরু পালব কেন? বাজারে যদি বউ (নকল বউ) পাই, তাহলে বিয়ে করে বউ পালব কেন? বাজারে যদি খাবার (তা হোক না ভেজালযুক্ত) পাই, তাহলে চাষাবাদের মতো নোংরা কাজ করব কেন? তাই কোটিপতির পক্ষেও আজকাল খাঁটি দুধ বা খাঁটি ঘি কপালে জুটে না ।

বন্যা কিংবা খরার ভয়

বন্যাতে বা খরায় যদি ফসল নষ্ট হয়, তাহলে খাব কি? বানরে যদি ফসল নষ্ট করে তাহলে খাব কি? কিন্তু আমাদের বৃহৎ প্রশ্নটি হল যে, যে কোন অজুহাতে সকলেই যদি চাষাবাদের মাধ্যমে বিষ্ণুর আরাধনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আপনারা খাবেন কি? মনে রাখবেন কাগজের টাকা কিন্তু খাওয়া যায় না । আর আমরা শাস্ত্র বিশ্বাসী মানুষেরা জানি যে মানুষের পাপ যত বাড়বে, প্রাকৃতিক দুর্যোগও তত বাড়বে । চাষাবাদ করলেও এসব দুর্যোগ হবে, না করলেও হবে । ধর্মপ্রান মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, ভগবানের কৃপায় প্রাকৃতিক দুর্যোগও তত কমে আসবে । খাদ্য গ্রহন তো আমাদের করতেই হবে । তাই কোন পরিস্থিতিতেই চাষাবাদ পরিত্যজ্য নয় ।

প্রকৃত ধনীর সংজ্ঞা

বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে, গবয়া ধনবান ধান্য ধনবান । অর্থাৎ কাগুজে টাকা দিয়ে ধনী বা দরিদ্র নির্ণয় করা উচিত নয় । বৃটিশ সরকার এশিয়া থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে জাহাজ ভর্তি স্বর্ণমূদ্রা লণ্ডনে পাচার করার পর ভারতবাসীদের হাতে তুলে দিল কাগজের টাকা । সরল ভারতবাসীরা সেই থেকে তাতে প্রসন্ন । কিন্তু কৃষ্ণবাদীরা জানে যে যাদের গোয়াল ভরা গরু এবং গোলা ভরা ধান রয়েছে তারাই জাগতিক ধনে ধনী । তাঁর সঙ্গে পবিত্র আচরণকারী কৃষ্ণভক্ত পারমার্থিক ধনে সমৃদ্ধ । তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত অর্থে ধনী ।

লেবার খরচ খুব বেশী

লেবারের খরচ যা বেড়েছে, বাজার থেকে খাবার কিনে খেলেই লাভ বেশী । দেখুন, আজকাল কৃষকেরাও আত্মহত্যা করছে । আমাদের প্রশ্ন হলো, সকলেই যদি কিনে খায় তাহলে বেচবে কে?

কেউ না কেউ চাষ করবেই

গল্পে আছে যে এক বাবার সাত ছেলে । সবাই ভাবছিল যে, বাবা যে কোন ভাইয়ের বাড়িতে খেয়ে নেবেন । কিন্তু দেখা গেল বাবা উপবাসী । ঠিক তেমনি, কেউ না কেউ চাষ তো করবেই । এখন দেখা যাচ্ছে, যে বিশ্ব জুড়ে অগনিত শহরে অগণিত মানুষেরা আর কৃষিকাজে আগ্রহী নয় । তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কলিযুগে মানুষ দুর্ভিক্ষে পীড়িত হবে । দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানেই আংশিক দুর্ভিক্ষ ।

কাগুজে টাকার দ্বীপ

মনে করুন একটি দ্বীপে সবাই কাগুজে টাকা বেতন পায় কিন্তু চাষাবাদ করে না । পৃথিবীটা কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেদিকেই যাচ্ছে । এমন দিন আসবে যে লক্ষ টাকা দিয়েও খাঁটি দুধ বা খাঁটি ঘি পাওয়া যাবে না ।

প্রয়োজন ভিত্তিক চাষাবাদ

জমি চাষ করতে হবে প্রয়োজন ভিত্তিক, লোভ ভিত্তিক নয় । তাহলে তিন মাস অল্প শ্রম করেই মানুষ সারা বছর আরামে ভজন সাধন করতে পারবে । আধুনিক যুগের লোভী চাষীরা ট্রাকটারাসুর (ট্রাক্টর+অসুর) এবং হিম ঘরের প্রয়োগ করে মুষ্টিমেয় লোককে ধনকুবের বানাচ্ছে বটে কিন্তু অধিকাংশ চাষীর নুন আনতে পান্তা ফুরোয় । মুষ্টিমেয় লোকের লোভ থেকে আবার সৃষ্টি হচ্ছে বেকার সমস্যা । আমাদের জীবনকে শুধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শে পরিচালিত করতে হবে । না হলে কোন দিক দিয়ে যে কোন সমস্যা চুপিসারে চলে আসবে, অতি চতুর ব্যক্তিও তাঁর বিন্দু বিসর্গও টের পাবে না ।

(সংকলনে - সংকীর্তন মাধব দাস)
Share:

দেবভাষায় কথা বলে তুঙ্গ নদীর তীরের এই জনপদের সকলে

তুঙ্গ নদীর ধার ঘেঁষে ছোট্ট গ্রামে পা দিতেই মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিল তরুণ সাংবাদিকের। নিতান্তই ছাপোষা গ্রাম, কিন্তু তার আকাশ-বাতাসে কী যেন একটা মিশে আছে, গড়পড়তা নয়, একটু অন্যরকম। হাওয়ার সঙ্গে ভেসে আসছে মিঠে কর্পূরের গন্ধ। একটা বাঁক ঘুরতেই সুব্রহ্মণ্যর মুদির দোকান। খদ্দেরদের ভিড়। ভিনরাজ্যের আগন্তুককে দেখে সাদরে দোকানে ডেকে নিলেন। হাসিমুখে প্রশ্ন, ‘‘কফি বা চায়াম, কিম ইচ্ছাতি ভব?’’ চমক লাগলেও মুখে হাসি ফুটল সাংবাদিকের। যা জেনে এসেছিলেন ঠিক তাই। একবিংশ শতকের ডিজিটাল সভ্যতার জগতে এ এক অন্য ভারত। আধুনিকতার কমতি নেই, আবার ধ্রুপদী ভাষা-সাহিত্যকেও ধারণ করে আছে অলঙ্কারের মতোই। নতুন-পুরনোর মিশেলে নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে কর্নাটকের এই গ্রাম।

বেঙ্গালুরু থেকে যেতে হবে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। শিমোগা জেলায় পাশাপাশি গা ঘেঁষা দু’টি গ্রাম। মাট্টুর ও হোসাহাল্লি। লোকে বলে যমজ গ্রাম। মিলিয়ে ঝুলিয়ে হাজার পাঁচেক মানুষের বাস। প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে যমজ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তুঙ্গ নদী। তুঙ্গ আর ভদ্রার মিলিত স্রোতই কর্নাটকের তুঙ্গভদ্রা। যা মিশেছে কৃষ্ণা নদীতে। নামে, প্রচারে মাট্টুরই সেরা। তবে বৈচিত্র্যে পিছিয়ে নেই হোসাহাল্লিও। এই বৈচিত্র্যটা কী, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সেটাই।



বৈচিত্র্য ঠিক বলা যায় না কিনা জানা নেই, কারণ নতুনের মোড়কে ঐতিহ্যকে হেলায় না হারিয়ে যখন আদর করে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলা হয়, তখন সেটা আত্মসত্তার মধ্যেই কোথাও মিলেমিশে এক হয়ে যায়। যেমনটা হয়েছে মাট্টুরে, হোসাহাল্লিতে। মানুষজন এখানে সংস্কৃত ভাষায় কথা বলতে সচ্ছন্দ্য। গ্রামের নিজস্ব ভাষা অবশ্য কন্নড়। তামিল এবং খানিক তেলুগুরও চল রয়েছে। কিন্তু দোকানবাজারে, রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে, ঘরের ভিতরে ও বাইরে মাতৃভাষার মতো মুখে লেগে রয়েছে সংস্কৃত।



‘Language Of Gods’ টোলের শিক্ষকরা বলেন দেবভাষা, ছাপোষা মানুষের প্রাণের ভাষা। মুখের বুলিতেই মনের আরাম। কথায় বলে, দশচক্রে ভগবান ভূত হয় আর অব্যবহারে ভাষার ধার কমে। সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে নানা কাজে লাগানোর জন্য নিত্য মুখের ভাষাকে লেখার ভাষাতেও গড়েপিটে নিতে হয়। তবেই ভাষার প্রতি মানুষের আদর-সোহাগ জন্মায়। ঠিক এমনটাই করেছেন মাট্টুরের বাসিন্দারা। মুখের কথায়, হাতে-কলমে, শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে এমনকি অফিসের কাজকর্মেও সংস্কৃতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাই সরকারি স্কুলকে গুরুর টোল বা পাঠশালা বলতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই এখানকার পড়ুয়াদের। নদীর ধারটিতে বসে চট বা মাদুর পেতে ঝরঝরে বেদের মন্ত্র আওড়াতে পারে দশ বছরের শিশুও।

গলির মোড়ে চায়ের দোকান সাজিয়ে অতিথিদের সঙ্গে নিত্য সংস্কৃতে বোলচাল চালান আরগুমাম। বলেছেন, ‘‘মারিয়াম্মা মন্দিরে ফি দিন সংস্কৃতের ক্লাস বসে। দোকানের কাজ সেরে আমি সেখানেই পড়াশোনা করতে যাই।’’

ভোরের আলো ফুটতেই কচি কচি কণ্ঠে বেদের মন্ত্রোচ্চারণে মুখরিত হয়ে ওঠে তুঙ্গ নদীর পাড়। সেখানেই জনা কয়েক ছাত্র নিয়ে গায়ত্রী বেদ পাঠাশালা চালান বর্ষীয়াণ গুরুমশাই। বেলা বাড়তে পাঠশালায় ভিড় জমান স্থানীয়রাও। নিত্যদিন গায়ত্রী বেদ পাঠশালায় আনাগোনা রুথুকুমার নায়েকের। সংস্কৃতে এখন বেশ সড়গড় রুথুকুমারের কথায়, ‘‘ভোর সাড়ে ৪টে থেকে পাঠশালা খোলে। চলে ৮টা অবধি। চট, মাদুর নিয়ে আমরা হাজির হয়ে যাই। ঠিক ঘরির কাঁটা মিলিয়ে ক্লাস নেন গুরুমশাই। সবাই এখানে মন দিয়ে ভাষাটা শেখে।’’

ভাষা শেখার জায়গা হরেক। গোটা গ্রামেই ছড়িয়ে। সরকারি স্কুল তো রয়েছেই, পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশন করেন অনেকে। নয় নয় করেও ৩০ জন সংস্কৃত ভাষার গবেষক ও অধ্যাপক রয়েছেন। তেমনই একজন সংস্কৃতের অধ্যাপক ভানু প্রকাশ। ভাষার প্রতি গ্রামবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে নিজের বাড়ির দরজায় বড় বড় করে লিখে রেখেছেন, ‘‘এই বাড়িতে সকলে মন খুলে সংস্কৃত চর্চা করতে পারেন। কেউ বাধা দেবে না।’’


প্রাইমারি স্কুলের প্রিন্সিপাল লক্ষ্মী দেবী সংস্কৃত ব্যাকরণে পণ্ডিত। সরকারি অনুদানে চলে তাঁর স্কুল। জানিয়েছেন, শিক্ষায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গোড়া মজবুত করতে সংস্কৃতের বিকল্প নেই। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে সব বিষয়ই পড়ানো হয়। অন্যান্য ভাষাতেও ক্লাস হয়। তবে সংস্কৃতের চর্চা কিছু বেশি। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের ছোট থেকেই এই ভাষায় স্বাবলম্বী করে তুলি। তাদের ফ্রিতে টিউশনও দেওয়া হয়।’’




মাট্টুর মানেই হল সংস্কৃত ভাষা চর্চার কেন্দ্র, ধ্রুপদী সঙ্গীতের আখড়া, বৈদিক সংস্কৃতের পীঠস্থান। নিজেদের গ্রামকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করেন গ্রামবাসীরা। এবং সরকারও। সালটা ১৯৮৩। সরকারি ভাবে মাট্টুরকে ‘সংস্কৃত গ্রাম’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভাষার বিপ্লব আনতে যিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁর নাম টিএন গিরিশ। সারদা ভিলসা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রায় ৩৫ বছর ধরে গ্রামের আনাচ কানাচে সংস্কৃতের বীজ বুনেছেন তিনি। যে ভাষা একসময় ছিল নিছক পৌরোহিত্যের ভাষা, উচ্চকোটির ব্রাহ্মণের একচ্ছত্র অধিকারের নিশানি, তাকেই ঘরে ঘরে সাবলীল কথ্য ভাষায় পরিণত করতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি তাঁকে। ছাতার মতো পাশে পেয়েছিলেন সংস্কৃত ভারতীকে। এই প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে মৃতপ্রায় দেবভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। সংস্কৃত ভারতীর চেয়ারম্যান চামু কৃষ্ণা শাস্ত্রীর উদ্যোগে মাট্টুরে চালু হয় সংস্কৃত ভাষার ক্লাস।

‘‘শুরুতেই সাফল্য পাইনি। অনেকেই মনে করেন সংস্কৃত ভাষা মৃতপ্রায়। মজার বিষয় হলো ভারতে এখনও সংস্কৃত ভাষাভাষীর সংখ্যা এক লক্ষের কাছাকাছি। বিশ্বব্যাপী প্রচার পাচ্ছে এই ভাষা। আমাদের গ্রামেও ধীরে ধীরে সংস্কৃত ভাষা সোনার খনিতে পরিণত হয়েছে,’’ জানিয়েছেন টিএন গিরিশ। তাঁর মতে, অনেকের কাছেই সংস্কৃত মানে আতঙ্ক। তাঁরা মনে করেন এটা শুধুমাত্রই পুজাপাঠের ভাষা। আড়ে বহরে ভারী, উচ্চারণে কঠিন। তবে মন দিয়ে এর স্বাদ নিতে থাকলে দেখা যাবে এই ভাষা যেমন তার ভাবে সুমধুর, তেমনি গাম্ভীর্যে অনন্য। বেদ, উপনিষদ, প্রাচীন পুঁথিপত্র থেকে মুখের বুলিতে সংস্কৃতকে স্বীকৃতি দিতে সময়টা তাই অনেক বেশিই লেগেছে বলে জানিয়েছেন গিরিশ।


২০১৮ সালের জুলাইতে মাট্টুরে গ্রাম পরিদর্শনে আসেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এখানকার সংস্কৃত চর্চা দেখে অভিভূত হয়ে তিনি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘গ্রামের মানুষেরা নির্দ্বিধায় সংস্কৃতে কথা বলেন, জাতপাত, ধর্মের তোয়াক্কা না করেই।’’

মাট্টুরে যেমন কথায় ও লেখনীতে সংস্কৃতের চর্চা হয়, হোসাহাল্লিতে তেমনি হয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের রেওয়াজ। কর্নাটকের প্রাচীন ইতিহাসকে গানের কথায় বিশেষত ধ্রুপদী সঙ্গীতের মোড়কে তুলে ধরার এই প্রথাকে বলে ‘গামাকা।’ এটি হোসাহাল্লির একটি প্রাচীন প্রথা। অনেকে বলেন ‘কাব্য বচন’, গীতিকারকে বলা হয় ‘গামাকি।’ গানের সুরে রাগের প্রাচুর্য। ‘গামাকি’ কিছুটা করে গানের সুর তোলেন, পাশে বসেই সেই কথাকে সরলভাবে বুঝিয়ে (‘ব্যাখ্যানা’) দেন অন্য একজন। সাধারণত ‘হরিশচন্দ্র কাব্য,’ ‘দেবী ভাগবত’-র মতো প্রাচীন কাব্য জায়গা করে নিয়েছে সঙ্গীতের এই ঘরানায়।



সংস্কৃত ভারতীর এক অধ্যাপকের কথায়, শুধু প্রাচীনত্বের জন্য নয়, জনপ্রিয়তার নিরিখেও সংস্কৃত ভাষা এখন আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষ করে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর কয়েক লক্ষ শব্দের ভাণ্ডার এসেছে এই প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা থেকে। এর শিকড়ের সন্ধানে গবেষণা চলছে দেশে-বিদেশে। দৃষ্টান্তস্বরূপ জার্মানি। বর্তমানে জার্মানির ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রায় ১২০০টি স্কুলে সংস্কৃত পড়ানো হয়। আর সেটা পড়ানো হয় ঠিক বৈদিক যুগের একটা আবহে।


ভারতেও মোট ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে সংস্কৃত চর্চা করা হয়। যার মধ্যে—

১) রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত বিদ্যাপীঠ, তিরুপতি (অন্ধ্রপ্রদেশ), ২) রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান (প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়), নয়াদিল্লি, ৩) শ্রীভেঙ্কটেশ্বর বৈদিক ইউনিভার্সিটি, তিরুমালা, তিরুপতি (অন্ধ্রপ্রদেশ) ৪) কামেশ্বর সিং দারভাঙা সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি, কামেশ্বর নগর, দারভাঙা (বিহার)৫) শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত বিদ্যাপীঠ, নয়াদিল্লি ৬) শ্রী শংকরাচার্য ইউনিভার্সিটি অব সংস্কৃত, কালাডি, এরনাকুলম ৭) শ্রী জগন্নাথ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রীবিহার, পুরী ৮) জগদগুরু রামানন্দাচার্য রাজস্থান সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি ৯) সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, বারাণসী ১০) সোমনাথ সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি, সোমনাথ, জুনাগড় (গুজরাট) ১১) উত্তরাখণ্ড সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, হরিদ্বার ১২) কবিকুলগুরু কালীদাস সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, রামটেক, নাগপুর ১৩) মহর্ষি পাণিনি সংস্কৃত ইবম বেদিক ইউনিভার্সিটি, উজ্জয়িনী (মধ্যপ্রদেশ, ১৪) কর্নাটক সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি, চমরেন্দ্র সংস্কৃত মহাপাঠশালা, বেঙ্গালুরু ১৫) কুমার ভাস্কর বর্মা সংস্কৃত অ্যান্ড অ্যান্সিয়েন্ট স্টাডিজ ইউনিভার্সিটি, নলবাড়ি (অসম)।



সংস্কৃতের মতো সুপ্রাচীন ভাষাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে নরেন্দ্র মোদী সরকারও। সিবিএসই পাঠ্যক্রমে জার্মানের পাশাপাশি তৃতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সংস্কৃতকেও।

সংস্কৃত গ্রাম হিসেবে মাট্টুর সরকারি শিলমোহর পেলেও, ভারতে আরও কয়েকটি গ্রাম রয়েছে যেখানে রীতিমতো সংস্কৃত চর্চা হয়।

দেখে নেওয়া যাক কী কী সেই গ্রাম—

প্রথমেই বলা যায় মধ্যপ্রদেশের ঝিরি গ্রাম। রাজগড় জেলার সারাঙ্গপুর তেহসিলের এই গ্রামের একটা বড় অংশ সংস্কৃতে কথা বলে। ১৬ বছর ধরে ঝিরিতে স্থানীয় ভাষার জায়গা দখল করেছে সংস্কৃত। ২০০২ সালে সংস্কার ভারতী এখানে ক্যাম্প, ওয়ার্কশপ করে।

ওড়িশার উপকূলবর্তী গজপতি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সাসানা। গ্রামের অধিকাংশই ব্রাহ্মণ। ৫০টি পরিবারের প্রায় ৩০০ জন সদস্য নিয়মিত সংস্কৃতে কথাবার্তা চালান। সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার জন্য সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলও রয়েছে গ্রামে।

মধ্যপ্রদেশের কারেলি তেহসিলের বাঘুয়ার গ্রাম। সংস্কৃত এখানকার প্রথম ও প্রধান কথ্য ভাষা।

রাজস্থানের গানোরা গ্রাম। বাঁশওয়ারা জেলার ঘাটোল তেহসিলের এই গ্রামে এক সময় কথ্য ভাষা ছিল ওয়াগাড়ি। গ্রামে সংস্কৃত স্কুল তৈরির পর থেকে এখন আট থেকে আশির দেবভাষায় কথা বলতেই বেশি ভালোবাসেন।

মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর জেলার মোহাড় গ্রাম। প্রত্যন্ত এই গ্রামেও সংস্কৃত ভাষার চল রয়েছে। অধিকাংশ গ্রামবাসী তাঁদের কথ্য ভাষা ছাড়াও সংস্কৃতে পারদর্শী।

আসলে ভাষা বাঁচে ব্যবহারে। ভাষা তো বাহারি ঠুনকো গয়না নয় যে তাকে আতু-পুতু করে তুলোর আরামে বন্দি করে রাখতে হবে! ভাষা হচ্ছে শ্রমিক মানুষের মতো। তার পায়ে লাগবে ধুলো, তার গায়ে বইবে ঘাম, সে ইচ্ছে হলে একলহমায় ভারা বেয়ে উঠবে সাতমহলায়, আবার নামবে টালির ঘরে। যেখানে খুশি যেতে পারে যে-ভাষা, যেখানে খুশি কাজে লাগতে পারে যে-ভাষা সেই ভাষাই সজীব, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। আদি ভাষা সংস্কৃতকে তাই সিন্দুকে বন্দি করে রাখা নয়, বরং মুখের ভাষাতেই বন্দি করে রেখেছে মাট্টুর-সহ দেশের এই প্রত্যন্ত কিছু গ্রাম। বোঝাতে চেয়েছে, প্রগতির সঙ্গে ধ্রুপদীয়ানার কোনও বিরোধ নেই, বরং ধ্রুপদী জ্ঞান আসলে প্রগতিরই অনুঘটক। আর সেখানেই তাদের মুন্সিয়ানা।

তথ্যসুত্রঃ চৈতালী চক্রবর্তী, দ্য ওয়াল


Share:

বালুচিস্তানের কালাটেশ্বরী কালী মাতা, মাথা ঝোঁকায় পাকিস্তানও

মৌলবাদের ঘুণধরা পাকিস্তানে জাগ্রত কালী মায়ের মন্দির! পাকিস্তানে হিন্দু মন্দির থাকা অনেকটা চাঁদে জল থাকার মতোই অবাস্তব লাগে শুনতে। সেখানে পাকিস্তানে বুকে কালী মন্দির থাকাটা সত্যি আশ্চর্যজনক ঘটনা। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের বেশির ভাগ হিন্দুর ভারতে চলে আসার কারণে,ধর্মীয় আগ্রাসনে পাকিস্তানে শত শত মন্দির ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বা জবর দখল করে সেগুলিতে বসতবাড়ি, হোটেল বা পাঠাগার হয়েছে ।কিন্তু কয়েকটি বিখ্যাত মন্দির অটুট রয়ে গেছে। কারণ, এশিয়াতে ইসলাম প্রবেশ করার আগেই তৈরি হওয়া মন্দিরগুলি স্থানীয় ইসলাম, খ্রীস্টান, শিখ ধর্মের জনগণের জীবনযাপনেও জড়িয়ে গেছে। ফলে ভাঙ্গতে গেলে হাত কেঁপেছে হানাদারদের। কোনও এক অজ্ঞাত ভয়ে পিছিয়ে এসেছে।





পাকিস্তানের খনিজ পদার্থ সম্বৃদ্ধ প্রদেশ বালুচিস্তান। হিন্দুদের পবিত্র তীর্থ, একান্ন পিঠের অন্যতম পীঠ মরুতীর্থ হিংলাজ বা বিবি নানীর মন্দির এই প্রদেশেই । কিন্তু পাকিস্তানের বালুচিস্তানে আরেক জাগ্রত ও বিখ্যাত দেবী আছেন। ক’জন ভারতীয় তা জানেন! হ্যাঁ, স্বয়ং মা কালী ১৯৪৪ বছর ধরে অবস্থান করছেন ওই অঞ্চলে।

তখন অবশ্য বালুচিস্তান বা পাকিস্তানের জন্মই হয়নি, দক্ষিণ এশিয়াতে ইসলামেরও আগমন হয়নি। আজ কট্টর মৌলবাদী পাকিস্তানের বুকে এই দেবীর পূজা হয় মহাসমারোহে। এই রণচন্ডী, উগ্রমূর্তি দেবীকে সমীহ করে পুরো পাকিস্তান। মন্দিরের সমস্ত অনুষ্ঠানে যথাসম্ভব সাহায্য করেন বালুচ মুসলিমরা।

সদা ক্রোধান্বিতা, রণরঙ্গিনী, করাল-বদনা দেবীর নাম কালাট কালী মাতা। কেউ ডাকেন মা কালাটেশ্বরী। মা এখানে পূজিত হচ্ছেন কয়েক হাজার বছর ধরে। সেই ৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে, মন্দিরের দ্বারে তা উর্দু ভাষায় লেখাও আছে।

কালাট শহর

প্রতিবছর হাজারে হাজারে হিন্দুভক্ত সারা পাকিস্তান থেকে কালাট কালীমাতার দর্শনে  আসেন। ভোগ দেন, ষোড়শ উপচারে পূজা করেন। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় চলে ভীষণ জাগ্রতা এই কালী মার নিত্যপূজা। ভক্তদের আতিশয্য থেকে বিগ্রহকে আলাদা রাখতে কাচ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

প্রায় কুড়িফুট উঁচু বিগ্রহটির দশটি হাতে গদা ,তরবারি,ঢাল,শঙ্খ,খড়্গ,ত্রিশুল,চক্র,ধনুক,নরমুন্ড,খঞ্জর।রণ সাজে সজ্জিতা কালীমাতা  এখানে কালচে-নীলবর্ণা, গলায় সত্যিকারের করোটির মালা। বিরাট জিভ বার করে  মহাদেবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। এই মন্দিরে কালীমাতার বিগ্রহের সামনে রাখা আছে গুরু নানকের ছবি। বালুচিস্তানের শিখদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র এই মন্দির। স্থানীয় লোকগাথা থেকে জানা যায় অনেক শিখ গুরু এই মন্দিরে বিভিন্ন সময় এসেছেন।

কালাট কালী মায়ের পুরোহিত ছিলেন, পাকিস্তানের হিন্দু নেতা লক্ষীকান্ত গড়জি
শত শত বছর ধরেই বছর ধরেই এই অঞ্চলের হিন্দুরা স্থানীয় বালুচ ও পাশতুনদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছেন। ১৯৪৭ শে ভারতবর্ষ স্বাধীন  হলে সেই সম্পর্কে আঘাত পড়ে। দলে দলে হিন্দু বালুচিস্তান ছাড়েন। অথচ বালুচিস্তানের অর্থনীতিতে হিন্দুদের অবদান কোনওদিন অস্বীকার করা যাবেনা।আর অঞ্চলটি বরাবরই ছিলো হিন্দুদের দখলে।

১৯৪১ সালে অঞ্চলটিতে প্রায় ৫৬,০০০ হিন্দু বাস করতেন। যদিও অঞ্চলটি তখন ছিলো ‘খান’ যুবরাজদের অধীনে। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় ‘খান’রা কালাট  অঞ্চলটিকে ভারতভুক্তির দাবি জানিয়ে জওহরলাল নেহেরুকে চিঠি লেখেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নেহেরু নাকচ করে দেন প্রস্তাবটি। কালাটের হয়ে এগিয়ে আসেন তৎকালীন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু তিনিও পারেননি। অবশেষে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় প্রিন্সলি স্টেট কালাট।





পাকিস্তানে হিন্দুর সংখ্যা কমলেও  কমেনি কালাটেশ্বরী কালী মাতার মহিমা। বরং তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কালাটেশ্বরী কালী মন্দিরে কালীপূজা, দশহরা, হোলি, গুরুপূর্ণিমা জাঁকজমক সহকারে হয়ে থাকে।মাঝে মধ্যে উগ্রবাদীরা মন্দিরটা ধ্বংস করার জন্য প্ররোচনামূলক মিটিং মিছিল করে। ঘুরিয়ে বলে এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে ভারত প্রশয় দিচ্ছে তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে।

কেউ বলেন এই অঞ্চলেই আছে পাকিস্তানের পরমাণু বোমা পরীক্ষা কেন্দ্র চাঘাই। তাই পাকিস্তানের নিরপত্তার স্বার্থে এখানে কোনও হিন্দুমন্দির থাকা উচিত না। এই মন্দিরের পুরোহিতদের মহারাজা বলা হয়।প্রবীণতম ও শ্রদ্ধেয় মহারাজা লক্ষীচাঁদ গড়জী ও দুই সেবককে ২০১০ সালে অপহরণ করে মৌলবাদীরা। কিন্তু পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় জীবিত অবস্থায়।যা রীতিমতো বিস্ময়কর।তাই এই মন্দিরটি ভাঙার হুজুগ ওঠে, রাজনীতি মাঝে মাঝে পালে হাওয়াও দেয়।  কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা করা সম্ভব হয়না।

শোনা যায়, মন্দির ভাঙতে চেষ্টা করা অনেক মানুষের অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যেই। আর বর্তমানের  পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলি জানে এই মন্দিরটি ভাঙলে বালুচিস্তানের  মুসলিমরাও ছেড়ে কথা বলবেননা। এমনিতেই স্বাধীনতার আন্দোলন বালুচিস্তানে জোর হাওয়া পেয়েছে। বালুচরা মনে করছেন পাকিস্তানের কবলমুক্ত হয়ে  বালুচিস্তানের স্বাধীন হওয়া কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

যাই হোকনা কেন, মা কালাটেশ্বরীকে স্থানচ্যুত করা ১৯৪৪ বছর ধরে সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতেও হবেনা। কত শক, হুন, পাঠান, মোগল, ইংরেজ এল গেল। মা কালাটেশ্বরী একই জায়গায় স্বমহিমায় বিরাজ করছেন এবং করবেনও।


পাকিস্তানের মন্ত্রীসভার সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ

তথ্যসুত্রঃ দ্য ওয়াল


Share:

আজকের লেখাটা সেই নির্লজ্জদের উদ্দেশ্যে,যাঁরা ধর্মান্তরিত হয়।

আমরা সনাতন ধর্মী।এটা আমাদের গর্ভ।একদিকে ভারতীয়দের সংস্কৃতি এত পবিত্র যে,লক্ষ লক্ষ বিদেশিরা আজ মায়াপুর,বৃন্দাবন,হরিদ্বার প্রমুখ তীর্থধাম গুলিতে মানব জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সাধনে ব্রতী হচ্ছে। আর অপরদিকে কিছু দুঃশ্চরিত্র ভারতীয় কুলাঙ্গার ছেলেমেয়ে, মা,বাবার মুখে চুনকালি দিয়ে নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্ত করতেছে ধর্মান্তরিত হয়ে।আবার ঔ নির্লজ্জরা বলে এটা নাকি ভালবাসা,যারা নিজের মা,বাবাকে ভালবাসতে পারে নি তারা কি না ভালোবাসার টানে ধর্মান্তরিত হয়,ধীক্কার এই ভালবাসা নামক নষ্টামির।

এখন ছেলেমেয়েরা প্রেম করে, ছয়মাস,একবছর পর পর প্রেমিক প্রেমিকা বদলায় আর শেষে ভালবাসা খুঁজে পায় বিধর্মীদের আস্তানায়।হায়রে কলিযুগ,হায়রে অসহায় মা-বাবা।

আচ্ছা,সত্যি যদি ভালবাসা হয় তাহলে একটা মুসলিম ছেলেমেয়ে কেন হিন্দু ধর্ম গ্রহন করে না?

মনে হয় হিন্দুদের ভালবাসার পরিমানটা একটু বেশি,নির্লজ্জতা একটু বেশি,ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধাটা একটু বেশি,মা-বাবাকে ছোট করার প্রবণতাটাও একটু বেশি।তবে হা তোমাদের ও সন্তান হবে আজ যে দিনটা মা-বাবাকে উপহার দিয়েছ আগামীতে এর থেকে ভয়ংকর দিনের জন্য নিজে প্রস্তুত থেকো।কামের জোয়ারটা বেশি দিন থাকে না,ভাটা পরলেই দেখা যায় ধর্মান্তরিতদের দুর্দশা যখন আর কিচ্ছু করার থাকে না।যার হাজার প্রমাণ আমাদের আশেপাশে আমরা দেখতে পাই।


অনেক পণ্ডিতের মুখে বলতে শুনেছি ওরা নাকি ধর্মান্তরিত না হয়ে সংসার করে, পরে বাচ্চা হলে এগুলি ইসলাম ধর্ম পালন করে, এটা কোন ধরনের সংসার ভগবান শ্রীকৃষ্ণই জানেন.....


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ৩য় অধ্যায়ের ৩৫ নং শ্লোকে ভগবান বলেছেন," স্বধর্ম সাধনে যদি মৃত্যু হয়,তাও মঙ্গলজনক,কিন্তু অন্যের ধর্মের অনুষ্ঠান করা বিপদজনক"।

তাই সাবধান,কৃষ্ণ থেকে বেশি জ্ঞানী হবার নাটক না করে নিজেকে শুধরে নেওয়াই শ্রেয়।

Post: Sangkirton Madob
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।