কৃষ্ণ বলরাম অর্থনীতির মূল কথা হচ্ছে কৃষি এবং গোরক্ষা। বাণ্যিজিক যদিও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তবে সে বাণিজ্য নাট-বোল্ট বা লিপস্টিক কিংবা মদ-মাংস ভত্তিক বানিজ্য নয়, কৃষি এবং গোরক্ষা ভিত্তিক। কৃষ্ণ বাঁশি বাজিয়ে গাভী এবং ষাঁড়দের নিয়ন্ত্রন করতেন । আর বলরাম লাঙ্গল দিয়ে কৃষিকাজের মহিমা প্রতিষ্ঠা করেন । গাভী থেকে পাই সুষম পানীয় দুধ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জ্বালানী ঘুঁটে এবং জৈব সার । ষাঁড় থেকেও পাই ঘুঁটে এবং জৈব সার আর ষাঁড় দিয়েই লাঙ্গল চালিয়ে পাই ধান, চাল, শাক-সবজি ইত্যাদি । এরই নাম KB Economics (কৃষ্ণ বলরাম অর্থনীতি)
তিন মাসে তিন ডাবল
কোন কোন ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে ডাবল হয় । কিন্তু সেই ডাবল হওয়াটা স্বপ্ন মাত্র কেননা ইতিমধ্যেই জিনিসের দাম কমপক্ষে তিন ডাবল হয়ে গেছে । প্রতি বছর এইভাবে মদ্রাস্ফীতি হয় । আট বছর আগে ৫০ টাকা দিয়ে এক লিটার তেল না কিনে সেই ৫০ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে আট বছর পরে সেটাকে ডাবল করে অর্থাৎ ১০০ টাকায় এক লিটার তেল কেনার মতো বোকামি আর কি হতে পারে? মাঝখানে শুধু আট বছর অন্য কেউ আপনার টাকা নিয়ে ব্যবসা করে নিল । এছাড়া বিভিন্ন ফান্ডে টাকা রেখে অনেকে তিন বছরে সর্বহারাদের থেকেও নিঃস্ব হতে হয় । অনেক শেয়ার মার্কেটেও বিপুল টাকা হারিয়েছেন । তাছাড়া বাংলাদেশে ইউনিপাই ২ আর ডেস্টিনের খবরতো সবারই জানা আছে । লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু । পৃথিবীতে যতো রকমের ব্যাঙ্ক আছে, তাদের মধ্যে সব থেকে লাভজনক এবং নিরাপদ ব্যাঙ্ক হচ্ছে কৃষ্ণের ব্যাঙ্ক । কৃষ্ণের ব্যাঙ্ক হচ্ছে জমি । মনে করুন আপনি একটি মাত্র ধানের বীজ নিলেন । সেটিকে আধা ইঞ্চি জমিতে রোপন করলেন । তিন মাস ধরে অতি সামান্য যত্ন করার ফলে আপনি সেই একটি ধানের বীজ থেকে কম পক্ষে তিন গুণ ধান পাবেন । অর্থাৎ তা তিন মাসে তিন ডাবল হল । আবার এইভাবে যদি বার বার জমা দিতে থাকেন, তাহলে চক্রবৃদ্ধি সুদের তো কোন তুলনাই চলে না । এইভাবে একট মাত্র ধানের বীজকে আট বছর ধরে চাষ করলে তো তা যে কত ডাবল হবে, তাঁর হিসাব করাও মানুষের পক্ষে কঠিন ।
মানুষ বেশী, জমি কম
অনেকে যুক্তি দেখান যে এই পৃথিবীতে মানুষ বেশী, জমি কম । সে কথা টাকার ক্ষেত্রে আরও বেশো প্রযোজ্য । সমুদ্র পরিমান বেকার সমস্যা দেখে আমরা সকলেই বুঝতে পারছি যে এই পৃথিবীতে মানুষ বেশী টাকা কম । কিংবা টাকার বন্টন সমানভাবে হচ্ছে না । একইভাবে আমরা বলতে পারি যে জমির বন্টনও ঠিকভাবে হচ্ছে না । প্রাচীন রাজারা প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজন অনুসারে জমি বন্টন করে দিতেন রেশনের মতো । এ কথা সত্য বাংলাদেশ ও ভারতের কোটি কোটি লোক ভাত খায় । সেই ভাত কি আকাশ থেকে আসে? তা অবশ্যই জমি থেকে আসে । তাঁর মানে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমি অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে । যন্ত্র সভ্যতার ফলে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানই কৃষি বিহীন রান্নাঘর হয়ে যাবে । অর্থাৎ সবাই খাবার খাবে কিন্তু কেউ চাষ করবে না । শ্রীল প্রভুপাদ ১৪ বার পৃথিবী ভ্রমন করে বলেছিলেন যে এই পৃথিবীতে জমি বেশী, মানুষ কম । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখনও হাজার হাজার এখনও হাজার হাজার একর চাষ যোগ্য জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকে । কোটি কোটি বিভ্রান্ত মানুষ অভার টাইম ডিউটি করবে, রাতভর ট্রাক চালাবে, তবু জমি চাষের মতো নোংরা কাজ করবে না । কিন্তু সেই নোংরা জমি থেকে উৎপন্ন খাবার কিন্তু কারও কাছেই নোংরা বলে মনে হয় না । কৃষিবাদীরা জানেন যে এই জমি চাষ হচ্ছে ভগবানের পূজা স্বরূপ (বিষ্ণুরারাধ্যতে পুংসাং নান্যত্তৎতোষ কারণম্)।
জমির দাম বেশী
অনেকে আবার বলেন যে জমির দাম এত বেশি হয়ে গেছে যে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে জমি কেনা সম্ভব না । প্রাচীন কালে জমিকে রেশন মূল্যে বন্টন করা বা বিনামূল্যে প্রজাদের মধ্যে ভূমিদান করা রাজাদের কর্তব্য ছিল । যন্ত্র সভ্যতার অধ্যুষিত গণতন্ত্রে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা কেবলই বাড়বে । এছাড়া জমি কিনতে সক্ষম ব্যক্তিও আজকাল পরিশ্রমের ভয়ে জমি কিনতে আগ্রহী নয় ।
পরিশ্রম করব কেন?
এইভাবে শহরমুখী মানুষের সংখ্যা কলিযুগে কেবলই বাড়বে । মানুষেরা মনে করে (সকলেই এমন নয়) যে, বাজারে যদি দুধ (নকল দুধ) পাই, তাহলে গরু পালব কেন? বাজারে যদি বউ (নকল বউ) পাই, তাহলে বিয়ে করে বউ পালব কেন? বাজারে যদি খাবার (তা হোক না ভেজালযুক্ত) পাই, তাহলে চাষাবাদের মতো নোংরা কাজ করব কেন? তাই কোটিপতির পক্ষেও আজকাল খাঁটি দুধ বা খাঁটি ঘি কপালে জুটে না ।
বন্যা কিংবা খরার ভয়
বন্যাতে বা খরায় যদি ফসল নষ্ট হয়, তাহলে খাব কি? বানরে যদি ফসল নষ্ট করে তাহলে খাব কি? কিন্তু আমাদের বৃহৎ প্রশ্নটি হল যে, যে কোন অজুহাতে সকলেই যদি চাষাবাদের মাধ্যমে বিষ্ণুর আরাধনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আপনারা খাবেন কি? মনে রাখবেন কাগজের টাকা কিন্তু খাওয়া যায় না । আর আমরা শাস্ত্র বিশ্বাসী মানুষেরা জানি যে মানুষের পাপ যত বাড়বে, প্রাকৃতিক দুর্যোগও তত বাড়বে । চাষাবাদ করলেও এসব দুর্যোগ হবে, না করলেও হবে । ধর্মপ্রান মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, ভগবানের কৃপায় প্রাকৃতিক দুর্যোগও তত কমে আসবে । খাদ্য গ্রহন তো আমাদের করতেই হবে । তাই কোন পরিস্থিতিতেই চাষাবাদ পরিত্যজ্য নয় ।
প্রকৃত ধনীর সংজ্ঞা
বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে, গবয়া ধনবান ধান্য ধনবান । অর্থাৎ কাগুজে টাকা দিয়ে ধনী বা দরিদ্র নির্ণয় করা উচিত নয় । বৃটিশ সরকার এশিয়া থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে জাহাজ ভর্তি স্বর্ণমূদ্রা লণ্ডনে পাচার করার পর ভারতবাসীদের হাতে তুলে দিল কাগজের টাকা । সরল ভারতবাসীরা সেই থেকে তাতে প্রসন্ন । কিন্তু কৃষ্ণবাদীরা জানে যে যাদের গোয়াল ভরা গরু এবং গোলা ভরা ধান রয়েছে তারাই জাগতিক ধনে ধনী । তাঁর সঙ্গে পবিত্র আচরণকারী কৃষ্ণভক্ত পারমার্থিক ধনে সমৃদ্ধ । তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত অর্থে ধনী ।
লেবার খরচ খুব বেশী
লেবারের খরচ যা বেড়েছে, বাজার থেকে খাবার কিনে খেলেই লাভ বেশী । দেখুন, আজকাল কৃষকেরাও আত্মহত্যা করছে । আমাদের প্রশ্ন হলো, সকলেই যদি কিনে খায় তাহলে বেচবে কে?
কেউ না কেউ চাষ করবেই
গল্পে আছে যে এক বাবার সাত ছেলে । সবাই ভাবছিল যে, বাবা যে কোন ভাইয়ের বাড়িতে খেয়ে নেবেন । কিন্তু দেখা গেল বাবা উপবাসী । ঠিক তেমনি, কেউ না কেউ চাষ তো করবেই । এখন দেখা যাচ্ছে, যে বিশ্ব জুড়ে অগনিত শহরে অগণিত মানুষেরা আর কৃষিকাজে আগ্রহী নয় । তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কলিযুগে মানুষ দুর্ভিক্ষে পীড়িত হবে । দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানেই আংশিক দুর্ভিক্ষ ।
কাগুজে টাকার দ্বীপ
মনে করুন একটি দ্বীপে সবাই কাগুজে টাকা বেতন পায় কিন্তু চাষাবাদ করে না । পৃথিবীটা কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেদিকেই যাচ্ছে । এমন দিন আসবে যে লক্ষ টাকা দিয়েও খাঁটি দুধ বা খাঁটি ঘি পাওয়া যাবে না ।
প্রয়োজন ভিত্তিক চাষাবাদ
জমি চাষ করতে হবে প্রয়োজন ভিত্তিক, লোভ ভিত্তিক নয় । তাহলে তিন মাস অল্প শ্রম করেই মানুষ সারা বছর আরামে ভজন সাধন করতে পারবে । আধুনিক যুগের লোভী চাষীরা ট্রাকটারাসুর (ট্রাক্টর+অসুর) এবং হিম ঘরের প্রয়োগ করে মুষ্টিমেয় লোককে ধনকুবের বানাচ্ছে বটে কিন্তু অধিকাংশ চাষীর নুন আনতে পান্তা ফুরোয় । মুষ্টিমেয় লোকের লোভ থেকে আবার সৃষ্টি হচ্ছে বেকার সমস্যা । আমাদের জীবনকে শুধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শে পরিচালিত করতে হবে । না হলে কোন দিক দিয়ে যে কোন সমস্যা চুপিসারে চলে আসবে, অতি চতুর ব্যক্তিও তাঁর বিন্দু বিসর্গও টের পাবে না ।
(সংকলনে - সংকীর্তন মাধব দাস)
তিন মাসে তিন ডাবল
কোন কোন ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে ডাবল হয় । কিন্তু সেই ডাবল হওয়াটা স্বপ্ন মাত্র কেননা ইতিমধ্যেই জিনিসের দাম কমপক্ষে তিন ডাবল হয়ে গেছে । প্রতি বছর এইভাবে মদ্রাস্ফীতি হয় । আট বছর আগে ৫০ টাকা দিয়ে এক লিটার তেল না কিনে সেই ৫০ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে আট বছর পরে সেটাকে ডাবল করে অর্থাৎ ১০০ টাকায় এক লিটার তেল কেনার মতো বোকামি আর কি হতে পারে? মাঝখানে শুধু আট বছর অন্য কেউ আপনার টাকা নিয়ে ব্যবসা করে নিল । এছাড়া বিভিন্ন ফান্ডে টাকা রেখে অনেকে তিন বছরে সর্বহারাদের থেকেও নিঃস্ব হতে হয় । অনেক শেয়ার মার্কেটেও বিপুল টাকা হারিয়েছেন । তাছাড়া বাংলাদেশে ইউনিপাই ২ আর ডেস্টিনের খবরতো সবারই জানা আছে । লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু । পৃথিবীতে যতো রকমের ব্যাঙ্ক আছে, তাদের মধ্যে সব থেকে লাভজনক এবং নিরাপদ ব্যাঙ্ক হচ্ছে কৃষ্ণের ব্যাঙ্ক । কৃষ্ণের ব্যাঙ্ক হচ্ছে জমি । মনে করুন আপনি একটি মাত্র ধানের বীজ নিলেন । সেটিকে আধা ইঞ্চি জমিতে রোপন করলেন । তিন মাস ধরে অতি সামান্য যত্ন করার ফলে আপনি সেই একটি ধানের বীজ থেকে কম পক্ষে তিন গুণ ধান পাবেন । অর্থাৎ তা তিন মাসে তিন ডাবল হল । আবার এইভাবে যদি বার বার জমা দিতে থাকেন, তাহলে চক্রবৃদ্ধি সুদের তো কোন তুলনাই চলে না । এইভাবে একট মাত্র ধানের বীজকে আট বছর ধরে চাষ করলে তো তা যে কত ডাবল হবে, তাঁর হিসাব করাও মানুষের পক্ষে কঠিন ।
মানুষ বেশী, জমি কম
অনেকে যুক্তি দেখান যে এই পৃথিবীতে মানুষ বেশী, জমি কম । সে কথা টাকার ক্ষেত্রে আরও বেশো প্রযোজ্য । সমুদ্র পরিমান বেকার সমস্যা দেখে আমরা সকলেই বুঝতে পারছি যে এই পৃথিবীতে মানুষ বেশী টাকা কম । কিংবা টাকার বন্টন সমানভাবে হচ্ছে না । একইভাবে আমরা বলতে পারি যে জমির বন্টনও ঠিকভাবে হচ্ছে না । প্রাচীন রাজারা প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজন অনুসারে জমি বন্টন করে দিতেন রেশনের মতো । এ কথা সত্য বাংলাদেশ ও ভারতের কোটি কোটি লোক ভাত খায় । সেই ভাত কি আকাশ থেকে আসে? তা অবশ্যই জমি থেকে আসে । তাঁর মানে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমি অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে । যন্ত্র সভ্যতার ফলে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানই কৃষি বিহীন রান্নাঘর হয়ে যাবে । অর্থাৎ সবাই খাবার খাবে কিন্তু কেউ চাষ করবে না । শ্রীল প্রভুপাদ ১৪ বার পৃথিবী ভ্রমন করে বলেছিলেন যে এই পৃথিবীতে জমি বেশী, মানুষ কম । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখনও হাজার হাজার এখনও হাজার হাজার একর চাষ যোগ্য জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকে । কোটি কোটি বিভ্রান্ত মানুষ অভার টাইম ডিউটি করবে, রাতভর ট্রাক চালাবে, তবু জমি চাষের মতো নোংরা কাজ করবে না । কিন্তু সেই নোংরা জমি থেকে উৎপন্ন খাবার কিন্তু কারও কাছেই নোংরা বলে মনে হয় না । কৃষিবাদীরা জানেন যে এই জমি চাষ হচ্ছে ভগবানের পূজা স্বরূপ (বিষ্ণুরারাধ্যতে পুংসাং নান্যত্তৎতোষ কারণম্)।
জমির দাম বেশী
অনেকে আবার বলেন যে জমির দাম এত বেশি হয়ে গেছে যে অধিকাংশ মানুষের পক্ষে জমি কেনা সম্ভব না । প্রাচীন কালে জমিকে রেশন মূল্যে বন্টন করা বা বিনামূল্যে প্রজাদের মধ্যে ভূমিদান করা রাজাদের কর্তব্য ছিল । যন্ত্র সভ্যতার অধ্যুষিত গণতন্ত্রে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা কেবলই বাড়বে । এছাড়া জমি কিনতে সক্ষম ব্যক্তিও আজকাল পরিশ্রমের ভয়ে জমি কিনতে আগ্রহী নয় ।
পরিশ্রম করব কেন?
এইভাবে শহরমুখী মানুষের সংখ্যা কলিযুগে কেবলই বাড়বে । মানুষেরা মনে করে (সকলেই এমন নয়) যে, বাজারে যদি দুধ (নকল দুধ) পাই, তাহলে গরু পালব কেন? বাজারে যদি বউ (নকল বউ) পাই, তাহলে বিয়ে করে বউ পালব কেন? বাজারে যদি খাবার (তা হোক না ভেজালযুক্ত) পাই, তাহলে চাষাবাদের মতো নোংরা কাজ করব কেন? তাই কোটিপতির পক্ষেও আজকাল খাঁটি দুধ বা খাঁটি ঘি কপালে জুটে না ।
বন্যা কিংবা খরার ভয়
বন্যাতে বা খরায় যদি ফসল নষ্ট হয়, তাহলে খাব কি? বানরে যদি ফসল নষ্ট করে তাহলে খাব কি? কিন্তু আমাদের বৃহৎ প্রশ্নটি হল যে, যে কোন অজুহাতে সকলেই যদি চাষাবাদের মাধ্যমে বিষ্ণুর আরাধনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আপনারা খাবেন কি? মনে রাখবেন কাগজের টাকা কিন্তু খাওয়া যায় না । আর আমরা শাস্ত্র বিশ্বাসী মানুষেরা জানি যে মানুষের পাপ যত বাড়বে, প্রাকৃতিক দুর্যোগও তত বাড়বে । চাষাবাদ করলেও এসব দুর্যোগ হবে, না করলেও হবে । ধর্মপ্রান মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, ভগবানের কৃপায় প্রাকৃতিক দুর্যোগও তত কমে আসবে । খাদ্য গ্রহন তো আমাদের করতেই হবে । তাই কোন পরিস্থিতিতেই চাষাবাদ পরিত্যজ্য নয় ।
প্রকৃত ধনীর সংজ্ঞা
বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে, গবয়া ধনবান ধান্য ধনবান । অর্থাৎ কাগুজে টাকা দিয়ে ধনী বা দরিদ্র নির্ণয় করা উচিত নয় । বৃটিশ সরকার এশিয়া থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে জাহাজ ভর্তি স্বর্ণমূদ্রা লণ্ডনে পাচার করার পর ভারতবাসীদের হাতে তুলে দিল কাগজের টাকা । সরল ভারতবাসীরা সেই থেকে তাতে প্রসন্ন । কিন্তু কৃষ্ণবাদীরা জানে যে যাদের গোয়াল ভরা গরু এবং গোলা ভরা ধান রয়েছে তারাই জাগতিক ধনে ধনী । তাঁর সঙ্গে পবিত্র আচরণকারী কৃষ্ণভক্ত পারমার্থিক ধনে সমৃদ্ধ । তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত অর্থে ধনী ।
লেবার খরচ খুব বেশী
লেবারের খরচ যা বেড়েছে, বাজার থেকে খাবার কিনে খেলেই লাভ বেশী । দেখুন, আজকাল কৃষকেরাও আত্মহত্যা করছে । আমাদের প্রশ্ন হলো, সকলেই যদি কিনে খায় তাহলে বেচবে কে?
কেউ না কেউ চাষ করবেই
গল্পে আছে যে এক বাবার সাত ছেলে । সবাই ভাবছিল যে, বাবা যে কোন ভাইয়ের বাড়িতে খেয়ে নেবেন । কিন্তু দেখা গেল বাবা উপবাসী । ঠিক তেমনি, কেউ না কেউ চাষ তো করবেই । এখন দেখা যাচ্ছে, যে বিশ্ব জুড়ে অগনিত শহরে অগণিত মানুষেরা আর কৃষিকাজে আগ্রহী নয় । তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কলিযুগে মানুষ দুর্ভিক্ষে পীড়িত হবে । দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানেই আংশিক দুর্ভিক্ষ ।
কাগুজে টাকার দ্বীপ
মনে করুন একটি দ্বীপে সবাই কাগুজে টাকা বেতন পায় কিন্তু চাষাবাদ করে না । পৃথিবীটা কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেদিকেই যাচ্ছে । এমন দিন আসবে যে লক্ষ টাকা দিয়েও খাঁটি দুধ বা খাঁটি ঘি পাওয়া যাবে না ।
প্রয়োজন ভিত্তিক চাষাবাদ
জমি চাষ করতে হবে প্রয়োজন ভিত্তিক, লোভ ভিত্তিক নয় । তাহলে তিন মাস অল্প শ্রম করেই মানুষ সারা বছর আরামে ভজন সাধন করতে পারবে । আধুনিক যুগের লোভী চাষীরা ট্রাকটারাসুর (ট্রাক্টর+অসুর) এবং হিম ঘরের প্রয়োগ করে মুষ্টিমেয় লোককে ধনকুবের বানাচ্ছে বটে কিন্তু অধিকাংশ চাষীর নুন আনতে পান্তা ফুরোয় । মুষ্টিমেয় লোকের লোভ থেকে আবার সৃষ্টি হচ্ছে বেকার সমস্যা । আমাদের জীবনকে শুধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শে পরিচালিত করতে হবে । না হলে কোন দিক দিয়ে যে কোন সমস্যা চুপিসারে চলে আসবে, অতি চতুর ব্যক্তিও তাঁর বিন্দু বিসর্গও টের পাবে না ।
(সংকলনে - সংকীর্তন মাধব দাস)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন