শ্রীশ্রীগীতাকে সমস্ত ধর্মগ্রন্থের সার বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি সর্বশাস্ত্রময়ী ভগবতী গীতা। গীতাকে মা বলেও সম্বোধন করা হয় । কারণ গীতা হল জীবের আধ্যাত্মিক জননী । মা যেমন সন্তান কোলে নিয়ে আদর যত্ন করে মানুষ করে তোলে, তেমনি গীতা মাতাও তাঁর অনন্ত আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা দিয়ে সন্তানরূপা মানব – মানবীদের মনকে পূর্ণতা দান করেন। গীতা জ্ঞান ও প্রেমমূর্তি । এটি আবার পূর্ণ যোগশাস্ত্র । অপরদিকে গীতা হল কর্মমুখী জীবনচেতনার অপরিহার্য দলিল । গীতা যেমন মানুষকে নিরন্তর সৎ কর্ম করতে অনুপ্রেরণা দেয়, তেমনি প্রবল জপ- ধ্যানের মাধ্যমে স্থিতপ্রজ্ঞ বা ব্রহ্ম্যস্বারূপ্য লাভ করতেও বলে। গীতা জীবকে ব্রহ্মের সাথে একাত্মা অনুভূতি লাভের কথা নির্দ্ধিতায় ঘোষণা করছে। গীতামাতার মূল বৈশিষ্ট্য হল- মোহগ্রস্ত জীবকে আত্মার স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়াতে দারুন তৎপরতা দেখানো। বলতে কি সাধারণ মানুষ ইন্দ্রিয় জগতের দিকে ছুটে যায় এবং ভোগবাসনায় মেতে থাকে। আর পদে পদে দুঃখ – যন্ত্রনা ভোগ করে। ফলে তার জীবনের কোনো উচ্চ দৃষ্টি থাকে না। গীতা মোহগ্রস্ত এইসব মানুষদের মনে আশার আলো জ্বালিয়ে দেয় এবং হৃদয়কে উচ্চ জীবচেতনা তথা ব্রহ্মভাবনা সঙ্গে জোড়া লাগাতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। গীতা তাই সাক্ষাৎ করুণাঘন ভগবানের বাঙ্ময় মূর্তি, ভগবানের প্রাণ এবং হৃদয় । গীতার সমান এ- সংসারে কিছুই নেই। যাগযজ্ঞ , তপস্যা , জপ, ধ্যান , তীর্থ ভ্রমণ প্রভৃতি গীতার ব্রহ্মচেতনাকে লাভ করারই উপর বেশী গুরুত্ব দেয়। তাই গীতা হল পৃথিবীর সর্বদেশের মানবের আধ্যাত্মিক জননী , গীতার অনন্ত ভাব যা সমুদ্রের চেয়েও গভীর , আকাশের চেয়েও বেশী ব্যাপ্তিশীল। গীতা হল বেদ বা উপনিষদের সার বাণী। স্বয়ং নারায়ণের অংশসম্ভূত বেদব্যাসের রচনা এবং কৃষ্ণ ভগবানের মুখনিঃসৃত অমৃত কথা যা কুরুখেত্রের যুদ্ধে প্রচারিত হয়েছিলো। যেহেতু এটি সাক্ষাৎ ভগবানের বাণী তাই একমাত্র গীতাশাস্ত্র পাঠ করলেই জীবনে অনন্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ হয় এবং মন পূর্ণতায় ভরে যায়।
( গুরুতত্ত্ব ও মন্ত্রসিদ্ধি... স্বামী বেদানন্দ... গিরিজা পাবলিশার্স )
( গুরুতত্ত্ব ও মন্ত্রসিদ্ধি... স্বামী বেদানন্দ... গিরিজা পাবলিশার্স )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন