• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

০৩ জুলাই ২০১৮

সংসা‌রে থে‌কে ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের সাধন - ভজন কর‌তে প্র‌য়োজন হৃদ‌য়ের শুদ্ধ ইচ্ছা

যখন আমরা গভীর নিদ্রাভিভূত হই তখন আমা‌দের কিছুই ম‌নে থা‌কে না , এই অ‌ভিজ্ঞাতা আমা‌দের সক‌লের হ‌য়ে‌ছে । টাকা - পয়সা , জ‌মি - জমা , আত্মীয়স্বজন কোনও কিছুই ম‌নে থা‌কে না , সেইরকম অবস্থায় কি আমা‌দের কোনও দুঃখ হয় ? গভীর ঘু‌মে কোনও জি‌নি‌সের স‌ঙ্গে আমা‌দের সম্বন্ধ না থাক‌লেও আমা‌দের দুঃখ হয় না , বরং আমরা সুখ অনুভব ক‌রি । তা‌তে প্রমাণ হয় যে সংসা‌রের স‌ঙ্গে সম্ব‌ন্ধে সুখ হয় না ।

আমরা ম‌নে ক‌রি যে , য‌দি আমরা ধনদৌলত পে‌য়ে যাই , বড় প‌দে চাকরী হয় , মান সম্মান পাই , ভোগ , আরাম পাই তাহ‌লে আমরা সুখী হবো । ভে‌বে দেখা উ‌চিত যে গাঢ় ঘু‌মের সময় কোনও প্রাণী বা বস্তুর স‌ঙ্গে সম্বন্ধ না থাক‌লে দুঃখ না হ‌য়ে সুখই হয় তখন এইসব জি‌নিস পে‌লে সুখ কি ক‌রে পাওয়া যা‌বে ?

জাগৃ‌তির বস্তু স্ব‌প্নে এবং স্ব‌প্নের বস্তু সুষু‌প্তি‌তে থা‌কে না । তাৎপর্য হ‌লো এই যে জাগৃ‌তি এবং স্ব‌প্নের বস্তুগু‌লি ছাড়াও আমরা থা‌কি । এ‌তে প্রমাণ হ‌লো যে বস্তু ব্যতি‌রে‌কেও আমরা সু‌খে থাকতে পা‌রি । অর্থাৎ আমা‌দের থাকা বস্তু , অবস্থা প্রভৃ‌তির আশ্রিত নয় । এতে বুঝা গেল যে , বস্তু , পদার্থ , ব্য‌ক্তি প্রভৃ‌তির দ্বারা আমরা সুখী হব আর ঐগুলি ছাড়া আমরা দুঃখী হব , একথা ভুল ।

যখন জাগ্রত থা‌কি তখন আমার অ‌নেক জি‌নিস ছাড়াই থা‌কি , যেমন ধরুন আপনার মোবাইল নষ্ট হ‌য়ে গেল , তা মেরামত কর‌তে বেশ ক‌য়েক‌দিন লাগতে পা‌রে , তখন কিন্তু আপ‌না‌কে মোবাইল ছাড়া থাক‌তেই হ‌বে । আর আপ‌নি যে‌কোন ভা‌বে হোক থাক‌বেন । যখন আমরা ঘুমায় তখন কিন্তু সব কিছু ছাড়াই আমরা থা‌কি , প‌রিবার , বন্ধু - বান্ধব , আত্মীয়স্বজন , আ‌রো যা যা আ‌ছে এবং তার দ্বারা আমরা শ‌ক্তি লাভ ক‌রি । গভীর ঘুম এ‌লে স্বাস্থ্য ভা‌লো থা‌কে এবং জে‌গে উঠ‌লে ব্যবহার ভাল হয় । ভে‌বে দেখুন যখন কোনপ্রকার চিন্তা থা‌কে না তখন কি আপনি ভা‌লো থা‌কেন না ?

য‌দি জাগ্রত অবস্থাতেই আমরা বস্তুগু‌লির স‌ঙ্গে ভিন্ন হ‌য়ে যাই , সেগু‌লির স‌ঙ্গে সম্বন্ধ না রা‌খি , তা‌দের আশ্রয় না নিই তাহ‌লে আমার জীবন্মুক্ত হ‌য়ে যাব । নিদ্রায় তো বেহুঁশ ( অজ্ঞান ) অবস্থায় থা‌কে ,‌ সেজন্য তা‌তে জীবন্মুক্ত হয় না । সকল বস্তুর স‌ঙ্গে সম্বন্ধ - বি‌চ্ছেদ হওয়া হ‌লো মু‌ক্তি । মু‌ক্তিতে যত আনন্দ , বন্ধ‌নে তত নয় । বন্ধ‌নের স‌ঙ্গে সম্পর্ক বি‌চ্ছেদ হ‌লেই মু‌ক্তির আনন্দ হয় । ঘু‌মের সময় বস্তুগু‌লি‌কে ভু‌লে থাক‌লেও যখন সুখ শা‌ন্তি পাওয়া যা‌য় তখন জ্ঞানত সেগু‌লির স‌ঙ্গে সম্বন্ধ - বি‌চ্ছেদ কর‌লে কতই না সুখ - শা‌ন্তি পাওয়া যা‌বে ।

শরীর এবং সংসার এক । এগু‌লির এক‌টি আর এক‌টি থে‌কে আলাদা হতে পা‌রে না । শরী‌রের সংসার‌কে প্র‌য়োজন এবং সংসা‌রের শরীর‌কে প্র‌য়োজন । কিন্তু আমরা স্বয়ং ( আত্মা ) শরীর থে‌কে আলাদা এবং শরীর ছাড়াই থাক‌তে পা‌রি । এই শরীর তৈ‌রি হবার আ‌গেও আমরা ছিলাম এবং শরীর নষ্ট হ‌য়ে গে‌লেও আমরা থাকব _ য‌দি এই কথা জানা না থা‌কে তাহ‌লে এ‌টি তো জানা আ‌ছে যে গাঢ় ঘু‌মের সময় শরী‌রের স্মরণই যখন থা‌কে না তখনও আমরা থা‌কি এবং সু‌খেই থা‌কি । শরী‌রের স‌ঙ্গে সম্বন্ধ না থাক‌লে শরীর সুস্থ থা‌কে । সংসা‌রের স‌ঙ্গে সম্বন্ধ বি‌চ্ছেদ হ‌লে আমরাও ঠিক থাকব এবং সংসারও ঠিক থাক‌বে ।

শরীরা‌দি বস্তুগু‌লির ধারণা ও দাসত্ব মন থে‌কে দূর ক‌রে দি‌লে খুবই আনন্দ হ‌বে , এরই নাম জীবন্মক্তি । শরীর , আত্মীয় , ধন প্রভৃ‌তি রাখুন কিন্তু এর দাসত্ব করা যা‌বে না । আমরা যারা জড় বস্তুর দাসত্ব ক‌রি তারা জড় বস্তুর আজ্ঞায় চ‌লি , কিন্তু আমরা তো চৈতন্যময় । জাগ্রত , স্বপ্ন এবং সুষু‌প্তি এই তিন‌টি অবস্থা থে‌কেই আমরা ভিন্ন । এই অবস্থানগু‌লির প‌রিবর্তন হয় , কিন্তু আমা‌দের প‌রিবর্তন হয় না । আমরা এই অবস্থাগু‌লি‌কে জা‌নি আর অবস্থাগু‌লিও জানার । তাই এগু‌লি থে‌কে আমরা ভিন্ন । যেমন , ছাদ‌কে আমরা জা‌নি যে এ‌টি ছাদ । তাহ‌লে বোঝা গেল যে , আমরা ছাদ থে‌কে ভিন্ন । অতএব আমরা বস্তু , পরি‌স্থি‌তি , অবস্থা প্রভৃ‌তি থে‌কে ভিন্ন _ এই অ‌ভিজ্ঞতাই হল মু‌ক্তি ।

আমরা সংসা‌রের থে‌কে ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের সাধন - ভজন কর‌তে পা‌রি । তার জন্য প্র‌য়োজন আমা‌দের হৃদ‌য়ে শুদ্ধ ইচ্ছা । যখন আমরা ভগবান শ্রীকৃ‌ষ্ণের প্র‌তি একাগ্রতার স‌ঙ্গে ভ‌ক্তি করবো তখন সংসারের বস্তুর প্র‌তি আমা‌দের আগ্রহ ধী‌রে ধী‌রে কম‌তে থা‌কবে । যেমন , য‌দি হা‌তের কোথায় কে‌টে গে‌লে , সেখা‌নে ওষুধ দি‌লে ধী‌রে ধী‌রে সেই ক্ষত সে‌রে যা‌য় , তেমন‌নি যদি আমা‌দের মনও ভগবান শ্রী‌গো‌বিন্দের প্র‌তি একাগ্রভা‌বে থা‌কলে ত‌বে বাই‌রের বস্তুসকল আমাদের চিত্ত‌কে বি‌ক্ষিপ্ত কর‌তে পার‌বে না । ম‌নে , হৃদয়ে একান্ত শুদ্ধ ইচ্ছা , প্রেম , ভ‌ক্তি থাকা প্র‌য়োজন । যখন আমরা কৃষ্ণভাবনায় হ‌য়ে ভ‌ক্তি করব তখন কামনা বাসনা থাক‌লেও তা ধী‌রে ধী‌রে সম্পূর্ণ চ‌লে যা‌বে । শুধু শ্রীকৃ‌ষ্ণের শ্রীচর‌ণে আত্মসমর্পণ কর‌তে হ‌বে ।

জয় রা‌ধে ..........
ভুলক্রু‌টি মার্জনা কর‌বেন .......
শ্রীরাধা‌গো‌বিন্দ সক‌লের মঙ্গল করুন
নিতাই গৌর হ‌রিবল .

Post: Joy Shree Radha Madhav

Share:

অমরনাথের পথে

অমরনাথ গুহা একটি হিন্দু তীর্থক্ষেত্র যা ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত। এটি একটি শৈব তীর্থ। এই গুহাটি সমতল থেকে ৩,৮৮৮ মিটার (১২,৭৫৬ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই তীর্থে যেতে পহেলগাঁও শহর অতিক্রম করতে হয়। এই তীর্থ ক্ষেত্রটি হিন্দুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হয়। গুহাটি পাহাড় ঘেরা আর এই পাহাড় গুলো সাদা তুষারে আবৃত থাকে বছরের অনেক মাস ধরে। এমনকি এই গুহার প্রবেশপথও বরফ ঢাকা থাকে।গ্রীষ্মকালে খুব স্বল্প সময়ের জন্য এই দ্বার প্রবেশের উপযোগী হয়। তখন লক্ষ লক্ষ তীর্থ যাত্রী অমরনাথের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। অমরনাথের গুহাতে চুইয়ে পড়া জল জমে শিবলিঙ্গের আকার ধারণ করে। জুন-জুলাই মাসে শ্রাবণী পূর্ণিমা থেকে শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। শেষ হয় জুলাই-আগস্ট মাসে গুরু পূর্ণিমার সময় ছড়ি মিছিলে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অমরনাথ যাত্রায় যোগদান করেন।


গুহার ৪০ মিটার (১৩০ ফুট) ভিতরে গুহার ছাদ থেকে জল ফোঁটায় ফোঁটায় চুঁইয়ে পড়ে।এই চুঁইয়ে পড়া জলের ধারা খাড়া ভাবে গুহার মেঝেয় পড়ার সময় জমে গিয়ে শিব লিঙ্গের আকার ধারণ করে। কখনো কখনো ৮ ফুট উঁচুও হয় এই শিব লিঙ্গ। তবে গত কয়েকবছর ধরেই সময়ের আগেই বরফলিঙ্গ গলে যাচ্ছে যা হয়তো উষ্ণায়নের ফল। জুন-জুলাই মাসে শ্রাবণী পূর্ণিমা থেকে শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। শেষ হয় জুলাই-আগস্ট মাসে গুরু পূর্ণিমার সময় ছড়ি মিছিলে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অমরনাথ যাত্রায় যোগদান করেন। তীর্থ যাত্রার প্রধান উদ্দেশ্যই এই শিব লিঙ্গে পূজা দেওয়া।


অমরনাথ গুহার বয়স আনুমানিক ৫০০০ বছর। পুরাণ অনুসারে, শিব পার্বতীকে অমরত্ব শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে অমরনাথ গুহাকে বেছে নিয়েছিলেন। পহেলগাঁও, যেখান থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয়, সেই স্থানে শিব তাঁর ষাঁড় নন্দীকে রেখে গিয়েছিলেন। চন্দনওয়াড়িতে তিনি তাঁর শিরস্থ চন্দ্রকে রেখে যান এবং শেষনাগে তিনি তাঁর দেহে বিচরণরত সর্পকুলকে রাখেন। গণেশকে রাখেন মহাগণেশ পর্বতে। তার পরে বায়ু, অগ্নি, জল, মৃত্তিকাকে রাখেন পঞ্জতরণী নামক স্থানে। প্রায় সব নির্মোক ত্যাগ করেই তিনি পার্বতীকে নিয়ে অমরনাথের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

যখন শিব পার্বতীকে অমরত্ব সম্পর্কে জ্ঞানদান করছিলেন, তখন সেখানে কোনও জীবিত প্রাণী ছিল না। কেবলমাত্র একটি পায়রার ডিম সেখানে থেকে গিয়েছিল। কথিত আছে এই ডিম থেকে একজোড়া পায়রা জন্মায় এবং তারা অবধারিতভাবে অমরত্ব লাভ করে। এদের নাকি আজও গুহার ভিতরে দেখা যায়।



অমরনাথ গুহাটি আবিষ্কার করেন বুটা মালিক নামে এক মুসলমান মেষপালক। তিনি এখানে এক সন্ন্যাসীর দেখা পান। সন্ন্যাসী তাঁকে একটা থলিতে কিছু কয়লা দান করেন। পরে সেই কয়লা সোনায় পরিণত হয়। বুটা সেই স্থানে ফিরে যান। কিন্তু সেই সন্ন্যাসীকে আর দেখতে পাননি। বদলে তিনি অমরনাথ লিঙ্গ দেখাতে পান।
অমরনাথ তুষারলিঙ্গের বৃদ্ধি চন্দ্রকলার উপরে নির্ভরশীল। শিবলিঙ্গ ছাড়াও আরও দু’টি লিঙ্গ এই গুহায় রয়েছে। এদের পার্বতী ও গণেশ মনে করা হয়।

অমরনাথে কবে থেকে তীর্থ যাত্রা শুরু হয় তা জানা যায় না। একটি তথ্যসুত্র থেকে ধারণা করা হয় কিংবদন্তী রাজা আরজরাজা( খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সাল) বরফ নির্মিত শিবলিঙ্গে পূজা দিতেন। ধারণা করা হয়, রাণী সূর্যমতি ১১ শতকে অমরনাথের এই ত্রিশূল, বাণলিঙ্গ ও অন্যান্য পবিত্র জিনিস উপহার দেন। এছাড়াও পুরাতন বিভিন্ন বই থেকে আরও বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয় মধ্যযুগে অমরনাথের কথা মানুষে ভুলে গিয়েছিল কিন্তু ১৫ শতকে তা আবার আবিষ্কৃত হয়। প্রচলিত আছে কাশ্মীর একসময় জলে প্লাবিত হয়ে যায় এবং কাশ্যপ মুনি সে জল নদীর মাধ্যমে বের করে দেন। এরপর ভৃগু মুনি অমরনাথ বা শিবের দেখা পান। এভাবে আবার অমরনাথের প্রচার শুরু হয়। বর্তমানে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ অমরনাথ যাত্রা করে।


জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই তীর্থে যেতে পহেলগাঁও শহর অতিক্রম করতে হয়।পহেলগাঁও থেকে অমরনাথ যেতে পাঁচ দিন সময় লাগে। অমরনাথে যাওয়ার জন্য আগে প্রত্যেক যাত্রীর রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। শ্রী অমরনাথ শ্রাইন বোর্ড (SASB) যাত্রা শুরুর মোটামুটি মাসখানেক আগে যাত্রা শুরুর ও শেষের তারিখ ঘোষণা করে। জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ক থেকে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। পূরণ করা ফর্মটি ২টি পাসপোর্ট ছবি ও শারীরিক সক্ষমতার ডাক্তারি প্রশংসাপত্র সহ নিকটবর্তী জম্মু-কাশ্মীর ট্যুরিজমের অফিসে জমা দিতে হয়।

তীর্থ যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন মন্দির, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন যাত্রা পথে বিনা মুল্যে খাবার, চিকিৎসাসেবা ও বিশ্রামের জন্য তাঁবু সরবরাহ করে থাকে। মন্দিরের কাছে স্থানীয়রা শত শত তাঁবুর ব্যবস্থা করে তীর্থযাত্রীদের রাত্রি যাপনের জন্য। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরবর্তী কাটরা পর্যন্ত বাস ও ভাড়া গাড়ি চলে। শেষ ১৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হয় মন্দিরে। যাঁরা হাঁটতে পারেন না তাঁদের জন্য রয়েছে ডান্ডি ও ঘোড়ার ব্যবস্থা। কাটরা শহরের ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার থেকে যাত্রা-স্লিপ অর্থাৎ 'পরচি' সংগ্রহ করতে হয়।

পুজোর উপকরণ আর নগদ টাকা পয়সা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মন্দির চত্বরে প্রবেশ নিষেধ। নিকটতম রেলস্টেশন জম্মু। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরবর্তী কাটরায় নিয়মিত বাস যায়। জম্মু বা কাটরা থেকে হেলিকপ্টারেও বৈষ্ণোদেবী ঘুরে আসা যায়। জম্মু থেকে প্রতিদিন ২টি ও কাটরা থেকে ৫টি পবনহংস ফ্লাইট রয়েছে। জম্মু যাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে উড়ান চালু আছে কিনা।

এই তীর্থ যাত্রা রাজ্য সরকার ও শ্রী অমরনাথ যাত্রা ট্রাস্ট যৌথ ভাবে আয়োজন করে থাকে। ( সমাপ্ত )


জয় বাবা অমরনাথ।

Courtesy by: Radhakanta Let


Share:

০২ জুলাই ২০১৮

শ্রীরাধা ই শ্রীকৃষ্ণের শক্তি

রাধাকৃষ্ণ লীলা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে থাকে ।কেউ বলে রাধা নামে কেউ নেই , আবার কেউ বলে রাধারাণীর কাহিনী কাল্পনিক ইত্যাদি ইত্যাদি । তাহলে আসুন জেনে নেই আমাদের কৃষ্ণপ্রেয়সী গোপীশ্রেষ্ঠা রাধা রাণী সম্পর্কেঃ


রাধা নিয়ে সাধারণত দুইটি মন্তব্য ফেসবুকে আসেঃ

১/ রাধার কোন জন্ম বৃত্তান্ত নেই।
২/ রাধা কাহিনী কাল্পনিক।

এ উত্তরে বলবো রাধার ব্যাপারে জানতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনে যেতে হবে । ত্রেতাযুগে আজ হতে দশহাজার আটশো বছর আগে ত্রেতাযুগে নাগ লোকে নাগরাজের কন্যার নাম ছিল চন্দ্রসেনা ।সেই চন্দ্রসেনা মনে প্রাণে ভালোবাসতেন দশরথ নন্দন রামকে । এমনকি তিনি রামকে তাঁর প্রাণপতি হিসেবে মেনে নিয়েছিল  । অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই পাতালপতি ছিলেন  । দশানন রাবণ এই দুই ভাইকে পাতালে প্রতিষ্ঠিত করে ত্রিলোকে রাবণের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য । একদিন অহিরাবণ ও মহিরাবণ নাগলোকে আক্রমণ করে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করার জন্য এবং তারা নাগলোক জয় করে।

তখন অহিরাবণ সেখানে চন্দ্রসেনাকে দেখে। আর চন্দ্রসেনার রুপে মোহিত হয়ে অহিরাবণ চন্দ্রসেনাকে হরণ করে পাতাল পুরীতে নিয়ে আসে। কিন্তু চন্দ্রসেনা পাতাল পুরীতেও রামের প্রেমের নামে মালা গলায় দিয়ে রামনাম জপ করে। তা দেখে অহিরাবণ বলে হরণকৃত নারীর পতি হলো হরণকারী অর্থাৎ আমি অহিরাবন । কিন্তু চন্দ্রসেনা বলেন, আমার তণু মন ও ঈশ্বর একমাত্র প্রভু রাম । এমন সময় লংকা থেকে রাবণের বার্তা আসে । আর অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই লংকার উদ্দেশ্য প্রস্থান করে । রাবণ এই দুই ভাইকে বলে সাগরের ওপারে রাম নামে এক ভিখারী লংকায় আসার চেষ্টায় আছে । তোমরা গিয়ে তাদেরকে বধ করো।

অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই গিয়ে বানরের বেশে রাম ও লক্ষ্মণকে অজ্ঞান করে পাতাল পুরীতে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখে পাতাল দেবীর মন্দিরে । তারা দুই ভাই মনস্থির করে যে, আগামী পূর্ণিমাতে এই দুই জনকে পাতাল দেবীর কাছে বলি দিয়ে দেবী হতে আরো শক্তি আহোরণ করবো। অন্য দিকে হনুমান ও অন্য সবাই দেখে যে প্রভুর কক্ষে প্রভু ও ভ্রাতা লক্ষ্মণ নেই এবং কক্ষেই একটি পাতাল সুড়ংগ। অতঃপর হনুমান আর দেরি না করে সেই সুড়ংগ দিয়ে পাতালে প্রবেশ করে। হনুমান পাতাল পুরীতে এসে দেখে এক রমনী তার দাসীকে বলছে পাতাল দেবীর মন্দিরে গিয়ে রাম ও লক্ষ্মণকে অশুদ্ধ করার জন্য। যাতে পাতালপতিরা কাল পূর্ণিমায় রাম ও লক্ষ্মণকে বলি দিতে না পারে । হনুমান তখনই দাসীর পিছনে পিছনে গিয়ে প্রভু ও লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে । জ্ঞান ফিরে রাম বলেন, অহিরাবণ ও মহিরাবণ এই দুই ভাইকে বধ ব্যতীত আমাদের পাতাল পুরী থেকে যাওয়া অসম্ভব । হেনক্ষণে দুই পাতাল পতি এসে হাজির, তখন রাম যুদ্ধের আহ্বান করে। অহিরাবণ ও মহিরাবণ, রাম ও লক্ষ্মণের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পর্য্যায়ে রাম একে একে পাঁচবার দুই ভাইকে বধ করে।
 
কিন্তু অতঃপর তারা জীবিত হয়ে যায়। হনুমান দেখে চিন্তা করে এরা কি অমর আর যদি না হয় তাহলে এদের মৃত্যুর রহস্য কি। অতঃপর হনুমানের মনে পড়লো রমনীর কথা। তত্ক্ষণাৎ হনুমান প্রাসাদে গিয়ে চন্দ্রসেনাকে বলে মাতা, এই দুটি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি জানেন? যদি জেনে থাকেন তাহলে বলেন।
চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলে,হ্যাঁ জানি কিন্তু কেনো বলবো ? তাতে আমার কি লাভ, হনুমান বলেন বলুন আপনার কি চাই? চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলেন তুমি তোমার প্রভুকে যুদ্ধ শেষে আমার কাছে নিয়ে আসবে। হনুমান প্রশ্ন করে, কেনো ? চন্দ্রসেনা বলেন, আমি দীর্ঘকাল থেকে রামের নামের প্রতি মোহিত হয়ে ওনাকে অর্জনের উদ্দেশ্যে আরাধনা করছি, উনি আমার আরাধ্য।
 
এতখন হনুমান চিন্তা করলো প্রভুতো সীতাপতি  তাহলে এ কিভাবে সম্ভব  আর যদি সত্যি প্রকাশ করি । তাহলে পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি, তা জানা অসম্ভব হবে। অতএব হনুমান বললো, ঠিক আছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি প্রভুকে নিয়ে আসবো। এবার বলুন, তখন চন্দ্রসেনা বলেন সঞ্জিবনী ভ্রমর অমৃত এনে ওদের ক্ষতস্থানে দিলে ওরা প্রাণ ফিরে পায়। যদি ঐ সঞ্জিবনী ভ্রমরকে রুখতে পারো তাহলে ওদের মৃত্যু হবে। হনুমান বুদ্ধি করে বললো, ঠিক আছে মাতা আমি আসি। আর একটি কথা=আসলে প্রভুর যেনো কোনো প্রকার অপমান না হয় । তাহলে কিন্তু প্রভু চলে যাবেন তখন আমায় কোন দোষ দিতে পারবেন না ।

অতঃপর হনুমান গিয়ে সঞ্জিবনী ভ্রমরদের অমৃত নিয়ে আসার পথে ধরে হত্যা করতে লাগলো। ভ্রমর কর্তা বলে উঠলো ,আমাদের কেনো হত্যা করছেন। হনুমান বলে দুই অসুর পাতাল পতির প্রাণ রক্ষা করছেন এইজন্য।তখন ভ্রমর বলে ঠিক আছে আমাদের হত্যা করো না। আমরা আর ওদের  অহিরাবণ ও মহিরাবণ প্রাণ রক্ষা করবো না। এবার আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দাও। হনুমান বলে, ঠিক আছে কিন্তু একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ভ্রমর বলে, কি প্রতিশ্রুতি ? তোমরা চন্দ্রসেনার কক্ষে গিয়ে তাঁর শয়ন সজ্জার কাঠ ঘোগলা-ঝাঁঝরা করে দিতে হবে। ভ্রমর বলে,ঠিক আছে  এরপর অহিরাবণ ও মহিরাবণ মারা যায়।

তখন রাম হনুমানকে বলেন, চলো যাওয়া যাক । হনুমান বলে, না প্রভু আপনাকে চন্দ্রসেনার কক্ষে যেতে হবে। কারণ আমি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য জানতে গিয়ে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আপনাকে তাঁর কক্ষে নিয়ে যাবো। হনুমান রামকে বিস্তারিত ভাবে সব খুলে বলে=অতঃপর রাম চন্দ্রসেনার কক্ষে যায়=রামকে দেখে চন্দ্রসেনা রামের চরণে পুস্পাদি দিয়ে রামকে বলেন=আসন গ্রহন করুন প্রভু=রাম যখন চন্দ্রসেনার শয়নসজ্জায় বসেন=তখন শয়ন সজ্জা ভেঙে পড়ে= তত্ক্ষণাত্ রাম ক্রোধান্নিত হয়ে উঠে=অতঃপর চন্দ্রসেনা রামের পায়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে=আর বলতে থাকে=আমি আমার এই অসুচী দেহ আমার আরাধ্যকে সমর্পণ করতে যাচ্ছিলাম আমার আরাধনা সব বৃথা=রাম তখন চন্দ্রসেনাকে তুলে বলেন=দেবী আমি তোমার প্রেম ভক্তিতে প্রসন্ন=আমার কোনো ভক্তের আরাধনা বৃথা যায় না=কিন্তু এই জন্মে আমি তোমার ভক্তির প্রতিদান দিতে পারবো না=কারন আমি সীতাপতি=কিন্তু আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি=আমি দ্বাপর যুগের লীলায় কৃষ্ণ হয়ে জন্ম নেবো আর তুমি রাধা নামে জন্ম নেবে=আর সেই জন্মে আমি তোমার প্রেম ভক্তি আরাধনার প্রতিদান দিবো=আর তোমার আমার সেই যুগলবন্দীকে মানবজাতি রাধাকৃষ্ণ যুগল বলে আখ্যায়িত করবে যা পৃথিবীর অন্তিম কাল পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকবে=

এইটা হচ্ছে রাধারাণীর দ্বাপর যুগের অস্তিত্বের একটা কারণ=এই জন্মের পুর্ব বৃত্তান্ত=যার উত্তর শ্রীমদ ভাগবতে নেই=সে কারণও আমরা বিভিন্ন পোস্টে বলে আসছি=তবে এই কাহিনীটি আছে রামায়ণ গ্রন্থে=এখানে অতি সংক্ষেপে লিখেছি=কারণ পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিতে গেলে আমাদের আরেকটা রামায়ণ লিখতে হবে=যদি কারও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা জানতে ইচ্ছে করে তাহলে রামায়ণে রামের পাতাল বিজয় অধ্যায় পড়ে দেখবে=

এবার আসি দ্বাপর যুগে=রাধাকৃষ্ণের লীলা সবাই জানে=সম্পূর্ণ কৃতিগাঁথা ও কৃতিকথা সবার মুখস্থ=তাই নতুন করে আমাদের বলার কিছুই নেই=রাধারাণীর কাহিনী যারা কাল্পনিক বলে=তাদের জন্য কিছু প্রমান আছে নিম্ন বর্ণিত গ্রন্থে=যেমন=
=১=শ্রীমদ ভাগবতের দশম স্কন্ধের আটত্রিশতম অধ্যায় যা সম্পূর্ণ=রাধা হতে বিদায় ও রাধার বিরহ বিলাপ=
=২=রাধা অষ্টমী অধ্যায়==৩=রাধার মান ভঞ্জন=
=৪=নৌকা বিলাস ইত্যাদি=এছাড়া কিছু কিছু অংশে রাধাকৃষ্ণের লীলা কথা উল্লেখ আছে=রাধা কাহিনী যে কাল্পনিক নয়=আশাকরি আমরা সেটা ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি=আমরা এখানে যে অধ্যায় ও স্কন্ধের নাম উল্লেখ করেছি=তা সংস্কৃত ভাগবতে ও বাংলা সংকলিত ভাগবতে পাবে=প্রয়োজনে পড়ে দেখবে রাধাকৃষ্ণের জীবন লীলার প্রমাণ হাতেনাতে পাবে=

পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণীর চরণকমলে সবার মঙ্গলময়=কল্যাণময়=শান্তিময়= সুন্দরময় আর আনন্দময় জীবনের জন্য প্রার্থনা নিরন্তর আমাদের=
======================================
"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে"
"হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"
==========================

Collected from: Adhora Ojana Adhora
Share:

কৃষ্ণের ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা

মানুষকে ভগবান থেকে দূরে সারানোর প্রধাণ শত্রু হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞান শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতিরই প্রতিবন্ধক নয়,ইহা স্বাস্থ্য ও মানসিকতার উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
একদিকে যেমন প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নত,সাথে সাথে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপেও দ্রুত অগ্রগতি।
একটি আনবিক বোমা একটি ক্ষুদ্র দেশকে নিমেষে শেষ করতে সক্ষম।
টেলিভিশন,মোবাইল অনেক উপকার করে,আবার এই দুটি উপকরণের জন্যই আজ আমাদের ১২-১৪ বছরের সন্তানের তাড়াতাড়ি পতনও তো ঘটছে?

আদিম যুগে কোনো বিজ্ঞান ছিল না। তারা ঝড় হলেও ভগবান,বৃষ্টি হলেও,বিদ্যুৎ চমকালেও ভগবানকে স্মরণ করত। তারা এটাই জানত-সবকিছু ভগবানের ইচ্ছাতেই হয়।
একটি শিশুকে দেখুন-সবাই আমরা বলি,শিশু নারায়ণ,কেন?
কারন,শিশুকে এখুনি বকা দিলে কান্না করল,আবার তখুনি ভুলে গিয়ে হাসতে থাকে। তার মধ্যে ক্রোধ থাকে না,হিংসা নেই,লোভ নেই-কত সরলভাবে সব বিশ্বাস করে।
কিন্তু সেই শিশু নারায়ণটিই একটু বড় হয়ে,রাবন,কংসে পরিণত হয়। কেন?
পারপার্শ্বিক পরিবেশ,নিজের পরিবার যেমন,,উন্নত,আধুনিক! পিতামাতা যদি লোভী,উগ্র স্বভাবের হয়,ছেলে কি করে ভাল হবে?
আগে নিজেকে ধার্মিক হতে হবে,তবেই সুসন্তানের আশা করা যেতে পারে। কিন্তু নিজেই অপেক্ষা করে আছে-বুড়ো বয়সে ভক্তি করব।
লক্ষ করে দেখবেন-
কোনো পরিবারের একটি শিশুর স্বভাব-চরিত্র দেখেই বাড়ির বড়দের ব্যবহার আন্দাজ করা যায়-যতই ভালমানুষের ভান করুক।

আধুনিক বিজ্ঞান শুধু পারে-বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে,ভুল জায়গায় মানুষকে আটকে রেখে,সময় নষ্ট করাতে। এদের সাধারণ জ্ঞানের বড়ই অভাব! সাধারণ জ্ঞান বলতে-সব কিছুর পরম কারন শ্রীকৃষ্ণকে স্বীকার করা।
প্রকৃতি প্রতি পদক্ষেপে আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে,তবুও আমরা জল্পনা-কল্পনা করি। যদি জানতে চাওয়া হয়-এত ধরণের গাছ কেন? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
ডারউইন পন্ডিত বলে গেছে-প্রাকৃতিক বিবির্তন,নির্বাচনবাদ ইত্যাদি। তাহলে নিশ্চয়ই সেটি প্রকৃতির ইচ্ছা,বিজ্ঞানের কিছুই করার নেই?
সব আপেলই তো গাছ থেকে মাটিতে পড়ে,তাহলে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ে শোরগোল করার প্রয়োজনটা কি?

আচ্ছা শ্রীরামচন্দ্রের সময়ে তো সমুদ্রে শিলা ফেলে ভাসিয়েছলেন। তখন কি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছিল না?
সুতরাং নিয়ম চরম কথা নয়। একজন রাজা যেমন আইন তৈরি করেন,তিনিই পরিবর্তনও করতে পারেন। কেন,দেশের সংবিধান সংশোধন হয় না। কিন্তু সেটা শুধু শাসকই করতে পারেন,সাধারণ প্রজার সেই অধিকার নেই।
বিজ্ঞানকে এটাই অনুরোধ করা,আত্মা ও ভগবান মানুন। তিনিই পরম নিয়ন্তা, আপনারা শুধু তাঁর তৈরি খেলনাগুলো দিয়ে কিছু কসরৎ করে মনোরঞ্জন করাচ্ছেন!

সৃষ্টির আদিতে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন,আছেন এবং প্রলয়কাল পর্যন্ত থাকবেন। কিন্তু এইসব মূর্খ বৈজ্ঞানিকেরা এইসব মানেই না।
নিজে না চাইলে সুবুদ্ধি কখনোই হবে না-কি আপনার,কি আমার!!

Collected from: Sotyer Sondhane

Share:

মৃতের জন্য শোক করা উচিত নয়, শ্ৰীকৃষ্ণ অৰ্জ্জুনকে কিরূপে বুঝালেন ?

ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ অর্জনকে আত্মজ্ঞান শিক্ষা দিবার জন্য প্ৰথম বুঝিয়ে দিলেন মৃতের জন্য শোক করা ধীমান ব্যক্তির যোগ্য নয়, কেন না আত্মা জন্ম মৃত্যু রহিত। মৃত্যু বিনাশ নয়, তাহা অবস্থান্তর প্রাপ্তি। আমরা শৈশব অতিক্রম করেই যখন যৌবনে প্রবেশ করি এবং যৌবনান্তে যখন জরাগ্রস্ত হই, তখন তো শোক করি না। তবে মৃত্যুর জন্য কেন শোক করব, তাহাও অবস্থান্তর প্রাপ্তি মাত্র; আমাদের শরীর ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সত্য, তাহার ধৰ্ম্ম মরণশীলতা; কিন্তু দেহের যথার্থ কর্তা যে আত্মা তিনি জন্ম-মৃত্যু রহিত, অবিনাশী, অক্ষয় এবং নিত্য। যখন দেহের মৃত্যু হয়, তখন দেহস্বামী আত্মা তাহা জীর্ণ বস্ত্রের ন্যায় পরিত্যাগ করে নূতন দেহ গ্রহণ করেন। এতদ্ভিন্ন জীবের আদি অব্যক্ত অপ্ৰকাশ, কেবলমাত্ৰ এই লোকে এই জীবন ব্যক্ত। অব্যক্ত আদির জন্য তো আমরা শোক করি না, তবে অব্যক্ত শেষের জন্য কেন শোক করিব ? স্থির বুদ্ধি জ্ঞানী ব্যক্তি এরূপ অবৈধ শোকে অভিভূত হয়েন না। জন্ম হইলেই মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, যাহা নিশ্চিত তাহার জন্য শোক করা উচিত নয়। ইহা ভিন্ন যাঁহারা আজ আছে তাঁহারা যে পূর্বে ছিলেন না—এমন নয় এবং যাঁহারা আজ নাই, তাঁহারা যে আবার ভবিষ্যতে আসিবেন না, এমনও নয়। যেমন জন্মিলে মৃত্যু নিশ্চিত, তেমনি মৃতের জন্মান্তর প্রাপ্তি সুনিশ্চিত। নিম্ন লিখিত কয়েকটি শ্লোকে ভগবান অর্জনকে মৃত্যু কেন অশোচ্য তাহা বুঝাইয়া দিয়াছেন।


১/ দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে কৌমারং যৌবনংজরা ,,তথা দেহান্তর প্রাপ্তিঃ ধীরস্তত্ৰ ন মুহ্যতি।। ২/১৩

অনুবাদঃ- দেহীর দেহ যেভাবে কৌমার, যৌবন ও জরার মাধ্যমে তার রূপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে তেমনই ঐ দেহী ( আত্মা ) এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহান্তরিত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা কখনও এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হন না ।


২/ ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ,,অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ।। ২/২০

অনুবাদঃ- আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা পুনঃ পুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না৷ তিনি জন্মরহিত শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না।


৩/ বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি ,, তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী। ২/২২

অনুবাদঃ- মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।


৪/ অব্যক্তাদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত ,,

অব্যক্তনিধনান্যেব তত্র কা পরিদেবনা। ২/২৮

অনুবাদঃ- হে ভারত ! সমস্ত সৃষ্ট জীব উৎপন্ন হওয়ার আগে অপ্রকাশিত ছিল, তাদের স্থিতিকালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং, সেই জন্য শোক করার কি কারণ ?

Collected from: ডি শীল
Share:

উপবাসের অলৌকিক ক্ষমতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিপাত

আমরা এই জড়া প্রকৃতিতে জন্মগ্রহণ করেছি মানেই,কোনো পাপের ফল। মানবদেহ পাওয়ার অর্থ-কিছু কিছু পুণ্য সঞ্চয়ের ফল,এবং ভগবদ্ভজনের মাধ্যমে ভগবৎ প্রাপ্তির এক সুযোগ।

ভুল এবং পাপ মানব জীবনে হবেই। ভুল সবারই হতে পারে,তা সে সাধুই হোক আর মহাপুরুষই হোক। আর পাপ তো সাধারণ মানুষের নানাভাবে হতে পারে। যেমন-ক্রোধ করা,কাউকে কটু কথা বলা,জেনেশুনে খারাপ জিনিস দর্শণ,খারাপ জিনিস শ্রবণ করে-দৃষ্টি ও শ্রবণ দ্বারা পাপ।

এমন অজস্র পাপ আমরা জেনেশুনে শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংযম না থাকার ফলে করে ফেলি।

আবার অজান্ত একটি পিঁপড়েকে মেরে ফেলাও পাপ। বাহ্যিক পাপ আমাদের দ্বারা হয়ই। এবার যদি খাদ্যের মাধ্যমেও পাপ গ্রহণ করি,কি অবস্থা হতে পারে ভাবুন!

একাদশীর দিন পাপপুরুষ,ভগবানের আদেশ ও অনুরোধে পঞ্চশস্যে অবস্থান করে। তাই একাদশীতে ঐ জাতীয় আহার না করে,পাপ থেকে কিছুটা বিরত থাকা যায়।

এবার অনেকে একাদশী করে-শুধু উপবাস থেকে। শুধু উপবাস থেকেই যদি ভগবৎ প্রাপ্তি হতো,তাহলে পথেঘাটের ভিক্ষুকেরা তো বছরে অনেক উপবাস করে। তাদের তো আপনার থেকে অনেক আগে ভগবৎ প্রাপ্তি হওয়া উচিৎ!

একাদশীতে যত বেশি পারা যায় জপ করতে হবে,তবেই উপবাস সার্থক।



এবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি:-

আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা দেহের শক্তি জোগায়,এবং নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতা দেয়। এই দুই প্রক্রিয়ায়ই প্রচুর বিষ উৎপন্ন হয়,যা কোষের ক্রিয়াশীলতায় বাধা দেয়।

গৃহীত খাদ্য চূর্ণ হয়ে যকৃতে গিয়ে পৌছায়। ফুসফুস ও মূত্রাশয়ের মতো যকৃতও সকল বিষ ও বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়।

এবার উপবাসের সময় যেহেতু দেহ কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না,তাই নতুন বিষও উৎপন্ন হয় না,এবং তখন যকৃৎ শুধু বিষ নিষ্কাশনের জন্যই পুরো সময় কাজ করে।



প্রক্রিয়াটি আরেকটু ভাল করে বুঝুন-

টিকে থাকার জন্য দেহের ইন্ধনের প্রয়োজন। দেহ যখন নতুন ইন্ধন পাচ্ছে না,তখন দেহে সঞ্চিত বিষ-এর উপর ক্রিয়া করে সেগুলি দগ্ধ করে।

এরপর সঞ্চিত পুষ্টিকর উপাদান,যেমন-সঞ্চিত ফ্যাট,ক্যালোরি-এর উপর ক্রিয়া করে।

এই কারনেই অতিরিক্ত স্থূলদেহের ব্যক্তিকে ডাক্তারও উপবাসের উপদেশ দেন।




দীর্ঘ উপবাসকালের পর যখন দেহকোষের কার্যকে বিঘ্ন ঘটানোর মতো বিষের পরিমাণ দেহে কমে যায়,তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তিও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়,রক্ত বিশুদ্ধ হয়,ত্বক পরিস্কার হতে শুরু করে।

মা এবং বোনেরা শুনুন-

উপবাসে মুখমন্ডলের দিপ্তিও অনেক বৃদ্ধি পায়।


এই কারনেই হসপিটালে রোগী যখন খাদ্যগ্রহণ বন্ধ রাখে-অনাহারের ফলে রোগীর নয়,রোগের মৃত্যু হয়।

আজ চিকিৎসকেরা উপবাসকে বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহার ক'রে-রক্তাল্পতা,জ্বর,অনিয়মিত স্রাব,মাথাব্যাথা,বাত,মানসিক অবসাদ ইত্যাদির চিকিৎসা করছেন।


"সুতরাং প্রতি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান,আধ্যাত্মিকতাকে ভর ক'রে,আধ্যাত্মিকতা বিজ্ঞানকে নয়!"

বিজ্ঞানকে প্রতি ক্ষেত্রেই আধ্যাত্মিকতার কাছে শিখতে হয়!!

Collected Narayan Chandra Roy

Share:

ব্রহ্মার অভিমান ভঙ্গ

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বাংশ প্রকাশ, পুরুষাবতার গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে শ্বেতবরাহ কল্পে চতুর্মুখ ব্রহ্মার জন্ম এবং ইনিই প্রতি কল্পে ব্রহ্মান্ডের প্রথম জীব ।
ভগবান ব্রহ্মার মধ্যে সৃস্টিশক্তি সঞ্চার ও সৃস্টি করবার জন্য রজোগুন দিয়েছেন , যার মধ্যে রয়েছে, সংকল্প - আগ্রহ - প্রচেষ্টা ।
এই জন্য ব্রহ্মা রজোগুনাবতার ।
ব্রহ্মা ভগবান প্রদত্ত চৌদ্দ ভূবনে সমস্ত জীবদেরকে যার যার বিগত কর্মফল অনুযায়ী পুনরায় সৃস্টি করলেন । 


চতুর্মুখ ব্রহ্মা স্থাবর ,জঙ্ঘম, ভুচর, খেচর, জলচর, ও উভয়চর প্রানী-প্রজাতি করলেন যেমন,
নয় লক্ষ রকমের জলজপ্রানী,
কুড়ি লক্ষ রকমের গাছপালা,
এগারো লক্ষ রকমের কীট-পতঙ্গ,
দশ লক্ষ রকমের পাখী,
ত্রিশ লক্ষ রকমের পশু, ও
চার লক্ষ রকমের মানুষ প্রজাতি সৃস্টি করলেন ।
একদিন ব্রহ্মা অহংকার বশতঃ মনে করলেন, 'আমিই সবকিছু করেছি । আমিই সমগ্র মহাবিশ্বের সৃস্টিকর্তা ,আমিই ব্রম্মান্ডের মালিক । শ্রীমদ্ভাগবতে বর্নিত আছে দ্বারকাতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাজীকে আহ্বান করলেন । ব্রহ্মা এসে পৌছালে প্রধান ফটকের দ্বারপালগন জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কোন ব্রহ্মা । ব্রহ্মা বিস্মিত হয়ে বললেন, আমি চতুর্মুখ ব্রহ্মা ।
তারপর সভাকক্ষে প্রবেশ করে দেখলেন বহু বহু ব্রম্মান্ডসমূহ থেকে আগত অসংখ্য ব্রহ্মা সেখানে উপস্থিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ কে প্রনতি নিবেদন করছে । আমাদের ব্রম্মান্ডের চতুর্মুখ ব্রহ্মা নিজকে সবচেয়ে ছোট বলে অনুভব করলেন । ভগবান সকল ব্রহ্মাদের কে ডেকে কুশল বিনিময় করে একে একে সকলকে বিদায় দিলেন । তখন চতুর্মুখ ব্রহ্মার বিষন্ন বদন দর্শন করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে ব্রহ্মা । বলুন আপনার কি অভিপ্রায় ?
ব্রহ্মা বললেন, আমি বড় অভিমানী, আমি মনে করেছি আমি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি । সেই মোহ আমার দুর হয়েছে , আমার চেয়েও অসংখ্য কোটি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি রয়েছেন , তা আমি বুঝতে পারলাম । আমার এই চৌদ্দভূবন ব্রম্মান্ড ছাড়াও অনন্তকোটি ব্রম্মান্ড রয়েছে ।
এবার আমার সেই বুদ্বি জন্মেছে । হে ভগবান আমি বুঝেছি আমিই সবচেয়ে ছোট , আমার চিন্তাধারা অতি তুচ্ছ । আপনি আমার সমস্ত অভিমান, ও অহংকার দুর করুন , আপনার চরনে স্থান দিন এবং আমাকে শুদ্ধভক্তি প্রধান করুন ।।হরেকৃষ্ণ।।


Collected: Bharoti Rani Das
Share:

মহাপ্রভুর গুণ্ডিচা মার্জন

শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব আরম্ভের পূর্বদিন ‘গুণ্ডিচা মার্জন’ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। গৌড়ীয়া মতে রথযাত্রায় প্রভু জগন্নাথ তাঁর মন্দির ছেড়ে গুণ্ডিচা মন্দিরে আগমন করেন । এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মথুরা নগর ছেড়ে বৃন্দাবনে আগমনের মতো । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রজে ফিরবেন , এই কথা শ্রবন করে সবচেয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন গোপিনীগণ ও ব্রজেশ্বরী শ্রীমতী রাইকিশোরী । মহাপ্রভুর মধ্যে রাধাভাব প্রকট, তিনি পার্ষদগণকে নিয়ে স্বহস্তে গুন্ডিচা মন্দির মার্জন করতেন। শ্রী চৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী এই সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন ।

মহাপ্রভু ভক্তগণের সঙ্গে নিরন্তর কীৰ্ত্তন-রঙ্গে ক্রীড়া করেন। আচাৰ্য্যাদি ভক্তগণ মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করেন, মহাপ্ৰভু সেই সেই স্থানে ভক্তগণকে নিয়ে ভিক্ষা করেন। এই মত নানা রঙ্গে কিছুদিন যাপন করলেন । ক্রমে শ্ৰীজগন্নাথ দেবের রথযাত্রার দিন উপস্থিত হল। তখন মহাপ্রভু প্রথমে কাশীমিশ্রকে ডেকে এনে তাকে দিয়ে পড়িছা পাত্র ও সার্বভৌমকে ডাকিয়ে আনলেন। মহাপ্রভু হেসে তিনজনকে বললেন — “ আপনারা আমাকে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জনের সেবা দিন ” । মহাপ্রভু এই সেবা প্রার্থনা করলে পড়িছা বললেন, “আমরা সকলে আপনার সেবক, আপনার যা ইচ্ছা , সেই অনুযায়ী কাজ করা আমার কর্তব্য, বিশেষতঃ মহারাজ আমাকে আদেশ করেছেন , আপনার ইচ্ছার যেন যথাযথ পালন হয় । তবে প্রভু ! মন্দির-মার্জন আপনার যোগ্য সেবা নয় , এটি আপনার একটি লীলা । গুণ্ডিচা মার্জনের জন্য কলসী ও ঝাড়ু অনেক আবশ্যক , — তবে আজ্ঞা দিন আজ সেই সব জিনিস এই স্থানে নিয়ে আসি ” । এই কথা বলে পড়িছা নূতন একশত মাটির কলসী ও একশত ঝাড়ু এনে প্রভুর সামনে অপর্ণ করলেন।

পর দিন প্রাতঃকালে প্ৰভু শ্রীহস্তে নিজ ভক্তগণের অঙ্গে চন্দন লেপন করলেন । প্রত্যেকের হাতে এক একটি মার্জনী দিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে গুণ্ডিচা মন্দিরে গেলেন । গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করতে গিয়ে প্রথমে ঝাড়ু দিয়ে মার্জন করতে লাগলেন । ভিতর মন্দির এবং উপরিভাগ সব পরিস্কার করে সিংহাসন মার্জন করে চারি ভিত শোধন করার পর শ্রীজগমোহন পরিস্কার করলেন । চারপাশে শত ভক্ত হাতে ঝাড়ু নিয়েছেন , মহাপ্রভু নিজে ভালমতে শোধন করে সকলকে শিক্ষা দিতে লাগলেন, মহাপ্ৰভু প্রেমোল্লাসে গৃহ শোধন ও কৃষ্ণ নাম করছেন এবং ভক্তগণও কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে নিজেদের কাজ করতে লাগলেন । মহাপ্রভুর ধূলায় ধূসর তনু দেখতে অতীব সুন্দর, কোন কোন ভক্ত অশ্রু জলে মার্জন করছেন। অনন্তর ভক্তগণ ভোগমণ্ডপ শোধন করে প্রাঙ্গণ শোধন করলেন। ক্রমে সমুদায় গৃহ শোধন করে তৃণ, ধূলি ও কাঁকর একত্র করে ভক্তগণ নিজেদের বস্ত্রে করে পরমানন্দে তৃণ ও ধূলি সকল বাইরে ফেলতে লাগলেন ।

তখন প্রভু বললেন , কে কত মার্জন করেছ, খড়কুটা ও ধূলির পরিমাণ দেখে পরিশ্রম বিচার করব । এই বলে সকলের ঝাড়ু দেওয়া বোঝা একত্র করলেন। সবচেয়ে মহাপ্রভুর বোঝাই অধিক হল । গৃহ মধ্যে মার্জন করার পর পুনৰ্ব্বার সকলকে কাজ বণ্টন করে দিয়ে বললেন , “তোমরা সকলে সূক্ষ্ম ধূলি ও কাঁকর দূর করে ভাল করে পরিস্কার কর ” । সমস্ত বৈষ্ণব দুইবার শোধন করলেন, তা দেখে মহাপ্রভূর মন সস্তুষ্ট হল। তখন অন্য শত জন শত ঘট পূর্ণ করে এনে রাখলেন । যখন মহাপ্ৰভু বললেন ‘জল আন’ তখন ভক্তগণ মহাপ্রভুর সামনে জলপূর্ণ শত ঘট এনে দিলেন । মহাপ্রভু প্রথমে মন্দির প্রক্ষালন করলেন, তারপরে, গৃহের উর্দ্ধ, অধঃ, ভিত, গৃহের মধ্য ও সিংহাসন ধৌত করলেন, তৎপশ্চাৎ খাপরা (খোলা) ভরে জল উর্দ্ধদেশে নিক্ষেপ করে সেইজলে উৰ্দ্ধ শোধন করে ভিত প্রক্ষালন করলেন । প্রভু প্রথমে মন্দির প্রক্ষালন, তারপরে শ্রীহস্তে সিংহাসনের মার্জন করলেন। ভক্তগণ গৃহ -মধ্য প্রক্ষালন এবং নিজ নিজ হস্তে মন্দির মার্জন করতে লাগলেন । নিত্যানন্দ প্রভু, অদ্বৈতাচার্য্য, স্বরূপ ভারতী আর পুরী বিনা আর সকলে জল বয়ে আনে ।

কোন ভক্ত মহাপ্রভুর হস্তে জলঘট দেয় , কেহবা মহাপ্রভুর চরণ উপরে জল নিক্ষেপ করে গোপনে সেই জল পান করে , কেহ বা সেই জল প্রার্থনা করে এবং কেহবা সেই জল অন্যকে দান করতে লাগলেন । তাতে সমস্ত প্রাঙ্গণ জলে পরিপূর্ণ হয়ে রইল। ভক্তগণ নিজ নিজ বস্ত্রে গৃহ সংসাজ্জন এবং প্রভু নিজ বস্ত্রে সিংহাসন মাৰ্জ্জন করলেন । শত ঘট জলে মন্দির মার্জিত হল । নিজেদের মনের মত করে মন্দির শোধন করলেন , মন্দিরকে নিৰ্ম্মল শীতল ও স্নিগ্ধ করে আপনার হৃদয়কে যেন প্রকাশিত করলেন । শতশত লোক সরোবরে জল ভরেন, ঘাটে স্থান না পেয়ে কেহবা কূপে জল ভরতে লাগলেন, একশত ভক্ত পূর্ণ কুম্ভ নিয়ে আসতে লাগলেন, অার শত ভক্ত শূন্য ঘট নিয়ে যেতে লাগলেন । ঘটে ঘটে ঠোকর লেগে কত ঘট ভেঙ্গে গেল, লোকেরা আবার শত শত ঘট এনে উপস্থিত করল ।

 ভক্তগণ জল ভরেন , গৃহধৌত করেন এবং হরিধ্বনি করেন । কৃষ্ণ ও হরিধ্বনি ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাওয়া যায় না । ভক্তগণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে ঘট সমপর্ণ এবং কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে ঘট প্রার্থনা করতে লাগলেন । সকল কৰ্ম্মেই কৃষ্ণনাম সঙ্কেত হয়ে উঠল । মহাপ্ৰভু প্রেমাবেশে কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে একাকী শত লোকের কৰ্ম্ম করতে লাগলেন, শত হস্তে যেন ক্ষালন ও মার্জন করেন এবং প্রত্যেক লোকের নিকট গিয়ে তাদেরকে কার্য্যের শিক্ষা প্রদান করেন । যে ব্যক্তি ভাল কৰ্ম্ম করেন, তাকে প্রশংসা এবং মনোমত না হলে তাকে মিষ্ট ভর্ৎসনা করেন । অন্যকে বলেন ,_“ তুমি ভাল কাজ করছ , প্রভু জগন্নাথের সেবাকার্য্য কিভাবে উত্তমরূপে করতে হয় , অন্যকেও শিখিয়ে দাও ”। এই কথা শুনে সকলে সঙ্কুচিত হয়ে মনোনিবেশ সহকারে ভালভাবে কাজ করতে লাগল ৷ এর পর মহাপ্রভু জগমোহন (মন্দিরের নিকট ক্ষুদ্র মন্দির ) প্রক্ষালন করে ভোগমণ্ডপ প্রক্ষালন করলেন । তারপর নাটশালা ধুয়ে চত্বর ও প্রাঙ্গণ ধুলেন, পাকশাল , মন্দিরের চতুর্দিক এবং সমুদায় অন্তঃপুর উত্তম রূপে ধৌত করালেন ।

এই সময়ে একজন সরল বুদ্ধি গৌড়ীয়া মহাপ্রভুর চরণে এক ঘট জল অর্পণ করে সেই জল নিজে পান করল, তা দেখে মহাপ্রভুর মনে দুঃখ ও রোষ উৎপন্ন হল । যদিও মহাপ্রভু তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তথাপি শিক্ষার জন্য বাইরে রোষ প্রকাশ করলেন ৷ 

Collected: Dolon Das
Share:

শ্ৰীকৃষ্ণের আবিৰ্ভাব ও নন্দ মহারাজের ব্ৰত

নন্দ মহারাজের সভায় স্নিগ্ধকন্ঠ এবং মধুকন্ঠ নামে দুজন কবি নিত্যই গীত-নৃত্য করতেন। " স্নিগ্ধকণ্ঠ ” অৰ্থে স্নেহ-মাখা কন্ঠস্বর , আর মধুকণ্ঠ ” অৰ্থে মধু-মাখা কণ্ঠস্বর।

একদিন তারা সভা মধ্যে কিভাবে নন্দ মহারাজ পুত্ৰ প্ৰাপ্ত হলেন সেই বিষয়ে গীত গাইতে লাগলেন । পুত্ৰ লাভের উদ্দেশ্যে নন্দ মহারাজ বহু যাগ-যজ্ঞ সব করেছিলেন , কিন্তু তবুও কোনো পুত্ৰ হলো না । সমস্ত ব্ৰজবাসী আর তার যত বন্ধুজন ছিলেন তারা সবাই কত ব্ৰত করালেন যাতে নন্দ মহারাজ একটি পুত্ৰ প্ৰাপ্ত হন । তবুও যশোদার কোনো পুত্ৰ হলো না । নন্দ মহারাজের রানী যশোমতী অত্যন্ত দুঃখ - শোকে ভোজনাদি ত্যাগ করলেন, আর সর্বদা অধোমুখে ভূমিতে বসে নিরন্তর অশ্ৰপাত করে আপন মনে কাঁদতে থাকেন । নন্দ মহারাজ তা দেখে মনে বড় দুঃখ পান । তিনি নানা উপায়ে তাকে প্ৰবোধ দিয়ে বলতে লাগলেন , “ বিধাতার যা ইচ্ছা তাই হবে । আমরা যে-পুত্ৰ কামনা করছি , তা যজ্ঞ করে হবে না''। 

তখন যশোধা মাতা বললেন , “ শুন প্ৰাণেশ্বর , আমার হৃদয়ের কথা তোমাকে বলছি । আমরা যাগ-যজ্ঞ করেছি এবং সব ব্ৰতও করেছি । কিন্তু আমরা দ্বাদশী পরম-ব্ৰত পালন করিনি''।
এ কথা শুনে নন্দ মহারাজ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে তখন বললেন , “হে প্রিয়ে , তুমি খুব ভালো কথা শোনালে , সত্যি সত্যি আমরা এই ব্ৰতটি পালন করিনি, তা অবশ্যই পালন করব। তাহলে আমাদের মন-কামনা পূৰ্ণ হবে, দুঃখ দুর হবে''।
অতঃপর নন্দ মহারাজ তার পুরোহিতকে ডেকে এনে দাদ্বাদশী ব্রত পালনের বিধি বুঝে নিলেন ।

স্নিগ্ধকন্ঠ বললেন ,
“ ভাই , তারপর কি হলো । সেই সব এই সভায় খুলে বল''।

তারপর নন্দ মহারাজ এবং যশোমতী রানী এই দ্বাদশীব্রত এক বছর পালন করলেন । ব্রত পালনের শেষে নন্দ মহারাজ এক বড় সূস্বপ্ন দেখেন ।
স্বয়ং শ্ৰীহরি আবিভুত হয়ে তার প্রতি প্রসন্ন হয়ে বললেন , “হে নন্দ মহারাজ ! তোমার মনস্কামনা অচিরে পূণ হবে। প্রতি কল্পে আমি তোমার পুত্ৰ -রুপে এসে থাকি এবং এই কল্পেও আমি তোমার পুত্ররুপে আসব । তোমাদের গৃহে আমি , শিশুরুপে বিহার করব । প্ৰতিদিন তুমি আমাকে দৰ্শন করতে পারবে এবং তোমার আশ পূৰ্ণ হবে''।
নন্দ মহারাজ এরকম মধুর স্বপ্ন দেখলেন । অতঃপর নন্দ মহারাজ প্ৰভাত হলে মনস্থ করলেন যে, রানী যশোমতী সহ যমুনাতে স্নান করতে যাবেন । তারপর তারা যমুনাতে স্নান করতে আসার সময় দান দেওয়ার জন্য বহুধন সঙ্গে করে নিয়ে এলেন ।

দেবদেবীগন, মুনি , ঋষিগণ সব সেকথা জানতে পেরে ভিক্ষুক বেশে নন্দ মহারাজের কাছ থেকে দান গ্ৰহণ করার জন্য এলেন । যথাবিধি স্নান করে রানীসহ নন্দ মহারাজ নিজ হাতে দান দিতে শুরু করলেন । সবাই নন্দ মহারাজের হাতে দান পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন । তারা সব উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন , “ নন্দ মহারাজ কি জয় ! যশোমতী রানী কি জয়''।

তারপর নন্দ মহারাজ গৃহে ফিরে এসে শ্ৰীবিষ্ণুর পূজা করলেন । তার নিত্য কমবিধি যত সব সমাপ্ত করার পর তারা দুজনে অতি শীঘ্ৰ সভায় প্ৰবেশ করে গুরু, দ্বিজ এবং পূজ্য জনের বন্দনা করলেন।

তখন স্নিগ্ধ কণ্ঠ হাসতে হাসতে বললেন , তারপর কি হলো ?
অতঃপর মধুকণ্ঠ কথা বলতে শুরু করলেন।

তারপর রাজসভায় নন্দ মহারাজ যেই উপবেশন করলেন এমন সময় দ্বাররক্ষী এসে বলল , “ মহারাজ, একজন তাপসী ব্ৰক্ষাচারিণী এসে অপেক্ষা করছেন''।
সে কথা শুনে নন্দ মহারাজ গাত্ৰোখান করে স্বাগত-পূর্বক তাপসী ব্রহ্মচারিণীকে নিয়ে গিয়ে দিব্যাসনে উপবেসন করালেন । অতঃপর নন্দ মহারাজ তার পাদধৌত করে পূজা করলেন ।

যশোধা মাতা তাপসী ব্রহ্মচারিণীর চরনে পতিত হয়ে কঁদতে থাকেন। যোগিনী যশোধারানীকে উঠিয়ে কোলেতে নিয়ে শুভ আশীৰ্বাদ করে বললেন , “ হে রানী দুঃখ কর না, দুঃখ পরিহার কর। অতি শীঘ্র এক জগৎপতি সুন্দর পুত্ৰ সন্তান তোমার গৰ্ভ হতে জন্ম নেবে''।

সে কথা শুনে উপস্থিত সকল গোপ - গোপীগণ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি দিয়ে বলে উঠলেন , “ নন্দরানী কি জয়''।
নন্দ মহারাজের বড় ভাই উপানন্দ সেই কথা শুনে হেসে হেসে
,বলতে লাগলেন , “এই গোকুল বন দৈত্য-দানব মুক্ত হয়ে মহাতীৰ্থ রুপে পরিগণিত হবে''।

তাপসী ব্ৰহ্মচারিণীর ভবিষ্যৎ বাণী শুনে সকল ব্ৰজবাসীরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তারা সব একের পর এক এসে যোগিনী তথা তাপসী ব্ৰহ্মাচারিণীর পাদদ্বয়ে প্ৰণতি করে স্তুতি করলেন । তারপর তারা অতি শিঘ্র তাপসী ব্ৰহ্মচারিণীর থাকার জন্য একটি বিশাল কুটির নির্মাণ করে দিলেন ।

এদিকে নন্দ-মহারাজের অবশ্যই এক সুন্দর পুত্ৰ সন্তান হবে যিনি হবেন সকল জগতের পতি, তা জেনে সবার মনে সুখোদয় হলো।
স্নিগ্ধকন্ঠ ও মধুকন্ঠ দুজনের গলা ধরে নৃত্য কীর্তন করতে লাগল।

'' হে কৃষ্ণ করুনার সিন্ধো দ্বিনবন্ধো জগৎপতে,
গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তু তে''।। (কৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র)

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন এই ধরা ধামে আসেন ?
কারন তিনি হচ্ছেন, ''সুহৃদং সর্বভূতানাম্‌'' অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ
সমস্ত জীবের সুহৃদ, একমাত্র মঙ্গলাকারী বন্ধু।
তিনি সমস্ত জগতের মঙ্গলের জন্য এখানে আবির্ভূত হন।। 
হরেকৃষ্ণ।।

Collected/courtesy by: Sodkirti Das
Share:

দ্বাদশ পদাবলী বা আদিবীজমন্ত্র

আমরা যারা সনাতন বা বৈদিক ধর্মাবলম্বী, তাদের কাছে শ্রীমদ্ভগবদ গীতা একখানি পবিত্র গ্রন্থ। এ শুধু গ্রন্থ বললে ভুল হবে, গীতা মানব জীবনের দিকনির্দেশনা প্রদান সহ সকল শাস্ত্রের আধার। এই পূণ্য গ্রন্থ পাঠের পুর্বে আমরা একটি শ্লোক পাঠ করে থাকি। "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়!!" এটি শুধু শ্লোক নয়। গুরু কর্তৃক শিষ্যের কানে দেয়া বীজমন্ত্র ও বটে। এই আদি বীজমন্ত্র বহু মুনি ঋষি নিরন্তর জপ করে সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছেন।

. এই শ্লোকে আছে বারটি বর্ণ। যা হলো ওঁ ন, মো, ভ, গ, ব, তে, বা, সু, দে, বা, য়। এই বারটি বর্ণ নিয়ে রচিত হয়েছে বারটি পদাবলী।

যা সবার জানার জন্য পোস্ট করলাম। আশাকরি সবার ভাল লাগবে।


ওঁ-

বীজেতে ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবকে বোঝায়,

রাগদ্বেষাদি যার কৃপায় জয় করা যায়!

রোগে শোকে কাল নিদ্রায় মোরা হই মগন,

দয়াকরে রক্ষা করো হে মধুসূদন!!


ন-

নমি তব শ্রীপদেতে নিলাম শ্মরণ,

অনাশ্রয়ে অনাথের রক্ষো হে মধুসূদন!!


মো-

মোহ মায়ায় স্ত্রীসন্তানে সদা নিমগন,

তৃষ্ণা নিবারণ করো হে মধুসূদন!!



ভ-

ভক্তিহীন শোকে তাপে রত অনুক্ষণ,

পাপ হতে রক্ষা করো হে মধুসূদন!!



গ-

গতাগতি বারংবার করো নিবারণ,

জন্মমৃত্যু রহিত করো হে মধুসূদন!!



ব-

বহুগামীর বহু যোনী করেছি ভ্রমণ,

গর্ভদুঃখ হতে রক্ষো হে মধুসূদন!!



তে-

তেমনি ভোগ করতে হয় কর্ম যেমন,

সংসার মায়ায় রক্ষো হে মধুসুদণ!!

.

বা-

বাক্য দিয়েছিলাম তোমা করিব সাধন,

মায়ামোহে তা' ভুলিলাম হে মধুসুদণ!!

.

সু-

সুকর্ম করিনি আমি আমার এ জীবন,

দুঃখার্ণবে রক্ষা করো হে মধুসুদণ!!

.

দে-

দেহান্তর ছিলাম কতো নাই তা স্মরণ,

জন্মমৃত্যু বন্ধ করো হে মধুসুদণ!!

.

বা-

বাসুদেবে যেনো আমি স্মরি চিরন্তন,

জরাব্যাধি মৃত্যু হতে রক্ষো মধুসুদণ!!

.

য়-

যথা যথা জন্ম আমি করি হে ধারণ,

তব পদে অচলাবস্থা ভক্তি দাও মধুসুদণ!!

.

হে পরমকরুনাময়, সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তোমার সৃষ্টির সকল কিছুই তুমি রক্ষা করো প্রভু। অনাথের নাথ তুমি সকল জীবের সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের কারণ। তোমার সৃষ্টির সকল জীব সহ তোমার ভক্তদের একমাত্র রক্ষাকর্তা তুমি। তাই সবার জীবন মঙ্গলময় আর কল্যাণময় করো দয়াময়।(দেবেন্দ্র)

!!হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ

কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

হরে রাম হরে রাম

রাম রাম হরে হরে!!

!!জয় শ্রীমধুসুদণ!!জয় রাধে!!

!!জয় হোক সকল ভক্তবৃন্দের!!

Collected

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।