যখন আমরা গভীর নিদ্রাভিভূত হই তখন আমাদের কিছুই মনে থাকে না , এই অভিজ্ঞাতা আমাদের সকলের হয়েছে । টাকা - পয়সা , জমি - জমা , আত্মীয়স্বজন কোনও কিছুই মনে থাকে না , সেইরকম অবস্থায় কি আমাদের কোনও দুঃখ হয় ? গভীর ঘুমে কোনও জিনিসের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ না থাকলেও আমাদের দুঃখ হয় না , বরং আমরা সুখ অনুভব করি । তাতে প্রমাণ হয় যে সংসারের সঙ্গে সম্বন্ধে সুখ হয় না ।
আমরা মনে করি যে , যদি আমরা ধনদৌলত পেয়ে যাই , বড় পদে চাকরী হয় , মান সম্মান পাই , ভোগ , আরাম পাই তাহলে আমরা সুখী হবো । ভেবে দেখা উচিত যে গাঢ় ঘুমের সময় কোনও প্রাণী বা বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ না থাকলে দুঃখ না হয়ে সুখই হয় তখন এইসব জিনিস পেলে সুখ কি করে পাওয়া যাবে ?
জাগৃতির বস্তু স্বপ্নে এবং স্বপ্নের বস্তু সুষুপ্তিতে থাকে না । তাৎপর্য হলো এই যে জাগৃতি এবং স্বপ্নের বস্তুগুলি ছাড়াও আমরা থাকি । এতে প্রমাণ হলো যে বস্তু ব্যতিরেকেও আমরা সুখে থাকতে পারি । অর্থাৎ আমাদের থাকা বস্তু , অবস্থা প্রভৃতির আশ্রিত নয় । এতে বুঝা গেল যে , বস্তু , পদার্থ , ব্যক্তি প্রভৃতির দ্বারা আমরা সুখী হব আর ঐগুলি ছাড়া আমরা দুঃখী হব , একথা ভুল ।
যখন জাগ্রত থাকি তখন আমার অনেক জিনিস ছাড়াই থাকি , যেমন ধরুন আপনার মোবাইল নষ্ট হয়ে গেল , তা মেরামত করতে বেশ কয়েকদিন লাগতে পারে , তখন কিন্তু আপনাকে মোবাইল ছাড়া থাকতেই হবে । আর আপনি যেকোন ভাবে হোক থাকবেন । যখন আমরা ঘুমায় তখন কিন্তু সব কিছু ছাড়াই আমরা থাকি , পরিবার , বন্ধু - বান্ধব , আত্মীয়স্বজন , আরো যা যা আছে এবং তার দ্বারা আমরা শক্তি লাভ করি । গভীর ঘুম এলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং জেগে উঠলে ব্যবহার ভাল হয় । ভেবে দেখুন যখন কোনপ্রকার চিন্তা থাকে না তখন কি আপনি ভালো থাকেন না ?
যদি জাগ্রত অবস্থাতেই আমরা বস্তুগুলির সঙ্গে ভিন্ন হয়ে যাই , সেগুলির সঙ্গে সম্বন্ধ না রাখি , তাদের আশ্রয় না নিই তাহলে আমার জীবন্মুক্ত হয়ে যাব । নিদ্রায় তো বেহুঁশ ( অজ্ঞান ) অবস্থায় থাকে , সেজন্য তাতে জীবন্মুক্ত হয় না । সকল বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ - বিচ্ছেদ হওয়া হলো মুক্তি । মুক্তিতে যত আনন্দ , বন্ধনে তত নয় । বন্ধনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলেই মুক্তির আনন্দ হয় । ঘুমের সময় বস্তুগুলিকে ভুলে থাকলেও যখন সুখ শান্তি পাওয়া যায় তখন জ্ঞানত সেগুলির সঙ্গে সম্বন্ধ - বিচ্ছেদ করলে কতই না সুখ - শান্তি পাওয়া যাবে ।
শরীর এবং সংসার এক । এগুলির একটি আর একটি থেকে আলাদা হতে পারে না । শরীরের সংসারকে প্রয়োজন এবং সংসারের শরীরকে প্রয়োজন । কিন্তু আমরা স্বয়ং ( আত্মা ) শরীর থেকে আলাদা এবং শরীর ছাড়াই থাকতে পারি । এই শরীর তৈরি হবার আগেও আমরা ছিলাম এবং শরীর নষ্ট হয়ে গেলেও আমরা থাকব _ যদি এই কথা জানা না থাকে তাহলে এটি তো জানা আছে যে গাঢ় ঘুমের সময় শরীরের স্মরণই যখন থাকে না তখনও আমরা থাকি এবং সুখেই থাকি । শরীরের সঙ্গে সম্বন্ধ না থাকলে শরীর সুস্থ থাকে । সংসারের সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছেদ হলে আমরাও ঠিক থাকব এবং সংসারও ঠিক থাকবে ।
শরীরাদি বস্তুগুলির ধারণা ও দাসত্ব মন থেকে দূর করে দিলে খুবই আনন্দ হবে , এরই নাম জীবন্মক্তি । শরীর , আত্মীয় , ধন প্রভৃতি রাখুন কিন্তু এর দাসত্ব করা যাবে না । আমরা যারা জড় বস্তুর দাসত্ব করি তারা জড় বস্তুর আজ্ঞায় চলি , কিন্তু আমরা তো চৈতন্যময় । জাগ্রত , স্বপ্ন এবং সুষুপ্তি এই তিনটি অবস্থা থেকেই আমরা ভিন্ন । এই অবস্থানগুলির পরিবর্তন হয় , কিন্তু আমাদের পরিবর্তন হয় না । আমরা এই অবস্থাগুলিকে জানি আর অবস্থাগুলিও জানার । তাই এগুলি থেকে আমরা ভিন্ন । যেমন , ছাদকে আমরা জানি যে এটি ছাদ । তাহলে বোঝা গেল যে , আমরা ছাদ থেকে ভিন্ন । অতএব আমরা বস্তু , পরিস্থিতি , অবস্থা প্রভৃতি থেকে ভিন্ন _ এই অভিজ্ঞতাই হল মুক্তি ।
আমরা সংসারের থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাধন - ভজন করতে পারি । তার জন্য প্রয়োজন আমাদের হৃদয়ে শুদ্ধ ইচ্ছা । যখন আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি একাগ্রতার সঙ্গে ভক্তি করবো তখন সংসারের বস্তুর প্রতি আমাদের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে । যেমন , যদি হাতের কোথায় কেটে গেলে , সেখানে ওষুধ দিলে ধীরে ধীরে সেই ক্ষত সেরে যায় , তেমননি যদি আমাদের মনও ভগবান শ্রীগোবিন্দের প্রতি একাগ্রভাবে থাকলে তবে বাইরের বস্তুসকল আমাদের চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করতে পারবে না । মনে , হৃদয়ে একান্ত শুদ্ধ ইচ্ছা , প্রেম , ভক্তি থাকা প্রয়োজন । যখন আমরা কৃষ্ণভাবনায় হয়ে ভক্তি করব তখন কামনা বাসনা থাকলেও তা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ চলে যাবে । শুধু শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণে আত্মসমর্পণ করতে হবে ।
জয় রাধে ..........
ভুলক্রুটি মার্জনা করবেন .......
শ্রীরাধাগোবিন্দ সকলের মঙ্গল করুন
নিতাই গৌর হরিবল .
Post: Joy Shree Radha Madhav
আমরা মনে করি যে , যদি আমরা ধনদৌলত পেয়ে যাই , বড় পদে চাকরী হয় , মান সম্মান পাই , ভোগ , আরাম পাই তাহলে আমরা সুখী হবো । ভেবে দেখা উচিত যে গাঢ় ঘুমের সময় কোনও প্রাণী বা বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ না থাকলে দুঃখ না হয়ে সুখই হয় তখন এইসব জিনিস পেলে সুখ কি করে পাওয়া যাবে ?
জাগৃতির বস্তু স্বপ্নে এবং স্বপ্নের বস্তু সুষুপ্তিতে থাকে না । তাৎপর্য হলো এই যে জাগৃতি এবং স্বপ্নের বস্তুগুলি ছাড়াও আমরা থাকি । এতে প্রমাণ হলো যে বস্তু ব্যতিরেকেও আমরা সুখে থাকতে পারি । অর্থাৎ আমাদের থাকা বস্তু , অবস্থা প্রভৃতির আশ্রিত নয় । এতে বুঝা গেল যে , বস্তু , পদার্থ , ব্যক্তি প্রভৃতির দ্বারা আমরা সুখী হব আর ঐগুলি ছাড়া আমরা দুঃখী হব , একথা ভুল ।
যখন জাগ্রত থাকি তখন আমার অনেক জিনিস ছাড়াই থাকি , যেমন ধরুন আপনার মোবাইল নষ্ট হয়ে গেল , তা মেরামত করতে বেশ কয়েকদিন লাগতে পারে , তখন কিন্তু আপনাকে মোবাইল ছাড়া থাকতেই হবে । আর আপনি যেকোন ভাবে হোক থাকবেন । যখন আমরা ঘুমায় তখন কিন্তু সব কিছু ছাড়াই আমরা থাকি , পরিবার , বন্ধু - বান্ধব , আত্মীয়স্বজন , আরো যা যা আছে এবং তার দ্বারা আমরা শক্তি লাভ করি । গভীর ঘুম এলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং জেগে উঠলে ব্যবহার ভাল হয় । ভেবে দেখুন যখন কোনপ্রকার চিন্তা থাকে না তখন কি আপনি ভালো থাকেন না ?
যদি জাগ্রত অবস্থাতেই আমরা বস্তুগুলির সঙ্গে ভিন্ন হয়ে যাই , সেগুলির সঙ্গে সম্বন্ধ না রাখি , তাদের আশ্রয় না নিই তাহলে আমার জীবন্মুক্ত হয়ে যাব । নিদ্রায় তো বেহুঁশ ( অজ্ঞান ) অবস্থায় থাকে , সেজন্য তাতে জীবন্মুক্ত হয় না । সকল বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ - বিচ্ছেদ হওয়া হলো মুক্তি । মুক্তিতে যত আনন্দ , বন্ধনে তত নয় । বন্ধনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলেই মুক্তির আনন্দ হয় । ঘুমের সময় বস্তুগুলিকে ভুলে থাকলেও যখন সুখ শান্তি পাওয়া যায় তখন জ্ঞানত সেগুলির সঙ্গে সম্বন্ধ - বিচ্ছেদ করলে কতই না সুখ - শান্তি পাওয়া যাবে ।
শরীর এবং সংসার এক । এগুলির একটি আর একটি থেকে আলাদা হতে পারে না । শরীরের সংসারকে প্রয়োজন এবং সংসারের শরীরকে প্রয়োজন । কিন্তু আমরা স্বয়ং ( আত্মা ) শরীর থেকে আলাদা এবং শরীর ছাড়াই থাকতে পারি । এই শরীর তৈরি হবার আগেও আমরা ছিলাম এবং শরীর নষ্ট হয়ে গেলেও আমরা থাকব _ যদি এই কথা জানা না থাকে তাহলে এটি তো জানা আছে যে গাঢ় ঘুমের সময় শরীরের স্মরণই যখন থাকে না তখনও আমরা থাকি এবং সুখেই থাকি । শরীরের সঙ্গে সম্বন্ধ না থাকলে শরীর সুস্থ থাকে । সংসারের সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছেদ হলে আমরাও ঠিক থাকব এবং সংসারও ঠিক থাকবে ।
শরীরাদি বস্তুগুলির ধারণা ও দাসত্ব মন থেকে দূর করে দিলে খুবই আনন্দ হবে , এরই নাম জীবন্মক্তি । শরীর , আত্মীয় , ধন প্রভৃতি রাখুন কিন্তু এর দাসত্ব করা যাবে না । আমরা যারা জড় বস্তুর দাসত্ব করি তারা জড় বস্তুর আজ্ঞায় চলি , কিন্তু আমরা তো চৈতন্যময় । জাগ্রত , স্বপ্ন এবং সুষুপ্তি এই তিনটি অবস্থা থেকেই আমরা ভিন্ন । এই অবস্থানগুলির পরিবর্তন হয় , কিন্তু আমাদের পরিবর্তন হয় না । আমরা এই অবস্থাগুলিকে জানি আর অবস্থাগুলিও জানার । তাই এগুলি থেকে আমরা ভিন্ন । যেমন , ছাদকে আমরা জানি যে এটি ছাদ । তাহলে বোঝা গেল যে , আমরা ছাদ থেকে ভিন্ন । অতএব আমরা বস্তু , পরিস্থিতি , অবস্থা প্রভৃতি থেকে ভিন্ন _ এই অভিজ্ঞতাই হল মুক্তি ।
আমরা সংসারের থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাধন - ভজন করতে পারি । তার জন্য প্রয়োজন আমাদের হৃদয়ে শুদ্ধ ইচ্ছা । যখন আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি একাগ্রতার সঙ্গে ভক্তি করবো তখন সংসারের বস্তুর প্রতি আমাদের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে । যেমন , যদি হাতের কোথায় কেটে গেলে , সেখানে ওষুধ দিলে ধীরে ধীরে সেই ক্ষত সেরে যায় , তেমননি যদি আমাদের মনও ভগবান শ্রীগোবিন্দের প্রতি একাগ্রভাবে থাকলে তবে বাইরের বস্তুসকল আমাদের চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করতে পারবে না । মনে , হৃদয়ে একান্ত শুদ্ধ ইচ্ছা , প্রেম , ভক্তি থাকা প্রয়োজন । যখন আমরা কৃষ্ণভাবনায় হয়ে ভক্তি করব তখন কামনা বাসনা থাকলেও তা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ চলে যাবে । শুধু শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণে আত্মসমর্পণ করতে হবে ।
জয় রাধে ..........
ভুলক্রুটি মার্জনা করবেন .......
শ্রীরাধাগোবিন্দ সকলের মঙ্গল করুন
নিতাই গৌর হরিবল .
Post: Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন