• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৯ এপ্রিল ২০১৮

বেদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ঋষয়ো মন্ত্রদ্রষ্টারো ন তু বেদস্য কর্তারঃ।
ন কশ্চিদ্বেদ কর্ত্তা চ বেদস্মর্তা চতুর্ভূজঃ।।
যুগান্তেহন্তহিতান্ বেদান্ সেতিহাসান্মহর্ষয়ঃ।
লেভিরে তপসা পূর্বমনুজ্ঞাতাঃ স্বয়ম্ভূবা।।
------- মহাভারত, শান্তি পর্ব ২১০/১৯

অর্থাৎ ঋষিগণ মন্ত্র দ্রষ্টা মাত্র, বেদ রচনাকারী নয়। বেদে রচয়িতা কেউ নয়। ভগবান্ ব্রহ্মা বেদ-স্মরণকারী মাত্র। যুগান্তে অর্থাৎ প্রলয়কালে ইতিহাসাদি সহ বেদ অন্তর্হিত হইলে মহর্ষিগণ, স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা কর্তৃক পূর্ব উপদিষ্ট সেই বেদজ্ঞান তপস্যা দ্বারা পুনরায় লাভ করেন।

বেদ শব্দটি "বিদ্" ধাতু থেকে নিষ্পন্ন। "বিদ্" ধাতুর অর্থ - জানা।সেইজন্য বেদ শব্দের ধাতুগত অর্থ - জ্ঞান বা বিদ্যা দুই প্রকার পরা এবং অপরা। অলৌকিক জ্ঞান - পরাবিদ্যা। জাগতিক বিষয় সম্বন্ধীয় যাবতীয় লৌকিক জ্ঞান - অপরা বিদ্যা। পরা ও অপরা এই দুই বিদ্যাই স্থান পেয়েছে সেই জন্য বেদকে সর্ব জ্ঞানের ভান্ডার বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেদের বেদত্ব ওই পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা প্রকাশের জন্য।পরাবিদ্যাই শ্রেষ্ঠ বিদ্যা ।

"বিদ" ধাতুর চারিপ্রকার অর্থ হয় --
বেত্তি বেদ বিদ জ্ঞানে,
বিন্তে বিদ বিচারণে।
বিদ্যতে বিদ সত্তায়াং,
লাভে বিদন্তি বিন্দতে।।

এই চারিপ্রকার অর্থ হইতেছে - জানা, বিচার করা, অবস্থান করা ও লাভ করা। যাহা পাঠ করলে মানুষ সত্য জানিতে পারে, সত্য এবং অসত্যের বিচার করিতে পারে, প্রকৃত বিদ্বান হইতে পারে, প্রকৃত শান্তি এবং আনন্দ লাভ করিতে পারে, তাহার নাম বেদ। বেদ শব্দের দুই অর্থ - মুখ্য ও গৌণ। ইহার মুখ্য অর্থ হল জ্ঞান রাশি, আর গৌণ অর্থ হল শব্দরাশি। বৈদিক জ্ঞান রাশি আত্মপ্রকাশ করে বৈদিক শব্দরাশির সাহায্যে।
বেদের বিভিন্ন নাম - শ্রুতি, ত্রয়ী, নিগম ইত্যাদি। "শ্রু" ধাতুর অর্থ শ্রবণ করা। সৃষ্টির প্রারম্ভ হইতে আজ পর্যন্ত যাহাতে মানুষ সত্যবিদ্যা শ্রবণ করিতে পারে তাহার নাম শ্রুতি। তাছাড়া বেদ প্রথমে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ না হইয়া গুরু শিষ্য পরম্পরা ক্রমে যুগ যুগ ধরিয়া ঋষি সমাজে প্রচলিত ছিল বলে বেদের অপর নাম "শ্রুতি"।
বেদ মন্ত্র সমূহ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ঋক,যজুঃ ও সাম অর্থাৎ পদ্য, গদ্য ও গীতি। যেজন্য বেদকে ত্রয়ী বলা হয়। আর "নিগম" শব্দের অর্থ নিশ্চিতরূপে দমন করা যে স্বাস্থ্য পাঠে সাধক নিশ্চিতরূপে শ্রীভগবানের নিকটে গমন করায় বা লইয়া যায় তাহাই "নিগম"।
প্রতি বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত- মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ। মন্ত্র ভাগের অপর নাম সংহিতা। ইহাতে প্রধানতঃ যাগ-যজ্ঞাদি ক্রিয়ার বিধিনিষে, মন্ত্র ও অর্থবাদ প্রভৃতি বিষয় সমূহ সন্নিবিষ্ট আছে। আর সংহিতা ভাগে যে সকল গূঢ় রহস্য প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত আছে, সেই সকল অপ্রকাশিত অর্থ শ্রুতি নিজেই যে অংশে প্রকাশ করিয়াছেন, সেই অংশের নাম "ব্রাহ্মণ"। ব্রাহ্মন ভাগে প্রধানতঃ স্তোত্র, ইতিবৃত্ত, উপাসনা, ব্রহ্মবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়সমূহ আছে।
ব্রাহ্মণ অংশের অংশবিশেষকে "আরণ্যক" বলে। কারণ বানপ্রস্থাশ্রমে অরণ্যবাসীদের পাঠ্য ছিল। বানপ্রস্থ আশ্রমে অরণ্যবাসীদের পক্ষে যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠান কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং উচ্চতর জ্ঞান লাভের জন্য তাহাদের হৃদয় ব্যাকুল হওয়ায় আত্মোপলব্ধির অভিপ্রায়ে ধ্যান-জপ, প্রার্থনা, উপাসনাদি ছিল তাহাদের মুখ্য কর্ম। যাগযজ্ঞ ছিল গার্হস্থ্যাশ্রমে গৃহীদের প্রধান কর্ম।‌
বেদের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ হইতেছে- "উপনিষদ"।ব্রক্ষ্মবিদ্যাই বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। ব্রক্ষ্মবিদ্যাই বেদের সারবস্তু, সেজন্য উহার নাম "বেদান্ত"। অজ্ঞান নিবৃত্তি ও ব্রক্ষ্মপ্রাপ্তির উপায় বলিয়া বেদান্তের অপর নাম "উপনিষদ"। উপনিষদের অর্থই হল ব্রক্ষ্মবিদ্যা। সংহিতা ও ব্রাক্ষ্মণ- এই উভয় বিভাগেই উপনিষদসমূহ আছে। তদনুযায়ী তাহারা সংহিতোপনিষৎ বা ব্রাহ্মণোপনিষৎ নামে উল্লিখিত হয়ে থাকে।
বেদের এই চারটি ভাগ অর্থাৎ সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ - ইহাদের মধ্যে একটি পারম্পর্য আছে। যেমন প্রথমে সংহিতা, তারপর ব্রাহ্মণ, তারপর আরণ্যক ও সর্বশেষে উপনিষদ্। এইরূপে বেদের অন্তে বা শেষভাগে অবস্থিত হওয়ায় উপনিষদ "বেদান্ত" নামে পরিচিত। অথবা বেদের সার অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ ভাগ বলিয়াই উপনিষদ "বেদান্ত" নামে অভিহিত বস্তুত উপনিষদে ব্রক্ষ্মবিদ্যাই প্রতিপাদিত হইয়াছে।
সমগ্র দেশকে আবার কর্ম কান্ড ও জ্ঞানকাণ্ড এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। তারমধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণ সমূহ মুখ্যত কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত। কারন তারা সাধারণতঃ যজ্ঞাদি কাজেই প্রযুক্ত হয়। আর আরণ্যক ও উপনিষদ - জ্ঞানকান্ডের অন্তর্গত। কারন তাহাদের বিশেষ উদ্দেশ্য হইল- উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যার প্রতিপাদন। কর্মকাণ্ড জীবকে অভ্যুদয় অর্থাৎ ঐচ্ছিক ধনরত্নাদি ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং পরলৌকিক স্বর্গাদি ফল প্রদান করে। কিন্তু জ্ঞানকাণ্ড মানুষের চিত্তশুদ্ধিক্রমে নিঃশ্রেয়স অর্থাৎ মুক্তি-মোক্ষ দান করে। কর্মকান্ড মানুষকে প্রবৃত্তি মার্গ আর জ্ঞানকাণ্ড তাহাকে নিবৃত্তি মার্গে চলার প্রেরণা দান করে।
বেদমন্ত্র সমূহ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়- পদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম "ঋক",গদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম "যজুঃ" এবং গানাত্মক মন্ত্রের নাম "সাম""। সেজন্য আর এক নাম ত্রয়ী।

 courtesy: Shuvankar Mondal
Share:

কাশ্মীর /ত্রিক/অদ্বৈত/শৈব দর্শন

ভারতীয় দার্শনিক তত্ত্ব বিচারের মূল উৎস হল শ্রুতি ও তন্ত্রাগমসমূহ। শ্রুতি অর্থাৎ বেদ উপনিষদ ও আরণ্যক সমূহ হতে প্রাচীনকালে ষড়দর্শনের উদ্ভব হয়েছে।
এই দার্শনিক প্রস্থানের পোষক গ্রন্থগুলির মধ্যে, যুক্তিতর্ক দিয়ে খন্ডন - মন্ডনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপরদিকে তন্ত্রাগম সমূহে, তত্ত্ব বিচার অপেক্ষায় সাধকের আধ্যাত্বিক অনুভূতির সমাবেশ পাওয়া যায়।তন্ত্রাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—শৈব ,শাক্ত ও বৈষ্ণব।

উক্ত তিনটি তন্ত্রাগমের মধ্যে, শৈব দর্শন একটি। মূলত উদ্ভূত শৈব দর্শনকেই কাশ্মীর শৈবদর্শন বা অদ্বৈত শৈব দর্শন বলা হয়। অদ্বৈত শৈব দর্শনের সারকথা হলো দৃশ্যমান এই জগতের স্বরুপ হলো শিব। শিব বা চৈতন্য হতে জগতের উৎপত্তি, চৈতন‍্যে এর স্থিতি এবং চৈতন‍্যে এর লয়। পরম তত্ত্ব বা পরমেশ্বর স্বেচ্ছায় নিজেকে জগতরূপে অভিব‍্যক্ত করেছে। কাশ্মীর দর্শনের মূলে বর্তমান শিব—পরমশিব। দর্শনের বিকাশ এই মূল তত্ত্ব কেন্দ্রিক। পরমশিব বর্ণনার অতীত, তার মহত্ত্ব ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তিনি অনাদি, অনন্ত, সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান। দার্শনিক দার্শনিক শৈব দর্শন এবং শৈব দর্শন এবং শৈব দর্শন এবং অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এদের বিভিন্নতা অনস্বীকার্য।
কাশ্মীর অদ্বৈত দর্শনে যাবতীয় বস্তুই চৈতন্যের প্রকাশ অবশ্য এই বিস্ময়কর বিশ্ব অনুভববেদ‍্য এখানে জগৎসংসারের মূলে চৈতন‍্য। কাশ্মীর শৈব দর্শনএ সাধনার লক্ষ্য হলো, নিজের মধ্যে অবস্থিত অখন্ড শিব সত্তাকে জাগিয়ে তোলা। অর্থাৎ শিবত্বপ্রাপ্তি।
আর সেটা সম্ভব, পরমেশ্বরের অনুগ্রহ কৃত্যের দ্বারা।

(পরম দুঃখের, এত সুন্দর একটা প্র্যাকটিক্যাল দর্শনকে আমরা অবহেলা করি, এর কারণ এটি নব্য দর্শন বলে।
বেশিরভাগ লোক তন্ত্র মানে বোঝে বশীকরণ,মারণ ইত্যাদি ক্রিয়া, মদ, গাঁজা ইত্যাদি সেবন করা। বাস্তবে তারা তন্ত্র দর্শনের আসল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য জানেনা।
তন্ত্রের মধ্যেও একটি শুদ্ধ অদ্বৈত তত্ত্ব লুকিয়ে রয়েছে তারা বুঝতে পারে না। আর না বুঝেই শাস্ত্রটিকে অগ্ৰাহ‍্য করে। কেবলমাত্র সুযোগ্য গুরু এবং শিষ্যের অভাবে আজ তান্ত্রিক সম্প্রদায় লুপ্ত। তাই আমি সকলকে অনুরোধ করবো তন্ত্রাগমের অন্তর্ভুক্ত এই কাশ্মীর শৈব দর্শন কে তারা যেন একটু প্রাধান্য দেয়, এবং জিনিসটিকে বোঝার চেষ্টা করে)।
____________________________________________
 🔱🔱🔱সশ্চিদানন্দরূপ শিবোহম🔱🔱
Courtesy: Pritam Ghosh
Share:

‘বাহ্যপূজা – মূর্তিপূজা প্রথমাবস্থা; কিঞ্চিৎ উন্নত হইলে মানসিক প্রার্থনা পরবর্তী স্তর; কিন্তু ঈশ্বরসাক্ষাৎকারই উচ্চতম অবস্থা।


প্রথমেই বলিয়া রাখি যে, ভারতবর্ষে বহু-ঈশ্বরবাদ নাই। প্রতি দেবালয়ের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া যদি কেহ শ্রবণ করে, তাহা হইলে শুনিতে পাইবে পূজক দেববিগ্রহে ঈশ্বরের সমুদয় গুণ, এমন কি সর্বব্যাপিত্ব পর্যন্ত আরোপ করিতেছে। ইহা বহু-ঈশ্বরবাদ নয়, বা ইহাকে কোন দেব-বিশেষের প্রাধান্যবাদ বলিলেও প্রকৃত ব্যাপার ব্যাখ্যাত হইবে না। গোলাপকে যে-কোন অন্য নামই দাও না কেন, তাহার সুগন্ধ সমানই থাকিবে। সংজ্ঞা বা নাম দিলেই ব্যাখ্যা করা হয় না।… ভাবানুষঙ্গ-নিয়মানুসারে জড়মূর্তি দেখিলে মানসিক ভাববিশেষের উদ্দীপন হয়, বিপরীতক্রমে মনে ভাববিশেষের উদ্দীপন হইলে তদনুরূপ মূর্তিবিশেষও মনে উদিত হয়। এই জন্য হিন্দু উপাসনার সময়ে বাহ্য প্রতীক ব্যবহার করে। সে বলিবে, তাহার উপাস্য দেবতায় মন স্থির করিতে প্রতীক সাহায্য করে। … মন্দির, প্রার্থনাগৃহ, দেববিগ্রহ বা ধর্মশাস্ত্র – সবই মানুষের ধর্মজীবনের প্রাথমিক অবলম্বন ও সহায়ক মাত্র, তাহাকে ক্রমশ অগ্রসর হইতে হইবে।
শাস্ত্র বলিতেছেনঃ ‘বাহ্যপূজা – মূর্তিপূজা প্রথমাবস্থা; কিঞ্চিৎ উন্নত হইলে মানসিক প্রার্থনা পরবর্তী স্তর; কিন্তু ঈশ্বরসাক্ষাৎকারই উচ্চতম অবস্থা।’ (মহানির্বাণতন্ত্র, ৪।১২)
স্বামী বিবেকানন্দ, ‘হিন্দুধর্ম’, শিকাগো বক্তৃতা
=================================
অহিন্দুরা অনেকে বিশ্বাস করেন যে, আমরা হিন্দুরা বহু দেবদেবীর পূজা করি। এই ধারণা সর্বৈব ভুল। আমরা ব্রহ্ম বা এক ঈশ্বরকেই ভিন্ন ভিন্ন নামে ও ভিন্ন ভিন্ন রূপে আরাধনা করি। আসলে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাঁদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য ঈশ্বরের নাম ও রূপভেদ সম্পর্কে স্বতন্ত্র্য কিছু ধারণা পোষণ করেন। এই কারণেই, আজকের হিন্দুসমাজে ঈশ্বরের এত রূপবৈচিত্র্য আমাদের চোখে পড়ে। ইতিহাসের পথ ধরে হিন্দুসমাজে চারটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়েছে–শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব ও স্মার্ত। শৈবরা শিবকে ও বৈষ্ণবরা বিষ্ণুকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর মনে করেন। শাক্তেরা মনে করেন এই মহাবিশ্বে মহাশক্তিই সর্বেসর্বা। স্মার্ত মতটি অনেক উদারপন্থী। তাঁরা মনে করেন, সকল দেবতাই সর্বোচ্চ ঈশ্বর ব্রহ্মের স্বরূপ। তাই তাঁরা দেবতা নির্বাচনের ভারটি ভক্তের উপর ছেড়ে দেন। অবশ্য এও মনে রাখতে হবে যে, স্মার্ত মতটি হিন্দুধর্মে বহুল প্রচলিত হলেও, প্রধান মত নয়। সে যাই হোক, এই মতবৈচিত্র্যের জন্যই হিন্দুরা একে অপরের ধর্মমতের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে থাকেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস যেমন বলেছেন, ‘যত মত তত পথ।’ অর্থাৎ, সকল মতই সেই এক ঈশ্বরের কাছেই পৌঁছানোর এক একটি পথ।

হিন্দুধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল এই যে, আমরা হিন্দুরা ঈশ্বরকে বহুদূরের স্বর্গে বসবাসকারী দেবতা মনে করি না। আমাদের ঈশ্বর বাস করেন আমাদের অন্তরে, আমাদের হৃদয়ে, আমাদের চেতনায়। শুধু তিনি অপেক্ষা করেন, যতক্ষণ না আমরা আমাদের মধ্যে স্থিত ঈশ্বরকে চিনে নিতে পারি। ঈশ্বর যে আমাদের সঙ্গেই থাকেন, এই কথাটি আমাদের আশা ও শক্তি জোগায়। তাই হিন্দু জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সেই এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মকে জানা।

আমরা হিন্দুরা একাধারে মনোথেইস্টিক (একেশ্বরবাদী) ও হেনোথেইস্টিক। আমরা পলিথেইস্টিক বা বহুঈশ্বরবাদী নই। কারণ আমাদের হিন্দুধর্মে সমক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক দেবতার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। হেনোথেইজম্-ই হিন্দু মতবাদটির সঠিক সংজ্ঞা গতে পারে। এই মতবাদের মূল কথাটি হল, অন্যান্য দেবতাদের অস্তিত্ব স্বীকার করেও এক ঈশ্বরের আরাধনা করা। আমরা হিন্দুরা বিশ্বাস করি, এক সর্বব্যাপী ব্রহ্ম এই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শক্তির উৎস। মানুষ সহ সকল জীবের জীবনের মধ্যেই আমরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করি। সকল জীবের মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান ও ঈশ্বর কর্তৃক সকল জীবের প্রাণধারণের এই মতবাদটিকে বলে প্যানেনথেইজম। প্যানথেইজমের থেকে এটি আলাদা। কারণ, প্যানথেইজম বলে প্রাকৃতিক ব্রহ্মাণ্ডখানিই ঈশ্বর এবং তার বেশি কিছু নয়। অন্যান্য ধর্মের রক্ষণশীল ধর্মতাত্ত্বিকগণ মনে করেন, ঈশ্বর জগতের উর্ধ্বে, জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং মানুষের অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধির অগম্য। হিন্দুধর্ম তা মনে করে না। প্যানেনথেইজম একটি সর্বময় ধারণা। এটি বলে, ঈশ্বর জগতের ভিতরে ও বাইরে দুই স্থানেই আছেন। তিনি একাধারে মানুষের চেতনার আয়ত্তাধীন, আবার অগম্যও বটে। এই বৃহত্তর ধারণাটিই হিন্দুর ধারণা।

আমাদের হিন্দুদের বিভিন্ন শাখাসম্প্রদায়ে ব্রহ্মের নানান নাম প্রচলিত রয়েছে। এই নামবৈভিন্ন্যের কারণ সম্প্রদায়গুলির স্বতন্ত্র ধর্মীয় প্রথা ও রীতিনীতি। আর এই নামবৈভিন্ন্যই অহিন্দুদের যাবতীয় ভ্রান্ত ধারণার কারণ। হিন্দুরা পরম সত্যকে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করে, কিন্তু তাই বলে পরম সত্য স্বয়ং বিভিন্ন হয়ে যান না। এই বিভিন্ন নাম থেকে বিভিন্ন রূপের উৎপত্তি; কিন্তু প্রত্যেক রূপই সেই এক এবং অদ্বিতীয় ব্রহ্মের রূপান্তর-মাত্র। হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর অনেক পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। আমরা হিন্দুরা প্রতিটি পথকেই অভ্রান্ত মনে করি। তাই কোনো একটি নির্দিষ্ট পথকে সকলের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী আমরা নই। পথ নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা হিন্দুরা পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করি।

তবে এই বিষয়ে শুধু অহিন্দু নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ঈশ্বর ও দেবতার মধ্যে যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান, তা অনুধাবন করতে পারলেই এই ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়। ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের হিন্দুদের ধারণায় কোনো সংকীর্ণতা নেই। এখানে বলে রাখা ভাল, হিন্দুদের একাংশ নিরাকার ঈশ্বরেরও উপাসনা করেন। অন্যেরা দেবতাদের ব্যক্তিগত দেবতা (ইষ্টদেবতা বা কূলদেবতা) হিসেবে পূজা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ এই প্রসঙ্গে একটি প্রণিধানযোগ্য উক্তি করেছেন, “যে একাগ্র সাধক জানু পাতিয়া দেববিগ্রহের সম্মুখে পূজা করেন, লক্ষ্য কর – তিনি তোমাকে কি বলেন, ‘সূর্য তাঁহাকে প্রকাশ করিতে পারে না; চন্দ্র তারা এবং এই বিদ্যুৎও তাঁহাকে প্রকাশ করিতে পারে না; এই অগ্নি তাঁহাকে কিরূপে প্রকাশ করিবে? ইহারা সকলেই তাঁহার আলোকে প্রকাশিত।’ (কঠ উপনিষদ ২।২।১৫; শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ৬।১৪; মুণ্ডক উপনিষদ ২।২।১০) তিনি কাহারও দেববিগ্রহকে গালি দেন না বা প্রতিমাপূজাকে পাপ বলেন না। তিনি ইহাকে জীবনের এক প্রয়োজনীয় অবস্থা বলিয়া স্বীকার করেন। শিশুর মধ্যেই পূর্ণ মানবের সম্ভাবনা নিহিত রহিয়াছে। বৃদ্ধের পক্ষে শৈশব ও যৌবনকে পাপ বলা কি উচিত হইবে? হিন্দুধর্মে বিগ্রহপূজা যে সকলের অবশ্য কর্তব্য, তাহা নয়। কিন্তু কেহ যদি বিগ্রহের সাহায্যে সহজে নিজের দিব্য ভাব উপলব্ধি করতে পারে, তাহা হইলে কি উহাকে পাপ বলা সঙ্গত?” (‘হিন্দুধর্ম’, শিকাগো বক্তৃতা) বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত এবং সর্বাপেক্ষা ঐশ্বর্যশালী ধর্মমতের এই বৈশিষ্ট্য অনন্য। স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়, ‘বহুত্বের মধ্যে একত্বই প্রকৃতির ব্যবস্থা, হিন্দুগণ এই রহস্য ধরিতে পারিয়াছেন।’ (‘হিন্দুধর্ম’, শিকাগো বক্তৃতা)
সূত্রঃস্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, প্রথম খণ্ড, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা।
হিন্দুইজম টুডে পত্রিকা।

Courtesy:  Amith Pal
Share:

হাতে লাল সুতো বাঁধা হয় কেন?

উত্তরঃ হিন্দুদের মধ্যে হাতে লাল সুতো বাঁধার প্রচলন রয়েছে, রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন অনেক লোকের কবজিতে এক গুছো লাল সুতো বাঁধা থাকে | সাধারণত হিন্দু ধর্মের লোকেরা বিপদতারিনী পূজোর লাল সুতো হাতে বেধে থাকে |
তাদের বিশ্বাস এই অলৌকিক সুতো সমস্ত অমঙ্গল ও বিপদ আপদ থেকে তাদের নিরাপদ রাখবে | বিভিন্ন যজ্ঞ ও পূজো ছাড়াও পুরাণে লাল সুতো ব্যবহারের
আরো কিছু উদাহরণ পাওয়া যায় |
প্রথমতঃ ভক্ত প্রহ্লাদের পুত্র বলিরাজ ব্রহ্মার আশীর্বাদে সর্গ
মর্ত্য ও পাতালের অধিকারী হয়েছিলেন | দেবরাজ ইন্দ্রের সিংহাসন
রক্ষা করতে ভগবান বিষ্ণু বামন রূপে জন্মগ্রহণ করে বলিরাজকে পাতালে
পাঠিয়ে দেন | ভগবান বিষ্ণু বলিরাজকে অমরত্ব দান করেন | আশীর্বাদ স্বরূপ
তিনি তার হাতে বেধে দেন লাল সুতো | তাই ভগবানের আশীর্বাদ
হিসেবে হিন্দুদের মধ্যে হাতে লাল সুতো বাঁধার প্রচলন রয়েছে |
দ্বিতীয়তঃ একসময় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়,অসুরদের পরাক্রম দেখে দেবরাজ ইন্দ্র খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন | স্বামীকে চিন্তিত দেখে স্ত্রী ইন্দ্রাণী তার জন্য প্রার্থনা শুরু করেন | ইন্দ্রাণী তার আধ্যাত্বিক শক্তি একত্রিত করে লাল সুতো দিয়ে একটা মালা তৈরি করেন |
তারপর দেবরাজ ইন্দ্রের মঙ্গল কামনা করে সেই লাল সুতোর মালা তার গলায় বেধে দেন যাতে অসুরেরা তাকে আঘাত করতে না পারে | এরপর দেবতা ও অসুরদের মধ্যে ভয়ংকর যুদ্ধ শুরু হয় | ইন্দ্রের নেতৃত্বে দেবতারা যুদ্ধে জয়
লাভ করেন | তখন থেকেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে মন্ত্রপূত লাল সুতো বাঁধার
প্রচলন হয় |

Courtesy:  Raj Jony
Share:

সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্

ব্রহ্মার রচনা করা প্রজা যখন বৃদ্ধি পাওয়া বন্ধ হল, তখন তিনি পুনরায় মৈথুনী সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। এর আগে ঈশ্বরের থেকে নারীগণ প্রকটিত হয়নি । তাই পিতামহ ততদিন মৈথুনী সৃষ্টি করতে পারেননি । তখন তিনি মনে মনে এমন চিন্তা করলেন, যা নিশ্চিতরূপে তার মনোরথ সিদ্ধির সহায়ক ছিল । তিনি ভাবলেন প্রজাবৃদ্ধির জন্য পরমেশ্বরকেই জিঞ্জাসা করা উচিত; কারণ তাঁর কৃপা ব্যতীত প্রজা-বৃদ্ধি সম্ভব নয়। এই ভেবে বিশ্বাত্মা
ব্রহ্মা তপস্যা করার উদ্যোগ নিলেন। তখন যিনি আদ্য, অনন্তা, লোকভাবিনী, সূক্ষ্মতরা, শুদ্ধা, ভাবগম্যা, মনোহরা, নির্গুণা, নিষ্প্রপঞ্চা, নিষ্কলা, নিত্যা এবং সর্বদা ঈশ্বরের কাছে থাকা তাঁর পরমা শক্তি, তাঁতে যুক্ত ভগবান ত্রিলোচনকে নিজ হৃদয়ে চিন্তা করে কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন। তীব্র তপস্যারত পরমেষ্ঠি ব্রহ্মার প্রতি মহাদেব অল্প-সময়েই সন্তুষ্ট হয়ে উঠলেন । তারপর নিজ অনির্বচনীয় অংশের কোনো এক অদ্ভুত মূর্তিতে আবিষ্ট হয়ে ভগবান অর্ধশরীর নারীর ও অর্ধশরীর ঈশ্বর হয়ে স্বয়ং ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হলেন। সেই সর্বব্যাপী, সব কিছু প্রদানকারী, সদসৎরহিত, সমস্ত উপমাশূন্য, শরনাগত-বৎসল ও সনাতন শিবকে দন্ডবৎ প্রনাম করে ব্রহ্মা দন্ডায়মান হয়ে হাতজোড় করে মহাদেব ও মহাদেবী পার্বতীর স্তুতি করতে লাগলেন।

ব্রহ্মা বললেন -দেব ! মহাদেব ! আপনার জয় হোক। ঈশ্বর ! মহেশ্বর ! আপনার জয় হোক। সর্বগুণ শ্রেষ্ঠ শিব ! আপনার জয় হোক। সমস্ত দেবতাদের প্রভু শংকর ! আপনার জয় হোক। প্রকৃতিরূপিণী কল্যাণীময়ী উমে ! আপনার জয় হোক । প্রকৃতির নায়িকে ! আপনার জয় হোক । প্রকৃতি থেকে দূরে অবস্থিত দেবি ! আপনার জয় হোক । অমোঘ মহামায়া এবং সফল মনোরথযুক্ত দেব ! আপনার জয় হোক , জয় হোক । অমোঘ মহালীলা এবং কখনও ব্যর্থ না হওয়া মহাবলযুক্ত পরমেশ্বর ! আপনার জয় হোক , জয় হোক । বিশ্ব জগন্ময়ে ! আপনার জয় হোক । বিশ্বজগদ্ধাত্রি ! আপনার জয় হোক । সমস্ত সংসারের সখী-সহায়িকে ! আপনার জয় হোক । প্রভো ! আপনার ঐশ্বর্য এবং ধাম উভয়ই সনাতন । আপনার জয় হোক , জয় হোক। আপনার রূপ এবং অনুচরবর্গও আপনার ন্যায সনাতন । আপনার জয় হোক, জয় হোক । আপনি তিনরূপের দ্বারা ত্রিলোকের নির্মাণ, পালন ও সংহারকারী ! আপনার জয় হোক, জয় হোক। ত্রিলোক অথবা আত্মা, অন্তরাত্মা ও পরমাত্মা-তিন আত্মার নায়িকে ! আপনার জয় হোক । প্রভো ! জগতের কারণ তত্ত্বাদির প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার আপনারই কৃপাদৃষ্টির অধীন, আপনার জয় হোক। প্রলয়কালে আপনার উপেক্ষাযুক্ত কটাক্ষপূর্ণ দৃষ্টিতে যে ভয়ানক অগ্নি প্রকটিত হয়, তার দ্বারা সমস্ত ভৌতিক জগৎ ভস্ম হয়ে যায়; আপনার জয় হোক।

দেবি! আপনার স্বরূপের সম্যক্ ঞ্জান দেবতাদির পক্ষেও অসম্ভব। আপনার জয় হোক। আপনি আত্ম-তত্ত্বের সূক্ষ্ম ঞ্জান দ্বারা প্রকাশিত হন, আপনার জয় হোক। ঈশ্বরি! আপনি স্থূল আত্মশক্তির সাহায্যে চরাচর জগৎ ব্যাপ্ত করেছেন। আপনার জয় হোক, জয় হোক। প্রভো! বিশ্বের তত্ত্ব সমুদয় এক ও অনেকরূপে আপনার আধারেই
স্থিত, আপনার জয় হোক। আপনার শ্রেষ্ঠ সেবকগণ বড় বড় অসুরদের মস্তকে চরণ রাখেন। আপনার জয় হোক। শরণাগতদের রক্ষা করতে অত্যন্ত সমর্থ পরমেশ্বরি ! আপনার জয় হোক। সংসাররূপ বিষবৃক্ষের উন্খিত হওয়া অঙ্কুর বিনাশকারী উমে ! আপনার জয় হোক। প্রাদেশিক ঐশ্বর্য, বীর্য ও শৌর্য বিস্তারকারী দেব ! আপনার জয় হোক। বিশ্বের অতীত বিদ্যমান দেব ! আপনি নিজ বৈভব দ্বারা অন্যের বৈভব তিরস্কৃত করেছেন, আপনার জয় হোক। পঞ্চবিধ মোক্ষরূপ পুরুষার্থ প্রয়োগ দ্বারা পরমানন্দময় অমৃত প্রাপ্তিকারী পরমেশ্বর ! আপনার জয় হোক ! পঞ্চবিধ পুরুষার্থের বিঞ্জানরূপ অমৃত পরিপূর্ণ স্তোত্রস্বরূপিণী পরমেশ্বরি ! আপনার জয় হোক। অত্যন্ত ভয়ানক সংসাররূপ মহারোগ দূরাকারী বৈদ্য শিরোমণি ! আপনার জয় হোক। অনাদি কর্মফল এবং অঞ্জানরূপ অন্ধকার-রাশি দূরাকারিণী চন্দ্রিকারূপিণী শিবে ! আপনার জয় হোক । ত্রিপুর বিনাশ করার জন্য কালাগ্নিস্বরূপ মহাদেব ! আপনার জয় হোক। ত্রিপুরভৈরবি ! আপনার জয় হোক ! ত্রিগুণমর্দনকারিণী মহেশ্বরি ! আপনার জয় হোক। আদি সর্বঞ্জ ! আপনার জয় হোক। সকলকে ঞ্জানদানকারী দেবি ! আপনার জয় হোক। প্রচুর দিব্য অঙ্গে সুশোভিত দেবি ! আপনার জয় হোক। মনোবাঞ্চিত বস্তপ্রদানকারী দেবি ! আপনার জয় হোক। ভগবান ! দেব ! কোথায় আপনার উৎকৃষ্ট ধাম, আর কোথায় আমার তুচ্ছ বাণী, তবুও ভক্তিভাবে প্রলাপ করতে থাকা এই সেবককে, আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।

এইভাবে সুন্দর বচনে ভগবান রুদ্র এবং দেবীকে একসঙ্গে গুনগান করে চতুর্মুখ ব্রহ্মা রুদ্র
এবং রুদ্রাণীকে বারংবার নমস্কার করেন। ব্রহ্মার পাঠ করা এই পবিত্র এবং উত্তম অর্ধনারীশ্বর স্তোত্র শিব ও পার্বতীর হর্ষ-বৃদ্ধিকারী । যিনি ভক্তিপূর্বক যে কোনও গুরুর শিক্ষায় এই স্তোত্র পাঠ করেন, তিনি শিব ও পার্বতীকে প্রসন্ন করায় নিজ অভীষ্ট ফল প্রাপ্ত করেন । যিনি সমস্ত ভুবনের প্রাণীদের উৎপন্নকারী, যাঁর বিগ্রহ জন্ম-মৃত্যু রহিত এবং যিনি শ্রেষ্ঠ নর ও সুন্দরী নারীর রূপে একই শরীর ধারণ করে স্থিত, সেই কল্যাণকারী ভগবান শিব ও শিবাকে আমি প্রনাম করি ।

((( অবশিষ্ট অংশ নিয়ে আবার হাজির হব )))

হর হর মহাদেব

Courtesy :  Sujit Das
Share:

বিভূতি যোগ - পরমব্রহ্মের ঐশ্বর্য বর্ণনা হয়েছে এই অধ্যায়ে।

পাঠকগন গীতার দশম অধ্যায়ে এসেই যেন দিশেহারা হয়ে যায়!
শ্রোতাগন ‘গীতা’ শব্দ শুনলেই আর কোন প্রশ্ন উৎপন্ন করতে পারেন না। এই অধ্যায়টি বিভূতি যোগ। পরমব্রহ্মের ঐশ্বর্য বর্ণনা হয়েছে এই অধ্যায়ে।
যাইহোক, গীতার ১০/২০ শ্লোকটি ভগবান বলছেন... ‘‘অর্জুন! আমিই সর্বভূতের হৃদয়ে অবস্থিত সকলের আত্মা এবং সমস্ত ভূতের আদি, মধ্য, এবং অন্ত আমিই। অর্থাৎ জন্ম, মৃত্যু এবং জীবনও আমি।’’
এবার এই শ্লোকের পরের শ্লোকটি দেখুন,
‘‘অদিতির দ্বাদশ পুত্রমধ্যে আমি বিষ্ণু এবং জ্যোতিসমূহের মধ্য আমি প্রকাশমান সূর্য। বায়ুর মধ্য আমি মরীচি নামক বায়ু এবং আমি নক্ষত্রসমূহের মধ্যে চন্দ্র।’’ (১০/২১)।।

প্রশ্ন হলো, ১০/২০ শ্লোকে ভগবান বলেই দিয়েছেন, আমি সমস্ত ভূতের আদি, মধ্য তথা অন্তু। অর্থাৎ সর্ব কিছুই উনি, সর্বভূতেষু। তাহলে ১০/২১ শ্লোকে এসে পুনরায় কেন আলাদা আলাদা ভাবে বর্ণনা শুরু করলেন ?
শুধু ১০/২১ শ্লোকেই নয়, ১০/২১ থেকে ১০/৩৮ শ্লোক পর্যন্তই ভগবান একই ভাবে বলতে লাগলেন....
বেদের মধ্য আমি সামবেদ,
দেবগনের মধ্য আমি ইন্দ্র,
একদশ রুদ্রের মধ্য আমি শঙ্কর,
যক্ষ ও রাক্ষসের মধ্য আমি কুবের,
অষ্টবসুর মধ্য আমি অগ্নি,
পর্বতের মধ্য আমি সুমেরু,
পুরোহিত গনের মধ্য আমি বৃহস্পতি,
সেনাপতি মধ্য আমি কার্তিকেয়,
বৃক্ষের মধ্য আমি অশ্বত্থ,
অশ্বগনের মধ্য আমি উচ্চৈঃশ্রবাঃ,
হস্তিগনের মধ্য আমি ঐরাবত,
মনুষ্যগণের মধ্য আমি রাজা,
গাভীদের মধ্য আমি কামধেনু.......................... ইত্যদি ইত্যাদি।
এখানে ছোট একটা প্রশ্ন, সবকিছুর মধ্য যদি উনি কেবল ভালো গুলো হয়ে থাকেন তাহলে আমরা কি নদীর জলে ভেসে আসছি ?
যেমন ভগবান বললেন, আমি মনুষ্যগনের মধ্য রাজা।
তাহলে যারা প্রজা তাদের মাঝে কি পরমেশ্বরের অংশ নেই ? কিংবা কামধেনু ছাড়া অন্যসকল গাভীদের মাঝে কি জীবাত্মা নেই ?
তাহলে এই গুলো বলে ভগবান আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটিই মুখ্য। কারণ, আমরা জানি গীতায় ভগবান একই সংলাপ দুইবার বলেননি। যখন উনি প্রথমেই বললেন
‘‘আমি সর্বভূতেষু’’ তখন এই ভাবে খণ্ড খণ্ড করে পুণরায় বর্ণনা করে সকলের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করার কি প্রয়োজনীয়তা ছিল ?

কিছু গীতা অনুধাবন করে আমি যা পাইলাম তা হলো, আপেক্ষিক ভাবে আমরা এখানে যা বুঝি আসলে ভগবান তা বলেন নাই! আর অর্জুনও আমাদের মত উপলব্ধি করেনি। উনি ভগবানের বর্ণনা সঠিক রপ্ত করতে পেরেছিলেন।
চলুন দেখাযাক ভগবান কি বুঝাতে চাইছেন....

একাদশ রুদ্রের মধ্য শঙ্কর। অর্থাৎ, (শঙ্ক অরঃ স শঙ্কর) সমস্ত শঙ্কা থেকে আমি মুক্ত।
পর্বতের মধ্য সুমেরু। অর্থাৎ, সমস্ত শুভের মিলন। এটিই সর্বোপরি শৃঙ্গ। মূলত এই সমস্তই যোগ-সাধনার প্রতীক, যৌগিক শব্দ।
পুরোহিতগনের মধ্য বৃহস্পতি। অর্থাৎ, যার থেকে দৈবী সম্পদের সঞ্চার হয় তিনিই বৃহস্পতি।
সেনাপতি মধ্য আমি কার্তিকেয়। অর্থাৎ, যার আচরণ করলে চরাচরের সংহার, প্রলয় এবং ইষ্ট লাভ হয়।
সিদ্ধপুরুষ মধ্য কপিল। অর্থাৎ, যখন একাগ্র হওয়া সম্ভব হয় সেই সময় তিনিই কপিল।
অশ্বগণের মধ্য উচ্চৈঃশ্রবাঃ। অর্থাৎ, গতীর প্রতীক। আত্মতত্ত্ব গ্রহণ করার জন্য মন যখন গতিময় হয় তখন তিনিই এখানে উচ্চৈঃশ্রবাঃ।
মনুষ্য মধ্য রাজা। অর্থাৎ, মহাপুরুষই রাজা।
গাভী মধ্য কামধেনু। অর্থাৎ, যে দুধের পরিবর্তে মনের মত ব্যঞ্জন পরিবেশন করেন।
নাগ মধ্য শেষনাগ। এখানে এই শেষ নাগ এটি কোন সাপ নয়। ভাগবতে এর রুপের বর্ণনা করা হয়েছে যে, পৃথিবী থেকে ত্রিশ হাজার যোজন দূরে পরমাত্মার শক্তি বিদ্যমান। যার অগ্রভাগে এই পৃথিবী সরষের দানার মত ভারশুণ্য অবস্থাতে রয়েছে। সে যুগে যোজনের মানদণ্ড যাই ছিল, তবুও এই দূরত্ব পর্যাপ্ত। মূলত এটা আকর্ষণ - শক্তির চিত্রণ। বৈজ্ঞানিকগন ইহাকে ইথার বলে স্বিকার করেছেন! গ্রহ উপগ্রহ যাবতীয় জ্যেতিষ্ক এই শক্তির উপর নির্ভর করেই আছে।
দৈত্য মধ্য প্রহ্লাদ। অর্থাৎ, পরের জন্য আহ্লাদ। মূলত প্রেমেই প্রহ্লাদ।
গণনাকারী মধ্য সময়। অর্থাৎ, এক, দুই, তিন বা দিন, পক্ষ, মাস ইত্যাদি সময় নয়। পরমব্রহ্ম চিন্তনে যে সময় ব্যতীত হয়।
নারী মধ্য আমি যশ, শক্তি, বাকপটুতা, স্মৃতি, মেধা। অর্থাৎ বুদ্ধি, ধৈর্য এবং ক্ষমা।
ছন্দ সমূহ মধ্য গায়ত্রী। অর্থাৎ, যা পাঠ করলে মুক্তি লাভ হয়।
(ওঁ ভূর্ভূবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভার্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ)।
আমি বৃষ্ণিবংশীয় বাসুদেব। অর্থাৎ, সর্বত্র যিনি বাস করেন (পরমাত্মা)।
পাণ্ডব মধ্য আমি ধনঞ্জয়। অর্থাৎ, পুণ্যই পাণ্ডু। পুণ্যদ্বারা প্রেরিত হয়ে আত্মিক সম্পত্তি যিনি সংগ্রহ করেন তিনিই ধনঞ্জয় (এখানে ভগবান অর্জুনকে কিছু বলেন নি)।
‘‘সর্বভূতের উৎপত্তির কারণ আমি’’ (১০/৩৯)।
অর্থাৎ, সকল কিছুই পরমাত্মার অংশ।
এখানে ‘খারাপের মধ্য আমি ভালো’ এই রুপ কিছু বলা হয়নি।

প্রণিপাত। জয় গীতা।।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ স্বামী অড়গড়ানন্দ।

Courtesy :  Tusar Sarker
Share:

ভগবান শিবের ১০৮ নাম

১- ॐ ভোলেনাথ নমঃ
২- ॐ কৈলাশ পতি নমঃ
৩- ॐ ভূতনাথ নমঃ
৪- ॐ নন্দরাজ নমঃ
৫- ॐ নন্দি বাহন নমঃ
 ৬- ॐ জ্যোতিলিঙ্গ নমঃ
 ৭- ॐ মহাকাল নমঃ
৮- ॐ রুদ্রনাথ নমঃ
৯- ॐ ভীমশংকর নমঃ
১০-ॐ নটরাজ নমঃ
১১-ॐ প্রলয়ঙ্কর নমঃ
১২-ॐ চন্দ্রমোলী ননমঃ
১৩-ॐ ডম্বরুধারী নমঃ
১৪-ॐ চন্দ্রধারী নমঃ
১৫-ॐ মল্লিকার্জুন নমঃ
১৬-ॐ ভীমেশ্বর নমঃ
১৭-ॐ বিষধারী নমঃ
১৮-ॐ বমঃ ভোলে নমঃ
১৯-ॐ ওঙ্গারস্বামী নমঃ
২০-ॐ ওঙ্গারেশ্বর নমঃ
২১-ॐ শংকর ত্রিশুলধারী নমঃ
২২-ॐ বিশ্বনাথ নমঃ
২৩-ॐ অনাদিদেব নমঃ
২৪-ॐ উমাপতি নমঃ
২৫-ॐ গৌরীপতি নমঃ
২৬-ॐ গণপিতা নমঃ
২৭-ॐ ভোলে বাবা নমঃ
২৮-ॐ শিবজী নমঃ
২৯-ॐ শম্ভু নমঃ
৩০-ॐ নীলকণ্ঠ নমঃ
৩১-ॐ মহাকালেশ্বর নমঃ
৩২-ॐ ত্রিপুরারি নমঃ
৩৩-ॐ ত্রিলোকনাথ নমঃ
৩৪-ॐ ত্রিনেত্রধারী নমঃ
৩৫-ॐ বর্ফানী বাবা নমঃ
৩৬-ॐ জগতপিতা নমঃ
৩৭-ॐ মৃতুঞ্জয় নমঃ
৩৮-ॐ নাগধারী নমঃ
৩৯- ॐ রামেশ্বর নমঃ
৪০-ॐ লঙ্গেশ্বর নমঃ
৪১-ॐ অমরনাথ নমঃ
৪২-ॐ কেদারনাথ নমঃ
৪৩-ॐ মঙ্গলেশ্বর নমঃ
৪৪-ॐ অর্ধনারীশ্বর নমঃ
৪৫-ॐ নাগার্জুন নমঃ
৪৬-ॐ জটাধারী নমঃ
৪৭-ॐ নীলেশ্বর নমঃ
৪৮-ॐ গলসর্পমালা নমঃ
৪৯- ॐ দীনানাথ নমঃ
৫০-ॐ সোমনাথ নমঃ
৫১-ॐ যোগী নমঃ
৫২-ॐ ভন্ডারী ববাবা নমঃ
৫৩-ॐ বমঃ লহরি নমঃ
৫৪-ॐ গৌরী শংকর নমঃ
৫৫-ॐ শিবাকান্ত নমঃ
৫৬-ॐ মহেশ্বরায় নমঃ
৫৭-ॐ মহেশ নমঃ
৫৮-ॐ আলোকনাথ নমঃ
৫৯-ॐ আদিনাথ নমঃ
৬০-ॐ দেবদেবেশ্বর নমঃ
৬১-ॐ প্রাণনাথ নমঃ
৬২-ॐ শিবম নমঃ
৬৩-ॐ মাহাদানী নমঃ
৬৪-ॐ শিবদানী নমঃ
৬৫-ॐ সংকটহারী নমঃ
৬৬-ॐ মহেশ্বর নমঃ
৬৭-ॐ রুদ্রমালাধারী নমঃ
৬৮-ॐ জগপালনকর্তা নমঃ
৬৯-ॐ পশুপতি নমঃ
৭০-ॐ সংগমেশ্বর নমঃ
৭১-ॐ দক্ষেশ্বর নমঃ
৭২-ॐ ধ্যানেশ্বর নমঃ
৭৩-ॐ মণিমহেশ নমঃ
৭৪-ॐ অনাদি নমঃ
৭৫-ॐ অমর নমঃ
৭৬-ॐ আশুতোষ মহারাজ নমঃ
৭৭-ॐ বিলবকেশ্বর নমঃ
৭৮-ॐ অচলেশ্বর নমঃ
৭৯-ॐ অভয়ঙ্গর নমঃ
৮০-ॐ পাতালেশ্বর নমঃ
৮১-ॐ ধুধেশ্বর নমঃ
৮২-ॐ সর্পধারী নমঃ
৮৩-ॐ ত্রিলোকিনরেশ নমঃ
৮৪-ॐ হঠ যোগী নমঃ
৮৫-ॐ বিশ্লেশ্বর নমঃ
৮৬- ॐ নাগাধিরাজ নমঃ
৮৭- ॐ সর্বেশ্বর নমঃ
৮৮-ॐ উমাকান্ত নমঃ
৮৯-ॐ বাবা চন্দ্রেশ্বর নমঃ
৯০-ॐ ত্রিকালদর্শী নমঃ
৯১-ॐ ত্রিলোকী স্বামী নমঃ
৯২-ॐ মহাদেব নমঃ
৯৩-ॐ গড়শংকর নমঃ
৯৪-ॐ মুক্তেশ্বর নমঃ
৯৫-ॐ নটেশ্বর নমঃ
৯৬-ॐ গিরিজাপতি নমঃ
৯৭- ॐ ভদ্রেশ্বর নমঃ
৯৮-ॐ ত্রিপুনাশক নমঃ
৯৯-ॐ নির্জেশ্বর নমঃ
১০০ -ॐ কিরাতেশ্বর নমঃ
১০১-ॐ জাগেশ্বর নমঃ
১০২-ॐ অবধুতপতি নমঃ
১০৩-ॐ ভীলপতি নমঃ
১০৪-ॐ জিতনাথ নমঃ
১০৫-ॐ বৃষেশ্বর নমঃ
১০৬-ॐ ভূতেশ্বর নমঃ
১০৭-ॐ বৈজুনাথ নমঃ
১০৮-ॐ নাগেশ্বর নমঃ
Posted By- KSS (Facebook.com/কৃষ্ণ সখা সংঘ)
Share:

জয়ন্তী শক্তিপীঠ ( দ্বিতীয় পর্ব )

দেবীর মন্দিরের বলতে জানা যায়- চারকোণা অগভীর গর্তের মধ্যে একটি চৌকো পাথরের মধ্যে দেবীর পীঠ। অনেকের মতে দেবী জয়ন্তী তাঁর ভৈরব ক্রমদীশ্বরের সাথে এই কুণ্ডে বিরাজ করেন । মন্দিরের অনতিদূরে আর একটি কুণ্ড আছে। এখানে জল অল্প হলেও স্বচ্ছ। এই জল দিয়ে দেবীর পূজো হয় । মন্দিরের থেকে অল্প দূরে আর একটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়। সেখানকার মন্দির জয়ন্তীর রাজা বানান । প্রথমে স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্থানীয় আদিবাসী মেয়েরা খড় বাঁশের মন্দির নির্মাণ করে ভগবান শিবের পূজা করতো। রাজা এখানে মন্দির নির্মাণ করেন । “অসমের ইতিহাসের” রচয়িতা জৈনেক ব্রিটিশ সাহেব তাঁর লেখনীতে জানিয়েছেন- জয়ন্তী পীঠ জয়ন্তীয়া পরগণার ফাজলপুরে অবস্থিত । এখানে দেবীর বাম চরণের নিম্নাংশ পড়েছিল ।

এমন শোনা যায় শ্রীহট্টের এই মন্দিরে জয়ন্তী রাজা শারদীয়া নবমীর দিন নরবলি দ্বারা মায়ের পূজো করতেন । ১৮৩২ সালে এই রাজ্যের শেষ রাজা রাজেন্দ্র সিংহ অসমের নঁগাও থেকে এক মানুষকে এনে নরবলি দিলে ব্রিটিশ সরকারের কাছে খবর যায় । তৎকালীন বড়লাট এতে ক্রুদ্ধ হয়ে রাজ্য দখল করে জয়ন্তীকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । সেই থেকে মন্দিরে নরবলি উঠে যায় । তবে ঘাট বলি ( পশু বলি) হয় । প্রথম পর্বে বলেছিলাম এই পীঠের অবস্থান নিয়ে ভিন্ন মত আছে । হাওড়ার আমতায় অনেকে এই পীঠ এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার সংলগ্ন ভূটান পাহারে এই পীঠ অবস্থিত বলে মানা হয় । ভারত পর্যটক ভূপতিরঞ্জণ দাস তাঁর রচনাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে রাজাভাতখাওয়া জঙ্গলের কাছে ভূটান পর্বতে এই পীঠ বলে ধরেন । জ্ঞানার্ণব তন্ত্র ও বিশ্বসার তন্ত্রে এই স্থানের উল্লেখ আছে । রাজাভাতখাওয়া স্টেশনে নেমে ১৬ কিমি দূরে জয়ন্তী স্টেশন । সেখানে থেকে হাটা পথে মাইল পাঁচেক গেলে জয়ন্তী। পাশ দিয়ে একটি ছোট্ট নদী বয়ে গেছে । অরন্য এখানে নিবির । হাতী, হরিণ, বিষাক্ত সাপ এমনকি কপালে থাকলে মায়ের বাহন বাঘকেও দেখা যেতে পারে । এই পথ খুব দুর্গম । ভূটান বাসীদের কাছে সহজ। কারন তারা পাহার দিয়ে আসেন। ভূটানী রাই বেশী পূজো দেন এখানে ।

পাহাড়ে তিনটি গুহা । খুব সরু প্রবেশ পথ । এখানে অল্প পাহাড়ে উঠলে তিনটি গুহা দেখা যায় । একটি হল মহাকাল ভৈরবের গুহা। একটি জয়ন্তী রূপী মহাকালী মায়ের গুহা। অপর একটি গুহাতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ দেখা যায় । এই মহাকালী হল একান্ন পীঠের দেবী জয়ন্তী । গুহাতে অনেক প্রাকৃতিক ভাবে নির্মিত লিঙ্গ দেখা যায় । পুরোহিত এখানে পূজা করে সন্ধ্যার আগে চলে যান । কারন এই স্থান খুব দুর্গম । যানবাহন খুব একটা নেই । পাহাড়ের মধ্যে জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশ – সন্ধ্যার পর নিস্তব্ধ হয়ে যায় । মহাকালীর গুহাতে প্রাকৃতিক ভাবে নির্মিত শিলাঝুরির মহাকালী বিগ্রহ দেখা যায় । ইদানীং ভারতীয় সাধু সন্ন্যাসী রা এখানে এসে যাগ যজ্ঞ পূজা করেন । কারন বাংলাদেশে যাবার ভিসা সহজে মেলে না। আর বাংলাদেশে হিন্দু দের উপর যে আক্রমণ ও উৎপাত শুরু হয়েছে তাতে সাধু সন্ন্যাসী গন ওখানে গিয়ে নিজেদের বাঁচাবেন নাকি মায়ের সাধনা করবেন । এমন কোনো দিন নেই যেদিন হিন্দু নির্যাতনের খবড় পাওয়া যায় না । তাই সাধু সন্ন্যাসী গন কিছু তন্ত্র সমর্থিত এই পশ্চিমবঙ্গের জয়ন্তী পীঠে এসে সাধনা করেন ।

( চলবে )

Courtesy by:  Sajal Chowdhury Manik
Share:

জাতি বর্ণ ভেদ নিয়ে কিছু কথা

ব্রাক্ষ্মন কে?
ঋগবেদ ৭.১০৩.৮
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস, সৎ, নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে ব্রাক্ষ্মণ
-----------------------
ক্ষত্রিয় কে?
ঋগ্বেদ ১০.৬৬.৮
দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সৎ কর্ম দ্বারা শুদ্ধধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস, ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ণ ,বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।
------------------------
বৈশ্য কে?
অথর্ববেদ ৩.১৫.১
দক্ষ ব্যবসায়ী, দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী।
-------------------------
শূদ্র কে?
ঋগ্বেদ ১০.৯৪.১১
যে অদম্য,পরিশ্রমী, অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত ­ কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।


(১) সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন।

(২) প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন।

(৩) ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)

(৪) রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভাগবত অনুযায়ী।

(৫) হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)

(৬) শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১) এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।

(৭) মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।

(৮) রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যেরঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(৯) বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।

(১০) বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।

“শূদ্র” শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতে অনুনোমোদিত, অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত।

বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতে বোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্ – যজুর্বেদ ৩০.৫) একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের ঘোষনা দিয়েছে মানব সভ্যতার কাঠামো হিসেবে। এজন্যেই পবিত্র বেদ ঘোষনা করেছে সাম্যের বানী-

অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায় যুবা পিতা স্বপা রুদ্র এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥
(ঋগবেদ ৫.৬০.৫)

© সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্ন ও সমাধান
Share:

আপনি কি হতাশ ? তাহলে একটু সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন মহারাজকে তার যৌবনে শ্রীমদ্ভাগবত গীতার তত্ত্বকথা দান করেছিলেন। অর্জুন মহারাজের বৃদ্ধ বয়সে নয়। অনেকে বলেন বৃদ্ধ বয়সে গীতা পড়ার কথা। আচ্ছা বলুনতো গীতা যদি বৃদ্ধ বয়সের জন্য অথবা শুধুমাত্র পূন্য অর্জনের জন্য হতে তাহলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় বলার কি প্রয়োজন ছিল?

ভগবান কিন্তু গীতার তত্ত্বকথা তখনই বলেছিলেন, যখন অর্জুন মহারাজ যুবক ছিলেন এবং নিজের লক্ষ্য নির্ধারনে দ্বিধায় ভুগছিলেন। যখন তিনি হতাশায় তার কর্ম ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, তখনই প্রভু তাকে সঠিক পথ দেখিয়েছে গীতার জ্ঞানের মাধ্যমে।


তাই গীতা পড়ার চেষ্টা করুন নিয়মিত। এই গ্রন্থের মত আর কোন শ্রেষ্ট মোটিভেশনাল গ্রন্থ হতে পারে না যা জীবনে পরিবর্তন এনে দিতে পারে। জীবনের সকল ব্যর্থতা কে দূরে ফেলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরনে টনিকের মতো কাজ করবে এই গ্রন্থ। তবে হ্যাঁ সেটা অবশ্যই আত্মস্থ করতে হবে এবং জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। শুধুু জ্ঞান অর্জন করে তা যদি প্রয়োগই করা না যায় তবে সে জ্ঞান অর্থহীন। হয়তো পূন্য পাবেন কিন্তু জড়জগতে তা অর্থহীন।

টাকা পয়সা একজন চোর ও আয় করে আবার একজন শিক্ষক ও আয় করে। কিন্তু দুটোর সম্মান যেমন এক নয় তেমনি জীবনে শুধু টাকা পয়সাই সব নয়। কতটা সৎ থেকে আয় করে তা সহমর্মিতার সহিত সমবন্টন করা যায় তার মধ্যেই ত্যাগ ও সুখ বিদ্যমান থাকে। আয়ের কিছু অংশ দিয়ে চেষ্টা করুন সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের সাহায্য করার। আপনার সামান্য সাহায্য হয়তো তাদের জন্য বিরাট কিছু। মনে রাখবেন ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।

জীবনটা খেয়ে দেয়ে আয়েশ করার জন্য নয়। তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, জীবনভর এতো সংগ্রাম করে যেতেন না। আমরা ধর্মকে শুধু পূণ্য অর্জনের জন্যই ভাবি কিন্তু তা নিজ জীবনে প্রয়োগ কখনও করি না। লাল সালুতে মুড়িয়ে ধর্ম গ্রন্থকে পূণ্য অর্জনের জন্য রেখে দিয়েছি বলে আমাদের সনাতনজাতীর ভাগ্য ও আটকে গেছে। নিজ ধর্মকে জানার চেষ্টা করুন।

আসুন নিয়মিত ধর্মীয় গ্রন্থগুলো পড়ি এবং তা নিজ জীবনে প্রয়োগ করি। বর্ণপ্রথা ও উচু নিচু ভুলে পরষ্পরকে সহযোগীতার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।

ধন্যবাদ। ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন।
জয় শ্রীকৃষ্ণ।।
© অমিত সরকার
Share:

স্বধর্ম ত্যাগ করলে কি হয় ?

২৮ টি নরকের মধ্যে অন্যতম ভয়ংকরী নরক হলো" অসিপত্রবন"।

যে ব্যক্তিস্বধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম বা পরের ধর্ম গ্রহন করেন তাহারা মৃত্যুর পর এই নরকে পতিত হয়। যমদূত গন অতি গরম তাপের কীটের জলে তাকে ফেলিয়ে তার দেহে কষাঘাত করতে থাকে,তখন সে সহ্য না করতে পেরে ছোটাছুটি করতে থাকে, তখন অতি ধারালো তালবনের অসিপত্র দ্বারা তার দেহ কেঁটে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন সে চিৎকার করে বলে" আমি হত হলাম, আমাকে ছেড়ে দাও "। বরং যমদূতগন না ছেড়ে অবিরাম তাকে অসহ্য যন্ত্রণা দিতে থাকে।এই ভাবে মৃত্যুর পর তারা অনেক অনেক বছর এই ভয়ংকরী নরকে কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করে।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন-
" ওঁ শ্রেয়াস্ম্বর্মো বিগুনোঃ পরা ধর্মা
স্বপুঠিতাৎ স্ব ধর্মে নিধনং শ্রেয়ং
পরো ধর্মো ভয়াবহ।''

শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে ৩/৩৫ স্বধর্মে যদি দোষ থাকে তাও পরো ধর্ম হতে ভালো। স্বধর্মে সাধনে যদি মৃত্যু হয় তাও মঙ্গলজনক। বর্তমানে কিছু ছেলে মেয়েরা
লোভে,সামান্য সুখের জন্য নিজের ধর্ম পরিত্যাগ করেন,কিন্তুু তারা ভাবেনা যে কি মহা অন্যায় তারা করছে। এবং একাল ও পরকাল সারা জীবন কষ্ট ভোগ করতে হয়।
Share:

০১ এপ্রিল ২০১৮

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা দর্শন

বলা হয়, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী। এটি মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে সংক্ষেপে ভগবদ্গীতা বা শ্রীগীতা বা আরো সংক্ষেপে গীতা বলা হয়। ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের সমরাঙ্গনে কৌরবসৈন্য ও পাণ্ডবসৈন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধার্থে সজ্জিত হলে, যুদ্ধে প্রতিপক্ষে অবস্থানকারী আত্মীয়বর্গকে হত্যা করতে হবে ভেবে অন্যতম পাণ্ডব সেনাধ্যক্ষ ধনুর্ধর অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আত্মীয়হত্যা অসঙ্গত বিবেচনা করে ক্ষণিক বৈরাগ্যের মোহাক্রান্ত অর্জুন যুদ্ধে নিবৃত্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁর রথের সারথিরূপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে বিশদ তত্ত্বসমৃদ্ধ উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে অর্জুনের মোহ দূর করে স্বকর্মে প্রবৃত্ত করেছিলেন, মুখ্যত তা-ই ভগবদ্গীতা।

গীতার গুরুত্ব বোঝাতে গীতামাহাত্ম্যে বলা হয়েছে-
‘সর্ব্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ’।।
অর্থাৎ : সমস্ত উপনিষদ গাভী, শ্রীকৃষ্ণ দোহনকর্তা, অর্জুন বৎস ও সুধীগণ ভোক্তা, গীতামৃত উপাদেয় দুগ্ধ।
এদ্বারা এটাই প্রতিপন্ন করা হচ্ছে যে, ভগবদ্গীতা উপনিষদের সারগ্রন্থ মাত্র। এছাড়াও ভাগবতের বরাহপুরাণোক্ত দীর্ঘ গীতামাহাত্ম্যের একটি শ্লোকে ভগবান বিষ্ণুর উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে-
‘গীতাশ্রয়েহহং তিষ্ঠামি গীতা মে চোত্তমং গৃহম্’।
গীতাজ্ঞানমুপাশ্রিত্য ত্রীন্ লোকান্ পালয়াম্যহম্’।।
অর্থাৎ : আমি গীতার আশ্রয়ে অবস্থান করি এবং গীতা আমার উত্তম গৃহ। গীতাজ্ঞান আশ্রয় করে আমি ত্রিলোক পালন করি।
গীতার এ গুরুত্ব বিবেচনা করেই বেদান্তশাস্ত্রে গীতাকে প্রাচীন বারোটি উপনিষদের সমশ্রেণীর কাতারে ত্রয়োদশ উপনিষদ বলেও গণ্য করা হয়। বেদের মতো গীতা সব সম্প্রদায়েরই মান্য। এজন্যেই পরবর্তীকালের শঙ্করাচার্য, রামানুজ, শ্রীধরস্বামী, মাধবাচার্য, বলদেব প্রমুখ শ্রেষ্ঠ আচার্যরা সকলেই গীতার জ্ঞানকে শিরোধার্য করেছেন। তাঁরা নিজ নিজ উপসম্প্রদায়ের মতের পরিপোষণের জন্য ভগবদ্গীতার টীকাভাষ্যও রচনা করেছেন। এর মধ্যে শাঙ্করভাষ্য এবং শ্রীধরস্বামীর টীকাই সমধিক প্রসিদ্ধ। তবে শঙ্করাচার্যের শাঙ্করভাষ্যকে পরিপূর্ণ উপনিষদানুসারী বলে বিবেচনা করা হয়।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় আঠারটি যোগ বা অধ্যায়ে মোট ৭০০ শ্লোক রয়েছে। গীতার অধ্যায়সমূহ যথাক্রমে- (১) অর্জুন বিষাদযোগ, (২) সাংখ্যযোগ, (৩) কর্মযোগ, (৪) জ্ঞানযোগ, (৫) সন্ন্যাসযোগ, (৬) ধ্যানযোগ বা অভ্যাসযোগ, (৭) জ্ঞান-বিজ্ঞানযোগ, (৮) অক্ষর-ব্রহ্মযোগ, (৯) রাজবিদ্যা-রাজগুহ্যযোগ, (১০) বিভূতিযোগ, (১১) বিশ্বরূপ-দর্শনযোগ, (১২) ভক্তিযোগ, (১৩) ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ, (১৪) গুণত্রয়-বিভাগযোগ, (১৫) পুরুষোত্তমযোগ, (১৬) দৈবাসুরসম্পদ-বিভাগযোগ, (১৭) শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগযোগ, (১৮) মোক্ষযোগ।

এই আঠারটি অধ্যায়ের মোট ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ধৃতরাষ্ট্রের উদ্ধৃতিতে ১টি, সঞ্জয়ের উদ্ধৃতিতে ৪০টি, অর্জুনের উদ্ধৃতিতে ৮৫টি এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্ধৃতিতে ৫৭৪টি শ্লোক রয়েছে। এসব শ্লোকের মাধ্যমে মূলত অর্জুনের জিজ্ঞাসু মনের সশ্রদ্ধ প্রশ্ন ও তার প্রেক্ষিতে যথাযোগ্য উত্তর দিতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ভক্তি, প্রেম, আত্মা, জ্ঞান, সকাম-কর্ম, নিষ্কাম-কর্ম, সগুণ ও নির্গুণ ব্রহ্ম প্রভৃতি সম্পর্কিত যাবতীয় দর্শন ও তত্ত্বজ্ঞান উপস্থাপন ও তার বিশ্লেষণ করে অর্জুনের সকল কৌতুহল ও জ্ঞানতৃষ্ণা নিবৃত্ত করেন। এজন্যেই গীতাকে পরম ভক্তি সহকারে সকল শাস্ত্রের সার বলা হয়।

জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যে গীতা কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়ে সম্পূর্ণ সাধনতত্ত্ব প্রচার করে। কর্মের সাথে জ্ঞানের এবং জ্ঞানের সাথে ভক্তির সংযোগে সাধনা সম্পূর্ণতা লাভ করে। তবে কর্মযোগই গীতার মুখ্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই কর্ম হবে নিষ্কাম কর্ম, অর্থাৎ ফলের আশা না করে কর্ম করে যাওয়া। যেমন-
‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত¡কর্মণি’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৪৭)।
অর্থাৎ : কর্মে তোমার অধিকার, ফলে নয়। অতএব কর্ম করো। সুতরাং কর্মফল-প্রাপ্তির হেতু হয়ো না। আবার কর্মত্যাগেও তোমার প্রবৃত্তি না হোক (গীতা-২/৪৭)।
কিন্তু কেন এই কর্মফল-প্রাপ্তির হেতু না হয়ে অর্থাৎ কাম্য-কর্ম বাদ দিয়ে কেবল নিষ্কাম কর্ম করে যাওয়া ? শ্রীকৃষ্ণ বলছেন-
‘দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ্ ধনঞ্জয়।
বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৪৯)।
‘কর্মজং বুদ্ধিযুক্তা হি ফলং ত্যক্ত্বা মনীষিণঃ।
জন্মবন্ধবিনির্মুক্তাঃ পদং গচ্ছন্ত্যনাময়ম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৫১)।
অর্থাৎ :
হে ধনঞ্জয়, কাম্য-কর্ম নিষ্কাম-কর্ম অপেক্ষা নিতান্ত নিকৃষ্ট। অতএব তুমি কামনাশূন্য হয়ে সমত্ব বুদ্ধির (সম্যক জ্ঞানের) আশ্রয় গ্রহণ করো। যারা ফলাকাঙ্ক্ষী হয়ে কর্ম করে তারা অতি হীন (গীতা-২/৪৯)। নিষ্কাম কর্মযোগী মনীষিগণ কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্মরূপ বন্ধন হতে মুক্ত হন এবং সর্বপ্রকার উপদ্রবরহিত (পাপ ও পুণ্য উভয় হতে মুক্ত হয়ে) ব্রহ্মপদ লাভ করেন (গীতা-২/৫১)।
গীতার মতে ফলাসক্তি ও কর্তৃত্বাভিমান বন্ধনের কারণ। আসক্তি ও অহংবুদ্ধি ত্যাগ করে ফলাফলে উদাসীন হয়ে কর্ম সম্পাদনে বন্ধন হয় না। অর্থাৎ সর্বকর্ম ঈশ্বরে সমর্পণ করে ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন ও অহংবুদ্ধি বা কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ করাই নিষ্কার্ম কর্মের লক্ষণ। কিন্তু আত্মজ্ঞান ব্যতীত এই আসক্তি ও কর্তৃত্বাভিমান দূর হয় না। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেন-
‘যদা তে মোহকলিলং বুদ্ধির্ব্যতিতরিষ্যতি।
তদা গন্তাসি নির্বেদং শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৫২)।
‘শ্রুতিবিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা।
সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাপ্স্যসি’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৫৩)।
অর্থাৎ :
যখন তোমার বুদ্ধি (জ্ঞান) মোহাত্মক অবিবেকরূপ কলুষ অতিক্রম করবে, তখন তুমি শ্রোতব্য ও শ্রুত কর্মফল বিষয়ে বৈরাগ্যলাভ করবে (নিষ্পৃহ হবে) (গীতা-২/৫২)। নানা কর্মফল শ্রবণে বিক্ষিপ্ত তোমার চিত্ত যখন পরমাত্মাতে স্থির ও অচল হবে, তখন তুমি তত্ত্বজ্ঞান লাভ করবে (গীতা-২/৫৩)।
অতএব কর্মযোগ সিদ্ধিলাভের জন্য জ্ঞানলাভের দরকার। আত্মজ্ঞান লাভ হলে ভগবানে পরমভক্তি জন্মায়। এর মাধ্যমেই সমত্ব-বুদ্ধি বা সম্যক-জ্ঞান জন্মায়। এই সমত্ব বুদ্ধিকেই বলা হয় স্থিতপ্রজ্ঞা। গীতায় এই স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি সম্পর্কে শ্রীভগবান বলেন-
‘প্রজহাতি যদা কামান্ সর্বান্ পার্থ মনোগতান্ ।
আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৫৫)।
দুঃখেষ¦নুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।
বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/৫৬)।
অর্থাৎ :
হে পার্থ, বাহ্যলাভে নিরপেক্ষ ও পরমার্থদর্শনে প্রত্যগাত্মাতেই পরিতৃপ্ত হয়ে যখন যোগী সমস্ত মনোগত বাসনা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেন, তখন তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ বলে উক্ত হন (গীতা-২/৫৫)। দুঃখে উদ্বেগহীন, সুখে নিঃস্পৃহ এবং আসক্তিশূন্য ভয়মুক্ত ও ক্রোধরহিত মুনিই স্থিতপ্রজ্ঞ বলে উক্ত হন (গীতা-২/৫৬)।
এখানে প্রশ্ন আসে, কর্মযোগ অপেক্ষা সমত্ব-বুদ্ধি বা সম্যক-জ্ঞানই যদি শ্রেষ্ঠ হয় তাহলে সব কামনা বর্জন করে সাম্যবুদ্ধি বা সম্যকজ্ঞান লাভ করলেই তো জীবের মোক্ষ লাভ হয়, কর্মের আবশ্যকতা কী ? তাই অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-
‘জ্যায়সী চেৎ কর্মণস্তে মতা বুদ্ধির্জনার্দন।
তৎ কিং কর্মণি ঘোরে মাং নিয়োজয়সি কেশব’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/১)।
অর্থাৎ : হে জনার্দন, যদি আপনার মতে কর্ম অপেক্ষা জ্ঞান শ্রেষ্ঠ হয়, তবে আমাকে এই হিংসাত্মক (যুদ্ধ) কর্মে নিযুক্ত করছেন কেন (গীতা-৩/১)?
বলাবাহুল্য, গীতায় কর্মকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এমনকি ইহলোকে মোক্ষলাভের যে দুটি মার্গ রয়েছে- সন্ন্যাস মার্গ ও কর্মযোগ মার্গ, সেখানেও কর্মযোগকেই শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিপাদন করা হয়েছে। কেননা, সন্ন্যাস মার্গে যে মোক্ষ লাভ হয় তা জ্ঞানের ফলে, কর্ম ত্যাগের জন্য নয়। যেমন গীতার সন্ন্যাসযোগে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
‘সন্ন্যাসঃ কর্মযোগশ্চ নিঃশ্রেয়সকরাবুভৌ।
তয়োস্তু কর্মসন্ন্যাসাৎ কর্মযোগো বিশিষ্যতে’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৫/২)।
‘সন্ন্যাসস্তু মহাবাহো দুঃখমাপ্তুমযোগতঃ।
যোগযুক্তো মুনির্ব্রহ্ম ন চিরেণাধিগচ্ছতি’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৫/৬)।
অর্থাৎ :
সন্ন্যাস বা কর্মের ত্যাগ ও কর্মের অনুষ্ঠান উভয়ই মুক্তিমার্গ; কিন্তু তাদের মধ্যে জ্ঞানহীন কর্মসন্ন্যাস অপেক্ষা নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠান উৎকৃষ্টতর (গীতা-৫/২)। হে মহাবাহো, নিষ্কাম কর্মযোগ ব্যতীত জ্ঞানযুক্ত পরমার্থ সন্ন্যাস লাভ করা অসম্ভব। নিষ্কাম কর্মযোগের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি হলেই নিষ্ঠ ব্যক্তি সন্ন্যাসী হয়ে অচিরে পরব্রহ্ম প্রাপ্ত হন (গীতা-৫/৬)।
এছাড়াও জ্ঞান ও কর্মের পরস্পর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বোঝাতে গীতায় জ্ঞানযোগে বলা হয়েছে যে-
‘ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে।
তৎ স্বয়ং যোগসংসিদ্ধঃ কালেনাত্মনি বিন্দতি’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৪/৩৮)।
অর্থাৎ : জ্ঞানের তুল্য পবিত্র বস্তু ইহজগতে নেই। দীর্ঘকাল প্রযত্ন দ্বারা কর্মযোগে চিত্ত শুদ্ধ হলেই মুমুক্ষু ব্যক্তি সেই আত্মজ্ঞান (ব্রহ্মজ্ঞান) লাভ করেন (গীতা-৪/৩৮)।
তাই কর্ম নাকি জ্ঞান শ্রেষ্ঠ, অর্জুনের প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-
‘লোকেহস্মিন্ দ্বিবিধা নিষ্ঠা পুরা প্রোক্তা ময়ানঘ।
জ্ঞানযোগেন সাংখ্যানাং কর্মযোগেন যোগিনাম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৩)।
‘ন কর্মণামনারম্ভান্নৈষ্কর্ম্যং পুরুষোহশ্লুতে।
ন চ সংন্যসনাদেব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৪)।
‘ন হি কশ্চিৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্ঠত্যকর্মকৃৎ।
কার্যতে হ্যবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকৃতিজৈর্গুণৈঃ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৫)।
অর্থাৎ :
হে অনঘ অর্জুন, ইহলোকে জ্ঞানাধিকারিগণের জন্য জ্ঞানযোগ এবং নিষ্কাম কর্মিগণের জন্য কর্মযোগ- এই দুই প্রকার নিষ্ঠার বিষয় সৃষ্টির প্রারম্ভে আমি বেদমুখে বলেছি (গীতা-৩/৩)। কর্মানুষ্ঠান না করে কেউ নৈষ্কর্ম্য বা মোক্ষ লাভ করতে পারে না। আবার কর্মযোগে চিত্তশুদ্ধি ও আত্মবিবেক না হলে নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধি হয় না। কেবলমাত্র জ্ঞানশূন্য কর্মত্যাগ দ্বারা এ অবস্থালাভ অসম্ভব (গীতা-৩/৪)। কর্ম না করে কেউই ক্ষণকালও থাকতে পারে না। অ-স্বতন্ত্র প্রকৃতির (মায়াজাত সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণের) প্রভাবে সকলেই কর্ম করতে বাধ্য হয় (গীতা-৩/৫)।
এ প্রেক্ষিতে শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেন-
‘কর্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য য আস্তে মনসা স্মরন্ ।
ইন্দ্রিয়ার্থান্ বিমূঢ়াত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৬)।
‘যস্ত্বিন্দ্রিয়াণি মনসা নিয়ম্যারভতেহর্জুন।
কর্মেন্দ্রিয়ৈঃ কর্মযোগমসক্তঃ স বিশিষ্যতে’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৭)।
‘নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ।
শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিধ্যেদকর্মণঃ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৮)।
অর্থাৎ :
যে ব্যক্তি কর্মেন্দ্রিয়গুলিকে কর্মবিরত করে মনে মনে তাদের বিষয় চিন্তা করে তারা মিথ্যাচারী (গীতা-৩/৬)। কিন্তু যারা ইন্দ্রিয়গুলি সংযত করে অনাসক্তভাবে কর্ম করেন তারাই শ্রেষ্ঠ (গীতা-৩/৭)। তুমি শাস্ত্রবিহিত নিত্যকর্ম করো। কর্ম না করা অপেক্ষা কর্ম করাই শ্রেয়। কর্মহীন হলে তোমার দেহযাত্রাও নির্বাহ হবে না (গীতা-৩/৮)।
তাই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আসক্তিহীন হয়ে কর্তব্যরূপে সবসময় বিহিত কর্মের অনুষ্ঠান করার উপদেশ দেন। যে কর্ম যার পক্ষে বিহিত তাই তার পক্ষে যজ্ঞস্বরূপ। অনাসক্ত হয়ে কর্ম করলে মানুষ মোক্ষ লাভ করে। কারণ এই যথার্থ কর্ম ঈশ্বরের প্রীতির জন্যেই করা হয়-
‘যজ্ঞার্থাৎ কর্মণোহন্যত্র লোকোহয়ং কর্মবন্ধনঃ।
তদর্থং কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসঙ্গঃ সমাচর’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৯)।
অর্থাৎ : যজ্ঞার্থে বা ঈশ্বরের প্রীতির জন্য অনুষ্ঠিত কর্ম ব্যতীত অন্য কর্ম বন্ধনের কারণ হয়। অতএব, তুমি ভগবানের উদ্দেশ্যে অনাসক্ত হয়ে বর্ণাশ্রমোচিত সকল কর্ম করো (গীতা-৩/৯)।
এবং বিহিত কর্মযোগের সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে গীতার সেই প্রসিদ্ধ শ্লোকটি উচ্চারিত হয় এভাবে-
‘শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ।
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৩/৩৫)।
অর্থাৎ : স্বধর্মের অনুষ্ঠান দোষযুক্ত হলেও উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। (বর্ণাশ্রমবিহিত) স্বধর্মসাধনে নিধনও কল্যাণকর; কিন্তু অন্যের (বর্ণাশ্রমোচিত) ধর্মের অনুষ্ঠান অধোগতির কারণ বলে বিপজ্জনক (গীতা-৩/৩৫)।
বর্ণাশ্রমে বিভক্ত সমাজে জন্মজাত চারটি বর্ণ অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের জন্য ঈশ্বরবিহিত যে যে কর্ম নির্ধারণ করা আছে প্রত্যেকের জন্য তা-ই স্বধর্ম অনুষ্ঠান। কারণ এই বর্ণগুলি ঈশ্বরসৃষ্ট এবং তাদের কর্মবণ্টনও ঈশ্বরই করে রেখেছেন প্রকৃতিজাত বা স্বভাবজাত করে-
‘চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৪/১৩)।
‘ন তদস্তি পৃথিব্যাং বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ।
সত্ত্বং প্রকৃতিজৈর্মুক্তং যদেভিঃ স্যাৎত্রিভির্গুণৈঃ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৪০)।
‘ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাঞ্চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৪১)।
‘শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৪২)।
‘শৌর্যং তেজো ধৃতির্দাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্ ।
দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৪৩)।
‘কৃষিগৌরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্ ।
পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৪৪)।
‘স্বে স্বে কর্মণ্যভিরতঃ সংসিদ্ধিং লভতে নরঃ’। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৪৫)।
অর্থাৎ :
গুণ (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ) ও কর্মের বিভাগ অনুসারে আমি চারটি বর্ণের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) সৃষ্টি করেছি। আমি মায়িক (মায়ারূপ) ব্যবহারে চতুর্বর্ণের সৃষ্টিকর্তা হলেও আমাকে পরমার্থদৃষ্টিতে অব্যয় অকর্তা ও অসংসারী বলে জানবে (গীতা-৪/১৩)। পৃথিবীতে বা স্বর্গে এমন কোন প্রাণী (মানুষ বা দেবতা) বা বস্তু নেই, যা এই প্রকৃতিজাত ও বন্ধনের কারণ (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ এই) ত্রিগুণ থেকে মুক্ত (গীতা-১৮/৪০)। হে পরন্তপ, প্রকৃতিজাত ত্রিগুণানুসারেই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রেরও কর্মসমূহ পৃথক পৃথক রূপে ভাগ করা হয়েছে (গীতা-১৮/৪১)। বাহ্যেন্দ্রিয় ও অন্তরিন্দ্রিয়ের সংযম, বাচিক ও মানসিক তপস্যা; অন্তর্বহিঃ শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, শাস্ত্রজ্ঞান ও তত্ত্বানুভূতি এবং শাস্ত্রে ও ভগবানে বিশ্বাস- এই সকল ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত (রজোমিশ্রিত সত্ত্বগুণ দ্বারা বিহিত) কর্ম (গীতা-১৮/৪২)। পরাক্রম, তেজ, ধৃতি, কর্মকুশলতা, যুদ্ধে অপরাঙ্মুখতা, দানে মুক্তহস্ততা ও শাসনক্ষমতা- এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত (স্বভাবজ সত্ত্বমিশ্রিত রজোগুণ দ্বারা বিহিত) কর্ম (গীতা-১৮/৪৩)। কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য বৈশ্যের স্বভাবজাত (স্বভাবজ তমোমিশ্রিত রজোগুণ দ্বারা বিহিত) কর্ম। (অন্য বর্ণের) সেবা বা পরিচর্যা শূদ্রদের স্বভাবজাত (রজোমিশ্রিত তমোগুণের দ্বারা বিহিত) কর্ম (গীতা-১৮/৪৪)। মানুষ নিজ নিজ বর্ণ ও আশ্রমের কর্মে নিরত থেকে জ্ঞান, নিষ্ঠা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সিদ্ধিলাভ করে (গীতা-১৮/৪৫)।
সহজভাবে বললে, বিহিত কর্ম মানে আরোপিত কর্ম যা ঈশ্বরকর্তৃক নির্দেশিত। কর্মফলের আশা ত্যাগ করে আসক্তিহীন কর্মযোগে চিত্তশুদ্ধির মাধ্যমে জ্ঞানরূপ সন্ন্যাসমার্গে উত্তীর্ণ হওয়াই গীতার মতে জীবের মোক্ষ বা সংসার-মুক্তির অনিবার্য শর্ত। কিন্তু ভক্তি বিনে জ্ঞান হয় না। এই ব্রহ্মজ্ঞান লাভে পরমেশ্বর পরমব্রহ্মের প্রতি অবিচল ভক্তি থাকা আবশ্যক। তাই গীতায় শ্রীভগবান বলছেন-
‘মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্যাজী মাং নমস্কুরু।
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৮/৬৫)।
অর্থাৎ : তুমি আমাতে চিত্ত স্থির করো, ভজনশীল ও পূজনশীল হও। আমাকে নমস্কার করো। আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি, এভাবেই তুমি আমাকে পাবে (গীতা-১৮/৬৫)।
কিন্তু যা-ই করো না কেন, কোনভাবেই কর্মযোগ উপেক্ষা করে নয়। সকল শাস্ত্রের সারগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সার-কথাটাও সম্ভবত এই যে-
‘শ্রেয়ো হি জ্ঞানমভ্যাসাজ্ জ্ঞানাদ্ধ্যানং বিশিষ্যতে।
ধ্যানাৎ কর্মফলত্যাগস্ত্যাগাচ্ছান্তিরনন্তরম্’।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১২/১২)।
অর্থাৎ : অবিবেচকপূর্বক অভ্যাস অপেক্ষা শ্রুতি (বেদোক্ত শাস্ত্রাদি) ও যুক্তি দ্বারা আত্মনিশ্চয় উৎকৃষ্ট। আত্মনিশ্চয় অপেক্ষা জ্ঞানপূর্বক ধ্যান শ্রেষ্ঠ। জ্ঞানপূর্বক ধ্যান অপেক্ষা কর্মফলত্যাগ শ্রেষ্ঠ। কর্মফল ত্যাগের অব্যবহিত পরেই সহেতুক সংসার নিবৃত্তিরূপ পরম শান্তিলাভ হয় (গীতা-১২/১২)।
মূলত, কর্মযোগকে ঘিরেই গীতার মুখ্য আলোচ্য বিষয় গীতার মূলতত্ত্ব, মূলনীতি, আত্ম-তত্ত্ব, বিশ্বতত্ত্ব, ব্রহ্মতত্ত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে যত প্রকার জ্ঞান উপদিষ্ট হয়েছে, অর্জুনকে তা উপলব্ধি করতে হয়েছে। এবং তার উপলক্ষ হয়ে এটি একটি অন্যতম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবেও ভারতীয় লোকসমাজে সর্বাদৃত হয়েছে।

লেখকঃ রণদীপম বসু
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।