১৫ জুন ২০১৫

নব-কলেবর বা আত্মা পরিবর্তন

জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলভদ্রের মূর্তি
১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।


মূর্তি তৈরির কাঠের সন্ধানে পুরোহিতরা
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ‘দ্বৈতাপতি’দের আদিপুরুষ বিশ্ববসু বহু শতাব্দী আগে প্রথম ‘নীলমাধব’ নামে জগন্নাথের পুজো করেছিলেন। পুরীর পুরোহিতদের এই বংশের বর্তমান প্রধান জগন্নাথ দ্বৈতাপতি। তাঁর কথায়, “যে বছরের আষাঢ় মাস ‘মলমাস’ অর্থাৎ একই মাসে দুবার অমাবস্যা পড়ে, সেই বছরই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের মূর্তি এবং সুদর্শন চক্র পরিবর্তন করতে হয়।” দ্বৈতাপতির পরিবারের বিশ্বাস, মূর্তি এবং চক্র তৈরীর কাঠ কোন জায়গায় পাওয়া যাবে, সেটা তাঁরা স্বপ্নে আদেশ পান। তার পরেই শুরু হয় কাজ।



হাতির শুঁড়ের চিহ্ন আছে এমন গাছের কাঠ দিয়ে মূর্তি বানানো হয়
সেইমতো এই বছর ওড়িশার পারাদ্বীপের কাছে একটি জঙ্গলে পায়ে হেঁটে পৌঁছিয়েছিলেন জগন্নাথ দ্বৈতাপতি ও তাঁর প্রায় একশো সঙ্গী। যে গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথের মূর্তি তৈরী হতে পারে, তার এগারোটা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যেমন গাছের গায়ে হাতির শুঁড় ও চোখের আকৃতি স্পষ্ট থাকতে হবে, গাছের সাথে সাপ জড়িয়ে থাকবে, উঁইয়ের ঢিপি থাকবে ইত্যাদি। “প্রায় দুমাস ধরে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে ওই গাছ আমরা খুঁজে বার করি, তারপরে মহাযজ্ঞ এবং আরো কিচু অনুষ্ঠান করতে হয়,” বলছিলেন দ্বৈতাপতি। সেই গাছের গুঁড়ি কাঠের চাকা লাগানো গাড়িতে ভক্তরা টেনে নিয়ে আসেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেখানে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে মূর্তি তৈরী করা হয়। এবছর মূর্তি তৈরী শুরু হয়েছিল ৫ই জুন থেকে। নবকলেবর পরিচালনা করবেন জগন্নাথ দ্বৈতাপতি নিজেই। ব্রহ্ম পরিবর্তনের পরে নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হলেও তার নির্মাণ সম্পূর্ণ হতে আরও একমাস সময় লাগবে। পুরনো বিগ্রহটি জগন্নাথ মন্দিরের কাছেই কৈলি বৈকুন্ঠের মাটিতে পুঁতে দেওয়া হবে।

◄ Please Like us :►www.facebook.com/shonatonsondesh

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।