|
জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলভদ্রের মূর্তি |
১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।
|
মূর্তি তৈরির কাঠের সন্ধানে পুরোহিতরা |
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ‘দ্বৈতাপতি’দের আদিপুরুষ বিশ্ববসু বহু শতাব্দী আগে প্রথম ‘নীলমাধব’ নামে জগন্নাথের পুজো করেছিলেন। পুরীর পুরোহিতদের এই বংশের বর্তমান প্রধান জগন্নাথ দ্বৈতাপতি। তাঁর কথায়, “যে বছরের আষাঢ় মাস ‘মলমাস’ অর্থাৎ একই মাসে দুবার অমাবস্যা পড়ে, সেই বছরই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের মূর্তি এবং সুদর্শন চক্র পরিবর্তন করতে হয়।” দ্বৈতাপতির পরিবারের বিশ্বাস, মূর্তি এবং চক্র তৈরীর কাঠ কোন জায়গায় পাওয়া যাবে, সেটা তাঁরা স্বপ্নে আদেশ পান। তার পরেই শুরু হয় কাজ।
|
হাতির শুঁড়ের চিহ্ন আছে এমন গাছের কাঠ দিয়ে মূর্তি বানানো হয় |
সেইমতো এই বছর ওড়িশার পারাদ্বীপের কাছে একটি জঙ্গলে পায়ে হেঁটে পৌঁছিয়েছিলেন জগন্নাথ দ্বৈতাপতি ও তাঁর প্রায় একশো সঙ্গী। যে গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথের মূর্তি তৈরী হতে পারে, তার এগারোটা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যেমন গাছের গায়ে হাতির শুঁড় ও চোখের আকৃতি স্পষ্ট থাকতে হবে, গাছের সাথে সাপ জড়িয়ে থাকবে, উঁইয়ের ঢিপি থাকবে ইত্যাদি। “প্রায় দুমাস ধরে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে ওই গাছ আমরা খুঁজে বার করি, তারপরে মহাযজ্ঞ এবং আরো কিচু অনুষ্ঠান করতে হয়,” বলছিলেন দ্বৈতাপতি। সেই গাছের গুঁড়ি কাঠের চাকা লাগানো গাড়িতে ভক্তরা টেনে নিয়ে আসেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেখানে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে মূর্তি তৈরী করা হয়। এবছর মূর্তি তৈরী শুরু হয়েছিল ৫ই জুন থেকে। নবকলেবর পরিচালনা করবেন জগন্নাথ দ্বৈতাপতি নিজেই। ব্রহ্ম পরিবর্তনের পরে নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হলেও তার নির্মাণ সম্পূর্ণ হতে আরও একমাস সময় লাগবে। পুরনো বিগ্রহটি জগন্নাথ মন্দিরের কাছেই কৈলি বৈকুন্ঠের মাটিতে পুঁতে দেওয়া হবে।
◄ Please Like us :►www.facebook.com/shonatonsondesh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন