রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য সমুদ্রে প্রাপ্ত দারুব্রহ্ম প্রাপ্তির পর গুণ্ডিচা মন্দিরে মহাবেদী নির্মাণ করে সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন । ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় সহস্র বার ভারতবর্ষের কোনো রাজাই যজ্ঞের অশ্ব ধরতে সক্ষম হোলো না । যজ্ঞ সমাপ্তে দেবর্ষি নারদ মুনির পরামর্শে রাজা সেই দারুব্রহ্ম বৃক্ষ কাটিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ তৈরীতে মনোনিবেশ করলেন । এর জন্য অনেক ছুতোর কারিগর কে ডেকে পাঠানো হোলো । কিন্তু বৃক্ষের গায়ে হাতুরী, ছেনি ইত্যাদি ঠেকানো মাত্রই যন্ত্র গুলি চূর্ণ হতে লাগলো । রাজা তো মহা সমস্যায় পড়লেন । সেসময় ছদ্দবেশে বিশ্বকর্মা মতান্তরে ভগবান বিষ্ণু এক ছুতোরের বেশে এসে মূর্তি তৈরীতে সম্মত হলেন । তিনি এসে বললেন- “হে রাজন। আমার নাম অনন্ত মহারাণা। আমি মূর্তি গড়তে পারবো । আমাকে একটি বড় ঘর ও ২১ দিন সময় দিন । আমি তৈরী করবো একটি শর্তে। আমি ২১ দিন দরজা বন্ধ করে কাজ করবো ।
সেসময় এই ঘরে যেনো কেউ না আসে। কেউ যেনো দরজা না খোলে।” অপর দিকে মোটা পারিশ্রামিকের লোভে যে ছুতোর রা এসেছিলো তাদের কেউ নিরাশ করলেন না অনন্ত মহারাণা । তিনি বললেন- “হে রাজন । আপনি ইতিপূর্বে যে সকল কারিগর কে এনেছেন , তাদের বলুন তিনটি রথ তৈরী করতে।” ছদ্দবেশী বিশ্বকর্মা ঘরে ঢুকলে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে সেখানে কড়া প্রহরা বসানো হোলো যাতে কাক পক্ষীও ভেতরে না যেতে পারে । ভেতরে কাজ চলতে লাগলো । কিন্তু রানী গুণ্ডিচার মন মানে না । স্বভাবে নারীজাতির মন চঞ্চলা হয় । রানী গুন্ডিচা ভাবলেন – “আহা কেমনই বা কারিগর বদ্ধ ঘরে মূর্তি গড়ছেন । কেমন বা নির্মিত হচ্ছে শ্রীবিষ্ণুর বিগ্রহ । একবার দেখেই আসি না। একবার দেখলে বোধ হয় কারিগর অসন্তুষ্ট হবেন না।” এই ভেবে মহারানী ১৪ দিনের মাথায় মতান্তরে ৯ দিনের মাথায় দরজা খুলে দিলেন । কারিগর ক্রুদ্ধ হয়ে অদৃশ্য হোলো । অসম্পূর্ণ জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি দেখে রানী ভিরমি খেলেন । একি মূর্তি ! নীল নবঘন শ্যামল শ্রীবিষ্ণুর এমন গোলাকৃতি নয়ন , হস্ত পদ হীন, কালো মেঘের মতো গাত্র বর্ণ দেখে মহারানীর মাথা ঘুরতে লাগলো ।
রাজার কানে খবর গেলো । রাজা এসে রানীকে খুব তিরস্কার করলেন । বদ্ধ ঘরের মধ্য থেকে এক কারিগরের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় বিচক্ষণ মন্ত্রী জানালেন তিনি সাধারন মানব না কোনো দেবতা হবেন । বিষ্ণু ভক্ত রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য তাঁর আরাধ্য হরির এই রূপ দেখে দুঃখিত হলেন । রাজাকে সেই রাত্রে ভগবান বিষ্ণু আবার স্বপ্ন দিলেন । বললেন- “আমার ইচ্ছায় দেবশিল্পী মূর্তি নির্মাণ করতে এসেছিলেন । কিন্তু শর্ত ভঙ্গ হওয়াতে এই রূপ মূর্তি গঠিত হয়েছে । হে রাজন , তুমি আমার পরম ভক্ত । আমি এই অসম্পূর্ণ মূর্তিতেই তোমার পূজা নেবো । আমি দারুব্রহ্ম রূপে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে নিত্য অবস্থান করবো। আমি প্রাকৃত হস্তপদ রহিত , কিন্তু অপ্রাকৃত হস্তপদাদির দ্বারা ভক্তের সেবাপূজা শ্রদ্ধা গ্রহণ করবো। আমি ত্রিভুবনে সর্বত্র বিচরণ করি । লীলা মাধুর্য প্রকাশের জন্য আমি এখানে এইরূপে অধিষ্ঠান করবো। শোনো নরেশ । ভক্তেরা আমার এই রূপেই মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণ রূপের দর্শন পাবেন । যদি তুমি ইচ্ছা করো তবে ঐশ্বর্য দ্বারা সোনা রূপার হস্ত পদাদি নির্মিত করে আমার সেবা করতে পারো। ”
( ক্রমশঃ)
লিখেছনঃ কমল
সেসময় এই ঘরে যেনো কেউ না আসে। কেউ যেনো দরজা না খোলে।” অপর দিকে মোটা পারিশ্রামিকের লোভে যে ছুতোর রা এসেছিলো তাদের কেউ নিরাশ করলেন না অনন্ত মহারাণা । তিনি বললেন- “হে রাজন । আপনি ইতিপূর্বে যে সকল কারিগর কে এনেছেন , তাদের বলুন তিনটি রথ তৈরী করতে।” ছদ্দবেশী বিশ্বকর্মা ঘরে ঢুকলে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে সেখানে কড়া প্রহরা বসানো হোলো যাতে কাক পক্ষীও ভেতরে না যেতে পারে । ভেতরে কাজ চলতে লাগলো । কিন্তু রানী গুণ্ডিচার মন মানে না । স্বভাবে নারীজাতির মন চঞ্চলা হয় । রানী গুন্ডিচা ভাবলেন – “আহা কেমনই বা কারিগর বদ্ধ ঘরে মূর্তি গড়ছেন । কেমন বা নির্মিত হচ্ছে শ্রীবিষ্ণুর বিগ্রহ । একবার দেখেই আসি না। একবার দেখলে বোধ হয় কারিগর অসন্তুষ্ট হবেন না।” এই ভেবে মহারানী ১৪ দিনের মাথায় মতান্তরে ৯ দিনের মাথায় দরজা খুলে দিলেন । কারিগর ক্রুদ্ধ হয়ে অদৃশ্য হোলো । অসম্পূর্ণ জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি দেখে রানী ভিরমি খেলেন । একি মূর্তি ! নীল নবঘন শ্যামল শ্রীবিষ্ণুর এমন গোলাকৃতি নয়ন , হস্ত পদ হীন, কালো মেঘের মতো গাত্র বর্ণ দেখে মহারানীর মাথা ঘুরতে লাগলো ।
রাজার কানে খবর গেলো । রাজা এসে রানীকে খুব তিরস্কার করলেন । বদ্ধ ঘরের মধ্য থেকে এক কারিগরের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় বিচক্ষণ মন্ত্রী জানালেন তিনি সাধারন মানব না কোনো দেবতা হবেন । বিষ্ণু ভক্ত রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য তাঁর আরাধ্য হরির এই রূপ দেখে দুঃখিত হলেন । রাজাকে সেই রাত্রে ভগবান বিষ্ণু আবার স্বপ্ন দিলেন । বললেন- “আমার ইচ্ছায় দেবশিল্পী মূর্তি নির্মাণ করতে এসেছিলেন । কিন্তু শর্ত ভঙ্গ হওয়াতে এই রূপ মূর্তি গঠিত হয়েছে । হে রাজন , তুমি আমার পরম ভক্ত । আমি এই অসম্পূর্ণ মূর্তিতেই তোমার পূজা নেবো । আমি দারুব্রহ্ম রূপে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে নিত্য অবস্থান করবো। আমি প্রাকৃত হস্তপদ রহিত , কিন্তু অপ্রাকৃত হস্তপদাদির দ্বারা ভক্তের সেবাপূজা শ্রদ্ধা গ্রহণ করবো। আমি ত্রিভুবনে সর্বত্র বিচরণ করি । লীলা মাধুর্য প্রকাশের জন্য আমি এখানে এইরূপে অধিষ্ঠান করবো। শোনো নরেশ । ভক্তেরা আমার এই রূপেই মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণ রূপের দর্শন পাবেন । যদি তুমি ইচ্ছা করো তবে ঐশ্বর্য দ্বারা সোনা রূপার হস্ত পদাদি নির্মিত করে আমার সেবা করতে পারো। ”
( ক্রমশঃ)
লিখেছনঃ কমল
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন