মহারানী লক্ষী বাঈ হিন্দুর চির পবিত্র তীর্থ বারানসিতে ১৮৩৫ সালের ১৯শে নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন ।তার পিতা মোরাপন্ত রাও পেশওয়ের অধিকর্তা বাজি রাওয়ের দরবারে কাজ করতেন ।ছোট বেলায় তার নাম ছিল মনু বাঈ । ৩/৪বছর বয়সে তার মা মারা যায় ।মনু বাঈ বিঠুর রাজপ্রাসদে ছিলেন সকলের চোখের মনি ।বাজি রাও তাকে আদর করে "ছবেলী" বলে ডাকতেন । ছবেলী মানে ময়না পাখী ।তিনি ছিলেন সুন্দরী বুদ্ধিমতি এবং তার আরেকটি বড় গুন ছিল তিনি খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারতেন ।তাই এরকম নাম দেওয়া হয়েছিল ।
বাজি রাও নিঃসন্তান ছিলেন ,তার দত্তক পুত্র নানা সাহেবকে ছবেলী ভাই বলে ডাকতেন এবং প্রতি বছর তাকে ভাইফোঁটা দিতেন । তিনিও ছবেলীকে ছোট বোন বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন ।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দুই ভাই বোনের জীবনে একই পরিনতি ঘটে ।ছোট বেলায় লক্ষী বাঈ দাদা নানা সাহেবের সাথে তাতিয়া টোপের কাছে সমরবিদ্যা, আস্ত্রবিদ্যা ,অশ্বচালনা ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহন করেন এবং সেই সাথে পড়াশোনাও শিখে ফেলেন ।
ঈশ্বরের প্রতি অসীম ভক্তি ছিল এই মারাঠি বালিকার ,পরিনত বয়সে বিয়ের পর যখন তার স্বামী বিয়োগ ঘটে, তখন তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠতেন, স্নান সরে শিবপূজা করতেন তারপর অশ্বচালনা।এসব শেষে আবার স্নান সেরে দান করতেন, সেই সাথে প্রতিদিন ১১শত বার রাম নাম চন্দন দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে কগজে লিখতেন।সে সময় ইংরেজরা তাদের অনুষ্ঠানে প্রচুর গোহত্যা করত।এটার বিরুদ্ধে রাণী বৃট্রিশ সরকারের কাছে আবেদন করেন।যাই হোক মাত্র আট বছর বয়সে তত্কালীন ভারতবর্ষের একটি ক্ষুদ্র কিন্তু পরাক্রমশালী রাজ্য ঝাঁশীর নরেশ মহারাজ গঙ্গাধর রাওয়ের সাথে তার বিয়ে হয় ।মহারাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী অনুযায়ী নতুন বধূ ঘরে আসলে তার নতুন একটি নাম করন করতে হয় ।তাই ঝাঁশীতে এসে তার নাম হল মহারানী লক্ষী বাঈ ।
এই নামেই তিনি জগতবিখ্যাত হলেন ।তার একটি পুত্র সন্তান হয় বিয়ের পর, কিন্তু মাত্র তিন মাস বয়সে সে মারা যায় ।সেই শোকে মহারাজ গঙ্গাধর রাও মারা যান ।তবে মারা যাবার আগে তিনি দত্তক পুত্র গ্রহন করেন ।যার নাম ছিল দামোদর রাও ।রাজার মৃত্যুর পরেই ইংরেজরা ঝাঁশি দখলের ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয় ।এসময় বৃটিশরা নতুন আইন তৈরি করে যে দত্তক পুত্র রাজ্যাধিকার পাবে না।এদিকে তার পুত্র দামোদর রাও যেমন দত্তক পুত্র তেমনি ও দিকে লক্ষী বাঈ এর ভাই নানা সাহেবও দত্তক পুত্র ছিলেন ।রাণী এই নিয়মের তীব্র প্রতিবাদ করলেন ।
এরমধ্যে সদাশিব রাও ঝাঁশি অক্রমন করলেন । রানী তাদের প্রবল পরাক্রমে পরাজিত করলেন এবং সদাশিব রাও কে বন্দি করলেন ।তারপর বিশ হাজার সৈন্য সহ নথে খা ঝাঁশি আক্রমন করলে তিনি তাকেও পরাজিত করলেন।
এর পর স্যার Sir Hugh Rose নেতৃত্বে ইংরেজরা ঝাঁশি আক্রমন করল ।পরাক্রমশালী রাণী পুরুষবেশে ঝাপিয়ে পড়লেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে ।কিন্তু কিছু দিন যুদ্ধ চলবার পরই তার সমরঅস্ত্রের রসদ ফুরিয়ে যায় এবং বেঈমান আত্মিয়রা দূর্গের দরজা খুলে দেয় ।তখন তিনি পলিয়ে যান ভাই নানা সাহেবের কাছে ।তারপর তারা গোয়ালিয়র দূর্গ দখল করেন ।
সেই বিজয়ের আনন্দে নানা সাহেব উত্সবের আয়োজন করেন বোন ছবেলীর নিষেদ সত্ত্বেও আর এটই হয় নানা সাহেবের জীবনের চরম ভুল ।সেই সুযোগে ইংরেজরা আক্রমন করে বসে।রানী আবার যূদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন তার দুই সহচরী মুন্দরা ,কাশী এবং তার অনুগত সৈন্যদের নিয়ে ।
এই সময় সবাই যুদ্ধ স্থল ত্যাগ করেন ।কিন্তু রাণী যুদ্ধ চালিয়ে য়ান ।পরে যুদ্ধস্থল ত্যাগের সময় তার প্রিয় ঘোড়া পবন আহত হয় ।তিনি ঘোড়া পাল্টে নেন কিন্তু নতুন ঘোড়া চলতে গিয়ে সামনে জল দেখে উল্টোদিকে ঘুরে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্যের মধ্যে গিয়ে পড়ে। আর কি, শুরু হয় তলোয়ার যূদ্ধ এবং সে যুদ্ধে পিছন থেকে তার মাথায় আঘাত করে বুকে তলোয়ার ঢূকিয়ে দেওয়া হয় ।আর এভাবেই মহাপরাক্রমশালী রানীর জীবন অবসান হয়।
তার মৃত্যুর পর তার দেহ গঙ্গাধর বাবাজীর কুটিরে নিয়ে চিতায় ভষ্মীভূত করা হয় ।এই মহান বীরাঙ্গনা রাণীর পরাক্রমে ,সমর বিদ্যায় ,শিক্ষায় ,চরিত্রে ধর্মানুভূতিতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তার "হর হর মহাদেব " ধ্বনীতে এবং ইংরেজ রাজপুরুষদের বিরুদ্ধে সেই দিপ্ত উচ্চারন "মেরি ঝাঁশি দেঙ্গি নেহি " সে সময় ইংরেজর গর্ভমেন্ট স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ।নিজের স্বদেশ জন্মভূমির প্রতি তার অপরিসীম মমত্ত্ব সর্বপরি একজন নারী হয়ে যা তিনি করে দেখিয়েছ তা সত্যিই বিষ্ময় কর । নিজের জীবন দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ কে করেছিলেন সুপ্রসস্ত ।ভারতের সিপাহী যুদ্ধের অন্যতম পুরধা নাইকা তার রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের ।
ইংরেজ সেনাপতি Sir Hugh Rose লক্ষী বাঈ সম্পর্কে বলেছিলেন- রাণীর বংশগৌরব,সৈনিকগণ ও অনুচরদিগের প্রতি তাহার অপরিসীম উদারত,তাহার সর্বপ্রকার বিঘ্ন বিপত্তিতে অবিচলিত দৃঢ়তা,তাহাকে আমাদের প্রভূতক্ষমতাপন্ন ও ভয়াবহ প্রতিদ্বন্দী করিয়া তুলিয়াছিল।
তথ্যঋন-সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাস,রজনীকান্ত গুপ্ত
ছবি- অগ্নি সম্পদ
বাজি রাও নিঃসন্তান ছিলেন ,তার দত্তক পুত্র নানা সাহেবকে ছবেলী ভাই বলে ডাকতেন এবং প্রতি বছর তাকে ভাইফোঁটা দিতেন । তিনিও ছবেলীকে ছোট বোন বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন ।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দুই ভাই বোনের জীবনে একই পরিনতি ঘটে ।ছোট বেলায় লক্ষী বাঈ দাদা নানা সাহেবের সাথে তাতিয়া টোপের কাছে সমরবিদ্যা, আস্ত্রবিদ্যা ,অশ্বচালনা ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহন করেন এবং সেই সাথে পড়াশোনাও শিখে ফেলেন ।
ঈশ্বরের প্রতি অসীম ভক্তি ছিল এই মারাঠি বালিকার ,পরিনত বয়সে বিয়ের পর যখন তার স্বামী বিয়োগ ঘটে, তখন তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠতেন, স্নান সরে শিবপূজা করতেন তারপর অশ্বচালনা।এসব শেষে আবার স্নান সেরে দান করতেন, সেই সাথে প্রতিদিন ১১শত বার রাম নাম চন্দন দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে কগজে লিখতেন।সে সময় ইংরেজরা তাদের অনুষ্ঠানে প্রচুর গোহত্যা করত।এটার বিরুদ্ধে রাণী বৃট্রিশ সরকারের কাছে আবেদন করেন।যাই হোক মাত্র আট বছর বয়সে তত্কালীন ভারতবর্ষের একটি ক্ষুদ্র কিন্তু পরাক্রমশালী রাজ্য ঝাঁশীর নরেশ মহারাজ গঙ্গাধর রাওয়ের সাথে তার বিয়ে হয় ।মহারাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী অনুযায়ী নতুন বধূ ঘরে আসলে তার নতুন একটি নাম করন করতে হয় ।তাই ঝাঁশীতে এসে তার নাম হল মহারানী লক্ষী বাঈ ।
এই নামেই তিনি জগতবিখ্যাত হলেন ।তার একটি পুত্র সন্তান হয় বিয়ের পর, কিন্তু মাত্র তিন মাস বয়সে সে মারা যায় ।সেই শোকে মহারাজ গঙ্গাধর রাও মারা যান ।তবে মারা যাবার আগে তিনি দত্তক পুত্র গ্রহন করেন ।যার নাম ছিল দামোদর রাও ।রাজার মৃত্যুর পরেই ইংরেজরা ঝাঁশি দখলের ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয় ।এসময় বৃটিশরা নতুন আইন তৈরি করে যে দত্তক পুত্র রাজ্যাধিকার পাবে না।এদিকে তার পুত্র দামোদর রাও যেমন দত্তক পুত্র তেমনি ও দিকে লক্ষী বাঈ এর ভাই নানা সাহেবও দত্তক পুত্র ছিলেন ।রাণী এই নিয়মের তীব্র প্রতিবাদ করলেন ।
এরমধ্যে সদাশিব রাও ঝাঁশি অক্রমন করলেন । রানী তাদের প্রবল পরাক্রমে পরাজিত করলেন এবং সদাশিব রাও কে বন্দি করলেন ।তারপর বিশ হাজার সৈন্য সহ নথে খা ঝাঁশি আক্রমন করলে তিনি তাকেও পরাজিত করলেন।
এর পর স্যার Sir Hugh Rose নেতৃত্বে ইংরেজরা ঝাঁশি আক্রমন করল ।পরাক্রমশালী রাণী পুরুষবেশে ঝাপিয়ে পড়লেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে ।কিন্তু কিছু দিন যুদ্ধ চলবার পরই তার সমরঅস্ত্রের রসদ ফুরিয়ে যায় এবং বেঈমান আত্মিয়রা দূর্গের দরজা খুলে দেয় ।তখন তিনি পলিয়ে যান ভাই নানা সাহেবের কাছে ।তারপর তারা গোয়ালিয়র দূর্গ দখল করেন ।
সেই বিজয়ের আনন্দে নানা সাহেব উত্সবের আয়োজন করেন বোন ছবেলীর নিষেদ সত্ত্বেও আর এটই হয় নানা সাহেবের জীবনের চরম ভুল ।সেই সুযোগে ইংরেজরা আক্রমন করে বসে।রানী আবার যূদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন তার দুই সহচরী মুন্দরা ,কাশী এবং তার অনুগত সৈন্যদের নিয়ে ।
এই সময় সবাই যুদ্ধ স্থল ত্যাগ করেন ।কিন্তু রাণী যুদ্ধ চালিয়ে য়ান ।পরে যুদ্ধস্থল ত্যাগের সময় তার প্রিয় ঘোড়া পবন আহত হয় ।তিনি ঘোড়া পাল্টে নেন কিন্তু নতুন ঘোড়া চলতে গিয়ে সামনে জল দেখে উল্টোদিকে ঘুরে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্যের মধ্যে গিয়ে পড়ে। আর কি, শুরু হয় তলোয়ার যূদ্ধ এবং সে যুদ্ধে পিছন থেকে তার মাথায় আঘাত করে বুকে তলোয়ার ঢূকিয়ে দেওয়া হয় ।আর এভাবেই মহাপরাক্রমশালী রানীর জীবন অবসান হয়।
তার মৃত্যুর পর তার দেহ গঙ্গাধর বাবাজীর কুটিরে নিয়ে চিতায় ভষ্মীভূত করা হয় ।এই মহান বীরাঙ্গনা রাণীর পরাক্রমে ,সমর বিদ্যায় ,শিক্ষায় ,চরিত্রে ধর্মানুভূতিতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তার "হর হর মহাদেব " ধ্বনীতে এবং ইংরেজ রাজপুরুষদের বিরুদ্ধে সেই দিপ্ত উচ্চারন "মেরি ঝাঁশি দেঙ্গি নেহি " সে সময় ইংরেজর গর্ভমেন্ট স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ।নিজের স্বদেশ জন্মভূমির প্রতি তার অপরিসীম মমত্ত্ব সর্বপরি একজন নারী হয়ে যা তিনি করে দেখিয়েছ তা সত্যিই বিষ্ময় কর । নিজের জীবন দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ কে করেছিলেন সুপ্রসস্ত ।ভারতের সিপাহী যুদ্ধের অন্যতম পুরধা নাইকা তার রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের ।
ইংরেজ সেনাপতি Sir Hugh Rose লক্ষী বাঈ সম্পর্কে বলেছিলেন- রাণীর বংশগৌরব,সৈনিকগণ ও অনুচরদিগের প্রতি তাহার অপরিসীম উদারত,তাহার সর্বপ্রকার বিঘ্ন বিপত্তিতে অবিচলিত দৃঢ়তা,তাহাকে আমাদের প্রভূতক্ষমতাপন্ন ও ভয়াবহ প্রতিদ্বন্দী করিয়া তুলিয়াছিল।
তথ্যঋন-সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাস,রজনীকান্ত গুপ্ত
ছবি- অগ্নি সম্পদ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন