এই কাব্যের নাম কেউ শুনেছেন কিনা জানি না, তবে বাংলায় এই কাব্য ও এঁর লেখকের নাম গুপ্তই থেকে গেছে । এই কাব্যের রচয়িতা হলেন মালাধর বসু । বর্ধমান জেলায় এঁনার জন্ম, পিতার নাম ভগীরথ বসু ও মাতার নাম ইন্দুমতী দেবী । তিনি পঞ্চদশ শতকের কবি ছিলেন । ১৪৭৩-১৪৮০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তিনি শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্য রচনা শুরু ও সমাপন করেন । এই কাব্যকে “শ্রীকৃষ্ণবিক্রম” ও “গোবিন্দবিজয়” কাব্য নামে আখ্যায়িত করা হয় । এই কাব্য তিনটি পর্বে বিভক্ত । প্রথম পর্বে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলা, দ্বিতীয় পর্বে কংস বধ থেকে দ্বারকা স্থাপন লীলা, তৃতীয় পর্বে শ্রীকৃষ্ণের অসুর বধ, বিবাহ, বানাসুর দমন , মহাভারতের কাহানী সকল স্থান লাভ করেছে । প্রশ্ন হোলো সুলতানী যুগে সারা বঙ্গপ্রদেশ জুড়ে যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঐ ১২ বছর অবধি মাধুর্য লীলা নিয়ে এত এত কাতারে কাতারে পদ লেখা হচ্ছিল্ল তখন মালাধর বসু সেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে কেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বীর ও অসুর দলন রূপটিকে ফুটিয়ে তুললেন ? এর উত্তর পাওয়া যায় তৎকালীন ভারতবর্ষ তথা বঙ্গপ্রদেশে ঘটনাচক্রের মধ্য দিয়ে, ভারতবর্ষে তখন সুলতানী শাসন, বঙ্গে গৌড়ে বিধর্মী শাসন । হিন্দু বাঙ্গালী ক্রমশঃ ক্ষয়িষ্ণু , উপরন্তু বলপূর্বক বাদশার ধর্মান্তরিত করন প্রক্রিয়া হিন্দু বাঙ্গালীর জীবনে কালো বিভীষিকাময় দিন এনেছিলো । মালাধর বসু এই তথ্য উপলব্ধি করে তিনি শ্রীকৃষ্ণের বীর ও অসুর ধ্বংস রূপটিকে পদাবলী কীর্তনে প্রকাশিত করলেন ।
মালাধর বসু সংস্কৃতে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেও কীর্তন রচনায় বাংলা ভাষাকেই বেছেছেন । কারন সংস্কৃত ভাষা সেই সময় সর্বসাধারণের আয়ত্তে ছিলো না । গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি মহাভারত, ভাগবত, বিষ্ণু পুরাণ, লিঙ্গ পুরান ও হরিবংশ পুরান, যোগশাস্ত্র থেকে কিছু কিছু ঘটনা নিয়েছেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন যোগেশ্বর । সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অংশবিশেষ নিলেও তিনি বাংলা সত্ত্বাকে বিসর্জন দেননি । বৃন্দাবন, মথুরা, দ্বারকা স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আহার, সংস্কৃতি রচনার সময় তিনি বাংলার প্রকৃতিকেই বেছেছেন । যেমন আম-জাম-কাঠাল- সুপারী- তাল বন কিংবা পদ্ম- কনকচাঁপা – টগর পুস্প আহারের তালিকায় বাঙ্গালীর খাদ্য ভাত- ডাল কে গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন । হ্যা বৃন্দাবন লীলায় তিনিও পূর্ববর্তী পদাকারদের অনুসরণ করে সখী প্রেম উপস্থাপন করেছেন তবে বেশীর ভাগ অধ্যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বীর রূপকে প্রস্ফুটিত করেছেন । বৃন্দাবনে থাকবার সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল সখী প্রেমে মত্ত ছিলেন না তিনি অসুর বধও করেছেন । পূতনা , তৃনাবর্ত, কাকাসুর, ধেনুক অসুর, বকাসুর, অঘাসুর, কেশী ইত্যাদি রাক্ষসী ও দানব সংহার করেছেন । মাধুর্য রসের কীর্তনে এগুলি উধাও সেখানে কেবল দোল, ঝুলন, রাস, কুণ্ডলীলা, বাঁশী বাজানো, কদমতলার প্রেম , সখী প্রেম উপরন্তু চন্দ্রাবলী নামক আরোও একটি চরিত্রের সৃষ্টি ।
পদাবলী কীর্তন অতি মধুর এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, বিশেষ করে মাধুর্য ভক্তির বিকাশে । কিন্তু দিবারাত্র কেবল পদাবলী কীর্তন আর কান্নাকাটি করলে বোধ হয় হিন্দু ধর্মের অস্তিত্ব থাকবে না । তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চক্র শঙ্খ ধারী বীর রূপ হিন্দু বাঙ্গালীর মানসে পূজিত হওয়া দরকার – সেই অনুসরণ করে স্বধর্ম ও দেশরক্ষা দরকার । তাই মালাধর বসু এই কাব্যটি রচনা করেছেন । পদাবলীতে কিছু শ্লোক আছে । সেখানে একস্থানে রাধারানী বলছেন- “বঁধু কেমনে ধরিব হিয়া- আমারি বঁধু পরগৃহে যায় আমার সম্মুখ দিয়া।” চন্দ্রাবলীর গৃহে শ্রীকৃষ্ণ যাচ্ছেন দেখে রাধারানী আক্ষেপ করে বলেছেন । এখন ভাবুন আমরা যদি সর্বক্ষণ এইগুলি কীর্তন করি তাহলে সেই বীর রূপ জাগবে কি ? ধরুন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এইসব কীর্তন সর্বক্ষণ শোনানো হোলো, সেনারা ভক্তিপ্রেমে গদ্গদ হয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো- এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনা যদি ভারতের সেনাদের ওপর হামলা করে তাহলে সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে কি? পদাবলী কীর্তন ভক্তি মাধুর্যের প্রতীক । তাই বঙ্কিমচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণের বীর রূপ ফুটিয়ে পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করেছেন । তাঁরা সেই বীর চরিত্রে উদ্ভুত হয়ে দেশমাতার জন্য লড়েছেন- শহীদ হয়েছেন । এঁনারা যদি সেসময় কেবল ঐ সখী প্রেম আর বৃন্দাবন লীলায় মজে থাকতেন তবে আজকে আমি আপনি এসময় ফেসবুক নয়- কোনো ব্রিটিশ সাহবের পদসেবায় রত থাকতাম ।
লিখেছনঃ কমল
মালাধর বসু সংস্কৃতে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেও কীর্তন রচনায় বাংলা ভাষাকেই বেছেছেন । কারন সংস্কৃত ভাষা সেই সময় সর্বসাধারণের আয়ত্তে ছিলো না । গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি মহাভারত, ভাগবত, বিষ্ণু পুরাণ, লিঙ্গ পুরান ও হরিবংশ পুরান, যোগশাস্ত্র থেকে কিছু কিছু ঘটনা নিয়েছেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন যোগেশ্বর । সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অংশবিশেষ নিলেও তিনি বাংলা সত্ত্বাকে বিসর্জন দেননি । বৃন্দাবন, মথুরা, দ্বারকা স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আহার, সংস্কৃতি রচনার সময় তিনি বাংলার প্রকৃতিকেই বেছেছেন । যেমন আম-জাম-কাঠাল- সুপারী- তাল বন কিংবা পদ্ম- কনকচাঁপা – টগর পুস্প আহারের তালিকায় বাঙ্গালীর খাদ্য ভাত- ডাল কে গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন । হ্যা বৃন্দাবন লীলায় তিনিও পূর্ববর্তী পদাকারদের অনুসরণ করে সখী প্রেম উপস্থাপন করেছেন তবে বেশীর ভাগ অধ্যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বীর রূপকে প্রস্ফুটিত করেছেন । বৃন্দাবনে থাকবার সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল সখী প্রেমে মত্ত ছিলেন না তিনি অসুর বধও করেছেন । পূতনা , তৃনাবর্ত, কাকাসুর, ধেনুক অসুর, বকাসুর, অঘাসুর, কেশী ইত্যাদি রাক্ষসী ও দানব সংহার করেছেন । মাধুর্য রসের কীর্তনে এগুলি উধাও সেখানে কেবল দোল, ঝুলন, রাস, কুণ্ডলীলা, বাঁশী বাজানো, কদমতলার প্রেম , সখী প্রেম উপরন্তু চন্দ্রাবলী নামক আরোও একটি চরিত্রের সৃষ্টি ।
পদাবলী কীর্তন অতি মধুর এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, বিশেষ করে মাধুর্য ভক্তির বিকাশে । কিন্তু দিবারাত্র কেবল পদাবলী কীর্তন আর কান্নাকাটি করলে বোধ হয় হিন্দু ধর্মের অস্তিত্ব থাকবে না । তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চক্র শঙ্খ ধারী বীর রূপ হিন্দু বাঙ্গালীর মানসে পূজিত হওয়া দরকার – সেই অনুসরণ করে স্বধর্ম ও দেশরক্ষা দরকার । তাই মালাধর বসু এই কাব্যটি রচনা করেছেন । পদাবলীতে কিছু শ্লোক আছে । সেখানে একস্থানে রাধারানী বলছেন- “বঁধু কেমনে ধরিব হিয়া- আমারি বঁধু পরগৃহে যায় আমার সম্মুখ দিয়া।” চন্দ্রাবলীর গৃহে শ্রীকৃষ্ণ যাচ্ছেন দেখে রাধারানী আক্ষেপ করে বলেছেন । এখন ভাবুন আমরা যদি সর্বক্ষণ এইগুলি কীর্তন করি তাহলে সেই বীর রূপ জাগবে কি ? ধরুন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এইসব কীর্তন সর্বক্ষণ শোনানো হোলো, সেনারা ভক্তিপ্রেমে গদ্গদ হয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো- এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনা যদি ভারতের সেনাদের ওপর হামলা করে তাহলে সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে কি? পদাবলী কীর্তন ভক্তি মাধুর্যের প্রতীক । তাই বঙ্কিমচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণের বীর রূপ ফুটিয়ে পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করেছেন । তাঁরা সেই বীর চরিত্রে উদ্ভুত হয়ে দেশমাতার জন্য লড়েছেন- শহীদ হয়েছেন । এঁনারা যদি সেসময় কেবল ঐ সখী প্রেম আর বৃন্দাবন লীলায় মজে থাকতেন তবে আজকে আমি আপনি এসময় ফেসবুক নয়- কোনো ব্রিটিশ সাহবের পদসেবায় রত থাকতাম ।
লিখেছনঃ কমল
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন