• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

১৬ ডিসেম্বর ২০২০

মৃত্যুকে কখনো এড়ানো যায় না

 একবার ভগবান বিষ্ণু বাহন গরুরকে নিয়ে কৈলাস পর্বতে এসে উপস্থিত হলেন । দ্বারে গরুরকে ছেড়ে স্বয়ং দেবাদিদেব শিবের সঙ্গে দেখা করতে ভিতরে চলে গেলেন । কৈলাসের অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা দেখেে গরুর মন্ত্রমুগ্ধ হয়েগেলেন । তখনই গরুরের নজর এক খুব সুন্দর পাখীর উপর পড়ল । পাখীটি এমনই সুন্দর ছিল যে গরুরের সব ধ্যান বিচার সেই পাখীটির দিকেই আকর্ষিত হতে লাগলো ।


ঠিক সেই সময় কৈলাসে যমরাজ এসে উপস্থিত হলেন এবং ভিতরে প্রবেশ করার আগে তিনি ঐ পাখীটির দিকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে দেখলেন । গরুর বুঝেগেছেন যে ঐ পাখীটির অন্তিম সময় কাছে এসে গেছে , আর যমরাজ কৈলাস থেকে বেরিয়েই ঐ পাখীটিকে নিজের সঙ্গে যমলোকে নিয়ে যাবেন ।

গরুরের দয়া এসে গেল । এত ছোট এবং সুন্দর পাখীটিকে মরতে দেখতে পারবেননা গরুর । তাই গরুর তখন নিজের হাতের পাঞ্জায় পাখীটিকে নিয়ে কৈলাস থেকে হাজার ক্রোশ দূরে এক জঙ্গলের ভিতর এক পাহাড়ের উপর ছেড়ে দিয়ে আবার কৈলাসে ফিরে আসলেন । কিছুক্ষন পর যমরাজ যখন কৈলাস থেকে বেরিয়ে আসলেন , তখন কৌতুহল বশত গরুর যমরাজকে জিজ্ঞেসই করে ফেললেন যে , " হে যমদেব , আপনি পাখীটিকে এত আশ্চর্যপূর্ন দৃষ্টিতে কেন দেখেছিলেন ?"
উওরে যমরাজ বললেন , " হে গরুর , আমি যখন এই পাখীটিকে দেখেছিলাম , তখন আমার জ্ঞাত হয়েছিল যে এই পাখীটি কিছু সময় পরই এখানে থেকে হাজার ক্রোশ দূরে এক নাগ এই পাখীটিকে খেয়ে ফেলবে । আমি চিন্তা করছিলাম যে পাখীটি এত তাড়াতাড়ি এখান থেকে এত দূর কি করে যাবে ... ; কিন্তু এখন দেখছি এই পাখীটি এখানে নেই , তাই আমি নিশ্চিত হলাম যে সেই পাখীটির মৃত্যু হয়েছে । "
গরুর বুঝে গেছেন যে মৃত্যুকে কখনো এড়ানো যায় না , তাতে যত চালাকিই করা হউক না কেন ...।
তাই বন্ধুরা .... ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলতেন --
কর তুমি সেটা
যেটা তুমি চাও
কিন্তু হয় সেটা
যেটা আমি চাই
অতএব
কর তুমি সেটা
যেটা আমি চাই
তাহলে হবে সেটা
যেটা তুমি চাও
হরে কৃষ্ণ ... হরিবোল ...।

Post Courtesy by Sagar Bhowmick
Share:

" পঞ্চামৃত " কি ?

 পঞ্চামৃত  হচ্ছে পাঁচ অমৃত যা দুধ , দই , ঘৃত , মধু আর চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরী করা  হয় । এই পঞ্চামৃত দিয়েই ভগবানের স্নান অভিষেক করা হয়ে থাকে । এই পাঁচ  প্রকার মিশ্রনে তৈরী পঞ্চামৃত অনেক রোগ নিরাময়ের জন্য লাভদায়ক হয় আর মনকেও  শান্তি প্রদান করে থাকে ।

পঞ্চামৃতের আধ্যাত্মিক অর্থ হলো - এই পঞ্চামৃত আত্মোন্নতির পাঁচ প্রতীক -


1. দুধ = দুধ হচ্ছে পঞ্চামৃতের প্রথম ভাগ । এই দুধ হচ্ছে শুভ্রতার প্রতীক । অর্থাৎ আমাদের জীবন দুধের মতো নিষ্কলঙ্ক হওয়া চাই ।

2.  দই = দই - এর গুন হলো এটা অন্যকে নিজের মতো বানায় । দই ঢালার অর্থ হলো  প্রথমে আমরা নিষ্কলঙ্ক হয়ে সৎগুন ধারন করে অন্যকেও নিজের মতো তৈরী করা ।

3. ঘৃত = ঘী স্নিগ্ধতা আর স্নেহের প্রতীক । সবার সঙ্গে আমাদের স্নেহযুক্ত সম্বন্ধ হউক এই ভাবনাই ।

4.  মধু = মধু মিষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শক্তিশালীও হয় । নির্বল ব্যক্তি জীবনে  কিছুই করতে পারে না । দেহ আর মন থেকে শক্তিশালী ব্যক্তিই জীবনে সফলতা পেতে  পারেন ।

5. চিনি = চিনির গুন হলো মিষ্টতা । চিনি ঢালার অর্থ হলো  জীবনে মিষ্টতা আনো । মিষ্টি কথা সবারই ভাল লাগে , আর তাতে মধুর ব্যবহার  তৈরী হয় ।

উপরোক্ত গুনগুলিই আমাদের জীবনে সফলতা এনে দেয় ।

পঞ্চামৃত  পান করলে শরীর পুষ্টি আর রোগমুক্ত হয় । পঞ্চামৃত ঠিক ততটুকু মাত্রায়ই সেবন  করা উচিৎ যতটুকু মাত্রায় সেবন করা উচিৎ , তার অতিরিক্ত নয় ..... জয় রাধে ।

জয় নিতাই গৌর হরিবোল ...।


Post Courtesy: Sagar Bhowmick

Share:

কলিযুগের গুপ্ত বৃন্দাবন

 পাপ ভারাক্রান্ত পৃথিবীর বেদনায় বেদনার্থ হইয়া দ্বাপরে প্রার্থনা করেছিলেন ব্রম্মা আর কলির যুগে শ্রী অদ্বৈতাচার্য। শ্রী অদ্বৈতাচার্য শ্রীহট্র নিবাসী একজন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত ও নৈষ্ঠিক ব্রাক্ষন ছিলেন।সদাশিবের অবতার হিসাবে তাঁর পরিচিতি ছিল। নবদ্বিপের শান্তিপুরে শ্রী অদ্বৈতাচার্য বসবাস করতেন। তিনি প্রতিদিন মদন গোপালের পাদপদ্মে গঙ্গাজল তুলসী দিয়ে বলিতেন-“প্রভূ মদন গোপাল তুমি ধরার বুকে নামিয়া আস। সত্য ধর্ম সংস্থাপন কর”।

তিনি দূর চিত্তে বলতেন- “করাইবো কৃষ্ণ সর্ব নয়ন গোচর,তবে সে অদ্বৈত নাম কৃষ্ণের কিংকর”ভক্তের ডাকে ভগবান সাড়া দিলেন। একদিন শ্রী অদ্বৈতাচার্য গঙ্গার তীরে বসিয়া মদন গোপাল বলে কাঁদতে ছিলেন। হঠাৎ দেখিলেন একটি তুলসী পত্র স্রোতের বিপরীত দিকে ভাসিয়া চলিছে। তিনি বিস্মিত হলেন এবং তুলসী পত্রের অনুগমন করিলেন। নদীয়ার গঙ্গার ঘাটে তখন অগনিত নরনারী স্নান করছিলেন। উক্ত তুলসী পত্রটি শ্রী হট্রনিবাসী উপেন্দ্র মিশ্রের পুত্র জগন্নাথ মিশ্রের সহধর্মিনী এবং নীলাম্বর চক্রবর্তীর কন্যা শচীদেবীর নাভিমূলে এসে ঠেকিয় স্থির হলো। শ্রী অদ্বৈতাচার্য বুঝিলেন মদন গোপাল এই ভাগ্যবতী রমনীর গর্ভেই আসিবেন। শ্রী চৈতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ মাতৃগর্ভ সিন্ধুতে আসেন শ্রী হট্র(সিলেট) জেলার ঢাকা দক্ষিন গ্রামে। জগন্নাথ মিশ্রের মাতৃদেবী শোভাময়ী স্বপ্নে দেখেন তাঁর পুত্রবধুর গর্ভে স্বয়ং নারায়ন আবির্ভূত হবেন। তিনি গঙ্গাতীরে জন্মিবেন।

স্বপ্ন দেখে শোভাময়ী দেবী পূত্র ও পুত্রবধুকে নবদ্বিপে পাঠাইয়া দিলেন। এবং যাবার সময় বলেছিলের যিনি আসিবেন তাঁকে আমায় দেখাইও। মহাপ্রভূ শচী দেবীর দশম গর্ভের সন্তান। শচী দেবী ও জগন্নাথ মিশ্রও সপ্নে দেখেছিলেন-শচী কহে-“ মুঞি দেখো আকাশ উপরে,দিব্য মূর্তি লোক সব যেন স্তুতি করে”।

উভয়েই প্রতিক্ষায় থাকলেন সেই উন্নতসত্তা মহাপুরুষের শুভ আবির্ভাবের জন্য। কিন্তু কোথায় সেই মহাপুরুষ! দশ মাস-এগারো মাস-বার মাস গিয়ে তের মাস চলিল। শচীদেবীর জনক প্রখ্যাত জ্যোতিষি নীলাম্বর চক্রবর্তী গনিয়া কহিলেন, এই মাসেই শুভ লগ্নে এক সুলক্ষন পুত্র জন্মিবে।

আবির্ভাবঃ– ফাল্গুন মাস নব-বসন্ত দোল পূর্নিমা তিথি। এই দিনটিতে প্রতি বছরই পূর্নচন্দ্র তাঁর অমল-ধবল-স্নিগ্ধ কিরনে ধরনীকে স্নান করিয়ে দেয়ার জন্য স্বগর্বে উদিত হন। কিন্তু ৮৯২ বঙ্গাব্দের ২৩ ফাল্গুন(১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দ) শনিবারে যেনো চন্দ্রের পূর্নতা, স্নিগ্ধতা,শুভ্রতা, সকলই কোন অদ্বিতীয় অভিমর্ত্য চন্দ্রের নিকট তিরস্কৃত। ভূলোকের চন্দ্রের পূর্নতা গোলকের চন্দ্রের পূর্নতার নিকট পরাভূত। এ সত্য প্রচারের জন্য অকলঙ্ক শ্রী চেতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর আবির্ভাবের পূর্বে জগচ্চন্দ্র রাহুগ্রস্থ হয়ে পড়ল অর্থাৎ চন্দ্র গ্রহন হল। বিশ্বের চতুর্দিকে হরি নামের ধ্বনি উঠল। কর্মকোলাহল রেখে সবাই খোল করতাল নিয়ে হরিনাম কীর্ত্তন

করছে। হরি নামে মুখরিত চারিদিক এ সময়ে সিংহলগ্নে সিংহ রাশিতে শ্রীশচীর গর্ভসিন্ধু হতে শ্রী মায়া পুরে পূর্ন শশী আনিন্দ্য সুন্দর অমৃত পুরুষ উদিত হলেন। অচৈতন্য বিশ্বে চৈতন্য সঞ্চার হলো। মায়া মরুতে অমৃত মন্দাকিনী প্রবাহিত হলো। অবিরল ধারায় হরি কির্ত্তন সুধাসঞ্জীবনী বর্ষিত হওয়ায বিশ্বের হরিকির্ত্তন-দুর্ভিক্ষ-দুঃখ বিদূরিত শান্তিপুরে শ্রী অদ্বৈতাচার্য ও ঠাকুর হরিদাসসহ সকল ভক্তবৃন্দ আনন্দে নূত্য করলেন।

ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তীকালে বিশ্বম্ভর, নিমাই ও শ্রী চৈতন্য নামের মধ্য দিয়ে বাঙালি সমাজের অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হবেন এটা কে বুঝতে পেরেছিলেন? শ্রী চৈতন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূ ১৪৯১ থেকে ১৪৯৭ পর্যন্ত শাস্ত্রীয় বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

আনুমানিক ১৫০৫ সাল থেকে তাঁর অধ্যাপনার সূচনা ঘটে। ১৫০৮ সালে গয়াধামে ঈশ্বরপুরীর কাছে দীক্ষাগ্রহণের পর নবদ্বীপে ফিরে বপ্রকাশ ও সংকীর্তন আরম্ভ করেন তিনি। ১৫০৯ সালের শেষদিকে সংকীর্তনাদির অবসান ঘটিয়ে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন ১৫১০ সালে। এরপর তিনি রাঢ়, নীলাচল, বঙ্গদেশ, বৃন্দাবন, প্রয়াগ, কাশী, শান্তিপুর প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণ করে ভক্তিবাদ প্রচার করেন। ১৫৩৩ সালের ২৯ জুন তিনি দেহান্তরী হন।

গুপ্ত বৃন্দাবনঃ-মহাপ্রভু কলিযুগে যুগধর্ম প্রচার করার জন্য অবতরণ করবেন শ্রীজগন্নাথের আঙ্গিনায়, তাই লীলাক্ষেত্র বিস্তার ও লীলাপার্ষদ সাজানোর আয়োজন চলছে চারিদিকে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন লীলা সহচর হয়ে জন্ম হয়েছে দেব-দেবী ও ঋষিকল্প অনেক মহাজনদের। কারণ তাঁরা লীলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ভগবানের আগমনকে স্বাগত জানাবার জন্য ধরাধামে নেমে এসেছেন আগে ভাগেই। গৌরাঙ্গ লীলার শুভ বাস্তবায়নের জন্য শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণেও জন্ম নিলেন লীলা সহচরের। ‘শ্রী’ শব্দের অর্থ ‘ভক্তি ঐশ্বর্য’, আর ‘হট্ট’ শব্দের অর্থ ‘মিলনমেলা’।

তাই শ্রীহট্ট নামটি হল ভক্তের মিলন মেলা। এ হাটে আসে অনেকেই কেনাবেচা করতে। এখানে অমূল্য প্রেমধন ‘শ্রী’ সম্পদ বিনামূল্যে বিক্রি হয়।আর এধন বিক্রি করবেন কষিত-কাঞ্চন-বর্ণধারী গৌর হরি। তাই শ্রীহট্টে মিলায়েছেন আগাম মেলা। এটিই শ্রীহট্ট নামের বৈশিষ্ট্য। আর ঢাকাদক্ষিণের ‘দক্ষিণ’ হওয়ার তাৎপর্য হল- কৃষ্ণের বামে রাই কিশোরী ব্রজের যুগলরূপের বিগ্রহ। আর কৃষ্ণের দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে গৌরহরি যেন কৃষ্ণকে ঢেকে অর্থাৎ দ্বাপর লীলা আবরণ করে মধুময় নবদ্বীপ লীলা বিহার করছেন। তাছাড়া এই গৌরলীলা মাধুর্য আস্বাদনে যমের দক্ষিণ দুয়ারটিও বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে- এই তো ঢাকাদক্ষিণ নামের সার্থকতা। সন্ন্যাস গ্রহণের পর শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু একবার মহাপ্রভুকে শান্তিপুরে শ্রীল অদ্বৈত আচার্যের বাড়ীতে নিয়ে আসেন এবং শোকাতুরা জননী শচীদেবীকে পুত্রের দর্শনের জন্য সেখানে নিয়ে আসা হয়। মা এবং ছেলের অপূর্ব মিলনের আনন্দের মধ্য দিয়ে সন্ন্যাসী নিমাই মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খান অদ্বৈতের গৃহে। মা জানেন নিমাই সন্ন্যাসী হয়েছে ঠিকই কিন্তু সংসারের কাজ এখনও তাঁর বাকি আছে- গর্ভাশয়ে থাকাবস্থায় তাঁর ঠাকুর-মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এখনও অপূর্ণ রয়েছে। শোভাদেবী আজও হয়তো তাঁর চোখ খুঁইয়ে নাতীর দর্শন আশায় কোনরকমে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাই মা শচীদেবী তাঁকে ঢাকা দক্ষিণে ফিরে গিয়ে তাঁর ঠাকুরমার শেষ ইচ্ছাটি পূর্ণ করার জন্য সন্ন্যাসী নিমাইকে নির্দেশ দিলেন।

বললেন-তোমার পিতামহী আমাকে বলেছিলেন, হে ভাগ্যবতি! তোমার এই গর্ভবাস হতে যে পরম পুরুষ উদয় হবেন, তাঁকে দেখবার জন্য বিশেষ উৎকণ্ঠিতায় আছি। অতএব তাঁকে শীঘ্রই আমার নিকট পাঠাবে। আমি তাঁর মহাবাক্য স্বীকার করে, তোমাকে গর্ভে নিয়ে নবদ্বীপে এসেছিলাম। অতএব এখন তোমাকে আমার প্রতিশ্রুতি বাক্য পালন করতে হবে। অর্থাৎ এখান হতেই তোমাকে পিতামহীর সাথে মিলবার জন্য যেতে হবে।

১৫১০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে মায়ের কথামত মহাপ্রভু তাঁর পিতামহীকে দর্শন দেবার জন্য ঢাকাদক্ষিণে আসতে মনস্থ করলেন। মহাপ্রভু মাতৃবাক্য শ্রবণ করে স্বীয় অচিন্তনীয় শক্তিপ্রভাব বিস্তার করে গুপ্তলীলা সহকারে পিতামহী সদনে যাবার জন্য উপক্রম করলেন। শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণে যাবার পথে তিনি প্রথমে তাঁর পূর্বপুরুষের নিবাসস্থল শ্রী হট্রের বালাগঞ্জের বরুঙ্গাতে পদার্পণ করলেন। সেখানে তিনি হলচাষরত গো-মোচন করলেন এবং গো- মুখে হরিনাম উচ্চারিত করে গো-মুক্ত করলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু আদিতে প্রপিতামহ শ্রীপাদ মধুকর মিশ্রের বাসভূমি বরগঙ্গা (বুরুঙ্গা) নামক স্থানে পদার্পণ করলেন। তথায় কৃষকগণকে মধ্যাহ্ন সময়ে হালচাষ করতে দেখে, করুণানিধির হৃদয় গো-গণের প্রতি সদয় হল। তিনি তখন কৃষকগণকে বললেন, মধ্যাহ্নকালে চাষ করা মহা পাপ। তোমরা গো-মোচন কর। এই আদেশ শ্রবণ করে রামদাস নামক জনৈক কৃষক সন্ন্যাসবেশী শ্রীগৌরাঙ্গকে বলল, ধান্যক্ষেত্রে অতি অল্প জল রয়েছে। সেইজন্য আজই এই জমি চাষ করা প্রয়োজন। এরর্প শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হল সমীপে গমন করলেন।

শ্রীমহাপ্রভু গোপৃষ্ঠে হস্তস্থাপন করে হরিধ্বনি করতে লাগলেন। তাঁর শ্রীমুখোচ্চারিত শ্রীহরিধ্বনি শ্রবণ করে গো-সকলও মধুময় হরিধ্বনি করতে লাগল। কৃষকেরা প্রায় জলশূন্য কৃষিক্ষেত্রের জন্য বড়ই ব্যস্ত ছিল, কিন্তু সেই ধান্যক্ষেত্রটি সহসা জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। চাষীগণ এইসব অলৌকিক ঘটনা দেখে শীঘ্র গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীগণকে এই অদ্ভুত কথা বললেন। তাহা শ্রবণান্তে, সেই গ্রামস্থ মিশ্রবংশীয় জনগণ সেখানে এসে শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে তাঁর প্রপিতামহ শ্রীপাদ মধুকর মিশ্রের বাড়িতে আনয়ন করলেন। মহাপ্রভুর এরূপ অলৌকিক ভাব দেখে তাঁরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে সাক্ষাৎ নারায়ণজ্ঞানে যথোচিত সেবা করলেন।

এখান থেকে মহাপ্রভু তাঁর পিতৃনিবাস তথা পিতামহ উপেন্দ্র মিশ্রের ঢাকাদক্ষিণের ঠাকুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। ১৫১০ সালের চৈত্রমাসের কোন এক রবিবারে ছুটে আসেন ঢাকাদক্ষিণের গুপ্ত বৃন্দাবন ধামে। তাঁর পিতামহী শোভাদেবী অধীর আগ্রহে নাতীর দর্শন আশায় পথ চেয়ে বসেছিলেন। তাঁর দীর্ঘদিনের আশা আজ ফলবতী হতে চলল ধর্মপরায়ণা শ্রীল উপেন্দ্র মিশ্রের পতœী বৃদ্ধা শ্রীমতি শোভাদেবী, সর্বদাই মনে মনে চিন্তা করতেন যে, আমি কখন আমার নাতীকে দেখতে পাব। মহাপ্রভু গর্ভাবস্থায় তাঁর চিন্ময়ী দৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন পিতার ঢাকাদক্ষিণের নিবাসস্থানটি। আজ তিনি সেই স্মৃতি বিজরিত শান্তির নীড়ে আবার ফিরে এসেছেন। ঘুরেফিরে দেখছেন বাড়ীর চারিদিক। হঠাৎ শ্রীল পরমানন্দ মিশ্রের পতœী সুশীলাদেবীর নজর পড়ল সন্ন্যাসীর দিকে। কি দিব্যকান্তি চেহারা! আজানুলম্বিত বাহু, সুঠাম পূর্ণদেহী নবীন দণ্ডধারী গৌর তনু! দেখলে মন জুরিয়ে যায় একেবারে। সুশীলাদেবী মুগ্ধনয়নে ভাল করে দেখে নিলেন সন্ন্যাসীকে। পরে দর্শন আশা কিঞ্চিৎ প্রশমিত করে তিনি শ্বাশুড়ী শোভাদেবীকে এই শুভ সংবাদটি দেবার জন্য গৃহাভ্যন্তরে চলে এলেন। সংবাদ পেয়ে শোভাদেবী গৃহাভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন নবীন সন্ন্যাসীকে। শোভাদেবীর মনে আনন্দ আর ধরে না। যে স্বপ্নের প্রাণপুরুষকে দেখার জন্য এতদিন যাঁর তৃষিত নয়ন অপেক্ষা করছিল, সেই প্রাণের ঠাকুর সাক্ষাৎ নারায়ণ আজ তাঁর নয়ন-মন আলো করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁরই সামনে। একি অদ্ভুত অপার আনন্দ! সেই বৃদ্ধা শ্রীমতি শোভাদেবী, গৃহ হতে বের হয়ে এসে শ্রীনারায়ণস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুকে দেখে স্বয়ং ঈশ্বর এখানে এসেছেন এই কথা মনে ভেবে বড়ই প্রফুল্লা হলেন। তারপর তিনি তাঁকে বসতে আসন দিলেন এবং ধর্মপরায়ণা বৃদ্ধা সাশ্রুনয়নে, পুলকিত শরীরে, ধীরে ধীরে মধুর বাক্যে তাঁর স্তব করলেন। নররূপধারী পদ্মপলাশলোচন সচ্চিদানন্দবিগ্রহ স্বর্ণবর্ণ বিষ্ণুকে নমস্কার। হে পুরুষোত্তম! তোমাকে নমস্কার। হে বাঞ্ছিতপ্রদ ভগবান্! তোমাকে প্রণাম করি। ঠাকুরমা দেখছেন সন্ন্যাসীকে, কিন্তু তিনি দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় আদরের নাতীকে। নিশ্চয়ই নারায়ণরূপী এই সন্ন্যাসী তাঁর নাতীর খবর রাখেন। তাই অস্থিরচিত্তে শোভাদেবী এই একটি জিঙ্গাসা নিয়ে সন্ন্যাসীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। তিনি সন্ন্যাসীর মধ্যে দেখতে চেয়েছিলেন স্বপ্নে দেখা সেই প্রাণময় শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিটি।

কিন্তু তিনি আজ দেখছেন কৃষ্ণতনু মূর্তির বদলে তাঁর সামনে গৌরতনু এক নবীন সন্ন্যাসীর দিব্য মূর্তি। তিনি নাতীর কাছে প্রশ্ন ছিলেন, “তোমাকে আমি তো মাতৃগর্ভে এমনরূপে দেখিনি, তোমার মুরলীধারী নবীন-নটবর বেশ শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিটি তুমি কোথায় লুকালে!” প্রভু আর কি করেন, সরল বিশ্বাসী ঠাকুর মা শোভাদেবীকে গৌরা-কৃষ্ণরূপ যুগল মূর্তিতে দর্শন দান করে ধন্য করলেন। মহাপ্রভু পিতামহী শোভাদেবীর অন্তরের ভাব বুঝে তাঁকে দিব্যচক্ষু দান করে চাক্ষুষভাবে দেখিয়ে দিলেন তাঁর আপন স্বরূপটি। জগদীশ্বর শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু পিতামহীর সেই কথা শ্রবণান্তে কৃপা করে তাঁকে আপন পরিচয় প্রদান করলেন। সুশীলাদেবী সন্ন্যাসীবেশী এক সুন্দর মহাপুরুষকেই দেখলেন, কিন্তু শোভাদেবী তাঁর মধ্যে দেখলেন সাক্ষাৎ ভগবানকেই। ভক্তের কাছে লুকাতে পারেননি তিনি, ভক্তবৎসল ভগবান্ সন্ন্যাসীবেশের মধ্যেই শোভাদেবীকে দেখালেন তাঁর ভগবৎ স্বরূপটি আর সুশীলাদেবী সন্ন্যাসবেশীকে দেখলেন। তিনি শোভাদেবীকে বললেন, “আমি সেই তো সেই- যিনি তোমার ঘরের নিমাই, তিনিই আবার দ্বাপরের কৃষ্ণ কানাই।” শোভাদেবী ও মহাপ্রভুর ভক্তিপূর্ণ এই ভাববিলাস তাঁর অন্য নাতী প্রদ্যুম্ন মিশ্র সাক্ষাৎ দর্শন করে গর্ভানিষ্ঠান সময়ে, যেরূপে শোভা দেবীর প্রতি দৈববাণী করেছিলেন, তাহাই প্রদর্শিত হল।

পরম ভক্তিমতী বৃদ্ধা, শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রীকৃষ্ণ, এই দুইরূপ দেখে বিস্মিত ও পুলকিত হয়ে বললেন, হে ভগবান! তোমাকে নমস্কার। মহাপ্রভু শোভাদেবীকে বলেন, “কষ্ট নিও না ঠাকুর মা, আমার এই যুগলমূর্তি ঠাকুর বাড়ির দেবালয়ে প্রতিষ্ঠিত করে নিত্য পূজার্চনা করবে। আমার বংশের সন্তানেরা শ্রী হট্রের ঢাকাদক্ষিণের দেবালয়ের গৌরবেই আবহমানকাল বেঁচে থাকবে। শ্রী হট্র তথা ঢাকাদক্ষিণ আজ থেকে গুপ্ত বৃন্দাবন বলে পরিচিত হবে। আমি নিত্যকাল এখানে লীলা করব। “বাসুদেব ঘোষ কহে করি জোড় হাত, যেই গৌর সেই কৃষ্ণ সেই গন্নাথ”আসলে কৃষ্ণরূপটি বৃন্দাবনের আর গৌররূপটি নবদ্বীপের। দ্বাপর শেষে কলিতে তাই শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য। কলি এসেছে, তাই দ্বাপরের কৃষ্ণের প্রয়োজন এবার চৈতন্যে সীমায়িত হয়েছে। কাজেই প্রেমের রাজা শ্রীচৈতন্যই বামা নায়িকা শ্রীরাধার মত বেদনাভারে প্রাণকৃষ্ণকে খুঁজতে খুঁজতে নামের বাহারে পাগলপারা হয়ে সকলকে প্রেম দান করছেন আর শ্রীমুখে বলছেন, “গোকুলের যে প্রেম হলো নাকো সারা নদীয়ায় তা হবে সারা।”রাধার যে প্রেম কৃষ্ণকে ঘিরে, দ্বাপরে তা পূর্ণ হয় নি, তাই অন্তঃ-কৃষ্ণ বহিঃ-রাধা হয়ে রাধাভাবে আবিষ্ট হয়ে গৌর সুন্দর একই অঙ্গে দুইরূপ হয়ে আস্বাদন করছেন আপনি আপনাকে। এই তো গৌর হরি, কলির প্রেমরতন, দ্বাপরের কৃষ্ণ-কানাই। আমরা তাঁর ভাবগ্রাহী যুগলতনুর রস আস্বাদনের আশায় পথ চেয়ে বসে রই। “স্মরনেরে নব গৌরচন্দ্র মাধব মনোহারী।” পরমাত্মা পূর্ণব্রহ্ম সনাতন দ্বাপরে এসেছিলেন কৃষ্ণ হয়ে, এবার এসেছেন গৌরতনু গৌরহরি হয়ে এই গৌরতনু শ্রীরাধার ভাবকান্তি হৃদয়ে ধারণ করে গৌরহরি হয়েছেন।

কৃষ্ণই রাধা, রাধাই কৃষ্ণ; ভাববিলাসে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে অনন্য রসব্যঞ্জন করেন, আবার ঘনায়িত প্রেমবিগ্রহ হয়ে আপামর ভক্তসঙ্গে প্রেমরসনির্যাস আস্বাদন করেন এবং প্রেমধন্য হয়ে ঐ অপ্রাকৃত রস ভক্তের মাঝে বিতরণ করেন এই রঙ্গমঞ্চের লীলানটবর গৌরসুন্দর নরবপু ধারণ করে সর্বোত্তম নরলীলা করবার জন্য এবার এসেছেন ধরার ধূলায় নেমে। মহাপ্রভু ও তাঁর পার্ষদগণ এক অভিনব প্রেমের উদার দৃষ্টি মেলে তাকিয়েছিলেন পৃথিবীর পাপাসক্ত মানুষের পানে। সে দৃষ্টিতে ছিল প্রাণঢালা প্রেম আর প্রাণপুটিত রসমাধুর্যপূর্ণ অমিয় রসধারা। তিনি পুরাণ-প্রাণ পুরুষ, অনন্য প্রেমের ঠাকুর। তিনি তাঁর অপূর্ব কৃষ্ণকথামৃত দান করে কলিহত জীবের ত্রাণকর্তা হিসেবে আপনার জনের মত মানুষের কাতারে নেমে এসেছেন। নাম আর প্রেমের মালা গেঁথে তিনি জগতের গলায় পরিয়ে দিয়েছেন অমূল্য এক বরণমালা।

কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী বলেছেন- “এই গুপ্ত ভাবসিন্ধু, ব্রহ্মা না পায় একবিন্দু,হেন ধন বিলাইল সংসারে”।


সংগৃহিত করা হয়েছে Sagar Bhowmick দাদার পোষ্ট হতে ।

Share:

শ্মশানের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা জানলে মানুষের কামনা বাসনা এমনিই পালিয়ে যাবে।

 'শ্মশান' শব্দটি উচ্চারিত হলেই আমরা মনে মনে বেশ ভীত হয়ে পড়ি। শ্মশান থেকে কেউ ঘুরে এলেই তাকে অপবিত্র ভেবে স্নান করিয়ে তবেই ঘরে ঢুকতে দিই, মনে করি শ্মশান অপবিত্র স্থান। কিন্তু, বাইরে অপবিত্র হলেও শ্মশান ঘুরলে মনের অপবিত্র ভাব আপনিই দূর হয়ে যায়।


শ্মশানের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা জানলে মানুষের কামনা বাসনা এমনিই পালিয়ে যাবে। শত শত তীর্থ ভ্রমণ করে যে সাধন-শিক্ষা লাভ না হয়, শ্মশানে কিছুদিন যদি মানুষ থাকে তবে তার সাধনার ভিত মজবুত হয় ও শিক্ষা লাভ হয়। তখন সাধকের কামনা শূন্য হৃদয়ে মহাশক্তি কালী সহসাই উপস্থিত হন। তাই সাধু ও শব শ্মশানেই বাস করেন, কারণ শ্মশান খুব পবিত্র স্থান !


বাস্তব জগতে যেমন শ্মশান আছে ঠিক তেমনই মানুষের দেহেও শ্মশান আছে। আমাদের দেহের মস্তিষ্কের নীচের দিকে -- ইড়া, পিঙ্গলা নাড়ীর মধ্যে শুষুম্না নাড়ীর সঙ্গমস্থল বা ত্রিবেণী হল সেই শ্মশান। যোগশাস্ত্রে এই স্থানকে আজ্ঞাচক্র বলেন। ভগবান ভোলানাথ সেই শ্মশানে অবস্থান করে আপন মনে ধ্যানজপ করেন।

যাদের চিত্ত কামনা-বাসনা বিরহিত হয়ে শুদ্ধ হয়, যে সাধক পরমব্রহ্মে শরণাগত, খুব জপ করে, তারা কালীর ডাক শুনতে পায়। যে সাধক ধ্যান-জপ নিয়মিত করে না, যে সাধক একাগ্র ও আকুল নয় তাদের কাছে কালী ঘুমিয়েই থাকে। যে সাধক অনুক্ষণ কেবল কালী-স্মরণ করে তার হৃদয়ে কালী সদা জাগ্রত হয়ে থাকে, ধ্যান-জপ নিয়মিত হলেই সেই সাধকের হৃদয়ে কালীস্থিতি অনুভুত হয়। কালী তখন সেই সাধকের সামনেই প্রকট হয়ে কর্ম্মক্ষয় করে দিয়ে সাধকপ্রবরকে সন্তানস্নেহে কোলে তুলে নেয়, সাধকের পুনর্জন্ম আর হয় না।

কালী কালী
লিখেছেনঃ 


Share:

ভারতীয় ঋষিরা যোগশাস্ত্রের চর্চার কয়েকটি উল্লেখিত পথ

 ভারতীয় ঋষিরা যোগশাস্ত্রের চর্চার কয়েকটি পথের কথা উল্লেখ করেছেন। এই পথগুলিকে যোগমার্গ বা মার্গ বলা হয়। এর সংখ্যা নিয়ে মতান্তর আছে। সাধারণত যে যোগমার্গগুলির নাম পাওয়া যায়, সেগুলি হলো --

* কর্মযোগ -- কর্মেই মুক্তি- এই বিশ্বাস থেকে কর্মযোগের সৃষ্টি। কর্মযোগের সূত্র ক্রিয়াযোগ ও জ্ঞানযোগের বিকাশ ঘটে। কর্মযোগের দ্বারা পাপক্ষয় হলে- জ্ঞানের উদ্ভব হয়। কর্মযোগের মূল লক্ষ্য ব্রহ্মজ্ঞান লাভ। কর্মের প্রকৃতি অনুসারে কর্মযোগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো --


১। নিষ্কাম কর্মযোগ : এর দ্বারা মোক্ষ লাভ হয়।

২। সকাম কর্মযোগ : স্বর্গ লাভ হয়।


* ক্রিয়াযোগ -- কর্মযোগ সম্পন্ন করার জন্য ক্রিয়াত্বক উদ্যোগ থাকে তাই হলো- ক্রিয়াযোগ। এই যোগানুশীলনের সকল কর্মযোগই ক্রিয়াযোগ দ্বারা সম্পন্ন হয়।


* জ্ঞানযোগ : পরম ব্রহ্মকে পাওয়া বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করার জন্য যে যোগানুশীলন করা হয়, তাই হলো- জ্ঞানযোগ। এক্ষেত্রে অন্তজ্ঞানকে বাস্তব জ্ঞানে পরিণত করা হয়। প্রকৃতি ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভিতর এর মানব ধর্মের অন্বেষণ করার প্রক্রিয়ার ভিতরই জ্ঞানযোগের মূল সূত্র নিহিত। যোগীর মনে উদ্ভুত বিভিন্ন প্রশ্নের সদুত্তর অন্বেষণ এবং এরই ভিতর পরম সত্যে পৌছার জন্য ধ্যানই হলো জ্ঞানযোগ। এর জন্য কোন প্রচলিত পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট নেই। বিভিন্ন পরিস্থিতি সাপেক্ষে এর বিচার ও সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়। জ্ঞানযোগে বিশ্বাসের চেয়ে উপলব্ধিকে বড় করে দেখা হয়। সেই কারণে এই যোগে আত্ম-জিজ্ঞাসা এবং তাঁর সদুত্তর খুঁজতে হয়। এই দুটি প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যে অভিজ্ঞতা লাভ হয়, তাই হলো জ্ঞানযোগের সঞ্চয়। জ্ঞানযোগ দ্বারা সঞ্চিত জ্ঞানের সাহায্যে বাস্তব সমস্যার সমাধান করা হয়। এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে জ্ঞানযোগী নিজেকে সমৃদ্ধ করে থাকেন।


* ব্যক্তিযোগ -- বিশ্বাস স্থাপন করে নিজেকে নিবেদন করা বা নিজ ব্যক্তিত্ব বিলীন করার প্রক্রিয়াই হলো ব্যক্তিযোগ। সাধারণত বিভিন্ন ধর্মালবলম্বী আল্লাহ, পরমেশ্বর বা কোন দেবতার প্রতি বিশ্বাস রেখে নিজ ব্যক্তিত্বকে সমর্পণ করেন। এক্ষেত্রে কখনো কখনো এই বিশ্বাস সরাসরি ঈশ্বর হতে পারেন বা তার কোন প্রতীকীরূপ হতে পারে। যেমন পরমব্রহ্ম হবেন সরাসরি ঈশ্বর, কিন্তু রাম বা কৃষ্ণ হবে বিষ্ণুর অবতার হিসাবে। খ্রীষ্টধর্মালম্বীরা যেমন ত্রিত্ববাদের সূত্রে যিশুর আরাধনা করেন। কোন ব্যক্তি বিশেষের প্রবর্তিত পথ অনুসারে, উক্ত ব্যক্তিকে সম্মান করা বা তাঁর প্রদর্শিত পথ অনুসরণও ব্যক্তিযোগের পর্যায়ে পড়ে। ব্যক্তিযোগের পর্যায়ে কোন মহান শিক্ষক বা গুরু হতে পারেন। এক্ষেত্রে এই আরাধনা গুরু-ভজনা হিসাবে অভিহিত করা হয়।


* মন্ত্রযোগ -- মন্ত্রের সাধারণ সমার্থ হলো- পরামর্শ, বিচার ইত্যাদি অন্যদিকে বেদের উপাসনার উপযোগী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো (বাক্য বা পদ) মন্ত্র নামে অভিহিত করা হয় শাস্ত্র মোতাবেক মন্ত্র ও ঈশ্বর নাম জপ করতে করতে, নিজেকে ঈশ্বরে বিলীন করার পদ্ধতিই হলো মন্ত্রযোগ এই পথ ধরেই পরমব্রহ্মের সাথে সাধকের মিলন ঘটে এবং অনন্ত মুক্তিলাভ ঘটে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে- মহাদেব এই যোগের সাধনা করেছিলেন।


* রাজযোগ -- যোগ-চর্চার জন্য যতগুলি পথ বা মার্গ রয়েছে, তার ভিতরে রাজযোগ একটি। মন ও শরীরকে স্থির বা সমাধিস্থ করে যে যোগ-প্রক্রিয়া সাধিত হয়, তাকে রাজযোগ বলে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে পতঞ্জলি, দত্তাদেয় প্রমুখ ঋষিরা এই যোগ সাধনার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। যম ও নিয়মের অনুশীলনের দ্বারা মানুষের আচরণ এবং ব্যক্তিত্বের সংশোধন বিকাশ করার প্রক্রিয়ার ভিতর রাজযোগ প্রতিষ্ঠা পায়। সেই কারণে, সুস্থ মন ও শরীরের চর্চা এই যোগের বিষয় হিসাবে মূখ্য স্থান অধিকার করে আছে।


* লয়যোগ -- শরীরের নাড়িগ্রন্থিস্থানে মন বা চিত্তকে বিলীন করে যোগ সাধন করা এবং এর সাহায্যে মোক্ষ লাভ করার পথ হলো লয়যোগ। কথিত অাছে প্রখ্যাত মহর্ষি বেদব্যাস এই পথ অনুসরণে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।


* হঠযোগ -- পিঙ্গল ও ইড়াকে অবলম্বন করে যে যোগ চর্চা বা সাধনা করা হয়, তাকেই হঠযোগ বলা হয়। দেহ থেকে পৃথক করে মনকে ঈশ্বর বা পরমাত্মার সাথে মিলনের প্রক্রিয়াই হলো হঠযোগ। বর্তমানে হঠ যোগকে দেহচর্চার পদ্ধতি হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। এই যোগ সাধনাকে কার্যকরী করার প্রক্রিয়াকে অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই অঙ্গের প্রকারভেদ নিয়ে কিছুটা মত পার্থক্য আছে। গোরক্ষ মুনির মতে যোগাঙ্গ ছয়টি। এগুলো হলো― আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান ও সমাধি। পক্ষান্তরে মার্কেণ্ডয় মুনির মতে― যোগাঙ্গের সংখ্যা আটটি। এগুলো হলো― যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান ও সমাধি।


মনের ইচ্ছা ও একাগ্রতা দিয়ে কোন বিশেষ শক্তি বা ক্ষমতাকে আয়ত্ব করার প্রক্রিয়াই হলো সাধনা। পতঞ্জলির যোগসূত্র গ্রন্থের সাধনপাদ অংশে, সাধনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান, শোধন ও সমাধি দ্বারা সাধনা করতে হয় সম্পন্ন হয়। আবার সাধনাকে চরিতার্থ করার জন্য রয়েছে সাধনবিধি। এই বিধিগুলো হলো শোধন, দৃঢ়তা, স্থৈর্য, ধৈর্য, লাঘব, প্রত্যক্ষ ও নির্লিপ্ত। 

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা আপনি কেন অধ্যায়ন করবেন?

 শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা আপনি কেন অধ্যায়ন করবেন?

কারণ, শ্রীমৎ ভগবদগীতা আপনাকে নিমোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করেঃ

.


১। সকল শোক ও উদ্বেগ থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায়। -- (ভঃগীঃ ২/২২)

২। শান্তি লাভের জন্য স্থির মন ও দিব্য বুদ্ধিমত্তা লাভের উপায় কি। -- (ভঃগীঃ ২/৬৬)

৩। কেবল ভগবৎপ্রসাদেই কেন গ্রহণ করা উচিত -- (ভঃগীঃ ৩/৩১)

৪। কর্তব্যকর্মে নিয়োজিত থেকে মন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব কি। -- (ভঃগীঃ ৩/৪৩)

৫। কিভাবে জীবনে পূর্ণতা লাভ করা যায়। -- (ভঃগীঃ ৪/৯)

৬। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ কিভাবে অর্জন করা যায়। -- (ভঃগীঃ ৪/১১)

৭। কিভাবে সদগুরু শরণাগত হতে হয়। -- (ভঃগীঃ ৪/৩৪)

৮। পাপীরা দুঃখের সাগর অতিক্রম করবে কিভাবে। -- (ভঃগীঃ ৪/৩৬)

৯। মানুষ কেন দুঃখের ফাঁদে আটকে পড়ে। -- (ভঃগীঃ ৫/২২)

১০। শান্তির সূত্র কি। -- (ভঃগীঃ ৫/২৯)

১১। মন কার শত্রু ও কার বন্ধু। -- (ভঃগীঃ ৬/৬)

১২। মন নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা সম্ভব কি। -- (ভঃগীঃ ৬/৭)

১৩। চঞ্চল মনকে কিভাবে জয় করা যায়। -- (ভঃগীঃ ৬/৩৫)

১৪। পূর্ণ জ্ঞান কি। -- (ভঃগীঃ ৭/২)

১৫। কিভাবে মুক্তি অর্জন করা যায়। -- (ভঃগীঃ ৭/৭)

১৬। মায়াকে অতিক্রম করার গোপন রহস্য কি -- (ভঃগীঃ ৭/১৪)

১৭। পাপ কত প্রকার এবং কিভাবে পাপকে দগ্ধীভূত করতে হয়। -- (ভঃগীঃ ৯/২)

১৮। আমাদের পরম লক্ষ্য কি -- (ভঃগীঃ ৯/১৮)

১৯। মানুষ কি তার পছন্দমত গ্রহলোকে যেতে পারে। -- (ভঃগীঃ ৯/২৫)

২০। আমাদের অর্পিত দ্রব্যসমগ্রী কি ভগবান গ্রহন করেন। -- (ভঃগীঃ ৯/২৬)

২১। এই জড় জগতে সুখ লাভের উপায় কি। -- (ভঃগীঃ ৯/৩৪)

২২। মানব জীবনের পরম সিদ্ধি কি। -- (ভঃগীঃ ১০/১০)

২৩। আমাদের হৃদয়ে সঞ্চিত কলুষতা কিভাবে দূর করা যায়। -- (ভঃগীঃ ১০/১১)

২৪। পরম পুরুষোত্তম ভগবান কে। -- (ভঃগীঃ ১০/১২-১৩)

২৫। কৃষ্ণ অর্জুনের নিকট বিশ্বরূপ প্রকাশ করেছিলেন কেন। -- (ভঃগীঃ ১১/১)

২৬। ভগবদগীতার সার কথা কি, আমাদের ক্লেশের কারণ কি। -- (ভঃগীঃ ১১/৫৫)

২৭। রজো ও তমো গুণের কারণ কি। -- (ভঃগীঃ ১৪/২৬)

২৮। আমরা কি ভগবানকে দেখতে পারি, কথা বলতে পারি এবং তাঁর কথা শ্রবণ করতে পারি -- (ভঃগীঃ ১৫/৭)

২৯। দেহত্যাগের সময় জীব তার সাথে কি নিয়ে যায়। -- (ভঃগীঃ ১৫/৮)

৩০। কিভাবে ভগবানের কাছে পৌঁছাতে হয়। -- (ভঃগীঃ ১৮/৬৬)


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

আজ আমি আপনাদের কামরূপ কামাখ্যা মায়ের মন্দিরের রহস্য ও এক সাধিকার সম্পর্কে কিছু বলব।

সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে বিভিন্ন ধরনের দেব দেবীর মন্দির আর সেইসব মন্দিরের দেবদেবীর দর্শন ভাগ্যের ব্যাপার। তবে এই সকল মন্দির সম্বন্ধে যে সব অজানা রহস্য আছে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই সেই অজানাকে জানতে আজ এই লেখাটি মন দিয়ে পড়ুন। আজ আমি আপনাদের কামরূপ কামাখ্যা মায়ের মন্দিরের রহস্য ও এক সাধিকার সম্পর্কে কিছু বলব।

কামরূপ কামাখ্যা মন্দির ভারতের আসামের গৌহাটি নামক স্থানে নিলাচল নামক পাহাড়ে অবস্থিত। এই প্রাচীন মন্দিরে যেখানে আদি শক্তি মা কামাখ্যার পূজো করা হয়। এটি তন্ত্র সাধনারও একটি অন্যতম প্রধান স্থান। মা এখানে খুবই কৃপাময়ী তাই অম্বুবাচী তিথিতে মেলার সময় এখানে খুব ভিড় হয়।


কালিকাপূরান অনুযায়ী জানা যায় যে মাতা সতীর পিতা প্রজাপতি দক্ষরাজ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। শিব বিদ্বেষী দক্ষরাজ এই যজ্ঞে সতী ও শিবকে নিমন্ত্রণ করেন না। সেই সময় শিব ও সতীর মধ্যে মনোমালিন্য হয় যজ্ঞকে কেন্দ্র করে। পরবর্তী সময়ে শিবের অনুমতি নিয়ে সতী যজ্ঞ স্থানে আসেন। কিন্তু দক্ষরাজ শিবসহ সতীকে অপমান করেন। স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞকুণ্ডের আগুনে আত্মহুতি দেন দেবী সতী। সতীহারা শিব প্রচন্ড রাগে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। সমস্ত সৃষ্টিকে বাঁচতে ও সমস্ত দেবতার অনুরোধে বিষ্ণুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করে ৫১ টি অংশে বিভক্ত করেন। পরবর্তীকালে সতীর দেহের ৫১ টি অংশ বহু স্থানে পড়ে তৈরি হয় আদি শক্তির পীঠস্থান। কামাখ্যার নীলাচল পাহাড়ে পড়ে এই অংশটি কালক্রমে প্রস্তরীভুত হয় ও এখানে পূজো হয়।

কামাখ্যা মাকে সবাই তন্ত্র সাধনার দেবী বলেন। তাই তন্ত্র সাধনার মূল স্থান কামরূপ কামাখ্যা মন্দির। এই মন্দিরে দশমহাবিদ্যার মাতঙ্গী ও কমলা রূপটিরও পূজা হয় আর গর্ভগৃহের বাইরে মার বাকি মহাবিদ্যার মন্দির রয়েছে।


এখানে মন্দির সকাল ৮ টায় খোলে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে মায়ের মন্দির খুব রহস্যময় ও আকর্ষণীয়। যে প্রস্তরটি পূজিত হয় ও ফুল দিয়ে ঢাকা থাকে সই খান থেকে প্রাকৃতিক ভাবে অনবরত জল বের হয়। এই জল কোথা থেকে আসছে তা সকলেরই অজানা। প্রতিবছর তিন রাত ও চারদিন অম্বুবাচী তিথিতে মায়ের মন্দির বন্ধ থাকে। সেই সময় এখানে বিরাট মেলা বসে। এই পীঠস্থানে তান্ত্রিক ও অঘোরীদের খুব যাতায়াত। মা এখানে খুবই কৃপাময়ী। ভগবান শিব ও দেবী সতীর প্রিয় স্তান এই তীর্থভুমি।


সেটা ২০০৪ কি ২০০৫ হবে, অম্বুবাচীর মেলায় চলেছি। হেঁটে উঠছি মূল ফটক ধরে। নীলাচল বাসিনী কামরূপা কামেশ্বরীর টানে নীল পাহাড়ে নেমেছে দেশ বিদেশের সাধুর ঢল। যোগী, গৃহী, যতি, ন্যাসী, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব, গানপত্য্ কে নেই সেই দলে? নিরঞ্জনী থেকে মূর্তি পূজারী, সাকারী থেকে নিরাকারী পায়ে পায়ে অম্বুবাচীর মহামেলায় সকলেই নীল পাহাড়ের পাদদেশে।


নীলনয়না সুন্দরীর আকর্ষণে কামাখ্যা পাহাড়ের অমোঘ হাতছানি -- কার সাধ্য এড়ায় সেই চোখের ইশারা! পরতে পরতে যাদু টোনার রোমহর্ষক গালগল্প, সুন্দরীর সন্মোহনে পুরুষের ভেড়া হয়ে ম্যাঁ-ম্যাঁ করে ঘুরে বেড়ানোর টান টান পৌরাণিক কাহিনী! নীলাচলের গুহায় গুহায় রাতভর তন্ত্র জাগরণ -- আদিম রাত নামে ঘোরলাগা চোখে। সুপ্রাচীন কাল থেকে তন্ত্র মন্ত্র ও গুপ্ত সাধনার কেন্দ্র ভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে দেবী তীর্থ কামাখ্যা। মা এখানে চিরযৌবনা কামেশ্বরী। ৬৪ কলার গোপন সাধনা কেন্দ্র। এই শক্তিপীঠের কথা দেবী ভাগবত, দেবী পুরান, তন্ত্র চূড়ামণি, কালিকা পুরাণ, যোগিনী তন্ত্র, হেবজ্র তন্ত্র সহ প্রাচীন গ্রন্ত্রে রয়েছ। ভারতবর্ষের শক্তি সাধনার অত্যন্ত সুপ্রচীন কেন্দ্র কামরূপা কামাখ্যা। অবশেষে গুয়াহাটি কাঁপিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছুটে চলেছে দৈ্ত্যকার বাসগুলো। বৃষ্টির কোপে মানুষ যেখানে নিরাপদ ডেরা খুঁজছে সেখানে পথ চলছে অম্বুবাচীর পথিক। কাতারে কাতারে মানুষ চলছে কামেশ্বরী মা কামাখ্যার টানে।

নীলচলের পাহাড়ি পথ গোটাটা-ই মানুষের দখলে। সবার লক্ষ্য মন্দির, একবার মায়ের দরবারে হাজিরা দিতে পারলেই যেন বিশ্বজয় হয়ে গেল। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে স্বেচ্ছাসেবীরা পানীয় জলের যোগান দিচ্ছে। অম্বুবাচীর মহামেলায় নেই কোন জাতপাতের বালাই। গরিয়া (মুসলমান) ছাত্র সংস্থা অন্য হিন্দু সংস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনদিন ধরে কয়েক হাজার মিনারেল ওয়াটারের বোতল তুলে দিচ্ছে পিপাসিত পূণ্যার্থীর হাতে। যত উপরে উঠছি পায়ের নীচে ছোট হয়ে আসছে গুয়াহাটি শহর।


কখন যে বৃষ্টি থেমে গেল, মেঘ ঝরা আকাশে ফুটে উঠেছে দু-চারটি জোনাকির মতো তারারা। দুই পাশের অন্ধকার ঘন জঙ্গল থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা সঙ্গীত ছাপিয়ে মানুষের বিচিত্র কথনে প্রাচীন প্রাগজ্যোতিষপুরের আবহসঙ্গীতে যেন ইতিহাস ফুঁড়ে উঠেছে। এ কোন ভারতবর্ষ! অষ্ট্রিক দ্রাবিড, মোঙ্গলীয় হাত ধরাধরি চলছে আদিম শক্তি মাতৃ রূপা কামনা পূরণের দেবীর দরবারে বিচিত্র চাওয়া-পাওয়া নিয়ে।

পথের বাঁকে বাঁকে দেবীর আরাধক গণ বিচিত্র সম্ভার বিছিয়ে রেখেছেন। মেলা যে -- তাই ভক্তিরও প্রদর্শনী আছে। গৌরী মা ও সাজিয়ে বসেছেন রাজপাট। রক্তাম্বরী, বয়স খুব বেশি তখন চল্লিশের আশেপাশে। টল টলে দুটো চোখ কিন্ত নেশার ঘোরে ঘূর্ণায়মান। লম্বা একরাশ চুল পিঠে ছড়ানো, আবার জটও আছে। যে কোন ভদ্র লোকের ঘরের মানান সই গিন্নি হওয়ার ক্ষমতা রাখে। গায়ের রঙ ধবধবে ফরসা। কপালে আধুলি সাইজে লাল সিঁদুরের টিপ। সিঁথিতে লাল রঙ বীভৎস ভাবে লেপ্টে আছে। বুকটা দপ করে উঠল এই মেয়ে এখানে কেন? অম্বুবাচীর মহামেলার প্রদর্শনীতে এ কী করে এলো?

গৌরী মাকে ঘিরে বেশ বড় জটলা। কাছে কী করে যাওয়া যায়! ওই ষন্ডামার্কা ভৈরব কি ওর রক্ষক? লাঠি দিয়ে ভিড় তাড়াচ্ছে যেন মশা মারচ্ছে পটাস পটাস করে। এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি। লোকজন প্রনামী নিয়ে আসছে, গৌরী মার ঘোর নামছে। চোখ দুটো আনমনা হয়ে গেল, হঠাৎ বিকট শব্দ করে গৌরী ভাবে পড়ে গেল। ষন্ডাভৈরবকে নীচে ফেলে গৌরী চড়ে বসল তার উপর। যেন শিবের উপর কালী।

চারদিক কাঁপিয়ে শাঁখ করতাল ঊলু ধ্বনি শিঙ্গা বেজে উঠল। দৌড়াদৌড়ি হুড়াহুড়ির মধ্যে ছিটকে পড়লাম। ভাব ধরেছে, ভাব ধরেছে। জবাব উঠছে -- 'আয়, যার যা জানার জেনে নে, যার যা পাওয়ার চেয়ে নে। মা ভরে পড়েছেন।'

আমি এই সব পছন্দ করি না, তাই তাড়াতাড়ি সেই জায়গা ছেড়ে হাঁটা দিলাম।

এরপর কয়েকদিন ধরেই তাকে, কেন জানি না, খুঁজে চলেছি, মন্দিরের পাশে বলিঘরের মধ্যে খুঁজলাম, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি গৌরী বা কড়ি-মা মূল মন্দিরের পেছনে দিকে, এটাই মনে হয় ওর মূল বসার জায়গা। কড়িমার সঙ্গে পরিচয়ে জানলাম যে ও এই পথে বহু বছর হয়ে গেল। অনেক বছর ধরে এই সময়ে সে না কি কামাখ্যা আসে।

আলাপ থেকে অন্তরঙ্গতা ও বন্ধুত্ব। কড়ির সমস্ত শরীর জুড়ে কড়ির গহনা। কোমরে, হাতে, পায়ে, গলায় অজস্র কড়ির গহনা। কড়ি আসে তারাপীঠ থেকে। ওখানে ওর নাম গৌরী, কেউ বলে কুক্কুরী মা। আটটি কুকুর পাহারা দেয় ওর তারাপীঠের আসন। সেই আসন ও আমাকে ছেড়ে দিতে রাজী আছে, বন্ধুত্ব বলে কথা।

কড়িকে জিজ্ঞেস করলাম - ‘তোমার সাধনা কি?’

চটজলদি জিহ্বাগ্র সূচালো করে কড়ি ‘লিঙ্গ মুদ্রা’ দেখিয়ে দিল। আরেকটি হাত উঠে এলো নাকের ফুটোতে। এই দুই মিলনে শক্তি লাভ। বামাচারী তন্ত্রের কথা বলছে নিরক্ষর কড়ি। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে লিঙ্গ যোনির সঙ্গম- ‘জলে নামিবি সাঁতার কাটিবি …তবু চুল ভিজাবি না’।


কড়ির হাতের বিশাল ত্রিশূলটা ছুঁয়ে দেখতে যেতেই ফোঁস করে উঠল কড়ি -- ‘এ্যাই খবরদার কইছি। ত্রিশূলে হাত দিবি না। ভস্ম হয়ে যাবি’।

আমি বললাম -- ‘ও সব ভণ্ডামি অন্যের কাছে করবি কড়ি। তোর ত্রিশূলে কি ভূত প্রেত রয়েছে?’

কড়ি রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে আমার কপালে ত্রিশূল উঁচিয়ে ধরলো। এক ভৈরবীর এই ব্যবহারে খুব রাগ হল আমার, কোথা থেকে বল এলো জানি না। ওর হাতের ত্রিশূল কেড়ে নিয়ে উল্টো করে ওর দিকে তাক করলাম এইবার --

বিস্ময়ে কড়ির চক্ষু চড়ক গাছ -- ‘ও মা গো, তুই কি কালীর অবতার!’

এইবার আমার মুচকি হাসার পালা। কত সহজে এরা বন্ধু বনে ও বানায়।

আমি বললাম -- ‘কালীর বাপের বাপ গো, চিনলি না আমাকে!’ তারপর থেকে কড়ি আমার খুব ভালো বন্ধু।

অম্বুবাচীর রাতজাগা সাধনায় ক্লান্ত কড়ি। চোখের নীচে কালি, নতুন বস্ত্রের গরম ও অনিদ্রা তার চকমকে ভাবটি অনেক খানিই ম্লান হয়ে গেছে। লোকে আশীর্বাদ নিতে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কড়ির বসার আসনের পেছনে একটি কাপড়ের পুটুলি খক্ খক্ করে কেশে উঠল। একটা মুখ বেরিয়ে এল, কড়ি তাড়াতাড়ি লাল রঙের তরল পদার্থ কাপড়ের পুটুলির মুখ ফাঁকা করে ঢেলে দিল।

-- মানুষ নাকি রে?

কড়ি চোখ টিপে কানে কানে বলল -- ‘আমার গুরু গো। মিনসে সারা রাত চক্রে বসেছিল। গাঁজা চরস এক সঙ্গে টেনে মরতে বসেছে। বুকের হাপরের টান। মানা করলাম, একদমই শুনলো না’।

বোকার মত জিজ্ঞাসা করলাম -- ‘চক্র’ কি রে?’ চোখ মটকে কড়ি আবার জিহ্বা বের মুদ্রা দেখালো।

আমি বললাম -- ‘ওরে বাবা এই বয়সেও!’

কড়ি বললো --- 'আমার গুরু গো, এর হাত ধরে এই পথে এতদুর এয়েছি যে। ফেলাতে পারি না তো। কুকুর শেয়াল থেকে বহুবার বাঁচিয়েছে যে।’

কড়ির চোখের কোনে কি জল? ভৈরবীর কি দয়া মায়াও আছে? গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি তো অটল দেখছি!

কড়ির চোখে উদাসীন দৃষ্টি -- গল্পের গন্ধ পেলাম, পূর্বজীবনের গল্প -- ‘ছিলাম গৌরী সরকার, হইলাম কুক্কুরী মা। তারাপীঠের জাগ্রত ভৈরবী। গৌরী আর দশটা বাঙালি মেয়ের মতোই মা-বাবার সংসারে বড় হচ্ছিল স্বপ্ন নিয়ে।

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের সাধারণ বাঙালি মেয়ে, স্কুলের মুখ দেখিনি। গরীবের সংসারে লেখাপড়া শিইখ্যা কে কবে লাট-হাকিম হইছে। দেখতে তো ফেলনা নয়। গায়ের চামড়া ফুটফুটা। এক দূর সম্পর্কের ভাইগনার মধ্যস্থতায় বিয়ে ঠিক হইল কালী মন্দিরের এক সেবায়ইতের সঙ্গে।

শ্বশুর বাড়িতে প্রথম রাতে স্বোয়ামীর বদলে ফুলশয্যায় আইলেন মন্দিরের পুজারী। ইয়া তাগড়া চেহারা। দেখে ভয়ে সিটকাই যাই। ও মা গো। 'হে মা কালী বাঁচাও গো'- কত আর্তনাথ করলাম গো। মিনসে ভাগাল-পা, বুড়া সাপ লাজা দিয়্যা বান্ধাইয়া পালাইল গো!

না কেউ বাঁচাতে আসে নাই গো। কেউ আসে না গো। ওই সব কালী দুগ্গা সব মিছা। কামাখ্যা, তারা সব মিছা -- মেয়েছেলের শরম বাচাইতে। সোয়ামী মিনসে বলল গুরুদেবকে তুষ্টি কইরলে ভগমান শক্তি দিবে। আমার জীবন ওই দিনই ঠিক হইয়া গেছে রে। তারপরে কত হাত বদল। শেষে ভাসতে ভাসতে তারাপীঠে আইলাম রে। এই গুরু আশ্রয় দিল, দীক্ষা দিল। এখন কোন পুরুষরে ডরাই না গো। এখন পায়ের তলে পিষে রাখি’।

কড়ির পুরুষ পিটানোও সচক্ষে দেখা গেল। হাতের হরিণের চামডা দিয়ে বানানো বেত, আশীর্বাদ প্রার্থীদের নীল ডাউন করিয়ে পিঠে দু ঘা মেরে বলছে -- ‘যা তোর মঙ্গল হবে’।

প্রণামী না পেলেই হুঙ্কার -- ‘এ্যাই প্রণামী দিলি না’। পিঠে দুই ঘা, তার উপরে প্রণামী।

বেশ আছে কড়িমা গৌরী! অনেক শিক্ষিত মানুষরাও তার আশীর্বাদ প্রার্থী যে!

রাত হলে ঘোর নামে। তন্ত্র মন্ত্রে কামাখ্যাধাম রহস্যময়ী হয়ে উঠে। ভাঙ গাঁজা চরস ভাঙের খোলা ঢালাও ব্যবস্থা। বিনা লাইসেন্সে খুব কম পয়সায় দম দমাদম চলছে। ভৈরবের সঙ্গে ভৈরবী। কেষ্ট ঠাকুরের সঙ্গে রাধারানী। সব ভাবে ভারে পড়ছে। লাখো লাখো লোক চিৎকার করছে, --- ‘জয় মা কামাখ্যা! জয় সিদ্ধেশ্বরী, জয় বিন্ধ্যবাসিনী, জয় রাধারানী, জয় ভুবনেশ্বরী’।

মোহময় রাত, তন্দ্রাহারা রাত, অম্বুবাচীর পুণ্যলগ্নে নিমেষ হারা হয়ে তাকিয়ে থাকে। আসলে অম্বুবাচীতে কামাখ্যাধামে কোন দিন রাত নেই। বরং রাতই জমে উঠে ষোড়শী মেজাজে। রজশ্বলা চিরযৌবনা ষোড়শী কন্যার ৬৪ উপাচারে অঘোরী, বামাচারী, দক্ষিণা ও শৈব-বৈষ্ণবের মাখোমাখো সাধনায় আদিভৌতিক পৃথিবী লাল গেরুয়া সাজে জেগে উঠে তিন দিনের জন্য।

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কথা । বিতে আসামে ডাকিনী পাহাড়ের ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ ।

 সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মা, স্থিতির অধীশ্বর বিষ্ণু। শিবপুরাণে কথিত‚ একদিন দুজনের মধ্যে শুরু হল বিবাদ, কে বড় -- ব্রহ্মা বলেন‚ তিনি বড়, বিষ্ণু বলেন‚ না তিনি বেশি মহৎ, সমাধান চাওয়া হল মহেশ্বরের কাছে। মহাদেব তখন জ্যোতি বা আলোর স্তম্ভ হয়ে আবির্ভূত হলেন -- স্বর্গ‚ পৃথিবী‚ নরক‚ তিন লোক জুড়ে। ব্রহ্মা‚ বিষ্ণু দুজনকেই তিনি বললেন‚ এই স্তম্ভের শেষ খুঁজে বের করতে। এই আলোর স্তম্ভই হল জ্যোতির্লিঙ্গ, যা নাকি আলো এবং সৃষ্টির প্রতীক।

এদিকে জ্যোতির্লিঙ্গের শেষ খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল ব্রহ্মা-বিষ্ণু। মিথ্যে করে শিবকে ব্রহ্মা বললেন‚ তিনি খুঁজে পেয়েছেন। অন্যদিকে‚ বিষ্ণু হার স্বীকার করে নিলেন। ব্রহ্মার ছলনা বুঝতে পেরে শিব তাঁকে অভিশাপ দিলেন‚ কোনও উৎসবে তিনি পূজিত হবেন না। আর বিষ্ণু পেলেন আশীর্বাদ -- যতদিন পৃথিবী থাকবে‚ ততদিন তিনি পূজিত হবেন, প্রতিটি ঘরে।

ক্রমে উপমহাদেশে ৬৪ টি শৈব তীর্থ পরিচিত হল জ্যোতির্লিঙ্গ নামে-- তার মধ্যে ১২ টি খুবই পবিত্র। শ্রাবণ ও চৈত্র মাস তো বাবা মহাদেবের মাস, তাই এই চৈত্র মাসের শুরুতেই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কথা।

শিব পুরাণ (শতরুদ্র সংহিতা, অধ্যায় ৪২/২-৪) অনুযায়ী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থান দেওয়া হল --

১- সোমনাথ (গুজরাট)সোমনাথ পাঁচ বার ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ছয় বার পুনর্নির্মিত হয়। ভারতের বিভিন্ন কিংবদন্তিতে এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে।

২- মল্লিকার্জুন (অন্ধ্র প্রদেশ)মল্লিকার্জুন বা শ্রীশৈলম কৃষ্ণা নদীর তীরে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। মন্দিরটি প্রাচীন ও এর স্থাপত্য সৌন্দর্য দর্শনীয়।

৩- মহাকালেশ্বর (মধ্য প্রদেশ) উজ্জয়িনীর মহাকালে (অপর নাম অবন্তী) মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির অবস্থিত। এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে যেখানে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেখানে সিলিং-এ একটি শ্রীযন্ত্র উলটো করে ঝোলানো থাকে।

৪- ওঙ্কারেশ্বর (মধ্য প্রদেশ) নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ও মামল্লেশ্বর মন্দির অবস্থিত।

৫- কেদারনাথ (উত্তরাখণ্ড) কেদারনাথ সর্ব-উত্তরে অবস্থিত জ্যোতির্লিঙ্গ। এটি তুষারাবৃত হিমালয়ে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরেও অনেক কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে। এই মন্দিরে যেতে গেলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বছরের মধ্যে ছয় মাস মন্দির বন্ধ থাকে।

৬- ভীমাশঙ্কর (মহারাষ্ট্র) ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ ঠিক কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে একটি ভীমাশঙ্কর মন্দির রয়েছে এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরও প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। এখানে মোটেশ্বর মহাদেব নামে একটি ভীমাশঙ্কর মন্দির আছে। ভীমাশঙ্কর মন্দিরের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি মহারাষ্ট্রের সহ্যাদ্রি, অসমের গুয়াহাটির কাছে ও ওড়িশার গুনুপুরে অবস্থিত।

৭- কাশী বিশ্বনাথ (উত্তর প্রদেশ) বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দির হিন্দুদের পবিত্রতম মন্দিরগুলির অন্যতম।

৮- ত্র্যম্বকেশ্বর শিবমন্দির(মহারাষ্ট্র) ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরটি গোদাবরী নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত।

৯- বৈদ্যনাথ (ঝাড়খণ্ড) বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ মন্দিরটি জ্যোতির্লিঙ্গ আখ্যাপ্রাপ্ত। এটিই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি হল হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শিবধাম ও মহারাষ্ট্রের বিড জেলার পারলি বৈজনাথ। পৌরাণিক চরিত্ররাবণের সঙ্গে বৈদ্যনাথ লিঙ্গ প্রতিষ্ঠার গল্পটি জড়িত।

১০- নাগেশ্বর (দ্বারকা, গুজরাট) এই জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। জ্যোতির্লিঙ্গ দাবিদার মন্দিরগুলি উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে জাগেশ্বর, গুজরাতের দ্বারকা ও মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার অন্ধ নাগনাথে অবস্থিত।

১১- রামেশ্বর (রামেশ্বর,তামিলনাড়ু) রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গটি বিশাল। এই মন্দিরে রামেশ্বর স্তম্ভ অবস্থিত।

১২- ঘৃষ্ণেশ্বর (মহারাষ্ট্র) মন্দিরটি ইলোরার গুহামন্দিরের কাছে অবস্থিত।


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

মা সন্তোষীর ব্রত

মা সন্তোষী তুষ্টা হন সামান্য উপাচারেই। রাশি রাশি ভোগ মা কখনোই চান না। সামান্য ছোলা আর আঁখের গুড় মায়ের পূজায় প্রধান উপাদান। নিয়ম মতোন শুকনো ভাজা ছোলা আঁখের গুড়ের সাথে দিতে হয়। কিন্তু হিন্দু বাঙ্গালী ভিজানো ছোলা, আঁখের গুড়ের সাথে মায়ের সামনে ভোগ নিবেদন করেন। সব মতই চলবে। যে, যেভাবে মায়ের পূজো করেন। পূজোর পর প্রসাদের অল্প অংশ গোমাতাকে প্রদান করতে হয়। তবে মা সন্তোষী পূজাতে টক বা অম্ল জাতীয় ফল বা কোন নৈবেদ্য প্রদান করা নিষিদ্ধ। সেজন্য মায়ের ব্রতকারিণী ও পূজারীগণ শুক্রবার টক জাতীয় ফল, ছানা, অম্বল ও টক পদার্থ বর্জন করেন। এমন কি ছানা থেকে প্রস্তুত কোন মিষ্টান্ন মায়ের ভোগে দেওয়া নিষেধ। নিমকি বানিয়ে চিনির রসে ডুবিয়ে কেবল মায়ের উদ্দেশ্যে মিষ্টি নিবেদন করা হয়। ১৬ শুক্রবার ধরে পূজা করার নিয়ম যথা বিধানে। এরপর উদযাপন করতে হয়। উদযাপনের দিন ৭ টি বালক কে ভোজন করিয়ে তাদের দক্ষিণা ও পান-কলা হাতে দিতে হয়। বালকদেরও ঐ শুক্রবার টক খাওয়া নিষেধ। এইভাবে যিনি সন্তোষী মাতার ব্রত পালন করেন - তিনি সর্ব সুখ প্রাপ্ত করেন।


ব্রতকথা

রামু নামক এক সরল সাধাসিধে লোক ছিল। সে বড় ছয় দাদার সাথে মাঠে কৃষিকাজ করত। বাড়ী ছিল একান্নবর্তী পরিবার। বাড়ীর কর্তা ছিলেন এক বিধবা বৃদ্ধা মা। ফসল ঘরে তোলার পর ভাগ বাটোয়ারা করে যা উঠতো তাই সাত ভাই পেতো।


রামু ছিল বোকা ও সরল মনের। ভাইরা এমনকি ছয় বৌদি এর সুযোগ নিতো। মাঝে মাঝে বৌদিরা লুকিয়ে রামুকে এঁঠো-কাটা খেতে দিতো। সরল মনের রামু কিছুই বুঝতো না। একদা সাবিত্রী নামের এক সর্ব সুলক্ষণা কন্যার সাথে রামুর বিবাহ হল।


নতুন বৌ নিয়ে রামুর সুখে সংসার কাটছিল। একদিন সাবিত্রী জানতে পারলো বড় ছয় বৌদি রামুকে উচ্ছিষ্ট খেতে দেয়। রামু নিজেও এই দৃশ্য চোখে দেখলো। এই নিয়ে সে একদিন প্রতিবাদ করলো। এতে ছয় বৌদি আর ছয় দাদা মিলে রামুকে খুব অপমান করলো। রামু মনের দুঃখে প্রতিজ্ঞা করলো --‘যোগ্য মর্যাদা নিয়েই, কিছু করে সে এই বাড়ীতে বুক ফুলিয়ে আসবে।’ এই প্রতিজ্ঞা করে রামু গৃহত্যাগ করলো। তখন ছয় বৌদি আর ছয় দাদার রাগ গিয়ে পড়লো বেচারী সাবিত্রীর উপরে। সাবিত্রীকে ভীষন অত্যাচার শুরু করলো। সংসারের সব কাজ করাতে লাগলো।


দেখতে দেখতে সাবিত্রীর অঙ্গের লাবন্য মলিন হল। সন্ধ্যায় সে ঘরে আসতো। দুটি রুটি আর নারকেলের মালায় তে জল জুটতো তাঁর কপালে। একদিন সাবিত্রী জঙ্গলে কাঠ আনতে গিয়ে দেখে সেখানে দেবকন্যারা কি যেন ব্রত করছে। সাবিত্রী সব জিজ্ঞেস করলে দেবকন্যারা জানালো তারা মা সন্তোষীর ব্রত করছে। মায়ের কৃপায় সর্ব সুখ আসে। সাবিত্রী ভাবল সেও মা সন্তোষীর ব্রত করবে। দেবকন্যাদের কাছে নিয়ম শিখে ষোলো শুক্রবারের মা সন্তোষীর ব্রত শুরু করলো।


অপরদিকে রামু শহরে গিয়ে এক বড় স্বর্ণকারের দোকানে চাকরী পেয়েছিল। হঠাৎ তার বাড়ীর কথা, সাবিত্রীর কথা মনে পড়াতে বাড়ী ফিরতে চাইলো। স্বর্ণকার রামুকে অনেক ধন দৌলত দিয়ে বিদায় করলো। বাড়ী ফিরে রামু দেখে সাবিত্রীর দুর্দশা। রামু তাঁর ছয় দাদা, বৌদিকে খুব বকাঝকা করে সাবিত্রীকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেলো। বিশাল বাড়ী বানিয়ে সাবিত্রীকে নিয়ে সুখে থাকতে লাগলো। একদা সাবিত্রী ভাবলেন মা সন্তোষীর উদযাপনে সকলকে নিমন্ত্রণ করবেন। প্রতিবেশী সবাইকে আমন্ত্রণ জানালো হল, ছয় দাদা, ছয় বৌদি, শাশুড়ীকে আমন্ত্রণ জানালো। ছয় বৌদির মধ্যে দুই বৌদি সাবিত্রীর সুখ ঐশ্বর্য দেখে হিংসায় জলতে লাগলো। তারা মায়ের প্রসাদে লেবুর রস দিয়ে দিলো। এতে মা খুব ক্ষিপ্তা হলেন। দুই বৌ বিকলাঙ্গ হয়ে গেলো। অবশেষে সাবিত্রীর কঠোর প্রার্থনায় মা সন্তোষী দুই বৌকে ভালো করে দিলেন। এই ভাবে সাবিত্রীর জীবনে সুখ নেমে আসল।

-


প্রত্যেক শুক্রবার তাঁর পূজা হয়। বাংলার ঘরে ঘরে এবং প্রতিটি নর-নারীর মুখে মুখে কলিযুগের সর্বদুঃখ বিনাশিনী দেবী মায়ের এই দেবীর আপার মহাত্ম্য ও অপরিসীম করুনা প্রচারিত। অগণিত ভক্তবৃন্দ সন্তোষীমাতার যশোগানে মুখরিত। জানি না, বাংলার মহাদুর্দিনের সন্ধিক্ষণে আমাদের অগণিত মা, ভাইবোন বন্ধুদের সর্বস্নেহময়ী সন্তোষী মায়ের কাছে বিনীত কি প্রার্থনা! তারা মায়ের কাছে কি চেয়েছেন আর মা কি দিয়েছেন -- এর সঠিক উত্তর তারাই দেবেন, যাঁরা মায়ের চরণে মনপ্রাণ উৎসর্গ করে তাঁর কৃপালাভে ধন্য হয়েছেন।


তবে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী ভক্তের মুখে শোনা কথা যে, মা সাক্ষাৎ বলরুপিনী। মা তাঁর আরাধনায় আড়ম্বর চান না, তিনি চান ভক্তির পূজা। এক বিন্দু চোখের জল, ধান, দূর্বা ও ফুল, সাধ্যমত উপকরণ, গুড় আর ছোলা --- মা এতেই পরম তৃপ্তি লাভ করেন এবং ভক্তের সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। তাই আজ অন্নাভাবে বহু দুঃখ জর্জরিত নর-নারী এই পরমা ঈশ্বরী দেবীর কাছে তাঁদের দুঃখ-দুদর্শা লাঘবের জন্য ব্যাকুল প্রার্থনা জানান। প্রতি শুক্রবারে আমাদের সতী সাধ্বী মা-বোনেরা ঘরে ঘরে সন্তোষী মায়ের ছবি ও ঘট স্থাপন করে বিশুদ্ধ ভাবে পূজার আয়োজন করে থাকেন এবং টক জাতীয় খাবার বর্জন করেন। সর্বসিদ্ধিদাত্রী এই মায়ের পূজায় সকল দেব-দেবী তুষ্ট হয়ে থাকেন। অনেকেই এই পুজায় সুফল পেয়েছেন। মনোকষ্ট, অর্থকষ্ট, বাধা-বিঘ্ন, দাম্পত্য জীবনের কলহ বা অশান্তি, গ্রহদোষ, পুনর্জীবন লাভ করতে এই দেবীর পূজা কর অবশ্য কর্তব্য। মা সন্তোষী যে কোন অশুভ ভাব দূর করেন এবং তার বরাভয় বা আশীর্বাদ প্রদান করেন।


হিংসা, লোভ, লালসা, রাগ, নেশা, নির্যাতন থেকে বিরত থেকে আসুন আমরা সবাই সন্তোষীমাতার ধ্যানে মগ্ন হই। আসুন, কালবিলম্ব না করে আমরা সকলেই তাঁর চরণে প্রণাম জানিয়ে মাতৃপূজায় জীবন উৎসর্গ করে মানবজীবন সার্থক করি।

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

কাল কপাল মহাকাল

 কামাখ্যায় এক মঠের সন্ন্যাসী সাধক ছিলেন --- স্বামী জ্ঞানানন্দ মহারাজ, জন্মস্থান - বর্ধমান। সংসারে তাঁর একমাত্র বন্ধন ছিলেন মা। মায়ের দেহান্তের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বর্ধমান, পুরী, ভুবনেশ্বর, হরিদ্বার, কাশী ও প্রয়াগ প্রভৃতি তীর্থস্থান পরিভ্রমণ করে নিজের বাসস্থান, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সৎ কাজের জন্য দান করে দিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মঠের যে কামরাটিতে আশ্রয় নেন, সেখানে থেকে রাত্রি ৩টে একমাত্র স্নান ছাড়া অন্য কোন কারণেই মঠের বাইরে যেতেন না। এমনকি তিনি তাঁর সুদীর্ঘ ৬২ বৎসরের সন্ন্যাস জীবনে মায়ের মন্দির দর্শন করেন নি। পবিত্র সন্ন্যাস-ধর্ম যে কী কঠিনতম ব্রত, তা অজগর-বৃত্তিধারী এই মহাতপা যোগীর পুণ্যজীবন দেখলে তবেই মর্মে মর্মে অনুভব করা যায়।

তাঁর জীবন-দর্শনের একটা কাহিনী শুনুন -

এক ভক্ত একদিন স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। ব্যবসায় বিপর্যয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করে উন্নতির উপায় খুঁজতে এসেছেন। তিনি ছিলেন তখনকার সময়ের এক বিখ্যাত ব্যবসায়ী। স্বামীজীর আশীর্বাদে ব্যবসায় তিনি বহু অর্থ উপার্জন করেছিলেন, কিন্তু আজ সর্বহারা। সেই তিনিই স্বামীজীকে বললেন --- 'আপনার আশীর্বাদে আমি বহু অর্থ উপার্জন করেছিলাম, অহংকারে আমি আপনার অবদান মানিনি, আজ বড়ই দুঃসময়, গতবছর থেকে ব্যবসায়ে মার খাচ্ছি। আপনি আশীর্বাদ করুন, কিছু প্রতিকার দিন, যাতে ব্যবসায় বিপর্যয় কাটিয়ে আমি আমার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসিা।'

স্বামীজী বললেন --- সে কি! আমি আবার তোমার ভাগ্য ফিরালাম কবে? আমি নিজে ভিখিরি, মায়ের দুয়ারে পড়ে আছি। ভিখিরি আবার টাকার সন্ধান জানবে কি করে? তুমি তোমার কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়েছ বা পাচ্ছ। অতবড় পণ্ডিত ছেলে তুমি, পাছে টাকার প্রয়োজনে অন্য কোন বৃত্তি তুমি অবলম্বন করে ফেল, এজন্য বলেছিলাম রসায়ন জান যখন আছে, আয়ুর্বেদের চর্চা করে বিশুদ্ধ কবিরাজী ঔষধের ব্যবসা কর। আশা ছিল - তোমার সংসারের প্রয়োজনও মিটবে আর যে বিরাট প্রতিভা থেকে তোমার জন্ম, হয়ত একদিন তোমার হাত দিয়ে কোন বিস্ময়কর ওষুধও বের হয়ে যেতে পারে। নতুবা আমার মত ভিখিরি, টাকার সুলুক-সালুক কি করে জানবে বাবা! ছিঃ বাবা, সন্ন্যাসীর কাছে টাকা চাইতে নেই, টাকা দিতে নেই, টাকার প্রসঙ্গ তুলতেও নেই।

স্বামীজীর এই কথা শুনে ভক্ত বড় কাতর হয়ে পড়লেন। কিছু পরে স্বামীজী উঠে পড়লেন।

স্বামীজী ভক্তকে বললেন --- 'চল বাবা, উপরে ছাদে যাই।'

দু'জনে উপরে উঠে গেলেন। তিনতলায় ছাদের উপর তখন মঠ সংলগ্ন একটা অশ্বত্থ গাছের ছায়া পড়েছে। সূর্যাস্ত হতেও তখন বেশী দেরী ছিল না। হঠাৎ স্বামীজী ভক্তকে জিঞ্জেস করলেন --- 'বাবা! এই যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি- তুমি ও আমি, একটু আগেও এখানে রোদ ছিল, কিন্তু এখন ছায়া পড়েছে। এই যে ছায়া এটা কি সূর্যের জন্য?'

ভক্ত বললেন --- 'কালের জন্য। সন্ধ্যা হয়ে আসছে- তাই ছায়া।'

স্বামীজী বললেন --- 'আবার রোদ আসবে?'

ভক্ত বললেন --- 'হ্যাঁ, আবার রাত্রি গত হলে কাল সকালে এইখানে রোদ আসবে। '

স্বামীজী বললেন --- 'তবে দেখ, রোদের পর ছায়া, দিনের আলোর পর সন্ধ্যা - এই তো নিয়ম। কাল শুভ হয়েছিল, তোমার ঐশ্বর্য হয়েছিল, এখন সন্ধ্যা - অপেক্ষা কর, আবার ঘুরে ঘুরে সূর্যের আলো এইখানেই এসে পড়বে- এই নিয়ম। এতে কারও হাত নেই। মনে কর, একটা ফেরিওলা, হাসিমুখে ফেরি করতে করতে চলে গেল পশ্চিম দিকে। তুমি বসে আছ এখানে। এখন তুমি যদি তাকে ঐখানে আটকে রাখতে না পার অথচ তার থেকে কিছু কিনতে যদি ইচ্ছা কর, তাহলে তোমাকে অপেক্ষা করতেই হবে, ঠায় ঐখানটায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে যতক্ষণ না সে ফেরি করতে করতে আবার ঐ রাস্তা দিয়ে ফিরে আসে। আবার এটাও ভেবে দেখা দরকার, ঠিক এই পথ দিয়েই সে আসতেও পারে, নাও পারে। এলেও হাসিমুখে তার জিনিস বেঁচবে কি না তারও কোন ঠিক নেই। সবই তাঁর ইচ্ছা। সেই মহাকাল সব নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমি সাধারণ মানুষ, তোমার ভাগ্য ফিরাব কি করে!'


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

পৃথিবীর জীব-কল্যাণ ও বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ভারতীয় আর্য(হিন্দু)-দের অবদানের এক ক্ষুদ্র অংশ

 এই উপমহাদেশ জ্ঞান চর্চায় সভ্য-পৃথিবীর পথ প্রদর্শক ছিল ভারতীয় মনীষা, তারই প্রমান মেলে এই পরিসখ্যানে। আজ আমেরিকা ইউরোপ আমাদের মাথার উপর ছড়ি ঘুরায়, আমরা কি তা একটুও ভেবে দেখি? কেন? আসলে আমরা আমাদের ইতিহাস জানিনা।

পৃথিবীর জীব-কল্যাণ ও বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ভারতীয় আর্য(হিন্দু)-দের অবদানের এক ক্ষুদ্র অংশঃ


=> দশমিক পদ্ধতির প্রথম প্রচলন ও ব্যবহার করেন-মহর্ষি আর্যভট্ট

=> প্রথম সাইন(sine) সারণী তৈরী করেন-আর্যভট্ট

=> Continued Fraction আবিষ্কার করেন-ভাস্কর আচার্য্য (Vaskar II)

=> শল্যবিদ্যার জনক (The Father of Surgery) বলা হয়- মহর্ষী শুশ্রুতকে

=> ঔষধের জনক (The Father of Medicine) বলা হয়- মহর্ষী চরককে।

=> প্রথম পরিপাক(Digestion), বিপাক(Metabolism) (দেহমধ্যে সজীব উত্পাদনের রাসায়নিক পরিবর্তন) ও রোগ প্রতিরোধ(Immunity) এই তিনের ধারনা প্রদান ও ব্যাখ্যা করেন-মহর্ষী চরক।

=> পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকার পরমাণু নাম করণ প্রথম করেন-কণাদ।

=> পৃথিবীর প্রথম বীজ গণিতের উপর বই রচনা করেন-মহর্ষি আর্যভট্ট.

=> পাই এর নির্ভুল মান ও পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রথম প্রায় নির্ভুল মাপেন- মহর্ষি আর্যভট্ট

=> কৃত্রিম জীন আবিস্কারক -হরগোবিন্দ খোরানা

=> প্লাস্টিক সার্জারীর জনক - মহর্ষি শুশ্রুত

=> শূন্যের (০) ব্যবহার প্রথম চালু করেন আর্য্যভট্ট

=> গাছের প্রাণ আছে তা সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু

=> পৃথিবীর প্রথম ও সর্ব প্রাচীন ২টি বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রাচীন ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ও তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ততকালে চীন, জাপান, গ্রিস, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরপের নানান অংশ থেকেও ছাত্ররা জ্ঞান অর্জন করতে আসত। এর মধ্যে নালন্দা ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি ধ্বংস করেন এবং তক্ষশিলারও একই পরিণতি হয়। বলাবাহুল্য এই বিশ্ববিদ্যালয় দুটো ধ্বংস না হলে এই উপমহাদেশ এখন ও পৃথিবীতে রাজত্ব করতো।

=> ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীনিবাস রামানুজন, মহাবীর, বৌধ্যায়ন, কাত্যায়ন, মানব, পিঙ্গল, মাধব কর, নাগার্জুন 

ইত্যাদিরা সকলেই হিন্দু কেউই সেকুলার না তালিকা বাড়ালে আর শেষ করা যাবে না।

উল্লেখ্য এখন নাসার ৩৬ শতাংশ বিজ্ঞানী ভারতীয় তথা হিন্দু, আর ভারতের ISRO-র কথা তো বাদই দিলাম ।

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

আজ্ঞাচক্র

 দেবী কালীর কপালের মধ্যিখানে জ্বলজ্বল করছে তৃতীয় নয়ন। তাই তিনি ত্রিনয়নী। এই তৃতীয় নয়নেই নাকি লুকিয়ে থাকে দেবীর দিব্যদৃষ্টি!

এ তো গেল দেবীর কথা। কিন্তু, আমরা? আমার-আপনার মতো আম আদমিরও কি তৃতীয় নয়ন থাকে?

আসলে তৃতীয় চক্ষু বিষয়টা কী? সেটা আমাদের আগে একটু বুঝে নিলে ভালো হয়।

মিথোলজি অনুযায়ী যা দেবীর ত্রিনয়ন, তা বাস্তবে আসলে মনঃসংযোগের এক উচ্চতর পর্যায়। যার মাধ্যমে সে গোটা বিশ্বকে অনুধাবন করতে পারে। সোজা ভাষায় বলতে গেলে, তৃতীয় চক্ষু বা 'থার্ড আই' সাধারণ মানুষের চেতনার এক বিশেষ ক্ষমতা, যা নিয়ন্ত্রণ করবে আমার-আপনার মন ও আবেগকে। নিয়মিত কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে আমি-আপনিও সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন।


কীভাবে আপনিও পেতেতে পারেন তৃতীয় নয়ন?

-

১) ধ্যানের অভ্যাস করুন। কপালের ঠিক মধ্যিখানে একটি নির্দিষ্ট কাল্পনিক বিন্দুতে মনঃসংযোগ করার চেষ্টা করুন। আমাদের দেহে (কল্পিত) সাতরকম চক্র রয়েছে, এক-একটি চক্রের সঙ্গে শরীর, মন ও আধ্যাত্মিকতার এক একরকম যোগ। এরকমই কোনও একটি চক্রকে ভেবে মনঃসংযোগের চেষ্টা করুন।


২) ধ্যানের জায়গা নির্দিষ্ট করুন। সাধারণত প্রকৃতির মাঝে খোলামেলা জায়গায় বসে ধ্যান করলে ভালো হয়।


৩) ধ্যানে বসারও নির্দিষ্ট ভঙ্গি আছে। মেঝেতে বজ্রাসনে/সুখাসনে বসুন। শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। হাত জড়ো করে কোলের উপর রাখুন। মাটিতে বসতে যদি খুব অসুবিধা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে হাঁটুন। সমস্ত চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করুন।


৪) মনঃসংযোগের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সামনে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি রাখতে পারেন।


৫) নিজেই একটা মন্ত্র বানান। চোখ বন্ধ করে বার বার আউড়ে চলুন সেটা। মনের বলুন শান্ত হতে। মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ান।


৬) অন্ধকার ঘরে শুয়ে শবাসন করে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নাভির উচু-নিচু হওয়ার প্রতি মনোযোগ দিন।


৭) ত্রাটক ও অশ্বিনী মুদ্রা সহযোগে জপ করুন।

--- মূল কথা 'আজ্ঞাচক্র' বা গুরুশরণ নিতে হবে।

----------------------------------

[**** এগুলো শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞের সাহায্য অবশ্যই নেবেন, নয়তো ক্ষতি হবে।***]

----------------------------------

উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় আজ্ঞাচক্র জাগরিত হয় আমাদের দেহস্থিত 'পিনিয়াল গ্রন্থি'-র সক্রিয়তায়। আসুন জেনে নিই পিনিয়াল গ্রন্থির বিষয়ে -----

২৪ ঘণ্টায় দেহের হরমোন ক্ষরণের চক্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এই 'দেহঘড়ি'। মানুষের মাঝে কয়েক ধরনের চক্র গড়ে উঠতে পারে। তবে আসল বিষয় লুকিয়ে রয়েছে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশে। হাইপোথ্যালামাসকে বলা হয় 'Master of Glands' অর্থাৎ গ্রন্থিদের গুরু।

মানুষের চোখে বিশেষ ধরনের ফটোসেনসিটিভ কোষ রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিশক্তি দিতে ব্যবহৃত হয় 'রডস' এবং 'কোনস' নামের কোষ। যখন চোখে আলো আসে তখন এই কোষগুলো মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাস অংশকে সতর্ক করে। এরাই এ তথ্য দেয় যে এখন দিন নাকি রাত? যখন হাইপোথ্যালামাস সিদ্ধান্ত দেয় যে এটা রাত, তখন পিনিয়াল গ্রন্থি মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে। এটি মানুষকে ঘুম এনে দেয়।

ঘুমে আছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ঘুম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠার কাজটা দেহের যে গ্রন্থি করে থাকে তার নাম পিনিয়াল গ্রন্থি যাকে বিজ্ঞানীগণ নাম দিয়েছে 'তৃতীয় নয়ন' হিসাবে। কারন এই গ্রন্থি আলোতে সংবেদনশীল। এই গ্রন্থি এক ধরনের হরমোন নিঃসরন করে যাকে বলা হয় মেলাটোনিন। এই মেলাটোনিন নিঃসরন হওয়ার সাথে সাথে দেহের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া শুরু হয় তখন মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এই গ্রন্থিটি অন্ধকারে ক্রিয়াশীল। সাধারত সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকে এর নিঃসরন শুরু হয় যা ভোরের আলো না দেখা পর্যন্ত চলতে থাকে। ভোরের আলো দেখামাত্র এর নিঃসরন বন্ধ হয়ে যায় তখন ঘুমন্ত মানুষ সয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠে। শহুরে মানুষ এবং গ্রামের মানুষের ঘুমের মধ্যে অনেক তফাৎ দেখা যায়। যেমন-শহুরে মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে টিভি দেখে বা বই পড়ে যার কারনে তাদের পিনিয়াল গ্রন্থি আলোর কারনে ক্রিয়াশীল হতে পারে না। পক্ষান্তরে গ্রামের মানুষেরা সন্ধ্যায় অন্ধকার হয়ে আসলে তাদের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরন হতে শুরু করে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। শেষ রাতে ভোরের আলো দেখা গেলেই পিনিয়ালের নিঃসরন বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘুমন্ত মানুষ এমনিতেই জেগে যায়। এটাকেই বলে 'নিদ্রার দেহ ঘড়ি'। একবার যদি আপনার দেহ ঘড়ির কার্য্যকারীতা কমে যায় তখন ঘুম আসার জন্য আপনার ভিতর অস্থিরতা দেখা দেবে এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে। এর থেকে পরিত্রান পেতে অনিদ্রা আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘুমের পিলের দাযরস্থ হয়।

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh


Share:

আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই মহাভারত সম্পর্কে

 আপনি কি মহাভারত পড়েছেন? পড়েননি? তা হলে জেনে নিন, মহাভারত কাব্যগ্রন্থটিতে মোট ১৮টি অধ্যায় তথা ‘পর্ব’ ও ১০০টি ‘উপপর্ব’ রয়েছে, আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই মহাভারত সম্পর্কে ---


(১) আদিপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৭৯০০ টি

ঋষি বৈশম্পায়ন রাজা জন্মেজয়ের প্রায়শ্চিত্ত যজ্ঞে তাঁকে এবং উপস্থিত ব্যক্তিদের মহাভারত কথা শোনান ও সেই কাহিনি শুনে লোমহর্ষণপুত্র সৌতি নৈমিষারণ্যে যজ্ঞরত শৌনক ও অন্যান্য মুনিদের ঐ কাহিনি শোনাতে শুরু করেন – ভৃগুবংশ পরিচয়, কুরুবংশ, মহারাজ শান্তনু ও ভীষ্মের কথা, পাণ্ডব ও কৌরবদের জন্ম, জতুগৃহদাহ, পাণ্ডব ও দ্রৌপদীর বিবাহ ও কৃষ্ণার্জুন কর্তৃক খাণ্ডববনদাহ।


(২) সভাপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ২৫১১ টি

ময়দানব কর্তৃক ইন্দ্রপ্রস্থে পাণ্ডবদের প্রাসাদ নির্মাণ, রাজসূয় যজ্ঞে যুধিষ্ঠিরের সম্রাট পদ লাভ ও কৌরবদের ঈর্ষা, শকুনির কপট দ্যূতক্রীড়ায় পাণ্ডবদের রাজ্য ও সম্পদ হরণ, দুঃশাসন কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ ও পাণ্ডবদের ১২ বছর বনবাস ও ১ বছর অজ্ঞাতবাস নির্ধারণ


(৩) বনপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ১১৬৬৪ টি

১২ বৎসরব্যাপী বনবাসে পাণ্ডবদের জীবনযাপন ও বিচিত্র কাহিনি শ্রবণ, অর্জুনের বিবিধ দৈবঅস্ত্র লাভ, কৃষ্ণ কর্তৃক দূর্বাসার দর্পচূর্ণ, জয়দ্রথের দ্রৌপদী হরণ।


(৪) বিরাটপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ২০৫০ টি

মৎস্যদেশে রাজা বিরাটের কাছে ছদ্মবেশে পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদীর আশ্রয়, যুদ্ধে কৌবরদের পরাজয়, উত্তরা-অভিমন্যুর বিবাহ।


(৫) উদ্যোগপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৬৬৯৮ টি

পাণ্ডব ও কৌরবপক্ষে মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি, যাদব সাহায্য প্রার্থনায় অর্জুন ও দুর্যোধনের দ্বারকায় গমন, অর্জুনের কৃষ্ণ প্রাপ্তি, পাণ্ডবদের শান্তিদূত রূপে শ্রীকৃষ্ণের হস্তিনাপুরে গমন ও বিভূতি প্রদর্শন।


(৬) ভীষ্মপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৫৮৮৪ টি

যুদ্ধারম্ভ, রণক্ষেত্র দর্শনে অর্জুনের বিষাদ, শ্রীকৃষ্ণের যোগধর্ম কথন ও বিশ্বরূপ প্রদর্শন, ভীষ্মের পরাক্রমে কৃষ্ণের ক্ষোভ ও অস্ত্রনিক্ষেপ, অর্জুন কর্তৃক ভীষ্ম দমন ও শরশয্যা নির্মাণ। এই পর্বে অর্জুনকে কৃষ্ণ মহামূল্যবান গীতা দান করেন।


(৭) দ্রোণপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৮৯০৯টি

দ্রোণকে সেনাপতিত্বে বরণ, সপ্তরথী কর্তৃক অভিমন্যু বধ, জয়দ্রথ বধ, যুধিষ্ঠিরের মিথ্যা বাক্যের ছলনায় ধৃষ্টদ্যুম্ন কর্তৃক দ্রোণবধ।


(৮) কর্ণপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৪৯৬৪ টি

কর্ণকে সেনাপতিত্বে বরণ, ভীম কর্তৃক দুঃশাসন বধ, মেদিনীতে কর্ণের রথচক্রের পতন ও সেই সুযোগে অর্জুন কর্তৃক কর্ণবধ।


(৯) শল্যপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৩২২০টি

যুদ্ধের অন্তিম দিন, শল্যবধ, সহদেব কর্তৃক শকুনিবধ, ভীম কর্তৃক দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ ও দুর্যোধনের মৃত্যু


(১০) সৌপ্তিকপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৮৭০টি

রাতে গোপনে অশ্বত্থমার পাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ, ঘুমন্ত দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র, ধৃষ্টদ্যুম্নাদি হত্যা, অশ্বত্থামা ও অর্জুনের যুদ্ধ, অশ্বত্থামার দিব্য শিরোমণি হরণ।


(১১) স্ত্রীপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৭৭৪ টি

ধৃতরাষ্ট্র কর্তৃক লৌহভীম চূর্ণকরণ, স্বজনহারাদের বিলাপ ও মৃতদেহ সৎকার, কৃষ্ণের প্রতি গান্ধারীর অভিশাপ।


(১২) শান্তিপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ১৪৭৩২টি

যুধিষ্ঠিরের রাজপদে অভিষেক, যুধিষ্ঠিরের প্রতি ভীষ্মের হিতোপদেশ ও ধর্মব্যাখ্যা।


(১৩) অনুশাসনপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৮০০০টি

ভীষ্মদেবের স্বর্গারোহণ ও যুধিষ্ঠিরের রাজ্যশাসন।


(১৪) অশ্বমেধপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৩৩২০ টি

যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞ, অর্জুনের দিগ্বিজয়ে যাত্রা, বভ্রুবাহন ও অর্জুনের যুদ্ধ।


(১৫) আশ্রমবাসিকপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ১৫০৬ টি

ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, কুন্তী ও বিদুরের বানপ্রস্থ গ্রহণ, বিদুরের দেহত্যাগ, দাবানলে বাকিদের মৃত্যু।


(১৬) মৌষলপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ৩২০ টি

যদুবালকদের প্রতি মুনিদের অভিশাপ, প্রভাসে মৌষলযুদ্ধে যদুবংশ ধ্বংস, বলরাম ও কৃষ্ণের মহাপ্রয়াণ, দ্বারকা নগরীর পতন।


(১৭) মহাপ্রস্থানিকপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ১২৩ টি

পাণ্ডব ও দ্রৌপদীর মহাপ্রস্থানে গমন, দ্রৌপদী, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেবের পতন


(১৮)স্বর্গারোহণপর্ব -- শ্লোক সংখ্যা -- ২০৩ টি

ধর্ম কর্তৃক যুধিষ্ঠিরকে পরীক্ষা, যুধিষ্ঠিরের নরকদর্শন, পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদীর স্বর্গলাভ ।

লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

লক্ষ্মীলাভ

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, ভারতীয় ধর্মীয় শাস্ত্রে লক্ষ্মীকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বেদ ও পুরাণে তাদের কাহিনী ভরপুর আছে। লক্ষ্মীর অনুপস্থিতিতে গোটা বিশ্ব অর্থহীন। কেবল লক্ষ্মীই অর্থ, কর্ম, সুখ, জাঁকজমক ও ঐশ্বর্য দিয়ে থাকেন।

তাই আপনার আর্তিক তৃষ্ণা থাকলে পদ্মবীজের একটা মালা কিনে আনুন। বাড়ীতে এনে, সরসের তেল মাখিয়ে রৌদ্রস্নাত করুন। আগামী প্রতিটি বৃহস্পতিবার, প্রতিটি পূর্ণিমা, অক্ষয় তৃতীয়া, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা ও দেওয়ালিতে কাজে লাগবে।

হিন্দু ধর্মে পদ্মফুলের খুব গুরুত্ব রয়েছে। এই পদ্ম ফুলের বীজের মালাকে বলা হয় পদ্মের মালা বা কমলগাট্টা মালা। আসুন, জেনে নিই তন্ত্রের মাধ্যমে এর ছয়টি ব্যবহার এবং এর সুবিধা।

গুরুজনেরা বলেন যে পদ্মের পাঁচটি অংশে দেবী কমলা বাস করেন। দেবী কমলা পদ্মের প্রতিটি অঙ্গকে পছন্দ করেন তবে তিনি পদ্মের বীজ অর্থাৎ কমলগাট্টা সবথেকে বেশি পছন্দ করেন। এগুলি সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু তারা প্রায় খণ্ডিত আকারে। এর মালা মন্ত্র জপ করার জন্যও তৈরি করা হয়। তবে জপমালাটি অটুট হওয়া উচিত।

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, ভারতীয় ধর্মীয় শাস্ত্রে লক্ষ্মীকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বেদ ও পুরাণে তাদের কাহিনী ভরপুর আছে। লক্ষ্মীর অনুপস্থিতিতে গোটা বিশ্ব অর্থহীন। কেবল লক্ষ্মীই অর্থ, কাজ, সুখ, জাঁকজমক ও ঐশ্বর্য দেয়।

★ কমল গাট্টার মালা মা লক্ষ্মীর উপাসনার জন্য শুভ বলে বিবেচিত হয়। এটি পরলে দেবী লক্ষ্মীর বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়া যায়। 

★ এই মালা পরিধানকারী শত্রুদের জয় করে, শত্রুরা দাঁড়াতে পারে না ।

★ এই মালা দিয়ে কালীমন্ত্র জপ করলে তাড়াতাড়ি সিদ্ধিলাভ হয়। 

★ অক্ষয় তৃতীয়া, দীপাবলি, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় যারা এই মালা দিয়ে লক্ষ্মীর জপ করেন তারা বিশেষভাবে উপকৃত হন।

★ কমলগট্টার ১০০৮ টি বীজ ঘিয়ে ভিজিয়ে ১০০৮ বার যজ্ঞাগ্নিতে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে  আহূতি দিলে দারিদ্র্যতা দূর হয় এবং প্রচুর সম্পদ লাভ হয়। 

★ একটি দোকান, অফিস বা প্রতিষ্ঠানে পদ্মবীজের মালা বিছিয়ে দিয়ে এবং তার উপর দেবী লক্ষ্মীর ছবি বা মুর্তি বসিয়ে পূজা ও উপাসনা করা ব্যবসায়ে উন্নতির জন্য ভালো।


লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh

Share:

হেরম্বগণেশ হলেন গণেশের ৩২টি জনপ্রিয়তম রূপের অন্যতম ।

হেরম্বগণেশ বা হেরম্ব (সংস্কৃত: हेरम्ब, Heraṃba) হলেন হিন্দু দেবতা গণেশের (গণপতি) পঞ্চমুণ্ডবিশিষ্ট মূর্তি। ইনি হেরম্বগণপতি নামেও পরিচিত। নেপাল রাষ্ট্রে এই মূর্তিটি বিশেষ জনপ্রিয়। গণেশের তান্ত্রিক উপাসনায় এই মূর্তিটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হেরম্বগণেশ হলেন গণেশের ৩২টি জনপ্রিয়তম রূপের অন্যতম।

মুদ্গলপুরাণ গ্রন্থে ‘হেরম্বগণপতি’ নামটি হল গণেশের ৩২টি নামের অন্যতম। স্কন্দপুরাণ গ্রন্থে হেরম্ববিনায়ককে বারাণসীর নিকটস্থ ৫৬ জন বিনায়কের অন্যতম বলা হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ (৮টি নাম), পদ্মপুরাণ (১২টি নাম) ও চিন্ত্যাগম (১৬ গণপতি) গ্রন্থে গণেশের যে নামের তালিকা পাওয়া যায়, তাতে হেরম্ব নামটি অন্যতম।গণেশপুরাণ গ্রন্থেও গণেশের একটি বিশেষণ হল হেরম্ব।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থে ‘হেরম্ব’ শব্দটির অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘হে’ অক্ষরের মাধ্যমে অসহায়তা বা দুর্বলতা বোঝায় এবং ‘রম্ব’ শব্দটির মাধ্যমে দুর্বলকে রক্ষা করা ও তাদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা বোঝায়। অর্থাৎ ‘হেরম্ব’ শব্দের অর্থ ‘দুর্বলের রক্ষাকর্তা’।

হেরম্বগণেশের মূর্তিতে পাঁচটি হস্তিমুণ্ড দেখা যায়। চারটি চার প্রধান দিকে মুখ করা এবং পঞ্চম মস্তকটি উপরের দিকে মুখ করা অবস্থায় থাকে। হেরম্বগণেশের পাঁচটি মস্তকের বর্ণ তার পিতা শিবের পাঁচ রূপভেদ ঈশান, তৎপুরুষ, অঘোর, বামদেব ও সদ্যোজাতের গাত্রবর্ণের অনুরূপ। এই পাঁচটি মস্তক শক্তির প্রতীক। তার গাত্রবর্ণ স্বর্ণাভ হলুদ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার গায়ের রং সাদা।

হেরম্বগণেশের বাহন সিংহ। সিংহবাহন হেরম্বগণেশের রাজকীয় সত্ত্বা ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির প্রতীক। কথিত আছে, এই বাহনটি তার মা পার্বতীর বাহন। পার্বতীর থেকেই তিনি এই বাহনটি পেয়েছেন। সিংহ বাহন হলেও, কোনো কোনো মূর্তিতে গণেশের নিজস্ব বাহন মুষিককেও (ইঁদুর) সঙ্গে দেখা যায়। ১১শ-১৩শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ওড়িশায় নির্মিত একটি মূর্তিতে হেরম্বগণেশের আসনের পাশে একটি ইঁদুর দেখা যায়। নেপালের ভক্তপুরে নির্মিত একটি মূর্তিতে দেখা যায়, হেরম্বগণেশ দুটি ইঁদুরের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। নেপালে হেরম্বগণেশকে সাধারণত সিংহ ও ইঁদুরের সঙ্গে দেখা যায়।

মূর্তিতত্ত্ব-সংক্রান্ত শাস্ত্রগুলিতে হেরম্বগণেশের দশটি হাতের উল্লেখ আছে। তিনি একটি পাশ, দন্ত (নিজের ভগ্নদন্ত), অক্ষমালা, একটি পরশু (যুদ্ধের কুঠার), তিনমাথাওয়ালা মুগুর ও একটি মোদক ধরে থাকেন। দুটি হাত দেখা যায় বরদামুদ্রা (বরদানকারী ভঙ্গিমা) ও অভয়মুদ্রায় (অভয়দানকারী ভঙ্গিমা)। অন্যান্য বিবরণ অনুসারে, তার হাতে একটি মালা ও একটি ফল থাকে। কোনো কোনো মূর্তিতে তার হাতে একটি অঙ্কুশ থাকে। কোনো কোনো মূর্তিতে আবার দেখা যায়, হেরম্বগণেশের কোলে তার স্ত্রী বসে আছেন এবং হেরম্বগণেশ তাকে আদর করছেন।

হেরম্বগণেশ হলেন দুর্বলের রক্ষাকর্তা। তিনি নির্ভীকতা ও শত্রুকে জয় বা ধ্বংস করার শক্তি প্রদান করতে পারেন।

গণেশের তান্ত্রিক পূজায় হেরম্বগণেশ জনপ্রিয়। হৈরম্ভ বা হেরুম্ব সম্প্রদায় নামে একটি তান্ত্রিক সম্প্রদায়ে একজন দেবী বা শক্তি সহ হেরম্বগণেশ পূজিত হন। এই দেবীকে তার স্ত্রী মনে করা হলেও সাধারণভাবে তাকে তার মা পার্বতীই মনে করা হয়। হেরম্বগণেশ ছয়টি অভিচার ক্রিয়ার (অশুভ উদ্দেশ্যে মন্ত্রের প্রয়োগ) সঙ্গে যুক্ত। মনে করা হয়, তার মন্ত্র উচ্চারণ করে মন্ত্র-উচ্চারণকারী নিজের শত্রুকে মোহগ্রস্থ করতে পারেন, আকর্ষণ করতে পারেন, ঈর্ষান্বিত করতে পারেন, বশ করতে পারেন, অসার করতে পারেন বা হত্যা করতে পারেন।


তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

০১।  Royina Grewal (২০০৯)। Book of Ganesha। Penguin Books Limited। পৃষ্ঠা 67–8। আইএসবিএন 978-93-5118-091-3।

০২।  Grimes, John A. (১৯৯৫), Ganapati: Song of the Self, SUNY Series in Religious Studies, Albany: State University of New York Press, পৃষ্ঠা 52–59, আইএসবিএন 0-7914-2440-5

০৩।  Greg Bailey (২০০৮)। Gaṇeśapurāṇa: Krīḍākhaṇḍa। Otto Harrassowitz Verlag। পৃষ্ঠা 656। আইএসবিএন 978-3-447-05472-0।

০৪।  Rao, T.A. Gopinatha (১৯১৬)। Elements of Hindu Iconography। 1: Part I। Madras: Law Printing House। পৃষ্ঠা 46–7, 57, 65।

০৫।  Satguru Sivaya Subramuniyaswami। Loving Ganesha। Himalayan Academy Publications। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 978-1-934145-17-3।

০৬।  Alexandra Anna Enrica van der Geer (২০০৮)। Animals in Stone: Indian Mammals , Sculptured Through Time। BRILL। পৃষ্ঠা 78, 81, 335, 345। আইএসবিএন 90-04-16819-2।

 ০৭। T.K.Jagannathan। Sri Ganesha। Pustak Mahal। পৃষ্ঠা 104। আইএসবিএন 978-81-223-1054-2।

 ০৮। Martin-Dubost, Paul (১৯৯৭), Gaņeśa: The Enchanter of the Three Worlds, Mumbai: Project for Indian Cultural Studies, পৃষ্ঠা 158, আইএসবিএন 81-900184-3-4

০৯।  Roshen Dalal (২০১৪)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books Limited। পৃষ্ঠা 470। আইএসবিএন 978-81-8475-277-9।

Share:

০২ সেপ্টেম্বর ২০২০

কেন হিন্দু মেয়েরা ধর্মান্তরিত হয় ? পর্ব - ২

প্রশ্ন : কেন হিন্দু মেয়েরা ধর্মান্তরিত হয়? পর্ব - ২

উত্তর : গত পর্বে মূলত সংক্ষিপ্ত আলোচনা ছিল। তাহলে আজ একটু বড় পরিসরে আলোচনা করার ইচ্ছে প্রকাশ করছি। কি কেন কিভাবে?

১.কি জন্য ধর্মান্তরিত হয়?

২.কেন ধর্মান্তরিত হয়?

৩. কিভাবে ধর্মান্তরিত হয়?

একটু ভেবে দেখা যাক? নিজেকে প্রশ্ন করুন উত্তর এমনিতে দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।

১....কি জন্য ধর্মান্তরিত হয়?

উত্তর : খুব সহজ প্রশ্ন আবার খুব কঠিন প্রশ্ন।

১. আমরা আসলে নিজেদের ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে মুখ বহু আগেই ঘুরিয়ে নিয়েছি। তবে আমরা আবার এতটাই উদার যে অপরের সংস্কৃতি গুলোকে আমরা নিজের ভেবে নিয়েছি।

২. আমাদের মধ্যে জড়তা প্রচুর, কোন ব্যাক্তি যে যদি ধর্মীয় কিছু সমন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে সে তেমন স্বচ্ছন্দ বোধ করে না।

৩. পরিবার বিরাট অংশে দ্বায়ী। আপনার সন্তান দের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের প্রাথমিক বলি আর গুরুদ্বায়িত্বই বলি না কেন, পরিবারের ভূমিকা টা অপরিসীম। কিন্তু আমরা চাই সব কিছু করুক কিন্তু মাঝখান থেকে ধর্মীয় ব্যাপারটি না খুব সুন্দর করে বাদ চলে যায়।

৪. সেকুলারিজম। আমারা তো সর্বধর্ম সমান এই রুপ মতবাদ নিয়ে চলি। কোন মুসলিম কি গিয়ে একটু জিজ্ঞাসা করুন, যে সেকুলারিজম মানে কি না? সে বলবে আমি মুসলিম, আমি সেকুলারিটি মানি না, আর কোনদিন মানবও না। তাহলে আপনি হিন্দু, আপনার হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিতে সমস্যা কোথায়। সব সমান ভাবলে একটি প্রশ্নের উত্তর তাহলে আপনাদের কাছে থাকার কথা যারা সেকুলারিটি মানেন! উত্তর টি দিয়ে যাবেন

প্রশ্নটি হলো : হাতের পাঁচ টা আঙ্গুল কেন সমান না? সব সমান থাকা উচিত ছিল বোধ হয়। সবাই কেন আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ের?

আপনি সেকুলারিটি মানেন আর নাই মানেন তাতে আমার কোন আপত্তি নেই! সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু এই সেকুলারিটির কারনে খুব সুন্দর করে আমাদের ধর্মীয় ছেলে/ মেয়েরা ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মের অনুসারী হচ্ছে। যদি বাচতে চান এই সেকুলার বা আমি সেকুলারিটি মানি এইসব কথা বলা এইক্ষণে বাদ দিন। না হলে সেকুলার করতে করতে নিজেই ফির আবার এই ফাদে পা ফেলে দিয়েন না যেন!

২...এখন আসি কেন ধর্মান্তরিত হয়? এবার আরো একটু গভীর ভাবে ভাবার চেষ্টা করি?

উত্তর : উত্তর খুঁজতে গেলে সবার একটা কমন উত্তর পাওয়া যাবে যে, ধর্মীয় শিক্ষা ও সচেতনতা নেই। সঠিক কিন্তু পুরোপুরিভাবে সঠিক নয়। ধরুন সেই ছেলে/ মেয়েটি জানে যে লাভ-জিহাদ কি? তারপরেও সে নিজে এর শিকার হলো? এবং ধর্ম চেঞ্জ করল? তাহলে কেন চেঞ্জ করল সে?

উত্তর প্রেক্ষিতে আসতে পারে প্রকৃত সত্য খোজার অনিচ্ছা। একজন ব্যাক্তি আজবীন পৌরাণিক গল্প শুনে আসছে আর গীতাও পড়েছে। ধরে নিলাম সে গীতা সম্পূর্ণ ভাবেই শেষ করেছে। যেহেতু বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বেদ পৌছায় নি সেহেতু এটাকে আলাদা করে রাখি। এখন অনেকেই বলবেন যে দাদা বেদকে কেন আলাদা করে রাখলেন? আচ্ছা বেদকে কেন আলাদা করলাম এর কারণ হলো, আমার কাছে বেদ আছে, আপনার কাছেও আছে কিন্তু ১০০ জনের মধ্যে ৯০-৯৫ জনের কাছে বেদ নেই তাই বেদকে আলাদা করে রাখলাম।

শ্রীমদ্ভাগবত গীতা প্রায় সবার ঘরে ঘরেই আছে তাই ছোট একটি শ্লোক বলি। অধ্যায় ৭, শ্লোক : ২০

কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেন্যদেবতাঃ৷
তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া৷৷২০

অর্থ: যাদের মন জড়-কামনা বাসনা দ্বারা বিকৃত তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয়ে এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।

ব্যস এখন কাজ শেষ। প্রশ্ন আসতে পারে যে তুমি কয়টা ঈশ্বর মানো? ঈশ্বর তো একজন আর যেখানে তোমাদের গীতায় পর্যন্ত বলা আছে দেব দেবীর পূজা নিষিদ্ধ। সেখানে এত পূজো করে কি হবে। তোমাদের বেদেও কিন্তু কোন প্রতিমাপূজার কথা বলা নেই।

এরপর ছোট ভাবনা আসবেই,,, কি? সত্যি নেই! তাহলে কি আমি ভুল পথে ছিলাম! আমি কি এখনো ভুল পথেই আছি? অনেকে হয়তো প্রকৃত সত্য না জেনেই সব কিছু গুলিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে খোজার চেষ্টা করেন, যারা খোজার চেষ্টা করেন তাদের ধন্যবাদ। আর আমাদের মন এমন একটি জিনিস যে পূর্বের ভুল গুলোকে সংশোধন করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। যেহেতু আপনার মাথায় ঢুকে গেছে যে আপনি ভুল ছিলেন!

এরপরে আসে দারিদ্র্যতা আর নিচু বর্ণের সমস্যা।

কর্ম অনুসারে মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণবিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে তবে বুঝতে হবে কর্ম অনুসারে। জন্ম অনুসারে নয়। তাই জন্ম আর কর্মকে দুইয়ে মানুষে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। শংকর ভাষ্যে আপনি পাবেন যে নারীদের বেদ পড়ার অধিকার নেই আবার কোন নিচু বর্নের লোক বেদ পাঠ শুনলে তার কানে গরম শিষা ঢেলে দেওয়ার কথা পর্যন্ত বলা হয়েছে। তাহলে যে ধর্মে নারীদের বেদ পড়ার অধিকার নেই, নিচু বর্নের সাথে এত হীন আচরণ করা হয় সেটাকি আদেও কোন ধর্ম হতে পারে ? আচ্ছা বলুন তো নিচু বর্নের লোকেদের মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় কিনা? পরক্ষনে আপনার উত্তরটিও হবে না, আসলেই তো এতো বুজরুকি। এতো কোন ধর্মই না। এরপর আসবে মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কথা। রামচন্দ্র শম্বুক নামে একজন শুদ্রকে হত্যা করেছিল। তাহলে কিভাবে হবে বলো? এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিয়ে আরো কিছু অপপ্রচার চলবে যেমন টা চলেছে ভগবান রামচন্দ্রের বেলায়। এরপরে মনে হওয়া টা কি স্বাভাবিক নয় যে আপনার পদ্ধতিটা ভুল। আপনারা ভুল পথে আছেন।

আচ্ছা আপনিই বলুন তো আমরা জানি যে পৃথিবী গতিশীল ও তা সুর্যের চারদিকে ঘোরে। কিন্তু বেদে বলা হয়েছে, “পৃথিবী স্থির ও নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে “ আপনি খুব সুন্দর ভাবেই বলবেন ওহ আমি তো জানতাম না এই ব্যাপারে। পরক্ষণে অপরদিক থেকে উত্তর আসবে এবার আপনি নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন? এখনো কি নিজ ধর্মকে সঠিক বলবেন? যেখানে সব কিছুই ভুয়ো।

৩. কিভাবে এই ধর্মান্তরকরণ প্রক্রিয়াটি চলমান?

প্রথমত আপনাকে প্রেম দ্বারা বশীভূত করা হয় এবং আপনি প্রেমে এতটাই অন্ধ হয়ে যান যে তার দ্বারা উচ্চারিত প্রত্যেকটি শব্দকে আপনি সত্য বলে স্বীকার করতে থাকেন। তখন সে আপনাকে যাহাই বলিবে তাহাই আপনি মানবেন। সত্য মিথ্যার ফারাক তো পরে আসবে অনেক। কেন ধর্মান্তরিত হয়? ওই অংশটুকু পড়লে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা।

এরপর বাকি থাকে আমাদের টিভি সিরিয়াল আর মুভির মতো জায়গা টা,,,, এই জায়গাটাতে তো হিন্দু ধর্মকে খুব ভালো মতোই ছোট করার কাজ টি করে ফেলেছে। টিভি সিরিয়াল আর মুভি এতটাই অনুপ্রাণিত করে যে অর্ধেক কাজ ওইখানেই হয়ে যায় আর বাকি অর্ধেক মানুষেরা করে। ধর্মান্তরিত হবার জন্য মিডিয়ার সাপোর্ট দরকার যদি মিডিয়া সেই সাপোর্ট দিয়েই দেয় তাহলে তো কথাই নেই কোন। মিডিয়ার দৌলতে প্রক্রিয়া এখন খুব সোজা।

দারিদ্র হলে তো কথাই নেই সুযোগ সুবিধার নাম করে হলেও শেষ পর্যন্ত ধর্মান্তরকরণ এর খাতায় সবুজ টিক পড়বেই পড়বে।

পিকে মুভির একটা অংশ বলি

" সাফরাজ কাভি ধোকা নেহি দেগা "

সমালোচনা বেশি করে ফেলেছি বোধ হয়। আচ্ছা এবার থামি তাহলে । সাফরাজ ধোকা দেয় কি না? সে উত্তর তো সবাই জানে এর জন্য অনেক মেয়েকেই বস্তাবন্দী লাশ হয়ে যেতে হয়।

আমি শুধু ধারণা গুলো দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। একটু চোখ কান খুলা রাখলে দেখবেন যে এইরকম হাজার টা ঘটনা সামনে চলে আসবে। আমাদের অবস্থা মহাত্মা গান্ধীর ওই উক্তির মতো যে এক গালে চড় মারলে আরেক গাল এগিয়ে দিতে হবে। যাতে আরো একবার চড় মারতে পারে। নিজে সচেতন হয়ে যান না হলে এখন একটি দুইটি খবর আসছে, হয়তো সামনের দিনে দশটি পর্যন্ত খবর আসতে পারে।

পারিবারিক ধর্মীয় কাঠামো আরো শক্তিশালী হবার দরকার বলে আমি মনে করি কিন্তু ধর্মীয় কাঠামো যতই শক্তিশালী হোক না কেন? যদি নিজের সদিচ্ছা না থাকে তাহলে কিছুই হবে না। শুধু ধর্মীয় জ্ঞান না জানা ব্যাক্তিরা ধর্ম ত্যাগ করছে না। অর্ধ জ্ঞান নিয়ে যারা জীবিত আছে আর যারা পৌরানিক ব্যাপারে বিশ্বাসী তারাও কিন্তু এই ফাদে পা দিচ্ছেন। সময় থাকতে নিজে সাবধান হন আর অপরকে সাবধান করুন।

দুইটি বই পড়লে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে

"সত্যার্থ প্রকাশ" এই বইটি পড়লে নিজেই বুঝতে পারবেন যে ঘটনা কি?

সত্যার্থ প্রকাশের ডাউনলোড লিংক :

https://drive.google.com/…/10FGs-BatALm0m2h5mtcVhMPc-…/view…

আর এই বইটি শুধু মাত্র বাস্তবতা জানার জন্য পড়া উচিত,,, কি হয় লাভ জিহাদের ফলে?

বইয়ের নাম : যখন আমির আনুষ্কার সাথে দেখা করেছিল

ডাউনলোড লিংক :
https://drive.google.com/…/1FkcR4jUqMxZiKh_Mh_TjE7ISL…/view…

পড়তে থাকুন আর জানতে থাকুন, সর্বোপরি নিজে সচেতন হন আর ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। প্রশ্ন জাগলে পোস্ট করুন অথবা কমেন্ট করুন।

অবশেষে say not to Love Jihad

 Post: Koushik Basak Koushik


 

Share:

কেন হিন্দু মেয়েরা ধর্মান্তরিত হয় ? পর্ব - ১

লাভ জিহাদ অনেকটাই নীরব ঘাতকের মতোন কিন্তু এই নীরব ঘাতককে প্রতিরোধ না করতে পারলে এটাই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর জন্য কোন অস্ত্রের দরকার নেই।
 

কেন হিন্দু মেয়েরা ধর্মান্তরিত হয়? পর্ব - ১

উত্তর: এটার উত্তর অনেক ভাবেই দেওয়া যেতে পারে এখন আপনারা যদি এই টাইপের মেয়েদের একটু background ঘাটাঘাটি করেন তাহলে যে জিনিসগুলো কমন পাবেন ।

১. সব ধর্ম সমান। আমরা তো মানুষ নাকি তাছাড়া সব কিছুতেই ভাল খারাপ আছে।

২. এরপর এদের সার্কেল টাতে সবচাইতে বেশি সমস্যা , স্কুল বা কলেজে এই ধর্মীয় বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দুইটা কাজ করা হয়
১. যা বলছে তাকে সমর্থন দেওয়া
২. না হয় চুপ করে যাওয়া

৩. এই পয়েন্ট ভয়ংকর গুরুতর এইসব মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠে এটা খুব স্বাভাবিক এবং নির্দ্বিধায় বলা যায় যে এই মেয়েটির ধর্মীয় জ্ঞান শূন্য। এই জায়গাটা দুইটি কারনে হতে পারে,

১. বাবা- মায়ের কারণে অথবা ২. নিজের সদিচ্ছার অভাব

**আমাদের সনাতনী বাবা-মায়েদের সংস্কৃতি চর্চা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় চর্চার চেয়ে। তাই এটি একটি কারণ হতে পারে। এখানে আমি বলছি না যে সংস্কৃতি চর্চা বাদ দিয়ে দেওয়া হোক কিন্তু সংস্কৃতি পাশাপাশি ধর্মীয় চর্চাটাও অব্যাহত রাখাটা দরকার। আর নিজের সদিচ্ছার অভাব অনেকের মধ্যেই আছে সেটা বলাই বাহুল্য। তাহলে একটা ঘটনা বলি যা আমার এক প্রাইভেটে ঘটেছিল একদিন স্যার ৩ জন মেয়েকে পর্যায়ক্রমে দাঁড়া করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি?

১ম জন বলল শ্রীমদ্ভগবদগীতা
২য় জন বলল রামায়ণ
৩য় জন বলল মহাভারত। অবস্থান টা ঠিক এই রকম যেখানে এই ৩ জনের একজনেও প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম টুকু জানে না। এতেই বুঝা যায় যে ধর্মচর্চা কতটুকু করে বা তাদের আগ্রহ কতটুকু??? এদের ৩ জনের দ্বারা বাকি সবাইকে হয়তো বিচার করাটা মুশকিল কিন্তু অনেকের অবস্থা এই ৩ জনের মতোন।

৪. বন্ধু - বান্ধব এইটাও একটা এক্স ফ্যাক্টর। কিভাবে? এই মেয়েদের সাথে কি ঘটেছে তা আমরা কেউ জানি না! তবে অনেক বন্ধুরাই এই জায়গাটায় অনুপ্রেরণার জোগান দেয়।

" আরে কি হবে? ও তো মানুষ আর তাছাড়া ভালোবাসার কোন ধর্ম হয় না " accept করে নে আর এমনিতেও ছেলে হিসেবে ও খুব ভাল। তোকে ভালোই রাখবে। আর ও মানুষ হিসেবেও সৎ আর এখন সৎ মানুষ পাওয়াটা তো ভাগ্যের ব্যাপার। তুই তো ভাগ্যবতী। ব্যাস এইসব কথার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে এবং প্রাণপ্রিয় বন্ধুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই ভুল পদক্ষেপ তারা নেয়। আর একটি ভুল সারা জীবনের কান্না।

৫. এরপর ধীরে ধীরে মনুষ্যধর্ম তথা সেকুলারিটি থেকে বের হয়ে আসল পরিচয় প্রকাশ পায়। তারপরের ঘটনা সবার জানা।

পর্যায়ক্রমিক ঘটনাটা এমন যে,,,,

প্রথমে ভাল মানুষের অভিনয় > সাহায্য দ্বারা বা কোন গুণাবলী দ্বারা আকৃষ্ট > তারপর প্রেম প্রস্তাব > তারপর প্রেম মানে না ধর্ম > সেকুলারিটি > প্রেম পর্বের শুরু > ধীরে ধীরে সেকুলারিটি ত্যাগ > ইসলামের সৌন্দর্য্য > সনাতন ধর্মের ভুল > পার্থক্য পর্ব শেষ > এরপর জান্নাতি লোভ > অতঃপর ধর্ম ও পরিবার ত্যাগে বাধ্য করা > বিবাহ > অত্যাচার > ধর্ষণ > তালাক এখন অনেকে বেচে যায় প্রাণে তবে অনেকের ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত যায় > মৃত্যু

ব্যস শেষ। এখন এই মেয়েদের গুলি করে মারে দিলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। দেখবেন দুইমাস/ দুই বছর পর কোন ঝোপঝাড় বা জঙ্গল বা রাস্তার ধারে বস্তাবন্দী লাশ হয়ে আছে। কর্মফল বলে কিছু একটা আছে।

করনীয় বলতে গেলে অনেকেই অনেক কিছু বলবেন জানি,, তবে এতটুকু জিনিস আগে প্রথমে পরিষ্কার করতে হবে যে,

১. সেকুলারিটি বাদ। যতদিন সেকুলারিটি থাকবে ততদিন ফাদে পড়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

২. ধর্মীয় চর্চার প্রতি মনোযোগী হতে হবে

৩. পিন মারা লোক যারা অনুপ্রাণিত করে যে "আরে ওই ছেলে ভাল হ্যান ত্যান " তাদের থেকে সম্পর্ক বিচ্ছন্ন করতে হবে। না হলে দূরত্ব বজায় চলা উচিত অথবা এড়িয়ে যাও

৪. সব কিছু সমান এই দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিতে হবে। হাতের পাচ টা আঙ্গুল ও কিন্তু সমান না। গর্বের সাথে বলো যে আমি হিন্দু।

৫. উপোরক্ত ৪ টি বিষয় মানাটা জরুরি।

নিন্মে একটি বই রিকমান্ড করে দিলাম

"সত্যার্থ প্রকাশ" এই বইটি পড়লে নিজেই বুঝতে পারবেন যে ঘটনা কি?

সত্যার্থ প্রকাশের ডাউনলোড লিংক :

https://drive.google.com/…/10FGs-BatALm0m2h5mtcVhMPc-…/view…

আর এই বইটি শুধু মাত্র বাস্তবতা জানার জন্য পড়া উচিত,,, কি হয় লাভ জিহাদের ফলে?

বইয়ের নাম : যখন আমির আনুষ্কার সাথে দেখা করেছিল

ডাউনলোড লিংক :
https://drive.google.com/…/1FkcR4jUqMxZiKh_Mh_TjE7ISL…/view…

সর্বোপরি শিক্ষণীয় ব্যাপার আমাদের ধর্মের মেয়েদেরকে এই সব ব্যাপার গুলোতে সজাগ করতে হবে। ১ জন ভুল পথে গেলে তার দেখাদেখি যাতে অন্য কেউ ভুল পথে না যায়। এই কারণে ধর্মীয় শিক্ষা এবং এই সম্পর্কে অবগত করা একান্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।। আর যে কোন প্রশ্ন মনের মধ্যে জাগলে শাস্ত্রপৃষ্ঠায় পোস্ট করবেন সবাই চেষ্টা করবে আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবার। ধন্যবাদ সকলকে। নমস্কার

শ্রেয়ান স্বধর্মো বিগুনোঃ পরা ধর্মা স্বনুষ্ঠিতাৎ।
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ং পরো ধর্মো ভয়াবহ।।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা(৩/৩৫)

অর্থাৎঃ- স্বধর্মে যদি দোষ থাকে পরো ধর্ম হতে তাও ভালো, স্বধর্মে সাধনে যদি মৃত্যু হয় তাও মঙল জনক।

এবং সবশেষে say no to love_Jihad


Post: Koushik Basak Koushik


 

Share:

সনাতন ধর্মের পরিনতির কারণ

( সনাতন ধর্মের ধংসের জন্য ব্রাহ্মণেরা দায়ী নয়, মুলে ছিল নতুন ধর্মের প্রবর্তন তথা গৌতম বৌদ্ধের বেদ উপনিষদ গীতাকে বাদ দিয়ে নতুন মতবাদ চালু, সনাতন ধর্মাল্বীদের মধ্যে অনৈক্য, ক্ষত্রিয় রাজাদের স্বেচারিতা, অনৈক্য, যুদ্ধ ও ধর্মান্তর করণ। বিদেশী দখলদারদের হামলা, দখল বিশেষ করে মোগলদের কঠোর অত্যাচার,গণহত্যা, ধর্ষন, সর্বশেষ সেকুলার ও নাস্তিকতা)
তথ্যসুত্রঃ ভারত বর্ষের ইতিহাস।

৫৬৭ খিষ্টপূর্বাব্দ গৌতম বুদ্ধের জন্মের পর ২৯ বছর বয়সে সত্য ও জ্ঞানের সন্ধানে বাহির হন। এরপর বুদ্ধত্ব লাভ করে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। ৪৮৬ খীষ্টপূর্বাব্দে নির্বাণ লাভ করেন। ৫৪০ খিষ্টপূর্বাব্দে মহাবীরের জন্ম হয় এরপরে ওনি জৈন ধর্মের প্রচল করেন। ঐ সময় সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মান্তর করনের জোড় দিয়ে শুরু করেন বৌদ্ধ ও জৈনরা। এক সময় সনাতন ধর্ম নামটি ব্রাহ্মণ্য, শৈব ধর্ম ও বৈষ্ণব ধর্মে বিভক্ত হয়ে কোন মতে চলতে থাকে। মৌর্য বংশের রাজত্বকাল ৩২৪- ১৮৬ খিষ্ট পূর্ব। (এর মধ্যে সম্রাট আশোক এর রাজত্বকাল ছিল খিষ্টপূর্ব ২৭৩ -২৩২ অব্দ।)
চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন জৈন ধর্মের অনুসারী। শেষ জীবনের ক্ষমতা ত্যাগ করে জৈন ধর্মের প্রথা অনুযায়ী সংসার ত্যাগী হয়েছিলেন।। এর পর
চন্দ্র গুপ্তের ছেলে বিন্দুসার অমিত্রঘাত উপাধি গ্রহন করে খীষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে সিংহাসন আরোহন করেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন। বিন্দুসারের ১০১জন ছেলে, তার মধ্যে অশোক ছিলেন দ্বিতীয়। অশোক ক্ষমতা গ্রহন করেন খিষ্টপূর্ব ২৭৩ অব্দে। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তবে সম্রাট অশোকে অভিষেক সম্পূর্ণ হয় আরো চার বছর পর। সম্রাট অশোক রাধাগুপ্ত নামের এক মন্ত্রির সহায়তায় অপরাপর জন ভ্রাতাদের হত্যা করে সিংহাসন নিষ্কটক করেছিলেন। "দিব্যবদন" ও সিংহলীয় উপাখ্যান সমূহে অশোক ও তার ভ্রাতাদের মধ্যে বিরোধের কাহিনী আছে। এরপর শুঙ্গবংশ খিষ্টপূর্ব ১৮৫-৭৫ অব্দ।
এর পর সাতবাহন বংশ খ্রীঃপূঃ ২৭ অব্দ থেকে। এর পর বৈদেশিক আক্রমন। এর পর
কৃষান শাসন।
কৃষান ও অন্ধ্রবংশের পতনের পর গুপ্তবংশের উত্থান হয় ২৪০ খ্রীঃ সম্রাট হন শ্রীগুপ্ত। ২৪০ খিষ্টাব্দ থেকে গুপ্তরাজারা ভারত বর্ষে রাজত্ব করেন।

গুপ্ত বংশে প্রথম সম্রাট শ্রীগুপ্ত ক্ষত্রিয় ছিলেন তবে কোন ধর্মের সমর্থক উল্লেখ নেই। এরপর ৩৮০ থেকে ৪১৪ খিষ্টাব্দ ছিলে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য তিনিও স্বভাবত ক্ষত্রিয়। তিনি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি অনুগত ছিলেন। তাঁর মন্ত্রী ছিলেন বৌদ্ধ পন্ডিত বসুবন্ধু ছিলেন। ভারত বর্ষের ইতিহাসে বিক্রমাদিত্য শক্তিশালি এবং পদ্মা যমুনা ও হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বিক্রমাদিত্যর পর তাহার পুত্র ৪১৪-৪৫৫ পর্যন্ত কুমার গুপ্ত সম্রাট ছিলেন। এরপর কুমার গুপ্তের পুত্র ক্ষমতা নেন। তাকে ক্ষমতাচুত্য করিয়া তার বৈমাত্রের ভ্রাতা স্কন্ধগুপ্ত বিক্রমাদিত্য ৪৫৫-৪৬৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের ঘোর অনুসারী। আর্যমঞ্জুশ্রী ও মুলকল্প গ্রন্থ স্কন্ধ গুপ্ত জ্ঞানী ও ধর্মপরায়ন বলে উল্লেখ আছে।
স্কন্ধ গুপ্তের পরবর্তী বংশধর পুরগুপ্ত, এরপর ক্রমগত বংশধর দ্বীতিয় কুমার গুপ্ত, এরপর বুধগুপ্ত, তথাগত গুপ্ত ও বালাদিত্য গুপ্ত শেষ তিন সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।
দেখা যাচ্ছে গুপ্ত বংশ প্রথমে ক্ষত্রিয় হলেও পর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করে ফলে গুপ্ত সম্রাজ্যের পতন হয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দিকে।
মুলত এই গুপ্ত সম্রাটদের আমলেই কালিদাস সহ অনেক কবি লেখক ও সাহিত্যিকের জন্ম হয়। এই সময়ে বায়ুপুরাণ, মৎস্যপুরান ব্রহ্মান্ড পুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ভগবৎ পুরাণ সহ অনেক পুরাণ রচিত হয় এবং রামায়ণ ও মহাভারতের সংশোধন ও পরিবর্ধন করা হয় এই কারনে তখনকার সময়ের অধিকাংশ রাজা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কেউ কেউ সনাতন ধর্মে ফিরে এসেছিলেন। তখন বৌদ্ধ ধর্মের থেকে আগতদের ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য রামায়ন, মহাভারত ও পুরাণ গুলির এক বিরাট সম্পাদনার কাজ সম্পন্ন হয় যাহা নাকি হিন্দু সভ্যতার নব-রূপায়নে সাহায্য করে বলে ঐতিহাসিক গনের অভিমত।বৌদ্ধকে হিন্দুদের অবতার বলে সমযোতা করেন।

এর পর অনেক রাজা রাজত্ব করেন, এবং বিদেশি অগ্রাসন হয়েছিল।
হর্ষবর্ধন ৬০৬-৬৪৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
(৬৪৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত অধিকাংশ সম্রাট বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিলেন।)

এর মধ্য বিদেশী আক্রমন রাজ্য দখল করে কিছু কাল। তবে কিছু সময় শুদ্র বংশ, ব্রামণ্য ধর্মের অনুসারী ও বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা ক্ষনস্থায়ী দেশ শাসন করেছিলে। ঐ সময় ৩৫০ খিষ্টাব্দে উড়িষ্যায় পল্লববংশের উত্থান হয় ওনারা ছিলে বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী। পল্লব বংশ ৭৯৬ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
আষ্টম শতাব্দী থেকে শুরু হয় আরব্য দখলদারদের হামলা দখল।
এরপর কিছুকাল হিন্দু বৌদ্ধ রাজারা কিছু অংশে রাজত্ব করলেও পরবর্তীতে মোগলদের দখলে চলে যায় এই ভারত বর্ষ ১৭৫৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এর পর থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন। এর ভারত বর্ষের ভাঙ্গাগড়ার পর ভারতের অংশে ক্ষমতায় আসেন মুসলিমদের এজেন্ট কংগ্রেস সরকার ও কিছুকাল দলছুট সেকুলার সরকার। কংগ্রেসকে মুসলিমদের এজেন্ট এই জন্যই বলছি ঐ সময়েই মোগলদের মানব দরদী বলে ইতিহাস রচন করে অথচ মোগলদের নির্বিচারে হিন্দুদের গনহত্যা, লুট ও ধর্ষনের ইতিহাস ছিল পৃথীবীর ইতিহাসে বর্বোচিত ও জঘন্যতম একটি অধ্যায়।
মুলত ভারতের হিন্দুদের তথা সনাতন ধর্মের স্বাধিনতার সূর্য উচিত হয় বাজপেয়ির জয়লাভের পর। প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজীর ক্ষমতা লাভের পর সনাতন ধর্মের পূর্ণতা পায়।
এত গুলি খুব সংক্ষেপে আলোচনা করলাম এই জন্যে এফবিতে অনেকেই ব্রাহ্মনদের উপর চোটপাত করেন সনাতন ধর্ম ধংসের জন্যে। অথচ মৌর্য আমল থেকে প্রায় হর্ষবর্ধের সময় পর্যন্ত সনাতন ধর্মের অস্থিত্ব খুবই ক্ষিন ছিল। ঐ সময় ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, শৈব, বৈষ্ণব ধর্ম ও শৈব ধর্মে বিভিক্ত ছিল। অষ্টম শতাব্দীতে মোগল দখদাররা নাম দেন হিন্দু ধর্ম এর পর ব্রিট্রিশ শাসন আমলে সরকারী ভাবে ঘোষনা করেন হিন্দু ধর্ম।
তাহলে ভাবুন কেন সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্য বেদ উপনিষদের চর্চা হ্রাস পেয়েছে কেন? এখানে আর একটি বিষয় বলে রাখি বৌদ্ধ সম্রাটদের শাসন আমলেই পূরাণ রচন করা হয় এদের অধিকাংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়। ঐ সময় রামায়ন ও মহাভারতের সংশোধন ও পরিবর্ধন হয় এই কারনে বৌদ্ধরা অনেকেই সনাতন ধর্মে ফিরে আসছে বলে।

প্রায় ২৪০০ বছর ভারত বর্ষ ভিনদেশী গ্রীক, শক, পহ্লব, কৃষাণ, চৈনিক, মোগল ও ব্রিট্রিশদের দখল, শাসন এ ছাড়া বৌদ্ধ ও জৈন শাসন মাত্র কিছু সময় কিছু রাজ্য ক্ষত্রিয়, শুদ্র, বৈষ্ণব ও হিন্দু রাজারা শাসন করেছে। এরপর মোগলদের গণহত্যা লুট ও ধর্ষনের বন্যা। এখনো সনাতন ধর্ম ঠিকে আছে সেটাই ভাগ্যের বিষয়।
আসুন বর্ণ বিভাজন ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই, কুসংস্কার ত্যাগ করি এবং সনাতন ধর্মের বিতর্কিত গ্রন্থ সংশোধন করার ব্রতি হই এবং বেদ উপনিষদ গীতার আলোকে জীবন গড়ি।
জয় নিশ্চিত সনাতন ধর্মের হবেই।

 

Post: Sento Saha

 


 

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।