( সনাতন ধর্মের ধংসের জন্য ব্রাহ্মণেরা দায়ী নয়, মুলে ছিল নতুন ধর্মের প্রবর্তন তথা গৌতম বৌদ্ধের বেদ উপনিষদ গীতাকে বাদ দিয়ে নতুন মতবাদ চালু, সনাতন ধর্মাল্বীদের মধ্যে অনৈক্য, ক্ষত্রিয় রাজাদের স্বেচারিতা, অনৈক্য, যুদ্ধ ও ধর্মান্তর করণ। বিদেশী দখলদারদের হামলা, দখল বিশেষ করে মোগলদের কঠোর অত্যাচার,গণহত্যা, ধর্ষন, সর্বশেষ সেকুলার ও নাস্তিকতা)
তথ্যসুত্রঃ ভারত বর্ষের ইতিহাস।
৫৬৭ খিষ্টপূর্বাব্দ গৌতম বুদ্ধের জন্মের পর ২৯ বছর বয়সে সত্য ও জ্ঞানের সন্ধানে বাহির হন। এরপর বুদ্ধত্ব লাভ করে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। ৪৮৬ খীষ্টপূর্বাব্দে নির্বাণ লাভ করেন। ৫৪০ খিষ্টপূর্বাব্দে মহাবীরের জন্ম হয় এরপরে ওনি জৈন ধর্মের প্রচল করেন। ঐ সময় সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মান্তর করনের জোড় দিয়ে শুরু করেন বৌদ্ধ ও জৈনরা। এক সময় সনাতন ধর্ম নামটি ব্রাহ্মণ্য, শৈব ধর্ম ও বৈষ্ণব ধর্মে বিভক্ত হয়ে কোন মতে চলতে থাকে। মৌর্য বংশের রাজত্বকাল ৩২৪- ১৮৬ খিষ্ট পূর্ব। (এর মধ্যে সম্রাট আশোক এর রাজত্বকাল ছিল খিষ্টপূর্ব ২৭৩ -২৩২ অব্দ।)
চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন জৈন ধর্মের অনুসারী। শেষ জীবনের ক্ষমতা ত্যাগ করে জৈন ধর্মের প্রথা অনুযায়ী সংসার ত্যাগী হয়েছিলেন।। এর পর
চন্দ্র গুপ্তের ছেলে বিন্দুসার অমিত্রঘাত উপাধি গ্রহন করে খীষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে সিংহাসন আরোহন করেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন। বিন্দুসারের ১০১জন ছেলে, তার মধ্যে অশোক ছিলেন দ্বিতীয়। অশোক ক্ষমতা গ্রহন করেন খিষ্টপূর্ব ২৭৩ অব্দে। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তবে সম্রাট অশোকে অভিষেক সম্পূর্ণ হয় আরো চার বছর পর। সম্রাট অশোক রাধাগুপ্ত নামের এক মন্ত্রির সহায়তায় অপরাপর জন ভ্রাতাদের হত্যা করে সিংহাসন নিষ্কটক করেছিলেন। "দিব্যবদন" ও সিংহলীয় উপাখ্যান সমূহে অশোক ও তার ভ্রাতাদের মধ্যে বিরোধের কাহিনী আছে। এরপর শুঙ্গবংশ খিষ্টপূর্ব ১৮৫-৭৫ অব্দ।
এর পর সাতবাহন বংশ খ্রীঃপূঃ ২৭ অব্দ থেকে। এর পর বৈদেশিক আক্রমন। এর পর
কৃষান শাসন।
কৃষান ও অন্ধ্রবংশের পতনের পর গুপ্তবংশের উত্থান হয় ২৪০ খ্রীঃ সম্রাট হন শ্রীগুপ্ত। ২৪০ খিষ্টাব্দ থেকে গুপ্তরাজারা ভারত বর্ষে রাজত্ব করেন।
গুপ্ত বংশে প্রথম সম্রাট শ্রীগুপ্ত ক্ষত্রিয় ছিলেন তবে কোন ধর্মের সমর্থক উল্লেখ নেই। এরপর ৩৮০ থেকে ৪১৪ খিষ্টাব্দ ছিলে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য তিনিও স্বভাবত ক্ষত্রিয়। তিনি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি অনুগত ছিলেন। তাঁর মন্ত্রী ছিলেন বৌদ্ধ পন্ডিত বসুবন্ধু ছিলেন। ভারত বর্ষের ইতিহাসে বিক্রমাদিত্য শক্তিশালি এবং পদ্মা যমুনা ও হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বিক্রমাদিত্যর পর তাহার পুত্র ৪১৪-৪৫৫ পর্যন্ত কুমার গুপ্ত সম্রাট ছিলেন। এরপর কুমার গুপ্তের পুত্র ক্ষমতা নেন। তাকে ক্ষমতাচুত্য করিয়া তার বৈমাত্রের ভ্রাতা স্কন্ধগুপ্ত বিক্রমাদিত্য ৪৫৫-৪৬৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের ঘোর অনুসারী। আর্যমঞ্জুশ্রী ও মুলকল্প গ্রন্থ স্কন্ধ গুপ্ত জ্ঞানী ও ধর্মপরায়ন বলে উল্লেখ আছে।
স্কন্ধ গুপ্তের পরবর্তী বংশধর পুরগুপ্ত, এরপর ক্রমগত বংশধর দ্বীতিয় কুমার গুপ্ত, এরপর বুধগুপ্ত, তথাগত গুপ্ত ও বালাদিত্য গুপ্ত শেষ তিন সম্রাট বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।
দেখা যাচ্ছে গুপ্ত বংশ প্রথমে ক্ষত্রিয় হলেও পর বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করে ফলে গুপ্ত সম্রাজ্যের পতন হয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দিকে।
মুলত এই গুপ্ত সম্রাটদের আমলেই কালিদাস সহ অনেক কবি লেখক ও সাহিত্যিকের জন্ম হয়। এই সময়ে বায়ুপুরাণ, মৎস্যপুরান ব্রহ্মান্ড পুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, ভগবৎ পুরাণ সহ অনেক পুরাণ রচিত হয় এবং রামায়ণ ও মহাভারতের সংশোধন ও পরিবর্ধন করা হয় এই কারনে তখনকার সময়ের অধিকাংশ রাজা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কেউ কেউ সনাতন ধর্মে ফিরে এসেছিলেন। তখন বৌদ্ধ ধর্মের থেকে আগতদের ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য রামায়ন, মহাভারত ও পুরাণ গুলির এক বিরাট সম্পাদনার কাজ সম্পন্ন হয় যাহা নাকি হিন্দু সভ্যতার নব-রূপায়নে সাহায্য করে বলে ঐতিহাসিক গনের অভিমত।বৌদ্ধকে হিন্দুদের অবতার বলে সমযোতা করেন।
এর পর অনেক রাজা রাজত্ব করেন, এবং বিদেশি অগ্রাসন হয়েছিল।
হর্ষবর্ধন ৬০৬-৬৪৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
(৬৪৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত অধিকাংশ সম্রাট বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিলেন।)
এর মধ্য বিদেশী আক্রমন রাজ্য দখল করে কিছু কাল। তবে কিছু সময় শুদ্র বংশ, ব্রামণ্য ধর্মের অনুসারী ও বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা ক্ষনস্থায়ী দেশ শাসন করেছিলে। ঐ সময় ৩৫০ খিষ্টাব্দে উড়িষ্যায় পল্লববংশের উত্থান হয় ওনারা ছিলে বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী। পল্লব বংশ ৭৯৬ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
আষ্টম শতাব্দী থেকে শুরু হয় আরব্য দখলদারদের হামলা দখল।
এরপর কিছুকাল হিন্দু বৌদ্ধ রাজারা কিছু অংশে রাজত্ব করলেও পরবর্তীতে মোগলদের দখলে চলে যায় এই ভারত বর্ষ ১৭৫৭ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এর পর থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন। এর ভারত বর্ষের ভাঙ্গাগড়ার পর ভারতের অংশে ক্ষমতায় আসেন মুসলিমদের এজেন্ট কংগ্রেস সরকার ও কিছুকাল দলছুট সেকুলার সরকার। কংগ্রেসকে মুসলিমদের এজেন্ট এই জন্যই বলছি ঐ সময়েই মোগলদের মানব দরদী বলে ইতিহাস রচন করে অথচ মোগলদের নির্বিচারে হিন্দুদের গনহত্যা, লুট ও ধর্ষনের ইতিহাস ছিল পৃথীবীর ইতিহাসে বর্বোচিত ও জঘন্যতম একটি অধ্যায়।
মুলত ভারতের হিন্দুদের তথা সনাতন ধর্মের স্বাধিনতার সূর্য উচিত হয় বাজপেয়ির জয়লাভের পর। প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজীর ক্ষমতা লাভের পর সনাতন ধর্মের পূর্ণতা পায়।
এত গুলি খুব সংক্ষেপে আলোচনা করলাম এই জন্যে এফবিতে অনেকেই ব্রাহ্মনদের উপর চোটপাত করেন সনাতন ধর্ম ধংসের জন্যে। অথচ মৌর্য আমল থেকে প্রায় হর্ষবর্ধের সময় পর্যন্ত সনাতন ধর্মের অস্থিত্ব খুবই ক্ষিন ছিল। ঐ সময় ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, শৈব, বৈষ্ণব ধর্ম ও শৈব ধর্মে বিভিক্ত ছিল। অষ্টম শতাব্দীতে মোগল দখদাররা নাম দেন হিন্দু ধর্ম এর পর ব্রিট্রিশ শাসন আমলে সরকারী ভাবে ঘোষনা করেন হিন্দু ধর্ম।
তাহলে ভাবুন কেন সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্য বেদ উপনিষদের চর্চা হ্রাস পেয়েছে কেন? এখানে আর একটি বিষয় বলে রাখি বৌদ্ধ সম্রাটদের শাসন আমলেই পূরাণ রচন করা হয় এদের অধিকাংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়। ঐ সময় রামায়ন ও মহাভারতের সংশোধন ও পরিবর্ধন হয় এই কারনে বৌদ্ধরা অনেকেই সনাতন ধর্মে ফিরে আসছে বলে।
প্রায় ২৪০০ বছর ভারত বর্ষ ভিনদেশী গ্রীক, শক, পহ্লব, কৃষাণ, চৈনিক, মোগল ও ব্রিট্রিশদের দখল, শাসন এ ছাড়া বৌদ্ধ ও জৈন শাসন মাত্র কিছু সময় কিছু রাজ্য ক্ষত্রিয়, শুদ্র, বৈষ্ণব ও হিন্দু রাজারা শাসন করেছে। এরপর মোগলদের গণহত্যা লুট ও ধর্ষনের বন্যা। এখনো সনাতন ধর্ম ঠিকে আছে সেটাই ভাগ্যের বিষয়।
আসুন বর্ণ বিভাজন ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই, কুসংস্কার ত্যাগ করি এবং সনাতন ধর্মের বিতর্কিত গ্রন্থ সংশোধন করার ব্রতি হই এবং বেদ উপনিষদ গীতার আলোকে জীবন গড়ি।
জয় নিশ্চিত সনাতন ধর্মের হবেই।
Post: Sento Saha
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন