• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৬ এপ্রিল ২০২০

আজ দেবী ধূমাবতীর আবির্ভাব তিথি

আজ দেবী ধূমাবতীর আবির্ভাব তিথি। বলা হয় একবার দেবীর খুব ক্ষুধার উদ্রেগ হয়েছিল। ভগবান শিবের কাছে বার কয়েক আহার প্রার্থনা করলেন। কিন্তু ভগবান শিব বললেন, সবুর করো। অর্থাৎ অপেক্ষা করো। দেবীর ক্ষুধা সহ্য হল না। তিনি ভগবান শিবকেই গ্রাস করলেন। স্বামীহীনা হবার জন্য দেবী হলেন বিধবা। দেবীর এই রূপ "ধূমাবতী" নামে খ্যাতা হল। অপর একটি মতানুসারে
দেবী সতী, দক্ষযজ্ঞে আত্মাহুতি দিলে, দেবীর শরীরের ধূম থেকে এই দেবীর উৎপত্তি হয়। দেবী ধূমাবতী বিধবা, শরীরে বয়স্কা বৃদ্ধার ছাপ। ইনি ময়লা জীর্ণ সাদা থান পরিধান করেন। কাকচিহ্ন ধ্বজ থাকে এনার রথে। রথের চারপাশে কাক থাকে। হস্তে কূলা, ঝাঁটা থাকে। ধুম্রাসুর নামক এক অসুরকে বধ করেছিলেন এই দেবী। দেবী ধূমাবতীর আওয়াজ শত শত শৃগালের ন্যায়। এঁনার দৃষ্টি খুব প্রখর। ধূম রূপে সর্বত্র তিনি যাতায়াত করতে পারেন। যাই হোক, ভগবান শিবকে ভক্ষণের পর, ভগবান শিব পুনঃ ধূম রূপে দেবীর শরীর থেকে নির্গত হলেন।

Share:

২৫ এপ্রিল ২০২০

জামালপুর জেলার অন্তর্গত মেলান্দহ থানার একটি বহু পুরানো শিব মন্দির ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দখল করে নিয়েছে পুরো দেবোত্তর সম্পদ ।

হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র একটি শিব মন্দির মাটির সাথে গুড়িয়ে দিলো...!!!

ভয়ংকর করোনা ভাইরাসও এদের দমিয়ে রাখতে পারল না! প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত ঢালুয়াবারি গ্রামের হাজরাবারি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার (২৩-০৪-২০২০) এই জঘন্য ঘটনা ঘটেছে! লগ ডাউনের সুযোগে মেলান্দহ থানার অন্তর্গত একটি বহু পুরানো শিব মন্দির ভূমিদস্যু মৃত সেকান্দর খাঁ এর পুত্র নুরুল ইসলাম খাঁ তার দলবল নিয়া সাবল দিয়ে ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দখল করে নিয়েছে পুরো দেবোত্তর সম্পদ!

A Shiva temple, very sacred to Hindus, was demolished ... !!! The terrible corona virus could not suppress them! Incidentally, this horrible incident happened last Thursday (23-04-2020) in Hazrabari area of ​​Dhaluabari village under Jamalpur district of Bangladesh! On the occasion of the log down, Nurul Islam Khan, son of the late Sekandar Khan, a land robber of a very old Shiva temple under Melandha police station, broke into his house with his force and took possession of the whole of Debottar.

উল্লেখ্য যে ইতিপূর্বে এই মন্দির থেকে কষ্টি পাথরের মুল্যবান শিবলিঙ্গ চুরি হউয়ায় মামলা হয়। পরে মেলান্দহ থানা শিবলিঙ্গটি পুলিশ উদ্ধার করে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শিবলিঙ্গটি জামালপুর দয়াময়ী মন্দিরে হস্তান্তর করা হয় , শিবলিঙ্গ বর্তমানে দয়াময়ী মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছে।

It is to be noted that a case was filed earlier for stealing a precious Shivling of Kasti stone from this temple. Police later recovered the Shivling from Melandha police station. The Shivling was handed over to the Jamalpur Dayamayi temple for security reasons. The Shivling is now established at the Dayamayi temple.

আমি অ্যাড রবীন্দ্র ঘোষ - বাংলাদেশে মাইনোরিটি ওয়াচের পক্ষে এই ব্যাপারে জামালপুর জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হকের সঙ্গে কথা বলি (০১৭১৩০৬১১০০)। জেলা প্রশাসক মেলান্দহ উপজেলার উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোহাম্মদ তামিম আল আমিনের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে বলেন। আমি তামিম আল আমিন সাহেবের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছি তিনি ব্যাপারটা কিছুই জানেন না বলে আমাদেরকে বলেছেন!


এই দুরভাগ্যজনক ঘটনার ব্যাপারে মেলান্দহ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রেজাউল করিমের সঙ্গে আমার মোবাইলে কথা হয়, উনি আমাকে বলেছেন যে "এই ব্যাপারে কেউ মামলা দায়ের করে নি বা আমার সহযোগিতা কামনা করে নি, আমাদের করার কিছু নাই " তিনি একথা বলেছেন যে "ভারতে কি হচ্ছে আপনি দেখেন না ? " ভারতের তুলনা করা খুব অন্যায় বলে আমি ওসি সাহেবকে বলেছি এবং উনি আরো রাগ করে বললেন "বাংলাদেশের খবর নিচ্ছেন ভারতের খবর কি আপনারা রাখেন ?

তিনি (অফিসার ইনচার্জ মোঃ রেজাউল করিম) একথা বলেছেন যে, ভারতে কি হচ্ছে আপনি দেখেন না ? ভারতের তুলনা করা খুব অন্যায় বলে আমি ওসি সাহেবকে বলেছি এবং উনি আরো রাগ করে বললেন "বাংলাদেশের খবর নিচ্ছেন ভারতের খবর কি আপনারা রাখেন ? এই ধরনের সরকারী অফিসারের সাম্প্রদায়ীক মানসিকতা সংখ্যালঘুদের মন কে দুর্বল করে দেয়! জামালপুর জেলার এস , পি সাহেবকে বার বার মোবাইল করার পর উনি উনার মোবাইল ফোন(০১৭১৩৩৭৩৫৩২) ধরেন নি!

মাইনোরিটি ওয়াচ আশা করে অনতিবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে শিব মন্দির যেখানে যে অবস্থায় ছিল তা সুরক্ষার সাথে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হোক এবং দখল উদ্ধার করে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। প্রত্যেক হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা এবং ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছেন।


গৌতম হালদার প্রান্ত
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট (প্রচার সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি)
২৫-০৪-২০২০
Gautam Haldar Pranto
Bangladesh Jatiya Hindu Mahajot (Publicity Secretary, Central Committee)
25-04-2020
২৫-০৪-২০২০
Share:

২২ এপ্রিল ২০২০

সাতকানিয়ার ধর্মপুর ইউনিয়নে শুক্লদাশপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও দেশত্যাগের হুমকি

সাতকানিয়ার ধর্মপুর ইউনিয়নে শুক্লদাশপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা । দেশত্যাগের হুমকি ও নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ২৫ জনকে আহত করা হয়েছে! বর্তমানে বেশ কয়েকজন হসপিটালে ভর্তি!

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের সাধুর দোকান শুক্লদাশ পাড়ায় দেশের ক্রান্তিলগ্নে লকডাউন উপেক্ষা করে ৩০ টি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত (২১ এপ্রিল) দুপুর ২ টায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও সমর্থনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার নির্দেশে দেশীয় অস্ত্র দা, কিরিস, ছুরি, লাটি, দিয়ে হামলা চালায় বলে ধারণা করা হয়! এই সময় হামলাকারীরা শুক্লদাশপাড়ার প্রায় ২৫ জন সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের নারী,পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুদের আহত করে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যাক্ষর্শীরা জানান স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোঃ এটিএম, মোঃ রাশেদ, মোঃ আবদুল্লাহ, মােঃ জিয়া উদ্দিন, মােঃ হাবিবুল্লাহ ও মােঃ মুসা উদ্দিন''র নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়।


তারা আধিপত্যকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হিন্দু গ্রামে পরিকল্পিত ভাবে ৭০/৮০ জনের অধিক দলবল নিয়ে অতর্কিত ভাবে হামলা চালায়। অধিকাংশ নারীরা এই হামলায় স্বীকার। এই হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্বে সাতকানিয়া থানায় ডায়েরী করা হয়েছে।


এই হামালায় স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে । জড়িতদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত পূর্বক শাস্তির দাবী জানান এলাকাবাসী।


 cp- Nayan Sarkar
Share:

এই কলি যুগেও নৃসিংহদেবের আবির্ভাব ও আশীর্বাদ থেকে ভক্তরা বঞ্চিত হননি, তার কিছু উদাহরন দিচ্ছি ।


নৃসিংহদেব তাঁর সত্য ভক্তদের চরমতম বিপদের সময় রক্ষা করেন। এই কলি যুগেও তাঁর আবির্ভাব ও আশীর্বাদ থেকে ভক্তরা বঞ্চিত হন নি, তার কিছু উদাহরন দিচ্ছি।

আজ থেকে সহস্রাধিক বৎসর পূর্বে ভগবৎপাদ শঙ্কর আচার্য যখন দিগবিজয়ে বেরিয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মের বিজয় পতাকা ভারতের নানা প্রান্তে উড্ডীন করছেন, সেই সময় তিনি বেশ কয়েক বার বিরুদ্ধবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। একবার দক্ষিণ ভারতের শ্রী শৈলম তীর্থে শঙ্কর এক দুষ্ট কাপালিকের কবলে পড়েন। কাপালিক তাঁকে বলি দেয়ার চেষ্টায় ছিল। শঙ্কর তা বুঝেও নির্বিকার ভাবে ভগবৎ চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এইসময় সহসা শঙ্করের অন্যতম শিষ্য ও পদ্মপাদ সেখানে উগ্র মূর্তিতে প্রবেশ করেন ও গর্জন করতে করতে বলির খাঁড়া দিয়ে কাপালিক কে বধ করেন। পরে প্রকিতস্থ হলে তিনি শঙ্করকে জানান যে ছোট বেলা থেকেই পদ্মপাদ নরসিংহ ভক্ত। একবার প্রভু পদ্মপাদকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন যে ভয়ানক বিপদ কালে তিনি আবির্ভূত হয়ে তাঁকে রক্ষা করবেন। বাস্তবেও তাই হল। নরসিংহ ভগবান পদ্মপাদের শরীরে আবিষ্ট হয়ে দুষ্ট দমন করলেন। এরপরই আদি শংকর তাঁর প্রসিদ্ধ শ্রীশ্রীলক্ষ্মী-নরসিংহ স্তোত্রটি রচনা করেন। ভারত ও হিন্দু ধর্ম তার ফলে আচার্য শঙ্কর কে আরও অনেক দিন জীবিত ভাবে পেল এবং অগ্র গতির দিকে এইভাবে আর -ও এগিয়ে গেল।

সাম্প্রতিক অতীতে এ সি ভক্তি বেদান্ত দ্বারা " আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সঙ্ঘ " বা " ইস্কন " স্থাপিত হবার পর যখন নানারকম প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছিল,বিশেষ করে যখন মায়াপুর মূল কেন্দ্রে বার বার ডাকাতের হামলা হচ্ছিল, সেই সময় ইস্কনের পরিচালক গন শ্রীশ্রীনরসিংহ ভগবানের উপাসনা করতে মনস্থ করেন।

সারাজগতে কৃষ্ণনাম প্রচার করাই ইসকনের লক্ষ্য। যদিও কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তন এবং জগৎমঙ্গলকর পন্থা হল কৃষ্ণভক্তি অনুশীলন, তবুও কলিযুগের আসুরিক মানুষরা কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের বিরোধী। তারা চায় কৃষ্ণনাম প্রচার বন্ধ করে দিতে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন কৃষ্ণনাম সংকীর্তন প্রবর্তন করলেন, তখন নবদ্বীপে স্মার্ত ব্রাহ্মণেরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নবদ্বীপে হরিনাম বন্ধ করার জন্য তৎকালীন নদীয়ার শাসনকর্তা চাঁদ কাজীর কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন। চাঁদ কাজীও গুন্ডা পাঠিয়ে মায়াপুরের শ্রীবাস অঙ্গনে সংকীর্তনকারী ভক্তদের উৎপীড়ন করতে লাগলেন তারপর নাগরা পিটিয়ে হরিনাম সংকীর্তন বন্ধের ঘোষণা জারি হয়েছিল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও নিত্যান্দ প্রভু সেই সংবাদ পেয়ে চাঁদ কাজী সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলেন। লক্ষ লক্ষ লোক মশাল জ্বালিয়ে হরিনাম করতে করতে চাঁদ কাজীর প্রাসাদে এসে পৌঁছলেন। চাঁদ কাজী ভয়ে লুকিয়ে ছিলেছিলেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে, তিনি বেরিয়ে এসে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সমাদর করলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কাজীকে যখন প্রশ্ন করলেন, আপনার নির্দেশ অমান্য করে ভক্তরা হরিনাম করছে,আর আপনি কেন কিছুই প্রতিবাদ করছেন না ? ' উত্তরে চাঁদ কাজী মহাপ্র্রভুকে বলেন, ' নিমাই, তোমাদের হরিনামে আমি আর কখনই বাধা দেবো না। কেননা আমি ভয়ে ভীত হয়ে ঘুমাতে পারিনি। এক দেবতা- যার মুখ সিংহের মতো, শরীরটা মানুষের মতো। তার হাতে ছিল বড় বড় নখ। সে আমার বুকে নখের আচড় লাগিয়ে ধমক দিয়ে বলল ' , "ভক্তদের সংকীর্তন যদি বনধ করিস্ তবে তোর নিপাত করব।" তারপর সে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার নখের দাগ এখনো বুকে রয়েছে।'

সবাই বুঝলেন, ভক্তদের রক্ষার জন্য ভগবান নৃসিংহদেব, যিনি অত্যাচরী অসুর হিরণ্যকশিপুর কবল থেকে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন, তিনিই চাঁদ কাজীকে সাবধানবাণী শুনিয়েছেন।

কলিযুগের আসুরিক লোকদের উৎপাত থেকে ভগবানের যে অবতার সর্বদা জাগ্রত হয়ে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ পূর্বক ভক্তদের রক্ষা করেন, তিনি হচ্ছেন শ্রীনৃসিংহদেব।

১৯৮৪ খৃষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ রাত দুপুরে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শ্রীধাম মায়াপুর ইসকন মন্দির আক্রমণ করেছিল ৩৫ জন ডাকাত। প্রভুপাদের বিগ্রহ ও রাধারাণীর বিগ্রহ তারা অপহরণ করে। মন্দিরের আর্তক্রন্দনময় বিভীষিকা ভক্তদের মর্মাহত করেছিল। কাঞ্চীর শঙ্কর আচার্য পূজ্যপাদ জয়েন্দ্র সরস্বতীর পরামর্শ ক্রমে শ্রীশ্রীনরসিংহ ভগবান মায়াপুরে স্থাপিত হন ।এর পর থেকে ইস্কনের সঙ্কট দূর হতে থাকে ও আরও অগ্র গতি হতে থাকে । জিবিসি পক্ষ থেকে সমাধান কল্পে শ্রীমায়াপুর ইসকন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হলেন শ্রীশ্রী উগ্রনৃসিংহদেব। সময়টি ছিল ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দের জুলাইয়ের শেষ দিক।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর হরে কৃষ্ণ আন্দোলনে ভক্তদের সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রান্তে আসুরিক শক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। আসুরিক শক্তির কাজটিই হল ভক্তদের উৎপীড়ন করা এবং হরিনাম প্রচার বনধ করা। সর্বত্রই ভক্তিবিঘ্ন বিনাশক শ্রীনৃসিংহদেবই সুরক্ষা দান করেন।

এই ঘটনাটি আরও তাৎপর্য পূর্ণ এই কারনে যে, শ্রীশ্রীনরসিংহ ভগবানের বিগ্রহ স্থাপনের পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন অন্য দেবতা মূল মন্দিরে পূজিত হতেন না।হয়ত সংস্থার পরিচালক গন শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন অন্য দেবতাদের দাস/দাসী জ্ঞান করে অন্য দেবগনের উপাসনা করায় উৎসাহ দিতেন না। কিন্তু বিপদ সৃষ্টি করে , শ্রীশ্রীভগবান নরসিংহ (তন্ত্রের বিচারে যিনি সাক্ষাৎ ভৈরব বা শিব) দেবের পূজা করিয়ে,গোঁড়ামি মুক্ত সনাতন হিন্দুত্বের ঐক্যবদ্ধ বিরাটত্বের বাণী আমাদের সকলকে শিখিয়েছেন।

মায়াপুর ইসকন মন্দিরে শ্রীনৃসিংহদেব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে পরেই বহু শালগ্রাম শিলাও উপস্থিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় শিলা নৃসিংহ শিলা, তারপরে দশ অবতার সহ বহু অসংখ্য অবতারের শিলাও অর্চিত হচ্ছে। সমস্ত অবতারেরই পূজা-অর্চনা হলেও প্রায় ক্ষেত্রে নৃসিংহদেবের প্রকাশ প্রভাবটাই বেশী দেখা যায় সেজন্য সব মন্দিরে ভক্তরা নৃসিংহ প্রার্থনাই নিত্য গীত করে থাকেন।

জয়নৃসিংহশ্রীনৃসিংহ।
জয়জয়জয়শ্রীনৃসিংহ।।

শ্রীশ্রীনৃসিংহের ধ্যান মন্ত্র :-

ওঁ মাণিক্যাদ্রিসমপ্রভং নিজরুচা সন্ত্রস্তরক্ষোগণং,
জানুন্যস্তকরাম্বুজং ত্রিনয়নং রত্নোল্পসদ্‌ভূষণম্‌ ।
বাহুভ্যাং ধৃতশঙ্খচক্রমনিশং
দংষ্ট্রোগ্রবক্ত্রোল্পসজ্জ্বালাজিহ্বমুদারকেশরচয়ং বন্দে নৃসিংহং বিভূম্‌।।

শ্রীশ্রীনৃসিংহের মন্ত্র :-
ওঁ উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রং মৃত্যোর্মৃত্যুংনমাম্যহম্।।

শ্রীশ্রীনৃসিংহ-গায়ত্রী মন্ত্র: -
ওঁ বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্রায় ধীমহি।
তন্নো নরসিংহ প্রচোদয়াৎ।।

ওঁ গুহ্যাতিগুহ্যগোপ্তী ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্‌।
সিদ্ধির্ভবতু মে দেব ত্বৎপ্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।

শ্রীনৃসিংহ, জয়নৃসিংহ, জয়জয়নৃসিংহ।।
প্রহ্লাদেশজয়পদ্মমুখপদ্মভৃঙ্গ।।
নমস্তেনরসিংহায়প্রহ্লাদাহ্লাদ-দায়িনে।
হিরন্যকশিপোর্বক্ষঃশিলাটঙ্কনখালয়ে।।
ইতোনৃসিংহঃপরতোনৃসিংহো
যতোযতোযামিততোনৃসিংহ।
বর্হিনৃসিংহোহৃদয়েনৃসিংহো
নৃসিংহমাদিংশরণংপ্রপদ্যে।।
তবকরকমলবরেনখমদ্ভূতশৃঙ্গং
দলিতহিরন্যকশিপুতনুভৃঙ্গম্।
কেশবধৃত-নরহরিরূপজয়জগদীশহরে।।

ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের আবির্ভাব তিথি কি !!! জয়
ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব কি !!! জয়
শুদ্ধ ভক্ত প্রহল্লাদ মহারাজ কি !!! জয়

ওঁ ইতঃ পূর্ব্বং প্রাণবুদ্ধি দেহধর্ম্মাধিকারতো জাগ্রৎস্বপ্নসুষুপ্ত্যবস্থাসু মনসা বাচা হস্তাভ্যং পদ্ভ্যামুদরেণ শিশ্মা যৎ স্মৃতং যদুক্তং যৎ কৃতং তৎসর্ব্বং ব্রহ্মার্পণং ভবতু স্বাহা,
মাং মদীয়ং সকলং সম গশ্রীশ্রীনৃসিংহদেবতায়ৈ সমর্পয়ামি ওঁ তৎ সং।

ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
ওঁ বিষ্ণু

ওঁ ঋচং বাচং প্রপদ্যে মনো যজূঃ প্রপদ্যে সাম প্রাণং প্রপদ্যে চক্ষুঃশ্রোত্রং প্রপদ্যে বাগৌজঃ সহৌজ ময়ি প্রাণাপানৌ।
ওঁ ষন্মে ছিদ্রং চক্ষুষোর্হৃদয়স্য মনসো বাতিতৃণ্নং বৃহস্পতিতে তদ্দধাতু।
শন্নো ভবতু ভুবনস্য যস্পতিঃ।।
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি নস্তাক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দ্দাধাতু।।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।।

জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ -
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

ACHARYA KUSH MUKHERJEE
RAMPURHAT CHAKLAMATH BIRBHUM (W.B)
PIN NO 731224
GOLD MEDALIST
WHATSAPP NO 9233172388
CONTACT NO 7001608953
ONLINE PORISEVA DEWA HOI rs 1000/=
MY PAGE NAME IS ASTRO-PALMIST-NEUMEROLOGY CENTER
PLEASE LIKE&SARE
Contact with me :www.apnc.co.in
https://m.facebook.com/Astro-Palmist-Neumerology-Center-1569956439973629/?ref=bookmarks



Blog Url: https://apnc.co.in/blog.php?blog=20180430075422
Share:

বৈশাখী শুক্লা চতুর্দশীর সন্ধ্যায়, শ্রীহরির অবতার রূপে শ্রীশ্রীনৃসিংহ ভগবান প্রকট হয়েছিলেন।

শ্রীশ্রীনৃসিংহ ভগবান দেখতে বা শুনতে ভয়ঙ্কর হলেও তিনি হচ্ছেন ভক্তিতত্ত্বের অনন্য উদাহরণ স্বরূপ। আমরা জানি, ঈশ্বরের দিকের আমরা এক পা এগিয়ে গেলে তিনি আমাদের দিকে দশ পা এগিয়ে আসেন দর্শন দানের জন্য। সেই এক পা এগানোটাই হচ্ছে কঠিন। এর নানা পথ আছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ভক্তি। ভক্তির দ্বারা আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তিনি আসেন, চাই প্রবল ভরসা 'তাঁর' প্রতি। এই ভরসা ছিল বলেই 'রাম' নামে সমুদ্র পাথর ভেসে সেতু নির্মিত হয়েছিল ভক্ত হনুমানের দ্বারা। তবে হ্যাঁ, ভক্তিতে বোকা হলে চলবে না, যাকে অজ্ঞানতা বলে। ভক্ত প্রহ্লাদের সেই ভরসা ছিল বলেই তিনি বিশ্বাসের সাথে বলতে পেরেছিলেন তাঁর ভগবান স্তম্ভের মধ্যেও আছেন।



বহু লক্ষ বৎসর পূর্বে বৈশাখী শুক্লা চতুর্দশীর সন্ধ্যায়,  শ্রীহরির অবতার রূপে শ্রীশ্রীনরসিংহ ভগবান প্রকট হয়েছিলেন ।

সক্রেটিস বলেছিলেন ‘নিজেকে জানো’। এই রকম একটি স্বার্থপর উক্তি কি করে এত জনপ্রিয়তা পেল আমার মাথায় ধরে না। আমার মতে উক্তিটি একটি অর্ধ উন্মোচিত উক্তি। উক্তিটি হওয়া উচিত – ‘নিজেকে জানো, অন্যকেও জানো’। পরিতাপের বিষয় হলো আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে জানি না অন্যকে জানার ইচ্ছাও বহুদুরে। অথচ পারস্পরিক এই অজানা থেকেই জন্ম নেয় অবিশ্বাস, যেখান থেকে জন্ম নেয় অন্যের প্রতি অসহিষ্ণু মনোবৃত্তি, সেখান থেকে জন্ম নেয় কলহ। এই সীমাবদ্ধতাকে উপড়ে ফেলতে অগ্রসর হই সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানার। যতটুকু জানছি তারই কিছুটা উন্মোচন করতে এই প্রয়াস।


 হিরণ্যকশিপু পূর্বজন্মে কে ছিলেন ?

বৈকুন্ঠের দ্বারী ছিলেন জয় এবং বিজয় । একবার ব্রাহ্মণরা জয় এবং বিজয়কে তাদের ঔদ্ধত্যৈর জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, মর্ত্যলোকে তিন জন্ম নাস্তিক আর নিষ্ঠুর হয়ে কাটাতে হবে। এই তিনটি জন্মই তাদের কাটাতে হবে প্রচন্ড দেব- বিরোধিতা করে, অসুর মনোভাব নিয়ে অত্যাচার করে।ভগবান এই দুই দ্বারীকে খুবই ভালবাসতেন। তবে ঔদ্ধত্যৈর শাস্তি পাওয়া উচিত বিবেচনা করে ব্রাহ্মণের সেই অভিশাপ তিনি অনুমোদন করেছিলেন ।তবে ভগবান তাদের অশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি স্বয়ং নিজে মর্ত্যে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনবেন। জয় প্রথমে মর্ত্যে জন্ম নিয়েছিলেন হিরণ্যকশিপু হয়ে । শ্রীশ্রী নৃসিংহ দেব হিরণ্যকশিপুকে সংহার করে প্রথম জন্ম থেকে মুক্তি দেন। দ্বিতীয়বার জয়কে জন্মাতে হয়েছিল রাবন হয়ে। শ্রীরামচন্দ্র রাবনকে বধ করে দ্বিতীয় জন্ম থেকে মুক্তি দেন। শেষে জন্মাতে হয়েছিল শিশুপাল হয়ে। পরমেশ্বর স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালের মাথা বিছিন্ন করে তৃতীয় জন্ম থেকে মুক্তি দেন। এভাবে পরমেশ্বর স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে এসে স্বর্গের দ্বারী জয়কে শাপ মুক্ত করেন । মুক্তি পেয়ে বৈকুন্ঠের দ্বারী জয় আবার বৈকুন্ঠে ফিরে যায়। উল্লেখ্য , বিজয় প্রথমে হিরণক্ষ্য হয়ে জন্মগ্রহন করেন, তারপরে জন্মগ্রহন করেন কুম্ভকর্ণ হয়ে। সর্বশেষে বিজয় জন্মগ্রহন করেন কংস হয়ে। পরমেশ্বর স্বংয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসকে বধ করে শাপ মুক্ত করেন।শাপ মুক্ত হয়ে বিজয় বৈকুন্ঠে ফিয়ে যায়।

 অবতারঃ

অবতার শব্দের আক্ষরিক অর্থ অবতরণকারী। দেবতারা যখন কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে পৃথিবিতে অবতীর্ণ হন তখন তাদেরকে অবতার বলা হয়। হিন্দুধর্মে অবতারবাদ মূলত বিষ্ণুকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। বিষ্ণু ত্রিমূর্তির অন্যতম দেবতা ও হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী জগতের পালক ও রক্ষাকর্তা। ত্রিমূর্তি হচ্ছে হিন্দু ধর্মের একটি ধারণা যা মনে করা হয় জন্ম, পালন এবং বিনাশের রূপ। ব্রহ্মা হচ্ছে জন্মকর্তা যিনি মানুষের জন্ম দেয়। তিনি সকল প্রাণী এবং সকল বস্তুর পিতা। তারপরেই আছেন বিষ্ণু, যিনি মানুষকে পালন করে থাকেন। তিনিই মানুষের সকল জীবনের সমস্যা এবং সমাধানের পথের পাথেয়। সবশেষে আছেন শিব অথবা মহেশ্বর, যিনি প্রয়োজন মত মানুষের জীবনাবসনের দায়িত্ব পালন করেন। এই তিনজনকে আরো বলা হয় - তাদের সাথে পৃথিবী, জল এবং অগ্নির সম্পর্ক আছে। ব্রহ্ম হচ্ছে পৃথিবী, বিষ্ণু হচ্ছে জল এবং শিব হচ্ছে আগুন। বিষ্ণুর দশ প্রসিদ্ধ অবতারকে দশাবতার নামে পরিচিত।

১. মৎস্য :- মাছরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
২. কূর্ম :- কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৩. বরাহ :- বন্য শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৪. নৃসিংহ :- অর্ধনরসিংহরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৫. বামন :- খর্বকায় বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৬. পরশুরাম :- পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৭. রাম :- অযোধ্যার যুবরাজ ও রাজা রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ :- দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম সহ অবতীর্ণ। ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। যে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৯. বলরাম :- কোনো কোনো মতে বিষ্ণুর নবম অবতার। (এই স্থানে বলরাম সম্পর্কে জানতে নিচে বিকল্প তালিকা দেখুন।)
১০. কল্কি :- এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেন।

দক্ষিণ ভারতে বলরামকে দশাবতারের তালিকাভুক্ত করা হয়। এই মত অনুসারে, বুদ্ধের অবতারত্ব স্বীকৃত নয়। কোনো কোনো গ্রন্থে আবার কৃষ্ণকে অবতার তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। একাধিক মধ্যযুগীয় ধর্মসম্প্রদায়ে কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান নামে পরিচিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব, বল্লভ সম্প্রদায়, ও নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মতে তিনি সকল অবতারের উৎস। নিম্বার্ক মতে, কৃষ্ণ আবার শুধু সকল অবতারের উৎসই নন, তিনি স্বয়ং বিষ্ণুরও উৎস। এই বিশ্বাসের মূলে রয়েছে "ভাগবতের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি" (১।৩।২৮)।

 কোনো কোনো তালিকা অনুসারে, বলরাম কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা এবং গৌতম বুদ্ধের স্থলে বিষ্ণুর নবম অবতার। ভাগবত পুরাণ –এর মতে দ্বাপরযুগে শেষনাগের অবতার রূপে বলরামের আবির্ভাব। অধিকাংশ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে তিনি অবতাররূপে পূজিত হন। এই সকল তালিকায় গৌতম বুদ্ধের নাম দেখা যায় না।
মহারাষ্ট্র ও গোয়ার ঐতিহ্য অনুসারে পঞ্চাঙ্গ ও বিভিন্ন মন্দির স্থাপত্যে বিঠোবা বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধরূপে গণ্য হন। মহারাষ্ট্রের সন্তকবিরাও বিঠোবাকে বুদ্ধের রূপে বন্দনা করেছেন।

দশাবতারের তালিকা পাওয়া যায় গরুড় পুরাণে। জয়দেব রচিত প্রলয়পয়োধিজলে (গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রথম সর্গের প্রথম গীত, দশাবতার স্তোত্র নামে সমধিক পরিচিত) স্তোত্রে দশটি পৃথক স্তবকে দশ অবতারের বিবরণদানের পর নিম্নোক্ত শ্লোকে দশাবতারের কীর্তির একটি সুসংবদ্ধ তালিকা প্রদান করা হয়েছে :-

বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহতে ভূগোলমুদ্বিভ্রতে
দৈত্যং দারয়তে বলিং ছলয়তে ক্ষত্রক্ষয়ং কুর্বতে।
পৌলস্ত্যং জয়তে হলং কলয়তে কারুণ্যমাতন্বতে
ম্লেচ্ছান মূর্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ।।

“ বেদের উদ্ধারকারী, ত্রিলোকের ভারবহনকারী, ভূমণ্ডল উত্তোলনকারী, হিরণ্যকশিপু বিদারণকারী, বলিকে ছলনাকারী, ক্ষত্রক্ষয়কারী, দশানন-সংহারকারী, হলকর্ষণকারী, করুণাবিতরণকারী, ম্লেচ্ছধ্বংসকারী, দশরূপধারী হে কৃষ্ণ, তোমায় প্রণাম করি।।১৬।। ”

যাই হোক, এই দশ অবতারই মানব সমাজে তাঁদের প্রভাবের ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য হন। দশাবতারের প্রথম চার জন অবতীর্ণ হয়েছিলেন সত্যযুগে। সত্যযুগের ব্যপ্তিকাল ছিল ১৭ লক্ষ ২৮ হাজার বছর। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে এযুগের উত্‍পত্তি হয়েছিল।সত্য যুগ ছিল পুরা সময়টাই ছিল ধর্ম ও শাস্ত্র নির্ভর। কেউ শাস্ত্রনিষিদ্ধ উপায়ে অর্থ বা বিদ্যা লাভের চেষ্টা করতেন না। তপস্যাই এযুগের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। মানুষের আয়ু ছিল ৪০০বছর। কোন রোগ শোক দুঃখ ছিল না। মানুষের সকল কামনা পূর্ণ হতো। মানুষ ছিল পুন্যবান। দেবতা ও পিতৃলোকের তৃপ্তসাধন করতেন এবং তারা ছিলেন জিতেন্দ্রিয়। সত্য যুগে মানুষ দেবতুল্য ছিলেন । মানুষের রুপে নিয়ে দেবতারা ইহ ও স্বর্গলোক বিচরন করতে পারতেন। পরের দ্রব্যকে দেখতো মাটির ঢেলার মত। চোর মিথ্যাবাদী বা প্রতারক এযুগে ছিল না। সত্যযুগে অকাল মৃত্যু ছিল না। এমনকি ছিল না রোগভয় ও দূর্ভিক্ষ । এযুগে পৃথিবী অতি শস্যশালিনী ছিল। মেঘ সময়মত বারি বর্ষণ করত এবং বৃক্ষরাজি ছিল ফলভারে অবনত।তখন যে চারজন অবতার এসেছেন তারা ছিলেন, এক - মত্‍স অবতার, চৈত্রের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে, দুই - কূর্ম অবতার ভাদ্রমাসের শুক্লা পূর্ণিমা তিথিতে, তিন - বরাহ অবতার ভাদ্রমাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে, চার - নৃসিংহ অবতার বা নরসিংহ, অর্ধনরসিংহ যিনি বৈশাখ মাসের চতুদ্দর্শী তিথিতে আর্বিভূত হন।

  নৃসিংহ (সংস্কৃত: नरसिंह, বানানান্তরে নরসিংহ) বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার। পুরাণ, উপনিষদ ও অন্যান্য প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে তাঁর উল্লেখ রয়েছে। তিনি হিন্দুদের জনপ্রিয়তম দেবতাদের অন্যতম। সাধারণত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের অন্যতম প্রতীক তিনি ৷ প্রাচীন মহাকাব্য, মূর্তিতত্ত্ব, মন্দির ও উৎসব ইত্যাদির তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর পূজা প্রচলিত রয়েছে। নৃসিংহকে শৌর্যের মূর্তিস্বরূপ এবং তাঁর মন্ত্র শত্রুনিধন ও অমঙ্গল দূরীকরণে বিশেষ ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়; তাই অতীতে শাসক ও যোদ্ধারা নৃসিংহের পূজা করতেন।

নৃসিংহ অর্ধ-মনুষ্য অর্ধ-সিংহ আকারবিশিষ্ট। তাঁর দেহ মনুষ্যাকার, কিন্তু সিংহের ন্যায় মস্তক ও নখরযুক্ত। মৎস্যপুরাণ অনুযায়ী নৃসিংহ অষ্টভূজ হলেও, অগ্নিপুরাণ অনুযায়ী তিনি চতুর্ভূজ। একাধিক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে তাঁর পূজা প্রচলিত। দক্ষিণ ভারতে নৃসিংহ পূজার বিশেষ প্রচলন দেখা যায়। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নৃসিংহ ‘মহারক্ষক’; তিনি ভক্তকে তার প্রয়োজনের সময় সর্বদা রক্ষা করে থাকেন।

একাধিক পুরাণ গ্রন্থে নৃসিংহের উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরাণে নৃসিংহ-সংক্রান্ত মূল উপাখ্যানটির সতেরোটি পাঠান্তর বর্তমান। কয়েকটি কাহিনি অন্যান্য কাহিনিগুলির চেয়ে একটু বিস্তারিত। নৃসিংহ অবতারের বর্ণনা রয়েছে ভাগবত পুরাণ (সপ্তম স্কন্দ), অগ্নিপুরাণ (৪।২-৩), ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ (২।৫।৩-২৯), বায়ুপুরাণ (৬৭।৬১-৬৬), হরিবংশ (৪১ এবং ৩।৪১-৪৭), ব্রহ্মাপুরাণ (২১৩।৪৪-৭৯), বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ (১।৫৪), কূর্মপুরাণ (১।১৫।১৮-৭২), মৎস্যপুরাণ (১৬১-১৬৩), পদ্মাপুরাণ (উত্তরখণ্ড, ৫।৪২), শিবপুরাণ (২।৪।৪৩ ও ৩।১০-১২), লিঙ্গপুরাণ (১।৯৫-৯৬), স্কন্দপুরাণ ৭ (২।১৮।৬০-১৩০) ও বিষ্ণুপুরাণ (১।১৬-২০) গ্রন্থে। মহাভারত-এও (৩।২৭২।৫৬-৬০) নৃসিংহ অবতারের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া একটি প্রাচীন বৈষ্ণব তাপনী উপনিষদ (নরসিংহ তাপনী উপনিষদ) তাঁর নামে উল্লিখিত হয়েছে।

ঋগ্বেদে একটি শ্লোকাংশে একটি রূপকল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রূপকল্পটি নৃসিংহরূপী বিষ্ণুর রূপকল্প বলে অনুমিত হয়ে থাকে। উক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে "বন্য জন্তুর ন্যায়, ভয়ংকর, বিধ্বংসী ও পর্বতচারী" রূপে বিষ্ণুর গুণ কেবল তাঁর অবতারে দৃষ্ট হয় (ঋগ্বেদ ১।১৫৪।২ক)। ঋগ্বেদের অষ্টম মণ্ডলে (১৪।১৩) বর্ণিত নামুচির উপাখ্যানে নৃসিংহের ছায়া লক্ষিত হয়: "হে ইন্দ্র, জলের বুদ্বুদের দ্বারা তুমি নামুচির মস্তক ছিন্ন করলে এবং সকল প্রতিকূল শক্তিগুলিকে নিমজ্জিত করলে।" মনে করা হয় এই ক্ষুদ্র উল্লেখটি থেকে নৃসিংহের পূর্ণ কাহিনিটি বিকাশ লাভ করেছে।

ভাগবত পুরাণ-এ বর্ণিত নৃসিংহের কাহিনিটি নিম্নরূপ :-

মহর্ষি কশ্যপের ঔরসে তৎপত্নী দিতির গর্ভে এই দৈত্যের জন্ম হয়। তার ভাইয়ের নাম হিরণ্যাক্ষ।
হিরণ্যাক্ষ নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহের হাতে নিহত হয় । হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। দাদার হত্যার প্রতিশোধ মানসে তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এই জাতীয় প্রবল ক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান।

হিরণ্যকশিপু বলেন :-

" হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না; দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না। আমাকে এমন বর দিন যে বরে শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে কোনো জীবিত বা মৃত সত্তার হাতে আমার মৃত্যু হবে না; কোনো উপদেবতা, দৈত্য বা পাতালের মহানাগ আমাকে হত্যা করতে পারবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে কেউই হত্যা করতে পারে না; তাই আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আমাকেও বর দিন যাতে আমারও কোনো প্রতিযোগী না থাকে। এমন বর দিন যাতে সকল জীবসত্তা ও প্রভুত্বকারী দেবতার উপর আমার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং আমাকে সেই পদমর্যাদার উপযুক্ত সকল গৌরব প্রদান করুন। এছাড়া আমাকে তপস্যা ও যোগসাধনার প্রাপ্তব্য সকল সিদ্ধাই প্রদান করুন, যা কোনোদিনও আমাকে ত্যাগ করবে না। "

হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তাঁর প্রাসাদ আক্রমণ করেন। দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।

ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়। হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা :-

"ওরে হতভাগা প্রহ্লাদ, তুই সব সময়ই আমার থেকেও মহৎ এক পরম সত্তার কথা বলিস। এমন এক সত্তা যা সর্বত্র অধিষ্ঠিত, যা সকলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং যা সর্বত্রব্যাপী। কিন্তু সে কোথায়? সে যদি সর্বত্র থাকে তবে আমার সম্মুখের এই স্তম্ভটিতে কেন নেই ? "

প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, " তিনি [এই স্তম্ভে] ছিলেন, আছে ও থাকবেন।" উপাখ্যানের অন্য একটি পাঠান্তর অনুযায়ী, প্রহ্লাদ বলেছিলেন, " তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন। " হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন। তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু।

ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন :-
হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর বধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।

কূর্মপুরাণ-এর বর্ণনা অনুসারে, এরপর পুরুষ ও দৈত্যদের মধ্যে এক প্রবল সংগ্রাম শুরু হয়। এই যুদ্ধে তিনি পাশুপত নামে এক মহাস্ত্রকে প্রতিহত করেন। পরে প্রহ্লাদের ভাই অনুহ্রদের নেতৃত্বাধীন দৈত্যবাহিনীকে নৃসিংহ অবতারের দেহ হতে নির্গত এক মহাসিংহ যমালয়ে প্রেরণ করেন। মৎস্যপুরাণ (১৭৯) গ্রন্থেও নৃসিংহ অবতারের বর্ণনার পর এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।

ভাগবত পুরাণ-এ আরও বলা হয়েছে: হিরণ্যকশিপুকে বধ করার পর সকল দেবতাই নৃসিংহদেবের ক্রোধ নিবারণে ব্যর্থ হন। বিফল হন স্বয়ং শিবও। সকল দেবগণ তখন তাঁর পত্নী লক্ষ্মীকে ডাকেন; কিন্তু লক্ষ্মীও স্বামীর ক্রোধ নিবারণে অক্ষম হন। তখন ব্রহ্মার অনুরোধে প্রহ্লাদ এগিয়ে আসেন। ভক্ত প্রহ্লাদের স্তবগানে অবশেষে নৃসিংহদেব শান্ত হন। নৃসিংহদেব "প্রহ্লাদকে কোলে লইয়া গা চাটিতে লাগিলেন।" প্রত্যাবর্তনের পূর্বে নৃসিংহদেব প্রহ্লাদকে রাজা করে দেন।

শিবপুরাণ গ্রন্থে নৃসিংহ উপাখ্যানের একটি শৈব পাঠান্তর বর্ণিত হয়েছে, যা প্রথাগত কাহিনিটির থেকে একটু ভিন্ন: নৃসিংহকে শান্ত করতে শিব প্রথমে বীরভদ্রকে প্রেরণ করেন। কিন্তু বীরভদ্র ব্যর্থ হলে শিব স্বয়ং মনুষ্য-সিংহ-পক্ষী রূপী শরভের রূপ ধারণ করেন। এই কাহিনির শেষভাগে বলা হয়েছে, শরভ কর্তৃক বদ্ধ হয়ে বিষ্ণু শিবের ভক্তে পরিণত হন। লিঙ্গপুরাণ গ্রন্থেও শরভের কাহিনি রয়েছে। যদিও বিজয়েন্দ্র তীর্থ প্রমুখ বৈষ্ণব দ্বৈতবাদী পণ্ডিতগণ সাত্ত্বিক পুরাণ ও শ্রুতি শাস্ত্রের ভিত্তিতে নৃসিংহের উপাখ্যানটির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বিতর্কের অবকাশ রেখেছেন।

ACHARYA KUSH MUKHERJEE
RAMPURHAT CHAKLAMATH BIRBHUM (W.B)
Share:

কীভাবে শ্রীমদ্ভাগবতের সনাতন শিক্ষা আমাদের মৃত্যুর মোকাবিলা করতে শেখায় ?

যে মানুষ যথেষ্ট বুদ্ধিমান নয়, সে পারমার্থিক জীবন সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে পারে না। পক্ষান্তরে, সে নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক বিষয় সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে, যার সঙ্গে তার সচ্চিদানন্দময় অস্তিত্বের কোনই সম্পর্ক নেই। জীবনের শুরু থেকেই সে তার মা, বাবা শিক্ষক, অধ্যাপক এবং অন্যান্য বহু সূত্র থেকে নানা রকম বিষয়ে
জানবার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই সমস্ত প্রশ্নের মাধ্যমে তার প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে সে কিছুই জানতে পারে না।

পরীক্ষিৎ মহারাজ যখন জানতে পারলেন যে, সাতদিন পরে তাঁর মৃত্যু হবে, তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর রাজপ্রাসাদ এবং রাজ-ঐশ্বর্য পরিত্যাগ করে পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পরীক্ষিৎ মহারাজ অন্তত সাতদিন সময় পেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা যদিও জানি যে, মৃত্যু আমাদের অবশ্যম্ভাবী, তবে কখন যে তা আসবে, সেই সম্বন্ধে আমাদের কিছুই জানা নেই। আমরা জানি যে, যে কোন মুহূর্তে আমাদের মৃত্যু ঘটতে পারে। মহাত্মা গান্ধীর মতাে একজন
তথাকথিত মহাত্মা পর্যন্ত বুঝতে পারেননি যে, পাঁচ মিনিট পরেই তাঁর মৃত্যু হবে, আর তাঁর মহান পারিষদেরাও তার আসন্ন মৃত্যুকে অবলােকন করতে পারেননি।

জন্ম এবং মৃত্যু সম্বন্ধে অজ্ঞতাই পশু এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকে। একজন যথার্থ মানুষ তার নিজের সম্বন্ধে এবং তার স্বরূপ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। সে প্রশ্ন করে, কোথা থেকে সে এই
জীবনে এল এবং মৃত্যুর পর সে কোথায় যাবে। সে প্রশ্ন করে, যদিও সে দুঃখ চায় না, তবুও কেন সে ত্রিতাপ দুঃখের দ্বারা জর্জরিত হচ্ছে। জীবনের শুরু থেকে মানুষ তার জীবনের কত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে, কিন্তু জীবনের যথার্থ তত্ব সম্বন্ধে সে কখনই কোন প্রশ্ন করে না। এটিই হচ্ছে পাশবিকতা। চারটি পশুপ্রবৃত্তি মানুষের মধ্যেও দেখা যায়।

সেই ব্যাপারে মানুষ এবং পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রতিটি জীবই আহার, নিদ্রা, ভয় এবং মৈথুনকে কেন্দ্র করে জীবন যাপন করে, কিন্তু মনুষ্য-জীবনেই কেবল নিত্য অস্তিত্ব এবং চিন্ময় সত্ত্বা সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়। তাই মনুষ্য-জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার নিত্য অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা। বেদান্ত সূত্র উপদেশ দিচ্ছে
যে, সেই অনুসন্ধান এখনই করতে হবে। তা না হলে কখনই তা সম্ভব হবে না। মনুষ্য-জীবন পাওয়া সত্ত্বেও আমরা যদি আমাদের প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে অনুসন্ধান না করি, তা হলে প্রকৃতির নিয়মে
আমাদের অবশ্যই আবার পশুজীবন প্রাপ্ত হতে হবে। তখন আর আমরা প্রশ্ন করতে পারব না, ‘আমি কে? আমি কোথা থেকে এলাম? আমি কেন এখানে কষ্ট পাচ্ছি?” তাই জড়জাগতিক বিষয়ে
অনেক মূর্খ লােকদের যথেষ্ট উন্নত বলে মনে হলেও অর্থাৎ আহার, নিদ্রা, ভয়, মৈথুন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের খুব উন্নত বলে মনে হলেও
প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যুর হাত থেকে তারা কখনই নিস্তার পেতে পারে না। জড়া প্রকৃতি সত্ত্ব, রজ এবং তম—এই তিনটি গুণের দ্বারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যারা সত্ত্বগুণে জীবন যাপন করে, তারা উচ্চতর ধার্মিক জীবন প্রাপ্ত হয়; যারা রজোগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবন যাপন করে, তারা জড় জগতে যেখানে রয়েছে সেখানেই আবদ্ধ হয়ে
থাকে; আর যারা তামসিক জীবন যাপন করে, তারা অবশ্যই অধঃপতিত হয়ে নিম্নতর জীবন লাভ করে।

আধুনিক সভ্যতার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তা কোন শিক্ষাই প্রদান করে না। পশুর মতাে এই সমাজের মানুষেরাও জানে না যে, প্রকৃতির নিয়মে অচিরেই তাদের মৃত্যু হবে। একমুঠো সবুজ ঘাস বা তথাকথিত সুখময় জীবন পেয়ে তারা কসাইখানায় মৃত্যুর প্রতীক্ষমান পাঁঠার মতাে নির্বিকার। আধুনিক মানুষের এই দুর্দশার কথা বিবেচনা করেই আমরা ভগবৎ দর্শনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। এই পন্থাটি অলীক নয়।
কলহের যুগ এই যুগে মিথ্যার আবরণ উন্মােচন করে যদি আবার সত্যযুগের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তা হলে ভগবৎ-দর্শনের এই বাণীর মাধ্যমেই তার সূচনা হচ্ছে।

||হরেকৃষ্ণ||

Post Courtesy by:  অদ্রিজা মুর্খাজী
Share:

ত্রিসন্ধ্যা কি? নিত্য কর্ম করার নিয়ম কি?

১। সূর্যোদয়ের কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠতেহবে। (একে বলে ব্রাহ্ম মুহুর্তে উঠা) ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা গুরু স্মরণ করে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র এবং যাদের দীক্ষা বা (মন্ত্র) হয়নি তারা ঈশ্বরের যে কোন নাম জপ করবেন কমপক্ষে ১০৮ বার করে যতবার বেশি করা যায় জপ করবেন ও ঈশ্বরের স্মরণ ও মনন করবেন। এটা হল ১ম (সন্ধ্যা)। এটা সূর্য উঠার আধ ঘণ্টা পর পর্যন্ত চলতে পারে। ঈশ্বরের যে কোন নামে তাঁকে ডাকতে হবে একেই বলে জপ। আর তাঁর রূপকে চিন্তা করাকেই বলে ধ্যান।



২। এভাবে স্নানের পর দুপুরে বা তার একটু আগে পরে একইভাবে কমপক্ষে ১০৮ বার করে যতবার পারবেন জপ করবেন। এভাবে ঈশ্বরের নাম করা ও তাঁর স্মরণ করা হল ২য় সন্ধ্যা।

৩। এভাবে সূর্যাস্তের অর্ধ ঘণ্টা পর থেকে শোবার আগে যে কোন সময়, তবে সন্ধ্যা আরতির সময় করা বেশী উত্তম। একই ভাবে ১০৮ বা অধিক বার তাঁর নাম জপ ও তাঁকে স্মরণ করতে হবে। এটি হল ৩য় সন্ধ্যা। এভাবে ত্রিসন্ধ্যা করা একান্ত কর্তব্য (এছাড়াও শোবার সময় উঠার সময় হাই তোলার সময়, হাঁচি, কাশিতে সর্বদা তাঁর নাম করতে হয়)। মনে রাখতে হবে ঈশ্বরকে মহিলা, পুরুষ, বৃদ্ধ, বনিতা, শরীরের যে কোন অবস্থায় যে কোন কালে, যে কোন স্থানে তাঁর নাম মনে মনে করবেন। কারণ,

শ্রীমদ্ভাগবত গীতার ৮/৫ শ্লোকে আছে-

অন্তকালে চ মামেব স্মরণ মুক্তা কলেবরম্
য়ঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং য়াতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ।।

অর্থাৎ,
মৃত্যুকালে বা দেহত্যাগকালে যে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বা তাঁর নাম করে সে আমার ভাব অর্থাৎ ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হয় বা ঈশ্বর লাভ করে। মৃত্যু মানুষকে যে কোন সময় গ্রাস করে, বলে কয়ে আসে না। তাই যে কোন স্থানে দেহের যে কোন অবস্থায় মন্দিরে-শৌচালয়ে যে কোন স্থানে তাঁর নাম করা কর্তব্য। তাই সর্বদা এমনকি শৌচ কালেও ঈশ্বরকে মনে মনে ডাকা (জপ) স্মরণ (ধ্যান) করা যায়। সুতরাং যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা তার গুরু নির্ধারিত ইষ্ট মন্ত্র জপ করবেন। যাদের দীক্ষা হয়নি তবুও তারা ঈশ্বরের যে কোন নামে জপ করতে পারে।

যেমন- ওঁ(অউম্), ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, রাম, কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, হরি নারায়ণ, ইত্যাদি যে কোন নামে ডাকবেন। সঙ্গে গায়ত্রী মন্ত্র জানা থাকলে সেটি পারলে জপ করা যায়।

গায়ত্রী মন্ত্রঃ

ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্ বরেণ্যং
ভর্গদেবস্য ধীমহি ধিয়ো ইয়েনঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।

গায়ত্রীর অর্থঃ

ভুঃ ভুবঃ স্বঃ অর্থ- স্বর্গ, মর্ত্য, অন্তরিক্ষ ব্রহ্মাণ্ড যাঁর থেকে উৎপন্ন হয়েছে সেই জ্যোতির্ময় পরমাত্মার ধ্যান করি, আমাদের বুদ্ধি (মতি পরমাত্মার দিকে পরিচালিতহউক।

সর্বদা জানবেনঃ পূজার চেয়ে নামজপ বা নাম করা বড় তাঁর চেয়ে ঈশ্বরের ধ্যান করা আরো বড়। তাই জপ, ধ্যান অবশ্যই কর্তব্য। তবে বিশেষ দিনে পূজা করা কর্তব্য। জপ ধ্যান সর্বদা কর্তব্য। তাছাড়াও শয়নকালে বা উঠার সময়, হাঁচি, কাশি, হাইতোলা যে কোন সময় যে কোন কর্মের শুরুতে ও শেষে তাঁর নাম করা কর্তব্য। যেমন- গা মোড়াবার সময় রাম রাম, হরিবোল, হরে রাম, হরে কৃষ্ণ, ইত্যাদি।

তাকে হরি ওঁ তৎ সৎ নামেও ডাকা যায়। আমাদের নিজ নিজ ব্যবসা ক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র ও যানবাহনে চলাচলে সর্বত্র বসে বসে বা হাটতে হাটতে ত্রিসন্ধ্যার সময় হলে মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকতে পারি ও নাম করতে পারি।

জয় শ্রীকৃষ্ণ

সবাইকে জানার জন্য শেয়ার করুন।
Share:

কর্ণাটকের বেলুরুতে অবস্থিত চেন্নাকেশব বিষ্ণু মন্দিরের দ্বাররক্ষী রূপে জয় ও বিজয়ের মূর্তি কে ?

কর্ণাটকের বেলুরুতে অবস্থিত চেন্নাকেশব বিষ্ণু মন্দিরের দ্বাররক্ষী রূপে জয় ও বিজয়ের মূর্তি৷

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, জয় ও বিজয় ছিলেন শ্রী বিষ্ণুর বাসক্ষেত্র বৈকুণ্ঠধামের দুই দ্বাররক্ষী বা দ্বারপাল৷ একদা অভিশাপিত হয়ে উভয়কেই মর্তলোকে মরণশীল হয়ে একাধিক জন্ম নেন এবং প্রতিবারেই বিষ্ণুর অবতার দ্বারা নিহত হন৷ তারা পৃৃৃথিবীতে সত্যযুগে হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু , ত্রেতাযুগে রাবণ ও কুম্ভকর্ণ এবং শেষ জন্মে দ্বাপরযুগে শিশুপাল ও দন্তবক্র নামে অবতারজন্ম গ্রহণ করেন৷

ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ অনুসারে জয় ও বিজয় দুজনেই ছিলেন কলিদেবের পুত্র, আবার কলিদেব ছিলেন বরুণ দেব ও তার অন্যতমা পত্নী স্তুতিদেবীর পুত্র৷ জয় ও বিজয়ের কাকা তথা বরুণ দেবের ভ্রাতা পেশায় বৈদ্য ছিলেন৷


বৈকুণ্ঠের দ্বারপালের দ্বারা চতুর্কুমারের বিষ্ণুলোকে প্রবেশে বাধা দান এবং শাপপ্রাপ্তিকালে বিষ্ণু ও শ্রীলক্ষ্মীর আগমন
ভাগবত পুরাণের একটি কাহিনী অনুসারে একদা ব্রহ্মা ও গায়ত্রীদেবীর মানসপুত্র চতুর্কুমার তথা সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎকুমার একসঙ্গে বিষ্ণুর দর্শন পেতে বৈকুণ্ঠে এসে হাজির হন৷ তাদের তপস্যার জেরে তাঁরা দীর্ঘায়ীযুক্ত হলেও শিশুসদৃৃশ দেখতে ছিলো, কিন্তু দ্বারপাল জয় ও বিজয় এবিষয়ে বিশেষ অবগত ছিলেন না৷ ফলে তারা চতুর্কুমারকে শিশু ভেবে বৈকুণ্ঠের দ্বারের সম্মুখে আটকে দেন ও ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন৷ তারা চতুর্কুমারকে এও বলেন যে বিষ্ণুদেব এখন শয্যাগ্রহণ করছেন ফলে তিনি এখন দর্শন দিতে অপারক৷ জয় ও বিজয়ের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে চতুর্কুমার তাদের প্রত্যুত্তরের বলেন যে বিষ্ণু তার দর্শনপ্রার্থীদের ও ভক্তদের জন্য সর্বদা উপলব্ধ থাকেন৷



এই বলে তারা দুই দ্বারপালকে অভিশাপ দেন যে তারা দুজনেই মরণশীল মানবরূপে ভূলোকে জন্মগ্রহণ করবেন তাঁদের সাধারণ মানুষের মতোই জন্মমৃত্যুর মায়াচক্রে জীবন অতিবাহিত করতে হবে৷ বিষ্ণু তাদের সম্মুখে প্রকট হলে জয় ও বিজয় তাকে অনুরোধ করেন এই শাপমোচনের কোনো উপায় করতে৷ বিষ্ণু বলেন ব্রহ্মাপুত্র চতুর্কুমারের শাপ বিফল করার কোনো পন্থা নেই বরং নিস্তারের দুটি পথ আছে৷ দ্বারপালগণ সেই উপায় জিজ্ঞাসা করলে বিষ্ণু বলেন হয় তাদেরকে সাধারণ মানুষ হয়ে সাতটি জন্মে পৃথিবীতে বিষ্ণুর সেবক হয়ে জন্ম নিতে হবে নতুবা দ্বিতীয় মতে তিনটি জন্মে পৃথিবীতে বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের শত্রু হয়ে জন্ম নিতে হবে৷ এই দুটির যেকোনো একটি শর্ত পূরণ করে তবেই তারা আবার স্থায়ীভাবে বৈকুণ্ঠে প্রবেশ করতে পারবে৷ জয় এবং বিজয় উভয়ই সাতটি জন্ম অবধি শ্রীবিষ্ণুর থেকে দূরে থাকার কথা ভাবতেও পারতেন না, তাই তারা তিন জন্ম বিষ্ণুর একাধিক অবতারের শত্রুরূপে জন্মগ্রহণ করাকে স্বাচ্ছন্দবোধ করে শর্তপূরণের জন্য প্রস্তুত হন৷


পৃৃথিবীতে প্রথম জীবনে তারা কৃতযুগে মহর্ষি কশ্যপ এবং প্রজাপতি দক্ষর কন্যা দিতির দুই পুত্র হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু নামে জন্মগ্রহণ করেন৷ সত্যযুগে বিষ্ণুর অবতার বরাহ অবতার বধ করেন হিরণ্যাক্ষকে এবং ঐ যুগেই বিষ্ণুর
নৃসিংহ অবতার বধ করেন হিরণ্যকশিপুকে৷ দ্বিতীয় জীবনে ত্রেতাযুগে তাঁরা ঋষি বিশ্রবা ও রাক্ষসী নিকষার দুই পুত্র রাবণ ও কুম্ভকর্ণ নামে জন্মগ্রহণ করেন৷ ঐ যুগেই বিষ্ণুর রামাবতার তাদের হত্যা করেন৷ তৃতীয় জীবনে দ্বাপরযুগে তারা শিশুপাল ও দন্তবক্র নামে জন্মলাভ করেন এবং কৃষ্ণের হাতে নিহত হন৷


এটা লক্ষ্য করা যায় যে প্রতি জন্মে জয় ও বিজয়ের মর্তে অবতারের শক্তি হ্রাস হতে থাকে৷ সত্যযুগে হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু হত্যা করতে বিষ্ণুকে আলাদা দুটি অবতাররূপে জন্ম নিতে হয়৷ আবার ত্রেতাযুগে রাম একা রাবণ ও কুম্ভকর্ণকে বধ করে৷ একইভাবে দ্বাপরযুগে দন্তবক্র ও শিশুপাল হত্যা করা কৃষ্ণরূপে অবতার গ্রহণের মূল লক্ষ্য কখনোই ছিলো না৷ দন্তবক্র ও শিশুপালের মৃত্যুর পরে জয় ও বিজয় চতুর্কুমারের শাপ থেকে মুক্ত হন৷ ফলে
বৈষ্ণবীয় রীতি অনুসারে আধুনিক কালে (সংস্কৃৃৃত মতে কলিযুগে ) তারা আবার বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল রূপে আত্মনিয়োজিত হন৷


অন্ধ্রপ্রদেশের বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে, ওড়িশার পুরী জগন্নাথ মন্দিরে এবং শ্রীরঙ্গমে রঙ্গনাথ মন্দিরের প্রবেশপথের দুই ধারে দ্বারপালরূপে জয় ও বিজয়ের মূর্তি রয়েছে৷




Post curtesy by: Rumkha Das Jowel
Share:

মা এর গর্ভ হতে মায়া এর গর্ভে


"কয় বার এলি কয় বার গেলি, তবু তত্ত্ব না শিখিলি!
নিজের মাথা নিজে খাইলি, এই দোষ দিবি কারে ভাই?"

আমরা দশ মাস দশ দিন মাতৃগর্ভে ছিলাম। মাথা ছিলো নিচের দিকে, পা ছিলো উপরের দিকে। এভাবে আমরা বারবার কতো কষ্ট করেছি মায়ের গর্ভের মধ্যে। সে কষ্ট থেকে জীব উদ্ধার পেতে চায়, আর তখন তো কথা দিয়েছিলাম প্রভুকে।
আমরা যখন মায়ের গর্ভে ছিলাম, কতো কষ্ট তখন করেছিলাম, সেখানে আমরা ভগবানকে ডেকেছি, “প্রভু, আমি আর এ কষ্ট করতে পারছি না!”

কোনো কোনো ভাগ্যবান জীবকে মায়ের গর্ভে দেখা দেন ভগবান, “তুমি আমাকে কেন ডেকেছিলে?”
জীব তখন বলে, “প্রভু, আমি এই কষ্ট করতে পারছি না, আমাকে এখান থেকে ছেড়ে দাও!”
তখনই, ভূমিষ্ঠ হাওয়ার আগে সেই জীব কথা দেয়, “চোখ দিয়ে তোমার বিগ্রহ দর্শন করবস, মুখ দিয়ে তোমার নাম করবো, কান দিয়ে তোমার কথা শুনবো।”

সব কিছু হ্যাঁ বলে দিয়ে এসেছিলাম। ভগবান যে ইন্দ্রিয় গুলো দিয়েছেন, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক, মন, বুদ্ধি আর অহঙ্কার সে ইন্দ্রিয়গুলো দিয়েছেন গোবিন্দের সেবা করার জন্য। এই দুটো হাত দিয়েছেন তাঁর সেবা করার জন্য। যেমন তাঁর প্রসাদ রান্না করবার জন্য, তাঁর বাসন মার্জন করবার জন্য, তাঁর মালা জপ করবার জন্য। পা দিয়েছেন তাঁর ধাম পরিক্রমা করবার জন্য, চোখ দিয়েছেন তাঁর বিগ্রহ দর্শন করবার জন্য, কান দিয়েছেন তাঁর কথা শোনবার জন্য। কিন্তু আমরা কি করেছি?

ভূমিষ্ঠ হাওয়ার পরে মায়ার কবলে পতিত হয়ে ভুলে গিয়েছি সেদিনের সেই কষ্টের ভেতর কাটানো দিনের প্রতিশ্রুতি গুলো। দোষটার কারণ আমাদের নয় কি ?
চোখটা প্রথম ভালোই ছিলো, কিন্তু যদি একটা ছানি পড়ে যায়, তখন ছানি না কেটে ছবি দেখতে পাবো না। কানও এ রকম, যখন আমরা বুড়ো হয়ে যাই, তখন ভালো শুনতে পাবো না। পায়ে যদি ব্যথা হয়ে যায়, তাহলে বিভিন্ন জায়গায়, ধাম পরিক্রমা, তুলসী পরিক্রমাও করতে পারবো না। এগুলো সব ভগবান আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখন কি করলাম! ওই মায়ার কবলে পতিত হয়ে পড়লাম; ভুলে গেলাম সবই!


মায়াকে কে সৃষ্টি করেছেন, ভগবান'ই তো!
"দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া |
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ||"
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ৭/১৪)


অর্থাৎ, ভগবান বলছেন, “এ মায়াকে আমি সৃষ্টি করেছি, তুমি এই মায়া জয় করতে পারবে না। তবে পারবে কখন?
‘মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ||’
অর্থাৎ, যে আমাকে প্রপদ্য করে, যে আমার চরণে শরণাগত হয়, যে আমার চরণে এসে পড়ে যায়, আমি তাকে আস্তে আস্তে মায়া থেকে রেহাই দেই।"


যখন আমার ভক্ত আমার শরণাপন্ন হয়, তখন দেখতে পেয়ে যে, ‘আমার সৃষ্টিকর্তা চলে এসেছেন’ তখন মায়া দেবী আমাদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে পালিয়ে যায়।


‘মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ||’


মায়াকে জয় করবার জন্যই সাধু-সঙ্গ করা যায়। মায়াকে সাধু-সঙ্গ ছাড়া জয় করা যায় না। তাই আমাদের ভগবানের নববিধা ভক্তির পথ অনুসরণ করে, ভগবদ্ কর্ম, জ্ঞান আর ভক্তির মাধ্যমে এই মোহময় অনিত্য সংসারের মায়াকে অতিক্রম করতে হবে। নইলে মুক্তি সুদুর পরাহত। তাই শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন -


"মায়ারে করিয়া জয় ছাড়ান না যায় |
সাধু-গুরু কৃপা বিনা না দেখি উপায় ||"



Post Courtesy By: Soikot Kumar‎
Share:

দুর্বা ও গণেশ

আপনারা হয়তো দেখেছেন গনেশ কে দূর্বা দান করতে। কথিত আছে গনেশকে ২১গাছি দূর্বা দিয়ে প্রার্থনা করলে গণেশ ঠাকুর প্রসন্ন হন। রামেশ্বরমের মন্দিরে দেখেছি দুর্বা দিয়ে গণেশ কে আপাদমস্তক আবৃত করে দেওয়া হয়। এর পিছনে যা কাহিনী আছে তা সংক্ষেপে কিছু লিখছি।

একসময় অনলাসুর নামে এক মহা প্রতাপবান ও অত্যাচারী অসুর ছিল, জানা যায় অনলাসুর যমরাজ ও অপ্সরা তিলত্তোমার ছেলে ছিল। সেই অনলাসুর একবার তপস্যার দ্বারা দেবাদিদেব মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে বর লাভ করেছিল। বর হিসেবে তাঁর চোখ থেকে আগুনের গোলা বের করার ক্ষমতা লাভ করে এবং সেই থেকে তাঁর নাম হয় অনলাসুর। অনল মানে আগুন।এই মহাশক্তির বলীয়ান হয়ে অনলাসুর প্রবল অত্যাচারি হয়ে উঠে।নির্দয় ভাবে সে সকলকে হত্যা করতে শুরু করে। সাধু-সন্ন্যাসীদের যাগযজ্ঞ নষ্ট করে নির্বিচারে লুন্ঠন হত্যা করতে থাকে।এমনকি তাঁর হাত থেকে দেবতারাও নিস্তার পেলেন না।অনলাসুরের ভয়ে তাঁরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে থাকেন।অনলাসুর তাঁর চোখ থেকে আগুন গোলা দিয়ে চারিদিক ধংশ করতে থাকে, স্বর্গ মর্ত্ত পাতালে শুরু হয়ে যায় হাহাকার।

অনলাসুর স্বর্গ থেকে দেবতাদের তাড়িয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে হত্যা করতে উদ্যত হলে ইন্দ্র সেখান থেকে পালিয়ে যান। ইন্দ্রের পলায়নের পর অনলাসুর স্বর্গ রাজ্যে অধিকার করে বসে।

অনলাসুরের ভয়ে ভীত হয়ে অত্যাচারিত দেবতারা দেবগুরু বৃহস্পতির নির্দেশে ভগবান গনেশের শরনাপন্ন হয়ে গণেশ কে অনলাসুর থেকে স্বর্গ কে উদ্ধার ও দেবগন কে রক্ষা করার প্রার্থনা জানান। দেবতাদের কাতর প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ভগবান গণেশ তাঁদের কে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। গণেশ জানতেন যে অনলাসুর প্রচন্ড পরাক্রমী তাই তিনি অনলাসুর কে বধ করার জন্যে কৌশল অবলম্বন করলেন। গণেশ নিজেকে একটি ছোট্ট শিশুতে পরিনত করে অনলাসুরের সাথে যুদ্ধ শুরু করলেন।অনলাসুরের চোখ থেকে নির্গত আগুনের গোলা গুলিদের তিনি কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকলেন কিন্তু সেই ভয়ানক আগুনের গোলা গুলি চারিদিক ধ্বংস করতে শুরু করলো। অনেকক্ষন যুদ্ধের পর অনলাসুর যখন শিশুরূপী গণেশ কে গ্রাস করতে উদ্যত হল। গণেশ তখন তাঁর বিরাট-রূপ ধারন করে অনলাসুর কে গিলে ফেলেন।

এদিকে অনলাসুর কে গিলে ফেলায় গণেশের শরীরের ভিতর সৃষ্টি হয় প্রচন্ড যন্ত্রণার। সেই যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করতে থাকেন, তাঁর এই অবস্থা দেখে স্বর্গের সকল দেবতারা মিলে গণেশের যন্ত্রণা দূর করার চেস্টা করতে থাকেন। দেবী পার্বতী গণেশের সর্বাঙ্গে চন্দনের প্রলেপ দিলেন,কিন্তু সেই আগুনের জ্বালার কোন প্রশমন হল না।দেবাদিদেব মহাদেব তাঁর গলার সাপ দিয়ে গণেশের কোমর বেঁধে দিলেন,কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না। আগুনের সেই ভীষণ যন্ত্রণায় গণেশ ছটফট করতে থাকেন।ভগবান বিষ্ণু তখন প্রচুর পরিমানে পদ্মের জল ছিটিয়ে দিলেন গণেশের গায়ে,সেই থেকে গণেশের এক নাম হয় পদ্মপাণি। তাতেও কোন লাভ হলো না।চন্দ্রদেব তাই দেখে গণেশের মাথার উপর অবস্থিত হয়ে শীতলতা প্রদান করতে শুরু করলেন সেই জন্য গণেশের আরেক নাম হয় ভালচন্দ্র। সকল প্রচেষ্টা বিফল হতে দেখে মহামুনি কাশ্যপ ২১টি দুর্বা গণেশের মাথায় নিবেদন করেন এবং সেই দুর্বা গুলিই গণেশের যন্ত্রণার অবসান ঘটালো, সেই দুর্বা গুলি দ্বারাই গণেশের শান্তি ফিরে এলো।এতে সন্তুষ্ট হয়ে গণেশ ঘোষণা করলেন যে দুর্বাই হবে উনার সবচাইতে প্রিয় আর যেই ভক্ত শ্রদ্ধা সহকারে ২১ টি দুর্বা গণেশকে নিবেদন করবে তাঁর জীবন ধনধান্যে পরিপূর্ণ হবে ও তাঁর জীবনে নেমে আসবে সুখ। পৃথিবীর সকল প্রকার জ্বালা যন্ত্রণা থেকে তাঁর জীবন হবে মুক্ত।আবার এই ২১ টি দুর্বার মাহাত্ম্য হিসেবে বর্ণিত আছে যে এই ২১টি দুর্বা কিন্তু প্রতীকী। এই ২১ টি দুর্বা হচ্ছে আমাদের মধ্যে পঞ্চ ভুত, পঞ্চ প্রাণ, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, ও মন এই সকলের প্রতীক।

Post Courtesy: Soikot Kumar


Share:

শিবগীতা - শিবপ্রাদুর্ভাবাখ্যশ্চতুর্থোহধ্যায়ঃ (শ্লোক ২৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত)

পীযূষমথনোদ্ভূতনবনীতস্য পিণ্ডবৎ ।
অতিশুভ্রং মরকতচ্ছায়শৃঙ্গদ্বয়ান্বিতম্ ॥


নীলরত্নেক্ষণং হ্রস্বকণ্ঠকম্বলভূষিতম্ ।
রত্নপল্যনসংযুক্তং নিবদ্ধং শ্বেতচামরৈঃ ॥

ঘণ্টিকাঘর্ঘরীশব্দৈঃ পূরয়ন্তং দিশো দশ ।
তত্রাসীনং মহাদেবং শুদ্ধস্ফটিকবিগ্রহম্ ॥

কোটিসূর্য্যপ্রতীকাশং কোটিশীতাংশুশীতলম্ ।
ব্যাঘ্রচর্মাম্বরধরং নাগযজ্ঞোপবীতিনম্ ॥

সর্বালংকারসংযুক্তং বিদ্যুৎপিঙ্গজটাধরম্ ।
নীলকণ্ঠং ব্যাঘ্রচর্মোত্তরীয়ং চন্দ্রশেখরম্ ॥

নানাবিধায়ুধোদ্ভাসিদশবাহুং ত্রিলোচনম্ ।
যুবানং পুরুষশ্রেষ্ঠং সচ্চিদানন্দবিগ্রহম্ ॥

অনুবাদ :- বৃষটি দুধ থেকে উৎপন্ন মাখন পিণ্ডের মতো ধবধবে সাদা রংয়ের এবং মরকত মণির মতো কান্তিমান তার শিং দুটি ॥

বৃষটির চোখ দুটি নীলমণির মতো মনোরম , ক্ষুদ্র গলদেশ মনোমুগ্ধকর কম্বলে ভূষিত । তার পিঠের উপর রত্নখচিত আসন এবং লেজটি শ্বেত চামরে শোভিত ॥

তার কণ্ঠদেশের ঘণ্টাগুলোর সুমধুর ঘর্ঘরী শব্দে আকাশ বাতাস সহ দশদিক মুখরিত হচ্ছে । শুদ্ধ স্ফটিক বিগ্রহের ন্যায় পরম শোভা বর্ধন করে দেবাদিদেব মহাদেব সেই বৃষের পিঠে বসে আছেন ॥

তিনি কোটি সূর্যের সমান প্রকাশমান , কোটি চন্দ্রের মতো শীতল , বাঘের চামড়ার বসন তার পরিধানে এবং তিনি নাগ যজ্ঞোপবীতধারী পরমপুরুষ ॥২৮॥

সর্ব অলংকারে তিনি ভূষিত , মস্তকে বিদ্যুতের মতো পিঙ্গলবর্ণের জটা ধারণ করে আছেন । তাঁর কণ্ঠদেশ নীলবর্ণের , ব্যাঘ্রচর্মের উত্তরীয় তাঁর কাঁধে এবং মস্তক চূড়ায় অর্ধচন্দ্র শোভা পাচ্ছে ॥

তাঁর দশহাত নানারকম অস্ত্র - শস্ত্র দ্বারা উদ্ভাসিত । তিনি পাঁচ মুখযুক্ত , তিন চোখ এবং দশহাত যুক্ত চিরযুবক । তিনি পুরুষশ্রেষ্ঠ ও সচ্চিদানন্দময় ॥

প্রভু শিবের ভাবে বিভোর হয়ে যান তবেই মুক্তি ।।

★ জয় শিব-শক্তি★

Post Courtesy by: Subrata Roy Rial
Share:

বেদমাতা গায়ত্রী মন্ত্র প্রকাশিত হওয়ার ইতিহাস

গায়ত্রী মন্ত্রের দ্রষ্টা ঋষি – বিশ্বামিত্র। বিশ্বামিত্র ঋষি নিজের জীবনের প্রথম দিকে ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন।তাঁর নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের উপর প্রচন্ড আত্মাভিমান ছিলো। একদিন তিনি তাঁর সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় পাশেই অবস্থিত বশিষ্ঠ মুনির আশ্রমে এলেন। ব্রাহ্মণ বশিষ্ঠ মুনি একজন ব্রহ্মর্ষি ছিলেন। বশিষ্ঠ মুনি, ক্ষত্রিয় রাজা বিশ্বামিত্রকে কিছু সময়ের জন্য তাঁর আশ্রমে বিশ্রাম নিতে বললেন এবং ভোজন গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করলেন। রাজা বিশ্বামিত্র ভোজন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালেন, কারণ তিনি চিন্তা করলেন যে তাঁর সাথে হাজার খানেক সৈন্য আছে। এই বনে এতজন সৈন্যের খাবারের আয়োজন করা বড্ড ঝামেলার বিষয়। কিন্তু বশিষ্ঠ মুনি বললেন যে তাদের ভোজন করেই যেতে হবে। তারপর বশিষ্ঠ মুনি নিজ কক্ষে প্রবেশ করলেন।ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের নিকট একটি দৈব শক্তিসম্পন্ন গোমাতা ছিলো। যাহাকে কামধেনু বলা হয়।প্রকৃতপক্ষে কামধেনু হলেন একজন দেবী, যিনি গোমাতা রূপে ছিলেন তাহার নিকট। কামধেনু মায়ের কাছে যা চাওয়া হয় তিনি তাই প্রদান করেন।




তারপর কামধেনু মায়ের নিকট ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ সবার খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য প্রার্থনা করলেন। সাথে সাথে হাজার সৈন্য-সামন্তের খাবার প্রকটিত হলো।তারপর ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ, রাজা বিশ্বামিত্র সহ সকলকেই খাবার গ্রহনের জন্য খাবার কক্ষে ডাকলেন। রাজা বিশ্বামিত্র এতো মানুষের খাবার ক্ষণিক সময়ের মধ্যে প্রস্তুত দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি বশিষ্ঠ মুনিকে জিজ্ঞেস করলেন যে এই জঙ্গলের মধ্যে তিনি কিভাবে এতো মানুষের খাবার এতো কম সময়ে প্রস্তুত করলেন।
তখন বশিষ্ঠ মুনি বললেন যে তাঁর নিকট একটি গাভী আছে। তিনি তাকে মাতৃজ্ঞানে বন্দনা করেন। সেই গাভীটিই তাকে তাঁর প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রদান করেন। এবার রাজা বিশ্বামিত্রের মনে লোভ চলে এলো। তিনি ভাবলেন রাজা তো তিনি। এই কামধেনু তো তাঁর প্রাপ্য। তিনি ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠকে বললেন যে তাকে এই গাভী দিয়ে দিতে। এর বিনিময়ে বশিষ্ঠ মুনি যা চাইবেন বিশ্বামিত্র তাই তাকে দিবেন। বশিষ্ঠ মুনি বললেন যে এই ভুল যাতে বিশ্বামিত্র না করেন কারন ইনি একজন দেবী, ইনি বিক্রির বস্তু নয়। ইনি তাঁর সমস্ত প্রয়োজন পূরন করেন। তাছাড়া তিনি ঐ জায়গায় থাকেন যেখানে ব্রহ্মবিদ্যার চর্চা করা হয়, যেখানে ব্রহ্মজ্ঞান আছে। তিনি বিশ্বামিত্রের রাজপ্রাসাদে যাবেন না। তখন রাজা বিশ্বামিত্র রেগে গেলেন এবং বললেন এই গাভী তিনি নিবেনই। তিনি তার সৈন্য-সামন্তকে বললেন গাভীটিকে জোরপূর্বক নিয়ে আসতে। ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ তাকে শেষবারের মতো সর্তক করলেন তাও রাজা বিশ্বামিত্র কর্ণপাত করলেন না। তারপর বশিষ্ঠ মুনি তাঁর ব্রহ্মদন্ড তোলার সাথে সাথে রাজা বিশ্বামিত্রের সমগ্র সৈন্য মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লো।


বিশ্বামিত্র এটা দেখে হকচকিয়ে গেলেন। আসলে এটা ছিলো ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের ব্রহ্মজ্ঞানের শক্তি। "Power of the realization of Brahman(ultimate reality). তারপর রাজা বিশ্বামিত্র নিজে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠকে আঘাত করতে উদ্যত হবার সাথে সাথে বশিষ্ঠ মুনি ব্রহ্মদন্ড তোলা মাত্রই রাজা বিশ্বামিত্র শক্তিহীন হয়ে পড়লেন।
তখন বিশ্বামিত্র বললেন, "ধিক বলম্ ক্ষত্রিয় বলম্, ব্রহ্ম বলম্ এব বলম্" অর্থাৎ, বশিষ্ঠের ব্রহ্মজ্ঞানের শক্তির কাছে আমার রাজত্ব, আমার অহংকার, আমার সৈন্য এগুলো ধূলিকণার সমানও নয়।ব্রহ্মবিদ্যার শক্তিই সর্বোচ্চ শক্তি। যে ব্যক্তি এই ব্রহ্মবিদ্যা জানেন তিনি এতই শক্তিশালী যে কোন শস্ত্র ছাড়াই তাঁর ইচ্ছামাত্রই এতো হাজার হাজার সৈন্য লুটিয়ে পড়ে। তখন বিশ্বামিত্র বললেন, "ঠিক আছে, আমিও এই ব্রহ্মবিদ্যা অর্জন করবো তারপর তোমাকে দেখে নিবো।"


এরপর রাজা বিশ্বামিত্র নিজ রাজ্য তাঁর পুত্রকে দিয়ে বনে চলে গেলেন। তিনি বনে গিয়ে কঠোর তপস্যা শুরু করলেন। আস্তে আস্তে তারমধ্যে কিছু পরিবর্তন আসতে লাগলো। কিন্তু তখনো তাঁর ক্রোধ ও দ্বেষভাব সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়নি। তাঁর তপস্যা চলাকালীন সময়ে ত্রিশঙ্কু রাজার আগমন ঘটলো। ত্রিশঙ্কু ছিলেন সেই রাজা যার মনের ইচ্ছে ছিলো স্বশরীরে স্বর্গে যাওয়া। প্রথমে তিনি ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের নিকট গেলেন এবং তাঁর ইচ্ছা বাক্ত করলেন। বশিষ্ঠ মুনি তাকে এখান থেকে চলে যেতে বললেন এবং আরো বললেন যে তিনি এসব স্বর্গে পাঠানোর কাজ করেন না। তখন রাজা ত্রিশঙ্কু আসলো তপস্বী বিশ্বামিত্রের নিকট। বিশ্বামিত্র যখন শুনলেন বশিষ্ঠ মুনি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তখন তিনি ত্রিশঙ্কুকে কথা দিলেন যে তিনি তাকে স্বশরীরে স্বর্গে পাঠাবেন। কারন তখনও তার মধ্যে বশিষ্ঠ মুনির প্রতি হিংসা কাজ করছিলো। বিশ্বামিত্র এতেদিন তাঁর তপস্যার ফলে অর্জিত শক্তি দিয়ে তাকে স্বশরীরে স্বর্গে পাঠাতে লাগলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র এলেন এবং বললেন এটা প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ। একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পরই তার কর্ম অনুসারে স্বর্গ বা নরকে যেতে পারে কিন্তু মৃত্যুর আগে স্বশরীরে নয়। বিশ্বামিত্র তাঁর তপোবলে রাজা ত্রিশঙ্কুকে উপরে তুলছেন আর অন্যদিকে দেবরাজ ইন্দ্র তাকে উপরে উঠতে বাঁধা দিচ্ছেন। এই অবস্থায় রাজা ত্রিশঙ্কু স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝের শুণ্যস্থানে অবস্থান করছিলেন। তখন বিশ্বামিত্র রেগে গিয়ে সেই শূন্যস্থানেই নিজ তপোবলে স্বর্গের ন্যায় আলাদা এক জগৎ সৃষ্টি করলেন।



সেখানকার রাজা ত্রিশঙ্কুকে করে দিলেন। এসব করার পর বিশ্বামিত্রের উপলব্ধি হলো তিনি তাঁর তপস্যায় অর্জিত সমস্ত শক্তি এসব অবান্তর কাজে শেষ করে ফেলেছেন। এরপর তিনি আবার পুরোদমে তপস্যা শুরু করলেন। এরপর আবার ঘটলো আরেক ঘটনা। বিশ্বামিত্র তাঁর তপোবলে স্বর্গ দখল করে ফেলেন কিনা এই ভয়ে দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে পাঠালেন বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য। তপস্বী হলেও বিশ্বামিত্রের মধ্যে কামের প্রভাব তখনো বিরাজমান ছিল। সেই কামের প্রভাবে অপ্সরা মেনকার প্ররোচনায় বিশ্বামিত্রের পতন ঘটে। তিনি কামের প্রভাবেই বহুদিন কাটিয়ে দেন এবং তাঁর তপস্যার কথা বহুকাল বিস্মৃত হয়ে থাকেন। হঠাৎ একদিন যখন বিশ্বামিত্রের মনে পড়লো যে তিনি আবার ভুল পথে চলে গেছেন তখন তিনি পুনরায় এসব ত্যাগ করে তপস্যায় বসলেন। এবার বহুকাল তপস্যা করার পর তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবতা ব্রহ্মা তাকে দেখা দিলেন এবং তাকে মহর্ষি উপাধি দিলেন। তখন মহর্ষি বিশ্বামিত্র; দেবতা ব্রহ্মাকে জিজ্ঞেস করলেন, "আমি কি ব্রহ্মর্ষি উপাধি পাবার যোগ্য নই?" দেবতা ব্রহ্মা উত্তর দিলেন, "না। ব্রহ্মর্ষি উপাধির জন্য তোমাকে একজন ব্রহ্মর্ষির আর্শীবাদ নিতে হবে। সুতরাং, তুমি ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের কাছে যাও এবং তার আর্শীবাদ নাও। যদি তুমি তোমার সমস্ত অহংকার চিরতরে ত্যাগ করে বশিষ্ঠের আর্শীবাদ নিতে পারো তবেই তুমি ব্রহ্মর্ষি হতে পারবে।" এই শুনে মহর্ষি বিশ্বামিত্র; ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের নিকট এলো। যখন তিনি বশিষ্ঠ মুনির গৃহের দ্বারপ্রান্তে এলেন তখন তিনি ভিতরে থাকা বশিষ্ঠ মুনি ও অরুন্ধতীর কথোপকথন শুনলেন। বশিষ্ঠ মুনি অরুন্ধতীকে বলছিলেন, "আমি বিশ্বামিত্রের কৃত তপস্যা দেখেছি এবং আমি তাকে মন থেকে আর্শীবাদ করেছি যেন সে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে। তারমধ্যে একটু অহংকার আছে। সে এটা অতিক্রম করতে পারলেই ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্ত হবে। আমি তাকে সেই পথে সাহায্য করছি।" এটা শোনা মাত্রই বিশ্বামিত্র লজ্জা পেল। তাঁর যার প্রতি এত ঘৃণা সেই কিনা বিশ্বামিত্রের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করছে! তখন বিশ্বামিত্র বুঝলো কেন বশিষ্ঠ ব্রহ্মর্ষি। তিনি তখনি ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের চরণে লুটিয়ে পড়লেন। যেই মাত্র মহর্ষি বিশ্বামিত্রের মাথা ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের চরণ স্পর্শ করলো সাথে সাথে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের দেহ থেকে একটা অবিরত আধ্যাত্মিক শক্তি মহর্ষি বিশ্বামিত্রের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হওয়া শুরু করলো। তখনই বিশ্বামিত্র ব্রহ্ম-গায়ত্রী উচ্চারণ করলেন ও সমাধিতে চলে গেলেন।

এই হল সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র, মহামন্ত্র — গায়ত্রী মন্ত্র প্রকাশিত হওয়ার পেছনের ইতিহাস।

গায়ত্রী মন্ত্র —

ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্ব্বরেণ্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।।

ব্যাখ্যা — ওঁ (ব্রহ্ম) ভূঃ ভুবঃ স্বঃ (স্বর্গ, মর্ত্ত্য, পাতাল এই তিন লোক অথবা সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ এই তিন গুণ অথবা ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান এই তিনকাল) তৎসবিতুঃ (এই ত্রিলোকের, এই ত্রিগুণের অথবা এই ত্রিকালের প্রসবকারীর অর্থাৎ, সৃষ্টিকারী ব্রহ্মের) বরেণ্যং ভর্গো (শ্রেষ্ঠ স্বতঃপ্রকাশ তেজ) দেবস্য (দেবের অর্থাৎ, ত্রিজগৎ, ত্রিগুণ ও ত্রিকাল সৃষ্টিকারী স্বয়ংদীপ্ত পরমব্রহ্মের) ধীমহি (ধ্যান করছি) ধিয়ো (বিবেক অথবা বুদ্ধিবৃত্তিসমূহ) য়ো (যিনি) নঃ (আমাদের) প্রচোদয়াৎ (প্রেরণ করছেন) ওঁ (ব্রহ্ম)

অর্থাৎ — যিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি সমূহকে প্রেরণ করেন, সেই ত্রিলোক-প্রসবিতা, ত্রিগুণ-স্রষ্টা, ত্রিকাল-সৃজনকারী পরমব্রহ্মের শ্রেষ্ঠ স্বতঃপ্রকাশ তেজের ধ্যান করি।

Courtesy by: Soma Dey
Share:

সন্ধ্যা বেলায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ

কয়েক দশক আগেও, হিন্দু পরিবারগুলোতে প্রবীণরা সন্ধ্যার নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। শাস্ত্র অনুযায়ী তারা সমস্ত সদস্যদের ঘরের মন্দিরের সামনে একত্র করতেন এবং সন্ধ্যা আরতি ও শ্লোক-মন্ত্র উচ্চারণ করতেন। কিন্তু দিনদিন এই আচারগুলো বিলুপ্ত হয়েছে। শ্লোকের শব্দ এখন টিভি সিরিয়ালের আড়ালে চাপা পড়েছে। মফস্বল থেকে শুরু করে ব্যস্ত শহর সব জায়গাতেই একই অবস্থা দেখা যায়। বিভিন্ন খাওয়ার দোকান, ফাস্ট ফুড, আইসক্রিমের দোকানে, সিনেমা হলে সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায়।


আমরাও খুব খুশি সমাজের এত উন্নতি দেখে, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একবারও কি আমরা ভাল করে খেয়াল করছি প্রদীপের তলার অন্ধকার? সঠিক নিয়মে সন্ধ্যা পূজা না করার জন্য রোগ, ব্যাধি, হতাশা, ব্যর্থতা আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এত এগিয়েও কোথায় যেন আমরা আবার পিছিয়ে পড়ছি!

শাস্ত্রে বলা আছে, অশুভ শক্তি/নেতিবাচক শক্তি সবচেয়ে বেশি প্রকট হয় সন্ধাবেলায়। তাই নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে বারন করা হয়েছে:

• খাওয়া, ঘুমানো, পান করা

• সহবাস করা

• কোন শুভ কাজের আরম্ভ

• দূরযাত্রা

• কান্না কাটি বা দুশ্চিন্তা করা

• টাকা পয়সার লেন দেন

• কাওকে সাদা বস্তু প্রদান করা, চুল/নখ কাটা

• শপথ নেয়া, ঝগড়া করা, গালি দেয়া, মিথ্যা বলা, অশ্লীল কথা উচ্চারণ, কাওকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা

এছাড়াও বেশ কিছু কাজ শাস্ত্রে মানা করা আছে। যেমন:

• ঘর ঝাড়ু/ মোছা - সন্ধ্যায় রজ ও তম শক্তি পরিবেশে প্রবল থাকে। এই সব কাজের মাধ্যমে রজ-তম শক্তি আমাদের শরীরকে আকর্ষণ করে শরীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। তাই সন্ধ্যার পূর্বেই ঘর পরিষ্কার করা উচিত।

• নদী তীরে বসা (গঙ্গা ব্যতীত)

• মনে রাখতে হয় এমন কাজ করা (পড়া লেখা)

• বেদ পাঠ - সন্ধ্যা হল রাত্রির আরম্ভ কাল (প্রদোষ কাল)। বেদ অনুসারে প্রদোষ কালে বেদপাঠ ও বেদ বহন বারণ। তবে শুধু সন্ধ্যাদোষ নিবারণের নির্বাচিত মন্ত্র উচ্চারণ করা যাবে ।

• গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বারন:

- দরজার সামনে বসা

- সন্ধ্যায় গৃহপালিত পশুর ঘরে ফিরতে দেখা।

হয়তো সকল নিয়মই জড়জাগতিক যুক্তির বিচারে গ্রহণযোগ্য কি না, তা ভাবতে পারেন। কিন্তু স্মরণ রাখা উচিত যে, আমাদের জ্ঞানের সীমা অনেক সীমিত। আমাদের পূর্বতন বিদগ্ধ পণ্ডিত পূর্বপুরুষগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আলোকেই আমাদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আর তা আমাদের কল্যাণের জন্যই।


Post collected from: Sourav Das





Share:

সনাতন ধর্মকে নিয়ে বিধর্মীদের কিছু কটুক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব।

বিধর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রায়ই তাদের নোংরা মনমাসিকতা নিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের কটুক্তি করে থাকে ।  হয়তো এমন নিচু নোংরা কাজ করার শিক্ষা তাদের ধর্ম বা নোংরা মা বাবার কাছ হতে পেয়ে থাকে, তাই অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করে পৈশাচিক আনন্দ পায় পিচাশগুলো। আমরা এখন সেইসব নোংরা কটুক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবো ।

০১। কটুক্তিঃ হিন্দুরা লিঙ্গ পূজা করে ।

জবাবঃ দৃষ্টিভঙ্গি বদলান। বাংলা আর সংস্কৃত এক নয়, সংস্কৃতে "শিব লিঙ্গ" মানে হলো "মঙ্গলময় ঈশ্বরের প্রতীক"।



০২। কটুক্তিঃ পৃথিবীতে গরীবেরা খেতে পায়না, কিন্তু হিন্দু পূজায় খাবার বিনষ্ট হয়!




জবাবঃ আপনি কতজন দরিদ্রকে খাইয়েছেন? খাবার কখনো নষ্ট হয়না। এই খাবার ভক্তদের ও বহু দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। পৃথিবীর সকল বড় বড় মন্দিরেই এটা করা হয়, এটাকে অনেকে দরিদ্র নারায়ণ সেবা বলে। এছাড়া অ্যাপল এর প্রতিষ্ঠাতাও ছোট বেলায় দরিদ্রতার কারণে মন্দিরের খাবার খেতে জীবনধারণ করেছিলেন।

০৩। কটুক্তিঃ হিন্দুধর্মে জাতপাত আছে ।

জবাবঃ  জাতপাত নিয়ে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ শ্রীমৎভগবতগীতায় বলেছেন,
                                                                                                     চতুর্বনংময়া সৃষ্টং গুণ কর্ম বিভাগশ।।

অর্থাৎ, গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুসারে চারটি বর্ণ সৃষ্টি করা হয়েছে।  যারা ভালো কাজ করবে ও জ্ঞানী তারা উঁচু জাত ও যারা খারাপ কাজ করবে তারা নীচু জাত। সুতরাং জাতপাত জন্ম নয়, কর্ম অনুসারে।

ঋষি বিশ্বামিত্র অব্রাক্ষণ হিসেবে জন্ম নিলেও পরে কর্ম ও জ্ঞান দিয়ে ব্রাক্ষণ হন, এছাড়া শ্রীরাম কথিত শর্বরীকে নবধারা ভক্তি জ্ঞান দিয়েছেন। ভক্ত রবিদাসকে অপমান করায় স্বর্গের ঘন্টাপর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ভগবান ভক্তের জাতপাত দেখেন না, দেখেন কর্ম ও ভক্তি। অনেকে হয়তো বলবেনন বেদে নীচু জাতদের নিয়ে অনেক কিছু বলা আছে।
কিন্তু গীতায় বলা আছে, "জন্ম নয় কর্ম অনুযায়ী জাতপাত" মানে ভালো কর্ম উঁচু জাত ও খারপ কাজ করলে নীচু জাত। খারপ কাজ করলে শাস্তির কথা তো সবখানেই আছে, এমনকি দেশের সংবিধানেও।

০৪। কটুক্তিঃ হিন্দুধর্মে সতীদাহ প্রথা আছে ।

জবাবঃ  বেদ ভাষ্যকারগণদের মতে, বেদে সতীদাহের উল্লেখ নেই। বরং স্বামীর মৃত্যুর পর পুনর্বিবাহের ব্যাপারেই তাঁরা মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে অথর্ববেদের দুটি মন্ত্র প্রণিধানযোগ্য-

                                         ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
                                        ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
                                                                                                                           (অথর্ববেদ ১৮.৩.১)

 অর্থঃ হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।

                                        উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি।
                                        হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভ সিংবভূব।।
                                                                                                                   (অথর্ববেদ ১৮.৩.২)
এই মন্ত্রটি (ঋগবেদ ১০.১৮.৮) এও আছে।

অর্থঃ হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি ?  বাস্তব জীবনে ফিরে এস। পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।

বেদের অন্যতম ভাষ্যকার সায়ণাচার্যও তাঁর তৈত্তিরীয় আরণ্যক ভাষ্যে এই মত-ই প্রদান করেন। এছাড়াও পঞ্চসতীর এক সতী কুন্তী, শ্রী রামচন্দ্রের মা কৌশল্লা, কৈকেয়ী, সুমিত্রা, অভিমুন্য পত্নী উত্তরা কেউই পুনরায় বিবাহ না করলেও সতীদাহে যাননি।
  
০৫। কটুক্তিঃ শ্রী কৃষ্ণ ১৬১০০ বিবাহ করেছিলেন!

জবাবঃ নরকাসুর নামের এক অসুর ১৬১০০ নারীকে যুদ্ধবন্দিনী করে রাখে। কৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে সমস্ত বন্দী নারীদের মুক্ত করেন। তৎকালীন সামাজিক রীতি অনুসারে বন্দী নারীদের সমাজে কোন সম্মান ছিল না এবং তাদের বিবাহ করত না, কারণ তারা ইতিপূর্বে নরকাসুরের অধীনে ছিল। তাই শ্রী কৃষ্ণ এদের বিবাহ করে সামাজিক মর্যাদা দেন।

০৬। কটুক্তিঃ শ্রী কৃষ্ণ গোপীদের সাথে লীলা করতেন ।

জবাবঃ শ্রী কৃষ্ণ ১০ বছর ৮মাস পর্যন্ত গোকূলে ছিলেন। ১০ বছরের একটা বাচ্চার কাজকে যৌনতার দিক দিয়ে দেখা কতটা হীন মানসিকতার পরিচয় ।

০৭। কটুক্তিঃ হিন্দুরা পূজাতে মদ খায়।

জবাবঃ যেখানে নিরামিষ খেয়ে সংযম রেখে অঞ্জলি দেয়ার বিধান আছে, সেখানে মদ খাওয়াটা কতটা যৌক্তিক তা নিজ বুদ্ধিতে বুঝে নিন।

০৮। কটুক্তিঃ সনাতন ধর্ম শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ ।

জবাবঃ বিশ্বব্যাপী সনাতন

১। ভারত, বৃন্দাবন, গয়া, কাশী, সতীপীঠ
২। নেপাল, সীতা মাতার জন্মভূমি, সতীপীঠ
৩। মরিশাস, গঙ্গা তালাও, অসংখ্য মন্দির
৪। বাংলাদেশ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, সতীপীঠ
৫। পাকিস্তান, স্বামীনারায়ন মন্দির, সতীপীঠ
৬। শ্রীলঙ্কা, সতীপীঠ, অসংখ্য মন্দির
৭। আফগানিস্তান, আশা মাই মন্দির, শিব মন্দির
৮। থাইল্যান্ড, গণেশ মন্দির, অসংখ্য মন্দির
৯। ইন্দোনেশিয়া, প্রাণবর্মন মন্দির, অংসখ্য মন্দির
১০। মালয়শিয়া, বাটু কেভস, মরুগান কার্তিক ঠাকুর মন্দির
১১। ইরান, আর্য Arya থেকে Aryairan থেকে ইরান নামের উৎপত্তি
১২। ইরাক ইয়াজিদিদের অধিকাংশ রীতি হিন্দুদের মত। এছাড়া সম্প্রতি রাম, হনুমান এর ভাস্কর্য পাওয়া গেছে
১৩। আজারবাইজান, শতবর্ষ পুরানো নব দূর্গা জোয়ালা মাতা মন্দির ও সংস্কৃত ও পারসিতে শিব গণেশ স্তুুতিলিপি
১৪। জাপান, বহু পুরানো বেনজাইতিন সরস্বতী মন্দির, গণেশ মন্দির
১৫। চীন, ঐতিহাসিক নৃসিংহ মন্দির, কুয়ানজহু শিব মন্দির,
১৬। ওমান, শতবর্ষী শিব ও কৃষ্ণ মন্দির
১৭। দুবাই, বোর দুবাই শিব ও কৃষ্ণ মন্দির
১৮। বাহরাইন, মানামা ইসকন মন্দির,
১৯। কুয়েত স্বামী নারায়ণ মন্দির,
২০। ইসরাইল, তেল হাবিব ইসকন মন্দির
এছাড়াও আমেরিকা, ব্রাজিল, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়াতে বহু ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশনের মন্দির আছে।
ভারত,নেপাল,মরিশাস হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র। ভারত, নেপাল, মরিশাস, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এর প্রধানমন্ত্রী হিন্দু, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান(২০০৭ সালে) এর সুপ্রিমকোর্ট এর প্রধান বিচারপতি হিন্দু, ইন্দোনেশিয়ার হাইকোর্টের প্রধানবিচারপতি
হিন্দু। ঘানার তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিন্দু, আমেরিকার সিনেট সদস্য হিন্দু, গায়েনার বিরোধীদলীয় নেতা হিন্দু।

০৯। কটুক্তিঃ সনাতন ধর্ম মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে।

জবাবঃ  ভুল... সনাতন ধর্ম কখনো বিধর্মী হত্যা করতে বলে না, সনাতন বলে সবাইকে আপন করে নিতে।

বিঃদ্রঃ আসুন প্রত্যেকটা মিথ্যাচারের জবাব যুক্তি, বুদ্ধি ও ভদ্রতার সহিত দেই। আর_নয়_চুপ_থাকা



পোষ্টঃ জাগো হিন্দু পরিষদ হতে নেওয়া ।



Share:

২০ এপ্রিল ২০২০

প্রহ্লাদপুরী মন্দির, মুলতান পাকিস্তান - এখানেই নৃসিংহ দেব হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন (ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের ভিডিওসহ) ।

প্রহ্লাদপুরী মন্দিরের ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবর মুল বিগ্রহ
 প্রহ্লাদপুরী মন্দির পাকিস্তানের একটি হিন্দু মন্দির।এটি পাকিস্তানের মুলতানে অবস্থিত। বর্তমানে এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। প্রহ্লাদ মহারাজের জন্ম হয় ত্রেতাযুগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শহরে । কশ্যপ বংশীয় রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্ররূপে তাঁর জন্ম হয় । প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন এক মহান বিষ্ণুভক্ত । কিন্তু তাঁর পিতা ছিলেন বিষ্ণু বিদ্বেষী । পিতা পুত্রের মনোভাবের এই বিরোধের ফলে, দৈত্য পিতা প্রহ্লাদকে নানাভাবে নির্যাতন করেছিল এবং বধ করার চেষ্টা করেছিল । সেই নির্যাতন যখন অসহ্য হয়ে উঠে, তখন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব রূপে আর্বিভূত হয়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুকে বধ করেছিলেন । বর্তমান পাকিস্তানের মুলতান শহরে প্রাচীন প্রহ্লাদপুরী মন্দির অবস্থিত ।এই স্থানটি পূর্বে কশ্যপপুর নামে পরিচিত ছিল । প্রহ্লাদপুরী মন্দিরটি ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের উদ্দেশ্যে স্বয়ং প্রহ্লাদ মহারাজ নির্মাণ করেছিলেন ।

মুলতাত মুসলমানদের আক্রমণের পর মুলতানের সূর্য মন্দিরের মতো এই মন্দিরটিও ধ্বংস হয়ে যায়। মন্দিরটি তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং ১৯ শতকের সময় একটি আদর্শ মন্দির হয়ে ওঠে। মন্দিরটি মুলতানের দুর্গে একটি উচ্চ স্থানে অবস্থিত। হযরত বাহাহুল হক জাকারিয়ার সমাধির সমীপবর্তী । মন্দিরের কাছে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল । এটি শিখ সাম্রাজ্যের অধীনেও ছিল। এএন খানের মতে শিখ সাম্রাজ্যের অধীনে মন্দিরটি পুন তৈরি করা হয়। ১৮৩১ সালে আলেকজান্ডার বার্নস মন্দির পরিদর্শন করেন এবং জানালেন যে এটি পরিত্যক্ত হয়েছে এবং এর ছাদ ছিল না। ১৮৪২ সালে ব্রিটিশরা মুলতানের মুলকাস দুর্গে আক্রমণ করে। একটি কার্তুজ

দুর্গের ভিতরে একটি খোলা জানালাতে রাখা ছিল। বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার কবর , মন্দির ও দুর্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।




মন্দিরে একটি প্রধান হলরুম, প্রশস্থ মন্ডপ ছিল । প্রধান মধ্যবর্তী হলে রয়েছে মূল প্রাচীন বিগ্রহের একটি রেপ্লিকা বিগ্রহ । এছাড়া মন্দিরের সন্নিকটে রয়েছে ধর্মশালা । ঐতিহাসিক মতে একসময় এই মন্দিরটি পুরোটাই স্বর্ণ দিয়ে তৈরী ছিল । কিন্তু অজানা এক কারনে একসময় সমগ্র মন্দিরটিই মাটিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে । পরবর্তী একই স্থানে বর্তমান মন্দিরটি তৈরী করা হয় । মুলতানের ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য জরিপ ও গবেষণার জন্য আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে পরিদর্শনে আসেন। প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগে উল্লেখ করেন যে, এটি "বর্গক্ষেত্র এবং ইট মন্দির" ছিল। ছাদকে

অবলম্বন দেয়ার জন্য কাঠের স্তম্ভ ছিল। বর্তমান মন্দিরটি ১৮৬১ সালে বদ্বল রাম দাস দ্বারা ১১ হাজার রুপি ব্যয় করে নির্মিত হয়েছিল।

পাকিস্তানের সৃষ্টি হওয়ার পর, অনেক হিন্দু ভারতে চলে যায়। মন্দিরটি দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় মূল নৃসিংহদেবের বিগ্রহটি ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় । এই মন্দিরটিতে থাকা মুল নরসিংহের বিগ্রহটি হরিদ্বারে আছে (নৃসিংহধাম রোড ) । বাবা নারায়ণ দাস বাত্রা মূল বিগ্রহটি ভারতে নিয়ে আসেন। নারায়ণ দাস একজন বিখ্যাত সন্ন্যাসী, যিনি বহু বিদ্যালয় ও কলেজ নির্মাণ করেছেন। সমাজের উন্নয়নের কাজ করার জন্য ২০১৮ সালে পদ্মশ্রী পান তিনি। ১৯৯২ সালে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলে পাকিস্তানের মুসলিম জনতা মন্দিরটি ধ্বংস করেছিল।

এটি একটি প্রাচীন মন্দির। বিশ্বাস করা হয় যে, মন্দিরটি প্রহ্লাদ মন্দিরের স্থানে অবস্থিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে হোলিকা দহন পালন শুরু হয়েছে এখান থেকে। এখানে দুই দিন ধরে হোলিকা দহন (Holika Dahan) উৎসব এবং নয় দিন ধরে হোলি পালিত হয়।

হোলিকার দহন হচ্ছে হোলি উৎসবের সবচেয়ে বেশি পরিচিত পৌরাণিক ব্যাখ্যা। ভারতের বিভিন্ন স্থানে হোলিকার মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ বলা হয়, কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই এই বিষয়ে সম্মতি দেখা যায় যে, মুলাস্থান শহরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, যা বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান নামে পরিচিত। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
  • বিষ্ণু বাঁধা দেন বলে হোলিকা আগুনে পোড়ে
  • ব্রহ্মা হোলিকাকে হোলিকাকে এই শর্তে তার আগুনে না পুড়বার ক্ষমতাটি দান করেছিলেন যে, এই ক্ষমতাটিকে অন্য কারও ক্ষতির জন্য ব্যবহার করা হবে না।
  • হোলিকা ভাল নারী ছিলেন, এবং তার পোশাকের কারণে তাকে আগুনে পোড়ানো সম্ভব ছিল না। প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে এটা জেনে তিনি তার পোশাক প্রহ্লাদকে দিয়ে দেন এবং নিজে আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ করেন।
  • হোলিকা যখন আগুনের উপর বসেন, তিনি তার চাদর পরিধান করেন এবং প্রহ্লাদকে তার কোলের উপর বসান। প্রহ্লাদ বিষ্ণুর প্রতি প্রার্থনা শুরু করলে বিষ্ণ বাতাস পাঠিয়ে দেন, যা হোলিকার চাদরটিকে উড়িয়ে নিয়ে প্রহ্লাদকে তা দিয়ে আবৃত করে। এরফলে প্রহ্লাদ বেঁচে যায়, এবং হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যায়।




প্রহ্লাদপুরী মন্দির,মুলতান
Prahladpuri Temple View.jpg
প্রহ্লাদপুরী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
পরিচালনা সংস্থাপাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিল
অবস্থান
স্থাপত্য
ধরনহিন্দু মন্দির
ওয়েবসাইট
http://www.pakistanhinducouncil.org/



তথ্যসূত্রঃ
  1. Syad Muhammad Latif (১৯৬৩)। The early history of Multan। পৃষ্ঠা 3,54। Kasyapa, is believed, according to the Sanscrit texts, to have founded Kashyapa-pura (otherwise known as Multan
  2. Gazetteer of the Multan District, 1923-24 Sir Edward Maclagan, Punjab (Pakistan)। ১৯২৬। পৃষ্ঠা 276–77।
  3. Imperial rule in Punjab: the conquest and administration of Multan, 1818-1881 by J. Royal Roseberry। পৃষ্ঠা 243, 263। 
  4. All the year round , Volume 51। Charles Dickens। ১৮৮৩। 
  5. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে Survey & Studies for Conservation of Historical Monuments of Multan. Department of Archeology & Museums, Ministry of Culture, Government of Pakistan 
  6. Muslim Saints of South Asia: The Eleventh to Fifteenth Centuries By Anna Suvorova। পৃষ্ঠা 153। 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৯। Cunningham, 129 
  8. Ajudhia Das, who was formerly Mahant of two temples at Multan named Prahlad and N'arasingpuri, was removed from his office on January 23rd, 1913, by a Panchayat appointed at a mass meeting of Hindus which was convened on that date. All India reporter, Volume 3 by D.V. Chitaley, 1923

ধন্যবাদ উইকিপিডিয়াকে ।
Share:

১৮ এপ্রিল ২০২০

আপনার রান্না ঘরই করোনা রোগের প্রধান চিকিৎসালয়: ডঃ বিজন শীল



ডঃ বিজন শীল জানান, যেকোনও ধরনের গলা খুশ খুশ বা কাশি দেখা দিলেই আর অপেক্ষা করা উচিত হবে না। ওটা করোনা না করোনা নয়, এ নিয়ে চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। বরং ওই মুহূর্ত থেকে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো আদা (জিঞ্জার) ও লবঙ্গ (ক্লোব) একসঙ্গে পিষে সেটাকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তার সঙ্গে কিছুটা চা দিয়ে ওটা এক কাপ মতো নিয়ে গারগল করে খেতে হবে। দিনে অন্তত তিন-চারবার এক কাপ করে এটা খেতে হবে। এর ফলে গলার ভেতরের কোষগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এতে কোষগুলো শক্তিশালী হবে। কোষগুলোর ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষগুলো সমর্থ হবে কোভিড-১৯ ভাইরাস যদি আক্রমণ করে, তাকে প্রতিরোধ করতে।
যাদের গলা খুশখুশ করে না বা কোনও কাশি দেখা দেয়নি, তারাও এটা নিয়মিত দিনে দুইবার অন্তত দু’কাপ খাবেন। তাতে তাদেরও ইমিউনিটি বাড়বে। এর পাশাপাশি যাদের জোগাড় করা সম্ভব, বিশেষ করে যারা গ্রামে আছেন, তারা এখন নিমপাতা পাবেন। ওই নিমপাতা একটু পানি দিয়ে পিষতে হবে। পেষার ফলে যে সবুজ রঙের রসটি বের হবে সেটার সঙ্গে গরম পানি মিশিয়ে তা গারগল করে খেতে হবে। এর ফলে গলার কোষগুলোয় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ইমিউনিটি বাড়বে। যা অনেক বেশি সমর্থ হবে করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পরাজিত করতে।
এর পাশাপাশি তিনি ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন একগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই ভিটামিন সি’র সঙ্গে অবশ্যই কিছুটা পরিমাণ জিঙ্ক থাকতে হবে কারণ, ভাইরাসের ‘আর ডি ডি’কে ব্লক করে দিতে সমর্থ হয় জিঙ্ক। যার ফলে ওই ভাইরাস সহজে রোগীকে আক্রান্ত করতে পারে না।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টয়লেট পরিষ্কার রাখা। কারণ, কমোড, প্যান এবং বেসিন থেকে কফ, থুতু, প্রস্রাব ও পায়খানার মাধ্যমে করোনা বা কোভিড-১৯ ছড়ায় বেশি। রোগীর কফ ও থুতুর মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।




 মুল পোষ্টঃ http://eibela.com/article/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%98%E0%A6%B0%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F%3A-%E0%A6%A1%E0%A6%83-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%B2%C2%A0?fbclid=IwAR2gCbGjitNXsrDInZRTDcNQ4FzMztecJ7U_9DtJ-0YcTXGLJQXg2NKpqxk
Share:

“দয়াময়” এর প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি মনোমোহন দত্তের জীবন-কথা


মহর্ষি মনোমোহন দত্ত একজন মানবতাবাদী । তিনি মরমী সাধক ও আধ্যাত্মিক সাধনার সমন্বয়বাদী ধারার একজন জ্যোতির্ময় ঋষি। যিনি একইসঙ্গে সঙ্গীত রচনার মাধ্যমে ধর্ম সাধনার কাজটিও করে গেছেন সযতনে। ‘মলয়া’ সংকলনটি সঙ্গীত হিসেবে যেমনি অনন্য,এতে প্রতিফলিত ধর্মদশর্ন , ভাবসম্পদ এবং বিষয়বস্তু তেমন সমৃদ্ধ ও নান্দনিক।

এই মাধূর্যময় মলয়া সঙ্গীতের প্রবক্তা মহর্ষি মনোমোহন দত্ত। সঙ্গীতজ্ঞ এই মহান সাধক-কবি জন্মগহ্র ণ করেন (১২৮৪ বাংলার ১০ মাঘ) ১৮৭৭ সালে; তিতাস বিধৌত ব্রা হ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ছায়া-সুনিবিড় সাতমোড়া গ্রামে। মনোমোহন দত্তের পূর্বপুরুষ ঢাকা সোনারগাঁয়ের জমিদার রাজবল্লভ দত্ত। জমিদারীর মোহকে পাশ কাটিয়ে, চলে আসেন তিনি সাতমোড়া গ্রামে। রাজবল্লভের পুত্র বৈদ্যনাথ দত্ত। তিনি ছিলেন সঙ্গীতের সমঝদার ও শ্যামা সঙ্গীতের রচয়িতা। বৈদ্যনাথের পুত্র পদ্মনাথ দত্ত। তিনি পেশায় ছিলেন কবিরাজ, কিন্তু অধ্যাত্মবাদে সমর্পিত প্রাণ। লোকশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি মৃত্যুর এক সপ্তাহ পূর্বেই নিজের মৃত্যুর দিন-ক্ষণ বলে গিয়েছিলেন। এই পদ্মনাথ দত্তের জেষ্ট্য পুত্রই হলেন মহর্ষি মনোমোহন দত্ত। পূর্বেই বলেছি, তাঁর জন্ম (১২৮৪ বাংলা সালের ১০ মাঘ) ১৮৭৭ সালে এবং মৃত্যু (১৩১৬ বাংলা সালের ২০ আশ্বিন) ১৯০৯ সালে। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩২ বছর। ক্ষণজন্মা এই ঋতিক্ব কবি তাঁর অল্পায়ু-জীবনে যে সৃষ্টিকর্ম ও সাধনার চিহ্ন রেখে গেছেন- তা চিরকালের সম্পদ ও পাথেয় হয়ে থাকবে। মনোমোহন দত্তের আত্মজীবনী থেকে তাঁর শিক্ষাজীবন সম্পকের্ জানা যায়;



বাড়ীতে গ্রামস্থ রামজীবন চক্রবর্তী নামক এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের পাঠশালা ছিল তাহাতেই আমার হাতেখড়ি বা অ, আ, ক, খ আরম্ভ হয়। এইভাবে পাঠশালাতে ক্রমে প্রথমভাগ শেষ দ্বিতীয়ভাগ একবার শেষ করা হইল ও তার পরেই পাঠশালা উঠিয়া গেল। গ্রামের ছাত্রবৃত্তি স্কুলে আমাকে ভর্তি করাইয়া দিলেন।১



মহর্ষি মনোমোহন দত্ত পড়াশোনায় ছিলেন মেধাবী। পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যক্রমের বাইরের পাঠেও তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তাঁর ‘মলয়া’ (১ম ও ২য় খন্ড) ছাড়াও প্রকাশিত- অপ্রকাশিত ২৩টি গ্রন্থের মধ্যে সেই নিবিড় অধ্যয়নের ছাপ পরিদৃষ্ট হয়। ছাত্র হিসেবে তিনি যে মেধাবী ছিলেন, তার বহু নিদর্শন মেলে। তাঁর আত্মজীবনীতে ও স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে এসব তথ্য;



কিছুকাল পর ১২৯৬/৯৭ মধ্যে বার বৎসর বয়সে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলাম। স্কুলে সাহিত্য ও ইতিহাস বেশ ভাল বুঝিতাম, কিন্তু গণিত জ্যামিতি প্রভৃতি একরকম চালাইয়া নিতাম---- প্রাণে এতই কৌতূহল যে, খুব ভাল লেখাপড়া শিখিয়া বড় বিদ্বান হইব এবং সংসারের বাজারে লোকে যাহাকে বড়মানুষ বলে সেইরূপ বড় মানুষ হইব।



কিন্তু নিয়তি-তাড়িত মানুষের মতোই বিধি বাম হইলেন। তবে একে সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যা-ই আখ্যা দেওয়া হউক না কেন, মনোমোহনের বড়লোক হবার সপ্ন অন্য পথে সম্প্রসারিত হলো। তিনি যাপিত জীবনে কোটিপতি কিংবা বড়লোক না হয়ে, আধ্যাত্মিক সাধন-জীবনের ঐশ্বর্য আর মলয়া সঙ্গীতের মতো অনন্য ভাবসম্পদ দিয়ে, আমাদের অন্তরাত্মাকে নির্মল ও পরিশুদ্ধ করার রসদ যুগিয়ে গেলেন। তবে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষা পাস করার পর সহপাঠীরা উচ্চতর শিক্ষার জন্যে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি হলে, আথির্ক অনটন ও পারিবারিক ঔদাসীন্যের কারণে মনোমোহনের স্কুলে ভর্তি হওয়া আর সম্ভব হলো না। স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে এবং সহপাঠীদের সঙ্গ-হারা হয়ে মনোমোহন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। মানসিক যন্ত্রনায় বিপর্যস্ত মনোমোহন এ সময় লোকচক্ষুর আড়ালে যেনো সেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিলেন। এমনকি সহপাঠীদের কাছ থেকেও নিজেকে আড়াল করে রাখলেন। পরের বছর ১২৯৮/৯৯ বঙ্গাব্দে তাঁর বড় চাচার প্রচেষ্টায় মুরাদনগর ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হবার সুযোগ পেলেন তিনি। কৈশোর বয়সের আবেগজাত মানসে, সহপাঠীদের এক ক্লাস উপরে উঠে পড়ার বিষয়টি তীবভ্রাবে রেখাপাত করে তাঁর মনে। কোনোভাবেই তিনি মনে শান্তি পাচ্ছিলেন না। কয়েক মাস অতিবাহিত হলে, তিনি নিজ গ্রামে প্রত্যাবর্তন করে মুরাদনগরে আর ফিরে যাননি। এ যেনো বাংলার আরেক দুখু মিয়ার (কাজী নজরুল ইসলামের) দুঃখময় জীবন! নিরন্তর প্রচেষ্টার পরও একাডেমিক পড়াশোনার অগ্রগতি যাঁর ভাগ্যে জোটেনি। তবুও দমে যাননি মনোমোহন। এরপর মনোমোহন উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় কেন্দুয়া রওয়ানা হন। কিন্তু সেখানেও তিনি বেশিদিন থাকতে পারেননি। কেন্দুয়া থাকাকালীন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানতে পাই তাঁর জীবনীতে;



স্কুলে ভর্তি হইলাম। কেন্দুয়া হইতে প্রায় তিন মাইলের ও কিছু বেশি পথ হইবে। প্রত্যহ আসা যাওয়া করিতে হইত। প্রাতে প্রায় আট কি সাড়ে আটটার সময় আগের দিনের পান্তা বা ঠান্ডা ভাত, বাসী ব্যঞ্জন, ক্বচিৎ কোনোদিন গরম ভাত বেগুন সিদ্ধ খাইয়া চলিতাম। বিকালে পাঁচ কি সাড়ে পাঁচটায় আসিয়া দুই প্রহরের রান্না করা ঠান্ডা ভাত খাওয়া হইত। -বাড়ীর গিন্নী বড়ই বিরক্ত ভাবিতেন। দ্বিতীয় আর এক যন্ত্রণা --- কর্তার দুইটি ছেলে নিতান্ত অনাবিষ্ট ও দুষ্টু, তাহাদিগকে প্রথম ভাগ পড়াইতে হইত। কথা শুনিত না, গালিগালাজ মারধর করিয়া জ্বালাতন করিত, কতকদিন কাটাইলাম- সাত আট মাস পরে ১২৯৯ সনের জ্যৈষ্ঠ মাসে বন্ধের সময় বাড়ীতে আসিলাম। সেখানকার কষ্ট অত্যাচারে পিতামাতার মন ও নিজের মন ফিরিয়া গেল। অদৃষ্টকে ধিক্কার দিয়া অন্য চেষ্টায় বাড়িতে বসিয়া দিন গুনিতে লাগিলাম। ৩



সকল প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, হতাশাগ্রস্ত মনোমোহনকে তাঁদের এক আত্মীয় সিরাজুল ইসলাম খাঁ, মোক্তারি পরীক্ষা দেয়ার পরামর্শ দিলেন। মনোমোহন তাতে সম্মতি দিলেন। সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি ঠেলে মোক্তারি পরীক্ষা দিয়ে তিনি অকৃতকার্য হলেন। দমে যাননি মনোমোহন। তারপরও মনে প্রেরণা যুগিয়ে মনোমোহন ওকালতি পড়বার জন্যে আগরতলাতে যান। বইপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কী এক অজ্ঞাত কারণে, তিনি ওকালতি পড়ার আশা পরিত্যাগ করলেন। একই সময়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কালীকচ্ছের আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষ গুরু আনন্দস্বামীর সন্ধান পান। তিনি ওকালতি পড়ার চেয়ে, আনন্দস্বামীর সান্নিধ্য লাভকে Ñশ্রেয় মনে করলেন। ছাত্রবৃত্তি লাভের পর পুনঃপুন চেষ্টার পরও,তাঁর পক্ষে একাডেমিক বিদ্যা অর্জন সম্ভব হলো না। এমনকি মোক্তারি বা ওকালতি পাস করে ব্যবহারিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্নেরও অবসান ঘটলো। বদলে যায় তাঁর জীবনের গতি-প্রকৃতি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার্জন সম্ভব না হলেও অধ্যাত্মবাদী চেতনায় ঋদ্ধ হতে থাকেন মনোমোহন। তাঁর জীবনের এই বাঁকপরিবর্তন কে আমরা ব্যথর্তার উপশমে জীবন থেকে পলায়ন হিসেবে চিহ্নিত করি না, কারণ তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যেও সহজাত ভাবুকতা ও ধ্যান-মগ্নতার বৈশিষ্ট্য ক্রিয়াশীল ছিল। তা না হলে, সোনারগাঁয়ের জমিদারীর মোহ কাটিয়ে তাঁর পূর্বপুরুষ কখনো সাতমোড়ার মতো অজ-পাড়াগাঁয়ে এসে বসতি গড়তেন না। বংশ-পরম্পরায় মনোমোহনও সেই ঐতিহ্যেরই উত্তরাধিকারী হবেনÑএটা স্বাভাবিক। জাগতিকতার বলয়ের মধ্যে থেকেও তিনি আধ্যাত্মিক সাধনার জগতে প্রবেশ করলেন। জানা যায়, ১৮ বছর বয়সেই তিনি গুরুমুখী হয়ে যান এবং ধর্ম সাধনার মাধ্যমে, সাহিত্য ও সঙ্গীত সৃষ্টির মাধ্যমে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে অগ্রসর হতে শুরু করেন। আনন্দস্বামী মনোমোহন দত্তের প্রথম এবং প্রধান আধ্যাত্মিক গুরু হলেও, তিনি বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদেরও সান্নিধ্যে গিয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মের জ্ঞান লাভ করতে এবং সর্বধর্ম সমন্বয় সাধনার জন্যই তাঁর এই নিরলস প্রচেষ্টা। আনন্দ স্বামীর পর, চট্টগ্রামের মাইজভা-ার পীরের সান্নিধ্যেÑসূফী ভাবনার প্রেরণা লাভের বিষয়টিও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। ক্ষণজন্মা এই প্রবাদপুরুষ ১৩০৮ বঙ্গাব্দের ২৭শে ভাদ্র, পিতা-মাতার ইচ্ছায় বিবাহ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলাস্থ ছয়ফুলাø কান্দি গ্রামের অধিবাসী দীননাথ দত্তের কন্যা সৌদামিনী দত্তের সাথে মনোমোহনের বিবাহ হয়। বিবাহের সাতবছর পর, ১৩১৫ বঙ্গাব্দের ২৭ শে আশ্বিন, একমাত্র পুত্র সুধীরচন্দ্র দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। সুধীচন্দ্রের বয়স যখন এক বছর, তখন তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। ১৩১৬ বঙ্গাব্দের ২০আশ্বিন; মনোমোহন ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে যান। মনোমোহনের মৃত্যুর পর,তাঁর ¯ী¿ সৌদামিনী দত্ত সাতমোড়া আনন্দআশ্রমের দায়িত্ব নেন এবং মনোমোহনের বাণী প্রচারে ভূমিকা পালন করেন। সে সময়ই সাতমোড়া আনন্দআশ্রম ও মনোমোহনের ধর্ম-দশর্ন এবং মানবতাবাদী চেতনার দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করে। সৌদামিনী দত্তের ছেলে সুধীরচন্দ্র দত্ত পরবর্তীকালে এই গুরুভার গ্রহণ করেন। সুধীরচন্দ্র মৃত্যুবরণ করলে, সুধীরচন্দ্রের ছেলে বিল্বভূষণ দত্ত ও তাঁর স্ত্রী শংকরী দত্ত এই ধর্মসাধনা ও আনন্দআশ্রমের প্রচার-প্রসারে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রতিবছর ১০ মাঘ, সাতমোড়া আনন্দ আশ্রমে মহর্ষির জন্মদিন জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। বহু লোক সমাগম ও ভক্তের মিছিল চলে সেখানে। ২-৩ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিথযশা শিল্পী, কবি, আলোচক, সাংবাদিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হন সেই পূণ্যভ’মিতে। প্রগাঢ় ভক্তি ও শৃঙ্খলার সাথে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ভক্তের নিবেদিত মনপ্রাণ এক অতীন্দ্রিয় ভাবলোকে বিচরণ করে; নিরন্তর ভেসে চলে এক অসামান্য আনন্দ স্রোতে।








তথ্য নির্দেশ
১. সুকুমার বিশ্বাস, মনোমোহন দত্ত, বাংলা একাডেমি,ঢাকা, ১৯৮৯, পৃ.৮
২. সুকুমার বিশ্বাস, পূর্বোক্ত, পৃ.৮
৩. সুকুমার বিশ্বাস, পূর্বোক্ত, পৃ.৯



প্রাবন্ধিক : মোহাম্মদ শেখ সাদী,
প্রভাষক, বাংলা বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মূল পোষ্টঃ http://maharsemonomohan.org/bn/doyamoy-bn
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।