বাসন্তীপূজার দিন পশ্চিমবাংলার রীতি অশোক ষষ্ঠী পালনের। কি এবং কেন এই অশোক ষষ্ঠী?
বহুযুগ আগে অশোকবনের মধ্যে এক ঋষির পর্ণকুটীর ছিল ।
একদিন সেই ঋষি স্নান সেরে ফেরার পথে অশোকগাছের নীচে এক সদ্য প্রসূতা কন্যাকে কাঁদতে দেখলেন । দৈবযোগে ধ্যানের মাধ্যমে ঋষি জানতে পারলেন কন্যাটি এক শাপভ্রষ্টা হরিণী মায়ের । ঋষি মেয়েটিকে আশ্রমে এনে লালন করতে লাগলেন । তার নাম দিলেন অশোকা । ঋষিকন্যা বড় হতে লাগল । যৌবনে উত্তীর্ণ হল ।
এক রাজপুত্র মৃগয়ায় বেরিয়ে ঐ পরমাসুন্দরী অশোকাকে একদিন দেখতে পেয়ে তার পরিচয় জানতে পারলেন । ঋষিকন্যার সঙ্গে রাজপুত্রের কথোপকথনের মধ্যেই ঋষির আগমন হল সেই স্থানে । রাজপুত্র অশোকার পাণিপ্রার্থী হয়ে ঋষিকে অনুরোধ জানালে ঋষি যারপরনাই আনন্দিত হয়ে তাতে সম্মতি দিলেন ।
অশোকাকে রাজপুত্রের হাতে সঁপে দিয়ে ঋষি বললেন :
অশোকফুলের বীজ সযত্নে আঁচলে বেঁধে নিয়ে অশোকা রাজপুত্রের সাথে পতিগৃহে যাত্রা করল । যাত্রাপথে বীজ ছড়াতে ছড়াতে চলল অশোকা । রাজপুরীতে পৌঁছালে রাজা-রাণী সস্নেহে তাদের বরণ করে ঘরে তুললেন । অশোকা আর রাজপুত্রের বাড়বাড়ন্ত সংসারে সুখের বন্যা । অশোকা ক্রমে সাত ছেলে ও এক মেয়ের মা হল । অশোকার শ্বশুর রাজামশাই মারা গেলেন শ্রাদ্ধের দিন অশোকষষ্ঠীর কথা বিস্মৃত হল অশোকা । ভাত মুখে দিয়েই মনে পড়ল ষষ্ঠীর কথা । রাতে শুয়ে পড়ল মনখারাপ নিয়ে । পরদিন ভোরে উঠে দেখল সাতছেলে-বৌ যার যার ঘরে মরে পড়ে আছে আশোকা তা দেখে ঋষির কথা ভাবলে । রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে আশ্রম বরাবর চলতে লাগল ।
ততদিনে বীজ থেকে অশোকগাছ মহীরুহের আকার ধারণ করেছে । চৈত্রমাসে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে তার শাখাপ্রশাখা । ঋষির আশ্রমের কাছে এসেই অশোকা ঋষিকে দেখে কেঁদে উঠলো । ঋষি ধ্যানের বলে সব অবগত ছিলেন । কন্যাকে সাথে করে রাজবাড়ী ফিরে গেলেন । কমন্ডুলু থেকে জল ছিটিয়ে দিলেন অশোকার মৃত ছেলে বৌ নাতিপুতির গায়ে । দৈবগুণে সকলে চোখ মেলে চাইল ।
ঋষি বললেন অশোকষষ্টীর ব্রত পালন করলে কখনো শোক প্রবেশ করবেনা সংসারে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন