একদা কৈলাশে ভগবান শিব ও মা পার্বতী সৃষ্টি তত্ত্ব, পুরান তত্ত্ব, শাস্ত্র তত্ত্ব নিয়ে নানান আলোচনা করছিলেন। ভগবান শিবের মুখে সেই সকল ঘটনা সমূহ জেনে মা পার্বতী অতি আনন্দিত হচ্ছিলেন । একসময় মা গৌরী জিজ্ঞেস করলেন- “হে প্রভু। আপনি কিসে সন্তুষ্ট হন?” শুনে মহাদেব বললেন- “হে দেবী। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিকে শিব চতুর্দশী বলে। এই দিন উপবাস করে আমার পূজা দিলে, আমি যতটা সন্তুষ্ট হই। অন্য কোন যাগ- যজ্ঞ- পূজাতে আমি সেরূপ সন্তুষ্ট হই না। এই ব্রতের প্রভাবে মানবের সকল প্রকার ইচ্ছা পূরণ হয়, অন্তিমে সে আমার শাশ্বত শিবধাম প্রাপ্ত হয়।” এই ঘটনা শুনে মা পার্বতী পুনঃ মহাদেবকে এই ব্রত মাহাত্ম্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিলেন । দেবাদিদেব ভোলানাথ তখন এই ব্রতের ঘটনা বলতে লাগলেন । অনেক কাল আগে বারানসিতে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ ছিল, সে নিত্য প্রচুর পশু বধ করতো । একদিন সে বনে শিকার করতে গিয়ে অনেক পশু বধ করে মাংস পীঠে চাপিয়ে বাড়ীর দিকে ফিরতে লাগলো। কিন্তু অন্ধকার ঘনীভূত হওয়ায় সে বনের মধ্যে পথ হারালো, উপায় না দেখে একটা বেল গাছে উঠে বসলো । পেটে তার খাবার যায় নি, সমস্ত দিন তার অনাহারে গেছে । ব্যাধ খুব ক্লান্তি বোধ করলো। বেলগাছে উঠে ব্যাধ আনমনা হয়ে একটা একটা করে বেলপাতা ছিড়ে মাটিতে ফেলতে লাগলো। সেই গাছ তলায় একটি শিবলিঙ্গ ছিল। ব্যাধ এটা জানতো না। আর সেদিন ছিল শিব চতুর্দশী। ব্যাধ যে বেলপাতা গুলো আনমনা হয়ে ছিড়ে ছিড়ে মাটিতে ফেলছিল, সেগুলি ওই শিবলিঙ্গের ওপর এসে পড়ছিল। ভগবান শিব ব্যাধের ওপরে খুব সন্তুষ্ট হলেন। এভাবে অজান্তে সেই ব্যাধ শিব চতুর্দশী ব্রতের ফল পেলো । পরদিন বাড়ীতে ফিরে ব্যাধ দুপুরে যেই খাবার খেতে যাবে- দ্বারে এক সন্ন্যাসী ভিক্ষা চাইতে উপস্থিত হল। ব্যাধের কি মনে হল, সে তার খাবার ঐ সন্ন্যাসীকে দান করে দিল। কিছু কাল পর ব্যাধের মৃত্যু হল। ব্যাধের আত্মাকে নরকে নিয়ে যেতে যমদূত আসলো । কারন ব্যাধ সারা জীবন কেবল পশু পাখী বধ করেছে। কিন্তু আশ্চর্য, একদল শিব দূত ব্যাধের আত্মাকে নিতে আসলো । শিব দূতরা যম দূতদের মেরে তাড়ালো। ব্যাধের আত্মাকে শিবলোকে নিয়ে গেলো । এই হল শিবরাত্রির ব্রত কথা ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন