মা অন্নপূর্ণা মা আদিশক্তির একটি রূপ। লোকগাঁথা অনুযায়ী স্বয়ং ভগবান শিব হলেন ভিক্ষুক। একবার তিঁনি হিমালয় মহলে হিমালয় কন্যার কাছে ভিক্ষা চাইতে গিয়েছিলেন। দেবী পার্বতী, চিনতে পেরেছিলেন। তারপর ভিক্ষা দেন। আবার অন্য মতে বলা হয় একবার ভগবান শিব অন্নকে মায়া , ভ্রান্ত বলায় দেবী উমার সাথে কিছুটা দাম্পত্য কলহ হয়। দেবী তখন সকল অন্ন হরণ করেন। কাশীপুরে হলেন দেবী “অন্নদা” বা “অন্নপূর্ণা”। দুখী ক্ষুধায় কাতর জীবের জন্য খুললেন “অন্নসত্র”। এদিকে হা অন্ন রব উঠলে দেবতারা গিয়ে ভগবান শিবের শরণাপন্ন হন। ভগবান শিব ভিক্ষায় বের হয়ে কোথাও অন্ন পেলেন না। তখন মা লক্ষ্মীর কাছে অন্ন ভিক্ষা করতে গিয়ে শোনেন সেখানেও অন্ন নেই। দেবী লক্ষ্মী অন্নপূর্ণার কথা শোনালে , ভগবান শিব অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা চান। দেবী অন্নপূর্ণা তখন ভগবান শিবকে অন্ন ভিক্ষা দিলেন। ভগবান শিবের ইচ্ছায় দেবশিল্পী কাশীতে অন্নপূর্ণার মন্দির গড়লেন। কিছু কিছু মতে কাশী সতীপীঠের দেবী রূপে অন্নপূর্ণা ও ভৈরব বিশ্বনাথের উল্লেখ আছে ।
উপনিষদে আছে অন্নই ব্রহ্ম। অন্নকে ত্যাগ করে কিছুই হয় না। সত্যি অন্ন ব্যাঞ্জন নষ্ট করা পাপ। জীব স্বরূপত শিব। ভিক্ষুক – ক্ষুধায় কাতরকে অন্ন দান করা কর্তব্য। দেবাদিদেব নিজেই ভিক্ষুক রূপে এসেছিলেন দেবীর কাছে। অন্নের তুলনা হয় না। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাঠ ভরে ওঠে সোনালী ধানে। মা অন্নপূর্ণার বাস্তবিক রূপ। আর লাঙল টানার প্রতীক বলদ হয়েছেন তাই মায়ের বাহন । রায়গুনাকর ভারতচন্দ্র ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভাকবি। কবি সুন্দর ছন্দে দেবী অন্নপূর্ণার , ভগবান শিবকে অন্ন পরিবেশন বর্ণনা করেছেন।
অন্নপূর্ণা দিলা শিবেরে অন্ন।
কারণ অমৃত পুরিত করি ।
রত্নপাত্র দিলা ঈশ্বরী ।।
সঘৃত পলান্নে পুরিয়া হাতা ।
পরশেন হরে হরিষে মাতা ।।
পঞ্চমুখে শিব খাবেন কত ।
পুরেন উদরে সাধের মতো ।।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন