মহাভাগবত পুরাণ “দেবী”র লীলা বিষয়ক। এই পুরাণের নাম অনেকেই জানেন না। মহাভাগবত পুরাণে দেবী সতীর দশমহাবিদ্যা রূপ ধারণের উল্লেখ পাওয়া যায় । মহাভাগবত পুরাণের অষ্টম অধ্যায়ে এই উপাখ্যান পাওয়া যায় । ঘটনাচক্র এমন দেবর্ষির মুখে পিতৃগৃহে যজ্ঞের অনুষ্ঠান শুনে সতী দেবী সেখানে যাবার ইচ্ছা পোষোন করেন। ভগবান শিব অনেক বুঝালেন। সতী দেবী বললেন- “হে শম্ভু! আপনার নিন্দা শ্রবণ করার ইচ্ছা আমার বিন্দুমাত্র নেই। কিন্তু তবুও আমি সেখানে যেতে চাই। সেখানে সকল দেবতা আমন্ত্রিত, কেবল আপনি ছাড়া। আমার পিতা যা করছেন তা সকল প্রজারা দেখছে। যদি আমার পিতা আপনাকে যজ্ঞে আমন্ত্রণ করে আপনার আহুতি না দেয় তাহলে পৃথিবীতে কোনো যজ্ঞেই আপনাকে আহুতি দেবে না। সেজন্য আমি আমার পিতাকে বুঝিয়ে আপনার যজ্ঞভাগ সুনিশ্চিত করবো, নচেৎ এই দেহ ত্যাগ করব”। ( মহাভাগবত পুরাণ/ অষ্টম অধ্যায়/ ৩৮-৪২ )
এই শুনে ভগবান শিব বললেন- “ আমার বারণ সর্তেও তুমি মানবে না ? দুর্বুদ্ধি ব্যাক্তি নিজে অন্যায় করে অন্যকে দোষ দেয় । হে দক্ষপুত্রী আমি জানি তুমি আমার আদেশ মানবে না। আমার আদেশের অপেক্ষায় কেন আছ ? যা ইচ্ছে করতে পারো”। ( মহাভাগবত পুরাণ/ অষ্টম অধ্যায়/ ৪৩-৪৪ )
এই শুনে ভগবতী সতী ভাবলেন, “এই শঙ্কর পূর্বে আমাকে পত্নীরূপে প্রাপ্তির জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। এখন আমাকে পত্নী রূপে প্রাপ্তির পর অবজ্ঞা করছেন। এখন আমি আমার প্রভাব দেখাবো।” এই বলে দেবী সতী ক্রোধে চক্ষু রক্তবর্ণ ধারণ করলেন। ( মহাভাগবত পুরাণ/ অষ্টম অধ্যায়/ ৪৫-৪৭ )
এই বলে ক্ষিপ্ত হয়ে ভগবতী সতী কালী রূপ ধারণ করলেন, উক্ত রূপের বর্ণনা করেছেন এই ভাবে- দিগম্বরী, কেশ উন্মুক্ত, জিহ্বা লকলকে , চতুর্ভুজা । দেহ জ্যোতি কালাগ্নি সমান তেজময়ী। মুণ্ডমালিনী সেই দেবী ভয়ানক গর্জন করছেন । কোটি সূর্যের মতো আভাযুক্ত মস্তকে চন্দ্ররেখা ছিল। সূর্যের আভাযুক্ত কীরিটে দেবীর ললাট ঝলমল করছিল । ( মহাভাগবত পুরাণ/ অষ্টম অধ্যায়/৪৯-৫২)
এইদেখে ভগবান শিব দিগবিদিকে গমন করতে চাইলে দেবীর নয় রূপ- তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা দশদিকে ঘিরে ধরলেন । ( মহাভাগবত পুরাণ/ অষ্টম অধ্যায়/৬২-৬৩ )
ভগবান শিব তখন জিজ্ঞেস করলেন- “হে শ্যামবর্ণা দেবী! তুমি কে? আমার প্রাণপ্রিয়া সতী কই ?” এই শুনে দেবী নিজ বিদ্যাদের নাম সকল পরিচয় দিলেন। দেবী আরোও বললেন- “হে মহেশ্বর! এই দেবীদের পূজাতে চতুর্বিধ ফল লাভ হয়। এঁনাদের কৃপায় মারণ, উচাটণ, শোষণ , মোহন, দ্রাবণ, বশীকরণ , স্তম্ভন হয়। মনের বিদ্বেষ নাশ হয় । সে সকল মন্ত্র খুব গোপোনীয়। প্রকাশ করতে নেই। হে মহেশ্বর! এই দেবীদের মন্ত্র- যন্ত্র- পূজা- যজ্ঞ নিয়ম- উপাসনার আচার নিয়ম ইত্যাদির বর্ণনা আপনিই করবেন । এই বিষয়ে আপনার থেকে বড় বক্তা আর কেও নেই । আপনার দেওয়া সে সকল উপদেশ “আগমশাস্ত্র” নামে প্রসিদ্ধ হবে। হে শঙ্কর ! আগম আর বেদ আমার দুই হস্ত । সেই দুহাতে আমি সমগ্র জগত ধরে আছি। যে সকল মূর্খ এই দুপথ ছেড়ে দেয়- সে আমার হাত হতে পতিত হয়ে অধঃপতন প্রাপ্ত করে। যে মানব আগম বা বেদের বিরোধিতা করে তার উদ্ধারে আমিও অসমর্থ। তাই মানুষের উচিৎ এই দুই পথকে সম্মান করা আর অজ্ঞানতাবশেও এদের নিন্দা না করা। এই মহাবিদ্যাদের সাধকদের উচিৎ সদগুরুর দেওয়া বিধিবিধানে পূজাদি করা আর পূজা বিধান- মন্ত্র- আচার গুপ্ত রাখা। হে দেবাদিদেব! এসকল আমি আপনাকে বললাম, কারণ আমি আপনার প্রিয়তমা পত্নী আর আপনি আমার প্রিয়তম স্বামী। এখন আমি দক্ষ ভবনে যাচ্ছি। কৃপা করে অনুমতি দিন।” ( মহাভাগবত পুরাণ/ অষ্টম অধ্যায়/৭২-৮৭ )
এরপর দেবী দক্ষের মহলে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন। দেবীর শরীর থেকে শক্তিপীঠ সৃষ্টি হয়। ভগবান শিব হলেন আদিগুরু। তিঁনিই তন্ত্রের গুরু।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন