নিজের মাথা নিজে খাইলি, এই দোষ দিবি কারে ভাই?"
আমরা দশ মাস দশ দিন মাতৃগর্ভে ছিলাম। মাথা ছিলো নিচের দিকে, পা ছিলো উপরের দিকে। এভাবে আমরা বারবার কতো কষ্ট করেছি মায়ের গর্ভের মধ্যে। সে কষ্ট থেকে জীব উদ্ধার পেতে চায়, আর তখন তো কথা দিয়েছিলাম প্রভুকে।
আমরা যখন মায়ের গর্ভে ছিলাম, কতো কষ্ট তখন করেছিলাম, সেখানে আমরা ভগবানকে ডেকেছি, “প্রভু, আমি আর এ কষ্ট করতে পারছি না!”
কোনো কোনো ভাগ্যবান জীবকে মায়ের গর্ভে দেখা দেন ভগবান, “তুমি আমাকে কেন ডেকেছিলে?”
জীব তখন বলে, “প্রভু, আমি এই কষ্ট করতে পারছি না, আমাকে এখান থেকে ছেড়ে দাও!”
তখনই, ভূমিষ্ঠ হাওয়ার আগে সেই জীব কথা দেয়, “চোখ দিয়ে তোমার বিগ্রহ দর্শন করবস, মুখ দিয়ে তোমার নাম করবো, কান দিয়ে তোমার কথা শুনবো।”
সব কিছু হ্যাঁ বলে দিয়ে এসেছিলাম। ভগবান যে ইন্দ্রিয় গুলো দিয়েছেন, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক, মন, বুদ্ধি আর অহঙ্কার সে ইন্দ্রিয়গুলো দিয়েছেন গোবিন্দের সেবা করার জন্য। এই দুটো হাত দিয়েছেন তাঁর সেবা করার জন্য। যেমন তাঁর প্রসাদ রান্না করবার জন্য, তাঁর বাসন মার্জন করবার জন্য, তাঁর মালা জপ করবার জন্য। পা দিয়েছেন তাঁর ধাম পরিক্রমা করবার জন্য, চোখ দিয়েছেন তাঁর বিগ্রহ দর্শন করবার জন্য, কান দিয়েছেন তাঁর কথা শোনবার জন্য। কিন্তু আমরা কি করেছি?
ভূমিষ্ঠ হাওয়ার পরে মায়ার কবলে পতিত হয়ে ভুলে গিয়েছি সেদিনের সেই কষ্টের ভেতর কাটানো দিনের প্রতিশ্রুতি গুলো। দোষটার কারণ আমাদের নয় কি ?
চোখটা প্রথম ভালোই ছিলো, কিন্তু যদি একটা ছানি পড়ে যায়, তখন ছানি না কেটে ছবি দেখতে পাবো না। কানও এ রকম, যখন আমরা বুড়ো হয়ে যাই, তখন ভালো শুনতে পাবো না। পায়ে যদি ব্যথা হয়ে যায়, তাহলে বিভিন্ন জায়গায়, ধাম পরিক্রমা, তুলসী পরিক্রমাও করতে পারবো না। এগুলো সব ভগবান আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখন কি করলাম! ওই মায়ার কবলে পতিত হয়ে পড়লাম; ভুলে গেলাম সবই!
মায়াকে কে সৃষ্টি করেছেন, ভগবান'ই তো!
"দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া |
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ||"
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ৭/১৪)
অর্থাৎ, ভগবান বলছেন, “এ মায়াকে আমি সৃষ্টি করেছি, তুমি এই মায়া জয় করতে পারবে না। তবে পারবে কখন?
‘মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ||’
অর্থাৎ, যে আমাকে প্রপদ্য করে, যে আমার চরণে শরণাগত হয়, যে আমার চরণে এসে পড়ে যায়, আমি তাকে আস্তে আস্তে মায়া থেকে রেহাই দেই।"
যখন আমার ভক্ত আমার শরণাপন্ন হয়, তখন দেখতে পেয়ে যে, ‘আমার সৃষ্টিকর্তা চলে এসেছেন’ তখন মায়া দেবী আমাদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে পালিয়ে যায়।
‘মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ||’
মায়াকে জয় করবার জন্যই সাধু-সঙ্গ করা যায়। মায়াকে সাধু-সঙ্গ ছাড়া জয় করা যায় না। তাই আমাদের ভগবানের নববিধা ভক্তির পথ অনুসরণ করে, ভগবদ্ কর্ম, জ্ঞান আর ভক্তির মাধ্যমে এই মোহময় অনিত্য সংসারের মায়াকে অতিক্রম করতে হবে। নইলে মুক্তি সুদুর পরাহত। তাই শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন -
"মায়ারে করিয়া জয় ছাড়ান না যায় |
সাধু-গুরু কৃপা বিনা না দেখি উপায় ||"
Post Courtesy By: Soikot Kumar
1 Comments:
This article is authored by Srila Bhakti Nirmal Acharya Maharaj. Please cite the course if you 'borrow' materials from other websites:
https://www.scsmathinternational.com/bn/granthagar/SriUpadesh1/03-MayerPetThekeMayarPeterMadhye.php
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন